৩১. তাফসীর অধ্যায়, 


বাব নং ২৩০. ১.


৩১- كِتَابُ التَّفْسِيْرِ

১- بَابٌ

٥٠٠- حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ أَبِيْ فَرْوَةَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ أَبِي الضُّحَىٰ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ  فِيْ قَوْلِ اللهِ : [الم] {البقرة: ১}، قَالَ: أَنَا اللهُ أَعْلَمُ وَأَرَىٰ.


৫০০. অনুবাদ: হাম্মাদ তার পিতা থেকে, তিনি আবু ফারওয়া থেকে তিনি আতা ইবনে সায়িব থেকে, তিনি আবুদ দোহা থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আল্লাহর বাণী الم এর ব্যাখ্যায় বলেন, এর অর্থ হলো انا الله ، والله اعلم وارى অর্থাৎ আমিই আল্লাহ, আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত ও সর্বদ্রষ্টা।


ব্যাখ্যা: الم হলো হরফে মুকাত্তিয়াত। এগুলোর অর্থ আল্লাহ ও তদীয় রাসূলই ভাল জানেন। এগুলো যে আল্লাহর কালাম এতটুকু বিশ্বাস করাই উম্মতের জন্য যথেষ্ট। কুরআনে বলা হয়েছে, যাদের অন্তরে বক্রতা আছে কেবল তারাই এগুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পেছনে লেগে থাকে। তবে কেউ কেউ এগুলোর অর্থ বর্ণনা করতে চেষ্টা করেছেন। যেমন উপরোক্ত হাদিসে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) الم এর অর্থ বর্ণনা করেছেন। এরূপ অর্থ বর্ণনা করাতে কোন দোষ নেই। 


٥٠١- حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ نُبَيْطٍ، قَالَ: كُنْتُ عِنْدَ الضَّحَّاكِ بْنِ مُزَاحِمٍ، فَسَأَلَهُ رَجُلٌ عَنْ هَذِهِ الْآيَةِ: [إِنَّا نَرَاكَ مِنَ الْـمُحْسِنِيْنَ] {يوسف: ৭৮}، قَالَ: كَانَ إِذَا رَأَىٰ رَجُلًا مُضَيَّقًا عَلَيْهِ وَسَّعَ عَلَيْهِ، وَإِذَا رَأَىٰ مَرِيْضًا قَامَ عَلَيْهِ، وَإِذَا رَأَىٰ مُحْتَاجًا سَأَلَهُ لِقَضَاءِ حَاجَتِهِ.


৫০১. অনুবাদ: হাম্মাদ তার পিতা থেকে, তিনি সালমা ইবনে নুবাইত থেকে, তিনি বলেন, আমি দ্বাহহাক ইবনে মুযাহিমের নিকট ছিলাম। অতঃপর এক ব্যক্তি তাকে  এ আয়াত,انا نراك من المحسنين “নিশ্চয়ই আপনাকে সৎ ও মুহসিন লোকদের অন্তর্ভুক্ত মনে হচ্ছে” সম্পর্কে প্রশ্ন করল যে, হযরত ইউসূফ (আ.)’র মধ্যে কি ইহসান ছিল? তখন তিনি বলেন, যখন তিনি কোন দরিদ্র লোক দেখতেন, তাকে সাহায্য করতেন, যখন কোন অসুস্থ লোক দেখতেন, তখন তার সেবার জন্য এগিয়ে আসতেন আর যখন কোন অভাবগ্রস্থ ভিক্ষুক দেখতেন, তখন তার প্রয়োজন পূরণ করতেন। 

(শুআবুল ঈমান, ৭/৮৮/৯৫৭৯)


ব্যাখ্যা: উপরোক্ত তিনটি বিষয় ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। ইহসান মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। ইহসান মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদা দান করেছে। মুহসিন লোকদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন। 


❏কুরআন মাজীদে বর্ণিত আছে,وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ “তোমরা ইহসান কর। কেননা আল্লাহ তায়ালা ইহসান কারীদেরকে ভালবাসেন।” 

(সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৫)


❏আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,  وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ“নিশ্চয়ই আল্লাহ ইহসানকারীদের সাথে আছেন।” 

(সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৯)


❏আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, هَلْ جَزَاءُ الْإِحْسَانِ إِلَّا الْإِحْسَانُ “ইহসানের পুরস্কার ইহসান ব্যতীত অন্য কিছু নয়?” 

(সূরা রহমান, আয়াত: ৬০)


মূলকথা ইবাদতের চূড়ান্ত পর্যায় হলো ইহসান। তাসাউফের মূল লক্ষ্যই হলো ইহসানের স্তরে উন্নীত হওয়া। এ স্তরে উন্নীত হতে পারলে ইবাদতের স্বাদ লাভ করা যায় এবং আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি থাকে ভালবাসা ও সহানুভূতিশীল। 


٥٠٢- حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ : اتَّقُوْا فِرَاسَةَ الْـمُؤْمِنِ، فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُوْرِ اللهِ تَعَالَىٰ، ثُمَّ قَرَأَ: [إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لآيَاتٍ لِلْمُتَوَسِّمِيْنَ] {الحجر: ৭৫]: الْـمُتَفَرِّسِيْنَ.


৫০২. অনুবাদ: হাম্মাদ তার পিতা থেকে, তিনি আতিয়্যা থেকে, তিনি আবু সাঈদ (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমরা মুমিনের ফেরাসত তথা অন্তর্দৃষ্টিকে ভয় কর। কেননা তারা আল্লাহর নূর দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে। তারপর তিনি তিলাওয়াত করেন,ان فى ذالك لايات للمتوسمين “নিশ্চয়ই এতে রয়েছে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শন।” (সূরা হিজর, আয়াত ৭৫) متوسمين দ্বারা متفرسين তথা দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি অর্থ করা হয়েছে। 

(তিরমিযী, ৫/২৯৮/৩১২৭)


ব্যাখ্যা: আল্লাহর নূর দ্বারা দেখার দু’টি অর্থ হতে পারে। এক. হয়তো মু‘মিন ঈমানের সাহায্যে চেষ্টা প্রচেষ্টা ও সাধনার দ্বারা ভবিষ্যত পরিণতিকে জানতে পারে আবার কোন কোন সময় কারামতের ভিত্তিতে অনেক ঘটনা ও অবস্থা তার নিকট উদঘাটন হয়ে যায়। দুই. অথবা আল্লাহ তায়ালা তাকে সঠিক প্রমাণের আলোকে এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দান করেন। যার ফলে তার মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের পরিণামদর্শিতা ও দূরদর্শিতা সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে সে নিজের জন্য সঠিক পথ জেনে নিতে পারে।


٥٠٣- حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ عَبْدِ الْـمَلِكِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ، فِيْ قَوْلِهِ تَعَالَىٰ : [فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ، عَمَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ] {الحجر: ৯২-৯৩}، قَالَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ.


৫০৩. অনুবাদ: হাম্মাদ তার পিতা থেকে, তিনি আবদুল মালিক থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালার বাণী,فوربك لنسئلنهم اجمعين عما كانوا يعملون “অতঃপর আপনার প্রভূর শপথ! তারা যা আমল করত আমি সবার থেকে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করবো।” দ্বারা لا اله الا الله বুঝানো হয়েছে। 

(মুসনাদে বাযযার, ২/৩৬৯/৭৫৯৬)


٥٠٤- حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ ذَرٍّ، عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  لِـجِبْرِيْلَ : مَالَكَ لَا تَزُوْرُنَا أَكْثَرَ مِمَّا تَزُوْرُ؟ فَأُنْزِلَتْ بَعْدَ لَيَالٍ: [وَمَا نَتَنَزَّلُ إِلا بِأَمْرِ رَبِّكَ لَهُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْنَا وَمَا خَلْفَنَا] {مريم: ৬৪} الْآيَةُ.


৫০৪. অনুবাদ: হাম্মাদ তার পিতা থেকে, তিনি যার থেকে, তিনি সাঈদ ইবনে জুবাইর থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  জিব্রাঈল (আ.) কে বললেন, আপনি আমার সাক্ষাতে আরো অধিকহারে আগমন করেন না কেন? তিনি বলেন, এর কয়েক রাত পর এ আয়াত নাযিল হয়: وما نتنزل الا بامر ربك له ما بين ايدينا وما خلفنا “আমি আপনার প্রভূর নির্দেশ ব্যতীত অবতীর্ণ হইনা। আমাদের সামনে পিছনে যা আছে তা সব তাঁরই জন্য”। 

(সূরা মরিয়ম, আয়াত, ৬৪), (বুখারী, ৪/১৭৬০/৪৪৫৪)


ব্যাখ্যা: বুখারী শরীফে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে অনুরূপ হাদিস বর্ণিত আছে। ইবনে আবি হাতেম (رضي الله عنه)’র মতে এ আয়াত ঐ সময় নাযিল হয় যখন চলি­শ দিন পর্যন্ত অহী নাযিল বন্ধ ছিল এবং রাসূল (ﷺ)  জিব্রাঈল (আ.)’র সাথে সাক্ষাতের অধিক আগ্রহী ও ব্যাকুল ছিলেন।


٥٠٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ أَبِيْ صَالِحٍ، عَنْ أُمِّ هَانِئٍ، قَالَتْ: قُلْتُ: لِرَسُوْلِ اللهِ، مَا كَانَ الْـمُنْكَرُ الَّذِيْ كَانُوْا يَأْتُوْنَ فِيْ نَادِيْهِمْ؟ قَالَ : كَانَ يَخْذِفُوْنَ بِالنَّوَاةِ أَوِ الْـحَصَاةِ، وَيَسْخَرُوْنَ مِنْ أَهْلِ الطَّرِيْقِ.


৫০৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা সিমাক থেকে, তিনি আবু সালেহ থেকে, তিনি উম্মে হানী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)  কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, সেই মন্দ কাজটি কি ছিল যা তারা (লূত সম্প্রদায়) তাদের মজলিসে করতো? উত্তরে তিনি বলেন, তারা মানুষের উপর ফলের বীচি ও পাথর নিক্ষেপ করতো এবং পথিকের সাথে ঠাট্টা করতো। 

(মুসনাদে আহমদ, ৬/৩৪১/২৬৯৩৫)


ব্যাখ্যা: আল্লাহ তায়ালার বাণী وتأتون فى ناديكم المنكر এর মধ্যে منكر এর তাফসীর সম্পর্কে উম্মে হানী (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)  ’র কাছে জিজ্ঞাসা করেন। কাসিম ইবনে মুহাম্মদ (رضي الله عنه) বলেন, তারা মজলিসে বায়ূ ছাড়ত। মুজাহিদ (رضي الله عنه) বলেন, তারা মজলিসে পরস্পর যৌন সম্ভোগ করতো। 


❏আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা পরস্পর থু থু নিক্ষেপ করতো। মোটকথা তাদের মজলিস এ ধরনের অনর্থক কাজকর্ম ও অশ্লীল কথাবার্তার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হতো। আর যখন পরস্পর মিলে বসতো তখন মানবীয় বোধশক্তি হারিয়ে ফেলতো এবং নরপশুতে পরিণত হতো।


٥٠٦- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطِيَّةَ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، أَنَّهُ قَرَأَ عَلَى النَّبِيِّ  : [اللهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِنْ ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَشَيْبَةً] {الروم: ৫৪}، فَرَدَّ عَلَيْهِ، وَقَالَ : قُلْ: مِنْ ضَعْفٍ.


৫০৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতিয়্যা থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করিম (ﷺ)  ’র সামনে এই আয়াত তিলাওয়াত করেন,্রاللهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِنْ ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَشَيْبَةًতখন তিনি তাকে থেমে দিয়ে বলেন, তুমি ضُعف অর্থাৎ ض এ পেশ দিয়ে পড়। 

(মুসনাদে আহমদ, ২/৫৮/৫২২৮)


ব্যাখ্যা: উক্ত আয়াতে ضُعْفٌ শব্দটিকে ইবনে ওমর (رضي الله عنه) ض এর উপর যবর দিয়ে পাঠ করেছেন। নবী করিম (ﷺ)  পেশ দিয়ে পড়ার নির্দেশ প্রদান করেন।


٥٠٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـهَيْثَمِ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ مَسْرُوْقٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: قَدْ مَضَى الدُّخَانُ وَالْبَطْشَةُ عَلَىٰ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ .


৫০৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হায়শাম থেকে, তিনি শা’বী থেকে, তিনি মাসরূক থেকে, তিনি আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, দোখান (ধোঁয়া) ও বাত্শাহ (পাকড়াও) রাসূল (ﷺ)  ’র যুগে শেষ হয়েছে। 

(বুখারী, ৪/১৮৩০/৪৪১৬)


ব্যাখ্যা: دخان ও بطشة এর ঘটনা: বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে যে, পর্যায়ক্রমে কুরাইশদের নাফরমানীর কারণে রাসূল (ﷺ)  তাদের বিরুদ্ধে দোয়া করেন। ফলে আল্লাহ তাদের উপর দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে দেন। এতে অনেক লোক মৃত্যুবরণ করে এবং মানুষ হাড় ও মৃত্যুদেহ খেয়ে জীবন ধারণ করে। দুর্বলতা ও অসুস্থতার কারণে প্রত্যেকেই আকাশে ধোঁয়া দেখতে থাকে।


❏এরপর আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) পরের আয়াত ,انا كاشف العذاب قليلا انكم عائدون يوم نبطش البطشة الكبري “যদি এ আযাব পরকালে আসে, তাহলে পরকালের আযাব কখন দূরীভূত হবে এবং তা কখন স্বীয় অবস্থায় ফিরে যাবে? সেদিন আমার পাকড়াও শক্ত পাকড়াও হবে”। উলে­খ করে স্বীয় মত প্রকাশ করে বলেন, এসব আযাব নবী করিম (ﷺ)  ’র যুগে সমাপ্ত হয়ে গেছে। বর্ণিত হাদিসে এর সমর্থন রয়েছে। ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, উভয় আযাব কিয়ামতের দিন দেয়া হবে।


٥٠٨- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : إِنَّ أَوْلَادَكُمْ مِنْ كَسْبِكُمْ، وَهِبَةُ اللهِ لَكُمْ، يَهَبُ لِـمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا، وَيَهَبُ لِـمَنْ يَشَاءُ الذُّكُوْرَ.


৫০৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)এরশাদ করেন, তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদেরই উপার্জন এবং তোমাদের জন্য আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে কন্যা দান করেন এবং যাকে ইচ্ছে পুত্র দান করেন। 

(আল মুস্তাদরাক, ২/৩১২/৩১২৩)


٥٠٩- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مَكِّيِّ بْنِ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ ابْنِ لَهِيْعَةَ، عَنْ أَبِيْ قُبَيْلٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ الْـمُزَنِيِّ، يَقُوْلُ: سَمِعْتُ ثَوْبَانَ مَوْلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ ، يَقُوْلُ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ  : مَا أُحِبُّ أَنَّ لِيَ الدُّنْيَا بِمَا فِيْهَا بِهَذِهِ الْآيَةِ: [قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلَى انْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوْا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا] {الزمر: ৫৩}، فَقَالَ رَجُلٌ: وَمِنَ الشِّرْكِ؟ فَسَكَتَ رَسُوْلُ اللهِ ، ثُمَّ قَالَ: وَمَنْ أَشْرَكَ؟ فَسَكَتَ رَسُوْلُ اللهِ ، ثُمَّ قَالَ : أَلَا وَمَنْ أَشْرَكَ.


৫০৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মক্কী ইবনে ইব্রাহীম থেকে, তিনি ইবনে লাহাইয়্যা থেকে, তিনি আবু কুবাইল থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আবু আবদুর রহমান মুযনীকে বলতে শুনেছি, আমি রাসূল (ﷺ)  ’র আযাদকৃত গোলাম সওবান (رضي الله عنه)কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, দুনিয়া এবং এর ভিতরে যা আছে অর্থাৎ দুনিয়ার যাবতীয় বস্তুকেও আমি পছন্দ করি না আল্লাহর এ আয়াতের বিনিময়ে,قل يا عبادى الذين اسرفوا ....جميعًا “হে নবী আপনি বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর সীমালঙ্ঘন করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেবেন”। 

(সূরা যুমার, আয়াত, ৫৩)


তখন এক ব্যক্তি বলল, কেউ যদি শিরক করে? তিনি চুপ রইলেন। লোকটি আবার বলল, কেউ যদি শিরক করে? রাসূল (ﷺ)  চুপ রইলেন। লোকটি পুনরায় বলল, কেউ যদি শিরক করে? এবারও তিনি চুপ রইলেন, অতঃপর বললেন, সাবধান, যে শিরক করেছে সেও ক্ষমা পাবে। 

(শুআবুল ঈমান, ৯/৩৩৯/৬৭৩৫)


ব্যাখ্যা: হাদিসে বর্ণিত الا শব্দটি হরফে তান্বীহ হতে পারে অথবা হরফে ইসতিসনাও হতে পারে। কোন রেওয়ায়েতে واو আছে আবার কোন রেওয়ায়েতে নেই। এর অর্থ হলো, কোন ব্যক্তি শিরক করে ইসলাম গ্রহণ করলে তাকেও মার্জনা করা হবে। কারণ ইসলাম পূর্ববর্তী যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেয়।


٥١٠- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ السَّائِبِ الْكَلْبِيِّ، عَنْ أَبِيْ صَالِحٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ : أَنَّ وَحْشِيًّا لَـمَّا قَتَلَ حَمْزَةَ مَكَثَ زَمَانًا، ثُمَّ وَقَعَ فِيْ قَلْبِهِ الْإِسْلَامُ، فَأَرْسَلَ إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ ، أَنَّهُ قَدْ وَقَعَ فِيْ قَلْبِهِ الْإِسْلَامُ، وَقَدْ سَمِعْتُكَ تَقُوْلُ عَنِ اللهِ تَعَالَىٰ : [وَالَّذِيْنَ لا يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ إِلَـهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ الَّتِيْ حَرَّمَ اللهُ إِلا بِالْـحَقِّ وَلَا يَزْنُوْنَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا، يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيْهِ مُهَانًا] {الفرقان: ৬৮-৬৯}، فَإِنِّيْ قَدْ فَعَلْتُهُنَّ جَمِيْعًا، فَهَلْ لِيْ رُخْصَةٌ؟ 

قَالَ: فَنَزَلَ جِبْرِيْلُ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ! قُلْ لَهُ: [إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلا صَالِـحًا فَأُوْلَئِكَ يُبَدِّلُ اللهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَحِيْمًا] {الفرقان: ৭০}، قَالَ: فَأَرْسَلَ رَسُوْلُ اللهِ  بِهَذِهِ الْآيَةِ، فَلَـمَّا قُرِئَتْ عَلَيْهِ، قَالَ وَحْشِيٌّ: إِنَّ فِيْ هَذِهِ الْآيَةِ شُرُوْطًا، وَأَخْشَى انْ لَا آتِيَ بِهَا، وَلَا أُحَقِّقُ أَنْ أَعْمَلَ صَالِـحًا أَمْ لَا، فَهَلْ عِنْدَكَ شَيْءٌ اَلْيَنُ مِنْ هَذَا يَا مُحَمَّدُ ؟

قَالَ: فَنَزَلَ جِبْرِيْلُ بِهَذِهِ الْآيَةِ: [إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِـمَنْ يَشَاءُ] {النساء: ৪৮، و১১৬}، قَالَ: فَكَتَبَ رَسُوْلُ اللهِ  بِهَذِهِ الْآيَةِ، وَبَعَثَ إِلَىٰ وَحْشِيٍّ، قَالَ: فَلَـمَّا قُرِئَتْ لَهُ، قَالَ: إِنَّهُ يَقُوْلُ: [إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِـمَنْ يَشَاءُ] {النساء: ৪৮، و১১৬}، وَأَنَا لَا أَدْرِيْ لِعَلِّيْ أَنْ أَكُوْنَ فِيْ مَشِيَّتِهِ إِنْ شَاءَ فِي الْـمَغْفِرَةِ وَلَوْ كَانَتِ الْآيَةُ: [وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِـمَنْ يَشَاءُ] {النساء: ৪৮، و১১৬}، وَلَـمْ يَقُلْ: لِـمَنْ شَاءَ كَانَ ذَالِكَ، فَهَلْ عِنْدَكَ شَيْءٌ أَوْسَعُ مِنْ ذَلِكَ يَا مُحَمَّدُ ؟

فَنَزَلَ جِبْرِيْلُ بِهَذِهِ الْآيَةِ: [قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلَى انْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوْا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ] {الزمر: ৫৩}، قَالَ: فَكَتَبَ رَسُوْلُ اللهِ ، وَبَعَثَ بِهَا إِلَىٰ وَحْشِيٍّ، فَلَـمَّا قُرِئَتْ عَلَيْهِ، قَالَ: أَمَّا هَذِهِ الْآيَةُ فَنَعَمْ، ثُمَّ أَسْلَمَ، فَأَرْسَلَ إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ قَدْ أَسْلَمْتُ، فَأْذَنْ لِيْ فِيْ لِقَائِكَ، فَأْرَسَلَ إِلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ  : أَنْ وَارِ عَنِّيْ وَجْهَكَ، فَإِنِّيْ لَا أَسْتَطِيْعُ أَنْ أَمْلَأَ عَيْنَيَّ مِنْ قَاتِلِ حَمْزَةَ عَمِّيْ، قَالَ: فَسَكَتَ وَحْشِيٌّ، حَتَّىٰ كَتَبَ مُسَيْلِمَةُ إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ : مِنْ مُسَيْلِمَةَ رَسُوْلِ اللهِ إِلَىٰ مُحَمَّدٍ رَسُوْلِ اللهِ ، أَمَّا بَعْدُ! فَقَدْ أُشْرِكْتُ فِي الْأَرْضِ، فَلِيْ نِصْفُ الْأَرْضِ وَلِقُرَيْشٍ نِصْفُهَا، غَيْرَ أَنَّ قُرَيْشًا قَوْمٌ يَعْتَدُوْنَ، قَالَ: فَقَدِمَ بِكِتَابِهِ إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ  رَجُلَانِ، فَلَـمَّا قُرِئَ عَلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ  الْكِتَابُ قَالَ لِلرَّسُوْلَيْنِ : لَوْلَا أَنَّكُمَا رَسُوْلَانِ لَقَتَلْتُكُمَا، ثُمَّ دَعَا بِعَلِيِّ بْنِ أَبِيْ طَالِبٍ ، فَقَالَ : اكْتُبْ: بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ، مِنْ مُحَمَّدٍ رَسُوْلِ اللهِ إِلَىٰ مُسَيْلِمَةَ الْكَذَّابِ، السَّلَامُ عَلَىٰ مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَىٰ، أَمَّا بَعْدُ! [إِنَّ الأَرْضَ لِلهِ يُوْرِثُهَا مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ] {الأعراف: ১২৮}، وَصَلَّى اللهُ عَلَىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ.

قَالَ: فَلَـمَّا بَلَغَ وَحْشِيًا مَا كَتَبَ مُسَيْلِمَةُ إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ  أَخْرَجَ الذِّرَاعَ فَصَقَلَهُ، وَهَمَّ بِقَتْلِ مُسَيْلِمَةَ، فَلَـمْ يَزَلْ عَلَىٰ عَزْمِ ذَلِكَ حَتَّىٰ قَتَلَهُ يَوْمَ الْيَمَامَةِ.



৫১০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মুহাম্মদ ইবনে আস সায়িব কালবী থেকে, তিনি আবু সালেহ থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, ওয়াহশী হযরত হামযা (رضي الله عنه) কে শহীদ করার পর কিছুকাল কুফুরীর উপর ছিল। অতঃপর তার অন্তরে ইসলাম গ্রহণের প্রেরণা জাগে। সে এক ব্যক্তিকে রাসূল (ﷺ)  ’র খেদমতে এই বলে প্রেরণ করে যে, আমার অন্তরে ইসলামের মহব্বত প্রবেশ করেছে। আমি শুনেছি আপনি আল্লাহর এই কালাম পাঠ করেন,والذين لا يدعون مع الله ... ويخلد فيه مهانا “ এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ইলাহ হিসাবে আহŸান করেনা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করেনা এবং যিনা করেনা। যারা এসব কাজ করবে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে অধিক শাস্তি প্রদান করা হবে। অনন্তকাল তারা এই অপদস্থ অবস্থায় থাকবে”। 

(সূরা ফুরকান, আয়াত, ৬৮-৬৯)


অতঃপর ওয়াহশী বলে, আমি এসব কাজ করেছি, তাই আমার জন্য কি মুক্তির কোন উপায় আছে? বর্ণনাকারী বলেন, তখন জিব্রাঈল (আ.) নাযিল হয়ে বলেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আপনি তাকে বলুন,الا من تاب وامن وعمل عملا صالحًا فاولئك يبدل الله سيئاتهم حسنات وكان الله غفورا رحيمًا- “যে ব্যক্তি (শিরক থেকে) তাওবা করবে, ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে, তবে আল্লাহ তায়ালা তাদের পাপ সমূহকে নেকী সমূহ দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল করুণাময়”।

(সূরা ফুরকান, আয়াত, ৭০)


বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূল (ﷺ)  এ আয়াত ওয়াহশীর নিকট প্রেরণ করেন। এ আয়াত যখন ওয়াহশীর নিকট তিলাওয়াত করা হয়, তখন সে বলল, এ আয়াতে কয়েকটা শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। যা আমি সঠিকভাবে করতে পারবো না বলে আশংকা করছি। আর আমি এটাও জানিনা যে, নেক আমল করতে পারবো কিনা? সুতরাং হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আপনার কাছে কি এর চেয়েও সহজ কোন উপায় আছে?

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর জিব্রাঈল (আ.) এ আয়াত নিয়ে অবতীর্ণ হলেন,ان الله لا يغفر ان يشرك به ويغفر ما دون ذالك لمن يشاء “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করবেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া তিনি যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করে দেবেন”। 

(সূরা নিসা, আয়াত, ৪৮ ও ১১৬)


বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল (ﷺ)  এ আয়াত লিখে ওয়াহশীর নিকট প্রেরণ করেন। যখন তার নিকট এ আয়াত পাঠ করা হয়, তখন সে বলে, আল্লাহ বলেছেন, যে তার সাথে কাউকে শরীক করেছে তাকে ক্ষমা করবেন না। এছাড়া যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করবেন। আমি তো জানিনা যে, আমি কি আল্লাহর ইচ্ছের মধ্যে আছি। যদি তিনি ক্ষমা করার ইচ্ছে করেন? যদি আয়াতটি এরূপ হতো,وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَلِكَ   (لِمَنْ يَّشَاءُ) শব্দটি সংযোজন না হতো তাহলে ভাল হতো। তারপর ওয়াহশী বলল, হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আপনার কাছে কি এর চেয়ে ব্যাপক কোন বিধান আল্লাহর পক্ষ থেকে আছে? তখন জিব্রাঈল (আ.) এ আয়াত নিয়ে নাযিল হলেন,قل يا عبادى الذين اسرفوا .... انه هو الغفور الرحيم “হে নবী! আপনি বলুন, হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের উপর মাত্রাধিক্য আচরণ করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সমুদয় পাপ মার্জনা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, করুণাময়।” 

(সূরা যুমার, আয়াত, ৫৩)


বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল (ﷺ)  আয়াতটি লিখে ওয়াহশীর নিকট প্রেরণ করেন। যখন আয়াতটি তার সামনে পাঠ করা হয়, তখন সে বলল, হ্যাঁ, এবারের আয়াতটি ঠিক আছে, অতি উত্তম আয়াত। এরপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করে রাসূল (ﷺ)  ’র কাছে লোক পাঠিয়ে বলেন যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমাকে আপনার সাক্ষাতের অনুমতি দিন। রাসূল (ﷺ)  লোক মারফত সংবাদ পাঠালেন যে, তবে তোমার চেহারা দেখাবে না। কেননা আমার চাচা হামযার হত্যাকারীকে স্বচক্ষে দেখা আমি সহ্য করতে পারবো না। 


বর্ণনাকারী বলেন, তখন ওয়াহশী চুপ হয়ে গেলেন। এ সময় মুসায়লামা কাযযাব রাসূল (ﷺ)  ’র নিকট পত্র প্রেরণ করে যে, “আল্লাহর রাসূল (ﷺ)মুসায়লামার পক্ষ থেকে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)মুহাম্মদের নিকট, আম্মাবাদ। আমি আরব ভূমির অর্ধেক আমার জন্য আর বাকী অর্ধেক কুরাইশদেরকে ভাগ করে দিয়েছি। কিন্তু কুরাইশরা এমন স¤প্রদায় যারা সীমাতিক্রম করে”। তার এই পত্রটি দু’ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) ’র কাছে নিয়ে আসে। যখন পত্রটি তাঁর সম্মুখে পাঠ করা হলো, তখন তিনি পত্রবাহক দু’জনকে বললেন, তোমরা যদি দূত হিসেবে আগমন না করতে তবে তোমাদের দু’জনকেই হত্যার ব্যবস্থা করতাম। তারপর তিনি আলী ইবনে আবু তালেব (رضي الله عنه)কে ডাকলেন এবং বললেন, তুমি লিখ ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ আল্লাহর রাসূল (ﷺ)মুহাম্মদের পক্ষ থেকে মুসায়লামা কাযযাবের নিকট, যে সত্য পথে আছে তার উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক, আম্মাবাদ! নিশ্চয়ই ভূমি (সম্রাজ্য) আল্লাহর জন্য। স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে তাকে তিনি মালিক বানিয়ে দেন। কল্যাণ খোদাভীরুদের জন্য। আল্লাহ তায়ালা শান্তি বর্ষিত করুণ আমাদের সর্দার মুহাম্মদ (ﷺ) ’র উপর।”


রাসূল (ﷺ)  ’র নিকট মুসায়লামার পত্র প্রেরণ সম্পর্কে যখন ওয়াহশী অবগত হলেন, তখন তিনি তার বর্শা বের করে ধার করলেন এবং মুসায়লামাকে হত্যার প্রতিজ্ঞা করলেন। আর এ ইচ্ছায় তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন। অবশেষে ইয়ামামার যুদ্ধে তিনি মুসায়লামাকে হত্যা করেন।


ব্যাখ্যা: ইরশাদুস সারী ও সিরাজুম মুনীর কিতাবে বর্ণিত আছে যে, যখন ওয়াহশীর ঘটনা সংঘটিত হলো তখন লোকজন রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহর এ বিধান (অর্থাৎ তাওবা কবুল ও গুনাহ মাফ হওয়া) কি শুধু ওয়াহশীর জন্য না সবার জন্য? উত্তরে তিনি বললেন, এ বিধানে সকল মুসলমান অন্তর্ভুক্ত।


٥١١- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي الزَّعْرَاءِ مِنْ أَصْحَابِ بْنِ مَسْعُوْدٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : لَيَخْرُجَنَّ بِشَفَاعَتِيْ مِنْ أَهْلِ الْإِيْمَانِ مِنَ النَّارِ، حَتَّىٰ لَا يَبْقَىٰ فِيْهَا أَحَدٌ إِلَّا أَهْلُ هَذِهِ الْآيَةِ: [مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ، قَالُوْا لَـمْ نَكُ مِنَ الْـمُصَلِّيْنَ، وَلَـمْ نَكُ نُطْعِمُ الْـمِسْكِيْنَ، وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْـخَائِضِيْنَ، وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ، حَتَّى اتَانَا الْيَقِيْنُ، فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِيْنَ] {المدثر: ৪২-৪৮}.

وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ ، قَالَ: يُعَذِّبُ اللهُ تَعَالَى اقْوَامًا مِنْ أَهْلِ الْإِيْمَانِ، ثُمَّ يُخْرِجُهُمْ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ  حَتَّىٰ لَا يَبْقَى الَّا مَنْ ذَكَرَ اللهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ: [مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ، قَالُوْا لَـمْ نَكُ مِنَ الْـمُصَلِّيْنَ، وَلَـمْ نَكُ نُطْعِمُ الْـمِسْكِيْنَ، وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْـخَائِضِيْنَ، وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ، حَتَّى اتَانَا الْيَقِيْنُ، فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِيْنَ] {المدثر: ৪২-৪৮}.



৫১১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা সালমা থেকে, তিনি আবু যুরআ থেকে, তিনি ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, আমার শাফায়াতে মু’মিনগণ জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে। এমন কি কেউ জাহান্নামে বাকী থাকবে না, কেবল ঐ ব্যক্তিগণ বাকী থাকবে যারা এই আয়াতের অধীনস্থ “কোন বস্তু তোমাদেরকে জাহান্নামে টেনে নিয়ে এসেছে? তারা (জাহান্নামীরা) বলবে, আমরা নামাযী ছিলাম না, মিসকীনদেরকে আহার করাইনি, বিতর্ককারীদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছি, আমরা কিয়ামতের দিনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছি এমনকি আমাদের নিকট মৃত্যু এসে পৌঁছেছে। অতএব, কোন সুপারিশকারীর সুপারিশ তাদের কোন উপকারে আসবে না।” 

(সূরা মুদ্দাসসির, আয়াত, ৪২-৪৮)


অন্য এক বর্ণনায় ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা মু’মিনদের এক দলকে শাস্তি দেবেন। অতঃপর মুহাম্মদ (ﷺ)’র শাফায়াতে তাদেরকে (জাহান্নাম থেকে) বের করা হবে। এমন কি কেউ বাকী থাকবেনা কেবল যাদের নাম আল্লাহর তায়ালা (এ আয়াতে) উলে­খ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “কিসে তাদেরকে দোযখে নিয়ে এসেছে? তারা বলবে, আমরা নামাযী ছিলাম না, মিসকীনদের খাবার দিতাম না, বিতর্ককারীদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হতাম, কিয়ামত দিবসকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছি। এভাবে আমাদের নিকট মৃত্যু এসেছে। সুতরাং কোন সুপারিশকারীর সুপারিশ তাদের কাজে আসবে না।” 

(মশকিলুল আসার, ১২/২২৮/৪৮৩৯)


ব্যাখ্যা: এ হাদিসে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর মু’তাযিলা ও মরজিয়্যা নামক দু’টি বাতিল ফের্কার আক্বিদা বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করে দিয়েছে। মু’তাযিলার আক্বিদা হলো কবীরা গুনাহকারী চিরস্থায়ী জাহান্নামী, বেহেস্তের বাতাসও তারা পাবে না। এর বিপরীত মরজিয়্যাদের আক্বিদা হলো, যারা শুধু কালিমা পাঠ করেছে তারা দোযখ থেকে মুক্তির সনদ লিখে নিয়েছে। এরা কেবল বেহেস্তী। কিন্তু এ হাদিস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, উম্মতে মুসলিমার যারা ফাসিক, ফাজির তথা গুনাহগার, গুনাহের কারণে তারা দোযখের আযাব ভোগ করবে। পরবর্তীতে রাসূল (ﷺ)  ’র সুপারিশে দোযখ থেকে মুক্তিলাভ করবে। আর শুধু কাফির মুশরিকরাই দোযখে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। কোন মু’মিন দোযখে চিরস্থায়ী থাকবে না।


٥١٢- حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ ، قَالَ: لَا يَبْقَىٰ فِي النَّارِ إِلَّا مَنْ ذَكَرَ اللهُ فِيْ هَذِهِ الْآيَةِ: [مَا سَلَكَكُمْ فِيْ سَقَرَ، قَالُوْا لَـمْ نَكُ مِنَ الْـمُصَلِّيْنَ، وَلَـمْ نَكُ نُطْعِمُ الْـمِسْكِيْنَ، وَكُنَّا نَخُوْضُ مَعَ الْـخَائِضِيْنَ، وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّيْنِ، حَتَّى اتَانَا الْيَقِيْنُ، فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِيْنَ] {المدثر: ৪২-৪৮}.



৫১২. অনুবাদ: হাম্মাদ তার পিতা থেকে, তিনি সালমা ইবনে কুহাইল থেকে, তিনি ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে যাদের নাম উলে­খ করেছেন তারা ব্যতীত কেউ জাহান্নামে থাকবে না। আয়াত হলো, ما سلكم فى سقر... الشافعين 

(প্রাগুক্ত)।


٥١٣- حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ أَبِيْ عِصَامٍ، عَنْ أَبِيْ صَالِحٍ، قَالَ: اَلْـحُقْبُ ثَمَانُوْنَ سَنَةً، مِنْهَا سِتَّةُ أَيَّامٍ عَدَدَ أَيَّامِ الدُّنْيَا.


৫১৩. অনুবাদ: হাম্মাদ তার পিতা থেকে, তিনি আবু ইসাম থেকে, তিনি আবু সালেহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, لابثين فيها احقايا (সেখানে তারা অনেক হুকবা তথা শতাব্দির পর শতাব্দি অবস্থান করবে) আয়াতে বর্ণিত حقبة এর ব্যাখ্যায় বলেন, এক হুকবার পরিমাণ হবে আশি বছর, যার ছয়দিন পৃথিবীর সমস্ত দিনের সমান। 

(আল  মুস্তাদরাক, ২/৫৫৬/৩৮৯০)


ব্যাখ্যা: হাদিসে সূরা নাবার ২৩ নং আয়াতের তাফসীর করা হয়েছে। ইবনে জারীর (رضي الله عنه) হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে এর এক হুকবার পরিমাণ আশি বছর বর্ণনা করেছেন, যার প্রত্যেক বছর বার মাসের, প্রত্যেক মাস ত্রিশ দিনের এবং প্রত্যেক দিন এক হাজার বছরের হবে। এভাবে এক হুকবার পরিমাণ প্রায় দু’কোটি আটাশি বছর হয়। অপর কয়েকজন সাহাবী এর পরিমাণ আশির পরিবর্তে সত্তর বলেছেন। বাকী হিসাব পূর্বের ন্যায়.

(তাফসীর ইবনে কাসীর)।


❏মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, হয়ত এ ছয়দিন দ্বারা আসমান ও জমিন সৃষ্টির ছয়দিন বুঝানো হয়েছে। অথবা পৃথিবীর সমগ্র বয়স আখেরাতের ছয়দিনের সমান হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছে।


٥١٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، قَالَ: قُرِئَ عَلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ : [وَصَدَّقَ بِالْـحُسْنَىٰ] {الليل: ৬}، قَالَ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ.


৫১৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু যুবাইর থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ’র সামনে وصدق بالحسنى আয়াত পাঠ করা হলে তিনি বলেন, এর দ্বারা لا اله الا الله কলেমাকে বুঝানো হয়েছে। 

(আল মু’জামুল কবীর, ৭/১২০/৬৫৬৫)





Top