হোসাইনিয়্যত বনাম ইয়াজিদিয়্যত

হোসাইনিয়াত ও ইয়াজিদিয়াতঃ কেয়ামত পর্যন্ত বহমান দুটো বিপরীত ধারার চেতনার নাম

---------------------------------------------------------------

সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী

ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) একটা চেতনার নাম।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেন,

ولا تستوي الحسنة ولا السيئة

" ভাল ও মন্দ এক সমান নয়।" 

(সূরা ফুসসিলাত, আয়াত নং- ৪১) 

হোসাইনিয়াত হচ্ছে উত্তমতার নাম, আর ইয়াজিদিয়াত হচ্ছে অধমতার নাম, নিকৃষ্টতার নাম। এই দুটো কোন সময় এক হৃদয়ে বাসা বাঁধতে পারে না। আমাদের মধ্যে হয়ত হোসাইনিয়াত থাকবে আর না হয় ইয়াজিদিয়াত থাকবে।

Husainiyat is a philosophy, husainiyat is a consciousness. Its a feelings which we have to inplenent in our personal life, family life and social life.

অন্যায়ের সাথে আপোষ না করার নাম হোসাইনিয়াত।

অন্যায়, অবিচার ও জুলুমের কাছে নতি স্বীকার না করার নাম হোসাইনিয়াত। জুলুমের বিরুদ্ধে সিনা টান করে দাঁড়ানোর নাম হোসাইনিয়াত। নিজের ভেতর থেকে ইয়াজিদিয়াতকে বের করে দেয়ার নাম হোসাইনীয়াত। ইয়াজিদ যদি ভেতর থেকে বের হয়ে যায় তবেই সে অন্তরে হোসাইনের জায়গা হয়।

ইয়াজিদীয়ত কী? ইয়াজিদিয়াত হচ্ছে দুনিয়া লোভের এক মূর্ত প্রতীক। Yazidiyat is the synonym of illegal way of earning money and power. Yazidiyat is the synonym of arrogance, envy and greed. হালাল পথে সম্পদ অর্জন কোন গোনাহের কাজ নয়, কিন্তু টাকা পয়সার অবৈধ লোভ, ক্ষমতার লোভ, যে কোন কিছু করেই হোক আমাকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে এর নামই ইয়জিদিয়াত। যদি দ্বীনের নবীর কলিজার টুকরো নাতিকেও জবাই করতে হয় করব, কিন্তু দুনিয়ার ক্ষমতা আর সৌর্য-বীর্য আমার লাগবেই। আমার কবরের চিন্তার প্রয়োজন নেই, আমার হাশরের চিন্তার প্রয়োজন নেই। আমার হাউজে কাওসারের পানির প্রয়োজন নেই। এরকম নিকৃষ্ট চিন্তা চেতনার নামই হচ্ছে ইয়াজিদিয়াত।

ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) উনার জীবনের শেষ ভাষণে কী বলেছিলেন? ফোরাতের তীরে কারবালার ময়দানে সিনা টান করে সেদিন ওমর ইবনে সাদ, শিমার, ইবনে জিয়াদদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,

"হে (২০,০০০) ইয়াজিদি সৈনিকেরা! তোমাদের মধ্যে কী একজনও মুসলমান নেই?"

প্রিয় পাঠক! এই একই কথা ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) এঁর বোন সায়্যিদা জয়নব দামেশকে ইয়াজিদের দরবারে বলেছিলেন।

সায়্যিদা ফিজ্জা ছিলেন হজরতে ফাতেমাতুজ জাহরা (رضي الله عنه)র হাবশী (বর্তমান ইথিওপিয়ান) দাসী। সারাজীবন মা ফাতেমার সেবা করেছেন। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর যখন ইমাম জয়নুল আবেদিন, সায়্যিদাহ জয়নবসহ আহলে বায়তের বেঁচে থাকা সকল সদস্যকে কয়েদী বানিয়ে ইয়াজিদের দরবারে পেশ করা হলো, সেসময় তাঁদের সাথে এই সায়্যিদা ফিজ্জাও ছিলেন, তখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন, কিন্তু আহলে বায়তকে ছেড়ে থাকতে পারেন নি।

অভিশপ্ত ইয়াজিদ সায়্যিদাহ জয়নব ও ইমাম জয়নুল আবেদিনের প্রতি কয়েদীসুলভ আচরণ শুরু করল।

সায়্যিদা ফিজ্জার (رضي الله عنه) তা দেখে সহ্য হলো না। ওঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। বললেন, "রে বদবখত ইয়াজিদ! তুই যাদেরকে কয়েদি মনে করে দুর্ব্যবহার করছিস তারা দুনিয়া আখিরাতের বাদশা। তাঁদের সাথে উত্তম আচরণ কর।"

ইয়াজিদ কালো কৃষ্ণাঙ্গ হাবশী দাসী সায়্যিদা ফিজ্জার (رضي الله عنه) জবানে পাক থেকে এরকম কথা শুনে ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠল। সে তার সামনের দুই প্রহরীকে আদেশ করল এক্ষুনি এই বুড়ি মহিলার গর্দান উড়িয়ে দাও। সৈনিক দুজন উদ্যত হলো সায়্যিদা ফিজ্জা (رضي الله عنه) কে আঘাত করবে। ইয়াজিদের দরবারে উপস্থিত ২০০ কালো কৃষ্ণাঙ্গ হাবশী সৈনিক তলোয়ার বের করে ফেলল। সাবধান! এই বুড়ি মহিলা আমাদের দেশের বাসিন্দা। হাবশার বাসিন্দা। এই মহিলাকে আক্রমণ করা হলে একটা মাথাও দেহে থাকবে না।

ইয়াজিদের ঐসকল কৃষ্ণাঙ্গ প্রহরী ও সৈনিকদের মধ্যে নিজ দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা জেগে ওঠল।

এই দৃশ্য দেখে সায়্যিদা জয়নব (رضي الله عنه) ওঠে দাঁড়ালেন, মদীনা শরিফের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন, দাঁড়িয়ে বললেন, "ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইয়া হাবিবাল্লাহ! ওহ আমার নানাজী! আজ এখানে আমার আম্মাজানের দাসী ফিজ্জার জান মাল ইজ্জতের হেফাজতের জন্য ২০০ মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে।

ওহ আমার নানাজী! আপনার খান্দান উজাড় করে দিল এই ইয়াজিদের দল। কিন্তু আপনার উম্মতের মাঝে আজ কেউ নেই যে আপনার খান্দানের জান মাল ইজ্জত রক্ষার জন্য দাঁড়াবে।"

দরবারের সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন,

"তোমাদের মধ্যে কী একজনও নবির আশিক নাই? একজনও কী আহলে বায়তের প্রেমিক নাই? আমার নানাজীর পরিবারের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য কী তোমাদের মধ্যে একজন মুসলমানও নাই?" হায়রে মুসলমান! হায়রে মুসলমান!

ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) কারবালার জমিনে শেষ ভাষণ দিচ্ছেন,

"হে (২০,০০০) ইয়াজিদি সৈনিকেরা! তোমাদের মধ্যে কী একজনও মুসলমান নেই?

তোমরা কী জান না যে আমি এবং আমার ভাই হাসান জান্নাতের যুবকদের সর্দার? তোমরা কী জাননা যে আমরা দুই ভাই আমাদের নানাজানের কলিজার টুকরা ছিলাম? তোমরা কী জাননা যে আমাদের নানাজান বলে গেছেন, আমার হাসান হোসাইন জান্নাতের দুটো ফুল। তোমরা কী জাননা আমরা দুই ভাই কাল হাশরের দিনে হাউজে কাউসারের কাছে আমার নানাজীর দুই পাশে বসা থাকব। আমরা দুই ভাই উম্মতকে কাওসারের পানি পান করাব। নবীর নাতিকে শহীদ করে তোমরা কাল হাউজে কাওসারের পানি পাবে তা কিভাবে আশা কর?"

প্রিয় পাঠক! হোসাইনিয়াত হচ্ছে একটা চেতনার নাম। 

মন্দকে ত্যাগ করা ও ভালকে গ্রহন করার নাম হোসাইনিয়াত।

প্রতিদিন হোসাইনীয়াত ও ইয়াজিদিয়াত আপনার দরজায় কড়া নাড়বে, অপশন আপনার কাছে থাকবে আপনি কোনটা গ্রহণ করবেন। যদি হোসাইনিয়াতকে গ্রহণ করেন তবে আপনি জান্নাতী, আর যদি ইয়াজিদিয়াতকে গ্রহণ করেন তবে আপনি জাহান্নামী! ইখতিয়ার আপনার।

আপনি যদি সরকারী চাকুরী করেন, লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নেয়ার সুযোগ আছে, আপনি নেন না। আপনি খাঁটি হোসাইনী।

আপনি বেসরকারী ফার্মে জব করেন। ছয় নয় করে লাখ লাখ টাকা আপনি কামাতে পারেন। কিন্তু সেই রাস্তায় যান না। ছেড়ে দিলেন সেই কাজ টিকতে না পেরে।  আপনি খাঁটি হোসাইনি মুসলমান।

একটু যদি কম্প্রমাইজ করে নিতেন ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) আর বলতেন, "যা ইয়াজিদ! তুই জালিমকেই মেনে নিলাম খলিফা।" তাহলে কী ইমাম হোসাইন দুনিয়াতে বেহেশতী জীন্দেগী যাপন করতে পারতেন না? পারতেন। কেন কম্প্রোমাইজ করলেন না?

নানাজীর দ্বীন কে বাঁচাতে। একটা উদাহরণ কায়েম করতে। ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) যদি কারবালার জমিনে জুলুমের বিরুদ্ধে আওয়াজ না  তুলতেন, তবে কাল কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে অন্যায় অবিচার ও জুলমের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ ওঠাত না।

অনেকেই বলে, ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) এবং তাঁর পরিবার পানির অভাবে কারবালাতে শহীদ হয়েছেন। আরে পানি তো একটা বাহানা ছিল মাত্র।

খাজা মুইনুদ্দিন চিশতি আজমিরি সাঞ্জরি রাহঃ বলেন, "অবুঝরা বলে ইমাম হোসাইন পানির অভাবে শহীদ হয়েছেন।

আরে নাদানো! আমি মুইনুদ্দিন ইমাম হোসাইনের আদনা একজন গোলামের গোলাম, আমি মুইনুদ্দিন যদি কারাবালার ময়দানে পা দিয়ে আঘাত করতাম তবে শত শত নদী বয়ে যেত। আর তিনি তো ছিলেন কে? ইমাম হোসাইন। দ্বীনের নবীর নাতি। সেই দ্বীনের নবী। রাহমাতুল্লিল আলামিন! বোখারী শরিফে হাদিস এসেছে, আংগুল মুবারক ডুবিয়ে দিয়েছেন, শত শত মানুষ অল্প পানি দিয়ে অজু গোসল করেছেন, আংগুল মুবারক থেকে নহর বয়ে গেছে। সেই নানাজীরই তো নাতি।

সম্মানিত পাঠক! হোসাইনিয়াত এমন একটা চেতনার নাম যেই চেতনা ধারণ করলে বর্শার আগায় থেকেও নামাজ আদায় করতে হয়, তীরের টার্গেটে থেকেও নামাজ ছাড়া যায় না। নামাজ কাজা করতে পারবেন না।

আর ইয়াজিদিয়াত কী জিনিস? ৬১ হিজরির ১০ মুহাররম কারবালার ময়দান আসরের সময় ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালাম যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত। ৩৫ টি বর্শার আঘাত, ৩৩ টি তীরের আঘাত, অনেকগুলো তরবারির আঘাতে ইমামের শরীর জর্জরিত। নিথর দেহ মোবারক পড়ে আছে।

ইয়াজিদের সৈন্যবাহিনী বলছে, জলদি জলদি হোসাইনের মাথাটা কেটে নাও আসরের নামাজের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে।

হায়রে নামাজি!!  হায়রে ইবাদাতকারী।

লানত তোদের মত ইবাদাতকারীদের ওপর।

নামাজ দুই পক্ষতেই ছিল।

প্রিয় পাঠকেরা! দ্বীনদরদী ভাই ও বোন আমার! ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কী একজনও মুসলমান নেই?

তারা তো বেশভূষায় মুসলমানই ছিল প্রিয় পাঠক! তাদের সুন্নতী দাড়িও ছিল, পাগড়িও ছিল, টুপিও পড়ত, লেবাসও ছিল সুন্নতি, কারবালার ময়দানে তারাও নামাজ পড়েছে আজান-ইকামাতের মাধ্যমে। তারাও আল্লাহু আকবার তাকবির দিয়েছে। বাহ্যিক ইসলামের সবই ছিল তাদের মাঝে।  তবুও ইমাম হোসাইন তাদের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করেছেন, "তোমাদের মধ্যে কী একজনও মুসলমান নেই?"

কারণ কী? কোন একটা জিনিস ছিল না তাদের মাঝে?

নবীর ভালবাসা, নবীর প্রেম। নবীর আহলে বায়তের ভালবাসা। পাক পাঞ্জাতনের ভালবাসা।

প্রিয় পাঠক! এখনো কী এমন নামাজি ও রোজাদার নাই আমাদের সমাজে?

শুক্রবার আসলে এই বাংলাদেশেই মিম্বরের মাঝে ইয়াজিদ বন্দনা হয়। ইয়াজিদের নামের শেষে মায়াজাল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ, রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এমনকি রাদিয়াল্লাহু আনহুও বলে অনেকে।

বাংলাদেশে হাজার হাজার মসজিদে খবর নিয়ে দেখুন পুরো মুহাররম মাসে আহলে বায়ত, পাঞ্জাতন, কারবালার কোন আলোচনাই নেই। সেই ইয়াজিদের দল আজও আছে। যারা আহলে বায়ত চিনে না। যারা কারবালার ঘটনা আলোচনা করে না।

আর যা ও কিছু মসজিদে আলোচনা হয় কিছু কিছু আছে বলে কী জানেন? ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) এর শাহাদাতে ইয়াজিদের কোন দোষ ছিল না। এটা তার পাপাত্মা সেনাপতি ইবনে জিয়াদের কাজ। ইয়াজিদ ভাল ছিল। সে তো ক্ষমাপ্রাপ্ত কন্সটান্টিনোপল বিজয়ী দলের সদস্য। মায়াজাল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ।

আচ্ছা তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, কারবালার নির্মম ঘটনা ইবনে জিয়াদ, শিমার ও ওমর ইবনে সা'দের কাজ। তো ইয়াজিদ কারবালার এই ঘটনা জানার ঐ পাপিষ্ঠদেরকে শাস্তি কী দিয়েছিল? কিছুই না। স্বপদে বহাল ছিল সবাই। উল্টো সবার প্রমোশন হয়েছিল। এটা কী প্রমাণ করে?  কারবালার ট্রাজেডি ইয়াজিদের কাজ।

উল্টো ইমাম হোসাইনের শির মুবারক সামনে নিয়ে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে সে কবিতা আবৃত্তি করছিল,

আজ আমার বদরের যুদ্ধে নিহত আত্মীয়রা (নানা ও মামা) দেখলে খুশি হয়ে যেত।

সেই পাপিষ্ঠ কবিতার সুরে সুরে বলছিল, বদরের যুদ্ধে মাওলা আলি ও আমির হামজা (رضي الله عنه) এঁর হাতে নিহত, তার মামা ও নানার মৃত্যুর বদলা নিয়েছিল ইমাম হোসাইনের শাহাদাতের মাধ্যমে।

সম্মানিত পাঠক!  হোসাইনিয়াত এমন একটা আদর্শের নাম যেই আদর্শ ধারন করলে আপনি শত্রুর সাথেও ভাল ব্যবহার করবেন।

وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ۚ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ

সমান নয় ভাল ও মন্দ। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু।

কারবালা সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর ইমাম জয়নুল আবেদিন দামেশকের বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে মদিনা শরিফে ফিরে আসলেন। ইমাম আলি জয়নুল আবেদিন (رضي الله عنه) এঁর কাছে এক লোক আসল। এসে আশ্রয় চাইল। ইমাম আশ্রয় দিলেন। তিন দিন পর্যন্ত মেহমানদারী করলেন। ঐ মেহমানকে উত্তম খাওয়া দিলেন, উত্তম পোশাক দিলেন। সকল প্রয়োজন মেটালেন।

তিনদিন পর ঐ মেহমান বললেন, ইমাম আমাকে এখন অনুমতি দিন। ইমাম জয়নুল আবেদিন ঐ লোককে কিছু টাকা পয়সা দিলেন পথ খরচের জন্য।

সে বিদায় নিয়ে কিছুদূর চলে গেল, আবার ফিরে আসল। এসে বলল, ইমাম আপনি কী আমাকে আসলেই চিনতে পারেন নি? আমি তো ইয়াজিদের এক সেনাপতি। ইয়াজিদ আমার উপরে রাগ করে আমার নামে ফরমান জারী করেছে, তাই আমি আপনার আশ্রয়ে আত্মগোপনে ছিলাম। ইমাম আমি সেই নরাধমদের একজন যারা আপনার আব্বাজানের ওপরে কারবালার ময়দানে তীর মেরেছে।

হায়রে ইমাম বংশ! শত্রুও বিপদে পড়ে আশ্রয় চাইতে ইমাম বংশের কাছেই আসে। হায়রে ইমাম বংশ!

একথা শুনে ইমাম জয়নুল আবেদিন বলে ওঠলেন, রে পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ সেনাপতি! আমি তোকে প্রথম দিনই চিনেছি। কারবালার তাবু থেকে শুয়ে শুয়ে আমি সবই দেখেছি।

ঐ ইয়াজিদ সেনাপতি আশ্চর্য হয়ে গেল। বলে ওঠল, আপনি আমাকে চিনেছেন কিন্তু তারপরও আমার সাথে এত উত্তম ব্যবহার করলেন এই তিনদিন?

ইমাম জয়নুল আবেদিন বলে ওঠলেন, কী করব বল! আমার নানাজী দ্বীনের নবীর আদর্শ যে এটাই। মেহমানের সাথে উত্তম ব্যবহার কর। যে আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন মেহমানের সম্মান করে।

প্রিয় পাঠক এরই নাম হোসাইনিয়াত!

এজিদের বন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়ে মদিনা শরিফে ফিরে এসে ইমাম আলী জয়নুল আবেদিন ইবনুল হোসাইন আলাইহিমাস সালাম দাস-দাসী ক্রয় করতেন। তাদেরকে পরিপূর্ণ দ্বীন শিক্ষা দিতেন অতঃপর তাদেরকে মুক্ত করে দিতেন আল্লাহর ওয়াস্তে।

অনেক আলিম বলেছেন যে, তিনি এভাবে হাজার হাজার দাস-দাসীকে  দ্বীন শিক্ষা দিয়ে মুক্ত করে দেন। এরকমভাবেই ইমাম আলি জয়নুল আবেদিন ইবনুল হোসাইন আলাইহিমাস সালামের বাগানের একটি ফলই হচ্ছেন মুহাম্মাদ বিন কাসিম আস সাকাফি যিনি ভারতে ইসলামের রাস্তা উন্মুক্ত করেন। ভারত এখন ইসলামের আলোর মাঝে সাতার কাটছে আর তা ইমাম আলি ইবনুল হোসাইন আলাইহিমাস সালামের অবদান।

এরই নাম হোসাইনিয়াত!

নিজেকে পবিত্র করার নাম হোসাইনিয়াত!

ভেতরের জগতকে পরিবর্তন করার নাম হোসাইনিয়াত!

মানবিক গুণ দিয়ে নিজেকে সাজানোর নাম হোসাইনিয়াত। পাশবিকতার অপর নাম ইয়াজিদিয়াত।

মদ ছিল ইয়াজিদের নিত্যসঙ্গী।  অশ্লীলতা ছিল তার নিত্যসঙ্গী।  নর্তকী নাচিয়ে বাদ্য-বাজনা ছিল তার নিত্যসঙ্গী।  এগুলোই ইয়াজিদিয়াত। এগুলোকে ত্যাগ করতে হবে।

যোগ্য লোকের কাছে না ঝুকা ইয়াজিদিয়াত। arrogance.  আমি কেন কারো কাছে নত হব? হোক সে নবীর নাতি। হোক সে জান্নাতের যুবকদের সর্দার। হোক সে আলাহর নবীর সবচাইতে প্রিয়। হোক সে আমার চাইতে মহাজ্ঞানী। আমি কারো কাছে ঝুকব না। এটাই ইয়াজিদিয়াত। 

যোগ্য লোকের কাছে আত্মসর্পণের নাম হোসাইনী চেতনা।


Top