চতুর্থ পরিচ্ছেদ
(ইলমে গায়ব সম্পর্কে বিশিষ্ট উলামায়ে উম্মতের অভিমত)
❏‘মাদারেজুন নবুয়াত’ গ্রন্থের ভূমিকায় শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহঃ) বলেন-
هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
-‘‘তিনিই প্রথম তিনিই সর্বশেষ, তিনিই দৃশ্যমান, তিনিই গোপন এবং তিনি প্রত্যেক কিছু জানেন।’’
{সূরাঃ হাদীদ, আয়াতঃ ৩, পারাঃ ২৭}
❏একথাগুলো আল্লাহ তা’আলার প্রশংসায় যেমন বলা যায়, আবার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর গুণকীর্তনেও বলা যায়। যেমন তিনি (দেহলবী) বলেন-
دوى مصطفے صلے الله عليه وسلم دانااست بهمه چيزے ازشيونات ذات الهى واحكام وصفات حق واسماء وافعال واثار وبجميع علوم ظاهر وباطن واول واخر احاطه نموده ومصداق فوق كل ذى علم عليم شد
অর্থাৎ- হুযুর আলাইহিস সালাম সবকিছুর জ্ঞান রাখেন। এমনকি আল্লাহ তা’আলার স্বত্ত্বগত বিষয়াদি, গুণাবলী, বিধিবিধান, বিভিন্ন নাম, যাবতীয় কার্যাবলী, বিবিধ নিদর্শন, সমস্ত দৃশ্য ও অদৃশ্য বিষয়াদি, আদি অন্ত প্রভৃতির যাবতীয় জ্ঞান তাঁরই করায়ত্ত্ব। ‘প্রত্যেক জ্ঞানীর উপর অপেক্ষাকৃত বেশী জ্ঞানী বিদ্যমান’ প্রবচন তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীঃ মাদারিজুন নবুয়তঃ ১/২ -৩ পৃ.}
❏উক্ত ‘মাদারেজ’ গ্রন্থের প্রথম খন্ডের পঞ্চম অধ্যায়ে ‘হুযুর আলাইহিস সালামের ফযীলতের বর্ণনা’ প্রসঙ্গে ১৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-
اززمان ادم تا نفخه بروے عليه السلام منكثف ساختند تاهمه احوال اورا از اول واخر معلوم گردد ويار ان خود رانيز بعضے احوال خبرداد
অর্থাৎ- হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া পর্যন্ত সব কিছুই হুযুর আলাইহিস সালামের কাছে প্রতিভাত করা হয়েছে, যাতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর অবস্থাদি সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত হন। তিনি এ ধরনের কিছু কিছু বিষয়ের সংবাদ সাহাবায়ে কিরামকেও দিয়েছেন।
{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীঃ মাদারিজুন নবুয়তঃ ১/১৪৪ পৃ}
❏আল্লামা যুরকানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়ায়’ বলেছেন-
وَقَدْ تَوَاتَرَتِ الْاَخْبَارُ وَاتَّفَقَتْ مَعَانِيْهَا عَلَى اِطِّلاَعِهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ عَلَى الْغَيْبِ وَلَا يُنَافِى الْاَيَتِ الدَّالَّةِ عَلَى اَنَّهُ لاَ يَعْلَمُ الْغَيْبَ اِلاَّاللهُ لِاَنَّ الْمُنْفِىَّ عِلْمُهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ مِنْ غَيْرِ وَاسِطَةٍ اَمَّا اِطِّلاَعُهُ عَلَيْهِ بِاَعْلاَمِ اللهِ فَمُحَقَّقٌُ بِقَوْلِهِ تَعَالَى اِلاَّمَنِ ارْتَضَى مِنْ رَّسُوْلٍ
-‘‘অগণিত বর্ণনাকারীর সমর্থনপুষ্ট হাদীছ সমূহের সর্বসম্মত ভাবার্থে একথা বলা হয়েছে যে গায়ব সম্পর্কে হুযুর আলাইহিস সালাম অবগত এবং মাসআলাটি সে সব আয়াতের পরিপন্থী নয়, যেগুলো দ্বারা বোঝা যায় যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ গায়ব জানে না। কেননা উক্ত আয়াত সমূহে যে বিষয়টির অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়েছে, তা’হলো মাধ্যম ছাড়া অর্জিত জ্ঞান (স্বত্বগত জ্ঞান) আর হুযুর আলাইহিস সালামের খোদা প্রদত্ত জ্ঞানের বলে গায়ব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ব্যাপারটি আল্লাহর কালামের সে আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, যেখানে বলা হয়েছে- ارْتَضَى مِنْ رَّسُوْلٍ ‘কেবল তাঁর পছন্দনীয় রাসূলকে অদৃশ্য বিষয়াদির জ্ঞান দান করা হয়’।’’
❏‘শিফা শরীফে’ ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বলেন, (খরপূতী শরহে কসিদায়ে বোর্দা থেকে সংগৃহীত।)
خَصَّ اللهُ تَعَالَى بِهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ بِالْاِطِّلاَعِ عَلَى جَمِيعِ مَصَالِحِ الدُّنْيَا وَالدِّيْنِ وَمَصَالِحِ اُمَّتِهِ وَمَاكَانَ فِى اَلْاُمَمِ وَمَا سَيَكُوْنُ فِىْ اُمَّتِهِ مِنَ النَّقِيْرِ وَالْقِطْمِيْرِ وَعَلَى جَمِيْعِ فُنَوْنِ الْمَعَارِفِ كَاَحْوَالِ الْقَلْبِ وَالْفَرَائِضِ وَالْعِبَادَةِ وَالْحِسَابِ
-‘‘আল্লাহ তা’আলা হুযুর আলাইহিস সালামকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে দ্বীন-দুনিয়ার সমস্ত মঙ্গলময় বিষয়াদির জ্ঞান দান করেন। নিজ উম্মতের মঙ্গলজনক বিষয়, আগের উম্মতগণের ঘটনাবলী এবং নিজ উম্মতের নগণ্য হতে নগণ্যতর ঘটনা সম্পর্কেও তাঁকে অবহিত করেছে; মারিফাতের সমস্ত বিষয় তথা অন্তরের অবস্থাসমূহ, ফরয কার্যাবলী ইবাদতসমূহ এবং হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি বিষয়েরও তাঁকে অবহিত করেছেন।
{মোল্লা আলী ক্কারীঃ শরহে কাসীদায়ে বুরাদাঃ ১০ পৃ. }
❏‘কাসীদায়ে বুরদায়’ আছে-
فَاِنَّ مِنْ جَوْدِكَ الدُّنْيَا وَضَرَّتَهَا – وَمِنْ عُلُوْمِكَ عِلْمُ اللَّوْحِ وَالْقَلَمِ
-‘‘হে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আপনার বদান্যতায় দুনিয়া ও আখিরাতের অস্তিত্ব। লওহে মাহফুজ ও ‘কলমের’ জ্ঞান আপনার জ্ঞান ভান্ডারের কিয়দাংশ মাত্র।’’
❏আল্লামা ইব্রাহীম বাজুরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) এর ‘শরহে কসীদায়ে বোরদায়' এ পংক্তিদ্বয়ের তাৎপর্য বিশেষণে লিখা হয়েছে।
فَاِنَّ قِيْلَ اِذَاكَانَ عِلْمُ اللَّوْحِ وَالْقَلَمِ بَعْضَ عُلُوْمِهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَمَا الْبَعْضُ الْاَخَرُ اُجِيْبُ بِاَنَّ الْبَعْضَ الْاَخَرَ هُوَ مَا اَخْبَرَهُ اللهُ تَعَالَى مِنْ اَحْوَالِ الْاَخِرَةِ لِاَنَّ الْقَلَمَ اِنَّمَا كَتَبَ فِى اللَّوْحِ مَاهُوَ كَاِئْنُ اِلَى يَوْمِ الْقِيَمَةِ
অর্থাৎ- যদি লওহে মাহফুজ ও কলমের জ্ঞানকে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের কিয়দাংশ বলা হয়, তাহলে তাঁর জ্ঞানের অন্যান্য অংশগুলো দ্বারা কোন ধরনের জ্ঞানকে বোঝানো হয়েছে? এর উত্তরে বলা হয়েছে যে উহা হলো পরকালের অবস্থাদির জ্ঞান, যা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা তাঁকে অবহিত করেছেন। কেননা, কলম দিয়ে লওহে মাহফুজে কেবল ঐ সকল বিষয়ই লিখা হয়েছে, যা’ কিছু কিয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে।
❏মোল্লা আলী কারী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) حل العقده شرح فصيده برده নামক গ্রন্থে উপরোক্ত পংক্তিদ্বয়ের মর্ম উদঘাটন করতে গিয়ে বলেছেন-
وَكَوْنُ عُلُوْمَهُمَا مِنْ عُلُوْمِهِ عَلَيْهِه السَّلاَمُ اَنَّ عُلُوْمَهُ تَتَنَوَّعُ اِلَى الْكُلِّيَاتِ وَالْجُزْ ئِيَّاتِ وَحَقَائِقَ وَمُعَارِفَ وَعَوَارِفَ تَتَعَلَّقُ بِالذَّاتِ وَالصِّفَاتِ وَعُلُوْ مَهُمَا مِنْ عُلُوْمِهِ يَكُوْنُ مَايَكُوْنُ نَهْرًا مِنْ بُحُوْرِ عِلْمِهِ وَحَرْفًا مِنْ سُطُوْرِ عِلْمِهِ
অর্থাৎ- লওহে মাহফুজ ও ‘কলমের’ জ্ঞানকে হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের কিয়দাংশ এ জন্যই বলা হয় যে, হুযুরের (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) জ্ঞানকে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করা যেতে পারে। যেমন তাঁর জ্ঞান বস্তু বা বিষয়ের একক, সামগ্রিক সত্ত্বা, মৌলিক সত্ত্বা ও খোদার পরিচিতি, এমন কি খোদার সত্ত্বা গুণাবলী সম্পর্কিত পরিচিতিকেও পরিবেষ্টন করে রয়েছে। সুতরাং লওহ ও কলমের জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমুদ্রের একটি খালতুল্য কিংবা তাঁর জ্ঞানের দপ্তরের এক অক্ষর সদৃশ মাত্র।’’
{মোল্লা আলী ক্কারীঃ শরহে কাসীদায়ে বুরাদাঃ ১১৭ পৃ}
❏উল্লেখিত উদ্ধৃতি সমূহ থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, লওহ ও ‘কলমের’ বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান, যা’র সম্পর্কে কুরআনে ইরশাদ করা হয়েছে-
وَلاَرَطَبٍ وَلاَ يَابِسٍ اِلاَّ فِىْ كِتَابٍ مُّبِيْنٍ
অর্থাৎ- ভিজা, শুকরা, এমন কোন বস্তু নেই, যা’ লওহে মাহফুজে উল্লেখ করা হয়নি। হুযুর আলাইহিস সালামের বহুমুখী জ্ঞান সমুদ্রের
{সূরাঃ আনআমঃ আয়াতঃ ৫৯, পারাঃ ৭}
এক ফোঁটা মাত্র। তাহলে বোঝা গেল যে পূর্বাপর সব বিষয়ের জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান ভান্ডারের একটি বিন্দু মাত্র।
❏‘কসীদায়ে বোর্দার সুপ্রসিদ্ধ লিখক ইমাম বু’চিরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাঁর অন্য এক কাসিদায় বলেছেন-
وَسِعَ الْعَالَمِيْنَ عِلْمًا وَحكْمًا – فَهُوَ بَحْرٌُ لَّمْ تَعِيْهَا الْاَعْبَاءُ
অর্থাৎ- হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান-বিজ্ঞান সমগ্র জগতকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। তিনি হচ্ছেন এমন এক সাগর, যা’ কে অন্যান্য পরিবেষ্টনকারীরাও পরিবেষ্টন করতে পারেন নি।
{ইমাম শরফুদ্দীন বুছুরীঃ কাসীদায়ে হামীযাহ ফি মাদহে খায়রে বারিয়্যাহঃ পৃ. ১৮‘}
❏শাইখ সুলাইমান জুমাল উক্ত পংক্তিদ্বয়ের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘ফতুহাতে আহমদীয়া’ গ্রন্থে লিখেছেন-
اَىْ وَسِعَ عِلْمُهُ عُلُوْمَ الْعَلَمِيْنَ الْاِنْسِ وَالْجِنِّ وَالْمَلَئِكَةِ لِاَنَّ اللهَ تَعَالَى اَطْلَعَهُ عَلَى الْعَالَمِ كُلِّهِ فَعَلَّمَ عِلْمَ الْاَوَّلِيْنَ وَاْلاَخِرِيْنَ وَمَاكَانَ وَمَا يَكُوْنُ وَحَسْبُكَ عِلْمُهُ عِلْمُ الْقُرْ اَنِ وَقَدْ قَالَ اللهُ تَعَالَى مَافَرَّطْنَا فِى الْكِتَبِ مِنْ شَيْئٍ
-‘‘তাঁর জ্ঞান সমগ্র জগত তথা জীন-ইনসান এবং ফিরিশতাগণের ব্যাপক জ্ঞানকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। কেননা মহান আল্লাহ তাঁকে সারা জগত সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর এ ব্যাপক জ্ঞানের জন্য কুরআনের জ্ঞানই যথেষ্ট।
❏আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
مَافَرًطْنَا فِى الْكِتَابِ مِنْ شَيْئٍ
অর্থাৎ আমি এ কিতাবে কোন কিছু বাদ দিইনি। ইমাম
❏ইবনে হাজর মক্কী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) উক্ত পংক্তিদ্বয়ের ব্যাখ্যায় اَفْضَلُ الْقُرَى নামক কিতাবে লিখেছেন-
لِاَنَّ اللهَ تَعَالَى اَطْلَعَهُ عَلَى الْعَالَمِ فَعَلِمَ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاَخِرِيْنَ وَمَا كَانَ وَمَا يَكُوْنُ
অর্থাৎ- মহান আল্লাহ হুযুর আলাইহিস সালামকে সমস্ত জগত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। সুতরাং, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) পূর্বব র্তী ও পরব র্তী বিষয়সমূহ ও যা কিছু হয়েছে এবং যা কিছু হবে সবকিছুই জেনে নিয়েছেন।
{ইবনে হাজ্জার মক্কীঃ আফজালুল কোররা ১৯-২০ পৃ.}
উক্ত উদ্ধৃতিসমূহ থেকে বোঝা গেল যে, সমস্ত বিশ্ববাসীর জ্ঞান হুুযুর আলাইহিস সালামকে দেয়া হয়েছে। বিশ্ববাসীদের মধ্যে হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) ও রয়েছেন।
ফিরিশতাগণ, মৃত্যুর ফিরিশতা ও শয়তানও অন্তভুর্ক্ত আছে। উল্লেখ্য যে, মৃত্যুর ফিরিশতা ও শয়তানের ইলমে গায়ব দেওবন্দীরাও স্বীকার করে।
❏ইমাম ‘বু’চিরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ‘কসীদায়ে বোর্দায়’ উল্লেখ করেছেন-
وَكُلُّهُمْ مِنْ رَّسُوْلِ اللهِ مَلْيَمِسٌُ-غَرْفًا مِّنَ الْبَحْرِ اَوْ رَشْفًا مِنَ الدِّيْمِ
অর্থাৎ- সবাই হুযুর আলাইহিস সালামের নিকট থেকে জ্ঞান আহরণ করে থাকেন, যেমন কেউ সমুদ্র থেকে কলসি ভরে বা প্রবল বৃষ্টি ধারার ছিটে ফেঁাটা থেকে পানি সংগ্রহ করে।
{শরফুদ্দীন বুছুরীঃ কাসীদায়ে বুরদাঃ ২-৩পৃ}
❏আল্লামা খর-পূতী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) শরহে কছীদায়ে বোর্দায় এ পংক্তিদ্বয়ের তাৎপর্য বিশেষণ লিখেছেন-
اِنَّ جَمِيْعَ الْاَنْبِيَآءِ كُلُّ وَاحِدٍ مِّنْهُمْ طَلَبُوْا وَاَخَذُوا الْعِلْمَ مِنْ عِلْمِهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ الَّذِىْ كَالْبَحْرِ فِى السَّعَةِ وَالْكَرَمَ مِنْ كَرَمِهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ الَّذِىْ هُوَ كَالْدِّيَمِ لِاَنَّهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ مُفِيْضٌُ وَهُمْ مُصْتَفَا ضُوْنَ لِاَنَّهُ تَعَالَى خَلَقَ اِبْتِدَاءً رُوْحَهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ وَوَضَعَ فِيْهِ عُلُوْمَ الْاَنْبِيَاءِ وَعِلْمَ مَاكَانَ وَمَايَكُوْنُ ثُمَّ خَلَقَهُمْ فَاَخَذُوْا عُلُوْمَهُمْ مِنْهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ
অর্থাৎ- প্রত্যেক নবী হুযুর আলাইহিস সালামের সে জ্ঞান ভান্ডার থেকে জ্ঞান চেয়ে নিয়েছেন, যা’ বিস্তৃতি ও ব্যাপকতার দিক দিয়ে বিশাল সমুদ্রের মত এবং সবাই তাঁর সে করুণারাশি থেকে করুণা প্রাপ্ত হয়েছে, যা’ অঝোর বারিধারার মত। কেননা, হুযুর আলাইহিস সালাম হলেন ফয়েযদাতা আর অন্যান্য নবীগণ হলেন ফয়েয গ্রহীতা। মহাপ্রভু সর্বপ্রথম হুযুর আলাইহিস সালামের রুহ মুবারক সৃষ্টি করে তাতে নবীগণের ও পূর্বাপর প্রত্যেক বিষয়ের জ্ঞান রাশি সঞ্চিত রাখেন। অতঃপর অন্যান্য রাসূলগণকে সৃষ্টি করেন। সুতরাং তারা সবাই নিজ নিজ জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালাম থেকে সংগ্রহ করেছেন।
{আল্লামা খরপূতীঃ আসীরাতুল-তাহদীদ শরহে কাসীদায়ে বুরদাঃ ৮৩ পৃ.}
❏হযরত হাফিজ সোলাইমান (রহঃ) ‘ইবরীয শরীফের’ ২৫৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
وَعِنْدَنَا يَعْلَمُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ مِنَ الْعَرْشِ اِلَى الْفَرْسِ وَيَطَّلِعُ عَلَى جَمِيْعِ مَافِيْهَا وَهَذَ الْعُلُوْمُ بِالنِّسْبَةِ اِلَيْهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ كَاَلْفٍ مِنْ سِتِّيْنَ جُزْءُ اَلَّتِىْ هِىَ الْقُرْاَنَ الْعَزِيْزُ
-‘‘আমাদের মতে হুযুর আলাইহিস সালাম আরশ থেকে পাতালপুরী পর্যন্ত বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন; এগুলোর মধ্যে যা’ কিছু আছে, তা’রও খবর রাখেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) উপরে আর কেউ নেই। এ ব্যাপক জ্ঞানও হুযুর (আলাইহিস সালাম) এর জ্ঞানের পরিধির তুলনামূলক সম্পর্ক হচ্ছে এরূপ, যেরূপ ষাট অংশ বিশিষ্ট কুরআনের তুলনায় ‘আলিফ’ অক্ষরটি।
❏প্রখ্যাত ইমাম কাস্তাল্লানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ‘মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া’ শরীফে’ উল্লেখ করেন-
اَلنَّبُوَّةُ مَاخُوْذَةٌ مِنْ النَّبَّاءِ بِمَعْنِىَ الْخَبَرِ اَىْ اَطْلَعَهُ اللهُ عَلَى الْغَيْبِ
نَبُوَّةُ শব্দটি نَبَا শব্দ প্রকৃতি থেকে উদ্ভুত, যার অর্থ হচ্ছে খবর বা জ্ঞান। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তাঁকে অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত করেছেন।’’
{ইমাম কুস্তালানীঃ মায়েহেবে লাদুন্নীয়াঃ মাকসাদ ২য়ঃ ২/৪৫-৪৬ পৃ.}
❏‘মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া’র দ্বিতীয় খণ্ডে ১৯২ পৃষ্ঠায় اَلْقِسْمُ الثَّاَنِىْ فِيْمَا لَخْبَرَبِهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ مِنَ الْغُيُوْبِ শীর্ষক আলোচনায় লিখা হয়েছে-
لاَشَكَّ اَنَّ اللهَ تَعَالَى قَدْ اَطْلَعَهُ عَلَي اَزِيْدَ مِنْ ذَلِكَ وَاَلْقَى عَلَيْهِ عِلْمَ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاَخِرِيْنَ
-‘‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে আল্লাহ তা’আলা হুযুর আলাইহিস সালামকে এর থেকেও বেশী বিষয়সমূহ সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তাঁর কাছে পূর্বব র্তী ও পরব র্তী জ্ঞানীদের সমুদয় জ্ঞান অর্পণ করেছেন।’’
❏হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাঁর ‘মকতুবাত শরীফের’ প্রথম খন্ডের ৩১০ নং মকতুবে বলেছেন-
هر علم كه مخصوص به اوست سبحانه خاص رسل را اطلاع مى بخشند
অর্থাৎ- যে জ্ঞান আল্লাহর জন্য বিশেষরূপে নির্ধারিত, সে জ্ঞান কেবল বিশেষ রাসূলগণকে জ্ঞাত করা হয়।
❏‘মাদারেজুন নবুয়াতের’ প্রথম খন্ডে উল্লেখিত আছে-
ازبعض صلحاء ازاهل فضل شنيده كه بعضے از عرفا كتابے نوشته اند اثبات كرده اند كه اں حضرت راتمام علوم الهى معلوم ساخته بودند وايں سخن بظاهر مهالف بسيارے ازادله است تاقائل آںچه قصد كرده باشد
অর্থাৎ- কোন পূণ্যাত্মা আলেমের মুখে শুনা গেছে যে, কোন আরেফ বা খোদার পরিচয় প্রাপ্ত ব্যক্তি একটি কিতাব লিখেছেন। সেখানে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, আল্লাহ তা’আলার সমস্ত জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামকে দান করা হয়েছে। এ কথাটি আপাতঃ দৃষ্টিতে অনেক দলীল প্রমাণের পরিপন্থী। জানিনা, এরূপ উক্তি থেকে বক্তা কি বোঝাতে চেয়েছেন।
{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীঃ মাদারেজুন নবুয়তঃ ১ম খন্ড।}
উপরোক্ত উক্তিটি এখানে এজন্য উল্লেখ করা হলো যে কোন কোন লোক হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানকে আল্লাহ তা’আলার জ্ঞানের সমপরিমাণ বলে বিশ্বাস করে; শুধু একথা স্বীকার করেন যে খোদার জ্ঞান সত্ত্বাগত, আর প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর জ্ঞান খোদা প্রদত্ত এই যা পার্থক্য। কিন্তু দেখুন, শাইখ আবদুল হক ছাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাদেরকে মুশরিক বলেন নি, রবং ‘আরিফই’ বলেছেন। এতে বোঝা গেল যে, হুযুর আলাইহিস সালামের জন্য ইলমে গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞান স্বীকার করা শির্ক নয়।
❏‘মীর যাহেদের রেসালা’র ভূমিকায় উল্লেখিত আছে-
كَانَ صَوَادِقُ التَّصْدِيْقَاتِ بِطَبَا ئِعِهَا مُتَوَجِّهَةً اِلَى حَضْرَ تِهِ الْاَقْدَسِ وَحَقَائِقُ التَّصَوُّرَاتِ بِّاَنْفُسِهَا مَائِلَةً اِلَىَ جَنَابَهِ آلْمُقَدَّسِ فَرُوْحُهً الْمُعَلَّى مَرْكَزُ الْمَعْقُوْلاَتِ تَصَوُّرَاتِهَا وَتَصْدِيْقَا تِهَا وَنَفْسُهُ الْعُلْيَامَنْبَعُ الْعَقْلِيَّاتِ نَظَرِيَّاتِهَا وَفِطَرِ يُّاتِهَا
অর্থাৎ- যাবতীয় অবধারণ’ প্রসূত জ্ঞান রাশি স্বভাবতই সেই পবিত্র সত্ত্বাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। আর সামান্য ধারণা সমূহের স্বয়ং ‘জাত্যর্থ সমূহও’ ওই পুতঃপবিত্র সত্ত্বাভিমুখী তাবৎ প্রজ্ঞামূলক বিষয়ের সামান্য ধারণা ও অবধারণ সমূহের কেন্দ্র হচ্ছে তাঁর ই সুমহান রূহ মুবারক। আর প্রজ্ঞার সাথে সম্বন্ধিত বুদ্ধি বৃত্তি নির্ভর ও বুদ্ধি বৃত্তি প্রয়োগ ছাড়া বোধগম্য তাবৎ জ্ঞাতব্য বিষয়ের নির্ধারণী হচ্ছে তাঁরই মহিমান্বিত আত্মসত্ত্বা।
বিঃ দ্রঃ- যুক্তি বিদ্যায় দু’টো ধারণার মধ্যে একটির সাথে অপরটির সম্পর্কের স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপক মানসিক প্রক্রিয়াকে تصديق ‘অবধারণ’ বলা হয়।
বস্তুর মানসিক প্রতিবেদনকে সামান্য ধারণা تصور বলা হয়ে থাকে।
উপজাতিবাচক পদ যা উপজাতির অন্তভুর্ক্ত ব্যক্তিবৃন্দের افراد উপর সমভাবে প্রযোজ্য হয়। তাই حقيقت জাত্যর্থ। যেমন- মানুষ ধারণাটি রহিম, করিম, বকর, যায়দ প্রমুখের উপর সমভাবে প্রযোজ্য।
❏উক্ত রেসালার ব্যাখ্যাগ্রন্থ মাওলানা গোলাম ইয়াহিয়া কর্তৃক রচিত لواءالهدى নামক কিতাবে উক্ত উদ্ধৃতির তাৎপর্য বিশেষণে লিখা হয়েছে
فذا ته عليه السلام جامع بين حميع انحاء العلوم
অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম এর সত্ত্বা্ সর্ব বিধ জ্ঞানের আকর।
সুবাহানাল্লাহ! এ উদ্ধৃতি দ্বারা রহস্যঘেরা যবনিকার উত্থোলন হল। যুক্তিবাদীরাও নবীর উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ও মহান দরবারে মাথা নত করলেন।
❏বাহরুল উলুম মাওলানা আবদুল আলী লখনবী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) মীর যাহেদ রেসালার টীকার ভূমিকায় লিখেছেন-
عَلَّمَهُ عُلُوْمًا مَا احْتَوَى عَلَيْهِ الْعِلْمُ الْاَعْلَى وَمَا اسْتَطَاعَ عَلَى اِحَاطَتِهَا اللَّوْحُ الْاَوْفَى لَمْ يَلِدِ الدَّ هْرُ مِثْلَهُ مِنَ الْاَزَلِ وَلَمْ يُوْلِدْ اِلَى الْاَبَدِ فَلَيْسَ لَهُ مَنْ فِى السَّمَوَاتِ وَالْاَرْضِ كُفُوّا اَحَدٌُ
অর্থাৎ- আল্লাহ তা’আলা হুযুর আলাইহস সালামকে সেই সমস্ত বিষয়ের জ্ঞান দান করেছেন যেগুলো সর্বোচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কলম বা কলমে আলার আওতায়ও আসেনি। লওহে মাহফুজও সেগুলোকে আয়ত্ত্ব করতে পারেনি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর মত কোন কালে কেউ জন্মগ্রহণ করেন নি সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে; আর অনন্তকাল পর্যন্ত কেউ তার সমকক্ষ হবেন না। সমস্ত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কোথাও তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।
❏আল্লামা শুনউয়ারী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) جمع النهاية নামক কিতাবে বলেন-
قَدْ وَارَدَ اَنْ اللهَ تَعَالَى لَمْ يُخْرِج النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ حَتَّى اَطْلَعَهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ
অর্থাৎ- একথা বর্ণিত হয়েছে যে আল্লাহ তা’আলা নবী আলাইহিস সালামকে সর্ব বিষয়ে অবহিত না করে ধরাধাম থেকে নিয়ে যাননি।
{ইমাম আহমদ রেযা খানঃ খালিসুল ই’তিকাদঃ ৭২ পৃ.}
❏শরহে আকায়িদে নসফী গ্রন্থের ১৭৫ পৃষ্ঠায় আছে-
بِالْجُمْلَةِ الْعِلْمُ بِالْغَيْبِ اَمْرٌُ تَفَرَّدَ بِهِ اللهُ تَعَالَىِ لَاسَبِيْلَ اِلَيْهِ لِلْعِبَادِ اِلَّابِاِ عْلاَمٍ مِنْهُ اَوْ اِلْهَا مٍا بِطَرِيْقِ الْمُعْجِزَاتِ اَوِالْكِرَاَمَةِ
-‘‘সার কথা হলো এযে অদৃশ্য বিষয়াবলীর জ্ঞান এমন একটি বিষয়, যার একমাত্র অধিকারী হচ্ছেন খোদা তা’আলা। বান্দাদের পক্ষে ওইগুলো আয়ত্ব করার কোন উপায় নেই, যদি মহান প্রভু মুজিযা বা কারামত স্বরূপ ইলহাম বা ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেন।’’
{সা’দ উদ্দিন মাসউদ তাফ তাযানীঃ শরহে আকায়িদে নসদীঃ ৭৫ পৃ.}
❏সুপ্রসিদ্ধ দুররুল মুখতার গ্রন্থের কিতাবুল হজ্বের প্রারম্ভে আছে-
فُرِضَ الْحَجُّ سَنَةَ تِسْعٍ وَإِنَّمَا أَخَّرَهُ - عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ - لِعَشْرٍ لِعُذْرٍ مَعَ عِلْمِهِ بِبَقَاءِ حَيَاتِهِ لِيُكْمِلَ التَّبْلِيغَ
-‘‘হজ্ব নবম হিজরীতে ফরজ হয়, কিন্তু হুযুর আলাইহিস সালাম বিশেষ কোন কারণে একে দশম হিজরী পর্যন্ত বিলম্বিত করেন। হুযুর আলাইহিস সালাম তার পবিত্র ইহকালীন জীবনের বাকী সময় সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন বিধায় হজ্ব স্থগিত করেছিলেন যাতে ইসলাম প্রচারের কাজ পূর্ণতা লাভ করে।’’
{আলাউদ্দিন হাসকাফীঃ দুররুল মুখতারঃ কিতাবুল হাজ্বঃ ১৫৯ পৃ.}
এ ভাষ্য থেকে বোঝা গেল যে মৃত্যু কখন হবে সে বিষয়ের জ্ঞান পঞ্চজ্ঞানেরই অন্তভুর্ক্ত। কিন্তু হুযুর আলাইহিস সালাম তাঁর ওফাত সম্পর্কে অবগত ছিলেন, জানতেন যে নবম হিজরীতে তাঁর ওফাত হবে না। এ জন্য সে বছর হজ্ব আদায় করেন নি। অথচ হজ্ব ফরজ হওয়ার সাথে সাথে উহ্য আদায় করা একান্ত প্রয়োজন। কেননা আমরা মৃত্যুর খবর রাখি না।
❏আল্লামা খরপুর্তী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) শরহে কসীদায়ে বোর্দায় ইমাম বুচিরী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) রচিত উপরোক্ত পংক্তিদ্বয় প্রসঙ্গে বলেছেন-
وَوَاقِعُوْنَ لَدَيْهِ عِنْدَ حَدِّهِمْ وَفِىْ حَدِيْثٍ يُرْوَى عَنْ مَعَوِيَةَ اَنَّهُ كَانَ يَكُتُبُ بَيْنَ يَدَيْهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَقَالَ لَهُ اَلْقِ الدَّوَاةَ وَحَرِّفِ الْقَلَمَ وَاَقِمِ الْبَاءَ وَفَرِّقِ السِّيْنَ وَلاَتُعَوِّرِ الْمِيْمَ مَعَ اَنَّهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ لَمْ يَكْتُبْ وَلَمْ يَقْرَءْ مِنْ كِتُابِ الْاَوَّلِيْنَ
-‘‘হযরত আমীর মুআবিয়া (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে হাদীছ বর্ণিত আছে যে, তিনি হুযুর আলাইহিস সালামের সামনেই লিখার কাজ করতেন। হুযুর আলাইহিস সালাম তাঁকে বলেছিলেন, দোয়াত এভাবে রাখ, কলমকে ঘুরাও ب বা অক্ষরকে সোজা কর س ‘সীন’ অক্ষরটি পৃথক কর এবং م ‘মীম’ কে বাঁকা করো না। অথচ হুযুর আলাইহিস সালাম লিখার পদ্ধতি শিখেন নি, পূর্বব র্তীদের কোন কিতাবও পড়েন নি।
❏‘তাফসীরে রুহুল বয়ানে’ ولا تخط بيمينك
{{সূরাঃ আনকাবুতঃ আয়াতঃ ৪৮, পারাঃ ২১}
আয়াতটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখা হয়েছে-
كَانَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَعْلَمُ الْخَطُوْطَ وَيُخْبِرُ عَنْهَا
-‘‘হুযুর আলাইহিস সালাম লিখতে জানতেন এবং সে বিষয়ে অপরকেও জ্ঞাত করতেন।’’
{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ৬/৬১০ পৃ.}
এ থেকে প্রমাণিত হল যে হুযুর আলাইহিস সালাম ভালমতে লিখতে জানতেন। এর পূর্ণাঙ্গ গবেষণামূলক বিবরণ আমার রচিত ‘শানে হাবীবুর রহমান বি আয়াতলি কুরআন’ নামক কিভাবে দেখুন।
❏মছনবী শরীফে আছে-
سرمه كن درچشم خاك أوليا ـــ تابه بينى زابتداتاانتها
كاملاں ازدورنامت بشنوند ـــ تابقعرتاروپودت درورند
بلكه پيش اززادن توساله ـــ ديده باشندت بچنديں حالها
حال توداننديك يك موبمو ـــ زانكه پر هستندا زاسرارهو
-‘‘ওলীগণের পদধুলিকে তোমার চোখের সুরমা স্বরূপ গ্রহণ কর, যাতে তোমার আদি অনন্তকালীন অবস্থা দৃষ্টিগোচর হয়। কামিল ওলীগণ অনেক দূর থেকে তোমার কথা শুনতে পান, তাঁরা প্রয়োজন বোধে তোমার অঙ্গ প্রতঙ্গের রন্ধ্রে রন্ধ্রেও প্রবেশ করতে পারেন। তোমার জন্মের বহু পূর্বেই তোমার যাবতীয় অবস্থা অবলোকন করে থাকেন। তোমার যাবতীয় অবস্থা পুরোপুরিভাবে তাঁরা জানেন, কেননা তাঁরা আল্লাহর রহস্যাবলীর ধারক হয়ে থাকে।’’
❏সেই ‘মছনবী শরফে’ মওলানা রুমী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বিধর্মী যুদ্ধ বন্দীদের একটি ঘটনা উল্লেখপূর্বক বলেন যে, হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ ফরমান-
بنگرم سرعلم بينم نهاں ـــ آدم وحوانرسته ازجهاں.
من شمارا وقت ذرات السبت ـــ ديده ام پابسته ومنكوس وپست
ازحدوث آسمان بے عمد ـــ آنچه دانسته بدم افزوں نه شد
-‘‘আমি সমস্ত সৃষ্টি জগতকে সে সময় থেকে দেখে আসছি, তখন আদম ও হাওয়া (আঃ) এর সৃষ্টিও হয়নি। হে বিধর্মী বন্দীগণ, প্রতিশ্রুতি গ্রহণের দিন (মীছাকের দিন) আমি তোমাদেরকে মুমিন ও নামাযীরূপে দেখেছিলাম। তোমাদেরকে এ জন্যই বন্দী করেছি যাতে তোমরা ঈমান আন। খুঁটিবিহীন আসমান ইত্যাদির সৃষ্টি আমি যেরূপ দেখেছি, তার কোনরূপ তারতম্য এখনও পরিলক্ষিত হয়নি।’’
উলামায়ে কিরামের এসব উক্তি থেকে বোঝা গেল যে, আল্লাহ তা’আলা হুযুর আলাইহিস সালামকে সমস্ত নবী ও ফিরিশতা থেকেও বেশী জ্ঞান দান করেছেন। ‘লওহে মাহফুজ’ ও ‘কলমের’ জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞানের এক ফেঁাটা মাত্র। সৃষ্টিজগতের এমন কোন কিছু নেই, যা’ হুযুর আলাইহিস সালামের সত্যদশর্ী দৃষ্টি থেকে গোপন রয়েছে।