প্রতি ৯৯ জন মহিলার মধ্যে একজন জান্নাতে যাবে


عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ من تسع وتسعين امرأة واحدة وبقيتهن فى النار 

হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত যে, ৯৯ জন মহিলার মধ্যে একজন মহিলা জান্নাতে যাবে, অবশিষ্ট মহিলা জাহান্নামে যাবে।২৭৪

২৭৪.কানযুল উম্মাল, পৃ. ১৬৫

 

হে আল্লাহ! আপনার নিকট আমরা পানাহ চাই। সম্মানিত পাঠক পাঠিকা দেখুন, হাদীসের মর্মানুযায়ী কি পরিমাণ মহিলা জাহান্নামে যাবে। অত্যন্ত শিক্ষনীয় বিষয় মহিলারা আলা ভোলা সহজ সরল হওয়ার কারণে জ্ঞান-বুদ্ধির স্বল্পতা এবং শরীয়তের বিষয়াদিতে দুর্বলতা হেতু মহিলারা শয়তানের জালে আটকে গিয়ে জাহান্নামের উপযোগী হয়ে যায়। গুনাহর অনুভূতিই তাদের হয় না। আবার তারা খাঁটি দিলে তওবাহও করে না। অধিক সময় নেক কাজের পরিবর্তে পাপের কাজে অধিক মনোযোগী হয়ে যায়। যে সমস্ত কাজের কারণে মহিলারা গুনাহগার হয় সেগুলো আমরা এখন আলোচনা করব। সুতরাং বর্ণিতব্য বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য করলে এবং কার্যে পরিণত করলে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবে।


১। জ্যোতিষের গণনা এবং গণকের কাছে গিয়ে গণনা করানো। যারা এ সমস্ত বিশ্বাস করে তাদের ঘরে কোন প্রকার বরকত হবে না। যে সমস্ত মহিলার প্রতি স্বামী অসন্তুষ্ট থাকে, স্বামীকে বশে আনতে শরীয়ত বিরোধী নানা তাবিজ ও তন্ত্রমন্ত্র বিশ্বাস করে। এ ধরনের কাজ কারবার সরাসরি হারাম। তাবিজ ব্যবসায়ীরা নাকি গায়েব জানতে পারে। মানুষের কাছ থেকে তারা টাকা পয়সা গ্রহণের জন্য নানা ভেলকি বাজি করে বেড়ায়, ধোঁকা দেয় মানুষকে বিশেষ করে মহিলাদেরকে সর্বনাশ করে ছাড়ে।


২। প্রতিটি বিপদে মুছিবতে জিন-ভূত ইত্যাদির প্রভাব আছে বলে মনে করা। এগুলো ছাড়া ভণ্ড পীর ফকিরের আশ্রয় নেয়া এবং তাদের কাছ থেকে ইসলাম পরিপন্থী নানা উপকরণ গ্রহণ করা। 


৩। যে কোন কাজ সমাধান করতে যাদু-টোনা টুটকা চিকিৎসা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজে বিশ্বাস করা। আল্লাহ না করুন, এ ধরনের অপ্রত্যাশিত কাজের সম্মুখীন হয়ে গেলে এ বিষয়ে যে সমস্ত নেককার লোক অভিজ্ঞ তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে যে সমস্ত দোয়া কালাম ও নিয়ম-নীতি আছে সেগুলো প্রয়োগ করায় দোষ নেই। ভণ্ড ধোঁকাবাজ ও শরীয়তের ধার ধারে না, এ ধরনের সর্বনাশা লোকদের খপ্পরে পড়ে এদের বিশ্বাস করে ঈমান ধ্বংস করা যাবে না। এ ব্যাপারে মহিলারাই বেশি উৎসাহী ও আগ্রহী। তারা ভণ্ড পীর-ফকিরদের প্রতি বেশি দুর্বল।


৪। মহিলারা প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে পান থেকে চুন খসে পড়লেই ঝগড়ার সূচনা ঘটায়। স্বাভাবিক কথা-বার্তা বন্ধ করে দেয়, একে অপরকে দেখলে সহ্য করতে পারে না। অথচ জাগতিক ও প্রবৃত্তির কারণে এক মুমিন অপর মুমিনের সাথে তিন দিনের বেশি সালাম কালাম কথাবার্তা ছেড়ে দেয়া জায়েজ নেই। বুখারী শরীফে হযরত আবু আইয়ূব আনসারী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত যে, কোন মানুষ তার অপর ভাইয়ের সাথে তিন দিন ধরে কথাবার্তা বন্ধ করা জায়েজ নেই। দেখা-সাক্ষাৎ হলে একে অপরকে এড়িয়ে যাওয়া মোটেও কাম্য নয়। তাদের মধ্যে সেই উত্তম যে অগ্রে সালাম করে। ২৭৫

২৭৫.বুখারী খণ্ড ২, পৃ. ৮৯


৫। অভিশাপ, কুৎসা রটনা ইত্যাদি স্বাভাবিক বিষয় অল্প কথায় লা’নত দিতে থাকে, কুৎসা রটনায় লেগে যায় এবং এক পর্যায়ে ঝগড়া আরম্ভ হয়ে যায়। তাদের এই নোংরা কাজের ফলাফল শেষ পর্যন্ত এ রকম হয় যে, তাদের সন্তানদের মধ্যে গিয়ে গড়ায়। মারা-মারি, হত্যা, জেল জরিমানা এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। নিষেধ করলেও বিরত হয় না। উল্টো আরো বলে, আমার মনে যা চায় তাই করব। এতে তোমার নাক গলানোর অধিকার নেই। মনের ক্ষোভ ঝাড়তে গিয়ে জাহান্নামে চলে গেলে কারো কিছু বলার আছে কি? বা কেউ তাদেরকে এ রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনবে কি? তাই সাবধান! সামাজিকভাবে একে অপরের সাথে মনোমালিন্য ঝগড়া ইত্যাদি অধিকাংশ হয় মহিলাদের কারণে। আর মহিলারা এ সুযোগটা পেয়েছে বেপর্দা থাকার কারণে। মহিলারা শরীয়ত মত পর্দা করলে আর কোন সমস্যা থাকবে না বলে মনে করি।


৬। মহিলারা বেশির ভাগই নামাযের ধার ধারে না। কখনো সন্তানের বাহানা, কখনো বানোয়াট বাহানা ও রান্না-বান্নার বাহানা দিয়ে নামায থেকে বিরত থাকে। আবার পড়লেও সময়ের প্রতি মোটেও লক্ষ্য রাখে না। নামায যেন তাদের কাছে একটা বোঝা। ওয়াক্ত চলে যায় যায় এ সময় কাজও প্রায় সমাপ্তির পথে। একটু জিরিয়ে নেয়ার দরকার, তাই নামাযটাকে জিরিয়ে নেয়ার উপকরণ হিসেবে আদায় করে। আযান দিলেই নামায আদায় করে নেয়া কর্তব্য। দেরী করলে মাকরূহ বা কাযা হয়ে যেতে পারে।


৭। মহিলারা সাধারণত ফজরের নামায আদায় করে না। আবার আদায় করলেও কাযা আদায় করে থাকে। অধিক রাত জেগে থেকে শয়ন করে এবং সকালে জাগ্রত হয় দেরীতে। কোন কোন সময় সূর্যোদয় পর্যন্ত হয়ে যায়। আফসোস! হাদীস শরীফে রয়েছে, এ সময় যারা ঘুম থেকে জাগ্রত হয় শয়তার তাদের কানে পেশাব করে। কোন কোন মহিলা এমন সময় ফজরের নামায আদায় করতে যায় যখন সূর্যোদয় হতে থাকে। অধিকাংশ মহিলা ফজরের সময় হল কি হল না এদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করে না। ব্যাস, পড়লেই হল। নামায হল কি হল না এদিকে চিন্তা করার ফুরসতও নেই।


৮। মহিলারা সাধারণত অলংকাররাদির কারণেই যাকাতের উপযোগী তথা সাহেবে নিসাব হয়ে থাকে। বর্তমানে চার হাজার টাকার অলংকার হলেই নিসাব পূর্ণ হয়ে যায়। এতদ্ব্যতীত অলংকারের যাকাত হয় না। এর আরেকটি কারণ এ হতে পারে যে, অধিকাংশ সময় তাদের হাতে টাকা -পয়সা হয় না। শরীয়ত মত এ অসুবিধাটি গ্রহণযোগ্য নয়। এ গুরুত্বপূর্ণ ফরজটি আদায়ের জন্য কিংবা স্বামীর কাছ থেকে হাওলাত নিয়ে কিংবা স্বামীকে এ কথা বলে যে, এই পরিমাণ অলংকারের যাকাত দেয়া আবশ্যক। যেমনিভাবে অন্যান্য বস্তু স্বামীর নিকট চাওয়া হয়। যাকাতের ন্যায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আদায় করার জন্য স্বামীর কাছে চেয়ে হলেও আদায় করা কর্তব্য। এ ব্যাপারে স্বামী তার কথায় কর্ণপাত না করলে এ ফরজ কাজটি সম্পাদনের জন্য এবং গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য কিছু অলংকার বিক্রি করে হলেও যাকাত আদায় করতে হবে। কিংবা নির্ধারিত পরিমাণের চাইতে কমিয়ে ফেলা উচিত। অথবা কন্যা বা অন্য কাউকে এর মালিক বানিয়ে দেয়া কর্তব্য। অথবা বিক্রি করে নিজের প্রয়োজনে টাকাগুলো খরচ করে ফেলবে।


৯। ধন-সম্পদ বা অলংকারাদির কারণে মহিলারা সাহেবে নিসাব হওয়া সত্ত্বেও কুরবানী করে না। অথচ সাহেবে নিসাব হওয়াতে কুরবানীর এক অংশ ওয়াজিব হয়ে যায়। এ ধরনের সংকীর্ণতার আরেকটি কারণ তাও হতে পারে যে, মহিলাদের হাতে নগদ অর্থ-কড়ি থাকে না। এতে কুরবানীর দায় থেকে অব্যাহতি পাবে না, যাকাতের ফরজিয়াত থেকে মুক্তি পাবে না।


১০। হায়েয এবং ইস্তেহাযা (নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত জরায়ু থেকে রক্ত বের হওয়া) সম্পর্কে নিয়ম বিধি না জানার কারণে অনেক সময় প্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। ঋতুশ্রাব ব্যতীত ইস্তেহাযার রক্ত বের হতে থাকলে মহিলারা সাধারণত নামায আদায় করে না, এভাবে তারা কত ফরজ থেকে বিরত থাকে তার ইয়ত্তা নেই। অথচ হায়েজ ব্যতীত ইস্তেহাযার রক্ত বের হলেও নামায মাফ নেই। নিজে এই মাসয়অলা না জানলে বিভিন্ন ইসলামী ফিকহ গ্রন্থ থেকে জেনে নেয়া যেতে পারে কিংবা কোন আলেমের নিকট থেকে তা জেনে নেয়া যেতে পারে। এতে লজ্জার কিছু নেই। এ লজ্জা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ।


১১। মহিলারা সাধারণত অপবিত্রতার গোসল বিলম্বে করে থাকে। এমন কি নামাযও কাযা হয়ে যায়। সুতরাং রাতের বেলা কোন কারণে অপবিত্র হয়ে গোসল করা জরুরী হয়ে গেলে প্রত্যুষে গোসল করে না এবং ফজরের নামায পড়ে না বরং দিনের বেলা গোসল করে। সময় মত নামায না পড়ে কাযা করে ফেলা কবিরা গুনাহ। গোসলের প্রয়োজন হলে সকাল সকাল গোসল করে ফজর পড়ে নেয়া উচিত। গোসলের প্রয়োজনীয় উপকরণাদি আগে থেকে প্রস্তুত রাখা ওয়াজিব। ঠাণ্ডা পানি দ্বারা গোসল করা ক্ষতিকর হলে গরম পানির ব্যবস্থা করা আবশ্যক। তাহলে সময় মত নামায পড়া যাবে।


১২। কয়েকজন মহিলা একত্রিত হলে তারা একে অপরের কুৎসা রটনা, অপরের বদনাম, নানা ধরনের দোষ ত্রুটি খুঁজে থাকে। এটা গুনাহের কাজ। কারো সামনে যা বলা যায় না সে কথাটি তার অগোচরে বলা অত্যন্ত দোষণীয়। অপরের গীবত করা পবিত্র কুরআনে মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খাওয়ার মত জঘন্য কথা বলা হয়েছে। গীবত মায়ের সাথে ব্যভিচার করার চাইতে জঘন্য অপরাধ। মহিলাদের উচিত তারা যেন একে অপরের কুৎসা রটনা না করে এবং অপর কেউ করলেও তাতে বাধা দিবে। কোন মহিলা করলেও সেখান থেকে উটে যাবে। এ ধরনের কাজ থেকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এটা পাপের কাজ।


১৩। ঝগড়-ঝাটির বিষয়টা মহিলাদের মধ্যে বেশি হয়। সামান্য কথাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। ঝগড়া-ফ্যাসাদ অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এগুলো এড়িয়ে যাওয়া কর্তব্য।


১৪। যে স্বামীর অধীনে থেকে জীবন চলে যায় তার সম্মান করা ওয়াজিব। তার প্রতি মুখভার করা হয়, স্বামীর কোন প্রশ্নের জবাব তো দেয়ই না অধিকন্তু উল্টো ঝগড়ায় লেগে যায়। স্বামী কোন কষ্টের কথা বলে ফেললে ঝগড়া না করে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। হ্যাঁ, ভদ্রতা বজায় রেখে এক সময় বলবে যে, আপনার অমুক কথাটি ঠিক হয়নি। আমি কি ঠিক বলিনি? এমন কথা বলতে নেই যে, মনে আঘাত লাগবে। এতে করে স্বামীর মনেও বিষয়টি সম্পর্কে বুঝে আসবে। তাহলে স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসায় চির ধরবেনা।



১৫। অধিকাংশ যুবতী মহিলাই নামাযের ধার ধারে না। জীবনের একটি মহামূল্যবান অংশ চলে যাবার পর নামাযের কথা স্মরণ হয়। মূর্খতার কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। বালেগা হওয়ার পূর্ব থেকেই নামায আরম্ভ করা উচিত। আর বালেগা হওয়ার পর তো নামায পড়া ফরজই হয়ে যায়। আগে থেকেই অভ্যাস না থাকলে বালেগা হওয়ার পরও নামায পড়তে চায় না।


১৬। যে সমস্ত মহিলা নামায পড়ে তারা ভ্রমণাবস্থায় নামায ছেড়ে দেয় কিংবা কাযা করে। মনে রাখবেন, ভ্রমণাবস্থায় নামায কাযা বা ছেড়ে দেয়া জায়েজ নেই। পর্দা করে ওযু করুন। রেলগাড়ীতে ভাল করে ওযু করা যায়। মারাত্মক কোন অসুবিধা না থাকলে নামায কাযা করা কবীরা গুনাহ।


১৭। মহিলারা সাধারণত কৃপণ হয়ে থাকে। টাকা পয়সা কাপড় চোপর ইত্যাদি যত্ন করে রেখে দেয়। কিন্তু কোন অভাবগ্রস্তকে বা ফকির মিসকিনকে প্রয়োজনের সময় দেয় না। দান-খয়রাত করা, অপরকে সহায়তা করা আবশ্যক। অতটুকুও না করা কৃপণতা এবং জাহান্নামে যাবার কারণ।


১৮। ভুল হয়ে গেলে বা কারো অধিকার বিনষ্ট হয়ে গেলে ক্ষমা চাওয়া লজ্জা মনে করে। আপনার পক্ষ থেকে কেউ কষ্ট পেলে বা তার অধিকারে হস্তক্ষেপ হয়েছে তাহলে সত্বর তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তাহলে কিয়ামতের দিন এভাবে জিজ্ঞাসিত হবেন না।


১৯। কোন প্রকার পাপ কিংবা আল্লাহর নাফরমানী হয়ে গেলে লজ্জিত হওয়ার কিংবা ইস্তেগফার করতে লজ্জাবোধ করা হয়। তা বোকামী। নামায পড়ে আল্লাহর নিকট অতি সত্বর ক্ষমা চাওয়া আবশ্যক। মনে রাখবেন, কোন গুনাহ হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি তওবাহ করুন। নামায পড়ে ক্ষমা চান। কিয়ামতের দিন কবীরা গুনাহ থেকে না বাঁচার কারণে জাহান্নামে যাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়।

Top