নারীর অর্থনৈতিক অধিকার
পুরুষ যেমন ধন-সম্পদের মালিক হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি করার অধিকার রাখে অনুরূপ ইসলামে নারীও ধন-সম্পদের মালিক হতে পারে এবং পর্দা সহকারে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারে। নারী স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিক ও মৃত নিকটাত্মীয়দের উত্তরাধিকারী হতে পারে। অনুরূপভাবে বিবাহের দেন-মাহরের মালিকও স্ত্রী। ইসলাম নারীর ওপর থেকে অর্থনৈতিক শোষণের অবসান ঘটায় এবং তাকে তার ন্যায্য অধিকার প্রদান করেছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
للرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْكَثُرَ نَصِيبًا مَفْرُوضًا
পুরুষদের জন্য ধন-সম্পদের অংশ রয়েছে যা পিতা-মাতা এবং নিকটাত্মীয়রা রেখে গেছেন এবং নারীদের জন্য ও সেই ধন-সম্পদে অংশ রয়েছে যা পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়রা রেখে গেছেন- কম হোক বা বেশী হোক। এটি (আল্লাহ কর্তৃক) নির্ধারিত। ৩৬
৩৬.সূরা নিসা, আয়াত: ৭
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً
আর তোমরা (স্বামীরা) স্ত্রীদের মাহর সন্তুষ্টচিত্তে আদায় কর। ৩৭
৩৭.সূরা নিসা, আয়াত: ৪
উক্ত আয়াতে মাহর নারীর হক ঘোষিত হয়েছে। সুতরাং কোন অভিভাবক মাহর গ্রহণ করলেও তা নারীকে প্রদান করতে হবে। স্ত্রী ব্যতিত এর অন্যকেউ মালিক হতে পারবে না।
উম্মুহাতুল মু’মিনীন হযরত খদীজাতুল কুবরা (رضي الله عنه) ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতেন। হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) উষ্টের যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন এবং নিজে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। তবে এসব ক্ষেত্রে নারীকে পর্দা ও শালীনতা বজায় রাখতে হবে।
নারী হলো মানব গোষ্ঠির একটি অংশ। সুতরাং তাদেরকে বাদ দিয়ে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন সম্ভয় নয়। ইসলাম নারীদের কর্মপদ্ধতি ও কর্মসীমা তাদের স্বাভাবিক ক্ষমতা প্রকৃতি, দৈহিক ও মনস্তাত্ত্বিক বাস্তবতার আলোকে নির্ধারণ করে দিয়েছে। অতীতের মুসলিম নারী সমাজ ইসলামী জীবনাদর্শের আলোকে জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে জীবনের বৃহত্তর অঙ্গনে গঠনমূলক ও বিপ্লবাত্মক ভূমিকা ও অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
জীবনে সব ক্ষেত্রে তারা পর্দা অবলম্বন করেই পুরুষের পাশাপাশি যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। তারা নিজের স্বামী ও সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়ে দিয়ে যুদ্ধের জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে এবং যুদ্ধের ময়দানে আহতযুদ্ধাদের সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করতেন। আজকের মুসলিম নারী ইসলামী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বলে, ইসলামের সঠিক সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অজ্ঞ বলে এবং তথাকথিত আধুনিক চাকচিক্যের প্রতারণায় বিভ্রান্ত বলে এতটা পিছিয়ে পড়েছে।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এতে সকলের জন্য নির্ধারিত বিধি-বিধান বিদ্যমান। কেউ অন্ধ বলে যেমন সূর্যকে অস্বীকার করতে পারেনা অনুরূপ কেউ ইসলামী বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ বলে ইসলামকে দোষারোপ করতে পারেনা। ইসলামী আদর্শ অনুসরণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)'র নীতি অনুসরণ করার মধ্যেই নারী-পুরুষ ও সমাজের বৃহত্তম কল্যাণ নিহিত রয়েছে। অতএব, ইসলামী পথ ধরে অগ্রসর হলেই নারী-পুরুষ নিজ নিজ প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ বিভিন্ন সামাজিক কাজে যেমন পরস্পরের পরিপূরক, তেমনি অর্থনৈতিক কার্যক্রমেও একে অপরের সম্পূরক। কারণ প্রকৃতিগতভাবে নারী-পুরুষ কেবল দৈহিক ও মানসিক স্বাতন্ত্রের অধিকারীই নয় বরং উভয়ের কর্মস্পৃহা ও কর্মদক্ষতার মাঝেও রয়েছে বিরাট পার্থক্য। আবার এ দু’য়ের কেউ স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়। নারী-পুরুষের কর্মের সামর্থ ও যোগ্যতার ভিন্নতার কারণে পরিবারের সম্পূরক হিসাবে কর্মবণ্টন না হয়ে পরিবর্তক বা বিকল্প হিসাবে হয়ে থাকলে, তা হবে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক এবং ফলাফলের দিক থেকে স্বল্প মেয়াদে সামাজিক সমতা মনে হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা অর্থনৈতিক অকল্যাণ বয়ে আনবে সুনিশ্চিতভাবে।
একজন বিচরককে সার্জনের দায়িত্বে নিয়োগ করা, একজন শিক্ষককে চিকিৎসকের পদে নিয়ে যাওয়া যেমন অর্থনৈতিক কল্যানের পরিপন্থী, ঠিক তেমনি নারীদের উপযোগী কাজে পুরুষদের নিয়োগ ও পুরুষোচিত কাজে নারীদের নিয়োগ তার চাইতেও অধিক অকল্যাণ কর। প্রাকৃতিক বিধি-বিধান ও রীতি-নীতির বিপরীত করলে মানব জাতির একাংশ নারী সমাজের উপর হবে যুলুম এবং সাধ্যাতীত কর্মভার ন্যস্ত করে তাদের প্রতি করা হবে অমানবিক আচরণ।