❏ দেওবন্দীদের আরও কিছু আকীদাঃ


❏ মৌলভী মাহমুদুল হাসান ছাহেব স্বীয় শেখ মৌলভী রশীদ আহমদ ছাহেব গাঙ্গুহী সম্পর্কে রচিত শোক-গাথায় লিখেছেন-

تمهارى تربت انور كودے كرطور سے تشبيه

كهوں هوں بار بار آرنى مرى ديكهى بهى ناداں

অর্থাৎ তোমার মাযারকে তুর পাহাড়ের সাথে তুলনা করা যায় আর আমি হযরত মুসা (عليه السلام) এর মত ارنى বলে তোমার সাক্ষাৎ কামনা করছি। দেখুন, এখানে মৌলভী রশীদ আহমদের কবরকে তুর পাহাড় বলা হয়েছে আর মৌলভী মাহমুদুল হাসান হয়েছেন হযরত মুসা (عليه السلام) এর অভিনয়কারী। তাহলে নিশ্চয়ই মৌলভী রশীদ আহমদ ছাহেবকে খোদা কল্পনা করেছেন। 


❏ একই শোক গাথায় আরও বলেছেন-

زباں پر اهل اهواكى هے كيوں اعل هبل شايد

اٹها دنيا سے كوئى بانى اسلام كاثانى

অর্থাৎ যে মুহূর্তে প্রকৃতি পূজারীদের মুখে উলূ হুবল মূর্তির শ্লোগান, সে মুহূর্তে ইসলামের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতার আবির্ভাব হয়েছিল। এ পংক্তিতে মৌলভী রশীদ আহমদ ছাহেবকে ইসলামের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা অর্থাৎ ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ আলাইহিস সালামের মত আর একজন বলেছেন। 


❏ আরও বলেছেন-

وه تهے صديق اور فاروق پهر گهئے عجب كيائے

شهادت نے تهجد ميں قدم بوسى كى گرٹهانى

অর্থাৎ তাকে হয়ত সিদ্দীকে আকবর ও ফারুকে আযমের মত বল্লেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এখানে তাকে সিদ্দীকে আকবর ও ফারুকে আযম বানিয়ে ছেড়েছেন। 


❏ এরপর লিখেছেন-

قبوليت اسے كهتے هيں مقبول ايسے هوتے هيں

عبيد سود كا ان كے لقب هے يوسف ثانى

অর্থাৎ একেই বলে স্বার্থকতা যে কালো বান্দাকে দ্বিতীয় ইউসুফের লকবে ভূষিত করা হয়েছে। এখানে মৌলবী রশীদ আহমদকে হযরত ইউসুফ (عليه السلام) এর সাথে তুলনা করেছেন। পাঠক বৃন্দ লক্ষ্য করুন, আল্লাহ থেকে শুরু করে ফারুকে আযম পর্যন্ত কোন পদমর্যাদা বাদ দেয়া হয়নি, যা মৌলভী রশীদ আহমদ ছাহেবকে দেয়া হয়নি। সম্পূর্ণ শোকগাথাটা দেখার মত বিষয়। 


❏ উক্ত শোক গাথায় এ পংক্তিটাও স্থান পেয়েছে-

مردو كو زنده كيا زندو كو مرنے نه ديا

اس مسيحائى كو ديكهيں ذرا ابن مريم

অর্থাৎ ওহে ইব্নে মরিয়ম (হযরত ঈসা আঃ) আপনিতো কেবল মৃতকে জীবিত করেছেন কিন্তু আমার মুর্শেদ মৌলভী রশীদ আহমদ মৃতকে জীবিতও করেছেন এবং জীবিতকে মরতেও দেননি। এখানে মৌলভী রশীদ আহমদকে হযরত ঈসা (عليه السلام) থেকে আফজল বলেছেন।


❏ মৌলভী আশরাফ আলী ছাহেবের এক শাগ্রীদ তাঁকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে আমি স্বপ্নে- 

لَا إِِلَهَ إِلَّا اَللهُ، اَشْرَفْ عَلِى رَسُوْلُ اَلله

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আশরাফ আলী রসুলুল্লাহ) এ ধরনের কলেমা পড়তে দেখলাম। শুদ্ধভাবে পড়তে চেষ্টা করলাম। কিন্তু মুখ থেকে এ রকমই বের হচ্ছিল। অতঃপর ঘুম ভেঙে যায়। এবং পুনরায় দরূদ শরীফ পড়লাম। তখনও মুখ থেকে-

اللهم صَلِّى عَلٰى سَيِّدِنَا وَنَبِيِّنَا وَمَوْلَانَا اَشْرَفْ عَلِى 

বের হয়েছে। অথচ আমি জাগ্রত কিন্তু মন আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এর উত্তরে মৌলবী আশরাফ আলী ছাহেব লিখেছেন যে এ ঘটনার মধ্যে সান্ত্বনা রয়েছে। তুমি যে দিকে ধাবিত হও না কেন, তাতে সুন্নাতের অনুসরণই প্রকাশ পাবে (“রেসালাতুল এমদাদ” এর ৩৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।) 


মনোযোগ দেয়ার বিষয় যে আশরাফ আলী ছাহেবের কলেমা পড়ুন এবং তার নামে দরূদ পাঠ করুন। অতঃপর মুখের উপর অনিয়ন্ত্রণের অজুহাত পেশ করুন, তাতে সব জায়েয হয়ে যাবে। কেউ নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিল এবং পরে বললো মুখ নিয়ন্ত্রনের বাইরে ছিল। এ বাহানা যথার্থ নয়; তালাক হয়ে যাবে। অথচ এ ক্ষেত্রে যথার্থ মনে করা হয়েছে এবং এতে পীরের অনুগত্য প্রকাশ পাওয়ার সুন্নাতব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। 


❏ “তাজকেরাতুর রশীদ” গ্রন্থের ৪৬ পৃষ্ঠায় উল্লে­খিত আছে, হাজী ইমদাদুল্লাহ ছাহেব স্বপ্ন দেখলেন যে তাঁর ভাবী তাঁর মেহমানদের জন্য খাবার তৈরী করছিল। তথায় রসুল মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তশরীফ আনলেন এবং ওকে বললেন, “তুমি সরে যাও, ইমদাদুল্লাহর মেহমানের খাবার তৈরী করার উপযুক্ততা তোমার নেই। তাঁর মেহমান হচ্ছে (দেওবন্দী) উলামায়ে কিরাম, আমি ওসব মেহমানদের খাদ্য রান্না করবো” (নিলর্জ্জ কোথাকার)


❏ মৌলভী ইসমাইল ছাহেব দেহলবী “সিরাতুল মুস্তাকিম” এর শেষে স্বীয় মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ ছাহেবের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন- একদিন আল্লাহ তাআলা, ওর ডান হাত তাঁর খাস কুদরতী হাতের মধ্যে ধারণ করে খোদার কুদরতী কার্যাবলীর অনেক দুর্লভ জিনিস তার সামনে উপস্থাপন করেছেন অতঃপর বলেন ‘আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে সৈয়দ আহমদকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, : যে সব ব্যক্তি তোমার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে, যদিওবা তারা লক্ষাধিক হোক না কেন, আমি প্রত্যেককে সন্তুষ্ট করবো “একই সিরাতুল মুস্তাকিমে আওলিয়া কিরাম প্রসঙ্গে বলেছেন, আম্বিয়া কিরামের সাথে তাদের ওই রকম সম্পর্ক, যে রকম ছোট ভাইদের সাথে বড় ভাইদের সম্পর্ক রয়েছে। কেননা আউলিয়া কিরামের মধ্যেও নবুয়াতের বৈশিষ্ট্য মওজুদ রয়েছে। (মাআজাল্লা) বলুন আজ পর্যন্ত কোন মুরিদ স্বীয় পীরের এরকম প্রশংসা করেছে কি? কিন্তু এ সব মহারথীদের বেলায় র্শিকের ফত্ওয়া বা কুফরীর অভিযোগ উত্থাপন করা হয় না এবং তাদেরকে পীর পূজারীও বলা হয় না।


যা কিছু আরয করা হয়েছে, তা দ্বারা নিজের জ্ঞান বা যোগ্যতা প্রদর্শন করা উদ্দেশ্য নয়। আর আমার জ্ঞান বা যোগ্যতাওবা কি আছে। যৎসামান্য যা কিছু লিখেছি, তা হচ্ছে আমার মুর্শেদ ও উস্তাদ মাওলানা সৈয়দ নঈম উদ্দিন ছাহেব মুরাদাবাদী (رحمة الله) এর সদ্কা। এ কিতাব লিখার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানেরা যেন শত্রু মিত্র চিনতে পারে, অমূল্য ঈমান যেন ধর্মীয় ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে এবং দুনিয়া থেকে যাতে ঈমান সালামতে যেতে পারে। কেউ এর দ্বারা উপকৃত হলে, এ অধমের জন্য যেন দুআ করেন। খোদা! ইসলামকে উজ্জীবিত করুন, মুসলমানদেরকে সৎপথে অটল রাখুন এবং অধমের এ সামান্য শ্রম গ্রহণ করুন, ইয়া রাব্বুল আলামীন।


অধম আহমদ ইয়ার খান আশরাফী, উজানবী, বদাউনী,

শিক্ষক, মাদ্রাসা-এ-খুদ্দামুর রসুল, গুজরাট।


এ কিতাবটি লিখার কাজ সমাপ্ত করার পর হুযূর আমীরে মিল্লাত, কিব্লায়ে আলম, মুহাদ্দেছ আলীপুরী (দামত জিলে­হুম) এর এক মূল্যবান চিঠি হস্তগত হয়। উক্ত চিঠিতে তিনি এক ঈশান উদ্দীপক খুবই সূ² জ্ঞানগর্ব উক্তি করেছেন এবং তা কিতাবে উল্লে­খ করার জন্য বলেছেন। অতএব, তা আমি গর্বসহকারে পাঠকদের সমীপে পেশ করছি। তিনি লিখেছেন, যারা হুযূর (ﷺ)কে নিজেদের মত মানুষ বলে, তারা ঈমানী নুর থেকে বঞ্চিত। হুযূর (ﷺ) এর শান বর্ণনাতীত। যেখানে কোন জিনিস সে জাতে পাক (ﷺ) এর সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে অতুলনীয় হয়ে যায়, সেখানে তার সাথে তুলনা কিভাবে সম্ভব? 


❏ কুরআন করীম ইরশাদ ফরমান-

يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ

-‘‘ওহে নবীর স্ত্রীগণ, তোমরা অন্যান্য মহিলাদের মত নয়।’’  ৫৩৩

➥533. সূরা আহযাব, আয়াত নং-৩২।


❏ এতে বোঝা যায় যে হুযূরের পবিত্র স্ত্রীগণ অতুলনীয়।

كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ

-‘‘হে মুসলমানগণ, তোমরা হলে সর্বোৎকৃষ্ট উম্মত।’’  ৫৩৪

➥534. সূরা আলে-ইমরান, আয়াত, ১১০


এতে প্রমাণিত হলো যে, উম্মতে মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম অতুলনীয় উম্মত। মদীনা মনোয়ারা অতুলনীয় শহর, রওযা পাকের যমীন অতুলনীয়, যে অশ্রু হুযূর (ﷺ) এর পবিত্র চক্ষুদ্বয় থেকে বের হয়েছে, তা অতুলনীয়, হুযূর (ﷺ) এর ঘাম অতুলনীয়। মোট কথা হলো হুযূরের সাথে যেটা সম্পর্কিত হয়েছে, সেটা অতুলনীয় ও অদ্বিতীয় হয়ে গেছে। তাহলে, যার বদৌলতে এত কিছু অতুলনীয় হতে পারে, তিনি স্বয়ং কেন অতুলনীয় হবেন না? 


❏ ডঃ আল্লামা ইকবাল খুবই সুন্দর বলেছেন-

مريم از يك نسبت عيسى عزيز-ازسه نسبت حضرت زهرا عزيز

نور چسم رحمة للعالمين - آں امام اولين وآخرين

بانوئے آں تاجدار هل اتى- مرتضى مشكل كشاشير خدا

ما در آں مركز ركار عشق- مادر آں قافله سالار عشق!

رشته آئين حق زنجير پاست- پاس فرمان جناب مصطفى است

ورنه گردتربتش گرديد مے- سجدها برخاك دے پاشيد مے

অর্থাৎ ফাতেমা যুহরা (رضي الله عنه) এ জন্যেই শ্রেষ্ঠ যে তিনি নবীর দুলালী, আলীর স্ত্রী ও শহীদদের মাতা। 


❏ আলা হযরত (রহঃ) বলেছেন-

الله كى سرتا بقدم شان هيں يه- ان سانهي انساں وه انسان هيں يه

قرآن تو ايمان بتاتاهے انهيں- ايمان يه كهتاهى مرى جان هيں يه

অর্থাৎ তাঁর (ﷺ) পবিত্র আপাদমস্তকে খোদার শানই প্রকাশ পায়। কোন মানুষ তাঁর মত হতে পারে না। কুরআন তাঁকে ঈমান বলে আর ঈমান বলে তাঁকে জানের জান-

নবীরা নিষ্পাপ- যে অস্বীকার করে, খোদার গজব- জেনো তার উপরে


দেওবন্দীদের কটূক্তি ও অপবাদের কারণে নবীদের শানে বেআদবী করতে জনগণকে সাহস যুগিয়েছেন। হিন্দুস্থানে এমন একটি র্ফেকার সৃষ্টি হয়েছে, যারা আম্বিয়া কিরামকে (মায়াজাল্লা) গুনাহগার বরং মুশরিক, কাফিরও বলে থাকে। তাদের মতে, ওনাদের অনেকে প্রথমে মুশরিক ও কাফির ছিলেন এবং অনেকে কবীরা গুনাহও করে ছিলেন। অতঃপর তওবা করে নবী হয়েছেন। আমার কাছে তাদের এ অবাঞ্ছিত বক্তব্য প্রতিহত করার জন্য কেবল কঞ্চির কলম ও কালি ব্যতীত আর কিছু নেই। তাই এ কালি কলম দিয়ে তাদের ওসব ভ্রান্ত আকীদা খণ্ডন করার মনস্থ করেছি এবং আমার মান সম্মান এবং ভাষা ও কলমকে নবীর শান রক্ষার জন্য ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পেরে ধন্য মনে করছি। 


❏ সৈয়্যদুনা হযরত খুবই সুন্দর বলেছেন-

فان ابى ووالدىتى وعرضى - لعرض محمد منكم وقاء

অর্থাৎ আমার মা- বাপ ইজ্জত সম্মান সব কিছু প্রিয় নবীজী (ﷺ) জন্য উৎসর্গীত।’’  ৫৩৫

➥535. 

এ হাদিসটি নিয়ে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন” ১ম খণ্ডের ........ পৃৃষ্ঠায় দেখুন।


আমার এ প্রবন্ধটা অনেক দিন আগে আল ফকীহ নামক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকদের বার বার তাগাদার কারণে জা’আল হকের দ্বিতীয় সংস্করণে পরিশিষ্ট হিসেবে সংযোজন করা হলো। আল্লাহ তা’আলা একে কবুলকরে জনগণের জন্য কল্যাণকর করুন। এতে একটি ভুমিকা ও দু’টি অধ্যায় রয়েছে।


ভূমিকা


গুনাহ কয়েক রকমের আছে, যেমন র্শিক, কবীরা ও সগীরা। সগীরা গুনাহ দু’ধরনের হয়ে থাকে- কতেকগুলো হচ্ছে ক্ষতিকর ও জিল­তীপূর্ণ, যেমন- চুরি, ওজনে কম দেয়া ইত্যাদি, আর কতেকগুলো এ রকম নয়। আবার এ সব গুনাহের দুটি পদ্ধতি রয়েছে; কতেকগুলো ইচ্ছাকৃত করা হয় আর কতেকগুলো ভুলবশতঃ করা হয়। আম্বীয়া কিরামের জন্যও দুটি অবস্থা রয়েছে- একটি হচ্ছে নবুয়তের আগেরও অপরটি হচ্ছে নবুয়তের পরবর্তী অবস্থা। খোদার মেহেরবাণীতে নবীগণ সব সময় র্শিক কুফরী, বদআকীদাপূর্ণ ও গর্হিত আচরণ থেকে পবিত্র। তাঁরা নবুয়তের আগে বা পরে, ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশতঃ এক মুহূর্তের জন্যও বদআকীদা পোষণ করতে পারেন না। কেননা তাঁর জন্মগতভাবেই আরিফ উল্লাহ (আল্লাহকে সনাক্তকারী) হয়ে থাকেন। 


❏ ‘মদারেজ ও মওয়াহেব’ গ্রন্থে উল্লে­খিত আছে যে হযরত আদম (عليه السلام) সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই আরশের নীচে লিখা অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন-

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ

এর থেকে আদম (عليه السلام)কে জন্মগতভাবে আরিফ উল্লাহ বলা যায়। ৫৩৬

ওস্তাদ ছাড়া লিখা পড়া জানা এবং জন্মের সাথে সাথে লিখা পড়তে পারা তা-ই প্রমাণ করে। 


❏ হযরত ঈসা (عليه السلام) জন্ম হওয়া মাত্রই বলেছিলেন-

قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا

আমি আল্লাহর বান্দা, আমাকে কিতাব প্রদান করেছেন এবং নবী মনোনীত করেছেন।’’  ৫৩৭

➥537. সূরা মারিয়ম, আয়াত নং-৩০


❏ তিনি আরও বলেছেন-

وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا (৩১) وَبَرًّا بِوَالِدَتِي

আমাকে আমরণ নামায ও যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন এবং আমি নিজের মায়ের সাথে সৎ আচরণকারী।’’৫৩৮

➥538.সূরা মরিয়ম, আয়াত নং-৩১


এ আয়াত থেকে বোঝা গেল হযরত মসীহ (عليه السلام) জন্ম গ্রহণের সাথে সাথে খোদার খোদায়িত্ব, নিজের নবুয়াত লাভ ও ইঞ্জিল কিতাব প্রদানের কথা জানতেন। তিনি কর্মকৌশল, স্বভাব চরিত্র ও পারিবারিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও সম্যক অবগত ছিলেন। হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) শৈশবে নিজের কাফির কউমের কাছে তাওহিদের এমন মজবুত দলীল পেশ করেছিলেন, যা অখণ্ডনীয় ছিল। তিনি চাঁদ সূর্য ও তারকারাজীর অস্ত যাওয়া ও অবস্থার পরিবর্তন হওয়া থেকে ওগুলোকে মখলুক (সৃষ্ট) বলে প্রমাণিত করেছেন। 


❏ তিনি তারকারাজী দেখে বলেছিলেন قَالَ هَذَا رَبِّي (ওহে কাফির, এগুলো কি আমার রব হতে পারে? (সূরা আনআম, আয়াত, ৭৮) 


❏ এবং ডুবে যেতে দেখে বলেছিলেন,

 قَالَ لَا أُحِبُّ الْآفِلِينَ 

(ডুবন্ত জিনিসকে আমি পছন্দ করি না। সূরা আন‘আম, আয়াত নং-৭৬) 


তার শৈশবের এ পবিত্র কথাবার্তা বু-আলী সিনা ও ফরাবীর সমস্ত যুক্তি বিদ্যাকেও হার মানিয়েছে। তার এ কথাবার্তাকে আজকালকার যুক্তিবাদীরা সাজিয়ে গুছিয়ে এভাবে বলেন-

العالم متغير وكل متغير حادث

অর্থাৎ পৃথিবী পরিবর্তনশীল এবং প্রত্যেক পরিবর্তননীয় বিষয় ক্ষণস্থায়ী। সুতরাং العالم حادث  পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী। অতঃপর বলেন-

العالم حادث ولا شيئ من الحادث بمعبود فالعالم ليس بمعبود

-‘‘পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী এবং কোন ক্ষণস্থায়ী জিনিস খোদা হতে পারে না। অতএব পৃথিবী খোদা নয়।’’ 


❏ এ ধরনের বিশ্লেষণকে স্বীকৃতি প্রদান পূর্বক আল্লাহ তাআলা ইরশাদ ফরমান-

وَتِلْكَ حُجَّتُنَا آتَيْنَاهَا إِبْرَاهِيمَ عَلَى قَوْمِهِ

-‘‘এ আমার যুক্তি প্রমাণ যা ইব্রাহীম (عليه السلام)কে দিয়েছিলাম তাঁর কউমের মুকাবিলায়।’’  ৫৩৯

➥539.সূরা আনআম, আয়াত নং- ৮৩


হুযূর সৈয়্যদুল আম্বিয়া (ﷺ) জন্ম লাভ করার সাথে সাথে সিজ্দাতে গিয়ে উম্মতের জন্য সুপারিশ করেছেন। (মাদারেজুন নবুয়ত ও মাওয়াহেবুল ল্লাদুন্নিয়া গ্রন্থ দ্রষ্টব্য) এতে বোঝা যায়, তিনি (ﷺ) আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে, নিজের অবস্থান ও পদমর্যাদা এবং উম্মতের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হয়েই জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কালে ছেলেরা তাঁকে খেলাধুলার প্রতি অনুপ্রাণিত করতে চাইলে তিনি তাদেরকে যে উত্তর দিয়েছিলেন, তা এরিষ্টটল ও প্লেটোর সমস্ত দর্শনকেও হার মানায়। সেই উত্তরটা ছিল মানব জাতির জিন্দেগীর মূল উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন- 

مَا خَلَقْنَا لهذا

-আমাদেরকে এ জন্য সৃষ্টি করা হয়নি।’’ 


❏ আল্লাহ তা’আলা একে প্রত্যায়ন করে বলেন-

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

-‘‘আমি জ্বীন ও মানুষকে ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।’’ ৫৪০

➥540. সূরা জারিয়াহ, আয়াত নং-৫৬।


❏ নবী করীম (ﷺ) বলেন-

كُنْتُ نَبِيًّا وَآدَمُ بَيْنَ الْمَاءِ

আমি ওই সময় নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম (عليه السلام) মাটি পানিতে বিলীন ছিলেন।’’  ৫৪১

➥541. এ হাদিসটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন” ১ম খণ্ডের ........ পৃৃষ্ঠায় দেখুন।


❏ তাফসিরাতে আহমদিয়্যাহ গ্রন্থে কোরআনুল কারীমের সূরা বাকারার ১২৪ নং আয়াত- 

لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ

এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লে­খিত আছে-

انهم معصومون عن الكفر قبل الوحى وبعده باجماع

অর্থাৎ নবীগণ ওহী প্রাপ্তির আগে ও পরে কুফরী থেকে পূতঃপবিত্র থাকেন।’’ ৫৪২

➥542. আল্লামা মোল্লা জিওন, তাফসিরে আহমদিয়্যাহ, পৃষ্ঠা-৩৪।


এ সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে বোঝা গেল যে, নবীগণ জন্মগতভাবেই আল্লাওয়ালা হয়ে থাকেন। তাদের পবিত্র সত্তা কখনও গুমরাহীর অপবাদে কলঙ্কিত হতে পারে না। জেনে শুনে তারা নবুয়তের আগে ও পরে কখনও গুনাহে কবীরায় (গুরুপাপ) লিপ্ত হননি, তবে হ্যাঁ ভুল বশতঃ গুনাহ প্রকাশ পেতে পারে, কিন্তু এতে অটল থাকতেন না। বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হতো। নবুয়তের আগে বা পরে সে ধরনের সগীরা গুনাহ (লঘু পাপ) তাঁদের থেকে কখনও প্রকাশ পেতে পারে না, যেগুলো গর্হিত ও জিল­তীপূর্ণ। অবশ্য সগীরা গুনাহের মধ্যে যে গুলো এ ধরনের নয়, তা প্রকাশ পেতে পারে। উল্লে­খ্য যে এ বিশ্লেষণ সেসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যে গুলো তবলীগে দ্বীনের সাথে জড়িত নয়। কেননা, তবলীগি আহ্কামের ক্ষেত্রে কমবেশী বা গোপন করা থেকে নবীগণ সব সময় নিষ্পাপ। এক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশতঃ কখনও কোন প্রকারের পাপ হতে পারে না। গুনাহের এ বিশ্লেষণ অন্যান্য নবীদের জন্য করা হয়েছে, কেননা তাদের থেকে মাঝে মধ্যে গুনাহ প্রকাশ পেতে পারে। কিন্তু সৈয়্যদুল আম্বিয়া হুযূর (ﷺ) থেকে কখনও কোন প্রকারের গুনাহ প্রকাশ পায়নি। এ ব্যাপারে উম্মতের ঐক্যমত রয়েছে যে নবুয়তের আগে ও পরে সগীরা-কবীরা কোন প্রকারের গুনাহ ইচ্ছাকৃতভাবে করেননি। 


❏ যেমন তাফসিরাতে আহমদিয়্যাহ গ্রন্থে কোরআনুল কারীমের সূরা বাকারার ১২৪ নং আয়াত- 

لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ

এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লে­খিত আছে-

لا خلاف لاحد فى ان نبينا عليه السلام لم يرتكب صغيرة ولا كبيرة طرفة عين قبل الوحى وبعده كما ذكره ابو حنيفة فى الفقه الاكبر

-‘‘এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, আমাদের নবী (ﷺ) নবুয়াতের আগে বা পরে এক মুহূর্তের জন্যও সগীরা বা কবীরা কোন প্রকারের গুনাহে লিপ্ত হননি, যেমন ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) ফিক্হে আকবরে উল্লে­খ করেছেন।’’  ৫৪৩

➥543. আল্লামা মোল্লা জিওন, তাফসিরে আহমদিয়্যাহ, পৃষ্ঠা-৩৪।


❏ তফসীরে রূহুল বয়ানে সূরা আশ-শূরার ৫২ নং আয়াত

مَا كُنْتَ تَدْرِي مَا الْكِتَابُ

এর তাফসীর প্রসঙ্গে উল্লে­খিত আছে-

ويدل عليه انه عليه السلام قيل له هل عبدت وثناقط قال لا قيل هل شربت خمرا قط قال لا وما زلت اعرف ان الذين هم عليه كفر

-‘‘হুযূর (ﷺ)কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আপনি কখনও মূর্তি পূজা করেছিলেন? তিনি ইরশাদ ফরমান- ‘না’। “আপনি কখনও শরাব পান করেছিলেন?” ফরমালেন- ‘না, আমিতো সবসময় জানতাম যে, আরববাসীর এ আচরণ কুফরী’।’’ ৫৪৪

➥544. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৪৭।

Top