বিষয় নং-৫: আল্লাহ্ তা‘য়ালার সাথে আমার বিশেষ মুহুর্ত:


‘এসব হাদীস নয়” গ্রন্থের ১৩৩ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুতীউর রহমান এ গ্রহণযোগ্য হাদিসকে জাল হাদিস প্রমাণ করার হীন চেষ্টা করেছেন এবং সরলমনা মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন, তেমনি ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৪৬০ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তিনি এটি একটি জাল কথা বলে উল্লেখ করেছন।


(১) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) যা বর্ণনা করেছেন তা হলো-

حديث : لِي مَعَ اللَّهِ وَقْتٌ لَا يَسَعُنِي فِيهِ مَلَكٌ مُقَرَّبٌ، وَلَا نَبِيٌّ مُرْسَلٌ، يَذْكَرُهُ الصُّوفِيَّةُ كثيرا وَهُوَ رِسَالَة فِي الْقُشَيْرِيِّ لَكِنَّ بِلَفْظِ لِي وَقْتٌ لَا يَسَعُنِي فِيهِ غَيْرُ رَبِّي) قُلْتُ وَيُؤْخَذُ مِنْهُ أَنَّهُ أَرَادَ بِالْمَلَكِ الْمُقَرَّبِ جِبْرِيلَ وَبِالنَّبِيِّ الْمُرْسَلِ نَفْسَهُ الْجَلِيلِ -

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালার সাথে আমার এমন সময় নির্ধারিত আছে, তখন কোন নৈকট্যশীল ফেরেশতা বা কোন নবীয়ে মুরসাল আমার নিকট (আসার সুযোগ) পায় না। উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন, এটা সুফিয়ানে কেরাম অনেকে বর্ণনা করে থাকেন এবং ইমাম কুশাইরী (رحمة الله) তাঁর ‘‘আর-রিসালা’ গ্রন্থে এভাবে বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালার সাথে আমার এমন একটি সময় রয়েছে, তখন ‘আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ আমার নিকট আসতে পারে না।’’ ২৬

২৬. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুআ, পৃ. ১০২, আল্লামা সাখাভী: মাকাসিদুল হাসানা, ৪১০ পৃ. হা/৯২৪, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১৭৩-৭৪ পৃ. হা/২১৫৭


❏ তাফসীরে রুহুল বায়ানে সূরা মারিয়ামের ১ নং আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন,  রাসূল (ﷺ) এর তিনটি সুরত :

(ক) সুরতে বাশারী : যেমন সূরা কাহাফের ১১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে-

قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى

এ আয়াতে মানবীয় প্রকৃতির কথাই উল্লেখিত হয়েছে।

(খ) তার দ্বিতীয় সুরত হলো হযরত আবু কাতাদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেন 

সুরতে হাক্কীঃ

قَالَ أَبُو سَلَمَةَ: قَالَ أَبُو قَتَادَةَ ؓ : قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: مَنْ رَآنِي فَقَدْ رَأَى الحَقَّ

-‘‘যে আমাকে দেখলো সে হক তা‘য়ালাকেই দেখল।’’ ২৭

২৭. বুখারী, আস্-সহীহ, ১/৩৮ পৃ. হা/৬৯৯৬ 


(গ) সুরতে মালাকী : সুরতে মালাকীর প্রমাণ হলো রাসূল (ﷺ) এর যে হাদিসটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেটি,  যেমন-

لِي مَعَ اللَّهِ وَقْتٌ لَا يَسَعُنِي فِيهِ مَلَكٌ مُقَرَّبٌ، وَلَا نَبِيٌّ مُرْسَلٌ،

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালার সাথে আমার এমন সময় নির্ধারিত আছে,  তখন কোন নৈকট্যশীল ফেরেশতা বা কোন নবীয়ে মুরসাল আমার নিকট (আসার সুযোগ) পায় না।’’২৮

২৮. তাফসীরে রুহুল বায়ান - ৫ম খণ্ড : ৩১৫ পৃ : সূরা মারিয়াম : ১ নং আয়াত।


‘তাফসীরে রুহুল বায়ান’ গ্রন্থকার উক্ত রেওয়াতেকে হাদিস বা রাসূল (ﷺ) এর বাণী হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।


❏ উক্ত হাদিসটি বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মানাবী (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ফয়যুল কাদীর” এ এভাবে বর্ণনা করেন-

قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: لِي مَعَ اللَّهِ وَقْتٌ لَا يَسَعُ فِيهِ مَلَكٌ مُقَرَّبٌ وَلَا نَبِيٌّ مُرْسَلٌ

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালার সাথে আমার (ঘনিষ্ট) সময় নির্ধারণ যে, সে স্তরে পৌঁছলে আমার নিকট আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য কোন ফিরিশতা বা অন্য কোন মুরসাল নবীরও পৌঁছার সাধ্য নেই।’’ ২৯

২৯. ইমাম মানাবী : ফয়জুল কাদীর : ৪/৬ পৃষ্ঠা : হা/৪৩৭৭


❏ উক্ত হাদিসের সমর্থনে ইমাম সাখাভী (رحمة الله) এবং আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) রাসূল (ﷺ) এর সাথে আল্লাহর একটি বিশেষ সময়ের কথা নিম্নের সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণ করেছেন।

ويشبه أن يكون معنى ما للترمذي في الشمائل، ولابن راهويه في مسنده، عن علي في حديث طويل: كان صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذا أتى منزله جزأ دخوله ثلاثة أجزاء: جزءا لله تعالى، وجزءا لأهله، وجزءا لنفسه، ثم جزأ جزأه بينه وبين الناس.

-‘‘এ হাদিসটির বিষয়ের সাথে সাদৃশ্য ইমাম তিরমিযী তার শামায়েলে তিরমিযীতে এবং ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াই (رحمة الله) তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেন,  হাদিসের প্রথম অংশ হলো : রাসূল (ﷺ) যখন আপন গৃহে প্রবেশ করতেন তখন তিনি তার সময়কে কয়েকটি অংশে বন্টন করতেন, তার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় খাস আল্লাহর জন্য ও নির্দিষ্ট একটি সময়ের অংশ পরিবারের জন্য, নির্দিষ্ট একটি সময়ের অংশ নিজের জন্য এবং অতঃপর বাকী সময়ের অংশ সাহাবী ও অন্য মানুষের জন্য।’’  ৩০

৩০. 

ক. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৯২৬ পৃ : হা/৩৬৩ 

খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা, ২/১৭৩ পৃ. হা/২১৫৭


এ হাদিসের সনদ নিয়ে উক্ত দুই মুহাদ্দিস কোনো সমালোচনা করেননি।

অতএব উক্ত হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হল, সহীহ হাদিস দ্বারা আল্লাহ্ তা‘য়ালার সাথে রাসূল (ﷺ) এর বিশেষ একটি মুহুর্ত রয়েছে।

Top