আল্লামা শেখ আবুল হাসন বিকরীর (رحمة الله) উক্তি
‘হুজুর (ﷺ) আল্লাহ তায়ালার সকল জ্ঞানে জ্ঞানী’-এর পর্যালােচনাঃ
(১) যে ব্যক্তি পূর্বোক্ত অধ্যায়ের সব বিষয়বস্তু চিন্তা ও গবেষণার দৃষ্টিতে তাকাবে, বিশেষতঃ পেছনের বাক্যাবলীতে যে, সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টির জ্ঞানে অকাট্যভাবে কোন সম্পর্ক নেই’—তিনি নিশ্চিত বুঝে নেবেন যে, আল্লাহর শপথ! মিথ্যা ও প্রতারণার উপর যারা সৃষ্টি ও স্রষ্টার জ্ঞানকে সমান বলে যার দিকে সম্পর্কিত করেছে তিনি এমন মিথ্যা দাবী থেকে নিশ্চয়ই পবিত্র এবং এটা স্থায়ী ও অস্থায়ীর পার্থক্য মাত্র। তা সত্ত্বেও আমরা এর প্রবক্তার ব্যাপারে কাফের বলা পছন্দ করি না, যেমন মওদুআত গ্রন্থে রয়েছে। কেননা, কতেক আরিফ থেকে এ প্রকারের উক্তি বর্ণিত হয়েছে। আর তারা আমাদের সরদার আবুল হাসান বিকরী (رحمة الله) ও তাঁর অনুসারী। আল্লামা শেখ উসমাভী (رحمة الله) শরহে সালাতে সৈয়দ আহমদ বদভী আল কবীর (رحمة الله)-এ উল্লেখিত হয়েছে যে, আল্লামা ওমর হালবীর কালামে রয়েছে- সৈয়দী মুহাম্মদ বিকরীর এক উক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলাে যে, নবী করীম (ﷺ) আল্লাহর সব জ্ঞানই জানতেন। সারাংশ এই যে, শেখ মুহাম্মদ বিকরীর উক্তি ইক ও বিশুদ্ধ। এজন্য সম্ভব যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নিজের সমস্ত জ্ঞান প্রদান করেছেন এবং তাঁকে সে বিষয়ে অবগত করেছেন। আর এ উক্তি দ্বারা এটা আবশ্যক হবে না যে, মুহাম্মদ (ﷺ) রাবুবিয়াতের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যাবেন। এ কারণে যে, উক্ত জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার জন্য সত্তাগতভাবে প্রমাণিত। আর মুস্তাফা (ﷺ)-এর জন্য আল্লাহরই শিক্ষার মাধ্যমে। এরপর আল্লামা উসমাভী (رحمة الله) বলেন, আমাকে আমার কতেক সঙ্গী বলেছেন ‘আমরা যখন বলবাে যে, রাসূলে পাক (ﷺ) প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে অবগত আছেন, তাহলে তাঁর জ্ঞানতাে আল্লাহর জ্ঞানের সমান হওয়া আবশ্যকীয় হয়ে পড়বে। আমি এর উত্তরে বলেছি, এর দ্বারা এসব কিছু অপরিহার্য হয় না। কারণ, আল্লাহর জ্ঞান হলো প্রকৃত ও মৌলিক। আর নবী করীম (ﷺ)এর জ্ঞান স্বভাবগত ও প্রদত্ত। তাঁরা এ জবাবে সন্তুষ্ট হন এবং তা তাদের মনঃপুত হলাে।
১০৭ শেখ বিকরীর এ উক্তির দিকে শেখ মােহাক্কেক আবদুল হক্ মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله)। 'মাদারেজুন্নবুয়তে” ইঙ্গিত করেছেন। তিনি তা না কুফর বলেছেন, না ভ্রষ্টতা, আর না অন্য কিছু। বরং তিনি তা কতেক আরিফদের উক্তি বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি শুধুমাত্র এটাই বলেছেন যে, এ উক্তি দৃশ্যতঃ অধিকাংশ প্রমাণাদির বিপরীত। আল্লাহই অধিক অবগত এ উক্তির মর্মার্থ দ্বারা বক্তার উদ্দেশ্য কি? মর্মার্থ সহকারে দ্বিতীয় নজরে সুস্পষ্ট বিশ্লেষণ সত্বর বর্ণিত হচ্ছে যে, রাসূলে পাক (ﷺ) এর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার সকল জ্ঞানকে পরবেষ্টনকারী দাবী করা ত্রুটিপূর্ণ, পরিত্যক্ত ও ভ্রান্ত। কিন্তু এটা ত্রুটি, পাপ ও কঠোর পাপ যে, যে ব্যক্তি এসব কিছু প্রত্যক্ষ করার পরও মিথ্যাপবাদ দেয় এবং এমন সুস্পষ্ট মিথ্যার দুঃসাহস দেখায়। মহান আল্লাহ তায়ালার তাওফীক ব্যতীত সক্কর্মের শক্তি ও অসৎকর্ম থেকে রক্ষার কারাে শক্তি নেই। নিশ্চয়ই এ অপবাদ ওহাবীদের আবিস্কৃত। আল্লাহ তায়ালা তাদের অপমানিত করুন। তারাতাে আল্লাহ ও রাসুলের উপর মিথ্যাপবাদ দেয়। সুতরাং তাদের রক্ষা করার কে আছে এবং কাদের ব্যাপারে অলসতা করবাে? আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থী। যদি আপনারা বলেন যে, মাওদুয়াতে কি বলা হয়নি- “যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা ও রাসূলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞানের সমান হওয়ায় বিশ্বাস রাখে সে সকলের ঐকমত্যে কাফির যেমন তা কারাে নিকট গােপন নয়? " আমি বলবো যদি প্রত্যেক প্রকার সমান হওয়া উদ্দেশ্য হয়, তাহলে হাঁ! আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ চিরস্থায়ী হওয়া এবং তা থেকে বেপরওয়া হওয়াই আবশ্যক হয়ে। পড়বে। যেমন ঐ পার্থক্যসমূহ আপনারা অবগত হয়েছেন যা আমি বর্ণনা করছি। আর এ সকল আরিফগণের বাক্যের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। কেননা, তাঁদের উক্তিসমূহ আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন। সুতরাং এমন উক্তি কোন মুসলমান করবে না, আর না যে এমন উক্তি করবে সে মুসলমান হবে।
আর যদি সমান শুধুমাত্র পরিমাণের মধ্যে উদ্দেশ্য হয়, যেমন তা বক্তব্যে সুস্পষ্ট। কেননা, তিনি এর ভিত্তি ইবনে কাইয়ুমের ধারণার উপর রেখেছেন যে, ঐ ব্যক্তি যাদের নিজ সীমালংঘন দ্বারা সীমাতিক্রমকারী’ নাম রেখেছেন। তাঁদের মতে এ যে, রাসুলে পাক (ﷺ)-এর জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার জ্ঞানের হুবহু অনুগামী। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা যা কিছু জানেন তা তাঁর রাসুলও জানেন, সুতরাং কুফরীর কোন কারণ রইলােনা। কেননা, প্রকৃতপক্ষে কোন নসই বর্ণিত হয়নি। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বস্তুর উপর শক্তিমান। কোন জ্ঞান আল্লাহর জন্য সীমাবদ্ধ হওয়া তাঁর বান্দাদের প্রদান ও সাহায্যের বিপরীত নয়।
যেমন সত্বর বর্ণিত হচ্ছে। যদি এর দ্বারা কুফরী অপরিহার্য হয়, তাহলে (আল্লাহর আশ্রয়) ঐ ওলামা ও আউলিয়াদের কুফর আবশ্যক হয়ে যাবে যারা এ উক্তির প্রবক্তা যে, রাসুলে। পাক (ﷺ) কে কিয়ামতের জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে এবং তাঁকে তা গোপন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, যেমন এক্ষুণিই তা আপনাদের নিকট প্রকাশিত হবে। আর এটা ,। ‘মাওদুআত” গ্রন্থ থেকে বর্ণিত। স্বয়ং তিনি “রিসালাহ’-এর সমাপ্তিতে স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, পরবর্তী ওলামা ও সুফীদের মধ্যে কতেক পক্ষ অদৃশ্য জ্ঞান প্রদানের দিকে অভিমত। প্রকাশ করেছেন। এতদসত্বেও তাঁদের ব্যাপারে কুফরী বা ভ্রষ্টতা বলেন নি।
বাকী রইলাে, তাঁর জ্ঞান পঞ্চ বিষয়ের সীমাহীন-শেষহীন হওয়া সম্পর্কে, এ মাসয়ালা হচ্ছে যুক্তিগত। এর উপর শরীয়তের কোন প্রমাণ (দলীল) নেই। আর না প্রত্যেক যুক্তিগত মাসয়ালা অস্বীকার করা কুফর, যদি তাতে দ্বীনের কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত। না থাকে। বরং আমি ইমামুল হাক্বায়েক সৈয়দী মুহিউদ্দীন (رحمة الله)-এর উক্তিতে তা হাসিল হওয়ার বৈধতা দেখেছি, তিনি তাতে অবশ্য জোর দেননি।
তবে আল্লাহর জ্ঞানের সুক্ষ্মতা ও যথাযথত্ব হাসিল হওয়ার বৈধতার ব্যাপারে অবশ্যই - ওলামায়ে কিরামের মধ্যে মতবিরােধ রয়েছে।
“শরহে মাওয়াক্কিফে” এর অস্বীকারকে ইমাম গাজ্জালী ও ইমামুল হারামাঙ্গনের ন্যায় কতেক সাথীদের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন এবং বলেছেন, তন্মধ্যে কতেক ওলামা (কোন মন্তব্য করা থেকে) নিশুপ থেকেছেন। যেমন কাযী আবু বকর (رحمة الله) প্রমুখ।
আমাদের কতেক সাথী তা সংঘটিত হওয়ার প্রবক্তা। যেমন মাওয়াকিফ ও এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে রয়েছে। তাহলে এমন একটি মাসয়ালার ব্যাপারে কুফরী ফতােয়া প্রদান কিভাবে বিশুদ্ধ হতে পারে? যদিও আমাদের জন্য নিষেধ সত্য, এমনকি আল্লাহর দর্শনের পরেও (নিষেধ)।
(আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপকার প্রদান করুন) যদিও আল্লামা হালবী (رحمة الله) এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। মাওদুআত’ গ্রন্থের উক্তি= (যেমন গােপনীয় নয়) * দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, শুধুমাত্র তা কোথাও বর্ণিত দেখেননি, নিজ পক্ষ থেকে একটি বিষয় এ ধারণায় জুড়ে দিয়েছে যে, মাসয়ালা ঝগড়ার শক্তি রাখে না। আর ঐকমত্য এমন ধারণা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়না, যার কোন দলীল নেই। সুতরাং কিভাবে একদল অলী সম্পর্কে এমন উক্তি দ্বারা কাফির ফতােয়া দেয়া বিশুদ্ধ হতে পারে যা না যুক্তিগত, না বর্ণিত ও গ্রহণযােগ্য। সুতরাং হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকো, আল্লাহরই তাওফীক।
*রদ্দুল মােখতার 'বাবু ইদরাকিল ফরীদা’-এর একটি মাসয়ালায় যা ‘বাহারে' উল্লেখিত এবং এর পেছনে (পরে) লিপিবদ্ধ ছিলাে। যার বক্তব্য হলো, “সুস্পষ্ট কথা হলাে এই যে, 'বাহারে’ (তিনি) তা স্পষ্টতঃ বার্ণিত দেখেন নি।
_________
জ্ঞাতব্য যে, ইলমে মুতলা ইজমালী’ যখন বান্দার জন্য প্রমাণিত হলাে তখন ‘মুতলাক্ব ইলমে ইজমালী' প্রমাণিত হওয়াই স্বাভাবিক। অনুরূপ মুতলাক ইলমে তাফসীলী জন্যই যে, আমরা কিয়ামত, জান্নাত, দোযখ এবং আল্লাহ ও তার গুণাবলী থেকে সাতটি মৌলিক গুণাবলীর উপর ঈমান এনেছি এবং এগুলাে গায়ব ছাড়া কিছু নয়। আর এ সবের ব্যাপারে আমরা পৃথক পৃথক ও অন্যের থেকে স্বাতন্ত্র বুঝেছি। সুতরাং বুঝা গেলাে, গায়বসমুহের ‘শর্তহীন বিস্তারিত জ্ঞান প্রত্যেক মুসলমানেরই
(১) অর্জিত হওয়া অপরিহার্য হয়েছে আম্বিয়া (আঃ) এর তাে প্রশ্নই উঠে না। কেনই বা হবে না? আল্লাহ তায়ালাতাে আমাদেরকে গায়বের উপর ঈমান আর নির্দেশ দিয়েছেন। ঈমান হলাে সত্যায়নের নাম। আর সত্যায়ন হলাে জ্ঞান। অতএব, যে গায়ব জানবে না, সে এর সত্যায়ন করবে কি করে? আর যে সত্যায়ন (স্বীকার) করবেনা, সে ঈমান কিভাবে আনবে? প্রমাণিত হলাে, যে জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার সাথে খাস হবার যােগ্য, তা হলাে সত্ত্বাগত। জ্ঞানই।