বিষয় নং-১২: মিলাদ মাহফিলে হুযূর (ﷺ) উপস্থিত হতে পারেন বলে ধারণা রাখা:


‘‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’’ বইয়ের ৩৭২ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভীর ‘আসারারুল মারফূআ’ ৪৬ পৃষ্ঠার একটি বক্তব্য এভাবে উদ্ধৃতি করেন-‘‘মাওলিদের ওয়াযের মাজলিসে তাঁর মাওলিদ বা জন্মের কথা উল্লেখের সময় তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত হন। এ কথার উপরে তারা তাঁর মাওলিদের বা জন্মের কথার সময় সম্মান ও ভক্তি প্রদর্শনের জন্য কিয়াম বা দাঁড়ানোর প্রচলন করেছে।’’

তিনি এটি উল্লেখ করে করার পূর্বে লিখেছেন-‘‘প্রচলিত আরেকটি জাল ও মিথ্যা কথা।’’ তিনি তাদের জালকৃত বর্ণনাটি উল্লেখ করার পর আরও লিখেছেন এটি সহীহ হাদিস বিরোধী কথা। ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ (যা মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত) গ্রন্থের ১৭২ পৃষ্ঠায়ও অনুরূপ বক্তব্য প্রদান করেছেন।


পর্যালোচনা:


কেবল মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভীর মন্তব্যে প্রমাণ হয় না যে, মিলাদ মাহফিলে অথবা যেখানে ইচ্ছা সেখানে নবিজী উপস্থিত হতে পারেন না। এমনকি তিনি তা লিখেনও নি। শুধু এতটুকুই বলেছেন যে, অনেকেই ভক্তি প্রদর্শন করে থাকে, বিশ্বাস রাখে যে কিয়ামের সময় রাসূল (ﷺ) উপস্থিত হন। তিনি লিখেননি যে, উপস্থিত হয় না, এই বিশ্বাস পোষণ করা হারাম, কুফরী, নাজায়েয বা অন্য কিছু। আর তাছাড়া উক্ত দুই গ্রন্থের লেখক ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ও মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী আর কোনো দলীল প্রমাণ পেশ করতে পারেননি। আমি এ বিষয়ে উভয়কে বলতে চাই যে আপনারা-


❏ মাওলানা আবদুল হাই লাখনৌভির এ দলিলটি চোখে পড়েছে কিন্তু উক্ত পুস্তুক ‘আল-আসরারুল মারফূ‘আ’ এর ৪২ পৃষ্ঠায় হযরত জাবের (رضي الله عنه)এর নূরের হাদিস প্রসঙ্গে যে তিনি লিখেছেন- 

رِوَايَةِ عَبْدِ الرَّزَّاقِ فِي مُصَنَّفَةٍ عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَخْبِرْنِي عَنْ أَوَلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللَّهُ قَبْلَ الأَشْيَاءِ، فَقَالَ: يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ،

-‘‘এ হাদিসটি ইমাম আবদুর রায্যাক (رحمة الله) তাঁর মুসান্নাফ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন......সব কিছুর পূর্বে মহান রব রাসূল (ﷺ)-এর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।’’ তা কি আপনাদের চোখে পড়েনি!!


❏ শুধু তাই নয় তিনি আরও লিখেছেন-

قد ثَبت من رِوَايَة عبد الرَّزَّاق أولية النُّور المحمدي خلفا وسبقته على الْمَخْلُوقَات سبقا.

-‘‘ইমাম আব্দুর রায্যাক (رحمة الله)-এর বর্ণনাকৃত হাদিসে পাক দ্বারা নূরে মুহাম্মদী সর্বপ্রথম সৃষ্টি প্রমাণিত।’’ (আছারুল মারফুআ, পৃ. ৪৩)


অথচ এ কিতাবের এ হাওয়ালা তারা জানার পরেও তা আমলে নেয় না, কারণ তা তাদের মতের বিরোদ্ধে কেন গেলো। তাহলে এটি কী আপনাদের চোখে পড়েনি; না চোখে কালো চশমা লাগানো ছিল! পাঠকবর্গ! আমি এ বিষয়ে তাদের জবাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। 


এ বিষয়ে সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্য:


পাঠকবৃন্দের যদি প্রশ্ন করা হয় রাসূল (ﷺ)-এর ক্ষমতা বেশী না অন্যান্য নবীদের; আপনারা সবাই এক বাক্যে উত্তর দিবেন যে রাসূল (ﷺ)-এর। এখন আমি বলবো, অন্যান্য নবীরা যদি ওফাতের পরেও এক সময় একাধিক স্থানে উপস্থিত হতে পারেন তাহলে আমাদের নবী ওফাতের পরে যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারবেন না কেন! এখন হয়তো আপনাদের মনে আমাকে নিয়ে প্রশ্ন জাগতে পারে যে অন্যান্য নবীগণ যে ওফাতের পর একাধিক স্থানে উপস্থিত হয়েছেন তার কোন গ্রহণযোগ্য প্রমাণ কাছে? আমি বলবো, অবশ্যই রয়েছে। বরং সহীহ বুখারী ও মুসলিমেই রয়েছে। রাসূল (ﷺ)-এর মি‘রাজ জাগ্রত অবস্থায়ই হয়েছে তার ব্যাপারে সকল ওলামাগণই একমত পোষণ করেছেন।  ১৫৭

১৫৭. এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘আকায়েদে আহলে সুন্নাহ’ দেখতে পারেন।


সমস্ত নবীরা তাদের কবরে জিবীত। এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস সামনে উল্লেখ করা হবে, ইনশা আল্লাহ। তবে এখানে একটি মাত্র হাদিসই উল্লেখ করবো যা-


❏ ইমাম বায্যার (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেছেন,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ؓ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ -: الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ-

-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আম্বিয়ায়ে কিরাম (আঃ) তাদের নিজ নিজ কবরে জীবিত এবং তারা সেখানে সালাত আদায় করেন।’’১৫৮ 

১৫৮. ইমাম আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ : ৬/১৪৭ পৃ: হা/৩৪২৫, ইমাম বায়হাকী : হায়াতুল আম্বিয়া : ৬৯-৭০পৃ. ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২১১পৃ. হাদিস, ১৩৮১২, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : তবকাতে ইস্পাহানী : ২/৪৪ পৃ:, ইমাম আদী : আল কামিল : ২/৭৩৯ পৃ:, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: আল জামেউস সগীর: ১/২৩০ পৃ: হাদিস- ৩০৮৯, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: শরহুস সুদূর: পৃ. ২৩৭, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী: সিলসিলাতুল সহীহা: হাদিস নং- ৬২২, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী: সহীহুল জামে: হা/২৭৯০, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/১১৯পৃ. হাদিস, ৪০৩।


এ হাদিসটি সহীহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই, বরং আহলে হাদিসের অন্যতম ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানীও তার দুটি গ্রন্থে হাদিসটি সহীহ বলে মত প্রকাশ করেছেন। 

উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে সমস্ত নবীরা তাদের নিজ নিজ রওযা শরীফে জীবিত রয়েছেন। 


❏ এ প্রসঙ্গে আমরা সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আরেকটি হাদিস দেথকে পারি, যা আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, যেখানে বর্ণিত হয়েছে মি‘রাজে হযরত মূসা (عليه السلام)‘র কবরের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে রাসূল (ﷺ) দেখেন,

مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى وَهُوَ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ

-‘‘হযরত মূসা (عليه السلام) তাঁর মাযারের মাঝে দাঁড়িয়ে সালাত পড়ছেন।’’১৫৯  

১৫৯. ইমাম মুসলিম : আস সহীহ : ৪/১৮৪৫ : হা/২৩৭৫, ইমাম নাসায়ী : সুনান : ৩/১৫১ : হা/১৬৩৭, ইমাম আহমদ : মুসনাদ : ৩/১২০ পৃ:, ইমাম বাগভী : শরহে সুন্নাহ : ১৩/৩৫১ : হা/৩৭৬০, ইমাম ইবনে হিব্বান : আস সহীহ : ১/২৪১ : হা/৪৯, ইমাম আবি শায়বাহ : আল মুসান্নাফ : ১৪/৩০৮ : হা/১৮৩২৪, ইমাম নাসায়ী : সুনানে কোবরা : ১/৪১৯ : হা/১৩২৯, ইমাম আবু ই’য়ালা : আল মুসনাদ : ৭/১২৭ : হা/৪০৮৫, ইমাম মানাবী : ফয়জুল কাদীর : ৫/৫১৯ পৃ: হা/৩০৮৯, আল্লামা মুকরিজী : ইমতাঈল আসমা’আ : ১০/৩০৪ পৃ:


উপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, সমস্ত নবীরা যে বাস্তবেই তাদের মাজারে জীবিত তার প্রধান সাক্ষী ছিলেন আমাদের নবী (ﷺ)। আমরা এখন প্রমাণ খুঁজবো যে নবীরা তাদের রওজায় শায়িত হওয়ার পরেও যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারেন কিনা।


❏ হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ ﷺ:وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ، فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي، فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ، جَعْدٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ، وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ - يَعْنِي نَفْسَهُ - فَحَانَتِ الصَّلَاةُ فَأَمَمْتُهُمْ-

-‘‘রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, মি‘রাজের রাত্রে আম্বিয়া (আঃ) এর এক বিরাট জামাতকে আমি দেখেছি,  হযরত মূসা (عليه السلام)-কে তাঁর কবরে নামায পড়তে দেখেছি। তাকে দেখতে মধ্য আকৃতির চুল কোকরানো সানওয়া দেশের লোকের মত। আমি ঈসা (عليه السلام) কে দন্ডায়মান অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি, তিনি দেখতে সাহাবী হযরত ওরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফী (رضي الله عنه)‘র মত। তার পরে নামাযের সময় আসলো আমি সকল নবী (আঃ) এর ইমামতি করলাম।’’ ১৬০

১৬০. ইমাম মুসলিম : সহীহ : ফাযায়েলে মূসা (আ.) : ১/১৫৭ : হা/১৭৩, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ৩/২৮৭ : হা/৫৮৬৬, ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত : ২/৩৮৭ পৃ:, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী, শিফাউস-সিকাম: ১৩৫-১৩৮ পৃ. ইমাম সূয়ূতী : আল-হাভীলিল ফাতওয়া :২/২৬৫ পৃ:, ইমাম সাখাভী : কওলুল বদী : ১৬৮পৃ., ইমাম মুকরিজী : ইমতাঈল - আসমা: ৮/২৪৯ পৃ:


পর্যালোচনা


এ বিশুদ্ধ হাদিস থেকে প্রমাণিত হলো, হযরত মূসা (عليه السلام) সহ সকল নবি তাঁদের নিজ নিজ রওযা শরীফে জীবিত অবস্থানরত থাকার পরও আবার বায়তুল মুকাদ্দাসে উপস্থিত হয়েছেন। তাহলে বুঝা গেল তাঁদের জীবন শুধু কবরের মধ্যেই সিমাবদ্ধ নয়; তা না হলে তারা বায়তুল মুকাদ্দাসে রাসূল (ﷺ)‘র পিছনে নামায পড়তে গেলেন কিভাবে ? আর শরীয়ত মতে নামাযের জন্য যাহেরী জিসিম বা দেহ থাকা শর্ত, কেননা রূহের কোনো ইবাদত নেই। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! গভীরভাবে  লক্ষ্য করুন যে, বোরাকে যখন রাসূল ৬ষ্ঠ আকাশে গেলেন তখন দেখেন হযরত মূসা (عليه السلام) সেখানে উপস্থিত এবং এমনকি আমাদের আখিরী যামানার উম্মতের উপর ৫০ ওয়াক্ত নামায তারই উসিলাতে কমে ৫ ওয়াক্তে রুপান্তরিত হয়েছিল। (মিশকাতুল মাসাবীহ, মি‘রাজ অধ্যায়,  বুখারী, মুসলিমের সূত্রে) 

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তাহলে আপনারা গভীরভাবে লক্ষ্য করুন! রাসূল (ﷺ) হযরত মূসা (عليه السلام) কে তাঁর কবরে দেখলেন, আবার তাঁর পিছনে নামায পড়তে বায়তুল মুকাদ্দাসে দেখলেন, আবার ৬ষ্ঠ আকাশে দেখলেন; তাহলে এক সময়ে মোট তিনেরও অধিক স্থানে একজন নবীকে দেখলেন। তাহলে আমি বিবেকহীন আলেম নামে কলঙ্কদের বলবো যে আমাদের নবিজীর পরের মর্যাদায় অর্থাৎ রাসূলদের মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকারী হযরত মূসা (আ.) যদি ওফাতের পরেও বহু স্থানে উপস্থিত হওয়ার ক্ষমতা লাভ করতে পারেন, আমাদের উম্মতে মুহাম্মাদিকে সাহায্য করতে পারেন তাহলে আমাদের নবিজী ওফাতের পরে শুধু মাত্র দুনিয়াতেই একাধিক স্থানে উপস্থিত হতে পারবেন না কেনো!!

সাধারণ পাঠকগণের উদ্দেশ্যে আমি বলবো, নবিজী অনেক নবিদের তাদের কবরে দেখেছেন, আবার বায়তুল মুকাদ্দাসেও দেখেছেন, আবার তাদেরকেই অনেককেই মি‘রাজে আসমানেও দেখেছেন; তাহলে তাঁরা ওফাতের পরেও বহু স্থানে পরিভ্রমন করতে পারেন তাহলে আমাদের নবী সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার পরেও ওফাতের পরে একাধিক স্থানে পরিভ্রমন করতে পারবে না কেনো ? পাঠকবৃন্দ! তাদের বক্তব্য থেকেই ইহুদীদের দালালির টাকার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে হয়। কেননা ইহুদী ধর্মের নবীও যদি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারেন তাহলে আমাদের নবী সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়ার পরেও কেন যেতে পারবেন না! একটি বিষয় আমরা সকলেই অবগত আছি, এক মুহুর্তে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যু বরণ করেন এবং একই সময়ে বহুজনকে দাফনও করা হয়, রাসূল (ﷺ) যদি ওফাতের পরে যেখানে ইচ্ছে সেখানে পরিভ্রমন করতে না পারেন তাহলে তিনি কিভাবে সকল মানুষের কবরে উপস্থিত হবেন! এমন ফিতনার যুগ এসেছে অনেকে এখন বলেও থাকেন কবরে রাসূল (ﷺ) আসবেন না। ১৬১ নাউযুবিল্লাহ

১৬১. এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘ফতোয়ায়ে আহলে সুন্নাহ’ গ্রন্থ দেখুন।


❏ আমি প্রথমে মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভীর কিতাব থেকেই দলীল পেশ করবো, সেটি হচ্ছে ধুমপানের উপরে লিখিত ছোট রিসালা, যার নাম হচ্ছে تراويح الجنان بتشريح حكم شرب الدخان তিনি উক্ত পুস্তুকে একটি ঘটনা উল্লেখ করেন-

ايک شخص نعت خواں تها اور حقہ بهى پيتا تها اس نے خواب ميں دكها نبى عليه السلام فرماتے ہيں كہ جب تم مولود شريف پڑهتے ہو تو ہم رونق افروز مجلس ہو تے ہيں مگر جب حقہ اجاتا ہے فورا مجلس سے واپس ہو جا تے ہيں – 

-“জনৈক ব্যক্তি নাত পাঠ করতো এবং হুক্কাও পান করতো। সে একদিন স্বপ্নে দেখল যে,  নবী করীম (ﷺ) তাকে বলছেন, যখন তুমি মীলাদ শরীফ পাঠ কর,  তখন আমি মাহফিলে উপস্থিত হই। কিন্তু যখনই হুক্কা আনা হয়, তখন আমি কালবিলম্ব না করে মাহফিল থেকে ফিরে যাই।”  ১৬২

১৬২. আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জাআল হক, ১/১৪৭ পৃ. (উর্দু)


তাই মাওলানা আব্দুল হাই সাহেবের দলীল যেহেতু তারা শুধু এককভাবে দিয়েছেন তাই আমিও প্রথমে তার দলিলটি উপস্থাপন করলাম।

এখন আমি রাসূল (ﷺ) তার ওফাতের পরে কোথাও উপস্থিত হয়েছিলেন তার কোনো নযির পাওয়া যায় কিনা আমরা তা খুঁজে দেখবো। 


❏ হযরত সালমা (رضي الله عنه) বলেন-

دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، وَهِيَ تَبْكِي فَقُلْتُ: مَا يُبْكِيكِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ فِي الْمَنَامِ يَبْكِي وَعَلَى رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ التُّرَابُ، فَقُلْتُ: مَا لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: شَهِدْتُ قَتْلَ الْحُسَيْنِ آنِفًا

-‘‘আমি উম্মাহাতুল মু‘মিনীন মা উম্মে সালামা (رضي الله عنه)‘র হুজরা শরীফে প্রবেশ করলাম এবং দেখলাম যে তিনি কাঁদছেন। আমি বললাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, একটু আগে আমি রাসূল (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম যে তাঁর মাথা মুবারকে এবং দাঁড়ি মুবারকে ধুলা বালি লেগে আছে। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার এ অবস্থা কেন? তিনি বললেন, এই মাত্র আমি হুসাইনের শাহাদাতের স্থানে উপস্থিত ছিলাম।’’ ১৬৩

১৬৩. 

ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ৪/২০ পৃ. হা/৬৭৭৪, পরিচ্ছেদ: ذِكْرُ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أُمِّ سَلَمَةَ بِنْتِ أَبِي أُمَيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا , তিনি একে সহীহ বলেছেন

- سكت عنه الذهبي في التلخيص

‘‘ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার তালখীছ গ্রন্থে এ সনদের বিষয়ে নীরব ছিলেন।’’ 


ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৬/১২০ পৃ. হা/৩৭৭১, পরিচ্ছেদ: بَابُ مَنَاقِبِ أَبِي مُحَمَّدٍ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ وَالْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا , 


ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২৩/৩৭৩ পৃ. হা/৮৮২, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৭৭৩ পৃ. হা/৬১৬৬, মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৯৮০ পৃ. হা/৬১৬৬, তিনি বলেন- قَوِّي -‘‘এ হাদিসটি শক্তিশালী।’’ এবং ৯/৩৯৮৬ পৃ. হা/৬১৮০, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৯/৩৫ পৃ. হা/৬৫৬৭


আক্বিদা


এ হাদিস থেকে বুঝা গেল যে, কারবালায় কি ঘটছে তা আল্লাহর নবী (ﷺ) তাঁর আপন রওজা মোবারক থেকেই দেখতে পেয়েছেন, এজন্যই তিনি সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। এ হাদিসের (شَهِدْتُ) এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেছেন- أَيْ: حَضَرْتُ -‘‘অর্থাৎ আমি উপস্থিত ছিলাম।’’  ১৬৪

১৬৪. মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৯৮০ পৃ. হা/৬১৬৬


এ হাদিস থেকে বুঝা গেল প্রথিবীর যে কোন প্রান্তে রাসূল (ﷺ)-এর উপস্থিত হওয়া তাঁর ইখতিয়ারাধীন।  তারপরও যারা এ আক্বিদার বিপরীত মত পোষণ করেন তারা কখনই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের লোক হতে পারেন না। 


❏ এ বিষয়ে আল্লামা ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) এর প্রসিদ্ধ কিতাব [أَنْبَاءُ الْأَذْكِيَاءِ بِحَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ] এর ৭ পৃষ্ঠায় একটি হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,  

النَّظَرِ فِي أَعْمَالِ أُمَّتِهِ وَالِاسْتِغْفَارِ لَهُمْ مِنَ السَّيِّئَاتِ، وَالدُّعَاءِ بِكَشْفِ الْبَلَاءِ عَنْهُمْ، وَالتَّرَدُّدِ فِي أَقْطَارِ الْأَرْضِ لِحُلُولِ الْبَرَكَةِ فِيهَا، وَحُضُورِ جِنَازَةِ مَنْ مَاتَ مِنْ صَالِحِ أُمَّتِهِ، فَإِنَّ هَذِهِ الْأُمُورَ مِنْ جُمْلَةِ أَشْغَالِهِ فِي الْبَرْزَخِ كَمَا وَرَدَتْ بِذَلِكَ الْأَحَادِيثُ وَالْآثَارُ، ـ

-‘‘উম্মতের বিবিধ কর্ম কান্ডের প্রতিদৃষ্টি রাখা, তাদের পাপরাশির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা,  তাদের বালা মসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দুআ করা,  পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আনাগোনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তার জানাযাতে অংশগ্রহণ করা,  এগুলোই হচ্ছে হুযূর (ﷺ) এর সখের কাজ। অন্যান্য হাদিস থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়।’’  ১৬৫

১৬৫. সুয়ূতি, আল-হাভী লিল ফাতওয়া, ২/১৮৪-১৮৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।


❏ বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে রুহুল বায়ানে সূরা মূলকের ২৯নং আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-

قال الامام الغزالي رحمه الله تعالى والرسول عليه السلام له الخيار فى طواف العوالم مع أرواح الصحابة رضى الله عنهم لقد رآه كثير من الأولياء

-‘‘সূফী কূল সম্রাট, হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম গায্যালী (رحمة الله) বলেছেন,  হুযূর (ﷺ) এর সাহাবায়ে কিরামের রুহ মোবারক সাথে নিয়ে জগতের বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণের ইখতিয়ার আছে। তাই অনেক আওলিয়া কিরাম তাঁদেরকে দেখেছেন।’’ ১৬৬

১৬৬. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান : ১০/৯৯ পৃ.


নবীগণ ও আল্লাহর ওলীগণ এক সময়ে বহু জায়গায় উপস্থিত হয়ে থাকেন। আর রাসূল (ﷺ) এর তো কোন তুলনাই চলে না।


❏ মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতুল মাফাতীহ এর بَاب مَا يُقَال عِنْد من حَضَره الْمَوْت শীর্ষক অধ্যায়ে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-

وَلَا تَبَاعُدَ مِنَ الْأَوْلِيَاءِ حَيْثُ طُوِيَتْ لَهُمُ الْأَرْضُ، وَحَصَلَ لَهُمْ أَبْدَانٌ مُكْتَسَبَةٌ مُتَعَدِّدَةٌ، وَجَدُوهَا فِي أَمَاكِنَ مُخْتَلِفَةٍ فِي آنٍ وَاحِدٍ، 

-‘‘ওলীগণ একই মুহুর্তে কয়েক জায়গায় বিচরণ করতে পারেন। একই সময়ে তারা একাধিক শরীরের অধিকারীও হতে পারেন।’’ ১৬৭

১৬৭. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত চতুর্থ খণ্ড, পৃ- ১০১, হাদিস নং-১৬৩২।

 

তাই এক সময়েই বহু জায়গায় মিলাদ মাহফিল হয় ওলীগণ যদি একাধিক শরীরে বহু জায়গায় যেতে পারেন তাহলে রাসূল (ﷺ) কি যেতে পারেন না? বরং তার সাথে কোন তুলনাই হতে পারে না ?


❏ শিফা শরীফে ইমাম কাযী আয়ায আল-মালেকী (رحمة الله) লিখেন, 

قَالَ: إِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْبَيْتِ أَحَدٌ فَقُلْ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ـ 

-‘‘যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন,  হে নবী আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।’’ ১৬৮

১৬৮. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা তাহরিফে হুকুকে মোস্তফা : ২/৪৩ পৃ.।


❏ এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) শরহে শিফা গ্রন্থে লিখেন-

أي لأن روحه عليه السلام حاضر في بيوت أهل الإسلام

-‘‘কেননা, নবী (ﷺ) এর পবিত্র রুহ মুসলমানদের ঘরে ঘরে বিদ্যমান আছেন।’’  ১৬৯

১৬৯. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী শরহে শিফা : ২/১১৮ পৃ.।


❏ এ ব্যাপারে উপরের হাদিসের ন্যায় আরও একটি হাদিসে পাক রয়েছে যে

وَقَال النَّخَعِيّ إذَا لَم يَكُن فِي الْمَسْجِد أَحَد فَقُل: السَّلَام على رسول الله صلى الله عليه وَسَلَّم وَإذَا لَم يَكُن فِي البَيْت أَحَد فَقُل: السَّلَام عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَاد اللَّه الصَّالِحِين

-‘‘বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত ইবরাহিম নাখঈ (رحمة الله) বলেন, যখন মসজিদের মধ্যে কোন লোক থাকবে না তখন রাসূল (ﷺ) কে সালাম দিবে এবং যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন, হে আল্লাহর মাহবুব বান্দাগণ আপনাদের প্রতি সালাম।’’ ১৭০

১৭০. ইমাম কাযী আয়ায : শিফা তাহরিফে হুকুকে মোস্তফা : ২/৬৭ পৃ.।


❏ এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস রয়েছে যে-

وَعَن علقمة إذَا دَخَلْت الْمَسْجِد أَقُول السَّلَام عَلَيْك أيُّهَا النَّبِيّ وَرَحْمَة اللَّه وَبَرَكَاتُه صَلّى اللَّه 

-‘‘হযরত আলকামা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তোমরা মসজিদে প্রবেশ করবে যে ঘরে কেউ না থাকে,  সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন,  হে নবী আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।’’ ১৭১

১৭১. ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা তাহরিফে হুকুকে মোস্তফা : ২/৬৭ পৃ.


তাই বুঝা গেল রাসূল উপস্থিত আছেন বলেই কেউ মসজিদে না থাকলেও তাকে সালাম দিতে হবে। 


❏ এ বিষয়ে আমরা আরও হাদিসে পাক দেখতে পাই-

عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ قَالَ: السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، اللَّهُمَ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ وَالْجَنَّةَ

-‘‘হযরত আমর ইবনে হাযম (رضي الله عنه) বলেন রাসূল যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তিনি বলতেন আল্লাহর হাবিবের উপর সালাম ও সালাম বর্ষিত হউক। তারপর প্রবেশের দোয়া বলতেন......।’’  ১৭২

১৭২. ইমাম আবদুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, : ১/৪২৫ পৃ. হা/১৬৬৩।


❏ এটি তিনি আমাদের শিখানোর জন্যই বলতেন। এ বিষয়ে আরও হাদিস রয়েছে যে-

أَنَّ كَعْبًا قَالَ: لِأَبِي هُرَيْرَةَ:  احْفَظْ عَلَيَّ اثْنَتَيْنِ، إِذَا دَخَلْتَ الْمَسْجِدَ سَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقُلِ: اللَّهُمُ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

-‘‘হযরত কা‘ব (رضي الله عنه) কে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) কে বলেছিলেন, তুমি দু‘টি জিনিসকে হিফাযত কর। যখন মসজিদে প্রবেশ করবে রাসূল (ﷺ)কে সালাম দিবে তখন ও বলবে যে.......।’’ ১৭৩

১৭৩. 

(ক) মাম আবদুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, ১/৪২৭ পৃ. হা/১৬৭০ 

(খ) নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ৯/৪০ পৃ. হা/৯৮৩৯ 

(গ) নাসাঈ, আমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলা, ১/১৭৮ পৃ. হাদিস, ৯১


❏ ইমাম আবদুর রায্যাক (رحمة الله) {ওফাত.২১১হি.} সংকলন করেন-

عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنِ ابْنِ عُيَيْنَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلَانَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ مِثْلَهُ

-‘‘এ বিষয়ে হযরত সাঈদ বিন আবি সাঈদ মাকবুরী (رحمة الله) এর ধারাবাহিকতায় আরেকটি সূত্রে বর্ণিত আছে।’’১৭৪

১৭৪. ইমাম আবদুর রাজ্জাক, আল-মুসান্নাফ, ১/৪২৭ পৃ. হাদিস:১৬৭১


❏ এ বিষয়ে আরেকটি সূত্র পাওয়া যায়-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ لِي كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ:  إِذَا دَخَلْتَ الْمَسْجِدَ فَسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقُلِ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجْتَ فَسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقُلِ: اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ 

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) কে হযরত কা‘ব বিন উযরাহ (رضي الله عنه) বললেন, তুমি যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন রাসূল (ﷺ) কে সালাম দিবে ও (দুআ) বলবে যে.......। আর যখন মসজিদ হতে বের হবে তখনও নবি দোজাহানকে সালাম দিবে তারপর (দুআ) বলবে.....।’’১৭৫

১৭৫. ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ১/২৯৮ পৃ. হাদিস: ৩৪১৫ ও ৬/৯২ পৃ. হা/২৯৭৬৭


❏ এ ব্যাপারে আরেকটি হাদিস পাওয়া যায়-

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ سَلَامٍ كَانَ إِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ سلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ سلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَعَوَّذَ مِنَ الشَّيْطَانِ

-‘‘নিশ্চয়ই হযরত আবদুুল্লাহ বিন সালাম (رضي الله عنه) তিনি যখন কোন মসজিদে প্রবেশ করতেন  প্রথমে তিনি নবিয়ে দুজাহানের প্রতি সালাতু সালাম বলতেন, তারপর প্রবেশের দোয়া বলতেন। তারপর যখন মসজিদ হতে বের হতেন তখনও নবিয়ে দুজাহানের প্রতি সালাতু সালাম বলতেন।’’ ১৭৬

১৭৬. 

(ক) ইমাম আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, : ৬/৯৭ পৃ. হাদিস: ২৯৭৬৮ 

(খ) ইবনে আবি উসামা ইবনে হারেস (ওফাত. ২৮২ হি.), মুসনাদে হারিস, ১/২৫৪ পৃ. হা/১৩০

 

❏ ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ :  إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ، فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ ﷺ، ثُمَّ لِيَقُلْ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

-‘‘হযরত আবু হুমাইদ সায়েদী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে অতঃপর সে যেন তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি সালাতু সালাম পেশ করে। তারপর বলবে মসজিদে প্রবেশের দোয়া বলবে।’’ ১৭৭

১৭৭. 

(১) সুনানে দারেমী, ২/৮৭৬ পৃ. হাদিস, ১৪৩৪, 

(২) সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/২৫৪ পৃ. হাদিস, ৭৭২, আলবানী এ হাদিসের তাহক্বীকে সনদটিকে সহীহ বলেছেন, 

(৩) বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/৬১৯ পৃ. হাদিস, ৪৩১৭ও ২/৬১৯ পৃ. হাদিস, ৪৩১৯, 

(৫) আবূ দাউদ, আস্-সুনান, ১/১২৬পৃ. হাদিস, ৪৬৫ 

(৬) বায্যার, আল-মুসনাদ, ৯/১৬৯ পৃ. হাদিস, ৩৭২০ 

(৭) নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ১/৪০৪ পৃ. হাদিস, ৮১০ 

(৮) নাসাঈ, আমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলা, ১/২২০পৃ. হাদিস, ১৭৭ 

(৯) আবূ আওয়ানাহ, আল-মুসনাদ, ১/৩৫৪ পৃ. হা/১২৩৪ 

(১০) ইবনে হিব্বান, আস্-সহীহ, ৫/৩৯৭ পৃ. হাদিস, ২০৪৮ 

(১১) তাবরানী, কিতাবুদ্-দোয়া, ১/১৫০ পৃ. হা/৪২৬ 

(১২) ইবনে সুন্নী, আমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলা, ১/১৩৪ পৃ. হাদিস, ১৫৬ 

(১৩) নাওয়াবী, আল-মুখালি­সিয়্যাত, ২/৩৯১ পৃ. হাদিস, ১৮২৪ 

(১৪) বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ১/১২৬ পৃ. হাদিস, ৬৬


❏ এ বিষয়ে আরও হাদিসে পাক রয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ:  إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ، فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَإِذَا خَرَجَ، فَلْيُسَلِّمْ عَلَى النَّبِيِّ ﷺ

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করবে অতঃপর সে যেন রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি সালাতু সালাম পেশ করে। তারপর মসজিদে প্রবেশের দোয়া বলবে এবং আর যখন মসজিদ থেকে বের হবে তখনও রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি সালাতু সালাম বলবে।’’১৭৮

১৭৮. 

(১) সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/২৫৪ পৃ. হাদিস, ৭৭৩, আলবানী এ হাদিসের তাহক্বীকে সনদটিকে সহীহ বলেছেন, 

(২) বায্যার, আল-মুসনাদ, ১৫/১৬৮ পৃ. হাদিস, ৮৫২৩ 

(৩) বায্যার, আল-মুসনাদ, ১৫/১৭৬ পৃ. হাদিস, ৮৫৪৩ 

(৪) নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ৯/৪০ পৃ. হাদিস, ৯৮৩৮ 

(৫) নাসাঈ, আস্-সুনানিল কোবরা, ৯/৪০পৃ. হাদিস, ৯৮৪০ 

(৬) নাসাঈ, আমালুল ইউয়াম ওয়াল লাইলা, ১/১৭৮ পৃ. হাদিস, ৯০ 

(৭) ইবনে খুযায়মা, আস্-সহীহ, ১/২৩১ পৃ. হাদিস, ৪৫২, আলবানী বলেন এটি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ 

(৮) ইবনে খুযায়মা, আস্-সহীহ, ৪/২১০পৃ. হাদিস, ২৭০৬ 

(৯-১০) ইবনে হিব্বান, আস্-সহীহ, ৫/৩৯৫ পৃ. হাদিস, ২০৪৭, ও ৫/৩৯৯ পৃ. হা/২০৫০ 

(১১) ইবনে সুন্নী, আমালুল ইয়াউম ওয়াল লাইলা, ১/৭৭ পৃ. হাদিস, ৮৬ 

(১২) বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ২/৬২০ পৃ. হা/৪৩২১

(১৩) হাইসামী, মাওয়ারিদুয্-যামান, ১/১০১পৃ. হা/৩২১


পর্যালোচনা:


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! রাসূল (ﷺ) যদি হাযির-নাযির না হন তাহলে কেনো মসজিদে এবং কোনো মু‘মিনের গৃহে প্রবেশ করতে হলে তাকে সালাম দিতে হবে! 


❏ এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) শরহে শিফা গ্রন্থে অনেক সুন্দর লিখেছেন-

أي لأن روحه عليه السلام حاضر في بيوت أهل الإسلام

-‘‘কেননা, নবী (ﷺ) এর পবিত্র রুহ মুসলমানদের ঘরে ঘরে বিদ্যমান আছেন।’’  ১৭৯

১৭৯. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী শরহে শিফা: ২/১১৮ পৃ. দারুল কুতুব ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।


❏ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘ফয়যুল হারামাঈন’ কিতাবে নিজের মতামত প্রকাশ করে বলেন- 

 ورأيته صلى الله عليه وسلم فى اكثر الامور بيدى اى صورته الكريمة التى كان عليها مرة بعد مرة فتفطنت ان له خاصة من تقويم روحه بصورة جسده عليه السلام وانه الذى اشار اليه بقوله ان الانبياء لا يموتون وانهم يصلون فى قبورهم وهم يحجون وانهم احياء ـ 

-‘‘আমি রাসূল (ﷺ) কে অধিকাংশ দ্বীনি ব্যাপারে তার নিজ আকৃতিতে আমার সম্মুখে বার বার দেখেছি। এতে আমি উপলব্ধি করলাম যে, তার রুহ মোবারকের এমন বিশেষ শক্তি রয়েছে যে, তা তার আকৃতি ধারণ করতে পারে। এটা রাসূল (ﷺ) এর ঐ উক্তির ইঙ্গিত যে,  নবীগণ মরে না,  তারা নিজ নিজ কবরে নামায পড়ে থাকেন, তারা হজ্জ করে থাকেন এবং তাঁরা জীবিত আছেন।’’১৮০

১৮০. আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী : ফয়যুল হারামাঈন : ২৪৫ পৃ


❏ সূফীকুল সম্রাট ইমাম শা’রানী (رحمة الله) এর অন্যতম গ্রন্থ لواقح الانوار القدسية فى البيان العهود المحمدية এর ১২১ পৃষ্ঠায় লিখেন, আমার পীর শেখ নূরুদ্দীন শাওনী (رحمة الله) প্রতিদিন দশ হাজার বার দুরূদ পড়তেন আর (তার শায়খ) শেখ আহমদ যাওয়াভী (رحمة الله) চলি­শ বার তার অযিফা পড়তেন। তিনি একবার আমাকে (শা’রানী) বললেন-

طريقتنا ان نكثر من الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم حتى يصير يجالسنا يقظه ونصحبه مثل الصحابة ونسأله عن امور ديننا وعن الاحاديث التى ضعفها الحفاط عندنا ونعمل بقوله صلى الله عليه وسلم فيها وما لم يقع لنا ذلك فلسنا من لم اكثرين للصلاة عليه صلى الله عليه وسلم ـ 

-‘‘আমাদের বাধা নিয়ম এই যে, আমরা নবী করীম (ﷺ) এর উপরে এত অধিক সালাত (দরূদ) পড়তাম যাতে তিনি জাগ্রত অবস্থায় আমাদের নিকট বসতেন,  সাহাবাগণ যেমনিভাবে তার সাহচর্য যে রূপ লাভ করেছেন,  আমরাও সেরূপ সাহচর্য লাভ করতাম, আমাদের দ্বীনি বিষয়গুলো তার নিকট ফয়সালা করে নিতাম, যে সমস্ত হাদিস মুহাদ্দিসগণ, হাফেযগণ দ্বঈফ বলেছেন, ঐ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে সঠিক উত্তর জেনে নিতাম এবং তাঁর নাম অনুসারে ঐ সমস্ত হাদিসের উপরে আমল করতাম। যে পর্যন্ত আমরা ঐ পর্যায়ে না পৌঁছতাম,  সে পর্যন্ত আমরা নিজেদেরকে সালাত (দরূদ) স্পষ্টপাঠকারী বলে গণ্য করতাম না।’’


❏ এখন দেওবন্দীদের পীর ও গুরু এবং পীরানে পীর হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (رحمة الله) থেকে মীলাদে নবীজী হাজির-নাজির হওয়া প্রসঙ্গে দলিল পেশ করছি। তিনি তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “শামায়েলে এমদাদীয়া” এর মধ্যে বলেন, 

البتہ وقت قيام كے اعتقاد تولد كا نہ كرنا چاہئے - اگر احتمال تشريف آورى كا  كيا جا ئے مضائقہ نہیں كيوں كہ عالم خلق مقيد برزمان ومكان ہے - ليكن عالم امر دونوں سے پاك ہے – پس قدم رنجہ فرمانا ذات بابر كات كا بعيد نہیں -  

-“মীলাদ শরীফে” কিয়াম করার সময় হুযূর (ﷺ) এখন ভুমিষ্ট হচ্ছেন এ ধরনের বিশ্বাস না রাখা উচিত। আর যদি মাহফিলে তাশরীফ আনেন এমন বিশ্বাস রাখে,  তাহলে অসুবিধা নেই,  কারণ এ নশ্বর জগতে কাল ও স্থানের সাথে সম্পৃক্ত। আর পরকাল স্থান-কালের সম্পর্ক থেকে মুক্ত।’’ ১৮১

১৮১. হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী : শামায়েলে এমদাদীয়া : পৃষ্ঠা নং- ১০৩ পৃ. মাকতুবায়ে থানবী, দেওবন্দ।


অতএব হুযূর (ﷺ) মাহফিলে তাশরীফ আনয়ন করা ও উপস্থিত হওয়া অসম্ভব নয়। উক্ত গ্রন্থটি মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব কৃত সত্যায়িত করা হয়েছিল। যা দেওবন্দ এর “মাকতুবায়ে থানবী” লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত। 


❏ শুধু তাই নয় হাজী সাহেব  আরও বলেন, 

رہايہ اعتقاد كہ مجلس مولد ميں حضور پر نور صلى الله عليہ وسلم رونق افروز ہو تے ہیں اسى اعتقاد كو كفر و شرك كہنا حد سے بڑهنا كيوں كہ يہ امر ممكن عقلا ونقلا – بلكہ بعض مقامات پر اس كا وقوع بهى و ہوتاہے –

-‘‘এ আক্বীদা ও বিশ্বাস রাখা যে, মিলাদ মাহফিলে হুযূর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হন,  এটা ‘কুফর’ বা ‘শিরক’ নয়,  বরং এমন বলা সীমা লঙ্গন ছাড়া কিছুই নয়। কেননা এ বিষয়টি যুক্তিভিত্তিক ও শরীয়তের দলীলের আলোকে সম্ভব। এমনকি অনেকক্ষেত্রে বাস্তবে তা ঘটেও থাকে।’’ ১৮২

১৮২. আল্লামা হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী : কুল্লীয়াতে এমদাদীয়া, পৃ : ১০৩ মাকতুবাতে থানবী, দেওবন্দ, ভারত।


মহান রব যেন আমাদের সকলকে সঠিক আক্বিদা ধারণের তৌফিক দান করেন, আমিন।

Top