৬ষ্ঠ অধ্যায়
ইলম বা জ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়সমূহ
বিষয় নং- ০১: জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে যাও।
‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৪৫০ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি প্রসঙ্গে লিখেন-‘‘অধিকাংশ মুহাদ্দিস একে জাল হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন।’’ সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তিনি দুই একজন মুহাদ্দিসের অভিমতকে তিনি অধিকাংশ মুহাদ্দিসের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। লেখক উক্ত হাদিসকে জাল বানানোর অপচেষ্টা চালিয়েছেন। মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী তার ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ গ্রন্থের ৭৪ পৃষ্ঠায় এ হাদিস সম্পর্কে লিখেন-‘‘হাদীসটি বাতিল, তার কোন ভিত্তি নেই।’’
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ হাদিসটির অনেকগুলো সূত্র রয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন সনদের ভিন্ন ভিন্ন হুকুম। আমি সবগুলো সূত্র নিয়েই আলোচনার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।
প্রথম সূত্র:
❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، أخبرنا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عُقْبَةَ الشَّيْبَانِيُّ، حدثنا مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ عَفَّانَ، وَأَخْبَرَنَا أَبُو مُحَمَّدٍ الْأَصْبَهَانِيُّ، أخبرنا أَبُو سَعِيدِ بْنُ زِيَادٍ، حدثنا جَعْفَرُ بْنُ عَامِرٍ الْعَسْكَرِيُّ، قَالَا: حدثنا الْحَسَنُ بْنُ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي عَاتِكَةَ، - وَفِي رِوَايَةِ أَبِي عَبْدِ اللهِ حدثنا أَبُو عَاتِكَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اطْلُبُوا الْعِلْمَ وَلَوْ بِالصِّينِ، فَإِنَّ طَلَبَ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
– ‘‘হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করেন, ইলম অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে হলেও যাও, কেননা ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয।’’ ১
➥{ইমাম উকাইলী : আদ্ব-দ্বআফাউল কাবীর, ২/২৩০ পৃ. ক্রমিক. ৭৭৭, ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ২/২৫৪ পৃ: হা/১৬৬৩, ইমাম ইবনে আদী : আল-কামিল : ২/২০৭ পৃ., ইমাম ইবনে আবদুল বার, জামিউল বায়ানুল ইলমে ওয়া ফাদ্বলিহী : ১/২৮ পৃ. হা/২০, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী, আল-জামেউস সগীর : ১/১৬৮ পৃ.হা/১১১০, ইমাম গায্যালী : ইহইয়াউল-উলুমুদ্দীন : ১/১৫ পৃ., ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : আখবারুল ইস্পাহানী : ২/১০৬ পৃ., ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/৭৮ পৃ. হা/২৩৬, ইমাম খতিবে বাগদাদী : তারিখে বাগদাদ : ৭/৩৬৪ পৃ., বায়হাকী, আল-মাদখাল, ১/২৪১ পৃ. হা/৩২৫, ইমাম বায্যার, আল-মুসনাদ, ১/১৬৪ পৃ. হা/৯৫, আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১০/১৩৮ পৃ. হা/২৮৬৯৭, ইমাম মানাবী : ফয়যুল কাদীর : ১/৫৪২ পৃ. হা/১১১০}
পর্যালোচনা:
❏ ইমাম বায়হাকী হাদিসটি এটি সংকলন করে বলেন-
هَذَا حَدِيثٌ مَتْنُهُ مَشْهُورٌ، وَإِسْنَادُهُ ضَعِيفٌ
-‘‘হাদিসটি মতনগতভাবে সবার নিকট মশহুর বা প্রসিদ্ধ, তবে আমার এ সংকলিত সনদটি দ্বঈফ।’’
(ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ২/২৫৪ পৃ: হা/১৬৬৩)
❏ তিনি তার আরেক গ্রন্থে এ হাদিস সম্পর্কে লিখেন-
هَذَا حَدِيثٌ مَتْنُهُ مَشْهُورٌ
-‘‘হাদিসটি শব্দগতভাবে সবার নিকট মশহুর বা প্রসিদ্ধ।’’
(বায়হাকী, আল-মাদখাল, ১/২৪১ পৃ. হা/৩২৫)
❏ আমি বলবো, এ সনদ দ্বঈফ হলেও হাদিসটি একাধিক সনদ থাকার কারনে কমপক্ষে ‘হাসান’। এ হাদিসটিকে যঈফ বলার কারণ হিসেবে ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) রাবী ‘আবু আতিকা’ কে দায়ী করেছেন। ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)-এর অভিমতের পরে উক্ত রাবীর বিষয়ে চূড়ান্ত সমাধান পেশ করেন ইমাম তিরমিযি (رحمة الله)। তিনি বলেন-
وَأَبُو عَاتِكَةَ يُضَعَّفُ.
-‘‘আবু আতিকা যঈফ রাবী।’’
(সুনানে তিরমিযি, ২/৯৭ পৃ. হা/৭২৬)
❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন- ضعيف -‘‘তিনি দুর্বল রাবী।’’
(ইবনে হাজার, তাক্বরীবুত তাহযিব, ৬৫৩ পৃ. ক্রমিক.৮১৯৩)
❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন- ضعفوه. -‘ সে দুর্বল রাবীর অর্ন্তভুক্ত।’’
(যাহাবী, দিওয়ানুল দ্বুআফা, ১/৪৬২ পৃ. ক্রমিক.৪৯৬৩ এবং আল-কাশেফ, ক্রমিক. ৬৭০০)
উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল বিজ্ঞ সমস্ত আসমাউর রিজালবিদগণ এ রাবীর বিষয়ে যঈফ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এর বেশি নয়।
❏ এজন্যই ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার আরেক গ্রন্থে লিখেন- مجمع على ضعفه -‘‘সে যঈফ হওয়ার বিষয়ে সকল আসমাউর রিজালবিদ একমত।’’
(যাহাবী, আল-মুগনী ফিল দ্বুআফা, ২/৭৯৩ পৃ. ক্রমিক.৭৫৬১)
দ্বিতীয় সূত্র:
❏ ইমাম ইবনে আব্দুল বার (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: اطْلُبُوا الْعِلْمَ وَلَوْ بِالصِّينِ، فَإِنَّ طَلَبَ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ ، إِنَّ الْمَلَائِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا لِطَالِبِ الْعِلْمِ رِضًا بِمَا يَطْلَبُ
-‘‘হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমরা জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশ হলেও যাও, কেননা প্রত্যেক মুসলমানের উপর জ্ঞান অর্জন করা ফরয, নিশ্চয়ই যাঁরা ইলম তালাশ করে তাদের জন্য ফিরিশতাগণ পাখা বিছিয়ে দেন।’’ ২
➥{ক. আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : জামেউস সগীর : ১/১৬৮ পৃ. হা/১১১১
খ. ইমাম ইবনুল আব্দুল বার : কিতাবুল বায়ানুল ইলম ওয়া ফাদ্বলিহী : ১/২৮ পৃ. হা/২১
গ. ইমাম মানাবী : ফয়যুল কাদীর : ১/৫৪২-৫৪৩ পৃ.
ঘ. আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১০/১৩৮ পৃ. হা/২৮৬৯৮}
পর্যালোচনা:
এ সনদেও ‘আবু আতিকা’ যঈফ রাবী রয়েছেন। সেহেতু এটিও পূর্বের সনদের ন্যায় যঈফ।
তৃতীয় সূত্র:
❏ ইমাম ইবনে আব্দুল বার (رحمة الله) সংকলন করেন-
وَأَخْبَرَنَا أَحْمَدُ نا مَسْلَمَةُ، نا يَعْقُوبُ بْنُ إِسْحَاقَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ الْعَسْقَلَانِيُّ، ثنا يُوسُفُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْفِرْيَابِيُّ بِبَيْتِ الْمَقْدِسِ ثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ؓ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : اطْلُبُوا الْعِلْمَ وَلَوْ بِالصِّينِ فَإِنَّ طَلَبَ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
-‘‘আমাকে আমার শায়খ আহমদ বর্ণনা করেছেন তাকে মাসলামা বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমাকে মুহাদ্দিস ইয়াকুব ইবনে ইসহাক বিন ইবরাহিম আসকালানী’ বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমাকে ইউসুফ বিন মুহাম্মদ ফিরিয়াবী বর্ণনা করেছেন, তিনি ইমাম সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা থেকে তিনি ইমাম শিহাব জুহুরী হতে তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করেন, ইলম অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশে হলেও যাও, কেননা ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয।’’ ৩
➥{ইমাম ইবনুল আবদিল বার : কিতাবুল বায়ানুল ইলম ওয়া ফাদ্বলিহী : ১/২৮ পৃ. হা/২৯, ইমাম সূয়ূতি, আল-লাআলীল মাসনূ, ১/১৭৫ পৃ.,}
পর্যালোচনা:
এ সনদে সকল রাবীই সিকাহ বিশ্বস্ত, তবে অনেকে রাবী ‘ইয়াকুব ইবনে ইসহাক বিন ইবরাহিম আসকালানী’ কে অত্যন্ত যঈফ বলে সনদটি উড়িয়ে দিতে চান। উক্ত রাবী সম্পর্কে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-
وذكره مسلمة بن قاسم في الصلة وذكر له جماعة من الشيوخ وقال: كتبت عنه واختلف فيه أهل الحديث فبعضهم يضعفه وبعضهم يوثقه ورأيتهم يكتبون عنه فكتبت عنه وهو عندي صالح جائز الحديث.
-‘‘ইমাম মাসলামা ইবনে কাশেম (رحمة الله) তার ছিলাত গ্রন্থে উল্লেখ করেন, একদল শায়েখ তার ব্যাপারে বলেছেন আমরা তার বর্ণিত হাদিস লিখি। হাদিসের ইমামগণের মাঝে তার ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন। কেউ কেউ তাকে যঈফ বলেছেন এবং কেউ কেউ তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন এবং তার থেকে হাদিস লিখেছেন। আমার কাছে সে হাদিস বর্ণনায় গ্রহণযোগ্য ও জায়েযুল হাদিস অর্থাৎ তার হাদিস গ্রহণ বৈধ।’’
(ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৮/৫২৫ পৃ. ক্রমিক. ৮৬৩১, ইমাম সূয়ূতি, আল-লাআলীল মাসনূ, ১/১৭৫ পৃ.)
উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে এ সনদটি কমপক্ষে ‘হাসান’ হওয়ার মর্যাদা রাখে।
চতুর্থ সূত্র:
❏ ইমাম সুয়ূতি ও ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী তাদের গ্রন্থে আরেকটি সুত্র উলেখ করেছেন এভাবে-
ورواه أيضًا بإسناد له عن إبراهيم النخعي قال: سمعت أنسا رضي الله عنه نحوه
-‘‘তাবেয়ী ইবরাহিম নাখঈ (رحمة الله) হতে তিনি হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে মারফূ সুত্রে উপরের হাদিসের মতনে আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।’’ ৪
➥{ইমাম সূয়ূতি, আল-লাআলীল মাসনূ, ১/১৭৫ পৃ., ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৮/৫২৫ পৃ. ক্রমিক. ৮৬৩১}
❏ উক্ত সনদে কোন দুর্বল রাবী নেই, তবে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন-
وإبراهيم لم يسمع من أنس شيئا.
-‘‘তবে ইমাম ইবরাহিম নাখঈ (رحمة الله) হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে কিছুই শুনেনি।’’
(ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৮/৫২৫ পৃ. ক্রমিক. ৮৬৩১, ইমাম সূয়ূতি, আল-লাআলীল মাসনূ, ১/১৭৫ পৃ.)
❏ হযরত ইবরাহিম নাখঈ (رحمة الله)ও তাবেয়ী যদিও এখানে এরসাল হয়েছে, তিনি যেহেতু সিকাহ তাবেয়ী সেহেতু সনদটি মুরসাল হলেও সনদ শক্তিশালী।
পঞ্চম সূত্র:
❏ ইমাম যাহাবী ও ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) সংকলন করেন-
ابن كرام، حَدَّثَنا أحمد، عن الفضل بن موسى، عَن مُحَمد بن عَمْرو، عَن أبي سلمة، عَن أبي هريرة رضي الله عنه حديث: اطلبوا العلم ولو بالصين.
-‘‘ইবনে কারাম তিনি আহমদ বিন আবদুল্লাহ বিন খালিদ আল-জুয়াইবারী হতে তিনি ফদ্বল বিন মুসা থেকে তিনি মুহাম্মদ ইবনে আমর থেকে তিনি আবি সালামা থেকে তিনি হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করেন, জ্ঞান অর্জনের জন্য চীন দেশে হলেও যাও।’’
(ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ১/৪৯৪ পৃ. ক্রমিক. ৫৬৬, যাহাবী, মিযানুল ইতিদাল, ১/১০৭ পৃ., ক্রমিক. ৪২১)
পর্যালোচনা:
উক্ত সনদটি উপরের উলেখিত সবগুলো সূত্র হতে বেশি দুর্বল, কেননা সনদে ‘আহমদ বিন আবদুল্লাহ বিন খালিদ আল-জুয়াইবারী’ রাবী সকলের ঐক্যমতে অত্যন্ত যঈফ।
❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেছেন- وقال النسائي والدارقطني: كذاب. -‘‘ইমাম নাসাঈ ও দারাকুতনী (رحمة الله) বলেন, সে মিথ্যাবাদী।’’ ৫
তাই এ সনদ অত্যন্ত দুর্বল।
➥{ইমাম যাহাবী, মিযানুল ইতিদাল, ১/১০৭ পৃ., ক্রমিক. ৪২১}
❏ তবে ইমাম ছাখাবী (رحمة الله) বলেন: وهو ضعيف من الوجهين، -“এই দু’টি সূত্রই যঈফ।”
(ইমাম ছাখাবী: মাকাসিদুল হাসানাহ, হাদিস নং ১২৫)।
বুঝা গেল, ইমাম সাখাভী এটিকে শুধু সাধারণ দুর্বলই বলেছেন।
সামগ্রীকভাবে এ হাদিসটির অবস্থান:
১. ইমাম বায়হাকী হাদিসটি এটি সংকলন করে বলেন-
هَذَا حَدِيثٌ مَتْنُهُ مَشْهُورٌ، وَإِسْنَادُهُ ضَعِيفٌ
-‘‘হাদিসটি শব্দগতভাবে সবার নিকট মশহুর বা প্রসিদ্ধ, তবে আমার এ সংকলিত সনদটি দ্বঈফ।’’
(ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ২/২৫৪ পৃ: হা/১৬৬৩)
❏ তিনি তার আরেক গ্রন্থে এ হাদিস সম্পর্কে লিখেন-
هَذَا حَدِيثٌ مَتْنُهُ مَشْهُورٌ
-‘‘হাদিসটি শব্দগতভাবে সবার নিকট মশহুর বা প্রসিদ্ধ।’’
(বায়হাকী, আল-মাদখাল, ১/২৪১ পৃ. হা/৩২৫)
২. আল্লামা মানাভী (رحمة الله) এ হাদিস প্রসঙ্গে অভিমত পেশ করেন-
قَالَ الْبَيْهَقِيّ مَتنه مَشْهُور وَأَسَانِيده ضَعِيفَة وَقَالَ غَيره يرتقي بِمَجْمُوع طرقه إِلَى الْحسن
-‘‘ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন, শব্দগতভাবে এটি মশহুর, প্রত্যেকটি সনদই যঈফ, অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বলেছেন যে, এ হাদিসটি অনেক সূত্রে বর্ণিত হওয়ার দরুণ এটির মর্যাদা ‘হাসান’ স্তরের।’’
(মানাভী, তাইসীর বিশারহে জামেউস সগীর, ১/১৬৪ পৃ.)
৩. তিনি আরেক পুস্তকে এ হাদিস সম্পর্কে লিখেন-
ونوزع بقول المزي له طرق ربما يصل بمجموعها إلى الحسن
-‘‘ইমাম মিয্যী (رحمة الله) বলেন, বিভিন্ন পদ্ধতীতে বর্ণিত হওয়ায়, সবগুলো সূত্রে মিলে এটির মান ‘হাসান’ স্তরের বলে প্রতিয়মান হয়।’’
(মানাভী, ফয়যুল কাদীর, ১/৫৪২ পৃ. হা/১১১০)
৪. আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-
ونوزع بقول الحافظ المزي له طرق ربما يصل بمجموعها إلى الحسن
-‘‘ইমাম মিয্যী (رحمة الله) বলেন, বিভিন্ন পদ্ধতীতে বর্ণিত হওয়ায়, সবগুলো সূত্রে মিলে এটির মান ‘হাসান’ স্তরের বলে প্রতিয়মান হয়।’’
(আজলূনী, কাশফুল খাফা, ১/১৩৮ পৃ. হা/৩৯৭)
৫. মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী স্বীয় ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ গ্রন্থের ৭৪ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিস সম্পর্কে বলেন, ‘হাদিসটির একাধিক সূত্র রয়েছে, যা একত্রিত করলে হাদিসটি “হাসান” এর স্তরে উপনীত হয়।” তাই আমরাও তাই বলতে চাই যে, হাদিসটি কমপক্ষে ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য।