হাদিসের আলোকে দলীল (১১-২০)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━
হাদিস-১১ঃ
━━━━━━
أخرج الطبراني والحاكم عن ابن عباس رضي الله عنهما قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : يابني عبد المطلب ، ان سألت الله فيكم ثلاثا : أن يثبت قلوبكم ، وأن يعلم جاهلكم ، ويهدي ضالكم ، وسألته أن يجعلكم جوداء ، نجداء ، رحماء . فلو أن رجلا صفن بين الركن والمقام فصلى وصام ، ثم مات وهو مبغض لأهل بيت محمد ، : دخل النار ؛
ইমাম তাবরানী ও হাকেম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, হে আব্দুল মােত্তালিব(টীকা:৪) এর বংশধরগণ! নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয়ে প্রার্থনা করেছি যে, ১. তিনি যেন তােমাদের অন্তরকে (সত্যের ওপর) অটল রাখেন। ২. তােমাদের জাহেল (অজ্ঞ)দের যেন শিক্ষা দান করেন, ৩. এবং তােমাদের পথভ্রষ্টদের যেন সৎ পথ দেখান। আমি তার কাছে আরাে প্রার্থনা করেছি তিনি যেন তােমাদেরকে দানশীল, সাহায্যকারী (সম্মানিত), দয়াদ্র করেন। অতঃপর যদি কোন ব্যক্তি রুকন (টীকা:৪) ও মক্কামে ইব্রাহীমের মাঝখানে অবস্থান করে, অতঃপর (তাতে) নামাজ আদায় করে এবং রােজা রাখে, অতঃপর (এমতাবস্থায়) মারা গেল যে, সে মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর পরিবার বর্গের (আহলে বায়ত) সাথে হিংসা পােষণকারী, (তাহলে) সে জাহান্নামে প্রবেশ করল।
টীকা ৪:
রাসূল (ﷺ) এর দাদা।
টীকা ৫: রুকনে ইয়ামানী। বায়তুল্লাহর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণকে রুকনে ইয়ামানী বলে। এ কোণে হাতে স্পর্শ করা বা চুমু দেওয়া সুন্নাত যা হাদীছ শরীফ দ্বারা সাব্যস্ত।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. আল মু'জামুল কাবীর-১১: ১৪২ (১১৪১২)।
২. আল মুসতাদরেক -৩:১৬১ (৪৭১২) এবং তিনি এ হাদীসকে ইমাম মুসলিমের শর্তমতে সহীহ বলেছেন। আর ইমাম যাহাবীও এ কথার ওপর ঐকমত্য পােষণ করেছেন এবং তিনি قلوبکم শব্দের পরিবের্ত بثبت قالمکم (তােমাদের পদক্ষেপ যেন অটল থাকে) উল্লখ করেছেন। আল্লামা সুয়ুতীর কোন কোন নুসখা (সংস্করনে) ও অনুরূপ পাওয়া যায়।
হাদিস-১২ঃ
━━━━━━
أخرج الطبراني عن ابن عباس رضي الله عنهما، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: بغض بنی هاشم والأنصار كفر, وبغض العرب نفاق.
ইমাম তাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, বনী হাশেমী(টীকা:৬) ও আনসারদের(টীকা:৭) ঘৃণা করা কুফরী এবং আরবদের ঘৃণা করা মুনাফেকী।
টীকা ৬:
বনী হাশেম- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দাদা হযরত আব্দুল মােত্তালিব এর পিতা হাশেমের বংশধর।
টীকা ৭: আনসার- মদীনার অদিবাসী। যারা রাসূল (ﷺ) ও তার সাহাবীদেরকে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পর সাহায্য করেছেন।
বর্ণনাসূত্রঃ
━━━━━━-
আল মু'জামুল কাবীর- ১১:১১৮ (১১৩১২)।
হাদিস-১৩ঃ
━━━━━━
أخرج ابن عدي في الإكليل عن أبي سعيد الخدری رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ: من أبغضنا أهل البيت، فهو منافق ؛
ইবনে আদি ‘আল ইক্বলীল' গ্রন্থে হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه)) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের আহলে বাইতকে ঘৃণা করে সে মুনাফিক।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. ‘জাওয়াহেরুল ইকদিয়্যীন- ইমাম সামহুদি-২:২৫।
২. আহমদ মুসনাদ এ ইমাম দায়লামী কর্তৃক বর্ণিত হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর এই হাদীসটির পক্ষেও স্বাক্ষ্য দেন।
ما کنا نعرفُه المنافقین الاببغضهم علیا رضی الله عنه
অর্থ: আমরা এমন কোন মুনাফিক দেখিনি যে আলী(রা.) কে ঘৃণা করতনা।
৩. হাদীসটি ইমাম আহমদ ও তিরমীজি বর্ণনা করেছেন। তবে শব্দগত বর্ণনা ইমাম আহমদের।
হাদিস-১৪ঃ
━━━━━━
أخرج ابن حبان في صحيحه والحاكم عن أبی سعید رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ والذي نفسي بيده، لا يبغضنا أهل البيت رجل، إلأ أدخله الله النار؛
ইবনে হিব্বান তার 'সহীহ'তে এবং ইমাম হাকেম প্রমূখ হযরত আবু সাঈদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত আবু সাঈদ খুদরি (رضي الله عنه)) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “শপথ তার, যার হাতে আমার প্রাণ! যে ব্যক্তিই আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) প্রতি ঘৃণা পােষণ করবে তাকে আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. সহীহ ইবনে হিব্বান (আল ইহসান) ১৫:৪৩৫ (৬৯৭৮)।
২. আল মুসতাদরিক-৩:১৬২ (৪৭১৭) এবং তিনি বলেন, এই হাদিসটি ইমাম মুসলিমের শর্ত মতে সহীহ বা বিশুদ্ধ। তবে তারা উভয়ে এ হাদীছটিকে বর্ণনা করেননি। আর ইমাম যাহাবী এ হাদিছের ব্যাপারে চুপ থেকেছেন।
হাদিস-১৫ঃ
━━━━━━
أخرج الطبراني عن الحسن ابن علی رضی الله عنهما، أنه قال لمعاوية بن حديج: يا معاوية بن حديج، إياك وبغضنا، فإن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: لا يبغضنا أحد، لا يحسدنا أحد، إلا ذيد يوم القيامة عن الحوض بسياط من نار؛
ইমাম তাবরানী হযরত হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি (হযরত হাসান (رضي الله عنه)মা) মুয়াবিয়া ইবনে হুদাইজকে বলেন, হে মুয়াবিয়া ইবনে হুদাইজ! তুমি আমাদেরকে ঘৃণা করা থেকে বিরত থাকো, কেননা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, কেউ যেন আমাদেরকে ঘৃণা না করে, কেউ যেন আমাদেরকে হিংসা না করে। যদি করে তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন হাউজে কাউছার থেকে আগুনের চাবুক মারতে মারতে তাড়িয়ে দেয়া হবে।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. আল মু'জামুল কবীর- ৩:৮১ (২৭২৬)।
২. আল মু'জামুল আওসত- ৩:২০৩ (২৪২৬)।
হাদিস-১৬ঃ
━━━━━━-
أخرج ابن عدی، والبيهقي في شعب الأيمان عن علی رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ من لم يعرف حق عترتی، والأنصار، فهو لإحدى ثلاث: إما منافق، وإما لزنية، وإما لغير طهور، یعنی حملته أمه علی غیر طهر;
ইবনে আদি এবং ইমাম বায়হাক্বী ‘শুয়াবুল ঈমান’ এ হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত আলী (رضي الله عنه)) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার পরিবারবর্গ (বংশধর)ও আনসারদের অধিকার সম্পর্কে জানেনা (তাদের হক আদায় করেনা) সে নিশ্চয় তিনজনের একজন। ১. হয়ত সে মুনাফিক, ২. অথবা সে জারজ, ৩. অথবা সে নাপাকীর সন্তান; অর্থাৎ তার মা তাকে ঋতুকালীন (হায়েজ) অবস্থায় গর্ভধারণ করেছেন।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. আল কামেল-ইবনুল আদি-৩:১০৬০।
২. শুয়াবুল ঈমান-২:২৩২ (১৬১৪)।
৩. আল ফেরদৌস-ইমাম দায়লামী ৩:৬৬২ (৫৯৫৫)।
৪. জাওয়াহিরুল ইকৃদিয়্যীন- আস সামহুদী-২: ২৪।
৫. আছ-ছাওয়াব- আবিশ শাইখ।
হাদিস-১৭ঃ
━━━━━━-
أخرج الطبراني في الأوسط عن ابن عمر رضي الله عنهما قال:أخر ماتكلم به رسول اللهﷺ اخلفوني في أهل بیتی ؛ .
ইমাম তাবরানী তাঁর ‘আল আওসাত’ কিতাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه)) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সর্বশেষ যে কথা বলেছেন তা হচ্ছে, আমার পরে তােমরা আমার আহলে বাইতকে (পরিবারবর্গ) আমার স্থলাভিষিক্ত (খলিফা) হিসেবে মান্য করবে।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
মাজমাউয যাওয়ায়েদ - ইমাম হাইছামী- ৯:১৬৩।
হাদিস-১৮ঃ
━━━━━━
أخرج الطبراني في الأوسط عن الحسن بن علی رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: الزموا مودتنا أهل البيت، فإنه من القى الله وهو يودنا، دخل الجنة بشفاعتنا. والذي نفسي بيده، لا ينفع عبدا عمل عمله، إلا بمعرفته حقنا؛
ইমাম তাবরানী ‘আল আওসাত’ এ হযরত হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমার আহলে বাইত বা পরিবারবর্গের সাথে ভালবাসাকে আবশ্যক করে নাও। কেননা, যে ব্যক্তিই আল্লাহর সাথে এ অবস্থায় সাক্ষাত করবে যে, সে আমাদেরকে ভালবাসে, সে আমাদের শাফায়াত বা সুপারিশের দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, কোন বান্দার আমল ততক্ষন কাজে আসবে না, যতক্ষন না সে আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে (রক্ষা করবে)।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. আর মু'জামুল আওসাত, ৩:২২ (২২৫১)।
২. কাজী আয়াজ (رحمة الله) তাঁর শেফা -(৩:৪৮) কিতাবে বলেছেন, কোন কোন আলেম বলেন, معرفتهم অর্থ হচ্ছে নবী করীম (ﷺ) এর মর্যাদা সম্পর্কে জানা। আর যখন তারা (উম্মত) এ সম্পর্কে জানবে তখন তারা তার (নবী করীম (ﷺ)) কারণে তাদের (আহলে বাইতে) অধিকার ও সম্মান সম্পর্কে জানবে।
হাদিস-১৯ঃ
━━━━━━
أخرج الطبراني في الأوسط عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما قال: خطبنا رسول اللهﷺ فسمعته وهو يقول: أيها الناس من أبغضنا أهل البيت، حشره الله تعالی یوم القيامة يهوديا۔
ইমাম তাবরানী ‘আল আওসাত’ এ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখলেন, যা আমি শুনেছি। তিনি বলেছেন, হে মানবমন্ডলী, যে ব্যক্তি আমার আহলে বাইতের প্রতি ঘৃণা পােষণ করবে, আল্লাহ তা'আলা তার হাশর করবে ইহুদী হিসেবে।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
আল মু'জামুল আওসাত- ৫:১৪ (৪০১১)।
হাদিস-২০ঃ
━━━━━━
أخرج الطبراني في الأوسط عن عبد الله بن جعفر رضي الله عنهما قال سمعت رسول اللهﷺ يقول: يابنی هاشم، إني قد سألت الله أن يجعلكم نجداء رحماء. وسألته أن يهدي ضالكم، ويؤمن خائفكم، ويشبع جائعكم. والذي نفسي بيده، لا يؤمن أحد حتى يحبكم بحبي. أترجون أن تدخلوا الجنة بشفاعتی، ولا يرجوها بنوعبد المطلب؟
ইমাম তাবরানী ‘আল আওসাত’ এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জা'ফর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'কে বলতে শুনেছি, “হে বনী হাশেম! আমি তােমাদের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি, তিনি যেন তােমাদের কে দানশীল ও দয়াদ্র করেন। তাঁর কাছে আরাে প্রার্থনা করেছি, তিনি যেন তােমাদের পথভ্রষ্টদেরকে সঠিক পথ দান করেন, তােমাদের ভীতি গ্রস্থদের নিরাপত্তা দান করেন, তােমাদের ক্ষুধার্থদেরকে আহার করান। আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যক্তি ততক্ষণ ঈমানদার হবেনা, যতক্ষণ না সে তােমাদেরকে আমার কারণে ভাল বাসবে। তােমরা কি আমার সুপারিশ দ্বারা জান্নাতে যেতে চাও? আর বনু আব্দুল মােত্তালিব তা চায় না? (অথচ তাদেরও সেটা চাওয়া উচিত)।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
আল্ মু'জামুল আওসাত, ৮:৩৭৩ (৭৭৫৭)।