◇ ইয়াযীদের উপর লা’নতঃ _____________________
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, আল্লামা ইবনে জূযী [رضى الله عنهما] প্রমুখ ইয়াযীদকে লা’নত (অভিম্পাত) করা বৈধ বলে সাব্যস্ত করেছেন। সাইয়্যেদুনা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল [رضي الله عنه] ইয়াযীদকে ‘কাফির’ বলেছেন। তার উপর লা’নত করাকে বৈধ বলেছেন।
আল্লামা সা’দ উদ্দীন তাফতাযানী শাফে‘ঈ [رحمه الله عليه] ‘শরহে আক্বা-ইদ’-এ ইয়াযীদকে কাফির ও লা’নতী বলেছেন; কিন্তু খারেজী সম্প্রদায়ের লোকেরা হযরত উম্মে হাকাম বিনতে মিলহানের হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ইয়াযীদকে সৎকর্মপরায়ণ ও মাগফিরাত (ক্ষমা)-এর উপযোগী বলে থাকে। বস্তুত তারা নিরেট নির্লজ্জতা ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ইসলামের প্রতি তাদের শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ করে থাকে এবং এটা প্রমাণিত করতে চায়; অথচ উক্ত হাদীস শরীফে এমন কোন শব্দ নেই, যা একথা বুঝায় যে, ইয়াযীদ কিংবা কনস্টান্টিনিপোলের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাগফিরাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। বস্তুত ‘মাগফূরুন লাহুম’ (তাদেরকে ক্ষমা করা হবে)-এর সুসংবাদ তাদের জন্যই, যারা যুদ্ধ করার সময় মুসলমান থাকে এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঈমানের উপর ক্বায়েম থাকে। আর যদি কেউ ওই যুদ্ধের পর কাফির হয়ে যায়, সে ইমাম ও বিজ্ঞ আলিমদের সর্বসম্মতিক্রমে ওই সুসংবাদের উপযোগী নয়।
প্রকৃতপক্ষে, ইয়াযীদকে যারা ‘আমীর’, ‘খলীফা’, ধার্মিক ও সৎকর্মপরায়ণ বলে, তারাও লা’নতের উপযোগী এবং ঈমান হারাচ্ছে। এ থেকেও ইয়াযীদের চরিত্রহীনতা ও পাপাচারিতার প্রমাণ পাওয়া যায় যে,
ইয়াযীদ যখন হযরত আবুদ্ দারদা [رضي الله عنه]’র কন্যাকে শাদী করার প্রস্তাব পাঠালো, তখন হযরত আবুদ্ দারদা [رضي الله عنه] এ বলে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, ‘‘তার ঘরে তো কাজের মেয়েরা রয়েছে।’’
আসলে হযরত আবুদ্ দারদা ইঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘‘সে তো ভোগ-বিলাসী ও ব্যভিচারী। কাজের মেয়েরা তার অপকর্মের শিকার হয়ে আছে।
সুতরাং এমন দুশ্চরিত্র লম্পটকে কে তার কন্যার বিবাহ দেবে?’’ সুতরাং হযরত আবদুদ্ দারদা [رضي الله عنه] ইয়াযীদেরই এক সমসাময়িক যুবকের সাথে তাঁর কন্যার বিবাহ্ দিয়েছিলেন।
○》একটি সংশয়ের অপনোদনঃ________________________
যারা ইয়াযীদের পক্ষে উকালতী করে এবং তার সাফাই গায় তারা সহীহ্ বোখারী শরীফের নিন্মলিখিত হাদীস শরীফকে তাদের পক্ষে দলীল হিসেবে দাঁড় করাতে চায়-
قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوَّلُ جَيْسٍ مِّنْ اُمَّتِىْ يَغْزُوْنَ مَدِيْنَةَ قَيْصَرَ مَغْفُوْرٌ لَّهُمْ (بخارى جلد اول : كتاب الجهاد : باب ماقيل فى قتال الروم)
অর্থাৎ নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের ওই সেনাবাহিনীকে ক্ষমা করা হবে, যারা রোম সম্রাট ক্বায়সারের শহর (ইস্তাম্বুল)-এর উপর সর্বপ্রথম হামলা করবে।
[বোখারী শরীফ: ১ম খন্ড: জিহাদ পর্ব: রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শীর্ষক অধ্যায়: পৃ. ৪১০]
এ হাদীসের কোন কোন ব্যাখ্যাকারীও এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইয়াযীদকে ওই প্রথম যুদ্ধের সিপাহসালার ছিলো মর্মে লিখে ফেললেও এ প্রসঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যা, অভিমত ও সিদ্ধান্ত নিম্বরূপ:
নিন্সলিখিত প্রশ্নগুলোর জবাবেই এ প্রসঙ্গে সঠিক বিষয়টি বের হয়ে আসে-
১. ইস্তাম্বুলের উপর কতবার হামলা করা হয়েছিলো?
২. ইয়াযীদ তাতে শরীক ছিলো কিনা? শরীক থাকলেও কীভাবে? সিপাহ্সালার হিসেবে, না সাধারণ সৈন্য হিসেবে?
৩. তার এ অংশগ্রহণ কি তার ইচ্ছাকৃত ছিলো, না বাধ্য হয়ে যুদ্ধে রওনা হয়েছিলো? শরীক হলেও উক্ত হাদীস শরীফের সুসংবাদ তার বেলায় প্রযোজ্য কিনা?
[] উত্তরঃ প্রথম প্রশ্নের জবাবে সঠিক অভিমত হচ্ছে- ইস্তাম্বুলের উপর হামলা কয়েকবার হয়েছিলো: ৪৬ হিজরিতে হযরত আবদুর রহমান ইবনে খালিদের নেতৃত্বে, ৪৯ হিজরীতে সুফিয়ান ইবনে আউফের নেতৃত্বে, ৫২ হিজরীতে, অন্য এক বর্ণনায় ৫৫ হিজরিতে ইয়াযীদের নেতৃত্বে। উল্লেখ্য, এমন ক’টি যুদ্ধে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী [رضي الله عنه] শরীক ছিলেন এবং ৫২হিজরীতে তিনি সেখানে ওফাত পান এবং ওখানেই তাঁকে দাফন করা হয়।
কনস্টান্টিনিপোল (ইস্তাম্বুল) যে যুদ্ধে বিজিত হয়েছিলো, ওই যুদ্ধে ইয়াযীদ সিপাহ্সালার ছিলোনা; বরং একজন সাধারণ সৈন্য ছিলো। [কামিল: ইবনুল আসীর]
ইয়াযীদ ইস্তাম্বুল (কনস্টান্টিনিপোল)-এর যুদ্ধে সন্তুষ্টচিত্তে যায়নি; বরং তার পিতা হযরত আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه] কঠোর নির্দেশ দিয়ে এবং অন্যথায় কঠোর শাস্তি দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সে পথিমধ্যে ‘ফারক্বাদূনা’ নামক স্থানে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ওখানেই থেকে যায়। তখন সে বলেছিলো, ‘‘তখনতো আমার কোন পরোয়া নেই, যখন আমি ‘দিয়ারে সারান’-এ উঁচু কার্পেটে বসা আছি এবং আমার স্ত্রী উম্মে কালসূম আমার বগলে আছে।’’
সুতরাং ইয়াযীদ কোন মতেই ওই সুসংবাদের আওতায় আসবে না। সে ক্ষমা পাবার উপযোগী নয়। এমনকি মতান্তরে সিপাহ্সালার থাকলেও নয়। বিশেষ করে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল [رضي الله عنه] প্রমুখ বলেছেন, ইয়াযীদ কাফির ছিলো। কাফির কোন সৎকর্মের কারণে মাগফিরাত পায় না। সুরা নিসার আয়াত নম্বর ১১ তে একথা এরশাদ হয়েছে।
[সূত্রঃ তাহাফ্ফুযে আক্বাইদ: ৬৬০ পৃ., মিরআত শরহে মিশকাত: ৬ষ্ঠ খন্ড, বাংলা সংস্করণ, পৃ. ২০৪]
পরিশেষে, ইযাযীদ যেমন অভিশপ্ত তেমনি ইয়াযীদীরাও অভিশপ্ত, নির্লজ্জ ও অবিবেচক। অভিশাপ কাফিরকেই দেওয়া যায়। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল [رحمه الله عليه] এজন্যই বলেছেন, ইয়াযীদ কাফির ছিলো, সে অভিশাপেরই উপযোগী। বিশ্ববিখ্যাত আক্বাইদগ্রন্থ ‘শরহে আক্বাইদ’-এ ইয়াযীদকে কাফির ও লা’নতী বলা হয়েছে। সুতরাং ইয়াযীদী তথা যারা ইয়াযীদের পক্ষে শাফাই গায় তারা ইসলামের দুশমন।
পক্ষান্তরে, হযরত ইমাম হোসাঈন [رضي الله عنه]) সত্যের উপর ছিলেন। তিনি ইয়াযীদ ও ইয়াযীদের বাতিল খিলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে ইসলামের গৌরবকেই অক্ষুন্ন রেখেছেন। এর পক্ষেও বহু অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। আর হযরত আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه] একজন ন্যায়পরায়ণ সাহাবী ছিলেন। ইয়াযীদ তাঁর পুত্র ছিলো এবং তাঁর পরবর্তীতে ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক হয়েছিলো। তা কীভাবে হলো এবং তজ্জন্য আমীর মু‘আভিয়া [رضي الله عنه]’কে দায়ী করা যাবে না এবং তাঁর বিরুদ্ধে অশালীন ও অমূলক সমালোচনা করা যাবে না। এ মর্মেও অনেক শরীয়তসম্মত ও ঐতিহাসিক প্রমাণাদি রয়েছে।
‘তাহাফ্ফুযে আক্বাইদ’, সাওয়া-ইক্বে মুহারিক্বাহ্, ‘‘হযরত আমীর মু‘আভিয়া’ (কৃত. মুফতী আহমদ ইয়ার খান) ইত্যাদি দ্রষ্টব্য। পরিসরের স্বল্পতার কারণে এ প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা এ নিবন্ধে করা গেলো না। {সংগৃহীত}
[] ** হে আল্লাহ্! এই গৌরবময় মাসে যাহাদের প্রার্থনা মঞ্জুর হইয়াছে, আমাদিগকে তাঁহাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, এ দুয়া হুজুর পাক (ﷺ)- এর ওসিলায় কবুল করুনঃ-
<====আমীন!!!====আমীন!!!====আমীন!!!=