❏ প্রশ্ন-১৭৭: ذوالكفل যুল-কিফিল কে ছিলেন এবং এর অর্থ কী?


✍ উত্তর: যুল কিফিল শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে জামিনদার। এটা একজন নবীর নাম, যিনি হচ্ছেন ইয়াসা ইয়াসির ইবনে আইয়ুবের চাচাতো ভাই। এই নামে তাঁর নামকরণের কারণ হিসাবে বলা হয় যে, বনি ইসরাইল ব্যাপক হারে নিজেদের নবীগণকে হত্যা করতো। তিনি একশত নবীর প্রাণ রক্ষা করেন কিংবা তিনি প্রতিদিন একশত জন মুসল্লির সমপরিমাণ নামায পড়তেন। কতিপয় আলেম বলেন, তিনি ছিলেন হযরত আইয়ুব (عليه السلام) এর পুত্র। তাঁর নাম ছিলো বিশর বিন আইয়ুব এবং উপাধি ছিলো যুল কিফিল। আইয়ুব (عليه السلام) এর পরবর্তীতে তিনি রোম দেশে নবী হয়েছিলেন। ‘আখবারুদ দুওয়াল’ গ্রন্থে এই মর্মে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত আইয়ুব (عليه السلام) এর পর তিনি রোম দেশে নবী হয়েছিলেন। যখন হযরত যুল কিফিল রোম দেশের রাসূল হলেন তখন ওই জাতির লোকেরা প্রথমে তাঁর ওপর ঈমান আনলো। আল্লাহ তা‘আলা যখন তাদেরকে জিহাদের নির্দেশ দিলেন তখন তারা জিহাদ করতে অস্বীকার করলো এবং বলতে লাগলো, হে বিশর! আমরা জীবনকে ভালোবাসি এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করি। আবার আল্লাহ্ ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণও আমরা অপছন্দ করি। সুতরাং যদি আপনি আল্লাহ'র নিকট এই মর্মে প্রার্থনা করেন যে, আমরা মৃত্যু কামনা না করা পর্যন্ত যেন মৃত্যুবরণ না করি, তাহলে আমরা আল্লাহর ইবাদত করবো এবং তার শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবো। তিনি বললেন, তোমরা অতি কঠিন প্রশ্ন করেছো। নামায পড়ে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং দু‘আ করলেন। আল্লাহ্ তা‘আলা তার দু‘আ কবুল করেন এবং বললেন, তুমি জাতির জামিনদার হয়ে যাও। সুতরাং হযরত বিশর বিন আইয়ুব এই জাতির নিকট তাদের প্রশ্ন বা প্রার্থনা গৃহীত হওয়ার কথা খুলে বললেন এবং উপরোলে­খিত বিষয়ের জামিনদার হলেন। এই কারণে উপাধি স্বরূপ তাঁর নাম হলো যুল কিফিল এবং তাঁর প্রকৃত নাম হচ্ছে বিশর বিন আইয়ুব। ওই জাতির সন্তান-সন্ততির সংখ্যা ওই পর্যায়ে পৌঁছালো যে, রোম দেশে কোন জায়গায় স্থান সংকুলান হলো না। তখন ওই জাতি মৃত্যু কামনা করলো এবং নির্ধারিত সময়ে মৃত্যুবরণ করতে লাগলো। এটাই হচ্ছে রোম দেশে অধিক জনসংখ্যার কারণ। হযরত বিশর বিন আইয়ুব শাম দেশে ওফাতপ্রাপ্ত হন, তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তাঁর মাযার শরীফ নাবলুস এর সন্নিকটস্থ ‘কিফিল’ গ্রামে অবস্থিত। তবে মুহাক্কীকগণের মতে এই মতটি সঠিক যে, যুল কিফিল (عليه السلام) ছিলেন ইয়াসা ইবনে আখলুত এর মুনিব। হিযকিল ও বিশর বিন আইয়ুব এর উপাধিও যুলকিফিল, যাদের সময়কাল ছিল তাঁর পূর্বে।

‘মু‘আলিমুত তান্যিল’ গ্রন্থে হযরত আবু মুসা আশ‘আরী (رضى الله تعالي عنه) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, 


لم يكن ذوالكفل نبيًا ولكن كان عبدًا صالِحًا.


 অর্থাৎ ‘যুল কিফিল নবী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন নেক্কার-পূণ্যবান বান্দা।’ অতএব বুঝা গেলো যে, আউলিয়া-ই কিরাম থেকে অলৌকিক কারামত পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে এটা সাহেবে শরীয়ত হুযূর   এর মুজিযা যা আল্লাহ'র কুদরতের বহিঃপ্রকাশ।

Top