নবম অধ্যায়

রাসূল (ﷺ)‘র সৃষ্টি বিষয়ক আলোচনা



বিষয় নং-১: সূরা মায়েদার ১৫ নং আয়াত (قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ)-এর সঠিক ব্যাখ্যা এবং বাতিল পন্থীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব

দেওবন্দী মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী তার “বিভ্রান্তির অবসান” গ্রন্থের ৯৫-৯৬ পৃষ্ঠায় এবং পাকিস্তানের আরেক দেওবন্দী আলেম মাওলানা সরফরায খাঁন সফদর তার “নূর আওর বাশার” গ্রন্থে, এছাড়া বিভিন্ন কতিপয় দেওবন্দী ও আহলে হাদিসগণ এবং ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩১৬-৩১৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত আলোচনা করে কৌশলতা অবলম্বন করে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে সূরা মায়েদার উক্ত আয়াত এ ‘নূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য কোরআনুল কারীম। তারা তাদের গ্রন্থে জোর গলায় দাবী করেছেন যে, নূর দ্বারা উদ্দেশ্য রাসূল (ﷺ) এটা দুর্বল অভিমত। নাউযুবিল্লাহ, তাদের জবাবে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله)সহ একজামাত মুফাস্সিরগণ লিখেন-


الثَّالِثُ: النُّورُ/ وَالْكِتَابُ هُوَ الْقُرْآنُ، وَهَذَا ضَعِيفٌ لِأَنَّ الْعَطْفَ يُوجِبُ الْمُغَايَرَةَ بَيْنَ الْمَعْطُوفِ وَالْمَعْطُوفِ عَلَيْهِ


-‘‘তৃতীয় অভিমত: যারা উক্ত আয়াতের নূর ও কিতাব যারা একক কুরআনই উদ্দেশ্য বলতে চান আমি বলবো এই অভিমত দুর্বল। কারণ “আতফ” (ব্যাকরণগত সংযোজন) “মা‘তুফ” (সংযোজিত) ও “মা‘তুফ আলাইহি” (যার সাথে সংযোজন করা হয়েছে) এর মধ্যে ভিন্নতা প্রমাণ করে।’’ ১

অথাৎ, নূর ও কিতাব একই জাতের নয়। 

➥{ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী : তাফসীরে কাবীর : ১১/৩২৭ পৃ. দারুল ইহইয়াউল তুরাস আল-আরাবী,  বয়রুত।}



তাদের আবার কেউ কেউ তাদের গ্রন্থে লিখেছেন উক্ত আয়াতে ‘নূর’ দ্বারা ইসলামকে উদ্দেশ্য। বুঝা গেল তাদের মধ্যেও আবার তা নিয়ে অনেক মতানৈক্য, আমি বলবো, আপনারওতো  উক্ত আয়াতে নূর দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে সে ব্যাপারে একমত হতে পারেননি। তাহলে আপনারাই বলুন আমরা কোনটি বলবো? নির্ভরযোগ্য সকল তাফসীরে রয়েছে উল্লেখিত আয়াতে কারীমার ‘নূর’ দ্বারা নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। আর ৫টি তাফসীরে  রয়েছে ভিন্নমত। তার মধ্যে মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর ‘বয়ানুল কুরআন’ এবং মাওলানা আবুল আ‘লা মওদুদীর ‘তাফহীমুল কুরআন’ অন্যতম। সংক্ষেপে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রসিদ্ধ তাফসীরকারকদের মতামত পাঠকগণের অবগতির জন্য উল্লেখ করা হল। আমি আরো অনেক তাফসীরকারকের মতামত কিতাব দীর্ঘায়িত হওয়ার আশংকায় উল্লেখ করছি না। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণে লিখেছিলেন যে, অত্র আয়াতে নূর দ্বারা যে রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে এ প্রসঙ্গে কোন সাহাবীর এবং তাবেয়ীদের মতামত নেই। যখন আমার এ গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ প্রকাশ হলো তিনি তখন সেই কথাটি কেটে ফেলেন পরবর্তী সংস্করণে। তাই আমি প্রথমে ১নং এ সাহাবীদের এবং ১৩,  ২০, ৪৯,  ৫০, নং এ তাবেয়ীদের মতামত দিয়ে তার মিথ্যা বক্তব্যের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছি।



(১) মুফাস্সির কুল সম্রাট, বিশিষ্ট মুজতাহিদ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) [ওফাত. ৬৮ হি.] স্বীয় উল্লেখযোগ্য তাফসীর ‘তানভিরুল মিকবাস ফী তাফসীরে ইবনে আব্বাসে’ উল্লেখ করেন- 


[قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ] رَسُول يَعْنِي مُحَمَّدًا [وَكِتَابٌ مُّبِينٌ] بالحلال وَالْحرَام


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর, এই নূরের মর্মার্থ হযরত মুহাম্মদ (ﷺ), আর কিতাবুম মুবীন বলতে হালাল-হারামের সুস্পষ্ট গ্রন্থ (আল-কুরআন) কে বুঝানো হয়েছে।’’ ২

➥{আল্লামা ফিরযাবাদি : তানভিরুল মিকবাস ফি তাফসীরে ইবনে আব্বাস : ১/৯০.পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}



(২) ইমাম ইবনে জরীর ত্বাবারী (رحمة الله) [ওফাত ৩১০ হি.] উক্ত আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেন,  


يَعْنِي بِالنُّورِ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , الَّذِي أَنَارَ اللَّهُ بِهِ الْحَقَّ , وَأَظْهَرَ بِهِ الْإِسْلَامَ , وَمَحَقَ بِهِ الشِّرْكَ فَهُوَ نُورٌ لِمَنِ اسْتَنَارَ بِهِ يُبَيِّنُ الْحَقَّ , وَمِنْ إِنَارَتِهِ الْحَقَّ تَبْيِينُهُ لِلْيَهُودِ كَثِيرًا مِمَّا كَانُوا يُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ.


-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা এখানে নূর মানে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর কথা বুঝিয়েছেন। যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘য়ালা সত্যকে আলোকিত করেছেন এবং ইসলামকে জাহির (বিকাশিত) করেছেন এবং শিরকে মিটিয়ে দিয়েছেন। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁর দ্বারা আলোকিত হতে চায় তার জন্য তিনি আলো। তিনি হক্ক বা সত্য প্রকাশ করেন। তাঁর হক্ককে আলোকিত করার একটি দিক হলো যে, ইহুদীরা আল্লাহর কিতাবের যে সকল বিষয় গোপন করত তার অনেক কিছু তিনি প্রকাশ করেছেন।’’ ৩

➥{ইমাম জারীর আত-তাবারী : জামেউল বায়ান : ৮/২৬৪ পৃ. মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন।}



(৩) ইমাম আবূ ইসহাক যুজ্জাজ (ওফাত. ৩১১ হি.) তার বিখ্যাত তাফসিরে লিখেন-


النور هو: محمدٌ - صلى الله عليه وسلم


-‘‘মহান রব তা‘য়ালা নূর বলতে এখানে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে উদ্দেশ্য করেছেন।’’ 


(ইমাম যুজ্জাজ, মা‘নীল কোরআন ওয়া ইরাবিহী, ২/১৬১ পৃ.) 



(৪) আহলে সুন্নাতের আকায়েদের একজন অন্যতম ইমাম মাতুরিদী (رحمة الله) [ওফাত. ৩৩৩ হি.] উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন


وقال غيره: النور: هو مُحَمَّد، والكتاب: هو القرآن،


-‘‘অনেকে বলেছেন উক্ত আয়াতের নুর দ্বারা হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) কে উদ্দেশ্য আর কিতাব দ্বারা কুরআন উদ্দেশ্য। 


(তাফসীরে মাতুরীদী, ৩/৪৮৫পৃ.দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।) 


অতএব বুঝা গেল যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমামের কথা মানে না পাঠকবৃন্দ তারাও কী প্রকৃত আহলে সুন্নাতের অনুসারী দাবি করতে পারেন!



(৫) ইমাম আবূ জাফর নাহ্হাশ (ওফাত. ৩৩৮ হি.) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-


قال جل وعز (قد جاءكم من الله نور) قيل نور يعني به النبي صلى الله عليه وسلم 


-‘‘মহান আল্লাহ  ইরশাদ রাসূল (ﷺ)-এর শানে ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট আল্লাহ্ হতে এসেছে এক মহান নূর, কোনো কোনো মুফাস্সির বলেন, এ নূরের মমার্থ প্রসঙ্গে লিখেছেন, এ নূর হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ 


(নাহ্হাশ, মা‘আনীল কোরআন, ২/২৮৪ পৃ.)



(৬) সিহাহ সিত্তার অন্যতম ইমাম আবু দাউদের ছাত্র ইমাম আবূ বকর আজরী বাগদাদী (ওফাত. ৩৬০ হি.) তার হাদিসের গ্রন্থে এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-


وَأَنَّ الَّذِي جَاءَ بِهِ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ النُّورُ


-‘‘তোমাদের নিকট এসেছে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) তিনি (আলোচ্য আয়াতের) সেই নূর।’’ 


(ইমাম আবূ বকর আজরী, আশ-শারীয়াহ, ৩/১৩৮৮ পৃ.)



(৭-৮) ইমাম আবু লাইস সমরকন্দী (رحمة الله) [ওফাত. ৩৭৩ হি.] উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-


قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ ، وهو محمد صلى الله عليه وسلم


-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহ্ হতে এসেছে এক মহান ‘নূর’ সেটা হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর নূর। 


(ইমাম আবু লাইস সমরুকন্দী, তাফসীরে বাহারুল উলুম, ১/৩৭৮ পৃ.) 


❏ তিনি তাঁর বিখ্যাত তাফসিরে সূরা নূরের ৩৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেন-


فسماه نورا كقوله: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ [المائدة: ١٥]


-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর নামসমূহের মধ্যে একটি নাম মোবারক হল ‘নূর’, যেমন মহান রব তা‘য়ালা  তাঁর হাবিবের শানে ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক মহান নূর অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ 


(ইমাম আবু লাইস সমরুকন্দী, তাফসীরে বাহারুল উলুম, ২/৫১৩ পৃ. শামেলা)



(৯) ইমাম খতিব ইসকাফী  (ওফাত. ৪২০ হি.) তার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থে এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-


قوله: قد جاءكم من الله نور، [المائدة:١٥] ، يعني النبي صلى الله عليه وسلم


-‘‘মহান রব তা‘য়ালা রাসূল (ﷺ)-এর শানে ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর (সূরা মায়িদা, আয়াত নং-১৫) এ নূরের মমার্থ হল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নূরাণী সত্ত্বা।’’ 


(ইমাম খতিব ইসকাফী, দুররুল তানযিল, ১/৪৪৩ পৃ.-৪৪৪ পৃ.)



(১০) অপরদিকে ইমাম আব্দুর রহমান বিন মুহাম্মদ মাখলুফ ছা’লাভী (رحمة الله) [ওফাত.৪২৭ হি.] উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-


قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ يعني محمد صلى الله عليه وسلّم وكِتابٌ مُبِينٌ: هو القُرآن


-‘‘আল্লাহর বাণী : তোমাদের নিকট মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে ‘নূর’। আর সেই নূর হলেন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আর কিতাবুম মুবিম হলো কুরআন।’’ ৪

➥{ইমাম ছা’লাভী : তাফসীরে ছা’লাভী : ৪/৩৯ পৃ. দারুল ইহ্ইয়াউল-তুরাস আল আরাবী,  বয়রুত,  লেবানন।}



(১১) ইমাম কুরতুবী আন্দুলুসী (رحمة الله) [ওফাত. ৪৩৭ হি.] তাঁর বিখ্যাত তাফসীরে বলেছেন-


ط[قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ] وهو محمد  صلى الله عليه وسلم.


-‘‘তোমাদের নিকট মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে ‘নূর’ কেউ কেউ উক্ত আয়াতের নূর দ্বারা নূরে মুহাম্মদীকে (ﷺ) বুঝিয়েছেন বলে।’’ 


(ইমাম কুরতুবী আন্দলুসী, হিদায়া ইলা বুলুগিল নিহায়া, ৩/১৬৫০ পৃ.)



(১২) বিশ্ববিখ্যাত ইমাম আলী বিন আহমদ আল-ওয়াহেদী নিশাপুরী আশ্-শাফেয়ী (رحمة الله) [ওফাত.৪৩৮ হি.] উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন-


[قد جاءكم من الله نور] يعني: النبيَّ [وكتاب مبين] القرآن


-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে “নূর” এর মর্মার্থ হল নবী করীম (ﷺ), আর প্রকাশ্য কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।’’ ৫

➥{ইমাম ওয়াহেদী ঃ তাফসীরে ওয়াহেদী, ১/৩১৩ পৃ. মাকতাবায়ে আদ দুরারুস সামীয়া,  দামেস্ক, বয়রুত।}



(১৩) ইমাম আবুল হাসান আলী বিন ওয়াহেদী নিশাপুরী (ওফাত. ৪৬৮ হি.) তার বিখ্যাত তাফসিরে লিখেন-


وقال قتادة: يعني: النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.


-‘‘বিখ্যাত তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) বলেন, এ আয়াতে নূর দ্বারা উদ্দেশ্য নবী (ﷺ)।’’ 


(ইমাম ওয়াহেদী, তাফসিরে ওয়াসীত, ২/১৬৮ পৃ.)



(১৪) ইমাম আবুল হাসান মাওয়ারিদী (رحمة الله) [ওফাত ৪৫০ হি.] উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন-


[قَدْ جَآءَكم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ] فى النور تأويلان: أحدهما: محمد صلى الله عليه وسلم ,  وهو قول الزجاج. 


-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক সমুজ্জল নূর, এ আয়াতের তাফসিরে মুফাসসিরগণের কয়েকটি মতামত রয়েছে, প্রথমত গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হলো উক্ত নূর দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। আর এমনটি ইমাম যুজ্জায (رحمة الله) এর বক্তব্য।’’ 


(তাফসীরে মাওয়ারীদী, ২/২২ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)



(১৫) ইমাম আবু মুজাফ্ফার মারওয়াজী সামআ‘নী তায়মী হানাফী (رحمة الله) [ওফাত.৪৮৯ হি.] এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-


[قد جَاءَكُم من الله نور] وَقيل مُحَمَّد


-‘‘অনেক মুফাস্সিরগণ বলেছেন, এই আয়াতের নূরের দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) বুঝায় বলে উল্লেখ করেছেন।’’ 


(তাফসীরে সামআ‘নী, ২/২৩পৃ., দারুল ওয়াত্বন, রিয়াদ, সৌদি আরব।)



(১৬) বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির ও মুহাদ্দিস ইমাম বাগভী (رحمة الله) [ওফাত ৫১০হি.] তাঁর তাফসীরে বলেন,  


[قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ] يعني: محمد صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ،–


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে এক মহান ‘নূর’ এর মর্মার্থ হলো হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ ৬

➥{ইমাম বগভী : তাফসীরে মা’আলিমুত্ তানযিল : ১/২৭৩ পৃ.}



(১৭-১৯) সুপ্রসিদ্ধ ইমাম কাযী আয়ায আল-মালেকী (رحمة الله) [ওফাত. ৫৪৪ হি.] এক পর্যায়ে উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেন,  


وَقَدْ سَمَّاهُ اللَّهُ تَعَالَى فِي الْقُرْآنِ فِي غَيْرِ هَذَا الْمَوْضِعِ نُورًا وَسِرَاجًا مُنِيرًا، فَقَالَ تَعَالَى: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ


-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা কোরআন মাজীদে এবং অন্যান্য স্থানে হুযূর (ﷺ) কে নূর ও সমুজ্জলকারী প্রদীপ নামে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন মহান রব ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক সমুজ্জল নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব।’’  ৭

➥{ইমাম কাযি আয়ায আল-মালেকী, শিফা,  ১/৬০ পৃ.}



❏ বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) [ওফাত.১০১৪ হি.] উক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যায় লিখেন-


اى لظهور الحق عليه الصلاة و السلام لانه يهتدى به من الظلمات الى النور


-‘‘নূর দ্বারা রাসূল (ﷺ) উদ্দেশ্য, কেননা তাঁর দ্বারা সত্য প্রকাশ হয়েছে। যেমন তাঁর দ্বারা হেদায়াত পেয়ে অন্ধকার হতে মানুষ আলোর দিকে আসে।’’ ৮

➥{মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা,  ১/৫১ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}



❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) উক্ত গ্রন্থে ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله)-এর আরেকটি বক্তব্যের ব্যাখ্যায় লিখেন-


(وسمّاه) أي النبي عليه السلام (نورا) أي على أحد التفسيرين (فَقَالَ: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ [المائدة: ١٥] قيل) أي المراد بالنور (محمّد)


-‘‘(মহান রব নাম করণ করেছেন) নবী করীম (ﷺ)-এর (একটি নাম ‘নূর’) একদল মুফাস্সিরগণ বলেছেন (মহান রবের বাণী তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক মহান নূর, সে আয়াতের ব্যাখ্যায় তারা বলেছেন) এ আয়াতের নূর দ্বারা উদ্দেশ্য হল (হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ 


(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/৫০৯ পৃ.)



(২০) উক্ত আয়াত সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত হাদিস সমালোচক ও তাফসীরকারক ইমাম আবুল ফারাহ আব্দুর রহমান জাওযী (رحمة الله) [ওফাত. ৫৯৭ হি.] বলেন-


قوله تعالى قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نورٌ قال قتادة: يعني بالنور: النبي محمّدا صلّى الله عليه وسلّم.


 -‘‘আল্লাহর বাণী: তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে “নূর” এসেছে উক্ত আয়াত সম্পর্কে বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত কাতাদাহ (رحمة الله) বলেন,  উক্ত নূরের মর্মার্থ হল নূর নবী মুহাম্মদ (ﷺ)।’’  ৯

➥{ইমাম ইবনে জাওযী : যা’দুল মাইসীর ফি উলূমুত তাফসীর : ২/৩৬১ পৃ. মাকতুবায়ে ইসলামিয়া, বয়রুত।}



(২১-২২) বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) (ওফাত.৬০৬ হি.) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন,  


قَالَ تَعَالَى: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ وَفِيهِ أَقْوَالٌ: الْأَوَّلُ: أَنَّ الْمُرَادَ بِالنُّورِ مُحَمَّدٌ وَبِالْكِتَابِ الْقُرْآنُ


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর ও সুস্পষ্ট কিতাব। প্রথমত নূর দ্বারা উদ্দেশ্য মুহাম্মদ (ﷺ) এবং কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন মাজীদ।’’


❏ তারপর একটু সামনে অগ্রসর হয়ে এ আয়াতের নূরের ব্যাখ্যায় যারা কুরআন উদ্দেশ্য করতে যান তাদের জবাবে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) বলেন-


الثَّالِثُ: النُّورُ/ وَالْكِتَابُ هُوَ الْقُرْآنُ، وَهَذَا ضَعِيفٌ لِأَنَّ الْعَطْفَ يُوجِبُ الْمُغَايَرَةَ بَيْنَ الْمَعْطُوفِ وَالْمَعْطُوفِ عَلَيْهِ


-‘‘তৃতীয়ত যারা উক্ত আয়াতের নূর ও কিতাব দ্বারা একক কুরআনই উদ্দেশ্য বলতে চান আমি বলবো, তাদের এ অভিমত দুর্বল। কারণ “আতফ” (ব্যাকরণগত সংযোজন) ‘মা‘তুফ’ (সংযোজিত) ও ‘মা‘তুফ আলাইহি” (যার সাথে সংযোজন করা হয়েছে) এর মধ্যে ভিন্নতা প্রমাণ করে।’’   ১০

অথাৎ,  নূর ও কিতাব একই জাতের নয়। 

➥{ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী : তাফসীরে কাবীর : ১১/৩২৭ পৃ. দারুল ইহইয়াউল তুরাস আল-আরাবী,  বয়রুত।}



❏ তিনি তাঁর তাফসিরে লিখেন-


وَسُمِّيَ الرَّسُولُ نُورًا قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ [المائدة: ١٥] يعني محمد


-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা কোরআন মাজীদে হুযূর (ﷺ) কে নূর নামে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন মহান রব ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক সমুজ্জল নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব, এ নূরের মমার্থ হল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ 


(ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী, তাফসিরে কাবীর, ২/২৬৩ পৃ.)



(২৩) ইমাম ইযুদ্দীন বিন আবদুস্ সালাম দামেস্কী [ওফাত ৬৬০ হি.] উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-


[نور] محمد صلى الله عليه وسلم


-‘‘উক্ত আয়াতের ‘নূর’ দ্বারা হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) কে উদ্দেশ্য।’’ 


(তাফসীরে আল আয বিন আব্দুস্ সালাম, ১/৩৭৭ পৃ. দারুল ইবনে হাযম,  বয়রুত,  লেবানন।)



(২৪) ইমাম কুরতুবী আল-মালেকী (رحمة الله) [ওফাত.৬৭১ হি.] স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন, 


قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ: وَقِيلَ مُحَمَّدٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ، عَنِ الزَّجَّاجِ.


-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর, অনেক মুফাসসিরগণ এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে বলেছেন, উক্ত আয়াতে ‘নূর’ দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) উদ্দেশ্য, যেমন ইমাম যাজাজ (رحمة الله) বলেছেন।’’ 


(ইমাম কুরতুবী, আহকামুল কুরআন,  ৬/১১৮ পৃ.,  দারুল কুতুব মিসরিয়্যাহ,  কাহেরা,  মিশর।)



(২৫) ইমাম কাযী নাসিরুদ্দীন বায়যাভী  (ওফাত. ৬৮৫ হি.) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেন,


قيل يريد بالنور محمد صلّى الله عليه وسلّم.


-‘‘কোনো কোনো মুফাসসিরগণ বলেছেন, আয়াতে ‘নূর’ মানে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) উদ্দেশ্য নিয়েছেন।’’১১

➥{ইমাম কাজী নাসিরুদ্দীন বায়যাভী : তাফসীরে বায়যাভী : ২/৩০৭ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।}



(২৬) বিখ্যাত উসূলবিদ আল্লামা আবুল বারাকাত নাসাফী (رحمة الله) [ওফাত ৭১০ হি.] তার তাফসীরে বলেন,  


قَدْ جَاءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ ৃ النور محمد عليه السلام لأنه يهتدى به كما سمي سراجا–


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে ‘নূর’। আর উল্লেখিত আয়াতে ‘নূর’ হলো হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)। কারণ, তাঁর মাধ্যমে পথের দিশা পাওয়া যায়। যেমনিভাবে তাকে (কোরআনে) সজ্জ্বল প্রদীপ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।’’ ১২

➥{ইমাম নাসাফী: মাদারিকুত তানজীল : ১/৪৩৬ পৃ.দারুল কালামুল তৈয়্যব, বয়রুত, লেবানন।}



(২৭) ইমাম জুযী কালবী (رحمة الله) [ওফাত. ৭৪১ হি.] উক্ত আয়াতের নূরের ব্যাখ্যায় বলেন-


[نور] محمد صلّى الله عليه وسلّم


-‘‘যে এটা দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।’’ 


(তাফসীরে আল-তাহসীল লিল উলূমুল তানযীল, ১/২২৬ পৃ. দারূল আরকাম বিন আবি আরকাম, বয়রুত, লেবানন।)



(২৮) ইমাম আলাউদ্দিন খাযেন (رحمة الله) [ওফাত ৭৪১ হি.] বলেন,  


قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ يعني محمدا صلى الله عليه وسلم إنما سماه الله نورا لأنه يهتدى به كما يهتدى بالنور في الظلام– 


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহ্ হতে এসেছে এক মহান ‘নূর’ আর এ নূরের মমার্থ হল মুহাম্মদ (ﷺ), নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁকে নূর হিসেবে নামকরণ করেছেন, কারণ তাঁর নূর দ্বারা মানুষ হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, যেমনিভাবে নূর বা আলো দ্বারা অন্ধকারে পথ খুঁজে পাওয়া যায়।’’  ১৩

➥{ইমাম খাযেন : তাফসীরে খাযেন : ২/২৪ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,  লেবানন।}



(২৯) ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলসী (ওফাত. ৭৪৫ হি.) তার তাফসিরে লিখেন-


وَقِيلَ: النُّورُ الرَّسُولُ.


-‘‘কোনো মুফাসসিরগণ বলেছেন, এ আয়াতের নূর দ্বারা উদ্দেশ্য রাসূলে কারীম (ﷺ)।’’ 


(ইমাম আবু হাইয়্যান আন্দুলসী, তাফসিরে বাহারুল মুহিত ফিত-তাফসীর, ৪/২০৮ পৃ.)



(৩০) ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন উমর দামেস্কী হাম্বলী (ওফাত.৭৭৫ হি.) তার তাফসির গ্রন্থে লিখেন-


والمراد بالنُّور: محمد - عَلَيْهِ الصَّلَاة وَالسَّلَام


-‘‘মুফাস্সিরগণ এ আয়াতের নূর দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন রাসূল (ﷺ) কে।’’ 


(ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন উমর দামেস্কী হাম্বলী, লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ৭/২৫৯ পৃ.) 


❏ তিনি যারা নূর ও কিতাব দ্বারা কোরআনকে উদ্দেশ্য করেন তাদের তাফসিরের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে বলেন-


وهذا ضعيفُ؛ لأنَّ العَطْفَ يوجبُ التَّغَاير.


-‘‘তাদের এ অভিমত দুর্বল। কারণ “আতফ” (ব্যাকরণগত সংযোজন) ‘মা‘তুফ’ (সংযোজিত) ও ‘মা‘তুফ আলাইহি” (যার সাথে সংযোজন করা হয়েছে) এর মধ্যে ভিন্নতা প্রমাণ করে।’’  ১৪

অথাৎ,  নূর ও কিতাব একই জাতের নয়।

➥{ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন উমর দামেস্কী হাম্বলী, লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ৭/২৫৯ পৃ.}



(৩১) ইমাম মাজিদুদ্দীন ফিরোজাবাদী (ওফাত. ৮১৭ হি.) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-


وقوله تعالى: [قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ] يعنى سيِّد المرسَلين محمّدا صلَّى الله عليه وسلَّم.


-‘‘মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক মহান ‘নূর’ এ আয়াতের নূর দ্বারা উদ্দেশ্য সায়্যিদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ 


(বাছায়ের জুভিল তামিজ, ৫/১৩৫ পৃ.) 



(৩২) ইমাম মুকরিযী (ওফাত. ৮৪৫ হি.) তার সিরাত গ্রন্থে লিখেন-


ابن سبع في كتاب (شفاء الصدر) من خصائصه صلى اللَّه عليه وسلّم  أنه كان نورا وكان إذا مشى في الشمس والقمر لا يظهر له ظل ويشهد لما ذكره قول اللَّه تعالى: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ  فسماه اللَّه نورا وسماه سراجا فقال تعالى: إِنَّا أَرْسَلْناكَ شاهِداً وَمُبَشِّراً وَنَذِيراً وَداعِياً إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِراجاً مُنِيراً  قال الطبري: يعنى بالنور محمدا صلى اللَّه عليه وسلّم الّذي أنار اللَّه به الحق وأظهر به الإسلام ومحق به الشرك وهو نور لمن استتار به انتهى.


-‘‘ইমাম ইবনে সাবা (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত কিতাব ‘শিফাউস সুদূরে’ রাসূল (ﷺ)-এর বৈশিষ্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে, নিশ্চয় তিনি নূর ছিলেন এবং সূর্যের বা চাঁদের আলোয় তিনি যখন হাঁটতেন তখন তাঁর কোনো ছায়া প্রকাশিত হতো না। আর এ কথার (তিনি যে নূর) সাক্ষ্য প্রদান করেছেন মহান রব এভাবে, তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক মহান নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব। (সূরা মায়িদা, আয়াত নং-১৫), এখানে এ আয়াতে মহান আল্লাহ নবীজে নূর হিসেবে নামকরণ করেছেন এবং তিনি তাকে আলোকোজ্জ্বল প্রদীপ নামেও নামকরণ করেছেন, যেমন মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি হাযির-নাযির এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং আলোকোজ্জ্বল (নূর-প্রদানকারী) প্রদীপরূপে (সূরা আহযাব, ৪৫-৪৬)। আল্লাহ্ তা‘য়ালা এখানে (সূরা মায়েদা, আয়াত ১৫ এ) নূর মানে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর কথা বুঝিয়েছেন। যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘য়ালা সত্যকে আলোকিত করেছেন এবং ইসলামকে জাহির (বিকাশিত) করেছেন এবং শিরকে মিটিয়ে দিয়েছেন। কাজেই যে ব্যক্তি তাঁর দ্বারা আলোকিত হতে চায় তার জন্য তিনি আলো।’’ 


(ইমাম মুকরিযি, ইমতাউল আসমা, ১০/৩০৮ পৃ.)



(৩৩) ইমাম নিযামুদ্দীন নিশাপুরী (ওফাত ৮৫০ হি.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-


قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ محمد


-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহ্ হতে এসেছে এক মহান ‘নূর’ তার দ্বার উদ্দেশ্য হলো রাসূল (ﷺ)।’’ 


(তাফসীরে নিশাপুরী, ২/৫৭০ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।) 



(৩৪) ইমাম আবি বকর আল-বাকী [ওফাত. ৮৮৫ হি.] উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-


[نور] أي واضح النورية، وهو محمد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


-‘‘উক্ত আয়াতের নূর দ্বারা মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।’’ 


(তাফসীরে নায্মুদদুরার, ৬/৬৩পৃ. দারুল কিতাব আরাবী, বয়রুত, লেবানন।)



(৩৫) বিখ্যাত মুফাস্সির ও মুহাদ্দিস, ফকীহ, হাফেযুল হাদিস, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) [ওফাত ৯১১ হি.] উক্ত আয়াতের তাফসিরে লিখেন, 


[قَدْ جَاءَكُمْ مِنْ اللَّه نُور] هُوَ النَّبِيّ ﷺ [وَكِتَاب] قُرْآن


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর, সেই নূর হলেন নবী করীম (ﷺ) এবং (কিতাব) মানে কুরআনুল কারীম।’’ ১৫

➥{ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, তাফসীরে জালালাইন : ১০১ পৃ.}



(৩৬) ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) [ওফাত. ৯২৩ হি.] তার বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থে লিখেন-


وأما النور فقال تعالى: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ  قيل: محمد صلى الله عليه وسلم


-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর নামসমূহের মধ্যে একটি নাম হল ‘নূর’ যেমন মহান রব তার শানে আয়াত নাযিল করেছেন, তোমাদের নিকট মহান রবের পক্ষ থেকে এসেছে এক সমুজ্জল ‘নূর’, মুফাস্সিরগণ বলেছেন, এ নূর হল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ 


(ইমাম কাস্তাল্লানী, আল-মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৪৬৩ পৃ.)



(৩৭) ইমাম  ইবনে সালেহ শামী  (ওফাত. ৯৪২ হি.) লিখেন-


قال الله تعالى: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ قال جماعة: النور هنا محمد صلى الله عليه وسلم.


-‘‘মহান রব তা‘য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমাদের নিকট মহান রবের পক্ষ থেকে এসেছে এক সমুজ্জ্বল ‘নূর’ এবং সুস্পষ্ট কিতাব, এ জামাত মুফাস্সিরগণ বলেছেন, এ আয়াতের নূর দ্বারা উদ্দেশ্য হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ 


(ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৫৩০ পৃ.)



(৩৮) ইমাম খতিব শরবীনী (رحمة الله) [ওফাত. ৯৭৭ হি.] উক্ত আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেন,  


[قد جاءكم من الله نور] هو محمد صلى الله عليه وسلم


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর। এখানে নূর মানে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আলাইহি সালাতু ওয়াস্ সালাম।’’ ১৬

➥{আল্লামা খতিব শরবীনী : তাফসীরে সিরাজুমু মুনীর : ১/৩৬৩ পৃ.}



(৩৯) ইমাম আবুস সাউদ উমাদী (رحمة الله) [ওফাত.৯৮২ হি.] তার তাফসীরে উল্লেখ করেন, 


المرادُ بالأول هو الرسول صلى الله عليه وسلم وبالثاني القرآن


-‘‘প্রথমটা (নূর) মানে রাসূল (ﷺ)। আর দ্বিতীয়টা প্রকাশ্য কিতাব মানে হচ্ছে কুরআন মাজীদ।’’ ১৭

➥{ইমাম আবুস সাউদ : তাফসীরে আবিস সাউদ : ৩/১৮ পৃ. দারুল ইহইয়াউল তুরাস আল আরাবী,  বয়রুত।}



(৪০) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী [ওফাত. ১০১৪ হি.] তার তাফসিরে লিখেন-


قيل: يريد بالنور محمد صلى الله عليه وسلم


-‘‘কোনো মুফাসসিরগণ এ আয়াতের তাফসিরে উদ্দেশ্য করেছেন, ‘নূর’ দ্বারা হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)।’’ 


(আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, তাফসিরে মোল্লা আলী ক্বারী, ১/৫১১ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)



(৪১-৪২) আল্লামা জুরকানী (رحمة الله) [ওফাত. ১১২২হি.] লিখেন-


قيل النور هنا محمد صلى الله عليه وسلم


-‘‘মুফাস্সিরগণ এ আয়াতের তাফসিরে ‘নূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)।’’ 


(আল্লামা জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৪/২৬৯ পৃ.) 


❏ তিনি আরেক স্থানে লিখেন-


[مِنَ اللَّهِ نُور] هو محمد صلى الله عليه وسلم [وَكِتَابٌ مُبِين]  قرآن بين ظاهر.


-‘‘(আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর) আর সে নূর হল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) (প্রকাশ্য কিতাব) দ্বারা হলো কুরআন।’’ 


(আল্লামা জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৮/৪৮৭ পৃ.)



(৪৩-৪৫) বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) [ওফাত.১১২৭ হি.] এ আয়াতের তাফসীরে বলেন,  


وقيل المراد بالأول هو الرسول صلى الله عليه وسلم وبالثاني القرآن. وسمى الرسول نورا لان أول شىء أظهره الحق بنور قدرته من ظلمة العدم كان نور محمد صلى الله عليه وسلم كما قال (أول ما خلق الله نورى) 


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর এবং সমুজ্জল কিতাব এসেছে । কোনো কোনো মুফাস্সিরগণ বলেছেন, প্রথমটা (নূর) মানে রাসূল (ﷺ) আর দ্বিতীয়টা (কিতাব) মানে হচ্ছে- কোরআন মাজীদ............রাসূল (ﷺ) কে নূর নামকরণ এজন্যই করা হয়েছে যে,  তিনিই সর্বপ্রথম বস্তু, যাকে আল্লাহ্ তাঁর কুদরতী নূর দ্বারা অস্তিত্বহীনতার আড়াল থেকে প্রকাশ করে দিয়েছেন, সেটা ছিলো হুযূর (ﷺ) এরই নূর, যেমন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন।’ ১৮

➥{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ২/৩৭০ পৃ. মায়েদা,  ১৫ ও ২/৩৭০ পৃ. মায়েদা-১৭, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,  লেবানন।}



❏ অন্য এক বিষয়ের আলোচনা করতে গিয়ে এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-


سماه الله نورا وقال قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ فالنور هو محمد عليه السلام والكتاب هو القرآن


-‘‘মহান রব রাসূল (ﷺ)-এর একটি নাম রেখেছেন ‘নূর’ যেমন মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট এসেছে মহান রবের পক্ষ থেকে এক সমুজ্জল ‘নূর’ এবং সুস্পষ্ট কিতাব। এ নূর হল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আর কিতাব মানে কুরআন।’’  ১৯

➥{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ১/৩৯৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,  লেবানন।}



❏ তিনি আরেক স্থানে রাসূল (ﷺ)-এর নূরাণীয়ত নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লিখেন-


وقال تعالى قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ- وروى- عن النبي عليه السلام انه قال (كنت نورا بين يدى ربى قبل خلق آدم باربعة عشر ألف عام


-‘‘মহান তা‘য়ালা রাসূল (ﷺ)-এর নূর হওয়া সম্পর্কে ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট এসেছে মহান রবের পক্ষ থেকে এক সমুজ্জল ‘নূর’ এবং সুস্পষ্ট কিতাব। যেমন রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ইরশাদ করেছেন, আমি হযরত আদম (عليه السلام)-এর সৃষ্টির ১৪ হাজার পূর্বে মহান প্রতিপালকের দরবারে নূর ছিলাম।’’  ২০

➥{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৩/২৫৬ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,  লেবানন।}



❏ তিনি আরেক স্থানে লিখেন-


كما قال تعالى قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ يعنى محمدا صلى الله عليه وسلم وكتاب مبين يعنى القرآن


-‘‘যেমন মহান তা‘য়ালা রাসূল (ﷺ)-এর নূর হওয়া সম্পর্কে ইরশাদ করেন, নিশ্চয় তোমাদের নিকট এসেছে মহান রবের পক্ষ থেকে এক সমুজ্জল ‘নূর’ এবং সুস্পষ্ট কিতাব। এখানে নূরের মমার্থ হল হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এবং কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।’’ ২১

➥{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ২/৩৭০ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,  লেবানন।}



(৪৬) আল্লামা আবূ আব্বাস আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন মাহদী আল-হুসাইনী আল-ফাসী [ওফাত ১২২৪ হি.] এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-


النور: محمد-عليه الصلاة السّلام- والكتاب المبين: القرآن


-‘‘প্রথমটা (নূর) মানে রাসূল (ﷺ)। আর দ্বিতীয়টা প্রকাশ্য কিতাব মানে হচ্ছে কুরআন মাজীদ।’’ 


(আল-বাহারুল মুদিদ ফি তাফসীরে কুরআনুল মাজিদ, ২/২০ পৃ.)



(৪৭) আহলে হাদিসের মান্যবড়দের অন্যতম এবং তাদের ইমাম কাযী শাওকানী (মৃত.১২৫০ হি.) স্বীয় তাফসীরে লিখেন- 


قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ. أَنَّ مُحَمَّدًا صلّى الله عليه وَسَلَّمَৃ قَالَ الزَّجَّاجُ: النُّورُ محمد صلّى الله عليه وَسَلَّم-


-‘‘নিশ্চয় তোমােেদর নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক মহান নূর......নিশ্চয়ই উক্ত আয়াতের ‘নূর’ দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে উদ্দেশ্য, ইমাম রাজ্জাজ (رحمة الله) বলেন, এই নূরের উদ্দেশ্য হল মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ 


(শাওকানী, তাফসীরে ফাতহুল ক্বাদীর, ২/২৩ পৃ.)



(৪৮) আল্লামা কাযি সানাউল্লাহ পানিপথী হানাফী (رحمة الله) [ওফাত. হি.] এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, 


قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ يعنى محمد صلى الله عليه وسلم–


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে নূর এসেছে অর্থাৎ তা হচ্ছে মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ ২২

➥{কাজী সানা উল্লাহ পানিপথী : তাফসীরে মাযহারী : ৩/৬৮ পৃ. মাকতুবাতে রশীদিয়্যাহ, পাকিস্তান।}



(৪৯-৫১) আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) [ওফাত. ১২৭০ হি.] বলেন,  


قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ عظيم وهو نور الانوار والنبى المختار صلى الله عليه وسلم اليه ذهب قتادة والزجاج 


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে মহান এক ‘নূর’ আর তিনি হচ্ছেন মহা সম্মানিত নূর, নূরুল আনোয়ার বা সকল নূরের নূর, আল্লাহর মনোনীত নবী মুহাম্মদ (ﷺ)। এমনটি বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত কাতাদাহ (رحمة الله) ও যুজ্জায (رحمة الله) এর অভিমত।’’ ২৩

➥{ইমাম আলূসী বাগদাদী : তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ৩/২৬৯ পৃ.}



❏ তিনি সূরা নূরের ৩৫ নং আয়াতের তাফসির করতে গিয়ে লিখেন-


الثاني الرسول صلّى الله عليه وسلّم قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ [المائدة: ١٥]


-‘‘এ আয়াতের দ্বিতীয় নূর দ্বারা রাসূল (ﷺ) উদ্দেশ্য, যেমন মহান রব তা‘য়ালা তাঁর হাবিবের শানে ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে মহান নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব।’’ ২৪

➥{ইমাম আলূসী বাগদাদী, তাফসীরে রুহুল মায়ানী : ৮/৫২৪ পৃ.}



❏ তিনি এ আয়াতের তাফসিরে আরও লিখেন-


وقيل المراد بنوره رسوله محمد صلّى الله عليه وسلّم وقد جاء إطلاق النور عليه عليه الصلاة والسلام في قوله تعالى: قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ


-‘‘কোনো কোনো মুফাসসিরগণ বলেছেন, নূর দ্বারা রাসূল (ﷺ) উদ্দেশ্য সাধারণভাবে রাসূল (ﷺ), মহান রব তা‘য়ালা তাকে নূর বলেছেন, তাই তিনি তাঁর হাবিবের শানে ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক মহান নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব।’’ ২৫

➥{ইমাম আলূসী বাগদাদী, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ৯/৩৫৮ পৃ.}



(৫২) আল্লামা আবু তৈয়্যব মুহাম্মদ সাদেক কিনাযী (ওফাত.১৩০৭ হি.) উক্ত আয়াত সম্পর্কে তার তাফসিরে লিখেন-


قال الزجاج النور محمد صلى الله عليه وسلم


-‘‘ইমাম যুজ্জাজ  বলেন, উক্ত আয়াতের ‘নূর’ দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।’’ 


(ফতহুল বায়ান ফি মাকাসিদিল কুরআন, ৩/৩৭৮ পৃ.)



(৫৩) আল্লামা মোল্লা মঈন কাশেফী (رحمة الله) [ওফাত. ৯০৭ হি.] বলেন,  


قد جاءكم من الله نور وكتاب مبين گفتہ اند كہ نور حضرت رسالة پناه صلى عليہ وسلم است وكتاب مبين قران است –


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সম্মানিত নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব। বর্ণিত হয়েছে যে, নূর মানে হযরত রাসূলে করীম (ﷺ) এবং সুস্পষ্ট কিতাব মানে কুরআন।’’ ২৬

➥{আল্লামা মোল্লা মঈন কাশেফী : তাফসীরে হুসাইনী, ২৪২ পৃ.}



(৫৪) শাম দেশের প্রসিদ্ধ মুফতি, আল্লামা মাহমুদ বিন মুহাম্মদ বিন হামযাহ আল-হুসাইনী আল-হামাযাভী আল-হানাফী  (ওফাত. ১৩০৫ হি.) তিনি তাঁর সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থে লিখেন-


﴿قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ﴾ هو محمد صلّى الله عليه وسلّم رسوله الأكرام


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সম্মানিত নূর, এখানে নূর বলতে রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।’’ 


(তাফসিরে দুররুল আসরার, ১/২৬২ পৃ.)



(৫৫) আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ বিন উমর নববী আল-জাভী [ওফাত.১৩১৬ হি.] এ আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় বলেন-


قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ أي رسول وهو محمد صلّى الله عليه وسلّم


-‘‘উক্ত আয়াতের নূর দ্বারা রাসূল তথা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।’’ 


(তাফসীরে মারাহিলু লাবিদ, ১/২৫৮ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ,  বয়রুত,  লেবানন।)



(৫৬) আল্লামা শায়খ মোল্লা আবুল ফযল ফয়েজী (رحمة الله) তাফসীরে ‘সাওয়াত্বি উল ইলহামের’ প্রথম খণ্ডের ২৫২ পৃষ্ঠায় উক্ত আয়াত সম্পর্কে বলা হয়েছে, 


قد جاءكم من الله نور وهو محمد صلى الله عليه وسلم –


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহ্ পক্ষ থেকে এসেছে এক নূর, এখানে ‘নূর’ মানে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’



(৫৭) আল্লামা শায়খ জামালুদ্দীন কাসেমী (ওফাত. ১৩৩২ হি.] উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-


النور، محمد صلى الله عليه وسلم كما سمي سراجا.


-‘‘নূর দ্বারা  রাসূল  (ﷺ) কেই বুঝানো হয়েছে, এজন্য তাঁর একটি নাম ‘সিরাজ’ বা প্রদীপ।’’ 


(মুহাসিনুল তাভীল, ৪/৯১ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)



(৫৮) আল্লামা আহমদ বিন মুস্তফা আল-মারাগী [ওফাত.১৩৭১ হি.] এ আয়াতের তাফসীরে বলেন-


(قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتابٌ مُبِينٌ) النور هو النبي صلى الله عليه وسلم، 


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহ্ পক্ষ থেকে এসেছে এক নূর, এখানে নূর হলেন রাসূল (ﷺ)।’’ 


(তাফসীরে মারাগী, ৬/৮০ পৃ. মিসর হতে প্রকাশিত, শামেলা)



(৫৯) আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী (رحمة الله) [ওফাত. ১৩৫০ হি.] তাঁর “জাওয়াহিরুল বিহার” গ্রন্থের ৪/২৫১ পৃষ্ঠায় উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন-


قال الله تعالى (قد جاءكم من الله نور) يعنى محمدا صلى الله عليه وسلم (وكتاب مبين) يعنى القران 


-‘‘মহান রব ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহ্ পক্ষ থেকে এসেছে এক নূর, এখানে ‘নূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হযরত মুহাম্মদ (ﷺ), আর কিতাবুম মুবীম দ্বারা ‘কুরআন’ বুঝানো উদ্দেশ্য।’’



(৬০) আল্লামা সাভী আল-মালেকী (رحمة الله) [ওফাত. ১২৪১হি.] উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন,  


قد جاءكم من الله نور وهو النبى صلى الله عليه وسلم اى اسمى نور لانه ينور البصائر ويهديها للارشاد ولانه اصل كل نور حسى ومعنوى 


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর। আর সেই নূর হলো নবী করীম (ﷺ)। তাকে নূর এজন্য বলা হয়েছে যে, তিনি অন্তর্দৃষ্টিগুলোকে আলোকিত করেন এবং সেগুলোকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন। তদুপরি, সেটা হচ্ছে ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য ও ভাবগত প্রতিটি নূরের মূল।’’ ২৭

➥{আল্লামা ইমাম সাভী : তাফসীরে সাভী আলাল জালালাইন : ১/২৫৮ পৃ. মুস্তফা আল বাব, মিশর।}



(৬১) শায়খ মুহাম্মদ রশীদ বিন আরী রেযা কালমুনী হুসাইনী (رحمة الله) তাঁর তাফসিরে লিখেন-


(قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ) فِي الْمُرَادِ بِالنُّورِ هُنَا ثَلَاثَةُ أَقْوَالٍ: أَحَدُهَا: أَنَّهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.


-‘‘সূরা মায়িদার আয়াতের ‘নূর’ দ্বারা কি উদ্দেশ্য এ বিষয়ে মুফাস্সিরগণের তিনটি অভিমত পাওয়া যায়, প্রথম অভিমত হল. এ নূর দ্বারা উদ্দেশ্য হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ 


(তাফসীরে আল-মানার, ৬/২৫১ পৃষ্ঠা)



(৬২) এমনকি দেওবন্দীদের অন্যতম আলেম মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেব [১৯০৫ খৃ.] তার “এমদাদুস সুলুক” গ্রন্থে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করেন এভাবে-


حق تعالى درشان حبيب خود صلى الله عليه و سلم فرمود كه آمده نزد شما از طرف حق تعالى نور و كتاب مبين و مراد از نور ذات پاك حبيب خدا صلى الله عليه و سلم است و نيز 


-‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর হাবীব (ﷺ)-এর শানে বলেন, তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে এক নূর ও স্পষ্ট কিতাব। উক্ত আয়াতে নূর দ্বারা হাবীবে খোদা (ﷺ)  এর পবিত্র সত্ত্বাকে বুঝানো হয়েছে।’’ ২৮

➥{রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী : এমদাদুস সুলুক : ৮৫ পৃ. (বাংলায় অনূদিত এটির নাম এরশাদুল মূলুক,  মাকতাবায়ে হাকিমুল উম্মত, ইসলামি টাওয়ার, আন্ডার গ্রাউন্ড,  বাংলাবাজার)}



(৬৩) দেওবন্দী আলেম মাওলানা আব্দুল মজিদ দরিয়াবাদী তার (তাফসীরে মাজেদী” এর ২/৫০৯ পৃষ্ঠায় সূরা মায়েদা,  আয়াত নং ১৫,  হাশিয়া নং ৭৩ যা ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত) এ বলা হয়েছে-


-‘‘নূরে’র অর্থ হল মুহাম্মদ (ﷺ) এবং “কিতাবুম মুবিন” এর অর্থ হল ঐ কুরআন,  যা নবী করীম (ﷺ) এর প্রতি নাযিল করা হয়েছিল। (ইবনে জারীর) ইমাম যুজ্জাজ (رحمة الله) বলেন, নূর হল মুহাম্মদ (ﷺ), কিতাবুম মুবিন হল- আল-কুরআন, কেননা তা হুকুম আহকামকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে। 


(কুরতুবী)’’



(৬৪) আল্লামা ড. শায়খ মুস্তফা জুহাইলীও উক্ত আয়াতের তাফসীরে লিখেন-


قَدْ جاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ هو النبي صلّى الله عليه وسلّم وَكِتابٌ مُبِينٌ قرآن


-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে মহান নূর, উল্লেখিত আয়াতে নূর দ্বারা উদ্দেশ্য নবী করীম (ﷺ) এবং কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআনুল কারীম।’’ 


(তাফসিরুল মুনীর, ৬/১৩২ পৃ.) 



(৬৫) আল্লামা শায়খ তানতাভী তার তাফসিরে লিখেন-


من الله نور هو محمد صلّى الله عليه وسلّم الذي أنار الله به الحق، وأظهر به الإسلام ومحق به الشرك


-‘‘আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর, আর এটি হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘য়ালা সত্যকে আলোকিত করেছেন এবং ইসলামকে জাহির (বিকাশিত) করেছেন এবং শিরকে মিটিয়ে দিয়েছেন।’’ 


(তাফসিরুল ওয়াসীত, ৪/৯০ পৃ.) 



(৬৬) আল্লামা শায়খ আসআ‘দ হুমাদ উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-


نُورٌ - هُوَ مُحَمَّدٌ صلى الله عليه وسلم.


-‘‘উক্ত ‘নূর’ দ্বারা রাসূল(ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। 


(আয়সারুত তাফাসীর,  ১/৬৮৫ পৃ. শামেলা)



(৬৭) আহলে হাদিসদের অন্যতম শায়খ জাবের বিন আবু বকর আল-জাযায়েরী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন- 


النور: محمد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، والكتاب: القرآن الكريم.


-‘‘আল্লাহর বাণী : তোমাদের নিকট মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক মহান নূর। আর সে নূর হলেন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আর কিতাবুম মুবিম হলো কুরআন।’’ 


(আয়সারুল তাফাসির লিকালামিল উলাউল কাবীর, ১/৬১০ পৃ. মাকতুবাতুল উলূম ওয়াল হিকাম, মদিনা মুনোওয়ারা, সৌদি আরব।)



(৬৮) শায়খ আলী বিন নায়েফ শুহুদ এর লিখিত সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ (بابا الفاتيكان في الميزان) এর ২০ পৃষ্ঠায় লিখেন-


قال تعالى : [ قَدْ جَاءكُمْ مّنَ الله نُورٌ وكتاب مُّبِينٌ ] وفيه أقوال : الأول : أن المراد بالنور محمد ، وبالكتاب القرآن ،


-‘‘আল্লাহর বলেন : তোমাদের নিকট মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এক মহান নূর এবং প্রকাশ্য কিতাব। এ আয়াতের বিষয়ে কয়েকটি অভিমত থাকলেও প্রথম অভিমত হলো, নূর দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এবং কিতাবুম মুবিম দ্বারা কুরআন উদ্দেশ্য।’’



(৬৯) দেওবন্দী আলেম মাওলানা আবদুল কাদের রচিত তাফসীরে কাদেরীর ১ম খণ্ডের ২১৭ পৃষ্ঠায়ও নূর দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে উদ্দেশ্য করেছেন। 



(৬৭) মাওলানা আবদুল কাদের দেহলভীর রচিত ‘তাফসীরে মূদ্ধিহুল কোরআন’ এর ১/১০৩ পৃষ্ঠায় ‘নূর’ দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। 



(৬৮) শুধু তাই নয় বাংলাদেশের অন্যতম দেওবন্দী আলেম মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম তিনি তার তাফসীরে সুরা মায়েদার ১৫ নং আয়াত-


قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ


 -‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহ হতে এসেছে নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব।’’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন-‘‘আলোচ্য আয়াতে ‘নূর’ দ্বারা নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।’’ ২৯

➥{আমিনুল ইসলাম,তাফসীর নূরুল কোরআন, ৬/১৬৭ পৃষ্ঠা, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন, বাংলাদেশ।}



খ. তিনি এ আয়াতের অনূরুপ অভিমত পেশ করেন তার লিখা আরেকটি পুস্তকে। যেমন এ আয়াত উল্লেখ করে তিনি বলেন-‘‘এ আয়াতে ‘‘নূর’’ শব্দ দ্বারা হযরত রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, আর কিতাব দ্বারা পবিত্র কোরআনকে বোঝানো হয়েছে।’’ ৩০

➥{মওলানা আমিনুল ইসলাম, নূরে নবী (দ.), প্রথম খণ্ড, ৫ পৃষ্ঠা, আল বালাগ পাবলিকেশন্স, ঢাকা, জুন, ১৯৯৯ ইং, রবিউল আউয়াল, ১৪২০হি.}



❏ তিনি একই পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে-‘‘মূলতঃ পবিত্র কোরআন যেমন নূর, তেমনি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামও নূর।’’ ৩১

➥{মওলানা আমিনুল ইসলাম, নূরে নবী (দ.), প্রথম খণ্ড, (ভূমিকার ৫ পৃষ্ঠা) আল বালাগ পাবলিকেশন্স, ঢাকা, জুন, ১৯৯৯ ইং, রবিউল আউয়াল, ১৪২০হি.}



(৬৯) আহলে হাদিসদের প্রধান মুফতি আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (মৃত. ১৪২০ হি.) তার ফাতওয়ার গ্রন্থে লিখেন-


كما قال الله سبحانه وتعالى: [قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ] هذا النور هو محمد صلى الله عليه وسلم


-‘‘মহান আল্লাহু সুবহানাহু তা‘য়ালা (রাসূল (ﷺ) এর শানে) ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর, আর এ আয়াতের নূর যাকে বলা হয়েছে তিনি হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ 


(ইবনে বায, মাজমূআয়ে ফাতওয়ায়ে ইবনে বায, ২৫/১৩০ পৃ.)


(৭০) আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ মাহমুদ আল-হাজ্জাযিহ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-‘‘ 


قد جاءكم من الله نور هو النبي محمد


-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর, আর সে নূর হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ 


(তাফসীরে আল-ওয়াদ্বাহ,  ১/৪৯৫ পৃ. দারুল জালীলুল জাদীদ,  বয়রুত,  লেবানন।)



(৭১) আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাঁর একাধিক পুস্তকে ‘নূর’ দ্বারা রাসূল কে বুঝানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। 


(রিসালায়ে নূর, পৃ. ৪-৭, তাফসীরে নাঈমী, খণ্ড, পৃ.)



(৭২-৭৩) এছাড়া আল্লামা করম শাহ আযহারী (رحمة الله)-এর লিখিত ‘তাফসিরে যিয়াউল কোরআন এবং শাইখুল ইসলাম মাদানী মিয়া আশরাফী (رحمة الله)-এর লিখিত ‘তাফসিরে আশরাফী’ তেও উক্ত আয়াতের নূর দ্বারা রাসূল (ﷺ)এর নূরানী সত্ত্বাকে উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করেছেন।


❏ অনুরূপ মোট ৮০টিরও বেশী তাফসীরে উল্লেখ রয়েছে যে উক্ত আয়াতে নূর বলতে রাসূল (ﷺ)-এর নূর নূরানী সত্ত্বাকেই বুঝানো হয়েছে। সম্মানিত পাঠকবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে যে, যারা এই আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা করে থাকেন তাদের কাছে আপনারা দাবি দাবী করবেন যে, আয়াতে যদি অন্যটা বুঝিয়ে থাকে তো আপনারা আমাদেরকে কমপক্ষে ৮১ টি তাফসীর দেখান এবং এর মধ্যে সাহাবি, তাবেয়ীদের ব্যাখ্যাও থাকতে হবে, যেহেতু আমরা তা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। তাহলেই বুঝতে পারবো যে আপনারা পূর্বসূরি মুফাস্সিরগণের ব্যাখ্যা অনুসরণ করছেন। 



(৭৪) আহলে হাদিস ও দেওবন্দীদের শাইখুল ইসলাম এবং ইমাম, আল্লামা ইবনে তাইমিয়া তার সুপ্রসিদ্ধ ফাতওয়া কিতাবে লিখেন-


قَوْلُهُ: [قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ] قِيلَ: النُّورُ هُوَ مُحَمَّدٌ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ


-‘‘মহান রবের বাণী, নিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব। কোনো কোনো মুফাসসিরগণ বলেছেন, এ আয়াতের নূর বলতে উদ্দেশ্য হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)।’’ 


(ইবনে তাইমিয়া, মাজমাউল ফাতওয়া, ১৩/১০ পৃ.)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আহলে হাদিস এবং দেওবন্দী ভাইগণ নিজেদের ইমামকেই মানে না, আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকাবীরদের কথা মানা তো বহু দূরে!



(৭৫) শুধু তাই নয় রাসূল (ﷺ) নূর হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশের দেওবন্দী সুপ্রসিদ্ধ শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক যিনি অসংখ্য কওমী দেওবন্দী আলেমদের উস্তাদ। তিনি সুপ্রসিদ্ধ দেওবন্দী পত্রিকা মাসিক ‘আদর্শ নারীর’ ২০১২ ঈসায়ীর জানুয়ারী তথা রবিউল আউয়ালের সংখ্যার ‘‘মহানবীর (সা.) অলৌকিক বিলাদাত’’ শিরোনামের ১০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হিদায়াতের নূরে সারাবিশ্ব আলোকিত হবে, তাই তাঁর শুভাগমন লগ্নে এসব নূরের বিকাশ ছিল। নবীজী (সা.) নিজেই ঐ নূরের আকর-নূরে মুজাস্সাম।’’ 


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আজিজুল হক সাহেব খুব সুন্দর করেই রাসূল (ﷺ) কে নূরে মুজাস্সাম অর্থাৎ নবিজীর দেহ মোবারক নূরের তা বলে দিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তার ছাত্র এবং তার ছাত্রের ছাত্ররা আজ রাসূল (ﷺ) কে নূর বললেই আমাদেরকে কাফের ফাত্ওয়া দিতে শুরু করে। এখন তাদের সে ফাতওয়ায় তাদের পূর্বসূরী আকাবিরগণ কি হন? আপনারাই বলুন।


শুধু তাই নয়, একই পৃষ্ঠায় সুরা মায়েদার ১৫ নং আয়াত উল্লেখ করে তিনি বলেন-‘‘আলোচ্য আয়াতে যে নূরের উল্লেখ আছে, সেই নূর হলেন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)।’’ বর্তমানে তার নামধারী ছাত্ররা এ মতের বিরুদ্ধে মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। তার বুখারী শরিফের অনুবাদ গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ৩ পৃষ্ঠায়ও (যা হামিদিয়া প্রকাশনী চকবাজার, ঢাকা হতে প্রকাশিত) অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। 



(৭৬) মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানী তিনি ওলামায়ে দেওবন্দের সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস। আলেম। তিনি নিজে কুরআনের একটি তাফসীর গ্রন্থও লিখেছেন। তিনি সূরা মায়েদার ১৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-


(قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ) شايد نورى خود نبى كريم صلى الله عليہ وسلم اوركتاب مبين سے قران  كريم مراد-


-‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এক নূর এবং প্রকাশ্য কিতাব এসেছে। এখানে এ আয়াতে নূর দ্বারা স্বয়ং হুযুর (ﷺ) কে উদ্দেশ্য এবং কিতাবুম মুবিন দ্বারা পবিত্র কুরআনুল কারিম কে উদ্দেশ্য।’’   ৩২

➥{ছাব্বির আহমদ উসমানী, তাফসীরে উসমানী, ১/১৪২ পৃ.}



মহান রব আমাদেরকে সঠিক আক্বিদার উপর অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন

Top