হযরত আলী (رضي الله عنه) আছরের নামাজ কেন আদায় করেননি?
মুহাদ্দিস আনোয়ার শাহ ছাহেব বলেন- আমার মতে এর কারণ হচ্ছে- সেই সময় দুইটি হুকুম বা নির্দেশ একত্রিত হয়েছে, তন্মধ্যে একটি হচ্ছে সাধারণ হুকুম; যা আল্লাহর পক্ষ হতে যথা সময়ে নামাজ আদায় করা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে খাস তথা নির্দিষ্ট হুকুম, যা নবীয়ে করীম রাউফুর রাহীম (ﷺ) এর পক্ষ হতে নির্দেশ। তিনি যে কাজের জন্য হুকুম ফরমায়েছেন, তা সন্ধ্যার পূর্বেই সম্পন্ন করার জন্য বলেছেন।
যেমন বুখারী শরীফের قصه بنى قريضه এর মধ্যে বর্ণিত আছে- হুজুর আলাইহিস্সালাম সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিআল্লাহু আনহুমকে হুকুম দিয়েছিলেন- আছরের নামাজ বনী কুরাইজায় পৌঁছে আদায় করার জন্য, অথচ আছরের নামাজের সময় পথের মধ্যেই হয়ে গেছে, তখন তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সাহাবী হুকুমে আম তথা আল্লাহ তাআলার হুকুমের প্রতি খেয়াল করে ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ আদায় করেন। আর কতেক সাহাবী নামাজ আদায় না করে বরং হুকমে খাস তথা রাসূল (ﷺ) এর হুকুমকে প্রধান্য দিলেন। এর থেকে প্রকাশ্য ভাবে এটিই প্রতিয়মান হয় যে, ঐখানে কতেক সাহাবীর হুকুমে আ’ম তথা আল্লাহ তাআলার হুকুম ফওত হয়েছে আর কতেক সাহাবীর হুকুমে খাস তথা রাসূল (ﷺ) এর হুকুম ফওত তথা বাদ পড়েছে। যখন হুযুর (ﷺ) এটি জানতে পারেন তখন কোন পক্ষকেই দোষারূপ করেননি। ২৫২
➥২৫২. বুখারী শরীফ, পৃষ্ঠা ৫৯১, باب مرجع النبى صلى الله عليه وسلم من الاحزاب ।
অতঃপর শাহ ছাহেব বলেন- এটি কঠিন ইজতেহাদী মাসআলার মধ্যে অন্যতম একটি মাসআলা। এটির ফয়সালা দেওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার। কেননা যদি হুকুমে খাসকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তাহলে হুকুমে আ’ম তথা আল্লাহর হুকুম বাদ পড়বে। আর যদি হুকুমে আ’মের উপর আমল করা হয় তাহলে হুকুমে খাস বাদ পড়বে, কাজেই এটির উপর চিন্তা ভাবনা করা আবশ্যক।
তিনি আরো বলেন ردّ شمس এর ঘটনাটি খায়বর যুদ্ধের সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। আবার অনেকে এটিকে ভুল বশত খন্দকের যুদ্ধের সময়কার ঘটনা বলেছেন। অথচ এখানে ردّشمس হয়েছিল। আর ঐখানে غروب شمس হয়েছিল। যখন হুজুর (ﷺ) এবং ওমর (رضي الله عنه) সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আছরের নামাজ আদায় করেছিলেন। ২৫৩
➥২৫৩. বুখারী শরীফ, পৃষ্ঠা-৮৪ ও ৫৯০।
ইমাম তাহাবী (রহ.) এর ছহীহ হাদীস ردشمس যার উপর হাফেজ ইবনে তাইমিয়্যাহ এর কটাক্ষ ও বিরোধীতার কারণ কি?
উল্লেখ্য যে- হযরত ওলামায়ে আহলে ইলম হতে একথা অস্পষ্ট নয় যে, ردشمس এর ঘটনাটি প্রসিদ্ধ ও মাশহুর। অর্থাৎ ردشمس এর ঘটনাটি হচ্ছে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
ردشمس সম্পর্কে মুহাক্কেকে দাওরান হযরত আল্লামা মুহাদ্দিস কাউছারী এর কিতাব “সিরাতুল হাবী এবং আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ রেজা ব-জুনুরী নক্শেবন্দী (رحمة الله) এর “আনোয়ারুল বারী” হতে কিছু জবাব উপস্থাপন করছি। হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহ ইমাম তাহাবীর উপর ردشمس হাদীসটি বিশুদ্ধ হওয়ার উপর কটাক্ষ করেছে এবং এমন পর্যন্ত বলে দিয়েছে যে, ইমাম তাহাবী অধিক হাদীস বর্ণনাকারী, ফকীহ ও আলেম হওয়া সত্ত্বেও অপরাপর আহলে হাদীস ও আহলে ইলমের ন্যায় সনদের ক্ষেত্রে যথাযথ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ছিলেন না।
হযরত মাওলানা আনোয়ার শাহ ছাহেব ইমাম তাহাবীর বিশুদ্ধ হাদীসের বিশ্বাস রেখে মূল ঘটনা ঐরকমই বলেছেন। যাহা ইমাম তাহাবী বলেছেন। এর চেয়ে অতিরিক্ত আর কিছু বলেননি। আর হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহ এর কটাক্ত যা বিভিন্ন ভাবে হতে পারে।
তবে কতেক আলেম বলেন- ইবনে তাইমিয়াহর বিরোধীতার একটি অন্যতম কারণ এটিও হতে পারে যে, ইমাম তাহাবীর উপর হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহর কটাক্ষ অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য খেয়ালে বলেছে। যদিওবা হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহ নিঃসন্দেহে একজন বড় আলেম ও হাফেজে হাদীস এবং তার ইলম ও জ্ঞান-গরীমার কথা তার সময়কালের আলেম ওলামারা স্বীকার করেছেন। স্বয়ং মাওলানা আনোয়ার শাহ ছাহেব ও তার প্রশংসা করেছেন।
তবে ইমাম তাহাবী (رحمة الله) এধরণের উঁচু স্তরের মুহাদ্দিস ও আলেমের সামনে এমন ছিল যে, যেমন আল্লামা শওকানী ও ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর মধ্যে ছিল।
মুহাদ্দিস আল্লামা কাউছারী (رحمة الله), যিনি যুগের স্বল্প জ্ঞানী লোকদের জ্ঞান দানের জন্য তারিখ ও বেজালের মাধ্যমে বহু সংখ্যক ভুল ও সন্দেহের অবসান করার চেষ্টা করেছেন।
সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা কাউছারী (رحمة الله) তাঁর লিখিত কিতাব سيرت طحاوى এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম তাহাবী (رحمة الله) সম্পর্কে হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহর ঘোর বিরোধীতা ও অপপ্রচার এই জন্য যে, তিনি ردشمس হাদীসকে বিশুদ্ধ করেছেন, যার কারণে হযরত আলী মোরতুজা (رضي الله عنه) বুজুর্গী, কারামাত ও শরাফতের প্রকাশ পেয়েছে। এতে ইবনে তাইমিয়াহর থিউরীর উপর আঘাত হয়েছে। যা তিনি হযরত আলী সম্পর্কে মন্তব্য করেছে। কেননা তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে খারেজী সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করা। কারণ মুসলমানদের মধ্যে ফেরকাবন্দী বা দলাদলি খারেজী সম্প্রদায় হতে শুরু হয়েছে এবং মুসলমানদেরকে কাফির, মুশরিক ও বেদাতী তৈরীর ফ্যাক্টরী ও কারখানা তাদের সময়কাল হতে আরম্ভ হয়ে বর্তমান পর্যন্ত কঠিন রূপ ধারণ করে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই ফ্যাক্টরী হতে শিরক, বেদাত তৈরী হয়ে ক্রমশঃ মুসলমানদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে পড়েছে।
হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে- كل اناء يترشح بمافيه অর্থাৎ প্রত্যেক পাত্রে, কিংবা ফ্যাক্টরী ও কারখানা হতে ঐ জিনিস বা বস্তুই বের হয় যা ঐখানে থাকে। অর্থাৎ যেটি ঐখানে তৈরী হয়। পরবর্তীতে ঐ ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার ইবনে হাজম হতে ইবনে তাইমিয়াহ এবং ইবনে কাইয়ুম পরবর্তীতে জেনারেল ম্যানেজার আবদুল ওহাব যাকে ওহাবী বলা হয়ে থাকে। সে হেজাজ শরীফের নাম পরিবর্তন করে তার নামে নামকরণ করে। এমনিভাবেই প্রতিটি জিনিসের নাম পরিবর্তন হতে লাগল। অথচ ভাল কাজ সর্বদা ভাল হয়ে থাকে। আর খারাপ কাজ সর্বদা খারাপ হয়ে থাকে। অর্থাৎ খারাপ খারাপই আর ভাল ভালই হয়ে থাকে।
হাফেজ ইবনে তাইমিয়াহ তার ব্যক্তিগত আক্বিদা ও বিভিন্ন মাসআলা যা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে মত পার্থক্যের সৃষ্টি হয়; কাজেই ইবনে তাইমিয়া কি ধরণের মুসলমান?
যেখানে সম্প্রদায়ের মধ্যে আক্বিদার মাসআলা নিয়ে মত-পার্থক্য হয়ে থাকে। আল্লাহর নিয়ম মোতাবেক সেখানে নবী প্রেরণ করে থাকেন, যাতে করে সে সম্প্রদায়ের লোকেরা সঠিক পথের সন্ধান লাভ করতে পারে। সম্ভবত সে খেয়াল মোতাবেক ইবনে তাইমিয়াহ অন্তরালে নবী দাবী করেছে।