ষটবিংশ অধ্যায় 


খাবার খাওয়া এবং পানি পান করা

  

খাবার খাওয়ার ও পানি পান করার  আদব বা সুন্নাত এবং খাওয়ার আগে ও পরের প্রয়োজনীয় দোয়াসহ নিচে দেয়া হলোঃ


খাবার খাওয়ার আদব সমূহঃ


(১) উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।


حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا قَيْسٌ، عَنْ أَبِي هَاشِمٍ، عَنْ زَاذَانَ، عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ قَرَأْتُ فِي التَّوْرَاةِ أَنَّ بَرَكَةَ الطَّعَامِ الْوُضُوءُ قَبْلَهُ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏ "‏ بَرَكَةُ الطَّعَامِ الْوُضُوءُ قَبْلَهُ وَالْوُضُوءُ بَعْدَهُ ‏"‏ ‏.‏ وَكَانَ سُفْيَانُ يَكْرَهُ الْوُضُوءَ قَبْلَ الطَّعَامِ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَهُوَ ضَعِيفٌ ‏.‏


সালমান رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, আমি তাওরাতে পড়েছিঃ “খাবার শুরুর আগে উযু করার মধ্যেই খাবারের বরকত নিহিত।” আমি এ কথা নবী ﷺ এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন খাদ্য গ্রহণের আগে ও পরে উযু করার (হাত ধোয়ার) মাধ্যে খাদ্যের বরকত নিহিত। সুফিয়ান رحمة الله খাওয়ার পূর্বে উযু করা পছন্দ করতেন না। 


(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৭৬১)



(২)দস্তরখানা বিছিয়ে খাবার খাওয়া।


عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي عَنْ يُونُسَ قَالَ عَلِيٌّ هُوَ الإِسْكَافُ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسٍ قَالَ مَا عَلِمْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَكَلَ عَلٰى سُكْرُجَةٍ قَطُّ وَلاَ خُبِزَ لَه“ مُرَقَّقٌ قَطُّ وَلاَ أَكَلَ عَلٰى خِوَانٍ قَطُّ قِيلَ لِقَتَادَةَ فَعَلاَمَ كَانُوا يَأْكُلُونَ قَالَ عَلٰى السُّفَرِ.


আনাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, নবী ﷺ কখনও ‘সুকুর্‌জা’ অর্থাৎ ছোট ছোট পাত্রে আহার করেছেন, তার জন্য কখনও নরম রুটি বানানো হয়েছে কিংবা তিনি কখনো টেবিলের উপর আহার করেছেন বলে আমি জানি না। ক্বাতাদাহকে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে তাঁরা কিসের উপর আহার করতেন। তিনি বললেনঃ দস্তরখানের উপর।


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৩৮৬) (ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৮১)



(৩) খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলাঃ


হুযাইফা رضي الله عنه রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, শয়তান ঐ খাবারকে নিজের জন্য হালাল মনে করে যার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয় নি।


«بِسْمِ اللَّهِ»


(বিসমিল্লাহ) “আল্লাহ ﷻ'র  নামে।”


حَدَّثَنَا مُؤَمَّلُ بْنُ هِشَامٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، عَنْ هِشَامٍ، - يَعْنِي ابْنَ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ الدَّسْتَوَائِيَّ - عَنْ بُدَيْلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنِ امْرَأَةٍ، مِنْهُمْ يُقَالُ لَهَا أُمُّ كُلْثُومٍ عَنْ عَائِشَةَ، - رضى الله عنها - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى فَإِنْ نَسِيَ أَنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ ‏"‏ ‏.‏


‘আয়িশাহ رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমাদের কেউ আহার করতে বসলে যেন বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করে। সে যদি প্রথমে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে যেন বলেঃ খাবারের শুরুতে আল্লাহ ﷻ'র  নাম শেষেও আল্লাহ ﷻ'র  নাম।

  

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৭৬৭)



(৪) খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে নিচের দোয়া পড়া,


«بسمِ اللَّهِ فِي أَوَّلِهِ وَآخِرِهِ»


(বিস্‌মিল্লাহি ফী আওওয়ালিহী ওয়া আখিরিহী)।


“এর শুরু ও শেষ আল্লাহ‌র নামে।”


حَدَّثَنَا مُؤَمَّلُ بْنُ هِشَامٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، عَنْ هِشَامٍ، - يَعْنِي ابْنَ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ الدَّسْتَوَائِيَّ - عَنْ بُدَيْلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنِ امْرَأَةٍ، مِنْهُمْ يُقَالُ لَهَا أُمُّ كُلْثُومٍ عَنْ عَائِشَةَ، - رضى الله عنها - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى فَإِنْ نَسِيَ أَنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللَّهِ تَعَالَى فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ ‏"‏ ‏.‏


‘আয়িশাহ رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমাদের কেউ আহার করতে বসলে যেন বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করে। সে যদি প্রথমে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে যেন বলেঃ খাবারের শুরুতে আল্লাহ ﷻ'র  নাম শেষেও আল্লাহ ﷻ'র  নাম।

  

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৭৬৭)


(৫)যাকে আল্লাহ কোনো খাবার খাওয়ায় সে যেন বলে,


« اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْراً مِنْهُ».


 (আল্লা-হুম্মা বারিক লানা ফীহি ওয়া আত‘ইমনা খাইরাম-মিনহু)।


“হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এই খাদ্যে বরকত দিন এবং এর চেয়েও উত্তম খাদ্য আহার করান।”


(৬) আল্লাহ‌ কাউকে দুধ পান করালে সে যেন বলে:


«اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَزِدْنَا مِنْهُ».


(আল্লা-হুম্মা বারিক লানা ফীহি ওয়াযিদনা মিনহু)।


“হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এই খাদ্যে বরকত দিন এবং আমাদেরকে তা থেকে আরও বেশি দিন।”


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ زَيْدٍ، عَنْ عُمَرَ، وَهُوَ ابْنُ أَبِي حَرْمَلَةَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ دَخَلْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَا وَخَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ عَلَى مَيْمُونَةَ فَجَاءَتْنَا بِإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ فَشَرِبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا عَلَى يَمِينِهِ وَخَالِدٌ عَلَى شِمَالِهِ فَقَالَ لِي ‏"‏ الشَّرْبَةُ لَكَ فَإِنْ شِئْتَ آثَرْتَ بِهَا خَالِدًا ‏"‏ ‏.‏ فَقُلْتُ مَا كُنْتُ أُوثِرُ عَلَى سُؤْرِكَ أَحَدًا ‏.‏ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مَنْ أَطْعَمَهُ اللَّهُ الطَّعَامَ فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْرًا مِنْهُ ‏.‏ وَمَنْ سَقَاهُ اللَّهُ لَبَنًا فَلْيَقُلِ اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَزِدْنَا مِنْهُ ‏"‏ ‏.‏ وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ لَيْسَ شَيْءٌ يَجْزِي مَكَانَ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ غَيْرُ اللَّبَنِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ ‏.‏ وَقَدْ رَوَى بَعْضُهُمْ هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ عَلِيِّ بْنِ زَيْدٍ فَقَالَ عَنْ عُمَرَ بْنِ حَرْمَلَةَ ‏.‏ وَقَالَ بَعْضُهُمْ عَمْرُو بْنُ حَرْمَلَةَ وَلاَ يَصِحُّ ‏.


ইবনু আব্বাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, আমি ও খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ رضي الله عنه রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সঙ্গে মাইমূনাহ رضي الله عنه-এর কাছে গেলাম। আমাদের জন্য তিনি এক পাত্র দুধ নিয়ে এলেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ (তা হতে) পান করলেন। তাঁর ডান পাশে ছিলাম আমি এবং খালিদ ছিলেন তার বাম পাশে। তিনি আমাকে বললেনঃ এখন তোমার পান করার পালা। তবে তুমি চাইলে তোমার উপর খালিদকে অগ্রাধিকার দিতে পার। আমি বললাম, আপনার উচ্ছিষ্টে আমি আমার উপর কোন লোককে অগ্রাধিকার দিব না। তারপর রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা যাকে আহার করান সে যেন বলে, “হে আল্লাহ! আমাদেরকে এ খাদ্যে বারাকাত দাও এবং আমাদেরকে এর চাইতে উত্তম খাবার আহার করাও।” আর আল্লাহ তা'আলা যাকে দুধ পান করান সে যেন বলে, “হে আল্লাহ! এ দুধে আমাদেরকে বারাকাত দাও এবং এর চাইতেও বেশি আমাদেরকে দান কর।” এরপর রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ একই সঙ্গে পান ও আহারের জন্য যথেষ্ট হওয়ার মত দুধের বিকল্প কোন খাবার নেই। 


(জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৪৫৫, ইবনু মাজাহ, হাঃ ৩৩২২)



(৭) কেউ কিছু পান করালে বা খাওয়ালে তার জন্য দুআঃ


اللَّهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَني وَاسْقِ مَنْ سَقَاني


উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা আত্বইম মান আত্বআমানী অসকি মান সাক্বা-নী।।


অর্থ - হে আল্লাহ! তাকে তুমি খাওয়াও, যে আমাকে খাওয়াল এবং তাকে পান। করাও, যে আমাকে পান করাল। 


حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا شَبَابَةُ بْنُ سَوَّارٍ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنِ الْمِقْدَادِ، قَالَ أَقْبَلْتُ أَنَا وَصَاحِبَانِ، لِي وَقَدْ ذَهَبَتْ أَسْمَاعُنَا وَأَبْصَارُنَا مِنَ الْجَهْدِ فَجَعَلْنَا نَعْرِضُ أَنْفُسَنَا عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَيْسَ أَحَدٌ مِنْهُمْ يَقْبَلُنَا فَأَتَيْنَا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَانْطَلَقَ بِنَا إِلَى أَهْلِهِ فَإِذَا ثَلاَثَةُ أَعْنُزٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ احْتَلِبُوا هَذَا اللَّبَنَ بَيْنَنَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَكُنَّا نَحْتَلِبُ فَيَشْرَبُ كُلُّ إِنْسَانٍ مِنَّا نَصِيبَهُ وَنَرْفَعُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَصِيبَهُ - قَالَ - فَيَجِيءُ مِنَ اللَّيْلِ فَيُسَلِّمُ تَسْلِيمًا لاَ يُوقِظُ نَائِمًا وَيُسْمِعُ الْيَقْظَانَ - قَالَ - ثُمَّ يَأْتِي الْمَسْجِدَ فَيُصَلِّي ثُمَّ يَأْتِي شَرَابَهُ فَيَشْرَبُ فَأَتَانِي الشَّيْطَانُ ذَاتَ لَيْلَةٍ وَقَدْ شَرِبْتُ نَصِيبِي فَقَالَ مُحَمَّدٌ يَأْتِي الأَنْصَارَ فَيُتْحِفُونَهُ وَيُصِيبُ عِنْدَهُمْ مَا بِهِ حَاجَةٌ إِلَى هَذِهِ الْجُرْعَةِ فَأَتَيْتُهَا فَشَرِبْتُهَا فَلَمَّا أَنْ وَغَلَتْ فِي بَطْنِي وَعَلِمْتُ أَنَّهُ لَيْسَ إِلَيْهَا سَبِيلٌ - قَالَ - نَدَّمَنِي الشَّيْطَانُ فَقَالَ وَيْحَكَ مَا صَنَعْتَ أَشَرِبْتَ شَرَابَ مُحَمَّدٍ فَيَجِيءُ فَلاَ يَجِدُهُ فَيَدْعُو عَلَيْكَ فَتَهْلِكُ فَتَذْهَبُ دُنْيَاكَ وَآخِرَتُكَ ‏.‏ وَعَلَىَّ شَمْلَةٌ إِذَا وَضَعْتُهَا عَلَى قَدَمَىَّ خَرَجَ رَأْسِي وَإِذَا وَضَعْتُهَا عَلَى رَأْسِي خَرَجَ قَدَمَاىَ وَجَعَلَ لاَ يَجِيئُنِي النَّوْمُ وَأَمَّا صَاحِبَاىَ فَنَامَا وَلَمْ يَصْنَعَا مَا صَنَعْتُ - قَالَ - فَجَاءَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَسَلَّمَ كَمَا كَانَ يُسَلِّمُ ثُمَّ أَتَى الْمَسْجِدَ فَصَلَّى ثُمَّ أَتَى شَرَابَهُ فَكَشَفَ عَنْهُ فَلَمْ يَجِدْ فِيهِ شَيْئًا فَرَفَعَ رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَقُلْتُ الآنَ يَدْعُو عَلَىَّ فَأَهْلِكُ ‏.‏ فَقَالَ ‏"‏ اللَّهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِي وَأَسْقِ مَنْ أَسْقَانِي ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَعَمَدْتُ إِلَى الشَّمْلَةِ فَشَدَدْتُهَا عَلَىَّ وَأَخَذْتُ الشَّفْرَةَ فَانْطَلَقْتُ إِلَى الأَعْنُزِ أَيُّهَا أَسْمَنُ فَأَذْبَحُهَا لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَإِذَا هِيَ حَافِلَةٌ وَإِذَا هُنَّ حُفَّلٌ كُلُّهُنَّ فَعَمَدْتُ إِلَى إِنَاءٍ لآلِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم مَا كَانُوا يَطْمَعُونَ أَنْ يَحْتَلِبُوا فِيهِ - قَالَ - فَحَلَبْتُ فِيهِ حَتَّى عَلَتْهُ رَغْوَةٌ فَجِئْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏"‏ أَشَرِبْتُمْ شَرَابَكُمُ اللَّيْلَةَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ اشْرَبْ ‏.‏ فَشَرِبَ ثُمَّ نَاوَلَنِي فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ اشْرَبْ ‏.‏ فَشَرِبَ ثُمَّ نَاوَلَنِي فَلَمَّا عَرَفْتُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَدْ رَوِيَ وَأَصَبْتُ دَعْوَتَهُ ضَحِكْتُ حَتَّى أُلْقِيتُ إِلَى الأَرْضِ - قَالَ - فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ إِحْدَى سَوْآتِكَ يَا مِقْدَادُ ‏"‏ ‏.‏ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَانَ مِنْ أَمْرِي كَذَا وَكَذَا وَفَعَلْتُ كَذَا ‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مَا هَذِهِ إِلاَّ رَحْمَةٌ مِنَ اللَّهِ أَفَلاَ كُنْتَ آذَنْتَنِي فَنُوقِظَ صَاحِبَيْنَا فَيُصِيبَانِ مِنْهَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَقُلْتُ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أُبَالِي إِذَا أَصَبْتَهَا وَأَصَبْتُهَا مَعَكَ مَنْ أَصَابَهَا مِنَ النَّاسِ ‏.‏


মিক্‌দাদ رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, প্রচুর খাদ্য সংকটে আমার ও আমার দু’সাথীর দৃষ্টিশক্তি ও শ্রুতিশক্তি কমে যায়। অতঃপর আমরা  রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাহাবীদের নিকটে নিজেদের উত্থাপন করতে লাগলাম। কিন্তু তাঁদের কেউ আমাদের কথা শুনলেন না। সবশেষে আমরা নবী ﷺ-এর নিকট আগমন করলে তিনি আমাদের সাথে নিয়ে তার পরিবারের নিকটে গেলেন। সেখানে তিনটি বকরী ছিল। নবী ﷺ বললেনঃ তোমরা দুধ দোহন করবে। এ দুধ আমরা বণ্টন করে পান করবো। তিনি বলেন, এরপর থেকে আমরা দুধ দোহন করতাম। আমাদের সবাই যার যার অংশ পান করতো। আর আমরা নবী ﷺ এর জন্য তাঁর অংশ উঠিয়ে রাখতাম। মিকদাদ رضي الله عنه বলেন, তিনি রাত্রে এসে এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে নিদ্রারত লোক উঠে না যায় এবং জাগ্রত লোক শুনতে পায়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি মাসজিদে এসে সলাত আদায় করতেন। প্রত্যাবর্তন করে দুধ পান করতেন। একদা রাতে আমার নিকটে শাইতান আগমন করলো। আমি তো আমার অংশ পান করে ফেলেছিলাম। সে বলল, মুহাম্মাদ ﷺ আনসারীদের নিকটে গেলে তারা তাঁকে উপঢৌকন দিবে এবং তাদের নিকটে তাঁর এ অল্প দুধের প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়ে যাবে। অতঃপর আমি এসে সেটুকুও পান করে ফেললাম। দুধ যখন উত্তমভাবে আমার পেটে ঢুকে গেলে আমি বুঝলাম, এ দুধ বের করার আর কোন উপায় নেই তখন শইতান আমার থেকে দূরে সরে গিয়ে বলল, তোমার ধ্বংস হোক, তুমি একি করলে! তুমি মুহাম্মাদ ﷺ-এর দুধ পান করে ফেলেছ? তিনি জাগ্রত হয়ে যখন তা পাবেন না, তখন তোমার উপর বদ-দু’আ করবেন এতে তুমি সর্বনাশ হয়ে যাবে এবং তোমার ইহকাল ও পরকাল নিঃশেষ হয়ে যাবে। আমার শরীরে একটা চাদর ছিল। আমি যদি তা আমার পাদ্বয়ের উপর রাখি তাহলে আমার মাথা বের হয়ে পড়ে, আর যদি আমি তা আমার মাথার উপর রাখি তাহলে আমার পদদ্বয় বেরিয়ে পড়ে। কিছুতেই আমার ঘুম আসছিল না। আমার সাথীদ্বয় তো নিদ্রাচ্ছন্ন ছিল। তারা তো আমার মতো কাজ করেনি। তিনি বলেন অতঃপর নবী ﷺ আগমন করে যেভাবে সালাম করতেন সেভাবেই সালাম করলেন। অতঃপর তিনি মাসজিদে এসে সলাত আদায় করলেন। অতঃপর দুধের নিকটে এসে ঢাকনা খুলে সেখানে কিছুই পেলেন না। এরপর তিনি নিজ মাথা আকাশের দিকে তুললেন। আমি তখন (মনে মনে) বললাম, এখনই হয়তো আমার উপর তিনি বদ্দু’আ করবেন, আর আমি নিঃশেষ হয়ে যাবো। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! যে লোক আমার খাবারের ব্যবস্থা করে তুমি তার খাদ্যের ব্যবস্থা কর। আর যে আমাকে পান করায় তাকে তুমি পান করাও। মিকদাদ رضي الله عنه বলেন, তখন আমি চাদরটি নিয়ে গায়ে বাঁধলাম এবং একটি ছুরি নিলাম, অতঃপর (এ ভেবে) বকরীগুলোর কাছে গেলাম যে, এদের মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি মোটাতাজা আমি সেটি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর জন্য যাবাহ করবো। সেখানে গিয়ে দেখলাম, সেটি দুধে পরিপূর্ণ এবং অন্যান্য সব বকরীও দুধে স্বয়ংস্পূর্ণ। অতঃপর আমি মুহাম্মাদ ﷺ-এর পরিবারের একটি বাসন নিয়ে এলাম যার মধ্যে তাঁরা দুধ দোহাতেন না। তিনি [মিকদাদ رضي الله عنه] বলেন, আমি তার মধ্যেই দুধ দোহন করলাম, এমনকি বাসনের উপরের অংশ ফেনা ফেসে উঠলো। অতঃপর আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর নিকট আগমন করলাম। তিনি বললেন, তোমরা কি রাত্রের দুধ পান করেছো? তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ ﷻ'র  রাসুল! আপনি পান করুন। তিনি পান করে আমাকে দিলেন। আমি যখন বুঝতে পারলাম যে, নবী ﷺ পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন এবং আমি তাঁর নেক দু’আ পেয়ে গেছি, তখন আমি খুশীতে হাসতে হাসতে মাটিতে নুয়ে পড়লে নবী ﷺ বললেনঃ হে মিকদাদ! এটা তোমার এক মন্দকাজ? তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ ﷻ'র  রাসুল! আমার এ ঘটনা ঘটে গেছে। কিংবা তিনি বলেছেন, আমার দ্বারা এরূপ কাজ হয়ে গেছে। তখন নবী ﷺ বললেনঃ এটা একমাত্র আল্লাহ‌র মেহেরবানী! তুমি কেন আমাকে জানালে না? আমরা আমাদের সঙ্গীদ্বয়কে জাগাতাম, তাহলে তারাও এর অংশ পেত। তিনি বলেন, আমি তখন বললাম, যে মহান স্রষ্টা আপনাকে সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর কসম! আপনি যখন পেয়েছেন এবং আমি যখন আপনার সঙ্গে ভাগ পেয়েছি, তখন ভিন্ন কোন ব্যক্তি পাওয়া না পাওয়ার আমি তোয়াক্কা করি না। 


(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫২৫৭) (ই.ফা. ৫১৮৯)



(৮) ডান হাত দিয়ে খাওয়া। 


عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ قَالَ الْوَلِيدُ بْنُ كَثِيرٍ أَخْبَرَنِي أَنَّه“ سَمِعَ وَهْبَ بْنَ كَيْسَانَ أَنَّه“ سَمِعَ عُمَرَ بْنَ أَبِي سَلَمَةَ يَقُوْلُ كُنْتُ غُلاَمًا فِي حَجْرِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَتْ يَدِي تَطِيشُ فِي الصَّحْفَةِ فَقَالَ لِي رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا غُلاَمُ سَمِّ اللهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ فَمَا زَالَتْ تِلْكَ طِعْمَتِي بَعْدُ.


‘উমার ইবনু আবূ সালামা رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেনঃ আমি ছোট ছেলে অবস্থায় রাসুলুল্লাহ‌ ﷺ-এর খিদমাতে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছুটাছুটি করত। রাসুলুল্লাহ‌ ﷺ আমাকে বললেনঃ হে বৎস! বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এরপর থেকে আমি সব সময় এ নিয়মেই খাদ্য গ্রহন করতাম। যার যার কাছের থেকে আহার করা। 


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৩৭৬, ৫৩৭৭, ৫৩৭৮) (ই.ফা. ৪৮৭১)

  


(৯) খাদ্য এক ধরনের হলে নিজের সম্মুখ হতে খাওয়া।

 

عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ قَالَ الْوَلِيدُ بْنُ كَثِيرٍ أَخْبَرَنِي أَنَّه“ سَمِعَ وَهْبَ بْنَ كَيْسَانَ أَنَّه“ سَمِعَ عُمَرَ بْنَ أَبِي سَلَمَةَ يَقُوْلُ كُنْتُ غُلاَمًا فِي حَجْرِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَكَانَتْ يَدِي تَطِيشُ فِي الصَّحْفَةِ فَقَالَ لِي رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا غُلاَمُ سَمِّ اللهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ فَمَا زَالَتْ تِلْكَ طِعْمَتِي بَعْدُ.


‘উমার ইবনু আবূ সালামা رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেনঃ আমি ছোট ছেলে অবস্থায় রাসুলুল্লাহ‌ ﷺ-এর খিদমাতে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছুটাছুটি করত। রাসুলুল্লাহ‌ ﷺ আমাকে বললেনঃ হে বৎস! বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এরপর থেকে আমি সব সময় এ নিয়মেই খাদ্য গ্রহন করতাম। যার যার কাছের থেকে আহার করা। 


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৩৭৬, ৫৩৭৭, ৫৩৭৮) (ই.ফা. ৪৮৭১)


বান্দা খাবার পাত্রের যেদিক তার সাথে লাগানো সেদিক থেকে খাবে। উপরে বর্ণিত উমর বিন আবু সালামা رضي الله عنه-এর হাদীসের কারণে। আর খাবার যদি বিভিন্ন ধরনের হয় তা হলে অন্যদিক -যা তার সাথে লাগোয়া নয়- থেকে খাওয়াতে কোন দোষ নেই।



(১০) খানার মজলিসে বয়সের দিক দিয়ে যিনি বড় এবং বয়স্ক, তাঁর দ্বারা খানা শুরু করানো।


যখন অনেক লোকের সাথে বসে পান করবে আর পান করার পর কাউকে দিতে চাইবে তাহলে ডান পাশ্বে বসা ব্যক্তিকে দিবে, সে যদি বয়সে ছোট হয় আর বাম পার্শ্বস্থজন তার থেকে বড়, তবুও। হযাঁ; যদি ছোট থেকে অনুমতি নিয়ে বড়কে দেওয়া হয় তাহলে কোন দোষ নেই। আর যদি অনুমতি না দেয় তাহলে তাকেই দিবে কারণ সেই আগে পাওয়ার বেশি অধিকার রাখে।

এর প্রমাণ হল সাহাবী সাহল বিন সা'দ رضي الله عنه-এর হাদীস : 


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু পানীয় আনা হল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন। রাসুলের ডান দিকে একটি ছোট ছেলে বসা ছিল এবং বামদিকে বয়স্ক লোক। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেটিকে বললেন―তুমি কি আমাকে তোমার আগে তাদেরকে দেয়ার অনুমতি দিবে? তখন ছেলেটি বলল, না, কখনও নয়। আল্লাহ শপথ! আমি আমার অংশের উপর আপনি ব্যতীত অন্য কাউকে প্রাধান্য দেব না। বর্ণনাকারী বলেন―রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পানপাত্র) ছেলেটির হাতে দিয়ে দিলেন।


حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، حَدَّثَنَا أَبُو غَسَّانَ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبُو حَازِمٍ، عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ أُتِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِقَدَحٍ فَشَرِبَ مِنْهُ، وَعَنْ يَمِينِهِ غُلاَمٌ أَصْغَرُ الْقَوْمِ، وَالأَشْيَاخُ عَنْ يَسَارِهِ فَقَالَ ‏ "‏ يَا غُلاَمُ أَتَأْذَنُ لِي أَنْ أُعْطِيَهُ الأَشْيَاخَ ‏"‏‏.‏ قَالَ مَا كُنْتُ لأُوثِرَ بِفَضْلِي مِنْكَ أَحَدًا يَا رَسُولَ اللَّهِ‏.‏ فَأَعْطَاهُ إِيَّاهُ‏.‏


সাহ‌ল ইবনু সা’দ رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, নবী ﷺ-এর নিকট একটি পেয়ালা আনা হল। তিনি তা হতে পান করলেন। তখন তাঁর ডান দিকে ছিল একজন বয়ঃকনিষ্ঠ বালক আর বয়স্ক লোকেরা ছিলেন তাঁর বাম দিকে। তিনি বললেন, হে বালক! তুমি কি আমাকে অবশিষ্ট (পানিটুকু) বয়স্কদেরকে দেয়ার অনুমতি দিবে? সে বলল, হে আল্লাহ ﷻ'র  রাসুল! আপনার নিকট থেকে ফযীলত পাওয়ার ব্যাপারে আমি আমার চেয়ে অন্য কাউকে প্রাধান্য দিব না। অতঃপর তিনি তা তাকে প্রদান করলেন।

  

(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৩৫১)



(১১) খাদ্যের কোন অংশ পড়ে গেলে উঠিয়ে (প্রয়োজনে পরিষ্কার করে) খাওয়া। 


যদি খাবারের কোন লোকমা পড়ে যায় তবে উঠিয়ে খাবে, যদি ময়লা লাগে ধুয়ে ময়লা মুক্ত করে খাবে। কারণ এটিই সুন্নাত এবং এর মাধ্যমেই রাসুলুল্লাহর নির্দেশের অনুসরণ করা হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :-

অর্থাৎ, যদি তোমাদের কারো খাবারের লোকমা পড়ে যায় তবে তার থেকে ময়লা দুর করবে এবং তা খেয়ে ফেলবে, শয়তানের জন্য রেখে দেবে না।


حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْمُنْذِرِ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ أَبِي سُفْيَانَ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ إِذَا وَقَعَتِ اللُّقْمَةُ مِنْ يَدِ أَحَدِكُمْ فَلْيَمْسَحْ مَا عَلَيْهَا مِنَ الأَذَى وَلْيَأْكُلْهَا ‏"‏ ‏.‏


জাবির رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ তোমাদের কারো হাত থেকে খাবারের গ্রাস পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয় এবং তাতে যে ময়লা লেগেছে তা দূর করে খেয়ে নেয়। 


(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩২৭৯) 



(১২) হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া।


أَبُو نُعَيْمٍ حَدَّثَنَا مِسْعَرٌ عَنْ عَلِيِّ بْنِ الأَقْمَرِ سَمِعْتُ أَبَا جُحَيْفَةَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ آكُلُ مُتَّكِئًا.


আবূ জুহাইফাহ رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেনঃ আমি হেলান দিয়ে খাদ্য গ্রহন করি না। 


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৩৯৮)  (ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৯৩)



❏ ইসলাম হেলান দিয়ে বসে খানা খেতে নিষেধ করেছে। কেননা হেলান দিয়ে খাবারের মধ্যে তিনটি অপকারিতা রয়েছে।

১। সঠিক ভাবে খাবার চিবানো যায় না, ফলে যে পরিমাণ লালা খাদ্যের সাথে মিশ্রিত হওয়ার কথা ছিল তা হয় না যার কারণে পাকস্থলীতে মাড় বিশিষ্ট খাবার হজম হয় না, ফলে হজম প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

২। হেলান দিয়ে বসলে পাকস্থলি প্রশস্ত হয়ে যায় যার ফলে অপ্রয়োজনীয় খাবার পেটে গিয়ে হজম প্রক্রিয়াতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

৩। হেলান দিয়ে খাবারের ফলে অন্ত্র এবং যকৃতের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। একথা অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত। (সুন্নাতে রাসুল ﷺ ও আধুনিক বিজ্ঞান- ডাঃ মুহাম্মাদ তারেক মাহমুদ) 



(১৩) খাদ্যের ত্রুটি বের না করা। 


مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ عَنْ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِي حَازِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ مَا عَابَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم طَعَامًا قَطُّ إِنْ اشْتَهَاه“ أَكَلَه“ وَإِنْ كَرِهَه“ تَرَكَهُ.


আবূ হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, নবী ﷺ কখনো কোন খাবারের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করেননি। ভালো লাগলে তিনি খেতেন এবং খারাপ লাগলে রেখে দিতেন।


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৪০৯) (ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯০২)


খাবারের প্রশংসা করা মুস্তাহাব, কেননা এর মাধ্যমে খাবার আয়োজন ও প্রস্তুত কারীর উপর একটা ভাল প্রভাব পড়বে। সাথে সাথে আল্লাহ ﷻ'র  নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো এমন করতেন―জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পরিবারের নিকট তরকারী চাইলেন। তারা বললেন, আমাদের কাছে সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি সিরকা আনতে বললেন এবং তার দ্বারা খেতে লাগলেন। অতঃপর বললেন, সিরকা কতইনা উত্তম তরকারী; সিরকা কতইনা উত্তম তরকারী।



(১৪) জুতা পরিহিত থাকলে জুতা খুলে খানা খাওয়া।


حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا صَفْوَانُ بْنُ عِيسَى، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ هَارُونَ، عَنْ زِيَادِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِي نَهِيكٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ مِنَ السُّنَّةِ إِذَا جَلَسَ الرَّجُلُ أَنْ يَخْلَعَ نَعْلَيْهِ فَيَضَعَهُمَا بِجَنْبِهِ ‏.‏


ইবনু ‘আব্বাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, সুন্নাত হলো বসার সময় পায়ের জুতা খুলে পাশে রেখে দেয়া।


(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪১৩৮)



 (১৫) খানার সময় তিনভাবে বসা যায়ঃ


ক. উভয় হাঁটু উঠিয়ে এবং পদ যুগলে ভর করে।


খ. এক হাঁটু উঠিয়ে এবং অপর হাঁটু বিছিয়ে। 


গ. উভয় হাঁটু বিছিয়ে অর্থাত নামাযে বসার ন্যায় বসে সামান্য সম্মুখ পানে ঝুঁকে আহার করা। 


حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ الْحِمْصِيُّ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عِرْقٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُسْرٍ، قَالَ كَانَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَصْعَةٌ يُقَالُ لَهَا الْغَرَّاءُ يَحْمِلُهَا أَرْبَعَةُ رِجَالٍ فَلَمَّا أَضْحَوْا وَسَجَدُوا الضُّحَى أُتِيَ بِتِلْكَ الْقَصْعَةِ - يَعْنِي وَقَدْ ثُرِدَ فِيهَا - فَالْتَفُّوا عَلَيْهَا فَلَمَّا كَثُرُوا جَثَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ مَا هَذِهِ الْجِلْسَةُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ إِنَّ اللَّهَ جَعَلَنِي عَبْدًا كَرِيمًا وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّارًا عَنِيدًا ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ كُلُوا مِنْ حَوَالَيْهَا وَدَعُوا ذِرْوَتَهَا يُبَارَكْ فِيهَا ‏"‏ ‏.‏


‘আবদুল্লাহ ইবনু বুস্‌র رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, নবী ﷺ-এর একটি বড় কড়াই ছিল। তা চারজন লোক বহন করতো। পাত্রটির নাম ছিল ‘গাররাআ’। বেলা কিছুটা উপরে উঠলে এবং লোকেরা চাশতের সলাত আদায় শেষ হলে পাত্রটি নিয়ে আসা হলো। অর্থাৎ তাতে ঝোল মিশ্রিত রুটি ছিল। লোকেরা এর চারদিকে বসলো। লোকের আধিক্যের কারণে রাসুলুল্লাহ ﷺ হাঁটু গেড়ে বসলেন। এক বেদুঈন বললো, এটা কিভাবে বসা হলো! নবী ﷺ বললেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাকে ভদ্র ও সম্মানিত বান্দা বানিয়েছেন। তিনি আমাকে অবাধ্য ও উচ্ছৃঙ্খল বানাননি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ পাত্রের কিনারা হতে খাও এবং মধ্যখান ছেড়ে দাও। এতে বরকত হবে।

  

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৭৭৩)



(১৬) খাবার গ্রহণ শেষে খাবার পাত্রসমূহ আঙ্গুল দ্বারা ভালভাবে চেটে পরিস্কার করে খাওয়াঃ


জাবের رضي الله عنه থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙুল এবং বর্তন চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন তোমরা জানো না কোনটায় বরকত রয়েছে।


عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ عَنْ عَطَاءٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَمْسَحْ يَدَه“ حَتّٰى يَلْعَقَهَا أَوْ يُلْعِقَهَا.


ইবনু ‘আব্বাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


নবী ﷺ বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন আহার করে সে যেন তার হাত না মোছে, যতক্ষণ না সে তা চেটে খায় কিংবা অন্যের দ্বারা চাটিয়ে নেয়। 


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৪৫৬, মুসলিম ৩৬/১৮, হাঃ ২০৩১, আহমাদ ১৯২) (ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৪৮)

  

আনাস رضي الله عنه রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থকে বর্ণনা করেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন বর্তন পরিষ্কার করে খাই। তিনি বলেন―তোমরা জানো না তোমাদের খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে। বরকত দ্বারা উদ্দেশ্য হল যার দ্বারা উপকার এবং পুষ্টি লাভ হয়।


প্লেট পরিস্কার করে খাওয়া মানে মুখ লাগিয়ে চেটে খাওয়া নয় বরং আঙ্গুল দিয়ে পরিস্কার করে খাবে

 


(১৭) আঙুল ধোয়ার পূর্বে চেটে খাওয়াঃ


عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ عَنْ عَطَاءٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَمْسَحْ يَدَه“ حَتّٰى يَلْعَقَهَا أَوْ يُلْعِقَهَا.


ইবনু ‘আব্বাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


নবী ﷺ বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন আহার করে সে যেন তার হাত না মোছে, যতক্ষণ না সে তা চেটে খায় কিংবা অন্যের দ্বারা চাটিয়ে নেয়। 


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৪৫৬, মুসলিম ৩৬/১৮, হাঃ ২০৩১, আহমাদ ১৯২৪) (ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৪৮)



(১৮) খাবার খাওয়া শেষ করার পর দোয়াঃ


(ক) 

«الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا، وَرَزَقَنِيهِ، مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ».


 (আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাকানীহি মিন গাইরি হাউলিম মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন)।


“সকল প্রশংসা আল্লাহ‌র জন্য, যিনি আমাকে এ আহার করালেন এবং এ রিযিক দিলেন যাতে ছিল না আমার পক্ষ থেকে কোনো উপায়, ছিল না কোনো শক্তি-সামর্থ্য। ”হাদীসটি নাসাঈ ব্যতীত সকল সুনান গ্রন্থকারগণ সংকলন করেছেন। 


حَدَّثَنَا حَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ أَبِي أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي مَرْحُومٍ عَبْدِ الرَّحِيمِ، عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ الْجُهَنِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ مَنْ أَكَلَ طَعَامًا فَقَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‏"‏ ‏.‏


মুআয বিন আনাস আল-জুহানী رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


নবী ﷺ বলেনঃ যে ব্যক্তি আহার করে সে যেন বলে, ' আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আতআমানী হাযা ওয়া রাযাকানীহি মিনগায়রি হাওলিন মিন্নী ওয়ালা কুওওয়াহ’’ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'লার জন্যে, যিনি আমাকে আমার শক্তি ও ক্ষমতা ব্যতীত আহার করিয়েছেন ও রিযিক দান করেছেন), তাহলে তার পূর্বেকার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।


(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩২৮৫, তিরমিযী ৩৪৫৮, ইরওয়া ১৯৮৯, আত-তালীকুর রাগীব ৩/১০০, তাখরীজুল কালিমুত তায়্যিব ১৮৭।)



(খ) দস্তরখানা ও অবশিষ্ট খাবার উঠানোর সময় এই দু‘আ পড়াঃ


«الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْداً كَثِيراً طَيِّباً مُبَارَكاً فِيهِ، غَيْرَ [مَكْفِيٍّ وَلاَ ] مُوَدَّعٍ، وَلاَ مُسْتَغْنَىً عَنْهُ رَبَّنَا».


 (আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান তায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহি, গইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুয়াদ্দা‘ইন, ওয়ালা মুসতাগনান ‘আনহু রব্বানা)।


“আল্লাহ ﷻ'র  জন্যই সকল প্রশংসা; এমন প্রশংসা যা অঢেল, পবিত্র ও যাতে রয়েছে বরকত; [যা যথেষ্ট করা হয় নি], যা বিদায় দিতে পারব না, আর যা থেকে বিমুখ হতে পারব না, হে আমাদের রব!”


أَبُو عَاصِمٍ عَنْ ثَوْرِ بْنِ يَزِيدَ عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ عَنْ أَبِي أُمَامَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا فَرَغَ مِنْ طَعَامِه„ وَقَالَ مَرَّةً إِذَا رَفَعَ مَائِدَتَه“ قَالَ الْحَمْدُ لله الَّذِي كَفَانَا وَأَرْوَانَا غَيْرَ مَكْفِيٍّ وَلاَ مَكْفُورٍ وَقَالَ مَرَّةً الْحَمْدُ لله رَبِّنَا غَيْرَ مَكْفِيٍّ وَلاَ مُوَدَّعٍ وَلاَ مُسْتَغْنًى رَبَّنَا.


আবূ উমামাহ رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন খাদ্য গ্রহণ শেষ করতেন, রাবী আরো বলেন, নবী ﷺ-এর দস্তরখান যখন তুলে নেয়া হতো তখন তিনি বলতেনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ‌র জন্য যিনি যথেষ্ট খাইয়েছেন এবং পরিতৃপ্ত করেছেন। তা থেকে মুখ ফিরানো যায় না এবং তার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায় না। রাবী কখনো বলেনঃ হে আমাদের রব! তোমার জন্যই সকল প্রশংসা, এর থেকে মুখ ফিরানো যাবে না, একে বিদায় করাও যাবে না এবং এর থেকে বেপরওয়া হওয়া যাবে না; হে আমাদের রব!


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৪৫৯) (ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৫১)



(১৯) আহারের আয়োজনকারীর জন্য মেহমানের দোয়াঃ 


«اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِيمَا رَزَقْتَهُم، وَاغْفِرْ لَهُمْ وَارْحَمْهُمْ».


(আল্লা-হুম্মা বা-রিক লাহুম ফীমা রাযাক্তাহুম ওয়াগফির লাহুম ওয়ারহামহুম)।


 “হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছেন তাতে তাদের জন্য বরকত দিন এবং তাদের গুনাহ মাফ করুন, আর তাদের প্রতি দয়া করুন।”

{মুসলিম ৩/১৬১৫, নং ২০৪২।}


حَدَّثَنَا مَخْلَدُ بْنُ خَالِدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم جَاءَ إِلَى سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ فَجَاءَ بِخُبْزٍ وَزَيْتٍ فَأَكَلَ ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الأَبْرَارُ وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ ‏"‏.


আনাস ইবনু মালিক رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


একদা নবী ﷺ সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ‌র رضي الله عنه বাড়িতে গেলেন। সা’দ رضي الله عنه রুটি ও যাইতূন তৈল আনলেন। তা খাওয়ার পর নবী ﷺ বললেনঃ তোমাদের নিকট রোযাদারগণ ইফতার করেছে, সৎ লোকেরা তোমাদের খাদ্য খেয়েছে এবং ফেরেশতাগণ তোমার জন্য রহমাতের দু’আ করেছেন।

  

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৮৫৪)



(২০) খাবার খাওয়া শেষে আগে দস্তরখানা উঠিয়ে তারপর নিজে উঠা। 


حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ بَشِيرِ بْنِ ذَكْوَانَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، عَنْ مُنِيرِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ نَهَى أَنْ يُقَامَ عَنِ الطَّعَامِ حَتَّى يُرْفَعَ ‏.‏


আয়িশাহ رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ খাদ্যসামগ্রী তুলে নেয়ার পূর্বে (সকলের আহার শেষ না হওয়া পর্যন্ত) উঠে যেতে নিষেধ করেছেন।


(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩২৯৪) 



(২১) খাবার খেয়ে উভয় হাত ধোয়া। 


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنَا سُهَيْلُ بْنُ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ نَامَ وَفِي يَدِهِ غَمَرٌ وَلَمْ يَغْسِلْهُ فَأَصَابَهُ شَىْءٌ فَلاَ يَلُومَنَّ إِلاَّ نَفْسَهُ ‏"‏ ‏.‏


আবূ হুরাইরাহ رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হাত পরিষ্কার না করেই হাতে গোশতের গন্ধ ও তৈলাক্ততা নিয়ে ঘুমালো, এতে তার কোন ক্ষতি হলে এজন্য সে নিজেকেই যেন তিরস্কার করে।


(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৮৫২)



(২২) কুলি করে মুখ পরিষ্কার করা।


عَلِيٌّ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ سَمِعْتُ يَحْيٰى بْنَ سَعِيدٍ عَنْ بُشَيْرِ بْنِ يَسَارٍ عَنْ سُوَيْدِ بْنِ النُّعْمَانِ قَالَ خَرَجْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلٰى خَيْبَرَ فَلَمَّا كُنَّا بِالصَّهْبَاءِ دَعَا بِطَعَامٍ فَمَا أُتِيَ إِلاَّ بِسَوِيقٍ فَأَكَلْنَا فَقَامَ إِلٰى الصَّلاَةِ فَتَمَضْمَضَ وَمَضْمَضْنَا.


সুওয়ায়দ ইবনু নু’মান رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ‌ ﷺ-এর সঙ্গে খাইবার অভিযানে রওয়ানা হলাম। সাহ‌বা নামক স্থানে পৌছলে তিনি খাবার আনতে বললেন। কিন্তু ছাতু ব্যতীত আর কিছুই আনা হল না। আমরা তা-ই খেলাম। তারপর সলাতের জন্যে উঠে তিনি কুলি করলেন, আমরাও কুলি করলাম। 


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৪৫৪) (ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৪৭)



(২৩) খাবার খাওয়ার সময় একেবারে চুপ থাকা মাকরূহ। এজন্য খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পরস্পরে ভাল কথা আলোচনা করা। কিন্তু যে ধরনের কথা বা সংবাদে দুশ্চিন্তা বা ঘৃণার উদ্রেক হতে পারে, তা খানার সময় বলা অনুচিত। 

Top