হাদিসের আলোকে দলীল (৩১-৪০)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━
হাদিস-৩১ঃ
━━━━━━
أخرج الحاكم عن جابر رضی الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ لكل بني أم عصبة ينتمون إليهم، إلا ابني فاطمة، فأنا وليهما وعصبتهما؛
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক মায়ের সন্তানেরই বংশীয় সম্পর্ক রয়েছে, যা তাঁদের (পিতার) দিকে সম্পর্কিত হয়। তবে ফাতেমার দুই সন্তান ব্যতিত। কেননা, আমি তাদের অভিভাবক এবং তাদের আসাবা (অর্থাৎ তাদের বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হবে আমার দিকে)”।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
আল মুসতাদরিক (তিনি এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন), ৩:১৭৯ (৪৭৭০), ইমাম যাহাবী ও তাকে অনুসরণ করেছেন।
হাদিস-৩২ঃ
━━━━━━
أخرج الطبراني في الأوسط عن جابر رضی الله عنه، أنه سمع عمر بن الخطاب رضي الله عنه يقول للناس حين تزوج بنت على رضي الله عنه: ألاتهنئونی! سمعت رسول اللهﷺ يقول ينقطع يوم القيامة كل سبب ونسب، إلا سببی و نسبی؛
ইমাম তাবরানী ‘আল-আওসাত’ এ হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) যখন আলী (رضي الله عنه)'র কন্যাকে (উম্মে কুলসুম) বিয়ে করেন, তখন মানুষকে লক্ষ করে বলতে শুনেছেন যে, “সাবধান! তােমরা আমাকে স্বাগত জানাবেনা?, কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সকল উপায় (উসিলা) ও বংশীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে; কিন্তু আমার উপায় ও বংশীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হবেনা”।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. আল মু'জামুল আওসাত, ৬:২৮২ (৫৬০২)।
২. আস সুনানুল কুবরা, ইমাম বায়হাক্বী, ৭:১০১ (১৩৩৯৩)/ ৭:১৮৫ (১৩৬৬০)।
৩. আল মু'জামুল কাবীর, ইমাম তাবরানী, ৩:৪৫ (২৬৩৫)।
৪, আয যুররিয়্যাতুত তৃহিরা, আদ দুলাভী পৃ. ১১৫ হাদীছ নং- ২১৯।
হাদিস-৩৩ঃ
━━━━━━
أخرج الطبراني عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ كل سبب ونسب منقطع يوم القيامة، إلا سببی ونسبی۔
ইমাম তাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন প্রত্যেক উপায় ও বংশীয় সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, শুধু আমার উপায় (উসিলা) ও বংশীয় সম্পর্ক ব্যতিত”।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ইমাম হাইছামী, ৯:১৭৩। ২. আল মু'জামুল কাবীর, ইমাম তাবরানী, ২:২৭ (৩৩) (মসুরা ইবনে মাখমা এর সূত্রে)।
৩. আল মু'জামুল আওসাত, ৬:২৮২ (৫৬০২)।
৪. আস সুনানুল বায়হাক্বী, ৭:১০২ (২৩২৯৪)/ ১৮৫ (১৩৬৬০)।
হাদিস-৩৪ঃ
━━━━━━
أخرج ابن عساكر في تاريخه عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ كل نسب وصهر منقطع يوم القيامة، إلا نسبی وصهری؛
ইবনে আসাকির তার ‘তারীখ’ এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক বংশীয় ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা কিয়ামতের দিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, শুধু আমার বংশীয় ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তা ব্যতিত। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আমার কোন আত্মীয়তাই নষ্ট হবেনা”।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. আল মু'জামুল কাবীর, তাবরানী-৩:৪৫ (২৬৩৪)। ২. আল ফাওয়ায়েদ, তাম্মাম রাজী, ২:৩৩৩ (১৬০৩)।
৩. আস সুনানুল কুবরা, ৭:১০২ (১৩৩৯৫/১৩৩৯৬) মােসাওয়ার ইবনে মাখরামা (رضي الله عنه) এর হাদিস থেকে।
হাদিস-৩৫ঃ
━━━━━━
أخرج الحاكم عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ النجوم أمان لأهل الأرض من الغرق، وأهل بیتی أمان لأمتي من الاختلاف، فإذا خالفتها قبيلة من العرب اختلفوا فصاروا خزب إبليس؛
হাকেম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “(আসমানের) তারকারাজি পৃথিবীবাসীর জন্য (সমুদ্রে) ডুবে যাওয়া থেকে নিরাপদ থাকার উপায়, আর আমার পরিবারবর্গ (আহলে বায়ত) আমার উম্মতের জন্য মতবিরােধ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়। সুতরাং যখন আরবের কোন গােত্র তাদের (আহলে বাইতের) বিরােধীতা করেছে (অনুসরণ ছেড়ে দিয়েছে) তখনই তারা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ফলতঃ তারা শয়তানের দলভুক্ত হয়ে গেছে।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
আল মুসতাদরিক, ৩:১৬২ (৪৭১৫)।
হাদিস-৩৬ঃ
━━━━━━
أخرج الحاكم عن أنس رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ وعدنی ربی فی أهل بیتی، من أقر منهم بالتوحید، ولی بالبلاغ، أنه لايعذبهم -
হাকেম হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “আমার প্রতিপালক (আল্লাহ) আমাকে আমার পরিবারবর্গের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। (আহলে বাইতের) যারাই আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃত দিবে, তাদের ব্যাপারে আমাকে এ কথা বলতে নিযুক্ত করা হয়েছে যে, তাদেরকে আযাব দেয়া হবেনা”।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
আল মুসতাদরিক, ৩:১৬৩ (৪৭১৮)।
হাদিস-৩৭ঃ
━━━━━━
أخرج ابن جرير في تفسيره عن ابن عباسی رضی الله عنهما في قوله تعالى: «ولسوف يعطيك ربك فترضی» قال:من رضا محمد: أن لا يدخل أحد من أهل بيته النار؛
হযরত ইবনে জারীর তাঁর 'তাফসীর'-এ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস) আল্লাহ তা'আলার বাণী ولسوف يعطيك ربك فترضی; অর্থ: আপনার প্রতিপালক (আল্লাহ) অচিরেই আপনাকে দিবেন; যাতে আপনি সন্তষ্ট হয়ে যাবেন।' এর তাফসীরে বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সন্তুষ্টি হচ্ছে যে, তার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) এর কেউ যেন জাহান্নামে প্রবেশ না করে”।
বর্ণনাসূত্রঃ
━━━━━━-
১. ‘জামেউল বায়ান', ইবনে জারীর ১২:৬২৪ (৩৭১৫)।
২. আদ দুররুল মনসুর, লিখক জালালুদ্দীন সুয়ূতী, ৬:৬১০।
৩. ‘আল জামে লি আহকামিল কুরআন (তাফসীরে কুরতুবী),ইমাম কুতুবী ১০:৮৪।
৪. ‘আল ফেরদৌস'- ইমাম দায়লামী ২:৩১০ (৩৪০৩) (তিনি হযরত ইমরান ইবনে হােসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমি আমার মহামান্বিত প্রতিপালককে আবেদন করেছি এজন্য যে, আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইতের) একজনও যেন জাহান্নামে না যায়। অতঃপর, তা আমাকে দেয়া হয়েছে।
হাদিস-৩৮ঃ
━━━━━━
أخرج البزار، وأبو يعلى، والعقیلی، والطبرانی، وابن شاهين عن ابن مسعود رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ فاطمة أحصنت فرجها، فحرم الله ذريتها على النار؛
ইমাম বাযযার, আবু ইয়ালা, উকাইলী, তাবরানী এবং ইবনে শাহীন প্রমূখ (মুহাদ্দীসীন) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয় ফাতেমা (رضي الله عنه) নিজের লজ্জাস্থানকে পবিত্র রেখেছেন। তাই আল্লাহ তা'আলা তাঁর সন্তানদেরকে জাহান্নামের জন্য হারাম করেছেন।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. কাশফুল আসতার, হাইছামী, ৩:২৩৫ (২৬৫১)।
২. আল মু'জামুল কাবীর, তাবরানী, ৩:৪১ (২৬২৫)।
৩. আল মাতালিবুল আলিয়া, ইবনুল হাজর, ৪:২৫৮ (৩৯৫৯)।
৪. আল ফাওয়ায়েদ, তাম্মাম রাজী, ১:১৫৪ (৩৫৬)/১৫৫ (৩৫৭)।
৫. মুখতাসারু ইত্তিহাফুল খাইর, বুসরী ৯:২১৭ (৭৫৬৪)।
৬. আল হুলিয়্যাহ, আবু নঈম, ৪:১৮৮।
হাদিস-৩৯ঃ
━━━━━━
أخرج الطبرانی عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ لفاطمة رضي الله عنها: إن الله غير معذبك ولا ولدک;
ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত ফাতেমা (رضي الله عنه)'কে বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা তােমাকে এবং তােমার সন্তানদেরকে আযাব দিবেন না।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
আল মু'জামুল কাবীর, ১১:২১০ (১১৬৮৫)।
হাদিস-৪০ঃ
━━━━━━-
أخرج الترمذي وحسنه عن جابر رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ لا ياأيها الناس، إني تركت فيكم ما إن أخذتم به لن تضلوا: كتاب الله و عترتی؛
ইমাম তিরমিজি (তিনি হাদীসটিকে হাসান বলেছেন) হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “হে মানব মন্ডলী! আমি তােমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তােমরা যতক্ষণ তা আঁকড়ে ধরবে ততক্ষণ কখনাে পথভ্রষ্ট হবে না। (তা হচ্ছে) কিতাবুল্লাহ্ (আল কুরআন) এবং আমার পরিবারবর্গ (বংশধর)।
বর্ণনাসূত্র:
━━━━━━
১. আল জামেউস সহীহ, ইমাম তিরমিজি ৫:৬২১ (৩৭৮৬)।
২. দেখুন, হাদীছ নং ৬,৭ ও ৮ এর বর্ণন সূত্র।