দ্বিতীয় প্রশ্নঃ উত্তর দাতার এ উক্তি- নবী করীম (ﷺ) আজল (অনন্তকাল) থেকে আবদ (চিরকাল) পর্যন্ত (সৃষ্টি জগতে) যা কিছু সংঘটিত হয়েছে আর যা কিছু সংঘটিত হবে সর্ব বিষয়ে অবগত আছেন।'
আমি বলছি, প্রথম জবাব আপনারা উত্তরদাতার উক্তির এমন অনুবাদ করেছেন যা আপনাদের ন্যায় (কাল্পনিক ও সন্দিহানদের) সন্দেহ আরাে অধিক। বৃদ্ধির কারণ হবে। এ জন্য যে, আপনাদের বক্তব্যে চিরকাল এর সম্পর্ক يعلم (জানেন) এর সাথে হওয়ার অবকাশ রয়েছে। আর আজল’ শব্দকে যখন বাক্যের পরিভাষায় ব্যবহার করা হবে, তখন অর্থ হবে রসুলে পাক (ﷺ) এর জ্ঞান আজল (অনন্তকাল) থেকেই বিদ্যমান ছিলাে, যার কোন উৎপত্তি (সুচনা) নেই। এটা সুস্পষ্ট কুফর, যদ্বারা রাসুলে পাক (ﷺ) এর (চিরস্থায়ী) হওয়া আবশ্যকীয় হয়ে পড়বে। অথচ উত্তরদাতার উক্তিতে এমন সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। তবে বক্তব্য নিম্নরূপ (পৃষ্টা-৭) “নিশ্চয়ই যে সব কিছু সংঘটিত হয়নি আপনি তাও জানতেন ঐ সকল অদৃশ্য জ্ঞা:সমূহে শামিল রয়েছে যা আদি থেকে সংঘটিত হয়েছে, আর অনন্তকাল পর্যন্ত যা সংঘটিত, হবে।
বাকী রইলাে, রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর জ্ঞানে আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত সকল কায়েনাত শামিল হওয়া।' জেনে রাখুন! যখন ‘আজল ও ‘আবদ’ ব্যবহৃত হয় তখন এর দ্বারা উদ্দেশ্য তাই হয় যা কালাম শাস্ত্রবিদদের। পরিভাষায় অর্থাৎ তা যার অস্তিত্বের সুচনা নেই এবং তা যার বাকীর অন্ত নেই। এ ভিত্তিতে সকল বস্তুর জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্পর্কে (এ ধরনের জ্ঞান) আমি আপনাদের ব্যক্ত করেছি যে, এগুলাে পবিত্রতম আল্লাহর সাথেই খাস। বান্দাদের জন্য আকল ও শরীয়ত উভয় দিক দিয়ে অসম্ভব। কিন্তু তবুও এ উভয় শব্দের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। আর তা দ্বারা ভবিষ্যতের দীর্ঘ কালই উদ্দেশ্য হয়। যেমন ‘আবদ’ শব্দের ব্যাখ্যায় কাজী বায়দাবী (رحمة الله) স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেছেন।
আর আমার সরদার, আরিফ বিল্লাহ মাওলানা নিজামী (কুঃ সিঃ) রাসুলে সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর প্রশংসায় বলেন, অর্থাৎ আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত যা কিছু বিদ্যমান রয়েছে এ জন্য অস্তিত্ব লাভ করেছে যে, মুহাম্মদ (ﷺ) এর নামের সৌন্দর্যে পরিণত হবে অর্থাৎ তাঁর খাদেম ও অনুচরবর্গ হবে এবং হুজুরের সম্মান ও মর্যাদার জুলুসে অন্তর্ভুক্ত হবে। এখন আপনাদের কি ধারণা যে, মাওলানা এখানে ‘আজল’ দ্বারা কি বুঝিয়েছেন? যদি আপনারা তা বাক্যের পরিভাষায় ব্যবহার করেন, তাহলে (আল্লাহর পানাহ) সুস্পষ্ট কুফর হবে। তাহলে আপনাদের ভাইয়ের বাক্যকে কেন এ অর্থে ব্যবহার করছেন না, যে অর্থে আরিফ বিল্লাহর বাক্যকে ব্যবহার করছেন? আমি এ ইচ্ছে করেছিলাম এ বক্তব্যকে বিশ্লেষন করার জন্য যে, আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত এর স্থানে সৃষ্টির প্রথম দিবস থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লিখে দেবো। অতএব, আমি তাই লিখেছি। কিন্তু আপত্তির কৌশল তাড়াতাড়ি ফ্যাসাদের অর্থেই নিয়ে যায়।
দ্বিতীয় জবাবঃ যদি আপনি নিজেই (১৬ পৃষ্ঠায়) উত্তরদাতার বর্ণনা দেখতেন, তাহলে আজল’ ও ‘আবদ’ শব্দের মর্মার্থ জানতে পারতেন, যেমন আমরা জেনে নিয়েছি। অতঃপর তিনি বলেন-“নিঃসন্দেহে লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ ও রক্ষিত রয়েছে সেসব বস্তু যা সংঘটিত হয়েছে আর যা আদি থেকে অনন্ত কাল পর্যন্ত হবে। এর পর কেউ কি সন্দেহ পােষণ করবে যে, তারা এমন বস্তুর যার সৃষ্টির না কোন শুরু আছে, না কোন শেষ, একটি সীমাবদ্ধ ও সসীম লাওহে অঙ্কিত স্বীকার করেছে? বরং এর অর্থ তাই যা আমি বলেছি যে, প্রথম | দিবস থেকে শেষ দিবস পর্যন্ত সকলবস্তুর বর্ণনা যেভাবে বিশুদ্ধ হাদীসে রাসুলে পাক (ﷺ) থেকে বর্ণনা এসেছে যে, -আবদ’ পর্যন্ত সকল বস্তু লাওহে বিদ্যমান আছে।” আর তাতেও নিশ্চয়ই সে মর্মার্থ যা আমরা ব্যক্ত করেছি।
তৃতীয় জবাবঃ আফসুস, যদি আপনি স্বয়ং উত্তরদাতার রিসালার ১১ পৃঃ দেখতেন যেখানে তিনি তাফসীরে রুহুল বয়ান’ থেকে বক্তব্য বর্ণনা করেছেন-“হে নবী (ﷺ)! আপনি স্বীয় প্রতিপালকের অনুগ্রহ থেকে গােপনীয় নন যে, যা কিছু আজল থেকে হয়েছে এবং যা কিছু আবদ পর্যন্ত হবে, তা থেকে আপনার কিছু গােপনীয় রয়েছে। কেননা (জানুন) শব্দের অর্থ গােপনীয়। বরং আপনি জানেন যা কিছু গত হয়েছে আর সংবাদদাতা যা কিছু সংঘটিত হবে সে সম্পর্কে।
সুতরাং এ শব্দে বিজ্ঞ মুফাসির (রুহুল বয়ান গ্রন্থকার) হলেন উত্তরদাতার পেশওয়া। যদি তা পাপ হয়ে থাকে তাহলে এ তাফসীরকারের গুণাহ উত্তরদাতার চেয়েও জঘন্যতর। এ কারণে যে, উত্তরদাতাতাে তাঁর বক্তব্য স্বীয় পুস্তিকায় উদ্ধৃত করেছেন, আর মুফাসসির (رضي الله عنه)তাে আল্লাহর কালামের তাফসীরই (ব্যাখ্যা) করেছেন। সুতরাং ঐ শব্দের ভিত্তিতে (তার উপর) কুফর-পথভ্রষ্ট যেই হুকুম প্রয়ােগ করুন না কেন, সর্ব প্রথম তা ঐ মহান তাফসীরকারের উপর প্রয়ােগ করুন। অতঃপর জ্ঞানী উত্তরদাতার দিকে অগ্রসর হােন।