বিষয় নং- ২: যে জ্ঞান অন্বেষণে বের হয় তার পেছনের গুনাহ মাফ।
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর “হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থের ৪৫১ পৃষ্ঠায় লেখক দাবী করেছেন যে, হাদিসটি নাকি জাল বানোয়াট। তিনি রাবী ‘নুফাই ইবনুল হারিস’ নামক রাবীর উপর ভিত্তি করে একে জাল প্রমাণের চেষ্টা করেন।
❏ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ الرَّازِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُعَلَّى، قَالَ: حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ خَيْثَمَةَ، عَنْ أَبِي دَاوُدَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَخْبَرَةَ، عَنْ سَخْبَرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ،مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ كَانَ كَفَّارَةً لِمَا مَضَى
-‘‘হযরত সাখবারাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করেন : যদি কোনো ব্যক্তি ইলম শিক্ষা করে, তবে তা তার পূর্ববর্তী পাপের জন্য ক্ষতিপূরণ (পাপ মোচনকারী) হবে।’’ ৬
➥{ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : কিতাবুল ইলম : ৪/২৯ পৃ. হা/২৬৪৮, ইমাম দারেমী : আস সুনান : ১/১৪৯ পৃ. হা/৫৮০, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ৩/২০১পৃ. হাদিস, ১২০১৩, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১০/১৩৯পৃ. হাদিস, ২৮৬৯৯, ইমাম সূয়তী : জামেউস সগীর : ২/৬২১ হা/২০৮৭১, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী : জামিউল আহাদিস, ৭/৬১ পৃ. হা/২০৮৭১, খতিব তিবরিযি : মিশকাত : কিতাবুল ইলম : ১ম খণ্ড, হা/২২১, আহলে হাদিস আলবানী : দ্বঈফুল মিশকাত : হা/২২১, ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৪/৩৪ পৃ. হা/৬১০৫}
পর্যালোচনা:
এ হাদিসটির বিষয়ে আমাদের বক্তব্য তাই যা ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) বলেছেন।
❏ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) এটি সংকলন করে বলেন-
هَذَا حَدِيثٌ ضَعِيفُ الإِسْنَادِ، أَبُو دَاوُدَ اسْمُهُ نُفَيْعٌ الأَعْمَى يُضَعَّفُ فِي الحَدِيثِ
-‘‘এ হাদিসটির সনদ যঈফ, সনদে আবূ দাউদ বলতে অন্ধ নুফাই উদ্দেশ্য, সে দুর্বল হাদিস বর্ণনাকারী।’’ ৭
➥{ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : কিতাবুল ইলম : ৪/২৯ পৃ. হা/২৬৪৮}
❏ ইমাম হাইসামী (رحمة الله) অন্য স্থানে উক্ত রাবী সম্পর্কে বলতে গিয়ে নিজেই অন্য মতামত লিখেন, যেমন-
رَوَاهُ أَحْمَدُ وَفِيهِ أَبُو دَاوُدَ الْأَعْمَى وَهُوَ ضَعِيفٌ.
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম আহমদ বর্ণনা করেছেন, উক্ত হাদিসে অন্ধ আবু দাউদ দুর্বল রাবী।’’ ৮
➥{আল্লামা হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ১০/১৬৩ পৃ. }
শুধু তাই নয় আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী তাঁর গ্রন্থেও অসংখ্য স্থানে তাকে শুধু সাধারণ দুর্বল বলেছেন। ৯
➥{ইমাম হাইসামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ, ২/১৪৪ পৃ. হা/২৮৬৯, ৩/২৫২ পৃ. হা/৫৫৫১, ৯/১৬৮পৃ. হাদিস, ১৪৯৮৫, ১০/১৬৩ পৃ. হা/১৭৩০৩, ১০/১৭৮পৃ. হা/১৭৪২৪, মাকতুবাতুল কুদসী, কায়রু, মিশর। এ স্থানগুলোতে শুধু তিনি এই রাবিকে সাধারণ দুর্বল বলেছেন, মিথ্যাবাদী নয়।}
❏ আল্লামা মানাভী (رحمة الله) লিখেন- ضَعِيف الاسناد -‘‘সনদটি যঈফ।’’
(আল্লামা মানাভী, তাইসীর, ২/৪২৯ পৃ.)
❏ আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) বলেন- هذا حديث ضعيف الإسناد -‘‘এ হাদিসটির সনদ যঈফ।’’
(ইবনে কাসির, জামেউল মাসানিদ ওয়াল সুনান, ৩/২৬৫ পৃ., হা/৩৭১৩)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বিখ্যাত ইমামগণ কেহই এ হাদিসকে জাল বলে সিদ্ধান্ত দেননি, কিন্তু এ ধোঁকাবাজগণ বলছেন এটি জাল, আমরা কাদের কথা মানবো!
তবে এ সূত্রটি যঈফ হলেও এ হাদিসটির আরেকটি শাওয়াহেদ হাদিস পাওয়া যায়।
❏ ইমাম তাবরানী (رحمة الله) ‘মু‘জামুল কাবীর’ গ্রন্থে অনেকটা শব্দ বৃদ্ধি করে হাদিসটি বর্ণনা করেন :
وَعَنْ سَخْبَرَةَ قَالَ: مَرَّ رَجُلَانِ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ وَهُوَ جَالِسٌ وَهُوَ يَذْكُرُ، فَقَالَ: اجْلِسَا، فَإِنَّكُمَا عَلَى خَيْرٍ ، فَلَمَّا قَامَ رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ - وَتَفَرَّقَ عَنْهُ أَصْحَابُهُ، فَقَامَا، فَقَالَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّكَ قُلْتَ لَنَا: اجْلِسَا، فَإِنَّكُمَا عَلَى خَيْرٍ، أَلَنَا خَاصَّةً أَمْ لِلنَّاسِ عَامَّةً؟ فَقَالَ: مَا مِنْ عَبْدٍ يَطْلُبُ الْعِلْمَ إِلَّا كَانَ كَفَّارَةَ مَا تَقَدَّمَ
-‘‘হযরত সাখবারাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দুজন ব্যক্তি রাসুল (ﷺ) পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি বসাছিলেন। রাসুল (ﷺ) বলেন, তোমরা উভয়ই বস। নিশ্চয় তোমরা উভয়ই কল্যাণের উপরে রয়েছে। অতঃপর রাসুল (ﷺ) দন্ডায়মান হলেন রাসুল (ﷺ)-এর নিকট আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! নিশ্চয় আপনি আমাদেরকে বলেছেন তোমরা বস, তোমরা কল্যাণের উপরে আছ, এটা কি শুধু আমাদের জন্য খাছ (নির্দিষ্ট)? অতঃপর রাসুল (ﷺ) বললেন, আল্লাহর যে বান্দা দ্বীনি ইলম হাছিল করার ইচ্ছা করে বের হয় আল্লাহ্ তা‘য়ালা তার পিছনের গুনাহ মাফ করে দেন।’’ ১০
➥{ইমাম তিরমিযি, আস্-সুনান, ৪/৩২৬পৃ. হা/২৬৪৮, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৪/৩৪পৃ. হাদিস, ৬১০৫, ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ৮/৭পৃ. হা/৫৮২৮, আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ১/১২৩ পৃ.}
তাই সর্বশেষে বলা যায়, অন্ধ আবু দাউদ দ্বঈফ হলেও হাদিসটি দ্বঈফ হয়নি, কারণ অন্য সনদ দ্বারা এটির শাওয়াহেদ থাকায় এটির মর্যাদা ‘হাসান’ স্তরে উন্নিত।