জানাযার আগে উচ্চস্বরে কলেমা বা না’ত পাঠ করার বিবরণ

    কোন কোন জায়গায় প্রচলন আছে, মইয়তকে কবরস্থানের নিয়ে যাওয়ার সময় শব যাত্রীরা সমবেতভাবে কলেমা বা না’ত শরীফ পাঠ করেন। আমি কখনো কল্পনাও করিনি যে, কেউ একেও নিষেধ করবে। কিন্তু পাঞ্জাবে এসে জানতে পারলাম দেওবন্দীরা এটাকেও বিদ্আত ও হারাম বলে। এ রকম সুস্পষ্ট মাসআলা প্রসঙ্গে কিছু লেখার খেয়াল ছিল না। কিন্তু কতেক বন্ধু-বান্ধব জোর দেয়ার সংক্ষেপে কিছু লিখতে বাধ্য হলাম। অন্যান্য আলোচনার মত এ আলোচনাটাও দু’টি অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে এর প্রমাণ এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে এ প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তি সমূহের জবাব দেয়া হয়েছে।


প্রথম অধ্যায়

জানাযার আগে কলেমা তৈয়্যবা বা না’তখানির প্রমাণ


জানাযার আগে নিম্নস্বরে বা উচ্চস্বরে কলেমা তৈয়্যবা, তাসবীহ-তাহলীল বা দরূদ শরীফ অথবা না’ত শরীফ পাঠ করা জায়েয এবং মইয়ত ও সমবেত ব্যক্তিদের জন্য কল্যাণকর। কুরআনী আয়াত, সহীহ, হাদীছ এবং ফকীহগণের বিভিন্ন উক্তিতে এর প্রমাণ রয়েছে। 


❏ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ

-যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে ’’  ৪৯৫

➥495. সূরা আলে-ইমরান, আয়াত নং-১৯১।


❏ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রূহুল বয়ানে বর্ণিত আছে-

اى يذكرونه دائما على الحالات كلها قائمين وقاعدين ومضطجعين فان الإنسان لا يخلو عن هذه الهيآت غالبا

এ আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছে যে কোন অবস্থায় দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে সব সময় আল্লাহর যিকর করা। কেননা মানুষ অধিকাংশ সময় এ তিন অবস্থা থেকে মুক্ত থাকে না।’’৪৯৬

➥496. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-১৪৫।


তাফসীরে আবুস সঊদে এ আয়াতের প্রেক্ষাপটে বর্ণিত আছে -৪৯৭

والمرادُ تعميمُ الذكرِ للأوقات كما مر وتخصيصُ الأحوالِ المذكورةِ بالذكر ليس لتخصيص الذكرِ بها بل لأنها الأحوالُ المعهودةُ التي لا يخلو عنها الإنسانُ غالباً

(এর অর্থ প্রায় উপরোক্ত তাফসীরের মত) 

➥497. ইমাম আবুস সাউদ উমাদী, তাফসিরে আবিস সাউদ, ২/১২৯


❏ তাফসীরে কবীরে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লে­খিত আছে -৪৯৮

الْمُرَادُ مِنْهُ كَوْنَ الْإِنْسَانِ دَائِمَ الذِّكْرِ لِرَبِّهِ، فَإِنَّ الْأَحْوَالَ لَيْسَتْ إِلَّا هَذِهِ الثَّلَاثَةُ، ثُمَّ لَمَّا وَصَفَهُمْ بِكَوْنِهِمْ ذَاكِرِينَ فِيهَا كَانَ ذَلِكَ دَلِيلًا عَلَى كَوْنِهِمْ مُوَاظِبِينَ عَلَى الذِّكْرِ غَيْرَ فَاتِرِينَ عنه

(এর অর্থও উপরোক্ত তাফসীরের মত) 

➥498. ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী, তাফসিরে কাবীর, ৯/৪৫৯


❏ আল্লামা ইবনে আদী ‘কামেল’ গ্রন্থে এবং ইমাম যায়লবী (رحمة الله) نصب الراية لأحاديث الهداية নামক কিতাবের ২৯২ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন-

حَدَّثَنَا يَحْيى بْنُ عَبد الرَّحْمَنِ بْنِ نَاجِيَةَ، حَدَّثَنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ أَبِي حُمَيْدٍ، حَدَّثَنا أَبُو بَكْرَةَ عَبد الْعَظِيمِ بْنُ حَبِيبٍ، حَدَّثَنا عَبد الرَّحْمَنِ بْنُ عَبد اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنْ أَبِيهِ، عنِ ابْنِ عُمَر قَالَ: لَمْ يَكُنْ يُسْمَع مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهو يَمْشِي خَلْفَ الْجِنَازَةِ إلاَّ قَوْلَ: لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ، مُبْدِيًا وَرَاجِعًا.

-‘‘হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এর জানাযার সাথে যাওয়া অবস্থায় এবং ফিরে আসা অবস্থায় لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ ব্যতীত কিছুই শুনিনি।’’  ৪৯৯

➥499. ইমাম যায়লাঈ, নাসবুর রায়্যাহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৯২, ইমাম ইবনে আদি, আল-কামিল, ১/৪৩৭ পৃ:, ক্রমিক/১১১, ৫/৪৮৭ পৃ: ক্রমিক-১১২৬, ইমাম যাহাবী, মিযানুল ইতিদাল, ২/৫৭২ পৃ: ক্রমিক-৪৯০১, ইমাম আহমদ রেযা, জামিউল আহাদীস, হা/


এ হাদীছটা যঈফ হলেও ফাযায়েলে আমালের ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। ৫০০

➥500. টিকাঃ

☞ইমাম ইবনে কায়রানী (৫০৭ হিঃ) এই হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন- وَهُوَ ضَعِيف -‘‘এটি যঈফ বর্ণনা।’’ (যাখারাতুল হুফ্ফায, ৪/১৯৬১ পৃ: হা/৪৫১১) 


☞ইমাম যায়লাঈ (رحمة الله)ও একে যঈফ বলেছেন। (ইমাম যায়লাঈ, নাসবুর রায়্যাহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৯২) 


☞ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এ হাদিস উল্লেখ করে লিখেন- أخرجه ابْن عدي فِي تَرْجَمَة إِبْرَاهِيم بن أبي حميد وَضَعفه -‘‘ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) রাবী ইবরাহিম ইবনে আবি হুমাইদের জীবনীতে এটিকে উল্লেখ করেছেন। সনদটি যঈফ।’’ 

(ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, দিরায়া ফি তাখরীজে হিদায়া, ১/২৩৮ পৃ:) 


এ হাদিসটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন” তৃতীয় খণ্ড দেখুন।


❏ মিসরী ছাপা তাহযিরুল মুখতার আলা রদ্দুল মুখতার কিতাবের ১২৩ পৃষ্ঠায় উল্লে­খিত আছে-

ولكن قد اعتاد الناس كثرة الصلوة على النبى ﷺ ورفع اذا قضى اصواتهم بذالك وهم ان منعوا ابت نفوسهم عن السكوت والتكفر فيقعون فى كلام دنيوى وربما وقعوا فى غيبه وانكار المنكر اذا قضى الى ما هو اعظم منكرا كان تزكه احب لانه ارتكاب باخف المضرتين كما هو القاعد الشرعية

উপরোক্ত আয়াত এবং এর তাফসীর সমূহ ও হাদীছ সমূহ থেকে দু’টি বিষয় জানা গেল-সর্বাবস্থায় যিকরে ইলাহীর অনুমতি রয়েছে এবং উচ্চস্বরে বা নিম্নস্বরে যে কোনভাবে জায়েয। এখন থেকে উপলক্ষে যিকর নিষেধ করার জন্য অন্ততঃ পক্ষে প্রসিদ্ধ হাদীছের প্রয়োজন। কেননা একক হাদীছ বা মুজতাহিদের অনুমান দ্বারা কুরআনের অনির্দিষ্ট হুকুমকে নির্দিষ্ট করা যায় না। ফকীহগণ জনাবত ও ঋতুস্রাবের সময়ও কুরআন তেলাওয়াত ছাড়া সমস্ত যিকর জায়েয বলেছেন এবং কুরআনের আয়াত যদি তেলাওয়াতের নিয়ত ছাড়া পাঠ করা হয়, তাও জায়েয (ফিকহ শাস্ত্রের প্রায় কিতাব দ্রষ্টব্য) তাহলে মইয়তকে কবরস্থানে নিয়ে যাবার সময়টা একটি অবস্থা বিধায়, তখনও সব রকম যিকর জায়েয। 


❏ কুরআন ইরশাদ ফরমান-

أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

-জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণে চিত্ত প্রশান্ত হয়।’’  ৫০১

➥501. সূরা রা’দ, আয়াত নং-২৮।


❏ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে রূহুল বয়ানের রচয়িতা বলেন-

فالمؤمنون يستأنسون بالقرآن وذكر الله الذي هو الاسم الأعظم ويحبون استماعها والكفار يفرحون بالدنيا ويستبشرون بذكر غير الله

-মুসলমানগন কুরআন পাঠ এবং যিকরে ইলাহী (ইসসে আযম) দ্বারা তৃপ্তি লাভ করে এবং শুনতে পছন্দ করে। আর কাফিরগণ দুনিয়াদারীতে তৃপ্ত এবং গায়রুল্লাহর প্রশংসায় আনন্দ লাভ করে।’’ ৫০২

➥502. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৪/৩৭২


এ আয়াত ও তাফসীরের ভাষ্য থেকে বোঝা গেল- আল্লাহর যিকর মুসলমানের জন্য আনন্দ ও তৃপ্তিদায়ক কিন্তু কাফিরদের জন্য বেদনাদায়ক। খোদার শুকর, মইয়তও মুসলমান এবং সমস্ত শবযাত্রীরাও মুসলমান। সবাই এতে তৃপ্তি পাবে। অধিকন্তু ওই সময় আত্মীয় স্বজন থেকে চির বিদায়ের কারণে মইয়তের মন ভারাক্রান্ত থাকে। তখন এ ধরনের যিকরের দ্বারা পেরেশানী দূরীভূত হয়। লক্ষণীয় যে এ আয়াতে মতলক যিকরের কথা বর্ণিত হয়েছে: উচ্চস্বরে হোক বা নিম্নস্বরে হোক। সুতরাং প্রত্যেক রকম যিকর জায়েয প্রমাণিত হলো। কেবল নিজস্ব রায় দ্বারা এতে শর্তারোপ করা যাবে না।


❏  منتخب كنز العمال কিতাবের ষষ্ঠ খণ্ডের ৯৯ পৃষ্ঠায় হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর বরাত দিয়ে বর্ণিত আছে:

أكْثِرُوا فِي الجَنَازَةِ قَوْلَ لَا إِلَه إلاّ اللَّهُ

-জানাযার বেশী করে কলেমা তৈয়্যবা পড়–ন’’  ৫০৩

➥503. মুুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১৫/৬৫০ পৃ:, হা/৪২৫৭৮, ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, /১৪০২


❏ মিশকাত শরীফের কিতাবুল দাওয়াতে যিকরুল্লাহ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে:

إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً يَطُوفُونَ فِي الطُّرُقِ يَلْتَمِسُونَ أَهْلَ الذِّكْرِ فَإِذَا وَجَدُوا قَوْمًا يَذْكُرُونَ اللَّهَ تَنَادَوْا: هَلُمُّوا إِلَى حَاجَتِكُمْ  قَالَ: فَيَحُفُّونَهُمْ بِأَجْنِحَتِهِمْ

-আল্লাহর কিছু ফিরিশতা রাস্তায় টহল দেয় এবং আল্লাহর যিকরকারীদেরকে অনুসন্ধান করে। যখন কোন জনগোষ্টিক যিকর করতে দেখে, তখন একে অপরকে ডাকডারি করে বলে: নিজেদের উদ্দেশ্যের প্রতি আগোয়ান হও।’’  ৫০৪

➥504.খতিব তিবরিযি, মিশকাত, পৃষ্ঠা-১৭৯, হাদিস/২২৬৭, ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৮/৮৬ পৃ: হা/৬৪০৮


অতঃপর ওই সব যিকরকারীদেরকে পালক দ্বারা আচ্ছাদিত করে নেয়।) সুতরাং মইয়তের লোকেরা যদি আল্লাহর যিকর করতে করতে যায়, তাহলে টহলরত ফিরিশতাদের সাক্ষাত মিলবে। তখন সবাইকে পালক দ্বারা আচ্ছাদিত করে নিবে। মইয়তও ফিরিশতাদের পালকের ছায়ায় কবরস্থানে পৌছে যাবে। এ হাদীছেও উচ্চস্বরে হোক বা নিম্নস্বরে মতলক যিকরের কথা বর্নিত হয়েছে। 


❏ মিশকাত শরীফের একই অধ্যায়ে আরও বর্নিত আছে:

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا مَرَرْتُمْ بِرِيَاضِ الجَنَّةِ فَارْتَعُوا قَالُوا: وَمَا رِيَاضُ الجَنَّةِ؟ قَالَ: حِلَقُ الذِّكْرِ

হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ ফরমান, যখন তোমরা বেহেশতের বাগান সমূহ অতিক্রম করবে, তখন ওখান থেকে খেয়ে নিও। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, বেহেশতের বাগান কোথায়? ফরমালেন যিকরের মাহফিল।’’ ৫০৫

➥505. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ২/৭০২ পৃ: (ভারতীয় পৃষ্ঠা-১৯৮), হাদিস/২২৭১, ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৪১৩ পৃ:, হা/৩৫১০, ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) বলেন- هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ -‘‘এই হাদিসটি ‘হাসান’ গরীব।’’


এতে প্রমাণিত হলো যে, মইয়তের সাথে যদি যিকরে ইলাহী করতে করতে যাওয়া হয়, তাহলে মইয়ত বেহেশতের বাগানের মধ্যে দিয়ে কবরস্থানে যাবে। উল্লে­খ্য যে এখানেও মতলক যিকরের কথা বর্ণিত হয়েছে। 


❏ মিশকাত শরীফের একই অধ্যায়ে আরও বর্ণিত আছে:

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الشَّيْطَانُ جَاثِمٌ عَلَى قَلْبِ ابْنِ آدَمَ فَإِذَا ذَكَرَ اللَّهَ خَنَسَ

-শয়তান মানুষের আত্মার সাথে লেপটে থাকে। যখন মানুষ আল্লাহর যিকর করে তখন সরে যায়।’’  ৫০৬

➥506. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ২/৭৫০ পৃ: হাদিস/২২৮১, তিনি সহীহ বুখারীর সূত্রে। 


বোঝা গেল মইয়তকে নিয়ে যাবার সময় আল্লাহর যিকর করা হলে মইয়ত শয়তান থেকে রেহাই পাবে। এখানেও উচ্চস্বরে বা নিম্নস্বরের কোন শর্তারোপ করা হয়নি। এ পর্যন্ত জানাযার আগে উচ্চস্বরের যিকরকে কুরআন হাদীসের দলীল দ্বারা প্রমাণ করা হলো।


এবার বিভিন্ন ফকীহগণের মতামতের প্রতি দৃষ্টিপাত করুন, যেথায় এর বিশ্লেষণ মিলে। 


❏ প্রসিদ্ধ حديقة نديه شرح محمديه কিতাবে ইমাম আবদুল গণী নাবলুসী (رحمة الله) এ মাসআলার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন: যেসব ফকীহ জানাযার সাথে উচ্চস্বরে যিকর নিষেধ করেন, তা নিশ্চয় মাকরুহ তানযীহ বা মাকরুহ তাহরীমীর ভিত্তিতেই করেন। অতঃপর তিনি বলেন:

لكن بعض المشائخ جوز والذكر الجهرى ورفع الصوت بالتعظيم قدام الجنازة وخلفها لثقين الميت والاموات والاحياء وتنبيه الغفلة والعظمة وازالة صداء القلوب وقساوتها بحب الدنيا ورياستها

-কিন্তু কতেক মাশায়েখ জানাযার আগে পিছে উচ্চস্বরে যিকর করাকে জায়েয বলেছেন। যাতে এর দ্বারা মৃত ও জীবিতদের তলকীন হয়ে যায় এবং অলস ব্যক্তিদের অন্তর থেকে অলসতা ও পার্থিব মহব্বত দূরীভূত হয়।৫০৭

➥507. আব্দুল গনী নাবলুসী, হাদিকাতু নাদিয়াহ শরহে তরিকায়ে মুহাম্মদীয়া, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪০৮।


❏ কুতুবে রব্বানী ইমাম শারানী (رحمة الله) বলেন:

وكان سيدى على الخواص (رضي الله عنه) يقول اذا علم من الماشين مع الجنازة انهم لا يتركون اللغو بقول لا إله إلاَّ اللهُ محمَّدٌ رسولُ اللهِ فان ذالك افضل من تركه ولا ينبغى للفقيه ان ينكر ذالك الابنص او اجمع فان للمسلمين الاذن العام من الشارع بقوله لا إله إلاَّ اللهُ محمَّدٌ رسولُ اللهِ كل وقت شاؤا ولله العجب من عمى قلب من ينكر مثل هذا

-হযরত আলীউল খওয়াস (رضي الله عنه) বলতেন: যখন দেখা গেল যে, শবযাত্রীরা বাজে কথাবার্তা ত্যাগ করে না এবং দুনিয়াবী ধ্যান ধারণায় ব্যস্ত থাকে, তখন ওদেরকে কলেমা পড়ার হুকুম দেয়া উচিৎ। কেননা এ কলেমা পড়া না পড়ার থেকে উত্তম এবং সুস্পষ্ট দলীল ও অধিকাংশ মুসলমানের অভিমত ব্যতীত ফকীহ আলিমদের কর্তৃক একে অস্বীকার করা অনুচিত। এজন্যে শারেহ (عليه السلام) এর পক্ষ থেকে মুসলমানদের প্রতি কলেমা পড়ার সাধারণ অনুমতি রয়েছে-যে কোন সময় ইচ্ছা করলে পড়তে পারে। দারুণ আশ্চর্য লাগে ওই সব অন্ধদের মনমানসিকতায়, যারা একে অস্বীকার করে। ৫০৮

➥508. ইমাম শা’রানী, লাওয়াকিহুল আনওয়ার, ইমাম আহমদ রেযা, ফাতওয়ায়ে রেযভিয়্যাহ, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-১৪৪, রেযা ফাউন্ডেশন, লাহোর, পাকিস্তান।


❏ ইমাম শারানী তাঁর অন্য আর এক কিতাব عهود المشائخ এ বর্ণনা করেন-

ولا نمكن احدا من اخواننا ينكر شيئا ابتدعها المسلمون على جهة القربة ورواه حسنا لاسيما ما كان متعلقا بالله ورسوله كقول الناس امام الجنازة لا إله إلاَّ اللهُ محمَّدٌ رسولُ الله او قراءة احد القران امامها ونحو ذالك فمن حرم ذالك فهو قاصر عن فهم الشريعة

-আমি আমার ভাইদের মধ্যে কাউকে এমন কোন কিছুকে অস্বীকার করার সুযোগ দিব না, যেটা মুসলমানগণ ছওয়াব মনে করে আবিষ্কার করেছে এবং একে ভাল মনে করে, বিশেষ করে সে ধরনের কিছু, যেটা আল্লাহ তা’আলা ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পর্কিত। যেমন জনগণ জানাযার আগে কলেমা পড়ে বা জানাযার আগে কুরআন পাঠ করে। যে ব্যক্তি একে হারাম বলে, সে শরীয়ত সম্পর্কে অজ্ঞ। ৫০৯

➥509. আব্দুল গনী নাবলুসী, হাদিকাতু নাদিয়াহ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪০৯।


❏ তিনি আরও বলেন-

وكلمة لا إله إلاَّ اللهُ محمَّدٌ رسولُ الله اكبر الحسنات فكيف يمنع منها وتامل احوال عالب الخلق الان فى الجنازة تجدهم مشغولين بحكايات الدنيا لم يعتبروا بالميت و قلبهم غافل عن جميع ما وقع له بل رءيت منهم من يضحك واذا تعارض عند نامثل ذالك وكون ذالك لم يكن فى عهد ﷺ قد من ذكر الله عز وجل بل كل حديث لغو اولى من حديث ابناء الدنيا فى الجنازة فلوصاح كل من فى الجنازة لا إله إلاَّ اللهُ محمَّدٌ رسولُ الله فلا اعتراض 

-কলেমায়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ’ সমস্ত নেকীর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম নেকী। সুতরাং এর থেকে কিভাবে নিষেধ করা যেতে পারে। যদি আপনারা আজকাল জনগণের অবস্থা মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করেন, তাহলে ওদেরকে জানাযার সাথে যাবার সময় পার্থিব গল্প গুজবে ব্যস্ত দেখবেন; তাদের মন মইয়ত থেকে কোন শিক্ষাগ্রহণে করে না এবং যা কিছু হয়েছে তা থেকে উদাসীন বরং অনেক লোককে আমি হাসিঠাট্টা করতে দেখেছি। যখন এ যুগে জনগণের এ অবস্থা, তখন প্রথম যুগে মইয়তের সাথে উচ্চস্বরে কলেমা পড়া হতো না হেতু নাজায়েয বলে হুকুম দেয়া দুরন্ত নয়, বরং জায়েয হওয়ার হুকুম দেয়াটাই বাঞ্ছনীয়। এবং জানাযায় ঘরসংসারের কথাবার্তার চেয়ে অন্য কথা ভাল। তাই যদি সবাই জানাযায় উচ্চস্বরে কলেমা পড়ে, এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। ৫১০

➥510. ইমাম আহমদ রেযা, ফাতওয়ায়ে রেযভিয়াহ, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-১৪৪-১৪৫।


উপরোক্ত ভাষ্য থেকে বোঝা গেল, জানাযার সাথে যদি উচ্চস্বরে যিকর করা হয়, তা জায়েয। বিশেষ করে বর্তমান যুগে সাধারণ লোকের যখন মইয়তের সাথে হাসিঠাট্টা করে ও দুনিয়াবী কথাবার্তা বলে গমন করে, তখন তাদের সবাইকে যিকরে ইলাহীকে নিয়োজিত করা অনেক ভাল; এটা দুনিয়াবী কথাবার্তা থেকে অনেক উত্তম।

Top