৫. স্ত্রীর গোপন বিষয় প্রকাশ না করা
স্বামী-স্ত্রীর বিষয়টি একান্ত নিজস্ব ও গোপনীয়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের আমানত স্বরূপ। সুতরাং পরষ্পর পরষ্পরের আমানত রক্ষা করা আবশ্যক। বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর গোপনীয় বিষয়, কথা-বার্তা, শরীরের গোপন অঙ্গের ধরণ ইত্যাদি কারো নিকট প্রকাশ অত্যন্ত নিন্দনীয় ও নির্লজ্জ ব্যাপার। অনেক বেহায়া পুরুষকে দেখা যায়, তারা স্ত্রীর বাসর রাতের বিস্তারিত বর্ণনা সকালে উঠে বন্ধু বান্ধবদের নিকট পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে বর্ণনা করে আর বিভিন্ন মন্তব্য করে হাসি-তামাসা করে। আবার কিছু কিছু মহিলাও রয়েছে যারা স্বামীর গোপন বিষয় নিয়ে বান্ধবীর সাথে আড্ডায় ও গল্প গুজবের ফাঁকে প্রকাশ করে ফেলে। এর দ্বারা অন্যদের কাছে নিজেও হালকা হয়ে যায় এবং স্বামীকেও ছোট করে ফেলে।সামান্য আনন্দ উপভোগের জন্য সহপাঠিদের নিকট নিজেরাই তাচ্ছিল্য ও হেয় হচ্ছে। হাদিস শরীফে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রإِنَّ مِنْ أَعْظَمِ الْأَمَانَةِ عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وفى رواية إِنَّ مِنْأَشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ، الرَّجُلَ يُفْضِي إِلَى امْرَأَتِهِ، وَتُفْضِي إِلَيْهِ، ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا
হযরত আবদুর রহমান ইবনে সা’আদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আবু সাঈদ (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন, কিয়ামত দিবসে আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নিজের স্ত্রীর নিকট যায় এবং স্ত্রী তার নিকট আসে অতঃপর সে নারীর গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়। ১৫৮
১৫৮.ইমাম মুসলিম র. (২৬১ হি.), সহীহ মুসলিম, সূত্র. মিশকাত; ২৭৬
অর্থাৎ স্ত্রীর গোপনীয়তা স্বামীর নিকট বড় আমানত যা খিয়ানত করলে আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট পাপী হিসেবে বিবেচ্য হবে।
জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে কথিত আছে যে, তিনি তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ইচ্ছা করলে লোকেরা তার কাছে এর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইল। উত্তরে তিনি বললেন, আমি আমার স্ত্রীর দোষ-ত্রুটি কেন পর লোকের নিকট বর্ণনা করব? তালাক দেওয়ার পর লোকেরা পুনরায় জিজ্ঞাসা করছিল যে, এখন তো উনি আপনার স্ত্রী নয়। সুতরাং তালাকের কারণ এখন বলুন। উত্তরে তিনি বললেন, আমি পর মহিলার দোষ কেন বর্ণনা করব? এরূপ চরিত্রই আমাদের সকলের জন্য একান্ত আবশ্যক।
উল্লেখ্য যে, এসব গোপন কথা আপনি যতই তাগিদ দিয়ে এমনকি শপথ করায়ে কাওকে না বলার জন্য বললেও সে তা মানবে না, বরং ঐসব কথা আরো কিছু জোড়া-তালি দিয়ে আকর্ষনীয় করে অন্যকে বলে বেড়াবে। এজন্যই হযরত শেখ সাদী (رحمة الله) বলেন- “যে কথা বলে আবার শ্রোতাকে বলতে হয় তুমি কথাটা কাওকে বলোনা, সে কথা কাউকে না বলাই শ্রেয়।” কাউকে বলোনা শব্দটি বলার প্রতি উৎসাহিত করে দেয়। কারণ হাদিসে আছে- الانسان حريص مما منعমানুষ নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। মোট কথা হলো ভদ্র, সভ্য, সুশীল ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ কোনদিন এসব গোপন কথা ফাঁস করে না। যারা এসব কাজ করে তারা অভদ্র, অসভ্য ও বিকৃত রুচিসম্পন্ন মানুষ।