বাব নং ২২২. ২. বিনয় ও সচ্চরিত্র


২- بَابُ مَا جَاءَ فِي الرِّفْقِ وَالْـخُلْقِ

٤٥٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ زِيَادٍ، عَنْ أُسَامَةَ بْنِ شَرِيْكٍ، قَالَ: شَهِدْتُ رَسُوْلَ اللهِ  وَالْأَعْرَابُ يَسْأَلُوْنَهُ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! مَا خَيْرُ مَا أُعْطِيَ الْعَبْدُ؟ قَالَ : خُلُقٌ حَسَنٌ.


৪৫৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা যিয়াদ থেকে, তিনি উসামা ইবনে শারীক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)  এর খেদমতে হাযির হয়েছি। তখন কতিপয় গ্রাম্য লোক তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! বান্দাকে যা কিছু দেওয়া হয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কি? তখন তিনি বললেন, সচ্চরিত্র। 

(আল মু’জামুল কবীর, ১/১৮০/৪৬৫)


ব্যাখ্যা: মানুষের নেক আমল সচ্চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। মানব জীবনে সচ্চরিত্রের ভূমিকা অপরসীম। মানুষের পার্থিব জীবন এবং পারলৌকিক জীবনের যাবতীয় সুখ,শান্তি ও নিরাপত্তা এর উপর নির্ভর করে। মহানবী  ই হলেন সর্বোচ্চ চরিত্রের অধিকারী। যেমন 


❏আল্লাহ বলেন,انك لعلى خلق عظيم “নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।” 

(সূরা কালাম, আয়াত: ৪)


❏এ প্রসঙ্গে রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, بعثت لاتمم مكارم الاخلاق “আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি”।  ২১০

➥ মুয়াত্তা ইমাম মালিক (رحمة الله), সূত্র: মিশকাত, পৃ: ৪৩২

 

❏রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, اكمل المؤمنين ايمانًا احسنتم خلقا “মুমিনের মধ্যে উত্তম ও পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অধিকারী তারাই, যারা সুন্দর চরিত্রের অধিকারী।”  ২১১

➥ প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠাঃ  ৪৩৩


❏তিনি আরো এরশাদ করেন, ان من خياركم احسنكم اخلاقا “তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম যার চরিত্র সর্বোৎকৃষ্ট।”  ২১২

➥ বুখারী ও মুসলিম, সূত্র: মিশকাত, পৃষ্ঠাঃ  ৪৩২-৩৩

 

❏অপর হাদিসে আছে, কিয়ামতের দিন মু’মিন ব্যক্তির নেকীর পাল্লায় অধিকভারী বস্তু হবে উত্তম চরিত্র।   ২১৩

➥ আবু দাউদ, সূত্র: মিশকাত, পৃ: ৪৩১


পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। তাকে অবশ্যই সচ্চরিত্রবান হতে হবে। ফলে সে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। অতএব প্রত্যেক মুসলমানের সচ্চরিত্রবান হওয়া উচিত। 


٤٥٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : لَوْ أَنَّ الرِّفْقَ وَحُسْنَ الْـخُلُقِ يُرَىٰ، لَمَا رُئِيَ مِنْ خَلْقِ اللهِ تَعَالَىٰ خَلْقٌ أَحْسَنُ مِنْهُ، وَلَوْ أَنَّ الْـخَرَقَ خَلْقٌ يُرَىٰ، لَمَا رُئِيَ مِنْ خَلْقِ اللهِ تَعَالَىٰ خَلْقٌ أَقْبَحُ مِنْهُ.


৪৫৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, যদি বিনয়, নম্রতা ও সচ্চরিত্রকে দৈহিক আকৃতিতে দেখানো হতো, তাহলে সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে এর চেয়ে অধিক সুন্দর কিছু দৃষ্টিগোচর হতোনা। পক্ষান্তরে অসচ্চরিত্রকে যদি দৈহিক আকৃতিতে দেখানো যেতো, তবে এর চেয়ে খারাপ ও বিশ্রি আকৃতির কোন বস্তু দৃষ্টিগোচর হতোনা।


ব্যাখ্যা: বিনয় অর্থ হলো অন্যদের তুলনায় নিজেকে ছোট মনে করা এবং অন্যদেরকে বড় মনে করা। বিনয় আল্লাহর নিকট খুবই পছন্দনীয়। এটি আল্লাহ ও বান্দার কাছে মর্যাদা লাভের একটি বিশেষ সোপান। 


❏এপ্রসঙ্গে রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন,وما تواضع احد لله الا رفعه الله “যদি কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনয় অবলম্বন করে, তবে আল্লাহ তায়ালা তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।”  ২১৪

➥ মুসলিম শরীফ, সূত্র: রিয়াদুস সালেহীন, পৃষ্ঠাঃ  ২৮২


❏অন্যত্র নবী করিম (ﷺ)  এরশাদ করেন, ان الله تعالى رفيق يحب الرفق ويعطى على الرفق ما لا يعطى على العنف “আল্লাহ তায়ালা নিজে বিনয়ী, তিনি বিনয়কে পছন্দ করেন এবং তিনি বিনয় অবলম্বনকারীকে যা দান করেন তা কঠোর চিত্তের ব্যক্তিকে দান করেন না।”  ২১৫

 ➥ মুসলিম শরীফ, সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠাঃ  ৪৩১


❏পবিত্র কুরআনেও বলা হয়েছে,وعباد الرحمن الذين يمشون على الارض هونا “রহমানের (আল্লাহর) বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে বিনয়ের সাথে চলাফেরা করে”। 

(সূরা ফুরকান, আয়াত: ৬৩) 


সুতরাং আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত বান্দা হওয়ার জন্য প্রত্যেক মুসলমানকে বিনয়ী হওয়া একান্ত আবশ্যক।


٤٥٦- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: مَا أَخْرَجَ رَسُوْلُ اللهِ  رُكْبَتَهُ بَيْنَ يَدَيْ جَلِيْسٍ لَهُ قَطُّ، بَلْ يَقْعُدُ مُسَاوِيًا لَـهُمْ، وَلَا تَنَاوَلَ أَحَدٌ يَدَهُ، فَتَرَكَهَا قَطُّ حَتَّىٰ يَكُوْنَ هُوَ يَدَعُهَا، وَمَا جَلَسَ إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ  أَحَدٌ قَطُّ، فَقَامَ حَتَّىٰ يَقُوْمَ قَبْلَهُ، وَمَا وَجَدْتُ شَيْئًا قَطُّ أَطْيَبَ مِنْ رِيْحِ رَسُوْلِ اللهِ . وَفِيْ رِوَايَةٍ، قَالَ: وَمَا قَامَ إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ  رَجُلٌ فِيْ حَاجَةٍ، فَانْصَرَفَ عَنْهُ قَبْلَهُ، حَتَّىٰ يَكُوْنَ هُوَ الْـمُنْصَرِفَ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ  إِذَا صَافَحَ أَحَدًا لَا يَتْرُكُ يَدَهُ، إِلَّا أَنْ يَكُوْنَ هُوَ الَّذِيْ يَتْرُكُ.


৪৫৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মুহাম্মদ থেকে, তিনি আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  কোন বৈঠকে উপবেশনকারীদের মধ্যে স্বীয় হাঁটু মোবারক কখনো সামনে লম্বা করে দিয়ে বসতেন না, বরং সর্বদা সমান্তরাল হয়ে বসতেন। (মুসাফাহার সময়) যতক্ষণ অপর ব্যক্তি হাত স্বেচ্ছায় ছাড়ত না ততক্ষণ তিনি নিজের হাত মোবারক নিজে ছাড়তেন না এবং রাসূল (ﷺ)  এর সামনে বসা ব্যক্তি দাঁড়ানোর আগে তিনি দাঁড়াতেন না। হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) ’র পবিত্র দেহের চেয়ে অধিক সুগন্ধিময় কোন বস্তু পাইনি। অন্য এক বর্ণনায় আছে, আনাস (رضي الله عنه) বলেন, কোন ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)  ’র নিকট কোন প্রয়োজনে দাঁড়ায়নি, এ অবস্থায় যে, তিনি পবিত্র মুখমন্ডল ফিরিয়ে নিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে না নিয়েছে। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি মুখ না ফিরানো পর্যন্ত তিনি তার মুখমন্ডল ফিরাতেন না।

অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূল (ﷺ)  যখন কারো সাথে মুসাফাহা করতেন তখন তাঁর হাত মোবারক ছাড়তেন না যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি ছেড়ে দিতেন না। 

(ইত্তেহাফ, ৭/৭৮/৬৪২৫)


ব্যাখ্যা: হাদিসে বর্ণিত বিষয়গুলো রাসূল (ﷺ)  এর মহান চরিত্রের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। তিনি নিজের কষ্ট হলেও কারো মনে কষ্ট দিতেন না এবং তাঁর কষ্ট হচ্ছে এ জিনিসটাও কাউকে বুঝতে দিতেন না। অবুঝ ও জ্ঞানহীন লোকদের অনর্থক কর্মকান্ডকে তিনি মানবতা ও উত্তম চরিত্রের কারণে সহ্য করতেন।


٤٥٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ : أَنَّ رَجُلًا نَادَىٰ رَسُوْلَ اللهِ  فِيْ مَنْزِلِهِ، فَقَالَ : لَبَّيْكَ قَدْ أَجَبْتُكَ، فَخَرَجَ إِلَيْهِ.


৪৫৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবদুল্লাহ থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) কে আহŸান করলেন। এ সময় তিনি বাড়িতেই ছিলেন। তখন বললেন, “লাব্বায়েক” আমি উপস্থিত আছি। তোমার ডাকে সারা দিচ্ছি এই বলে তিনি তার দিকে বেরিয়ে এলেন। 

(জামেউল আহাদীস, ২৫/৪৭৬/২৮৩৯৮)


٤٥٨- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْـمُنْكَدِرِ، عَنْ أُمَيْمَةَ بِنْتِ رَقِيْقَةَ، قَالَتْ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ  لِأُبَايِعَهُ، فَقَالَ : إِنِّيْ لَسْتُ أُصَافِحُ النِّسَاءَ.


৪৫৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির থেকে, তিনি উমাইমা বিনতে রাকীকাহ্ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বাইয়াত গ্রহণের জন্য নবী করিম (ﷺ)  ’র কাছে আসলাম। কিন্তু তিনি বললেন, আমি মহিলাদের সাথে হাত মিলাই না। 

(মুসনাদে আহমদ, ৪৫/৫৭৩/২৭৫৯৪)


٤٥٩- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيْهِ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : مَنْ لَـمْ يَقْبَلْ عُذْرَ مُسْلِمٍ يَعْتَذِرُ إِلَيْهِ، فَوِزْرُهُ كَوِزْرِ صَاحِبِ مَكْسٍ، فَقِيْلَ: قَالُوْا: يَا رَسُوْلُ! وَمَا صَاحِبُ مَكْسٍ؟ قَالَ : عَشَّارٌ.


৪৫৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আলকামা থেকে, তিনি ইবনে বুরাইদা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন ওযর পেশকারী মুসলমানের ওযর গ্রহণ করেনা, তার পাপ সাহেবে মাকসের পাপের ন্যায় হবে। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হলো হে আল্লাহর রাসূল! صاحب مكس কে? উত্তরে তিনি বলেন, عشار অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি যে কঠোরতার সাথে উশর আদায় করে। 

(মুসনাদুল হারেস, ২/৮৩৬/৮৮২)


ব্যাখ্যা: কোন মুসলমান কোন ব্যাপারে ওযর তথা অপারগতা কিংবা যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখালে তা গ্রহণ করা উচিত। এরূপ ওযর গ্রহণ না করা জোর জবরদস্তি উশর বা কর আদায়কারীর পাপের সমান পাপ। এরা প্রজাদের উপর যুলুম ও অত্যচার করে এবং তাদের থেকে ঘুষগ্রহণ করে এবং নানাভাবে হয়রানী করে থাকে। এটা অনেক বড় যুলুম। এরূপ জালিমের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।


٤٦٠- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: قَال رَسُوْلُ اللهِ  : مَنِ اعْتَذَرَ إِلَيْهِ أَخُوْهُ الْـمُسْلِمُ، فَلَـمْ يَقْبَلْ عُذْرَهُ، فَوِزْرُهُ كَوِزْرِ صَاحِبِ مَكْسٍ يَعْنِيْ: عَشَّارًا.


৪৬০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা নাফে থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, যার নিকট তার কোন মুসলমান ভাই (কোন বিষয়ে) ওযর পেশ করে কিন্তু সে যদি ওযর গ্রহণ না করে, তাহলে তার পাপ যুলুম করে উশর আদায়কারীর ন্যায় হবে। 

(ইত্তেহাফ, ৬/৬৭/৫৩৫৩)


٤٦١- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ النَّبِيَّ ، قَالَ : إِذَا أَتَى احَدُكُمْ بِطِيْبٍ، فَلْيُصِبْ مِنْهُ.


৪৬১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু যুবাইর থেকে, তিনি জাবির (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন তোমাদের কাউকে সুগন্ধি প্রদান করা হয় তখন সেটা গ্রহণ করা তার উচিত।


ব্যাখ্যা: সুগন্ধি নবী করিম (ﷺ) ’ র খুবই প্রিয় বস্তু ছিল। তিনি কখনো সুগন্ধি ফিরিয়ে দিতেন না।




Top