❏ প্রশ্ন-২১১: বছরে তিন মৌসুম গণনা করা হয়। এটা কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়?
✍ উত্তর: প্রফেসর আবদুর রহমান মু’মিন তাঁর ‘তাহ্কিকাতি ওয়া আছরিয়াতি তাহ্কিকাত’ গ্রন্থের ১৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, কোরআনে কারীম(ﷺ) হযরত ইউসুফ (عليه السلام) সম্পর্কীয় কাহিনীতে যে দুর্ভিক্ষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা মিসরবাসীর জন্য এক বাস্তব ভয়াল ও বিভীষিকাময় ঘটনা ছিল। পুরাতন মিশরে নীল নদীর পানির উত্তালতার ওপর নির্ভর করে মৌসুম নির্ধারণ করা হত। অনেক সময় নীল নদীতে বন্যা বেড়ে যায়, তখন নদীর উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়ে যেত এবং ক্ষেত ফসলাদি পানির নীচে তলিয়ে যেত। যার কারণে মৌসুম খারাপ হয়ে যেত, ফলে দেশে অভাব-অনটন ও দূর্ভিক্ষ দেখা দিত। যদি নদীতে পানির স্রোত কম হতো, তখন ক্ষেত-ফসলাদিতে পর্যাপ্ত পরিমান সেচের পানি পাওয়া যেত না। ফলে ফসলাদির উৎপাদন কমে যেত এবং খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিত। যদি এভাবে কয়েক বছর যাবত পানির ঘাটতি কিংবা বন্যায় পাবিত হলে দেশে দূর্ভিক্ষ দেখা দিত এবং লোকজনকে অভাব অনটনে কালযাপন করতে হতো। এ কারণে পুরাতন মিসরে পূর্বকালে নীল নদীর স্রোতের হ্রাস-বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে মৌসুম নির্ধারণ করা হতো। তাই বছরে তিন মৌসুম গণ্য করা হত।
প্রথম মৌসুম জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উত্তাল ও প্লাবনের মৌসুম বলা হত। দ্বিতীয় মৌসুম অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ছিল। সে সময় ক্ষেত-ফসলাদিতে সেচ দেয়ার পর পানি চলে যেত। উক্ত মৌসুমে বীজ উৎপাদন হত এবং কৃষকরা চাষাবাদ করতো। ফসল পাঁকার পর তা কাটার কাজে ব্যস্ত থাকত। তৃতীয় শুকনো মৌসুম- যা ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী জুন পর্যন্ত থাকত।
এভাবে প্রত্যেক বছর মৌসুম পরিবর্তন হতো। মৌসুমের পরিবর্তনের ভিত্তিতে মিসরবাসীরা শামসী (সূর্যের) পঞ্জিকা ও ক্যালেন্ডার তৈরী করতো। নতুন পাশ্চাত্যের ক্যালেন্ডার এ পুরাতন মিসরীয় পঞ্জিকার ওপর নির্ভরশীল। পুরাতন মিসরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবকাঠামোও মৌসুমের পরিবর্তনের অনুপাতে স্থান পেত বা নির্ধারণ করা হতো।
যখন তরকারী, শস্য ফসল অধিক উৎপাদন হতো এবং বিদেশে শস্য-ফসলাদি রপ্তানি করা হতো, তখন সুখে-স্বাচ্ছন্দে জীবন-যাপন করতো। সুখের সময় মিসরী লোকেরা নিজেদের পাল বিশিষ্ট নৌকা নিয়ে লোহিত সাগর ও রোম সাগর পর্যন্ত আনন্দ ভ্রমণ করতো। যখন নীল নদীতে প্লাবন আসতো এবং শস্যাদি পানিতে ডুবে যেত, তখন সাধারণ মানুষ বিভিন্ন নির্মাণ কাজে মনোনিবেশ করতো।