❏ প্রশ্ন : আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরা দোআ করার সময় রাসূল (ﷺ) এর অসিলা দিয়ে দোআ করি। এটা জায়েয আছে কিনা? অথচ ইমাম ইবনে তাইমিয়া (رحمة الله) তার আলঅসিলা কিতাবে লিখেছেন, আল্লাহ তা‘আলার সিফাতী নামের অসিলা ছাড়া অন্য অসিলা না জায়েয। দলিল হিসেবে হযরত ওমর রাযি.র হাদীস যিনি রাসূল (ﷺ) এর চাচা আব্বাসের অসিলা দিয়ে বৃষ্টির দোআ করা করেছেন। রাসূলের ইন্তেকালের পরে এই হাদীস পেশ করে। এই দলিলের আলোকে রাসূল (ﷺ) এর অসিলা দিয়ে দোআ করা না জায়েয হবে কি না?
✍ জবাব : হে আল্লাহ তোমার হাবীব মুহাম্মাদ (ﷺ) এর অসিলায় অমুক কাজ করে দিন। আমাদেরকে গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে নিন। আমাদেরকে ভালো কাজের তাওফীক দান করুন। এমন দোআ করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতে জায়েয আছে।
ইবনে তাইমিয়া (رحمة الله)র দৃষ্টিতে রাসূলের চাচার অসিলা দিয়ে দোআ করা জায়েয আছে, তাহলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে সরাসরি রাসূল (ﷺ) এর অসিলা দিয়ে দোআ করা অবশ্যই জায়েয হবে।
এই মাসআলার উপর ইবনে তাইমিয়া (رحمة الله)কে খন্ডন করার জন্য তার সমকালীন আলেম ইমাম তাকী উদ্দীন সুবকী সতন্ত্র কিতাব লিখে যথেষ্ট জবাব দিয়েছেন। তবকাতে সুবকিতে একটি সতন্ত্র কিতাব এর খন্ডনের জন্য আছে। আল্লাম ইমাম ইয়াফিয়ী (رحمة الله) মিরআতুল জিনান কিতাবে বহু আলেম থেকে কঠিন প্রতিবাদ উদ্ধৃত করেছেন। আল্লামা ইবনে হাজার মাক্কী (رحمة الله) ফাতাওয়ায়ে হাদীসিয়াতে কঠিনভাবে খন্ডন করেছেন। তাযকেরাতুল হুফ্ফাযেও খন্ডন রয়েছে। হযরত ওমর রাযি. হযরত আব্বাস রাযি.র অসিলা দিয়ে দোআ করা এটা একথার দলিল নয় যে, রাসূল (ﷺ) এর অসিলা দিয়ে দোআ করা যাবে না।
রাসূল (ﷺ) এর কবর যিয়ারতের জন্য যাওয়া ইবনে তাইমিয়া (رحمة الله) হারাম বলেন। এর উপর ইমাম তাকী উদ্দীন সুবকী (رحمة الله) শিফউল আসকাম নামক কিতাব লিখেছেন। যার মধ্যে তিনি এটাকে নৈকট্য লাভের বড় লাভের উপায়, মোস্তাহাব ও সাওয়াবের কারণ বলেছেন। আরো অনেক কিতাব ও রেসালা রয়েছে। হযরত আল্লামা ইউসুফ নাবহানীও শাওয়াহেদুল হক এবং আরো অন্য কিতাব লিখেছেন।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া কুরুনে ছালাছার ইমাম নয়। বরং ফিতনা ও হিংসায় পূর্ণ যুগের ইমাম। যার কথা তার অনুসারী ও ছাত্র ছাড়া অন্যদের জন্য অটল দলিল নয়। তিনি পাচ ছয় হিজরী পরের ইমাম। রাসূল (ﷺ) এর কবর যিয়ারত করা এবং তার অসিলার উপর পূর্বের ওলাম, মুহাদ্দিস, ইমাম ও মুজতাহিদ প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় যুগের সাহাবা তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের থেকে আমল চলে আসছে। শেষ যুগে এসে ইসলামে মর্যাদা ও দীন ইসলামের নাম দিয়ে মুত্তাকীদেরকে গোমরাহ বলা এবং তাদের আমলকে বেদআত ও গোমরাহী বলা কিভাবে মেনে নেওয়া যেতে পারে। এখন কি কোনো নবী আসবে যে, যার অনুসরণ করা হবে? এই সব কিছু কিয়ামতের আলামত। আগের উম্মাতে মুসলিমাকে গোমরাহ বলে নিজেকে হেদায়াতপ্রাপ্ত বলা এবং মুসলমান বলা কেয়ামতে আলামত।
বিশেষভাবে এই যুগটা হলো, টাকা পয়সা ছড়াছড়ির যুগ এবং অতি লোভের যুগ। دينهم دينارهم ونسائهم قبلتهم وهمتهم بطونهم ‘তাদের ধর্ম হলো টাকা, তাদের কেবলা হলো নারী, তাদের টার্গেট হলো পেট।’ এর বস্তব রূপ হবে। আল্লাহ তাআলা পরিষ্কার বলেছেন, يضل به كثيرا ويهدي به كثيرا ‘তার দ্বারা গোমরাহ হয় অনেকে, হেদায়াত পায় অনেকে।’
আজকাল ইসলাম ও দাওয়াতে ঠিকাদাররা ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। আল্লাহ তা‘আলা নির্ভেজাল তাওহীদধারীদেরকে হেফাযত করুন। দুনিয়াদারদের থেকে হেফাযত করুন। এটা ক্ষমতা ও পদের লোভীদের যুগ। যত বাতেল ফেরকার জন্ম হয়েছে, সব এই লোভে জন্ম হয়েছে। যাদের পর্দার আড়ালে ইন্ধন জোগানোর জন্য ইহুদী খ্রিস্টান রয়েছে। তারাও সব তাওহীদবাদী। পার্থক্য শুধু নবুওয়াত নিয়ে। হযরত মুসা, হযরত ঈসা ও নবী মুহাম্মাদের মধ্যে কে হবে?
❏ প্রশ্ন : أول ما خلق الله نوري এটা হাদীস কিনা? অনেকে এটাকে মাওজু বলে।
✍ জবাব : মাজমাউল বিহারের টিকাতে এই হাদীসটি উল্লেখ রয়েছে। ইমাম আব্দুল ওহ্হাব শা‘রানী আল ইয়াকীত অলজাওয়াহীর কিতাবের ১০নং পৃষ্ঠায় এই হাদীস শরীফটি লিখেছেন। ইবনে হাজার মাক্কী (رحمة الله) ফাতাওয়ায়ে হাদীসিয়াতে ৪৪ নং পৃষ্ঠায় এবং ২০৬ নং পৃষ্ঠায় এই বিষয়টিকে মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক থেকে হাদীস হওয়া বর্ণনা করেছেন।