হাদিসের আলোকে দলীল (২১-৩০)  

━━━━━━━━━━━━━━━━━━


হাদিস-২১ঃ

━━━━━━


أخرج ابن أبي شيبة، ومسدد فی مسنديهما، والحكيم الترمذي في نوادر الأصول، وأبو يعلى، والطبراني عن سلمة بن الأكوع رضي الله عنه قال: قال رسول الله ﷺ النجوم أمان لأهل السماء وأهل بیتی أمان لأمتی؛


হযরত ইবনে আবিশ শায়বা এবং মুসাদ্দাদ উভয়ে তাদের ‘মুসনাদ'-এ হাকীম তিরমিজী ‘নাওয়াদেরুল উসূল’-এ আবু ইয়ালা এবং তাবরানী প্রমূখ হযরত সালমা ইবনে আকওয়া' (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, ‘তারকারজি হচ্ছে আসমানের অধিবাসীদের জন্য নিরাপত্তা আর আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) হচ্ছে, আমার উম্মতের জন্য নিরাপত্তা।


বর্ণনা সূত্র:

━━━━━━-

১. আল-মাতালিবুল আলিয়া-ইবনে হাজর আল আসকালানী - ৪:২৬২ (৩৯৭২)।

২. মুখতাসারু ইত্তিহাফুস সাদাতিল মাহরা-বুসিরী-৫:২১০ (৭৫৩৬)। 

৩. নাওয়াদিরুল উসূল, ২:১৯৯। 

৪. আল মু'জামুল কাবীর- তাবরানী ৭:২২ (৬২৬০)।

৫. আল মারিফাতু ওয়াত তারীখু-আল ফাসভী- ১:৫৩৮। 

৬. যাবায়েরুল উকবা- আত্বাবারী, পৃষ্ঠা- ৪৯।

৭. কানযুল উম্মাল- আল মুত্তাকি আল হিন্দ-১২:১০১।

৮.আল-মসনদ-আর রুয়ানী -২:২৫৩ (১১৫২)/২৫৮(১১৬৪/১১৬৫)।



হাদিস-২২ঃ

━━━━━━


أخرج البزار عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إني خلفت فيكم اثنين لن تضلوا بعدهما أبدأ: كتاب  الله، ونسبی. ولن يتفرقا، حتی یردا على الحوض -


ইমাম বাযযার হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমি তােমাদের জন্য দুটি প্রতিনিধি রেখে যাচ্ছি, (তােমরা এদের আঁকড়ে ধরলে) এরপর তােমরা কখনাে পথভ্রষ্ট হবে না। (তা হচ্ছে) আল্লাহর কিতাব (কুরআন) এবং আমার বংশধর (আহলে বাইত)। আর আমার কাছে হাউজে কাউছারের নিকট মিলিত না হওয়া পর্যন্ত এঁরা উভয়ে (কুরআন এবং আমার বংশধর) পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবেনা।


বর্ণনা সূত্র:

━━━━━━-

১. কাশফুল আসতার- হাইছামী, ৩:২২৩ (২৬১৭), 

২. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ-৯:১৬৩।



হাদিস-২৩ঃ

━━━━━━


أخرج البزار عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ إنی مقبوض، وإني قد ترکت فیکم الثقلين: كتاب الله،  وأهل بیتی، وإنكم لن تضلوا بعدهما۔


ইমাম বাযযার হযরত আলী (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (আলী (رضي الله عنه)) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় আমি ইন্তিকাল করব। আর নিশ্চয় আমি তােমাদের জন্য দু'টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রেখে যাচ্ছি। (তা হচ্ছে) কিতাবুল্লাহ (কুরআন) এবং আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)। আর নিশ্চয় তােমরা এ দু’টা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার পর কখনাে গােমরাহ হবেনা।


বর্ণনাসূত্র:

━━━━━━

১. কাশফুল আসতার - হাইছামী-৩:২২১ (২৬১২)।

২. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ - ৯:১৬৩।



হাদিস-২৪ঃ

━━━━━━-


أخرج البزار عن عبد الله بن الزبیر رضی الله عنهما، أن النبيﷺ قال: مثل أهل بیتی، مثل سفينة نوح، من ركبها نجا،  ومن تركها غرق ؛


ইমাম বাযযার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه)'র সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন “আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) হচ্ছে হযরত নূহ (আ.) এর নৌকার মত, যে তাতে আরােহণ করল সে মুক্তি পেল আর যে তা ছেড়ে দিল (আরােহণ করলনা) সে ডুবে গেল”।


বর্ণনাসূত্র:

━━━━━━

১. কাশফুল আসতার-হাইছামী, ৩:২২২ (২৬২৩)।

২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ-৯:১৬৮।



হাদিস-২৫ঃ

━━━━━━


أخرج البزار عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ مثل أهل بیتی مثل سفينة نوح، من ركبها نجا،  ومن تركها غرق ؛



ইমাম বাযযার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)মা এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) এর উদাহরণ হচ্ছে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এর নৌকার মত, যে তাতে আরােহণ করল সে মুক্তি পেল। আর যে তাকে ছেড়ে দিল (আরােহণ করলনা) সে ডুবে গেল”।


বর্ণনাসূত্র:

━━━━━━-

১. কাশফুল আসতার-হাইছামী, ৩:২২২ (২৬১৫)। 

২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ -৯:১৬৮।

৩. মু'জামুল কাবীর- তাবরানী, ৩:৪৬ (২৬৩৮)।

৪. আল-হুলিয়্যাহ- আবু নঈম, ৪:৩০৬।



হাদিস-২৬ঃ

━━━━━━


أخرج الطبرانی عن أبی ذر رضي الله عنه سمعت رسول اللهﷺ يقول: مثل أهل بيتي فيكم كمثل سفينة نوح في  قوم نوح، من ركبها نجا، ومن تخلف عنها هلك. ومثل حطة بني إسرائيل.


ইমাম তাবরানী হযরত আবু যর (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'কে বলতে শুনেছি, “তােমাদের মধ্যে আমার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) এর উদাহরণ হচ্ছে, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এর উম্মতের জন্য তার নৌকার মত। যে তাতে আরােহন করল সে মুক্তি পেল। আর যে তা হতে পিছন পড়ে রইল (পরিত্যাগ করল) এবং আরােহণ করলনা সে ধ্বংস হল। আর আমার আহলে বাইতের আরাে উদাহরণ হচ্ছে, বনী ইসরাঈলের ‘হিত্তাতুন’(টীকা:৮) এর মত।


টীকা ৮:


‘হিত্তাতুন (حطت) এটি বনী ইসরাইলের প্রতি আল্লাহ তা'আলার আদেশকৃত একটি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে, হে আমাদের প্রতিপালক! তােমার কাছে আমাদের প্রার্থনা হচ্ছে যে, তুমি আমাদের অপরাধ মার্জনা কর।' ঘটনা হচ্ছে, যখন বনী ইসরাঈল জান্নাতী খাবার মান্না ও সালওয়া খেতে অরুচিবােধ করল, তখন তারা সে সময়ে নবী হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এর নিকট স্বাভাবিক খাদ্যের আবেদন করল। অতঃপর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এর আবেদনক্রমে আল্লাহ তা'আলা স্বাভাবিক খাদ্য লাভের সুবিধার্থে তাদেরকে (বনী ইসরাঈলকে) বায়তুল মােকাদ্দাস কারাে মতে বায়তুল মােকাদ্দাসের পার্শ্ববর্তী আরীহা, কারাে মতে মিসর এ প্রবেশের নির্দেশ প্রদান করল। এবং তাদেরকে আল্লাহু তা'আলার পক্ষ থেকে এও আদেশ করা হয় যে, আল্লাহ তা'আলার মাহত্য ও মর্যাদা স্মরণ করে এ জনপদের প্রবেশদ্বারে নতশিরে ‘হিত্তাতুন' বলতে বলতে প্রবেশ কর। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা না করে বুক টান করে, মাথা পশ্চাৎ দিকে হেলিয়ে ‘হিত্তাতুন' শব্দের পরিবর্তে ‘হিনত্বতাতুন (حنطة) শব্দ বলতে বলতে তথায় প্রবেশ করে। আল্লাহ তা'আলা তদের এহেন বিদ্রুপাত্মক আচরণ ও অবাধ্য কাজের শাস্তি স্বরূপ তাদের মাঝে প্লেগ রােগ ছড়িয়ে দেন। সংক্রমিত প্লেগ অল্প কয়েকদিনে তাদের ৭০ হাজার লােকের মৃত্যু ঘটে। আর যারা আল্লাহ তা'আলার আদেশ মেনে ‘হিত্তাতুন' বলতে বলতে প্রবেশ করেছিল, তারা রক্ষা পায়। (জালালাইন, বুখারী)। 


বর্ণনাসূত্র:

━━━━━━-

১. আল-মু'জামুল আওসাত-৪:২৮৩ (৩৫০২)/৬:২৫১ ৫৫৩২)।

২. আল-মু'জামুস সাগীর, ১:১৩৯।

৩. আল মুসতারিক, ইমাম হাকেম, ২:৩৭৩ (৩৩১২)।

৪. মুখতাসারু ইত্তিহাফুল খাইর, ৫:২১১ (৭৫৪০)।

৫. কাশফুল আসতার, হইছামী, ৩:২২২ (২৬১৪)।



হাদিস-২৭ঃ

━━━━━━


أخرج الطبراني في الأوسط عن أبي سعيد الخدری رضی الله عنه سمعت رسول اللهﷺ يقول: إنما مثل أهل بیتی كمثل سفينة نوح، من ركبها نجا، ومن تخلف عنهاغرق ؛ وإنما مثل أهل بيتي فيكم كمثل حطة بني إسرائيل، من دخل غفر له ؛


তা'আলা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)'কে বলতে শুনেছি, “নিশ্চয় আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) উদাহরণ হচ্ছে, নূহ আলাইহিস সালাম এর নৌকার মত, যে তাতে আরােহন করল সে মুক্তি পেল। আর যে তা থেকে পিছিয়ে পড়ল (আরােহণ করলনা) সে ডুবে গেল। আর নিশ্চয় তােমাদের মধ্যে আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) উদাহরণ হচ্ছে, বনী ইসরায়েলের ‘হিত্তাতুন’ এর মত। যে তাতে প্রবেশ করল সে ক্ষমা প্রাপ্ত হল"।


বর্ণনাসূত্র:

━━━━━━

১. আল-মুজামুল আওসাত-৬:৪০৬ (৮৫৬৬)।

২. আল মু'জামুস সাগীর-২:২২।



হাদিস-২৮ঃ

━━━━━━


أخرج ابن النجار في تاريخه عن الحسن بن علي رضي الله عنهما قال : قال رسول الله لكل شيء أساس ، وأساس الإسلام حب أصحاب رسول الله وحُبُ أهل بيته ؛


ইবনে নাজ্জার তার ‘তারীখ’-এ হযরত হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক কিছুর একটি মূল আছে। আর ইসলামের মূল হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবাদের এবং তার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)'কে ভালবাসা”।


বর্ণনাসূত্র:

━━━━━━

‘আদ-দুররুল মনসুর জালালুদ্দীন সুয়ুতী, ৬:৭।



হাদিস-২৯ঃ

━━━━━━


أخرج الطبراني عن عمر رضي الله عنه قال:قال رسول اللهﷺ كل بني أنثى فإن عصبتهم لأبيهم، ما خلاولد فاطمة فإنی عصبتهم، فأناأبوهم; 


ইমাম তাবরানী হযরত ওমর (رضي الله عنه) এ সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক নারীর ঔরসজাত সন্তানদের বংশ পরিচয় নির্ণয় হয় তাদের পিতার দিক থেকে। শুধু (আমার কন্যা) ফাতেমার (رضي الله عنه)'র সন্তানগণ ব্যতিত। (অর্থাৎ, ফাতিমার সন্তানগণের বংশ পরিচয় হবে মাতার দিক দিয়ে, পিতার দিক দিয়ে নয়) কেননা, আমিই তাদের ‘আসাবা’(টীকা:৯) এবং আমিই তাদের পিতার স্থলাভিষিক্ত (অভিভাবক হিসেবে)” ।


টীকা ৯:


‘আসাবা আরবী ভাষায় ‘আসাবা' শব্দের অর্থ ‘মাংসপেশী', যাদের সাথে রক্ত সম্পর্ক আছে। ফরায়েজের ভাষায় যাবিল ফুরুজ নির্দিষ্ট অংশ নেয়ার পর অবশিষ্ট অংশ আসাবাদের মধ্যে বণ্টিত হয়।


বর্ণনাসূত্র: 

━━━━━━

১. আল-মু'জামুল কবীর, ৩:৪৪ (২৬৩১), 

২. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ইমাম হাইছামী, ৪:২২৪। 



হাদিস-৩০ঃ

━━━━━━


أخرج الطبراني عن فاطمة الزهراء رضی الله عنها قالت: قال رسول اللهﷺ كل بني أم ينتمون إلى عصبتهم، إلا ولدی  فاطمة، فأنا وليهما وعصبتهما ؛


ইমাম তাবরানী হযরত ফাতেমাতুজ জাহরা (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক মায়ের সন্তানেরই বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হয় তাদের পিতার দিক দিয়ে। কিন্তু ফাতেমার সন্তানদের ব্যতিত। কেননা, আমিই তাদের অভিভাবক এবং তাদের বংশীয় উর্ধতন পুরুষ। তাই আমার দিকেই তাদের বংশীয় সম্পর্ক নির্ণীত হবে”।


বর্ণনাসূত্র: 

━━━━━━

১. আল মু’জামুল কাবীর, ৩:৪৪ (২৬৩২),

২. আবু ইয়াআলা, ৬:১৬১ (৬৭০৯), 

৩. তারীখু বাগদাদ আল খতীব আল বাগদাদী, ১১:২৮৫, 

৪, আল মাকাসিদুল হাসানা, ইমাম সাখাভী, পৃ. ৩৮১। 


Top