ইমাম আ‘যম (رحمة الله)’র ইলমে হাদিস সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত ওলামায়ে কিরামের অভিমতঃ


 قال خلف بن ايوب صار العلم من الله تبارك وتعالي الي محمد صلي الله عليه وسلم ثم صار الي التابعين ثم صار الي ابي حنيفة واصحابه شاء فليرض ومن شاء فليسخط“

খালফ ইবনে আউয়ুব বলেন-আল্লাহ তায়ালা থেকে ইলম রাসূল (ﷺ)  পেয়েছেন, তাঁর থেকে তাঁর সাহবীগণ, তাঁদের থেকে তাবেঈগণ, তাঁদের থেকে পেয়েছেন ইমাম আবু হানিফা ও তাঁর শাগরীদগণ। অতএব এতে কেউ সন্তুষ্ট হোক অথবা অসন্তুষ্ট হোক, সত্যি হলো এটাই।  

    খতীব বাগদাদী (৪৬৩হিঃ), তারিখে বাগদাদ, খন্ড ১৩, পৃষ্ঠাঃ ৩৩৬

 

মুহাদ্দিস সালেহীন (رحمة الله) বলেন,-“ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) একজন শ্রেষ্ঠ হাফিযে হাদিস ও শীর্ষ স্থানীয় মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি যদি হাদিস মুখস্থ করতে গভীর মনোনীবেশ না দিতেন তবে এত অধিক ফিকহী মাসয়ালা বের করতে পারতেন না।” 

➥  আল উকুদুল জিনান, সূত্র: ফিকহে হানাফীর ইতিহাস ও দর্শন, বাইফা, পৃষ্ঠাঃ  ১৩৮ 

 

আল্লামা হাফিয যাহাবী বলেন, “ইমাম আবু হানিফার (رحمة الله) যদিও হিফযে হাদিসের বিরাট অধিকারী ছিলেন তথাপিও তাঁর থেকে কম হাদীসই বর্ণিত হয়েছে। এর কারণ শুধু এই ছিল যে, তিনি হাদিস রিওয়ায়েতের পরিবর্তে হাদিস থেকে ফিকহী মাসাইল উদ্ভাবনে সর্বদা মশগুল ছিলেন।”    

    তাযকারাতুল হুফফায, সূত্র: আল উকুদুল জিনান, সূত্র: ফিকহে হানাফীর ইতিহাস ও দর্শন, বাইফা,

 

শায়খুল ইসলাম ইয়াযিদ ইবনে হারূন (رحمة الله) বলেন, 

كان ابو حنيفة تقيا ونقيا زاهدا عابدا عالما صدوق اللسان احفظ اهل زمانه 

“ইমাম আবু হানিফা অত্যন্ত মুত্তাকী, পরিছন্ন গুণের অধিকারী মহাসাধক, আবিদ, আলিম, সত্যবাদী ও সমসাময়িক কালের হাদিসের সর্বাপেক্ষা হাফেযে হাদিস ছিলেন।” 

    মানাকিবে আবু হানিফা, সূত্র: আল উকুদুল জিনান, সূত্র: ফিকহে হানাফীর ইতিহাস ও দর্শন, বাইফা,

 

ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আল কাত্তান (رحمة الله) বলেন,

 انه والله لاعلم هذه الامة بما جاء عن الله وعن رسوله 

“আল্লাহর শপথ! আবু হানিফা (رحمة الله) বর্তমান মুসলিম উম্মাহের মধ্যে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা বেশী বিজ্ঞ।”  

    কিতাবুত তালীম, সূত্রঃ আল উকুদুল জিনান, সূত্র: ফিকহে হানাফীর ইতিহাস ও দর্শন, বাইফা,

 

মুহাদ্দিস ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন (رحمة الله) কে ইমাম আবু হানিফা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন,

 ثقة مأمون ما سمعت احداضعفه 

“তিনি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত ভুল-ভ্রান্তিমুক্ত ব্যক্তি ছিলেন। হাদিসের বিষয়ে কেউ তাঁকে দুর্বল বলেছেন বলে আমি শুনিনি।”  

    আল্লামা আইনী (رحمة الله) (৮৫৫হিঃ) উমদাতুল ক্বারী, খন্ড ২, পৃষ্ঠাঃ ১২, সূত্র: আল উকুদুল জিনান, সূত্র: ফিকহে হানাফীর ইতিহাস ও দর্শন, বাইফা, পৃষ্ঠাঃ  ১৩৯

 

ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন (رحمة الله) আরো বলেন,

 كان ابو حنيفة ثقةً لا يحدث الا بما يحفظه ولايحدث بمالا يحفظ

“ইমাম আবু হানিফা নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি নিজের মুখস্থ ও সুরক্ষিত হাদিসই বর্ণনা করতেন। যা তাঁর মুখস্থ নেই তা তিনি কখনো বর্ণনা করতেন না। 

➥      ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) (৮৫২হিঃ) তাহযীবুত তাহযীব, সূত্র, আল উকুদুল জিনান, সূত্র: ফিকহে হানাফীর ইতিহাস ও দর্শন, বাইফা,

 

হাফস ইবনে গিয়াস (رحمة الله) বলেন “ইমাম আবু হানিফার ন্যায় ঐসব হাদিসের আলিম দেখিনি যেগুলো আহকামের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ ও উপকৃত।” 

➥      হানিফ রেজভী, জামেউল আহাদীস, উর্দু, মুকাদ্দামা, পৃষ্ঠাঃ  ২৬০ 

 

আবু আলকামা (رحمة الله) বলেন-“আমি আমার শায়খগণ থেকে শ্রবন কৃত হাদিস সমূহ ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র নিকট পেশ করেছি অর্থাৎ শুনিয়েছি। তিনি প্রত্যেক হাদিসের জরুরী বিষয় বর্ণনা করেছেন। এখন আমার আফসোস হচ্ছে যে, কেন আমি তাঁকে সব হাদিস শুনায়নি?  

    হানিফ রেজভী, জামেউল আহাদীস, উর্দু, মুকাদ্দামা, পৃষ্ঠাঃ  ২৬০

 

ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) বলেন-আমি ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র চেয়ে হাদিসের অর্থ এবং ফিকহী রহস্য সম্পর্কে বেশী জ্ঞাত কাউকে দেখিনি। যে মাসয়ালায় চিন্তা গবেষণা করতেন তাতে ইমাম আ‘যমের দৃষ্টিভঙ্গী পরকালের মুক্তির দিকেই বেশী থাকত। আমি তাঁর জন্য আমার পিতার পূর্বে দোয়া করি।  

    হানিফ রেজভী, জামেউল আহাদীস, উর্দু, মুকাদ্দামা, পৃষ্ঠাঃ  ২৬০


হাফিয মুহাম্মদ ইবনে মাইমুন (رحمة الله) বলেন- ইমাম আ‘যম (رحمة الله)’র সময়কালে তাঁর চেয়ে বড় কোন আলিম, পরহেযগার, কোন যাহিদ, কোন আরিফ, ও কোন ফকীহ ছিলনা। খোদার শপথ! আমার কাছে লক্ষ আশরাফীও এত মূল্যবান ছিলনা, যে পরিমান খুশী হই তার থেকে হাদীস শুনে।  

    ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, উর্দু, পৃষ্ঠাঃ  ৭৯, আরবী, পৃষ্ঠাঃ ৮২

 

হযরত মিসআর ইবনে কুদাম (رحمة الله) বলেন,

 طلبنا مع ابي حنيفة الحديث فغلبنا فأخذ نا في الزهد فبرع علينا وطلبنا معه الفقه فجاء منه ماترون 

“আমরা আবু হানিফার সাথে হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করতাম, অতঃপর তিনি আমাদের উপর হাদিস শিক্ষায় বিজয়ী হলেন। অতঃপর পরহেযগারীতে ও তিনি আমাদের উপর প্রাধান্যতা লাভ করলেন, আর তাঁর সাথে ফিকহ শিক্ষার্জন করলাম এ বিষয়ে তাঁর অবস্থান তো তোমরা দেখতেছ।  

    উকুদুল জিনান, পৃষ্ঠাঃ ১৯৬

 

ইলমে ফিকহ ও অন্যান্য বিষয়ে ওলামায়ে কিরামের অভিমত

ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) বলেনঃ

 الناس في الفقه عيال علي ابي حنيفة 

“ইলমে ফিকহে প্রতিটি মানুষ ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র পরিবারভুক্ত।”  

    তাযকিরতুল হুফফায পৃষ্ঠাঃ ১৬০, সূত্রঃ ফিকহে হানাফীর ইতিহাস ও দর্শন বাইফা, পৃষ্ঠাঃ  ১৩৫

 

আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (رحمة الله) বলেন- “ইমাম আবু হানিফা হলেন জ্ঞানের খাটি নির্যাস।”  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ) আল খায়রাতুল হিসান, উর্দু পৃষ্ঠাঃ  ৭১, আরবী, পৃষ্ঠাঃ ৭৪

 

ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) আরো বলেন-“কোন ব্যক্তি যদি ইলমে ফিকহে পূর্ণতা অর্জন করতে চায়, সে যেন আবু হানিফা (رحمة الله)’র পরিবার ভুক্ত হয়ে যায়। ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদের জন্য ইলমে ফিকহ সহজ করে দেওয়া হয়েছে।”  

    প্রাগুক্ত পৃষ্ঠাঃ ৭১, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৭৪

 

ইমাম আ‘মাশ (رحمة الله) বলেন-নিঃসন্দেহে ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) একজন মহান ফকীহ।” 

    আবু যুহরা মিসরী, আবু হানিফা হায়াতুহু ফিকহুহু, সূত্র: ফিকহে হানাফীর ইতিহাস ও দর্শন, বাইফা, পৃষ্ঠাঃ  ১৩৮


মক্কী ইবনে ইব্রাহীম (رحمة الله) বলেন-ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) ছিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব। তাঁর জ্ঞান থেকে সে ব্যক্তি বিমূখ হতে পারে, যে তাঁকে বুঝতে পারেনি।  

 ➥     আবু যুহরা মিসরী, আবু হানিফা হায়াতুহু ফিকহুহু, সূত্র: ফিকহে হানাফীর ইতিহাস ও দর্শন

 

প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে জুরাইজ (رحمة الله) বলেন-“জ্ঞানে তিনি সুউচ্চ মকাম দখল করে নিয়েছেন। তিনি উচ্চস্বরে বলতেন-আবু হানিফা একজন মহান ফকীহ, একজন মহান ফকীহ।”  

    আবু যুহরা মিসরী, আবু হানিফা হায়াতুহু ফিকহুহু, সূত্র: ফিকহে হানাফীর ইতিহাস ও দর্শন

 

বিখ্যাত মুহাদ্দিস কায়েস ইবনে রাবী (رحمة الله) বলেন-كان ابو حنيفة اعلم الناس بما لم يكن “যে সকল মাসয়ালা সংঘটিতব্য সেগুলো সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) সর্বাদিক জ্ঞান রাখতেন।”  

    ইমাম মুয়াফিফক মক্কী (رحمة الله) (৫৬৮হিঃ) মানাকিবুল ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) সূত্র: প্রাগুক্ত


“সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (رحمة الله) বলেন-আবু হানিফা সমসাময়িক কালের সবচেয়ে বড় আলেম ছিলেন। আমার চোখে তাঁর দৃষ্টান্ত দেখেনি।” 

    মাওলানা হানিফ রেজভী, জামেউল আহাদীস, মুকদ্দামা পৃষ্ঠাঃ ২৫৯


ইস্রাঈল ইবনে ইউনুস (رحمة الله) বলেন-“বর্তমান যুগে লোক যেসব বস্তুর প্রতি মুখাপেক্ষী হয়, ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) ঐগুলোকে সবচেয়ে বেশী জানতেন।”  

    মাওলানা হানিফ রেজভী, জামেউল আহাদীস, মুকদ্দামা পৃষ্ঠাঃ ২৫৯

 

ইবনে মসউদ (رضي الله عنه)’র পৌত্র হযরত কাসেম (رحمة الله) বলেন, “ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মজলিসের চেয়ে বেশী ফয়েজ পৌঁছানো কোন মজলিস নেই।”  

    মাওলানা হানিফ রেজভী, জামেউল আহাদীস, মুকদ্দামা পৃষ্ঠাঃ ২৫৯

 

মিসআর ইবনে কুদাম (رحمة الله) বলেন-“আমার কাছে মাত্র দু’ ব্যক্তির প্রতি ঈর্ষা হয়। আবু হানিফার উপর তাঁর ফিকহের কারণে আর হাসান ইবনে সালেহর উপর তাঁর তাকওয়া পরহেযগারীর উপর।”  

    মাওলানা হানিফ রেজভী, জামেউল আহাদীস, মুকদ্দামা পৃষ্ঠাঃ ২৬০

 

দাউদ তাঈ (رحمة الله) বলেন-“যে ব্যক্তির ইলম ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র ইলম জাতীয় হবেনা, ঐ ইলম সাহেবে ইলমের জন্য আপদ হবে।”  

➥      মাওলানা হানিফ রেজভী, জামেউল আহাদীস, মুকদ্দামা পৃষ্ঠাঃ ২৬০

 

ফুযাইল ইবনে আইয়্যায (رحمة الله) বলেন-“আবু হানিফা (رحمة الله) একজন ফকীহ ছিলেন এবং ফিকহ বিষয়ে অধিক প্রসিদ্ধ লাভ করেছেন। তাঁর রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিক্রম হতো, কথা কম বলতেন। তবে যখন হালাল-হারামের মাসয়ালা আসতো তখন হক ও সঠিক মাসয়ালাই বলতেন। বিশুদ্ধ হাদিস হলে অনুসরণ করতেন চাই তা সাহাবীর হোক কিংবা তাবেঈর হোক। নতুবা কিয়াস করতেন এবং খুবই উত্তম কিয়াস করতেন।”  

    মাওলানা হানিফ রেজভী, জামেউল আহাদীস, মুকদ্দামা, পৃষ্ঠাঃ ২৬১

 

আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুম্মাম (رحمة الله) বলেন- “আবু হানিফা (رحمة الله) থেকে বেশী ইলম ওয়ালা ব্যক্তি কখনো দেখিনি।”  

➥      মাওলানা হানিফ রেজভী, জামেউল আহাদীস, মুকদ্দামা, পৃষ্ঠাঃ ২৬১


আলী ইবনে হাশেম বলেন-“আবু হানিফা (رحمة الله) ইলমের ‘খযিনা’ ছিলেন। যে মাসয়ালা বড়দের কাছেও কঠিন ও মশকিল হতো তাঁর জন্য খুবই সহজ ছিল।”  

    মাওলানা হানিফ রেজভী, জামেউল আহাদীস, মুকদ্দামা, পৃষ্ঠাঃ ২৬১

 

ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ কাত্তান (رحمة الله) বলেন- “আবু হানিফা (رحمة الله)’র সিদ্ধান্তের চেয়ে আমি আর কারো সিদ্ধান্ত উত্তম পাইনি। এ জন্য আমি ফাতওয়ায় তাঁর মতই গ্রহণ করি।  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, উর্দু পৃষ্ঠাঃ  ৭৫

 

ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) বলেন- আমি কাউকে আবু হানিফার (رحمة الله) থেকে বড় ফকীহ মনে করিনা এবং আমি এমন কোন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করিনি যিনি তাঁর চেয়ে বড় ফকীহ। যে ব্যক্তি তাঁর কিতাব গুলোর অধ্যয়ন করবে না সে ফকীহ হবেনা এবং জ্ঞানের পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারবে না।”  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, উর্দু, পৃষ্ঠাঃ   ৭১, আরবী পৃষ্ঠাঃ  ৭৪

 

সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা বলেন- “কেউ ইলমে মাগাযী অর্জন করতে চাইলে মদীনা যাবে, মানাসিক বা হজ্জের জ্ঞানার্জনের জন্য মক্কা যাবে আর ইলমে ফিকহ অর্জনের জন্য কূফায় যাবে এবং ইমাম আবু হানিফার (رحمة الله)’র শিষ্যদের সাহচর্যে বসবে।”  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, উর্দু, পৃষ্ঠাঃ   ৭১, আরবী পৃষ্ঠাঃ  ৭৪


আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (رحمة الله) একদা হাদিস লিখছিলেন এবং বললেন- حدثني النعمان بن ثابت “আমাকে নু’মান ইবনে সাবিত হাদিস বর্ণনা করেছেন।” উপস্থিত একজন বলল-কোন নু’মান? তিনি বললেন আবু হানিফা যিনি জ্ঞানের মগজ। তখন কেউ কেউ হাদিস লিখা থেকে বিরত রইল। তিনি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললেন-হে লোকেরা! তোমরা আইম্মাগণের সাথে কতটুকু বিয়াদবী এবং তাঁদের সম্পর্কে কতটুকু অজ্ঞ আছ, তোমাদের নিকট ইলম ও ওলামাদের সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই। কোন ব্যক্তি ইমাম আবু হানিফা থেকে অধিক অনুসরণ যোগ্য নয়। তিনি ইমাম, মুত্তাকী, পরহেযগার, আলিম ও ফকীহ ছিলেন। তিনি ইলমকে এমনভাবে খোলাসা করতেন কেউ স্বীয় মেধা দিয়ে এভাবে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে পারেন নি। তারপর তিনি শপথ করলেন যে, একমাস যাবৎ তাদেরকে আর হাদিস বর্ণনা করবেন না।  

➥  ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, উর্দু পৃষ্ঠাঃ ৭১, আরবী পৃষ্ঠাঃ  ৭৫

  

কোন এক ব্যক্তি সুফিয়ান সাওরী (رحمة الله) কে বলল-আমি ইমাম আবু হানিফার (رحمة الله)’র কাছ থেকে আসতেছি। তিনি বলেন খোদার কসম। তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফকীহর কাছ থেকে আসতেছ। তারপর বললেন-যে ইমাম আবু হানিফার বিরোধীতা করবে তার উচিত যে, সে আগে যেন ইমাম সাহেব থেকে উঁচু মর্যাদা অর্জন করে নেয়। আর এরূপ হওয়া অসম্ভব। যখন সুুফিয়ান সাওরী ও ইমাম আবু হানিফা হজ্জে গেলেন তখন ইমাম আবু হানিফাকে সামনে রাখতেন আর সুফিয়ান সাওরী তাঁর পিছনে পিছনে চলতেন। কেউ যদি তাঁদের থেকে কোন মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করতো তখন ইমাম সাহেবই উত্তর দিতেন। সুফিয়ান সাওরীর মাথার দিকে ইমাম সাহেবের ‘কিতাবুর রিহন’ রাখতেন। কেউ জিজ্ঞাসা করল আপনি কি ইমাম আ‘যমের কিতাব দেখেন? তিনি বললেন, এটি আমার অন্তরে বিদ্যমান। যদি তাঁর সব কিতাব আমার কাছে থাকতো এবং আমি অধ্যয়ন করতে পারতাম, তবে জ্ঞানের ব্যাখ্যায় কোন কথা বাদ পড়তোনা। কিন্তু তোমরা ইনসাফ কর না। ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) বলেন-সুফিয়ান সাওরী আমার চেয়ে বেশী ইমাম আ‘যমের অনুসরণ করেন।  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠাঃ ৭২, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৭৬

 

একদা সুফিয়ান সওরীর কাছে কেউ প্রশ্ন করল, আপনার কাছে কি ইমাম মালিকের সিদ্ধান্তের উপর ইমাম আবু হানিফার সিদ্ধান্ত অধিক পছন্দনীয়? উত্তরে তিনি বললেন-মুয়াত্তা ইমাম মালিক থেকে লিখে নাও, তিনি রাবীদের ব্যাপারে যাচাই বাচাই করেন আর ফিকহ ইমাম আবু হানিফা এবং তাঁর শাগরিদদের অধিকার। যেন তাদেরকে এ কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠাঃ  ৭৪, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৭৭


খতীব বাগদাদী কোন কোন মুত্তাকী ইমাম থেকে বর্ণনা করেন যে, “সকল মুসলমানের উপর ওয়াজিব হলো ইমাম আবু হানিফার জন্য নামাযে দোয়া করা। কেননা, তিনি হাদিস ও ফিকহকে সংরক্ষন করেছেন। অনেকেই হিংসা ও অজ্ঞতার কারণে তাঁর ব্যাপারে সমালোচনা করেছে। কিন্তু তিনি আমার নিকট খুবই উত্তম। যে ব্যক্তি গোমরাহী ও অজ্ঞতার লজ্জা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় এবং ফিকহের স্বাদ পেতে চায়, সে যেন ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র কিতাব অধ্যয়ন করে।”  

➥      ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান,, পৃষ্ঠাঃ ৭৪

 

নদ্বর ইবনে সুমাইল বলেন- “লোক ফিকহ সম্পর্কে অনবহিত এবং ঘুমন্ত ছিল। ইমাম আবু হানিফাই ফিকহ’র বর্ণনা স্পষ্ট এবং খোলাসা করে তাদেরকে জাগ্রত করেছেন।”  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠাঃ  ৭৫, আরবী, পৃষ্ঠাঃ ৭৮


মিস’আর ইবনে কুদাম (رحمة الله) বলেন- “যে ব্যক্তি ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)কে নিজের এবং আল্লাহর মাঝে মধ্যস্থতা বানায়, তবে আমি আশা রাখি যে, তার কোন ভয় থাকবে না এবং সে সতর্কতায় ঘাটতি করেনি। কেউ তাকে বলল, আপনি অন্য কারো মত ত্যাগ করে সর্বদা ইমাম আবু হানিফার মত গ্রহণ করেন কেন? উত্তরে তিনি বলেন-তাঁর মত বিশুদ্ধ হওয়ার কারণে। তাঁর মতের চেয়ে উত্তম মত আন, আমি তাঁর মত থেকে ফিরে আসবো।”  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান,পৃষ্ঠাঃ  ৭৫, আরবী, পৃষ্ঠাঃ ৭৮

 

ঈসা ইবনে ইউনুছ বলেন-“কোন ব্যক্তি যদি ইমাম আবু হানিফার শানে বেয়াদবী করে, তোমরা অবশ্যই তার কথা বিশ্বাস করবেনা। খোদার কসম! আমি কাউকে তাঁর থেকে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ ফকীহ দেখিনি।”  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠাঃ  ৭৫, আরবী, পৃষ্ঠাঃ ৭৮

 

ইমাম আ’মশ (رحمة الله) কে একটি প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- “এর উত্তম জবাব দিতে পারবে ইমাম আবু হানিফা। আমার বিশ্বাস যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইলমে বরকত দিয়েছেন।”  

➥      ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠাঃ ৭৬, আরবী, পৃষ্ঠাঃ ৭৯

 

ওয়াকী ইবনুল জাররাহ (رحمة الله) বলেন-“আমি ইমাম সাহেব থেকে কোন বড় ফকীহ এবং উত্তম ভাবে নামায আদায়কারী দেখিনি।”  

➥      ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, উর্দু, পৃষ্ঠাঃ ৭৭, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৮০

 

হাফিয ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন (رحمة الله) বলেন-“চারজন ব্যক্তি হলেন ফকীহ। ১.ইমাম আবু হানিফা, ২.সুফিয়ান, ৩.মালিক ও ৪.আওযাঈ। আমার মতে হামযার কিরাতই প্রকৃত কিরাত আর ইমাম আবু হানিফার ফিকহ-ই হলো প্রকৃত ফিকহ। লোকেরাও তা মনে করে। কেউ তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, সুফিয়ান সওরী কি ইমাম আবু হানিফা থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন? উত্তরে তিনি বলেন-হ্যাঁ, তিনি ‘সিকাহ’ ছিলেন এবং ফিকহ ও হাদিসে বিশ্বস্ত ছিলেন, আল্লাহর দ্বীনের আমানতদার ছিলেন।”  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান,, উর্দু, পৃষ্ঠাঃ  ৭৭, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৮১


হাফিয আব্দুল আযিয ইবনে আবি রাওয়াদ বলেন, যে ব্যক্তি ইমাম আবু হানিফাকে ভালবাসে সে সুন্নী এবং সে তাঁর শত্রুতা পোষণ করে সে বদমাযহাবী।  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান,, উর্দু, পৃষ্ঠাঃ  ৭১, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৮১ 

 

ইমাম ইব্রাহীম ইবনে মুয়াবিয়া দ্বারীর বলেন-“ইমাম আবু হানিফার ভালবাসা পোষণ করা দ্বীনের পূর্ণতা ও সুন্নত। তিনি ন্যায়পরায়নের প্রশংসা করতেন এবং ন্যায় ও যুক্তিসংগত কথা বলতেন। তিনি লোকের জন্য ইলমের রাস্তা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং এর মুশকিলাতকে সহজ করে দিয়েছেন।”  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠাঃ  ৭৯, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৮২

 

আসাদ ইবনে হাকীম বলেন- “কেবল জাহিল-অজ্ঞ লোকেরাই আবু হানিফার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে।”  

➥      ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠাঃ  ৭৯, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৮২

 

আবু সোলায়মান বলেন-“ইমাম আবু হানিফা এক বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তাঁর কথায় ঐ ব্যক্তিই কটুক্তি করতে পারে, যে তাঁর কথা বুঝার যোগ্যতা রাখেনা।”  

➥      ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠাঃ  ৭৯, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৮২

 

ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) বলেন-“একদা ইমাম মালিক (رحمة الله) কে কেউ প্রশ্ন করল যে, আপনি ইমাম আবু হানিফাকে দেখেছেন? উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ। আমি তাঁকে এমন ব্যক্তি হিসেবে পেয়েছি যে, যদি তিনি এই খুঁটিকে স্বর্ণ সাব্যস্ত করতে চান, তবে স্বীয় ইলম দ্বারা এরূপ করতে পারেন।” 

    খতীব বাগদাদী (رحمة الله) (৪৬৩হিঃ), তারীখে বাগদাদ, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ৩৩৮

 

ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) বলেন,

 اني لا تبرك بابي حنيفة واجئ الي قبره فاذا عرضت لي حاجة صليت ركعتين وسئلت الله تعالي عند قبره فتقضي سريعا وذكر بعض من كتب علي المناهج ان الشافعي صلي الصبح عند قبره فلم يقنت فقيل له لم قال تأ د با مع صاحب هذا القبر 

“আমি ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) থেকে বরকত হাসিল করি এবং তাঁর কবরে যেতাম। যখন আমার কোন প্রয়োজন বা সমস্যা হতো আমি দু’রাকাআত নামায পড়তাম এবং তাঁর কবরের নিকট আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম। ফলে দ্রুত সমস্য সমাধান হয়ে যেত। কেউ কেউ বলেছেন-ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) ইমাম আ‘যমের কবরের পাশে ফজরের নামায আদায় করেন এবং দোয়া কুনুত পড়েননি। কেউ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন-এই কবরওয়ালার সম্মানার্থে।”  

➥      আল্লামা শামী (رحمة الله) (১৩০৬হিঃ), রদ্দুল মোহতার, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ১৩৪
Top