❏ বিষয় নং-১৯: মীলাদ শরীফের মাহফিল
দেওবন্দী এবং আহলে হাদীস পন্থিরা বলে থাকে মিলাদ শরীফের মাহফিল আয়োজন করা, মিলাদ শরীফের উপর খুশি উদযাপন করা বিদআত এবং হারাম। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দৃষ্টিতে মিলাদ শরীফ করা জায়েয এবং বরকতের একটি মাধ্যম। মহান আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ
-“আপনি বলুন! আল্লাহরই অনুগ্রহ ও তাঁরই দয়া এবং সেটারই উপর তাদের আনন্দ প্রকাশ করা উচিত।’’ (সূরা ইউনুস, আয়াত নং-৫৮)
এসব আয়াত হতে আল্লাহর হুকুম স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহর ফজল, রহমত এবং নিয়ামতের উপর খুশি প্রকাশ করা। ২৫৪
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৫৪.
❏ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন-
وَأخرج أَبُو الشَّيْخ عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا فِي الْآيَة قَالَ: فضل الله الْعلم وَرَحمته مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ الله تَعَالَى (وَمَا أَرْسَلْنَاك إِلَّا رَحْمَة للْعَالمين) (الْأَنْبِيَاء الْآيَة ১০৭)
-‘‘সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আল্লাহর (ফদ্বল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ইলমকে এবং (রহমত) দ্বারা নবি করিম (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- হে হাবিব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব-জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্ররেণ করেছি। (সুরা আম্বিয়া, ১০৭)।’’ (ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ৪/৩৬৭ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)
❏ আওলাদে রাসূল (ﷺ) ইমাম আবু জাফর বাকের (رحمة الله) বলেন, এখানে (ফদ্বল) দ্বারাও নবি পাক (ﷺ) কে উদ্দেশ্য।
(ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ৪/৩৬৭পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম আলূসী, তাফসীরে রুহুল মা‘য়ানী, ১১/১৮৩পৃ. ইমাম তিবরিসী, মাজমাউল বায়ান, ৫/১৭৭-১৭৮পৃ., হাইয়্যান, তাফসীরে বাহারে মুহিত, ৫/১৭১পৃ. ইমাম ইবনে জাওযী, তাফসীরে যাদুল মাইসীর, ৪/৪০পৃ.)
তাই বুঝা গেল মহান রব তা‘য়ালাই তার রাসূল কে পাওয়ার কারণে আনন্দ বা ঈদ উদ্যাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
এখন এমন কোন মুসলমান নেই যে, রাসূলে পাক (ﷺ) এর উপর আল্লাহ তা‘য়ালার অনুগ্রহ, রহমত এবং নিয়ামত অনুধাবন করতে পারে না। বরং তিনি হচ্ছেন সমস্ত জগতের জন্য রহমত এবং এমন মহান অনুগ্রহ যাঁর প্রেরনের পর খোটা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন:
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا
-“নিশ্চয় আল্লাহর মহান অনুগ্রহ হয়েছে মুসলমানদের উপর যে, তাদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন।’’ ২৫৫
২৫৫. সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং-১৬৪
তিনি মহান আল্লাহর এমন হাবীব এবং সমস্ত নবীগণ (عليه السلام)’র তামান্না যাঁর আগমনের শুভসংবাদ সমস্ত নবীগণ (عليه السلام) দিয়েছেন। যেমন হযরত ঈসা (عليه السلام) ইরশাদ করেন-
وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ
-“আমি ঐ মহান সম্মানিত রাসূলের সু-সংবাদ দিচ্ছি যিনি আমার পরে তাশরীফ আনবেন, তাঁর নাম আহমদ।’’ ২৫৬
২৫৬. সূরা সাফ, আয়াত নং-৬
হযরত ঈসা (عليه السلام) আল্লাহ তা‘য়ালার দরবারে প্রার্থনা করে বলেছিলেন-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنْزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا
-“হে আল্লাহ! হে প্রতিপালক! আমাদের উপর আকাশ থেকে একটা খাদ্য-খাঞ্চা অবতরণ করুন, যা আমাদের জন্য ঈদ (আনন্দ-উৎসব) হবে আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য।’’ ২৫৭
২৫৭. সূরা মায়েদাহ, আয়াত নং-১১৪
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! যে দিন হযরত ঈসা (عليه السلام) এর উপর মায়েদা অবতীর্ণ হয়েছিল সেদিন তিনি পূর্ববর্তী এবং পরবর্তীদের জন্য খুশির দিন নির্ধারণ করে ছিলেন। সুতরাং যেদিন মাহবুবে খোদা সরকারে দোজাহা বায়েছে কাউমে মক্কা হুযুর (ﷺ) দুনিয়ায় তাশরীফ এনেছেন সেদিন কেন খুশি এবং ঈদের দিন হবে না?
কবি বলেন-
صبح طيبہ ميں ہوئى بٹتا ہے باره نور كا
صدقہ لينے نور كا آيا ہے تارا نور كا
باغ طيبہ ميں سهانا پہول پہولا نور كا
مت جو ہيں بلبليں پڑ هتى ہيں كلمہ نور كا
‘‘আলোর বিতরণ হয়েছে পবিত্র ভোর
তারকারাজি এলো দাক্ষিণ্য নিতে নূর।
পূতবাগ পুষ্পিত, ফোটেছে নূরের ফুল
উন্মাদ:দিশেহারা বাষতে কলি বুলবুল।’’
আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর ফজল, রহমত এবং অনুগ্রহের চর্চা করার হুকুম দিয়েছেন, আর চর্চা তখনই হবে যখন তাঁর উত্তম যিকর করা হবে। তাঁর প্রশংসা মুজিযার আলোচনাই হল যিকরে খাইর তথা উত্তম যিকির। নির্ভরযোগ্য সিরাতের কিতাবসমূহ অধ্যায় অধ্যায়ন করা চাই যেগুলো বিরোদ্ধবাদীদের নিকটও গ্রহণযোগ্য। এ কিতাব গুলোর মধ্যেও হুযূর (ﷺ) এর বেলাদতের বা শুভাগমনের চিত্রাকর্ষক ঘটনা রয়েছে যার মাধ্যমে ঈমান তাজা হয়। মহান আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন,
وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ
-“এবং তাদেরকে আল্লাহর দিবস সমূহ স্মরণ করিয়ে দাও।’’ (সূরা ইবরাহিম আয়াত নং-৫)
সম্মানিত মুফাসসিরগণ এই আয়াতের أَيَّامِ اللهِ দ্বারা এমন দিনকে বুঝিয়েছেন যেদিনে আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর বান্দার উপর অনুগ্রহ করেছেন। ২৫৮
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৫৮.
❏ ইমাম তাবারী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؓ، عَنْ أُبَيٍّ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ : وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللَّهِ قَالَ: نِعَمِ اللَّهِ
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) তিনি তাঁর পিতা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করীম (ﷺ) হতে এ আয়াতের তাফসির বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, তোমরা নেয়ামত প্রাপ্ত দিন সমূহকে স্মরণ কর।’’ (ইবনে জারীর আত-তবারী, তাফসিরে তবারী, ১৩/৫৯৬ পৃ.)
عَنْ مُجَاهِدٍ: {وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ} [إبراهيم: ৫] قَالَ: بِأَنْعُمِ اللهِ
❏ -‘‘তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله) বলেন, এখানে সেই দিনের কথাই বুঝানো হয়েছে যে দিনে মহান রব আমাদেরকে নেয়ামত দান করেছেন।’’ (ইবনে জারীর আত-তবারী, তাফসিরে তবারী, ১৩/৫৯৬ পৃ.)
❏ ইমাম তাবারী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ: {وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ} [إبراهيم: ৫] قَالَ: بِنِعَمِ اللهِ
-‘‘তাবেয়ী সাঈদ ইবনে জুবাইর (رحمة الله) এখানে সেই দিনের কথাই বুঝানো হয়েছে যে দিনে মহান রব আমাদেরকে নেয়ামত দান করেছেন।’’ (তাফসিরে তবারী, ১৩/৫৯৭ পৃ.)
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
عَنْ قَتَادَةَ: {وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللَّهِ} [إبراهيم: ৫] يَقُولُ: ذَكِّرْهُمْ بِنِعَمِ اللَّهِ عَلَيْهِمْ
-‘‘তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, তোমরা সে সমস্ত দিবস সমূহকে স্মরণ কর যে দিনে মহান রব তোমাদেরকে নেয়ামত দান করেছেন।।’’ (ইবনে জারীর আত-তবারী, তাফসিরে তবারী, ১৩/৫৯৭ পৃ.)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! যেদিন হুযুর পুর নূর (ﷺ) এ দুনিয়ায় তাশরীফ এনেছেন সেদিনও أَيَّامِ اللهِ এর অন্তুর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-
وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ
-“এবং তাদেরকে আল্লাহর দিবস সমূহ স্মরণ করিয়ে দাও। (সূরা ইবরাহীম, আয়াত নং-৫)
সুতরাং এদিনকে স্মরণ করার সবচেয়ে বড় পদ্ধতি মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্থা করা, যা মুসলমানরা বড়গুরুত্বের সাথে পালন করে। এ ব্যাপারে ফতোয়াবাজিকারী এবং হারাম আখ্যাদান কারীদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী ছাহেবে তাফসিরে রুহুল বায়ান:
তাফসীরে রূহুল বয়ানে আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) পবিত্র কুরআনের আয়াত مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ এর তাফসীরে বলেছেন,
ومن تعظيمه عمل المولد إذا لم يكن فيه منكر قال الامام السيوطي قدس سره يستحب لنا اظهار الشكر لمولده عليه السلام
-“কোন ধরনের মন্দ কথা না বলে মিলাদ মাহফিল করা হুযুর (ﷺ) এর তাজিমের অর্ন্তভুক্ত। ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, হুযুর (ﷺ)’র বিলাদতের দিনে খুশী উদযাপন করা মুস্তাহাব।’’ (আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৯/৫৬ পৃ.)
হাফেজ ইবনে হাজার (رحمة الله) এবং ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এর আকিদা:
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে রূহুল বয়ানে লিখেন-
وقد استخرج له الحافظ ابن حجر أصلا من السنة وكذا الحافظ السيوطي وردا على الفاكهاني المالكي في قوله ان عمل المولد بدعة مذمومة كما في انسان العيون
-‘‘ইমাম হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এবং ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) মিলাদ শরীফের বৈধতা হাদিস পাক থেকে প্রমাণ করেছেন, আর যারা মিলাদ শরীফকে বিদ‘আত এবং বাঁধা প্রদান করে তাদের আপত্তির জবাব দিয়েছেন।’’ ২৫৯
২৫৯. ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, ৯ খণ্ড, ৫৭ পৃ.
সহীহ বুখারী শরীফ:
ইয়ামুল মুহাদ্দেসীন মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) বলেন:
فَلَمَّا مَاتَ أَبُو لَهَبٍ أُرِيَهُ بَعْضُ أَهْلِهِ بِشَرِّ حِيبَةٍ، قَالَ لَهُ: مَاذَا لَقِيتَ؟ قَالَ أَبُو لَهَبٍ: لَمْ أَلْقَ بَعْدَكُمْ غَيْرَ أَنِّي سُقِيتُ فِي هَذِهِ بِعَتَاقَتِي ثُوَيْبَةَ
-‘‘আবু লাহাব যখন মারা গেল, তার পরিবারের কোন একজন তাকে খারাপ অবস্থায় স্বপ্নে দেখল, জিজ্ঞাসা করল, তোমার কী খবর? উত্তরে সে জানালো তোমাদের থেকে আসার পর থেকে আমার ভাল সংবাদ নেই, কিন্তু দাসী সুওয়াইবাকে আযাদ করার কারণে আমার শাহাদত আঙ্গুল থেকে এ্রক-প্রকার মিষ্টি পানি বের হয়, যে আঙ্গুলের ইশারায় তাকে আযাদ করেছিলাম।’’ ২৬০
২৬০. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৭/৯ পৃ. হা/৫১০১, ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১/৩২১ পৃ.
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) যিনি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার। তিনি উপর্যুক্ত হাদিসে পাকের ব্যাখ্যায় বলেন-
وَذَكَرَ السُّهَيْلِيُّ أَنَّ الْعَبَّاسَ قَالَ لَمَّا مَاتَ أَبُو لَهَبٍ رَأَيْتُهُ فِي مَنَامِي بَعْدَ حَوْلٍ فِي شَرِّ حَالٍ فَقَالَ مَا لَقِيتُ بَعْدَكُمْ رَاحَةً إِلَّا أَنَّ الْعَذَابَ يُخَفَّفُ عَنِّي كُلَّ يَوْمِ اثْنَيْنِ قَالَ وَذَلِكَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُلِدَ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَكَانَتْ ثُوَيْبَةُ بَشَّرَتْ أَبَا لَهَبٍ بِمَوْلِدِهِ فَأَعْتَقَهَا
-‘‘হযরত ইমাম সুহাইলী (رحمة الله) উল্লেখ করেন, হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন আবু লাহাব মারা যাওয়ার এক সাপ্তাহ পর তাকে স্বপ্নে দেখি তার অবস্থা খুবই করুন ছিল। সে বলল, আপনাদের থেকে আসার পর থেকে আমি কোন ধরনের স্বস্তি পাইনি। তবে প্রতি সোমবার আযাব হালকা করা হয়। হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, এটা এজন্য যে, এদিন হুযুর (ﷺ)’র বেলাদত শরীফ হয়েছে এবং সুওয়াইবা শুভসংবাদ দেয়ার কারণে তাকে আযাদ করা হয়েছিল।’’ ২৬১
২৬১. ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ৯ম খণ্ড ১৪৫ পৃ:
বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ! আবু লাহাব ছিল কাফের। তার বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ সূরা লাহাব নাজিল করেছেন। কিন্তু সে রাসূলে পাক (ﷺ) কে ভাতিজা জেনে খুশী হবার কারণে আল্লাহ তা‘য়ালা তাকেও বঞ্চিত করেননি। সুতরাং সে সকল মুসলমান রাসূলে পাক (ﷺ) কে আক্বা মাওলা জেনে তাঁর মিলাদ শরীফে খুশী উদর্যাপন করবে এবং মাহফিলের আয়োজন করবে তবে তাদের অবস্থা কী হবে? নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা তাদেরকে অনুগ্রহ দান করবেন।
শেখ সাদী (رحمة الله) এর আকিদা:
আল্লামা শেখ সাদাী (رحمة الله) তার এক পঙতিতে বলেন-
ددستاں راكبا كنى محروم
توكہ بادشناں نظر دارى
‘‘কীরূপ ভাগ্যাহত করবে আপনজন
সতত তাকাও! চেয়ে দেখ দুষমন।’’
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) এর আক্বিদা:
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) উপর্যুক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
১৫০ পৃ.
-‘‘যারা মিলাদ শরীফ পালন করেন তাদের জন্য এই ঘটনাটি স্পষ্ট দলিল। রাসূলে পাক (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের রাতে খুশি উদযাপন করে এবং টাকা-পয়সা খরচ করে। অর্থাৎ কট্টর-কাফের আবু লাহাব রাসূলে পাক (ﷺ) এর বেলাদত শরীফে খুশি উদযাপন এবং স্বীয় বাঁদীকে মুক্তি দেয়ার কারণে সে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়েছে। সুতরাং সে সকল মুসলমানদের অবস্থা কী হবে? যারা রাসূলে পাক (ﷺ) এর বেলাদত শরীফে খুশি উদযাপন পূর্বক টাকা পয়সা খরচ করে এবং মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। তবে শর্ত হচ্ছে উক্ত মিলাদ মাহফিলে যেন কোন বিদআতী এবং হারামখোর না থাকে।’’ (মাদারিজুন নবুয়ত, (ফার্সী) ২য় খ-, ২৪ পৃ:) শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) তাঁর “মাসাবাতা বিস সুন্নাহ” কিতাবে বলেন,
وَلَا زَالَ اَهْلُ الْاِسْلَامِ يَحْفَلُوْنَ بِشَهُرِ مَوَلِدِه ﷺ
-‘‘মুসলমানগণ স্বয়ং হুযুর (ﷺ) এর সময়েও মিলাদ মাহফিল করতেন।’’ (শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাসাবাতা বিস সুন্নাহ, ৪০ পৃ:)
মুহাদ্দেস ইবনে জাযরী (رحمة الله) এর আকিদা:
হাফেজুল হাদীস আল্লামা আবুল খায়র শামসুদ্দিন মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ জাযরী (رحمة الله) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা বলেন-
فَمَا بَالَ حَالِ الْمُسْلِمِ الْمُوَحِدِ مِنْ أُمَّتِه عَلَيْهِ السَّلَامُ يَسُرُّ بِمَوْلِدِه، وَيَبْذُلَ مَا تَّصَلَ إِلَيْهِ قُدْرَتَه فِي مُحَبَّتِه صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَعَمُرِيُ إِنَّمَا يَكُوْنَ جَزَاؤُه مِنَ اَللهِ الْكَرِيْمِ أَنْ يُدْخِلَه بِفَضْلِهِ الْعَمِيْمِ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.
-“সুতরাং কট্টর পন্থি কাফের আবু লাহাব হুযুর পুর নূর (ﷺ)-এর বেলাদত শরীফে খুশী উদযাপন করার কারণে নিয়ামাত প্রাপ্ত হয়। তবে ওইসব মুসলমানদের অবস্থা কী হবে? যারা হুযুর (ﷺ) এর বেলাদত শরীফে খুশী উদযাপন পূর্বক নিজেদের সামর্থনুযায়ী টাকা পয়সা খরচ করে। আমি আমার প্রাণের শপথ করে বলছি যে, আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে নিজ অনুগ্রহে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন।’’ ২৬২
২৬২. ইমাম কাস্তাল্লানী, আল-মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৮৯ পৃ., ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/২৬১ পৃ.
খোলাফায়ে রাশেদীনের (رضي الله عنه) এর আকিদা:
শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য কিতাব ‘আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম’ গ্রন্থে মিলাদ শরীফের ফজিলতের উপর খোলাফায়ে রাশেদীন (رضي الله عنه)’র বানীসমূহ এনেছেন নিম্নের এসব বর্ণনা আলোচনা করা হল:
قَالَ اَبُوْ بَكْرِ الْصِّدِّيْق ؓ مَنْ اَنْفَقَ دِرْ هَمًاعَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىَ ﷺ كَانَ رَفِيْقِى فِى الْجَنَّةِ-
-‘‘হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর (رضي الله عنه) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হুযুর (ﷺ) এর মিলাদ শরীফে এক দিরহাম পরিমান ব্যয় করবে জান্নাতে সে আমার সাথেই থাকবে।’’ ২৬৩
২৬৩. ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম, ৭ পৃ., ইস্তাম্বুল, তুরস্ক হতে প্রকাশিত।
قَالَ عُمَرَ ؓ مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ ﷺ فَقَدْ اَحْيَا الْاِسْلَامَ-
-‘‘হযরত সায়্যিদুনা উমর ফারুক (رضي الله عنه) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করে সে যেন ইসলামকে জীবনদান করলো।’’ ২৬৪
২৬৪. ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম, ৭ পৃ.
قَالَ عُثْمَانُ ؓ مَنْ اَنْفَقَ دِرْهَمًا عَلٰى قِرَاءَةَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ ﷺ فَكَانَّمَا شَهِدَ غَزْوَةَ بَدْرٍ وَ حُنَيْنٍ
-‘‘হযরত সায়্যিদুনা উসমান (رضي الله عنه) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রাসূলে পাক (ﷺ) এর মিলাদ শরীফে এক দিরহাম পরিমাণ ব্যয় করে সে যেন বদর ও হুনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করল।’’ ২৬৫
২৬৫. ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম, ৭ পৃ.
قَالَ عَلِىُّ ؓ وَكَرَّمَ اَللهُ وَجْهَه مَنْ عَظَّمَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ ﷺ وَكَانَ سَبَبًا لِقَرَاءَتِه لَايُخْرُجُ مِنَ الدُّنْيَا اِلَّا بِالْاِيْمَانِ وَيَدْخُلُ الْجَّنَةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ
-‘‘হযরত সয়্যিদুনা আলী (رضي الله عنه) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে রাসূলে পাক (ﷺ)’র মিলাদ শরীফ পালন করবে দুনিয়া থেকে ঈমান নিয়ে কবরে যাবে এবং কোন প্রকার হিসাব ছাড়াই বেহেশতে প্রবেশ করবে।’’ ২৬৬
২৬৬. ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম, ৭ পৃ
সায়্যিদুনা হাসান বসরী (رضي الله عنه) এর আকিদা:
শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) খোলাফায়ে রাশেদীন (رضي الله عنه) এর বানী ছাড়াও আওলিয়ায়ে কেরাম এবং বিভিন্ন আলেমদের উক্তিও এনেছেন। হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) বলেন,
وُدِدْتُ لَوْ كَانَ لِى مِثْلُ جَبَلِ اُحُدٍ ذَهُبًا فَانْفَقْتُه عَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ ﷺ
-‘‘আমি পছন্দ করি যে, আমার কাছে যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকত তবে তা আমি হুযুর পাক (ﷺ)’র মিলাদ শরীফে খরচ করতাম।’’ ২৬৭
২৬৭. ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম, ৭ পৃ.
হযরত জুনাইদ বোগদাদী (رحمة الله) এর আকিদা:
তিনি বলেন,
مَنْ حَضَرَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ ﷺ وَعّظَّمَ قَدُرَهُ فَقَدْ نَازَ بِالْاِيْمَانِ
-‘‘যে ব্যক্তি রাসূলে পাক (ﷺ)’র মিলাদ শরীফে উপস্থিত হবে এবং সাধ্যানুযায়ী তাজিম করবে সে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সফলতা অর্জন করবে।’’ ২৬৮
২৬৮. ইমাম ইবনে হাজার হাইতামী, আন-নিমাতুল কোবরা আলাল আলামা কি মাওলিদী সায়্যিদি ওলদে আদাম, ৮ পৃ.
আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) এর আকিদা:
শাইখুল ইসলাম ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) বলেন-
الموالد والأذكار الَّتِي تفعل عندنَا أَكْثَرهَا مُشْتَمل على خير، كصدقة، وَذكر، وَصَلَاة وَسَلام على رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم ومدحه،
-‘‘আমরা যে মিলাদ মহফিল এবং যিকির আযকার করি তার সবটুকুই উত্তম। যেমন সাদকাহ, যিকির, নামায এবং রাসূল (ﷺ) এর দরূদ শরীফ পড়া।’’ ২৬৯
২৬৯. ইমাম ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ১০৯ পৃ.
আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) এর আকিদা:
বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) বলেন,
ولا زال أهل السلام يحتفلون بشهر مولده- عليه السّلام-، ويعملون الولائم، ويتصدقون فى لياليه بأنواع الصدقات، ويظهرون السرور، ويزيدون فى المبرات. ويعتنون بقراءة مولده الكريم، ويظهر عليهم من بركاته كل فضل عميم. ومما جرب من خواصه أنه أمان فى ذلك العام، وبشرى عاجلة بنيل البغية والمرام، فرحم الله امرآ اتخذ ليالى شهر مولده المبارك أعيادا،
-‘‘প্রতিটি যুগে মুসলমানগণ নবী করীম (ﷺ) এর বেলাদাত শরীফের মাসে মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আসছে। আনন্দেচিত্রে খাবার তৈরি ও দাওয়াতের আয়োজন করছে। ঐ রাতে (১২ই রবিউল আউয়াল) দান-সাদকা করে আসছে। বৈধপন্থায় আনন্দ উদ্যাপন এবং সৎ কর্মের প্রতি প্রতিযোগিতায় করে আসছে। সবিশেষে মিলাদ শরীফ পড়ে আসছে। তাই, তাদের প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ করুণার দ্বারা উন্মোচিত হচ্ছে। আর যে বছর মিলাদে মোস্তফার (ﷺ) ব্যবস্থা করা হয়, সে বছর আল্লাহ সমস্ত বালা-মসিবত থেকে পরিত্রান দান করেন। মিলাদ ব্যবস্থাকারীদের মনোবাসনাপূর্ণ হয়। লোকদের প্রতি মহান আল্লাহ সীমাহীন দয়া বর্ষণ করেন। ফলে তারা মিলাদুন্নবীর (ﷺ) প্রতিটি রাতে খুশি উদযাপন (ঈদ হিসেবে পালন) করে।’’ ২৭০
২৭০.ইমাম-কাস্তাল্লানী,আল-মাওয়াহিবুল লদুনিয়্যাহ, ১/৯০ পৃ., আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব, ১/২৬২ পৃষ্ঠা
আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) মাওয়াহিবুল্লা দুনিয়ায় এবং শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) ‘মাসাবা বিস সুন্নাহ’ এর মধ্যে বলেছেন-
ليلة مولده أفضل من ليلة القدر
-‘‘রাসূল (ﷺ) এর বেলাদত শরীফের রাত কদরের রাত থেকেও উত্তম।’’ ২৭১
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৭১.
ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লাদুনীয়াহ, ১/৮৮ পৃ., শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী, মাসাবাতা বিস সুন্নাহ, ৫৯ পৃ.
❏ এ বিষয়ে ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) লিখেন-
عَنْ بَعْضِ الشَّافِعِيَّةِ: أَنَّ أَفْضَلَ اللَّيَالِي لَيْلَةُ مَوْلِدِهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - ثُمَّ لَيْلَةُ الْقَدْرِ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْإِسْرَاءِ وَالْمِعْرَاجِ، ثُمَّ لَيْلَةُ عَرَفَةَ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ، ثُمَّ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، ثُمَّ لَيْلَةُ الْعِيدِ
-‘‘একদল শাফেয়ী ফকীহগণ থেকে বর্ণিত আছে, সবচেয়ে উত্তম রাত হলো মিলাদুন্নবী (ﷺ)-এর রাত, তারপর লাইলাতুল ক্বদরের রাত, তারপর ইসরা বা মি‘রাজের রাত, তারপর আরাফাতের রাত, তারপর জুম‘আর রাত, তারপর ১৫ই শাবান তথা শবে বরাতের রাত, তারপর দুই ঈদের রাত।’’ (ইমাম ইবনে আবিদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/৫১১ পৃ.)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
মুহাদ্দিস শায়খ তাহের পাটনী (رحمة الله) এর আকিদা:
তিনি পবিত্র রবিউল আউয়াল সর্ম্পকে লিখতে গিয়ে বলেন-
مَظُهَرُ مَنْبَع الْاَنْوَارِ وَالرَّحْمَةِ شَهْرُ رَبِيْعُ الْاَوَّلِ وَاَنَّه شَهْرٌ اُمِرْنَا بِاِظْهَارِ الْحَبُوْرِ فِيْهِ كُلُّ عَامٍ
-‘‘রবিউল আউয়াল মাস নূর এবং রহমত প্রকাশের উৎস। এটি এমন একমাস যে প্রতি বছরেই এ মাসে খুশি উদযাপন করার হুকুম দেয়া হয়েছে।’’ (আল্লামা তাহের পাটনী, মাজমাউল বিহার, ৩য় খ-, ৫৫০ পৃ.)
মুহাদ্দিস ইবনে জাওযী (رحمة الله) এর আকিদা:
তিনি বলেন,
جَعَلَ لِمَنْ فَرِحَ بِمَوْلِدِه حِجَابًا مِّنَ النَّارِ وَيِتْرًا وَمَنْ اَنْفَقَ فِى مَوْلِدِه دِرْهَمَا كَانَ الْمُصْطَفٰى ﷺ لَه شَافِعًا و مُشَفَّعًا
-‘‘যে ব্যক্তি রাসূলে পাক (ﷺ) এর বেলাদত শরীফে খুশি উদযাপন করবে তা জাহান্নামের আগুনের জন্য পর্দা এবং প্রাচীর হবে। আর যে ব্যক্তি রাসূলে পাক (ﷺ) মিলাদ শরীফে এক দিরহাম খরচ করবে কিয়ামতে দিবসে রাসূলে পাক (ﷺ) তার জন্য সুপারিশ করবেন।’’ ২৭২
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২৭২.
আল্লামা ইবনে জাওযী, মাওলিদুল আরুস (মাওলুদুন নববী শরীফ নামে পরিচিত), ৯ পৃ.,
❏ মিলাদের ফজিলত প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে জাওযী (رحمة الله) (ওফাত ৫৯৭ হিজরী) বলেছেন ও শারিহে বোখারী আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) (ওফাত ৯২৩ হিজরী) উল্লেখ করেছেন,
وَقَالَ اِلْإِمَام الْحَافِظْ أَبُوْ الْخَيْر بْنِ الْجَزْرِيْ رحمه الله تَعَالى شَيْخ القراء: من خواصه أَنَّهُ أَمَان فِي ذَلِكَ الْعام
-“শাইখুল কুর্রা ইমাম হাফিজ আবুল খায়ের ইবনে জাওযী (رحمة الله) বলেছেন: মিলাদ শরীফের খুছুছিয়াত বা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর উছিলায় লোকেরা ঐ বৎসর নিরাপদে থাকবেন।”
(আল্লামা নুরুদ্দিন হালাবী: ইনছানুল উয়ুন, ১ম খণ্ড, ১২৪ পৃ:; আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী: তাফসিরে রুহুল বয়ান, ৯ম খণ্ড, ৬৪ পৃ:; ইমাম কাস্তালানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খণ্ড, ১৪৮ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী শামী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১ম খণ্ড, ৩৬২ পৃ:)
তাই বর্তমান জামানার বিপদ-আপদ ও গজব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে ও আল্লাহর রহমতের চঁাদরের নিচে থাকার জন্য আমাদের বেশী বেশী মিলাদে মোস্তফার আয়োজন করা উচিৎ।
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
আহলে হাদিসদের ইমাম নবাব সিদ্দিক হাসান ভূপালীর সাক্ষ্য:
এখন গায়রে মুকাল্লিদগণের মুজাদ্দিদ শায়খুল ইসলাম নবাব সিদ্দিক হাসান খাঁন ভূপালীর সাক্ষ্য পেশ করা হবে যাতে মিলাদ শরীফ অস্বীকারকারীগণ ২য় বার দৃষ্টিপাত করে। নবাব সিদ্দিক বলেন-
جس كو حضرت كے ميلاد كا حال منكر فرحت حاصل نہ ہو اور شكر خدا كا حصول پہ اس نعمت كے نہ كر سے وه مسلمان نهيں
-“যে ব্যক্তি হুযুর (ﷺ)’র মিলাদ শরীফ শুনে খুশি হয় না এবং আল্লাহর মহান নিয়ামত অর্জনের শুকরিয়া করে না, সে মুসলমান নয়।’’ (শামামাতুল আম্বরিয়া, ১২ পৃ.)
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আহলে হাদিসের বরণ্য আলেম নবাব সিদ্দিক সাহেব যারা মিলাদ শরীফে খুশি উদযাপন করে না তাদেরকে কুফুরী ফাতওয়া দিয়েছেন। এখন আহলে হাদিসপন্থি এবং দেওবন্দীদের বাতিল আকিদার প্রতি দৃষ্টিপাত করুন, কেননা “আশ-শামামাতুল আম্বরিয়া’ এমন একটি গ্রন্থ যাকে আশরাফ আলী থানবীও গ্রহণযোগ্য বলেছেন। (আশরাফ আলী থানবী, নশরুত্তীব, ১৫ পৃ.)
হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কীর উক্তি:
দেওবন্দীদের আকাবের হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (رحمة الله) বলেন,
فقير مشرب يہ ہے محفل مولد میں شريك ہوتا بلكہ بركات كا ذريعہ سمجہ كر ہر سال منعقد كرتا ہوں اور قيام میں لطف اور لذت پا ہوں
-“এই ফকীরের নিয়ম হল এই যে, আমি মওলুদ মাহফিলে অংশ গ্রহণ করি, এমনকি বরকতের উসিলা মনে করে প্রতি বছর উক্ত অনুষ্ঠান করে থাকি এবং কিয়ামের মধ্যে লুতফ (ভালবাসা) ও লাজ্জাত (স্বাদ) পেয়ে থাকি।”২৭৩
২৭৩. হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী, কুল্লিয়াতে এমদাদিয়া, ২০৭ পৃ., ফয়সালায়ে হাফতে মাসায়েল, ৭-৮ পৃ.
হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (رحمة الله)’র লিখিত ‘ইমদাদুল মুশতাকে’ও রয়েছে যেখানে তিনি স্বীকার করেছেন যে, রাসূলে পাক (ﷺ) মিলাদ শরীফে তাশরীফ আনেন। নিম্নে আপনাদের খেমতে কিতাবের মূল উদ্বৃতি উল্লেখ করা হল। তিনি বলেন-
البتہ وقت قيام كے اعتقاد تولد كا نہ كرنا چاہئے - اگر احتمال تشريف آورى كا كيا جا ئے مضائقہ نہیں كيوں كہ عالم خلق مقيد برزمان ومكان ہے - ليكن عالم امر دونوں سے پاك ہے – پس قدم رنجہ فرمانا ذات بابر كات كا بعيد نہیں
-“মীলাদ শরীফে” কিয়াম করার সময় হুযূর (ﷺ) এখন ভুমিষ্ট হচ্ছেন এ ধরনের বিশ্বাস না রাখা উচিত। আর যদি মাহফিলে তাশরীফ আনেন এমন বিশ্বাস রাখে, তাহলে অসুবিধা নেই, কারণ এ নশ্বর জগতে কাল ও স্থানের সাথে সম্পৃক্ত। আর পরকাল স্থান-কালের সম্পর্ক থেকে মুক্ত।’’ ২৭৪
২৭৪. হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী : শামায়েলে এমদাদীয়া : পৃষ্ঠা নং- ১০৩ পৃ. মাকতুবায়ে থানবী, দেওবন্দ এবং এমদাদুল মুশতাক, ৫৬ পৃ.
পবিত্র কুরআন সুন্নাহ এবং বিদগ্ধ মুহাদ্দিস মুফাস্সির এবং মুহাক্কীকগণের অনাবদ্য কিতাব দ্বারা প্রমাণিত হল যে দেওবন্দী এবং আহলে হাদীসগং আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।