3 - بَابُ مَا جَاءَ فِي التَّوْحِيْدِ وَالرِّسَالَةِ
4 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطَاءٍ، أَنَّ رِجَالًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ حَدَّثُوْهُ: أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ رَوَاحَةَ كَانَتْ لَهُ رَاعِيَةٌ تَتَعَاهَدُ غَنَمَهُ، وَأَنَّهُ أَمَرَهَا تَتَعَاهَدُ شَاةً، فَتَعَاهَدَتْهَا حَتَّىٰ سَمِنَتِ الشَّاةُ، وَاشْتَغَلَتِ الرَّاعِيَةُ بِبَعْضِ الْغَنَمِ، فَجَاءَ الذِّئْبُ، فَاخْتَلَسَ الشَّاةَ وَقَتَلَهَا، فَجَاءَ عَبْدُ اللهِ، وَفَقَدَ الشَّاةَ، فَأَخْبَرَتْهُ الرَّاعِيَةُ بِأَمْرِهَا فَلَطَمَهَا، ثُمَّ نَدِمَ عَلَىٰ ذَلِكَ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لِرَسُوْلِ اللهِ ، فَعَظَّمَ النَّبِيُّ ذَلِكَ، وَقَالَ: «ضَرَبْتَ وَجْهَ مُؤْمِنَةٍ»! فَقَالَ: سَوْدَاءُ لَا عِلْمَ لَـهَا، فَأَرْسَلَ إِلَيْهَا النَّبِيُّ فَسَأَلَـهَا: «أَيْنَ اللهُ»؟ فَقَالَتْ: فِي السَّمَاءِ، قَالَ: «فَمَنْ أَنَا»؟ قَالَتْ: رَسُوْلُ اللهِ، قَالَ: «إِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ، فَأَعْتِقْهَا»، فَأَعْتَقَهَا.
বাব নং ৩: তাওহীদ ও রেসালাত
৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতা থেকে, তিনি কয়েকজন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন, তাঁরা বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (رضي الله عنه)’র নিকট একজন মহিলা চাকরানী ছিল, যে তাঁর ছাগল চরাত এবং খেদমত করত। তিনি দেখাশুনার জন্য আরো একটি ছাগল দিলেন যেটাকে সে দেখা শুনা করত। ছাগলটি খুবই মোটা তাজা হয়েছে। একদা মহিলাটি অন্য ছাগলের প্রতি খেয়াল করতে গিয়ে হঠাৎ বাঘ এসে ঐ ছাগলটি নিয়ে ছিড়ে ফেটে মেরে ফেলল। হযরত আবদুল্লাহ এসে ঐ ছাগল না পেলে মহিলা পূর্ণ ঘটনা খুলে বলল। তিনি রাগান্বিত হয়ে মহিলাকে থাপ্পড় মারলেন অতঃপর লজ্জিত হলেন। এ ঘটনা তিনি রাসূল (ﷺ) কে বললে তিনি এটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিলেন এবং বললেন, তুমি একজন নির্দোষ মু’মিন মহিলাকে মেরেছ। আবদুল্লাহ বললেন, সেই একজন হাবশী মহিলা, তার সাথে ঈমানের কি সম্পর্ক?
তখন তিনি লোক মারফত মহিলাকে ডেকে আনেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করেন, আল্লাহ কোথায় আছেন? উত্তরে মহিলা বলল, তিনি আসমানে থাকেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কে? উত্তরে মহিলা বলল, আল্লাহর রাসূল। রাসূল (ﷺ) বলেন, সে মু’মিনা। সুতরাং তুমি তাকে আযাদ করে দাও। অতঃপর তিনি তাকে আযাদ করে দেন।
ব্যাখ্যা: অনিচ্ছাকৃত দোষের কারণে কাউকে শাস্তি দিতে নেই। এতে পরে লজ্জিত হতে হয়। আর ভুল অনুধাবন করে লজ্জিত হওয়াটা ঈমানদারের আলামত এবং তাওবার অন্তর্ভুক্ত। সাহাবায়ে কিরাম কর্তৃক অনিচ্ছাকৃত কোন ভুল সংঘটিত হলে তাঁরা তাৎক্ষণিক রাসূল (ﷺ) এর নিকট তা ব্যক্ত করে ক্ষমার ব্যবস্থা করে নিতেন। উক্ত হাদিসে তাই প্রতিফলিত হয়েছে।
5 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيْهِ، قَالَ: كُنَّا جُلُوْسًا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ لِأَصْحَابِهِ: «انْهَضُوْا بِنَا نَعُوْدُ جَارَنَا الْيَهُوْدِيَّ»، قَالَ: فَدَخَلَ عَلَيْهِ، فَوَجَدَهُ فِي الْـمَوْتِ، فَسَأَلَهُ، ثُمَّ قَالَ: «اِشْهَدْ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ» فَنَظَرَ إِلَىٰ أَبِيْهِ، فَلَـمْ يُكَلِّمْهُ أَبُوْهُ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ : «اِشْهَدْ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ»، فَنَظَرَ إِلَىٰ أَبِيْهِ، فَقَالَ أَبُوْهُ: اِشْهَدْ لَهُ، فَقَالَ الْفَتَىٰ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ : «الْـحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ أَنْقَذَ بِيْ نَسَمَةً مِنَ النَّارِ».
وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَنَّهُ قَالَ ذَاتَ يَوْمٍ لِأَصْحَابِهِ: «انْهَضُوْا بِنَا نَعُوْدُ جَارَنَا الْيَهُوْدِيَّ»، قَالَ: فَوَجَدَهُ فِي الْـمَوْتِ، فَقَالَ: «أَتَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ»؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «أَتَشْهَدُ أَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ»؟ قَالَ: فَنَظَرَ الرَّجُلُ إِلَىٰ أَبِيْهِ، قَالَ: فَأَعَادَ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ ، فَوَصَفَ الْحَدِيْثَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ إِلَىٰ آخِرِهِ عَلَىٰ هَذِهِ الْـهَيْئَةِ إِلَىٰ قَوْلِهِ: فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُوْلُ اللهِ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «الْـحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ أَنْقَذَ بِيْ نَسَمَةً مِنَ النَّارِ».
৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আলকামা থেকে, তিনি ইবনে বুরাইদাহ থেকে তিনি তার পিতা বুরাইদাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূল (ﷺ) এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি তাঁর সাহাবীগণকে বললেন, উঠ, আমরা আমাদের প্রতিবেশী অসুস্থ ইহুদীর সেবা করতে যাই। তিনি যখন গেলেন তখন ইহুদীর প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তিনি তার অবস্থা জিজ্ঞাসা করে বললেন, তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আমি আল্লাহর রাসূল। অতঃপর ইহুদী তার পিতার দিকে তাকাল কিন্তু কিছুই বলেনি। রাসূল (ﷺ) আবার তাকে বললেন, তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আমি আল্লাহর রাসূল। ইহুদী এবারও পিতার দিকে তাকালে পিতা বলল, তুমি সাক্ষ্য দাও। তখন ঐ যুবক ইহুদী বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। এতে রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, আল হামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমার উসিলায় একজন মানুষকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দিলেন।
অপর বর্ণনায় আছে, একদা রাসূল (ﷺ) তার সাহাবীগণকে বললেন, চলো, আমরা এক অসুস্থ ইহুদী প্রতিবেশীর সেবা করতে যাই। বর্ণনাকারী বলেন, যখন অসুস্থ ইহুদীর নিকট গেলেন তখন তাকে মৃত্যু শয্যায় শায়িত পেলেন। তিনি তাকে বললেন, তুমি সাক্ষ্য দিচ্ছ আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই? সে বলল, হ্যাঁ (সাক্ষ্য দিচ্ছি)। তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ, আমি আল্লাহর রাসূল? তখন ইহুদী চোখ তুলে তার পিতার দিকে তাকাল। বর্ণনাকারী বলেন- তিনি এ প্রশ্ন বারবার করতে থাকলেন। এই বর্ণনায় তিনবার বলেছেন। বাকী হাদিস অনুরূপ। শেষ পর্যন্ত অসুস্থ ইহুদী বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, আল্লাহর শোকর, তিনি একজন মানুষকে আমার উসিলায় দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করেছেন।
ব্যাখ্যা: এক. এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, উসিলা বৈধ এবং উপকারী। দুই. প্রতিবেশীর হকের গুরুত্ব। প্রতিবেশী যদি বিধর্মীও হয় তবুও তাদের হক আদায় করা আবশ্যক। বিশেষত: যদি দ্বীনের দাওয়াত উদ্দেশ্য হয়।
আবু নঈম ও তাবরানী, বাযযায (رحمة الله)’র মারফু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রতিবেশী তিন প্রকার। এক. সেই মুশরিক প্রতিবেশী। যার সাথে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। সে শুধু প্রতিবেশীর হকের অধিকারী। এটি সর্বনিম্ন হক। সে ইসলামের হকও পাবে না এবং আত্মীয়তার হকও পাবে না। দুই. যে দু’টি হকের অধিকারী। যেমন সেই প্রতিবেশী। যে মুসলমানও হবে এবং আত্মীয়ও হবে। সে দু’টি হকের অধিকারী। একটি ইসলামের হক অপরটি প্রতিবেশীর হক। এটি মধ্যপন্থী প্রতিবেশী। তিন. সেই ব্যক্তি যে মুসলমানও হবে, আত্মীয়ও হবে এবং প্রতিবেশও হবে। সে তিনটি হকের অধিকারী, এরা হলো সর্বোচ্চ প্রতিবেশী।