পাত্র-পাত্রী দেখা


ইসলাম বৃহৎ স্বার্থে সীমিত পর্যায়ে পাত্র-পাত্রী একে অপরকে দেখা বৈধ ঘোষণা করেছে। বিবাহ দ্বারা দু’টি মন ও দু’টি পরিবারের মধ্যে চিরস্থায়ী সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্ক ও ভালোবাসা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী একে অপরকে দেখে এবং বুঝে নেওয়া জরুরী। হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা (رضي الله عنه) বলেন-

خَطَبْتُ امْرَأَةً فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ نَظَرْتَ إِلَيْهَا؟: قُلْتُ: لَا قَالَ: فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا

আমি একজন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব করলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, তাকে দেখে নাও। কেননা এটা তোমাদের উভয়ের মধ্যে স্থায়ী ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবে। ৮২

৮২.আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও দারেমী, সূত্র. মিশকাত, পৃ. ২৬৯

 

হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-

إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى مَا يَدْعُوهُ إِلَى نِكَاحهَا فَلْيفْعَل 

যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তখন যদি তার পক্ষে তার এমন কোন (জায়েয অঙ্গ) দেখা সম্ভবপর হয় যা তাকে বিবাহের দিকে আহবান করে, তখন সে যেন তা দেখে নেয়। ৮৩

৮৩.আবু দাঊদ, সূত্র. মিশকাত, পৃ. ২৬৮

 

তবে ইসলামের প্রদত্ত এই সুযোগকে পুঁজি করে বিয়ের পূর্বে নারী-পুরুষ অবাধ মেলা-মেশা করা, একত্রে ঘুরা-ফিরা করা সম্পূর্ণ হারাম। ইসলাম বিয়ের পরে ভালোবাসাকে সমর্থন করে বিয়ের পূর্বে নয়। 


স্বামী নির্বাচনে ইসলাম নারীকে পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। কোনো অভিভাবক এই অধিকার খর্ব করতে পারে না। হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন-

 لَا تُنْكَحُ الْأَيِّمُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ وَلَا تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ. قَالُوا: يَا رَسُول الله وَكَيف إِذْنهَا؟ قَالَ: أَنتسكت

বালিগ বিবাহিতা নারীকে ষ্পষ্ট অনুমতি ব্যতীত বিবাহ দেওয়া যাবে না। অনুরূপ বালিগা কুমারী নারীকেও তার অনুমতি ছাড়া বিবাহ দেওয়া যাবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কুমারী নারীর অনুমতি কীভাবে বুঝা যাবে? তিনি বললেন, নিরবতাই তার অনুমতি। ৮৪

৮৪.বুখারী ও মুসলিম, সূত্র. মিশকাত, পৃ. ২৭০


হযরত খানাসা বিনতে খিযাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তার পিতা তাকে বিবাহ দিল অথচ সে পূর্ব বিবাহিতা; উক্ত বিবাহ অপছন্দ করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ ’র নিকট গিয়ে অভিযোগ করলে তিনি উক্ত বিবাহ ভেঙ্গে দেন। ৮৫

৮৫.বুখারী, সূত্র.  মিশকাত, পৃ. ২৭০


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, এক বালিগা কুমারী মেয়ে রাসূলুল্লাহ ’র দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করলো যে, তার পিতা তার অমতে তাকে বিবাহ দিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে এ স্বামীর সাথে থাকা না থাকার ইখতিয়ার দিলেন। ৮৬

৮৬.আবু দাউদ, সূত্র.  মিশকাত, পৃ. ২৭১

 

এভাবে একটি মেয়ে নবী করিম (ﷺ) ’র নিকট এসে বললো যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা আমার বিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে করে দিয়েছেন। সুতরাং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রিয়নবী (ﷺ) মেয়েটিকে অধিকার দিলেন যে, তুমি চাইলে এ বিয়ে বহাল রাখ, চাইলে ভঙ্গ কর। এরপর মেয়েটি বললো, আমি আমার পিতার সিদ্ধান্তকে বহাল রাখছি। কিন্তু আমি এই প্রশ্ন মহিলাদেরকে একথা জানিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য করেছি যে, তাদের ব্যাপারে পৃষ্ঠপোষকদের কোনো ক্ষমতা নেই। ৮৭

৮৭.বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, সূত্র, ইসলামে নারী, পৃ. ৮১

 

এভাবে মানবতার ইতিহাসে নারী এতোবড় অধিকার ও মর্যাদা লাভ করলো। অর্থাৎ ইসলামপূর্বে নারীর গ্রহণ ও বর্জনের কোনো অধিকার ছিলোনা। তখন তার জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতো পুরুষরাই। তার ইচ্ছা-অধিকার ছিলোনা যেকোনো পুরুষ তাকে ক্রয়-বিক্রয় করতো।

Top