ইস্তিহাযা استحاضة শব্দটি ح + ي + ض ধাতু থেকে উদ্গত হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ প্রবাহিত হওয়া।
শরীআতের পরিভাষায় ইস্তিহাযার সংজ্ঞা সম্বন্ধে আল্লামা ইব্ন নুজায়ম (رحمة الله) বলেন-
هو دم يسيل من العاذل من امرأة لداء بها
কোন রোগ ব্যধির কারণে কোন মহিলার গর্ভাশয়ের মুখে বিদ্যমান ব্যাগ থেকে যে রক্ত প্রবাহিত হয় একে ইস্তিহাযা বলে (মা‘আরিফুস্ সুনান)।
ফিক্হের কিতাবসমূহে ইসতিহাযার সংজ্ঞা বলা হয়,
هو دم نقص عن ثلثة أيام أو زاد على عشرة فى الحيض وعلى أربعين فى النفاس
হায়িযের ক্ষেত্রে তিন দিন তিন রাত অপেক্ষা কম অথবা দশ দিন দশ রাত অপেক্ষা বেশী এবং নিফাসের ক্ষেত্রে চল্লিশ দিনের বেশী রক্তস্রাব হলে একে ‘ইস্তিহাযা’ বলা হয় (শামী)।
যদি নয় বছরের কম বয়স্কা কোন মেয়ের রক্তস্রাব দেখা দেয় তবে তা ইস্তিহাযা বলে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে পঞ্চাশ বছরের পরও যদি কারো রক্তস্রাব দেখা দেয় এবং রক্তের রং যদি লাল বা কালো হয় তবে তা হায়িয বলে গণ্য হবে। আর যদি হলদে, সবুজ বা মেটে রংয়ের হয় তবে তা ‘ইস্তিহাযা’ বলে গণ্য হবে। অবশ্য পূর্বেও যদি কোন মহিলার হলদে, সবুজ, মেটে রং -এর স্রাব হওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে তবে পঞ্চাশ বছরের পরও হায়িয বলে গণ্য হবে। কোন গর্ভবতী মহিলা যদি তার গর্ভের প্রথম অবস্থায় অথবা সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময় বাচ্চা বের হওয়ার পূর্বে রক্ত দেখা দেয় তবে তা ‘ইস্তিাহাযা’ বলে গণ্য করা হবে (আলমগীরী, ১ম খণ্ড)।
যে মহিলা তিন বা চার দিন হায়িয আসার অভ্যাস ছিল সে যদি কোন মাসে দশ দিনের অধিক রক্ত দেখতে পায় তবে অভ্যাসের দিনগুলো হায়িয হবে এবং বাকী দিনগুলো ইস্তিহাযা হবে (হিদায়া)।
বালিগ হতেই কোন মহিলার যদি দশ দিনের চেয়ে অধিক রক্তস্রাব হয় তবে দশ দিন হায়িয হবে আর বাকী দিনগুলো ইস্তিহাযা বলে গণ্য করা হবে (বাহরুর বাইক)। যদি কোন মহিলার প্রথমবারে রক্তস্রাব আরম্ভ হয়ে আর বন্ধ না হয় বরং একাধিক্রমে তা কয়েক মাস পর্যন্ত জারী থাকে তবে যে দিন থেকে রক্তস্রাব আরম্ভ হয়েছে যে দিন থেকে দশ দিন হায়িয এবং অবশিষ্ট বিশ দিন ‘ইস্তিহাযা’ হবে। এভাবে প্রত্যেক মাসে দশদিন হায়িয এবং বাকী বিশদিন ইস্তিহাযা ধরে নিতে হবে।
যদি কোন মহিলা এমন হয় যে, হায়িযের ব্যাপারে তার নির্ধারিত কোন অভ্যাস নেই। কোন মাসে চার দিন কোন মাসে সাত দিন আবার কোন মাসে দশ দিনও হয়েছে। এরূপ মহিলার যদি কোন মাসে দশ দিনের অধিক স্রাব দেখা দেয় তবে দেখতে হবে পূর্বের মাসে যে কতেক দিন হায়িয হয়েছিল এ মাসে সে ক’দিন হায়িয হবে। আর অবশিষ্ট দিনগুলো ‘ইস্তিহাযা’ হবে।
যদি কোন মহিলার এক বা দুই দিন রক্তস্রাব হওয়ার পর পনের দিন পাক থাকে এরপর আবার এক বা দুই দিন রক্তস্রাব হয় তবে সে যে পনের দিন পাক ছিল তা পবিত্রতার সময় হিসাবেই গণ্য হবে। কিন্তু এ পনের দিনের এদিক ওদিক যে দুই এক দিন রক্তস্রাব হয়েছে তা ইস্তিহাযা হিসাবে গণ্য হবে (শামী)।
এক দিন, দুই দিন অর্থাৎ কয়েক দিন রক্তস্রাব হয়ে যদি পাঁচ, সাত, দশ দিন অর্থাৎ পনের দিনের কম রক্ত বন্ধ থাকে এরপর পুরনারয় রক্ত দেখা দেয় তবে মধ্যখানের দিনগুলোর পবিত্রতার দিন হিসাবেই গণ্য বরং এ গুলোর স্রাবের দিন হিসাবেই গণ্য হবে। অতএব যে কতেক দিন হায়িয হওয়ার নিয়ম ছিল সে কয় দিন হায়িয হবে আর বাকী দিনগুলে ‘ইস্তিহাযা’ হবে। যেমন কোন মহিলার অভ্যাস ছিল চাঁদের ১ম, ২য় ও তৃতীয় দিন রক্তস্রাব হওয়া। একমাস এমন হল যে মাসের পহেলা তারিখে স্রাব এসে চৌদ্দ দিন রক্ত বন্ধ থাকল, ষোল তারিখে আবার রক্ত দেখা দিল এ অবস্থায় মনে করতে হবে যে, ষোল দিনই অনবরত তার স্রাব জারী ছিল। এ ষোল দিনের প্রথম তিন দিন হায়িয হবে এবং অবশিষ্ট তের দিন ইস্তিহাযা হিসাবে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে যদি চার, পাঁচ এবং ছয় এই তিন দিন রক্তস্রাব হওয়ার অভ্যাস থাকে তবে এই তিন দিন হায়িযের মধ্যে গণ্য হবে। যদিও এই দিনগুলোতে রক্ত দেখা যায় নি আর প্রথম তিন দিন ও পরের দশ দিন ইস্তিহাযা বলে বিবেচিত হবে। আর যদি কোন মহিলার কোন নির্ধারিত নিয়ম না থাকে বরং বালিগা হতেই ইস্তিহাযা হয়ে যায় তবে প্রথম দশ দিন হায়িয এবং বাকী ছয় দিন ‘ইস্তিহাযা’ হবে (বাহ্রুর রাইক)।
প্রসবান্তে যদি কোন মহিলার চল্লিশ দিনের অধিক রক্তস্রাব হয় এবং এটাই তার প্রথম প্রসব হয়ে থাকে তবে চল্লিশ দিন নিফাস হবে এবং অবশিষ্ট দিনগুলো ইস্তিহাযা হবে (হিদায়া)।
যদি পূর্বও সন্তান প্রসব হয়ে থাকে এবং নিফাসের ক্ষেত্রে তার নির্ধারিত কোন অভ্যাস থাকে তবে অভ্যাসের দিনগুলো নিফাস হবে এবং বাকী দিনগুলো হবে ‘ইস্তিহাযা’ (বাহরুর রায়িক)।
কোন মহিলার প্রসবান্তে ত্রিশ দিন রক্তস্রাব হওয়ার অভ্যাস ছিল এরূপ কোন মহিলা যদি প্রসবের পর চল্লিশ দিনের অধিক রক্ত দেখতে পায় তবে ত্রিশ দিন নিফাসের মধ্যে গণ্য হবে এবং বাকী দিনগুলো হবে ইস্তিহাযা (হিদায়া, ১ম খণ্ড)।