11 - بَابُ مَا جَاءَ فِيْ الشِّفَاعَةِ

23 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ يَزِيْدَ بْنِ صُهَيْبٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، عَنِ النَّبِيِّ ، أَنَّهُ قَالَ: «يُخْرِجُ اللهُ مِنَ النَّارِ مِنْ أَهْلِ الْإِيْمَانِ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ »، قَالَ يَزِيْدُ: فَقُلْتُ: إِنَّ اللهَ تَعَالَىٰ يَقُوْلُ: [وَمَا هُمْ بِخَارِجِيْنَ مِنْهَا] {المائدة: 37}، قَالَ جَابِرٌ: اقْرَأْ مَا قَبْلَهَا: [إِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا] {المائدة: 36} إِنَّمَا هِيَ فِي الْكُفَّارِ.  وَفِيْ رِوَايَةٍ: «يَخْرُجُ قَوْمٌ مِنْ أَهْلِ الْإِيْمَانِ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ »، قَالَ يَزِيْدُ: قُلْتُ: إِنَّ اللهَ تَعَالَىٰ يَقُوْلُ: [وَمَا هُمْ بِخَارِجِيْنَ مِنْهَا] {المائدة: 37}، فَقَالَ جَابِرٌ: اقْرَأْ مَا قَبْلَهَا: [إِنَّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا] {المائدة: 36}، ذَلِكَ الْكُفَّارُ.  وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ يَزِيْدَ، قَالَ: سَأَلْتُ جَابِرًا عَنِ الشَّفَاعَةِ، فَقَالَ: يُعَذِّبُ اللهُ تَعَالَىٰ قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْإِيْمَانِ بِذُنُوْبِهِمْ، ثُمَّ يُخْرِجُهُمْ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ : فَأَيْنَ قَوْلُ اللهِ ؟ فَذَكَرَ الْـحَدِيْثَ إِلَىٰ آخِرِهِ.


বাব নং ১১: শাফায়াতের বর্ণনা


২৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ইয়াযিদ ইবনে সুহাইব থেকে, তিনি হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (رحمة الله) থেকে, তিনি রাসূল (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা (গুনাহগার) মু’মিনদেরকে মুহাম্মদ   এর শাফায়াতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। ইয়াযিদ (رحمة الله) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, وما هم بخارجين منها অর্থাৎ ‘জাহান্নামীদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে না’। তখন হযরত জাবির (رضي الله عنه) বলেন তুমি তোমার পঠিত আয়াতের পূর্বাংশ পড়। আর তা হল ان الذين كفروا অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামীদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করবেনা কথাটি কাফেরের জন্যে বলেছেন।

অপর বর্ণনায় আছে ঈমানদারগণের একদলকে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ   এর সুপারিশের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। এতে ইয়াযিদ (رحمة الله) বলেন, আল্লাহ তায়ালা তো বলেছেন এদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে না। উত্তরে জাবির (رضي الله عنه) বললেন, আয়াতের পূর্বাংশ একটু পড়। এটি কাফেরদের সম্পর্কে বলা হয়েছে।

অপর বর্ণনায় হযরত ইয়াযিদ (رحمة الله) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন আমি হযরত জাবির (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞাসা করলাম শাফায়াত সম্পর্কে। উত্তরে তিনি বলেন, কতিপয় ঈমানদারগণকে তাদের গুনাহের কারণে আল্লাহ তাদেরকে আযাব দেবেন। অতঃপর মুহাম্মদ   এর সুপারিশের উসিলায় তাদেরকে দোযখ থেকে বের করে আনবেন। তখন আমি (ইয়াযিদ) বললাম তাহলে আল্লাহর বাণী কোথায় যাবে? এরপর পূর্ণ হাদিস উলে­খ করেন।

ব্যাখ্যা: কদরীয়া ও মু’তাযালা সম্প্রদায় রাসূল (ﷺ)  এর শাফায়াত অস্বীকার করে। পক্ষান্তরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত রাসূল (ﷺ)  এর শাফায়াতকে বিশ্বাস করে। তাঁর সুপারিশে অসংখ্য গুনাহগার উম্মত জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে। এব্যাপারে কুরআন-হাদিসে অসংখ্য প্রমাণাদি বিদ্যমান। 


24 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ رِبْعِيِّ بْنِ حِرَاشٍ، عَنْ حُذَيْفَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ، قَالَ: «يُخْرِجُ اللهُ قَوْمًا مِنَ الْـمُوَحِّدِيْنَ مِنَ النَّارِ بَعْدَ مَا امْتَحَشُوْا، وَصَارُوْا فَحْمًا، فَيُدْخلُهُمُ اللهُ تَعَالَى الْـجَنَّةَ، فَيَسْتَغِيْثُوْنَ إِلَى اللهِ تَعَالَىٰ مِمَّا تُسَمِّيْهِمْ أَهْلُ الْـجَنَّةِ الْـجَهَنَّمِيِّيْنَ، فَيُذْهِبُ اللهُ تَعَالَىٰ عَنْهُمْ ذَلِكَ».


২৪. অনুবাদ: ঈমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি বিরঈ ইবনে হেরাশ থেকে, তিনি হুযাইফা (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা মু’মিনগণের একদলকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। তখন তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলে কয়লা হয়ে যাবে। তারপর তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবেন। জান্নাতে জান্নাতীরা তাদেরকে জাহান্নামী নাম ধরে যখন ডাকবে তখন তারা আল্লাহর কাছে এ ব্যাপারে ফরিয়াদ করবে। ফলে আল্লাহ তাদের জাহান্নামী নাম দূরীভূত করে দেবেন।

ব্যাখ্যা: হিংসুকরা বলে, আবু হানিফা (رضي الله عنه) মরজিয়া ছিলেন। (নাউযুবিল্লাহ) উক্ত হাদিস দ্বারা একথা অকাট্য ভাবে খণ্ডন হয়ে গেল। কেননা মরজিয়া সম্প্রদায়ের বিশ্বাস হল ঈমান গ্রহণের পর কোন গুনাহ মু’মিনের ক্ষতি সাধন করতে পারে না। অর্থাৎ কোন গুনাহের কারণে মু’মিন কখনো জাহান্নামে যাবে না। কিন্তু আবু হানিফা (رحمة الله) নিজেই উক্ত হাদিস বর্ণনা করে প্রমাণ করলেন যে তিনি মরজিয়া ছিলেন না। বরং হিংসুকরাই একথা রটিয়েছে। 

25 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ، عَنِ النَّبِيِّ  فِيْ قَوْلِهِ تَعَالَىٰ: «[عَسَى انْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُوْدًا] {الإسراء: 79}»، قَالَ: «اَلْـمَقَامُ الْـمَحْمُوْدُ: الشَّفَاعَةُ، يُعَذِّبُ اللهُ تَعَالَىٰ قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْإِيْمَانِ بِذُنُوْبِهِمْ، ثُمَّ يُخْرِجُ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ ، فَيُؤْتَىٰ بِهِمْ نَهْرًا، يُقَالُ لَهُ: الْـحَيَوَانُ فَيَغْتَسِلُوْنَ فِيْهِ، ثُمَّ يَدْخُلُوْنَ الْـجَنَّةَ فَيُسَمَّوْنَ فِي الْـجَنَّةِ الْـجُهَنَّمِيِّيْنَ، ثُمَّ يَطْلُبُوْنَ إِلَى اللهِ تَعَالَىٰ، فَيُذْهِبُ عَنْهُمْ ذَلِكَ الِاسْمَ».

وَفِيْ رِوَايَةٍ، قَالَ: «يُخْرِجُ اللهُ تَعَالَىٰ قَوْمًا مِنْ أَهْلِ النَّارِ مِنْ أَهْلِ الْإِيْمَانِ وَالْقِبْلَةِ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ ، وَذَلِكَ هُوَ الْـمَقَامُ الْـمَحْمُوْدُ فَيُؤْتَىٰ بِهِمْ نَهْرًا يُقَالُ لَهُ: الْـحَيَوَانُ، فَيُلْقَوْنَ فِيْهِ فَيَنْبُتُوْنَ بِهِ كَمَا يَنْبُتُ الثَّعَارِيْرُ، ثُمَّ يَخْرُجُوْنَ مِنْهُ وَيَدْخُلُوْنَ الْـجَنَّةَ، فَيُسَمَّوْنَ فِيْهَا الْـجَهَنَّمِيِّيْنَ، ثُمَّ يَطْلَبُوْنَ إِلَى اللهِ تَعَالَىٰ أَنْ يُذْهِبَ عَنْهُمْ ذَلِكَ الْاِسْمَ، فَيُذْهِبَ عَنْهُمْ».

وَزَادَ فِيْ آخِرِهِ: «فَيُسَمَّوْنَ عُتَقَاءَ اللهِ»، وَرَوَىٰ أَبُوْ حَنِيْفَةَ هَذَا الْـحَدِيْثَ، عَنْ أَبِيْ رَوُبَةِ شَدَّادِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ، عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ.

২৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতিয়্যা থেকে, তিনি আবু সাঈদ (رضي الله عنه) থেকে, তিনি রাসূল (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, আবু সাঈদ (رضي الله عنه) কুরআনের আয়াত, عَسٰى انْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُوْدًا অচিরেই আপনার প্রভু আপনাকে মকামে মাহমুদ দান করবেন” (সূরা আসরা, আয়াত ৭৯) প্রসঙ্গে রাসূল (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন যে, মকামে মাহমুদ দ্বারা উদ্দেশ্য হল শাফায়াত। আল্লাহ তায়ালা একদল মু’মিনকে তাদের গুনাহের কারণে আযাব দেবেন। অতঃপর মুহাম্মদ   এর শাফায়াতের উসিলায় তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। তারপর তাদেরকে ‘হায়ওয়ান’ নামক নদীতে নিয়ে গোসল করাবেন এবং জান্নাতে পাঠাবেন, জান্নাতে এদের নাম জাহান্নামী হিসাবে খ্যাত হবে। তখন তারা আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করবে, ফলে তিনি তাদের নাম মুছে দেবেন।

অন্য বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামে প্রবেশকারী ঈমানদার ও আহলে কিবলা’র একদলকে মুহাম্মদ   এর শাফাআতে মুক্তি দেবেন আর এই শাফায়াতই মকামে মাহমুদ। তারপর ‘হায়ওয়ান’ নামক নদীতে তাদেরকে আনা হবে এবং সেখানে তাদেরকে গোসল করানো হবে। ফলে তারা চারা গাছের শসার ন্যায় সতেজ হয়ে উঠবে। অতঃপর সেখান থেকে বেরিয়ে এসে জান্নাতে প্রবেশ করবে। জান্নাতে তাদের নাম হবে জাহান্নামী। তারা আল্লাহর কাছে আবেদন করবে যেন সেই নাম মুছে যায়। ফলে আল্লাহ তায়ালা ঐ নাম মুছে দেবেন। এই বর্ণনার শেষে فَيُسَمَّوْنَ عُتَقَاءَ اللهِ শব্দ অতিরিক্ত আছে।

হাদিসখানা ইমাম আবু হানিফা আবু রুবাহ সাদ্দাদ ইবনে আবদুর রহমান থেকে, তিনি আবু সাঈদ থেকে বর্ণনা করেন।

ব্যাখ্যা: ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন, নবী করিম (ﷺ)  এর সুপারিশ আট প্রকার। যথা: এক. শাফায়াতে উযমা নামে খ্যাত। যা সকল নবী-রাসূলগণের মধ্যে শুধু তাঁর জন্য নির্ধারিত। এটি অন্য কেউ পাবে না। যখন সকল সৃষ্টির ফায়সালা সমাপ্ত হবে তখনই এই শাফায়াত করবেন তিনি। দুই. যে শাফায়াত এই উম্মতের হিসাব সহজ ও দ্রুত করার জন্য করা হবে। যেমন ইবনে আবিদ দুনিয়া (رحمة الله) দীর্ঘ মারফু হাদিস এভাবে বর্ণনা করেন, কিয়ামত দিবসে নবী করিম (ﷺ)  বলবেন, يا ربّ عجّل حسابهم “হে প্রভু! ওদের হিসাব দ্রুত নিন।” তখন তাদেরকে ডেকে দ্রুত হিসাব কার্য সম্পাদন করা হবে। তিন. ঐসব লোকদের জন্য শাফায়াত করবেন যাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তখন তারা তার শাফায়াতের উসিলায় মুক্তি লাভ করবে। ইবনে আবিদ দুনিয়া (رحمة الله) এর স্বপক্ষে দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেন। চার. চতুর্থ শাফায়াত যা তিনি স্বীয় চাচা আবু তালেবের জন্য করবেন। ফলে তার শাস্তি হ্রাস পাবে। পাঁচ. পঞ্চম শাফায়াত যা তিনি কতিপয় সম্প্রদায়ের জন্য করবেন এবং তারা বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাবে। কাযী আয়ায (رحمة الله)এর পক্ষে মত দিয়েছেন। ছয়. এই শাফায়াত মু’মিনগণ জান্নাতে দ্রুত প্রবেশের জন্য করবেন। সাত. সপ্তম শাফায়াত জান্নাতীদের জন্য করবেন যেন জান্নাতে তাদের আমলের চেয়ে মর্যাদা বেশী হয়। মু’তাযালারা এই প্রকার শাফায়াতকে স্বীকার করে বাকীগুলো অস্বীকার করে। আট. অষ্টম শাফায়াত যা তিনি কবীরা গুনাহকারীদের জন্য করবেন, যাদেরকে গুনাহের কারণে জাহান্নামে যেতে হয়েছে। পরিশেষে তাঁর সুপারিশে তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করবে। ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله)ও ইয়াহইয়াউল উলুম গ্রন্থে এ ব্যাপারে বিস্তারিত লিখেছেন।


26 – حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْ حَنِيْفَةَ، عَنْ عَطِيَّةَ الْعَوْفِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا سَعِيْدٍ الْـخُدْرِيَّ، يَقُوْلُ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ، يَقْرَأُ: «[عَسَىٰ أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُوْدًا] {الإسراء: 79}»، قَالَ: يُخْرِجُ اللهُ تَعَالَىٰ قَوْمًا مِنَ النَّارِ مِنْ أَهْلِ الْإِيْمَانِ وَالْقِبْلَةِ بِشَفَاعَةِ مُحَمَّدٍ ، فَذَلِكَ هُوَ الْـمَقَامُ الْـمَحْمُوْدُ، فَيُؤْتِيْ بِهِمْ نَهْرًا يُقَالُ لَهُ: الْـحَيَوَانُ، فَيُلْقَوْنَ فِيْهِ، فَيَنْبُتُوْنَ كَمَا يَنْبُتُ الثَّعَارِيْرُ، ثُمَّ يُخْرَجُوْنَ فَيَدْخُلُوْنَ الْـجَنَّةَ، فَيُسَمَّوْنَ الْـجَهَنَّمِيِّيْنَ، ثُمَّ يَطْلُبُوْنَ إِلَى اللهِ تَعَالَىٰ أَنْ يُذْهِبَ عَنْهُمْ ذَلِكَ الْاِسْمَ، فَيُذْهِبَهُ عَنْهُمْ».


২৬. অনুবাদ: হাম্মাদ আবু হানিফা থেকে, তিনি আতিয়্যাহ থেকে, তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) কে عَسَىٰ أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُوْدًا আয়াত তেলাওয়াত করতে শুনেছি। তারপর তিনি বললেন, মুহাম্মদ   এর সুপারিশে আল্লাহ তায়ালা আহলে ঈমান ও আহলে কিবলাদের একদলকে দোযখ থেকে বের করবেন। আর এটিই হল মকামে মাহমুদ। অতঃপর তাদেরকে নহরে হায়ওয়ান এ নিয়ে যাওয়া হবে এবং তাদেরকে সেখানে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে তারা সেখান থেকে শসার ন্যায় তাজা হয়ে গর্জে উঠবে। তারপর বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। জান্নাতে তাদের নাম হবে জাহান্নামী। তারা আল্লাহর দরবার আরয করবে, ফলে আল্লাহ তাদের সেই নাম মুছে দেবেন।


27 - حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْ حَنِيْفَةَ، عَنْ عَبْدِ الْـمَلِكِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ: «يَدْخُلُ قَوْمٌ مِنْ أَهْلِ الْإِيْمَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ النَّارَ بِذُنُوْبِهِمْ، فَيَقُوْلُ لَـهُمُ الْـمُشْرِكُوْنَ: مَا أَغْنَىٰ عَنْكُمْ إِيْمَانُكُمْ، وَنَحْنُ وَأَنْتُمْ فِيْ دَارٍ وَاحِدَةٍ نُعَذَّبُ، فَيَغْضَبُ اللهُ  لَـهُمْ، فَيَأْمُرُ أَنْ لَا يَبْقَىٰ فِي النَّارِ أَحَدٌ يَقُوْلُ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، فَيَخْرُجُوْنَ وَقَدِ احْتَرَقُوْا حَتَّىٰ صَارُوْا كَالْـحُمَةِ السَّوْدَاءِ، إِلَّا وُجُوْهَهُمْ، فَإِنَّهُ لَا يَزْرَقُّ أَعْيُنُهُمْ، وَلَا تَسْوَدُّ وُجُوْهُهُمْ، فَيُؤْتَىٰ بِهِمْ نَهْرًا عَلَىٰ بَابِ الْـجَنَّةِ، فَيَغْتَسِلُوْنَ فِيْهِ، فَيَذْهَبُ كُلُّ فِتْنَةٍ وَأَذًى، ثُمَّ يَدْخُلُوْنَ الْـجَنَّةَ، فَيَقُوْلُ لَـهُمُ الْـمَلَكُ: [طِبْتُمْ فَادْخُلُوْهَا خَالِدِيْنَ] {الزمر: 73}، فَيُسَمَّوْنَ الْـجَهَنَّمِيِّيْنَ فِي الْـجَنَّةِ»، قَالَ: «ثُمَّ يَدْعُوْنَ، فَيَذْهَبُ عَنْهُمْ ذَلِكَ الْاِسْمُ، فَلَا يُدْعَوْنَ أَبَدًا، فَإِذَا خَرَجُوْا، قَالَ الْكُفَّارُ: يَا لَيْتَنَا كُنَّا مُسْلِمِيْنَ، فَذَلِكَ قَوْلُ اللهِ : [رُبَمَا يَوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ كَانُوْا مُسْلِمِيْنَ] {الحجر: 2}».


২৭. অনুবাদ: হাম্মাদ আবু হানিফা থেকে, তিনি আবদুল মালিক থেকে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে, তিনি রাসূল (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, কিয়ামত দিবসে ঈমানদারগণের একদল তাদের গুনাহের কারণে জাহান্নামে যাবে। তখন মুশরিকরা তাদের উদ্দেশ্যে বলবে, তোমাদের ঈমান তোমাদের কোন উপকারে আসেনি। আমরা আর তোমরা জাহান্নামের একই ঘরে অবস্থান করতেছি। তাদের কথা শুনে আল্লাহ তায়ালা রাগান্বিত হয়ে বলবেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ উচ্চারণকারী একজনও যেন জাহান্নামে না থাকে। সুতরাং তখন গুনাহগার মু’মিনগণ এমন অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের হবে যে, তাদের চেহারা ব্যতিত পুরো শরীর আগুনে পুড়ে কালো হয়ে যাবে। তাদের চোখ নীল বর্ণের এবং চেহারা কালো বর্ণের হবে না।

তারপর তাদেরকে এমন নদীতে নেওয়া হবে যা জান্নাতের দরজার পাশে অবস্থিত। তাতে তারা গোসল করবে। ফলে তাদের ভিতরে-বাইরের যাবতীয় নাপাকী, পাপ-কালিমা ইত্যাদি থেকে পুত পবিত্র হয়ে যাবে। এরপর তাদেরকে জান্নাতে পৌঁছে দেওয়া হবে। তখন জান্নাতের দারোগা তাদেরকে বলবেন, তোমরা এখন পবিত্র হয়ে গিয়েছ, সুতরাং এখন স্থায়ীভাবে জান্নাতে বসবাস কর। তবে জান্নাতে তাদের নাম হবে জাহান্নামী। রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, তারা আল্লাহর কাছে আবেদন করবে। ফলে তাদের সেই নাম মুছে যাবে। এরপর তাদেরকে ঐ জাহান্নামী নামে ডাকা হবে না।

যখন গুনাহগার মু‘মিনগণ জাহান্নাম থেকে বের হবে তখন কাফেররা বলবে হায়, যদি আমরাও মুসলমান হতাম তবে এদের সাথে দোযখ থেকে বের হতে পারতাম। এই অর্থেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, رُبَمَا يَوَدُّ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَوْ كَانُوْا مُسْلِمِيْنَ “কোন কোন সময় কাফেররা আকাক্সক্ষা করবে যে, কি চমৎকার হত, যদি তারা মুসলমান হত।” (সূরা আল হিজর, আয়াত, ২)

28 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! هَلْ يَبْقَى احَدٌ مِنَ الْـمُوَحِّدِيْنَ فِي النَّارِ؟ قَالَ: «نَعَمْ، رَجُلٌ فِيْ قَعْرِ جَهَنَّمَ يُنَادِيْ بِالْـحَنَّانِ الْـمَنَّانِ، حَتَّىٰ يَسْمَعَ صَوْتَهُ جِبْرِيْلُ ، فَيَعْجَبُ مِنْ ذَلِكَ الصَّوْتِ، فَقَالَ: الْعَجَبَ الْعَجَبَ، ثُمَّ لَـمْ يَصْبِرْ حَتَّىٰ يَصِيْرَ بَيْنَ يَدَيْ عَرْشِ الرَّحْمٰنِ سَاجِدًا، فَيَقُوْلُ اللهُ : اِرْفَعْ رَأْسَكَ يَا جِبْرِيْلُ! فَيَرْفَعُ رَأْسَهُ، فَيَقُوْلُ: مَا رَأَيْتُ مِنَ الْعَجَائِبِ؟ وَاللهُ أَعْلَمُ بِمَا رَآهُ، فَيَقُوْلُ: يَا رَبُّ، سَمِعْتُ صَوْتًا مِنْ قَعْرِ جَهَنَّمَ يُنَادِيْ بِالْـحَنَّانِ الْـمَنَّانِ، فَتَعَجَّبْتُ مِنْ ذَلِكَ الصَّوْتُ، فَيَقُوْلُ اللهُ : يَا جِبْرِيْلُ! اذْهَبْ إِلَىٰ مَالِكٍ، قُلْ لَهُ: أَخْرِجِ الْعَبْدَ الَّذِيْ يُنَادِيْ بِالْـحَنَّانِ الْـمَنَّانِ، فَيَذْهَبُ جِبْرِيْلُ  إِلَىٰ بَابٍ مِنْ أَبْوَابِ جَهَنَّمَ، فَيَضْرِبُهُ، فَيَخْرُجُ إِلَيْهِ مَالِكٌ، فَيَقُوْلُ جِبْرِيْلُ : إِنَّ اللهَ ، يَقُوْلُ: أَخْرِجِ الْعَبْدَ الَّذِيْ يُنَادِيْ بِالْـحَنَّانِ الْـمَنَّانِ، فَيَدْخُلُ فَيَطْلُبُهُ، فَلَا يُوْجَدُ، وَإِنَّ مَالِكًا أَعْرَفُ بِأَهْلِ النَّارِ مِنَ الْأُمِّ بِأَوْلَادِهَا، فَيَخْرُجُ، فَيَقُوْلُ لِـجِبْرِيْلَ: إِنَّ جَهَنَّمَ زَفَرَتْ زَفْرَةً لَا أَعْرِفُ الْـحِجَارَةَ مِنَ الْـحَدِيْدِ، وَلَا الْـحَدِيْدَ مِنَ الرِّجَالِ، فَيَرْجِعُ جِبْرِيْلُ  حَتَّىٰ يَصِيْرَ بَيْنَ يَدَيْ عَرْشِ الرَّحْمٰنِ سَاجِدًا، فَيَقُوْلُ اللهُ : اِرْفَعْ رَأْسَكَ يَا جِبْرِيْلُ! لِـمَ لَـمْ تَجِيءْ بِعَبْدِيْ؟ فَيَقُوْلُ: يَا رَبُّ، إِنَّ مَالِكًا يَقُوْلُ: إِنَّ جَهَنَّمَ قَدْ زَفَرَتْ زَفْرَةً لَا أَعْرِفُ الْـحِجَارَةَ مِنَ الْـحَدِيْدِ، وَلَا الْـحَدِيْدَ مِنَ الرِّجَالِ، فَيَقُوْلُ اللهُ : قُلْ لِـمَالِكٍ: إنَّ عَبْدِيْ فِيْ قَعْرِ كَذَا وَكَذَا، فِيْ سِرِّ كَذَا وَكَذَا».

وَفِيْ رِوَايَةٍ: «كَذَا وَكَذَا، فَيَدْخُلُ جِبْرِيْلُ فَيُخْبِرُهُ بِذَلِكَ، فَيَدْخُلُ مَالِكٌ، فَيَجِدُهُ مَطْرُوْحًا مَنْكُوْسًا مَشْدُوْدًا نَاصِيَتُهُ إِلَىٰ قَدَمَيْهِ، وَيَدَاهُ إِلَىٰ عُنُقِهِ، وَاجْتَمَعَتْ عَلَيْهِ الْـحَيَّاتُ وَالْعَقَارِبُ، فَيَجْذِبُهُ جَذْبَةً حَتَّىٰ تَسْقُطَ عَنْهُ الْـحَيَّاتُ وَالْعَقَارِبُ، ثُمَّ يَجْذِبُهُ جَذْبَةً أُخْرَىٰ حَتَّىٰ تَنْقَطِعَ مِنْهُ السَّلَاسِلُ وَالْأَغْلَالُ، ثُمَّ يُخْرِجُهُ مِنَ النَّارِ، فَيُصَيِّرُهُ فِيْ مَاءِ الْـحَيَاةِ وَيَدْفَعُهُ إِلَىٰ جِبْرِيْلَ، فَيَأْخُذُ بِنَاصِيَتِهِ وَيَمُدَّهُ مَدًّا، فَمَا مَرَّ بِهِ جِبْرِيْلُ عَلَىٰ مَلَأٍ مِنَ الْـمَلَائِكَةِ إِلَّا وَهُمْ يَقُوْلُوْنَ: أُفٍّ لِهَذَا الْعَبْدِ، حَتَّىٰ يَصِيْرَ بَيْنَ يَدَيْ عَرْشِ الرَّحْمٰنِ سَاجِدًا، فَيَقُوْلُ اللهُ : اِرْفَعْ رَأْسَكَ يَا جِبْرِيْلُ! وَيَقُوْلُ اللهُ : عَبْدِيْ أَلَـمْ أَخْلُقْكَ بِخَلْقٍ حَسَنٍ؟ أَلَـمْ أُرْسِلْ إِلَيْكَ رَسُوْلًا؟ أَلَـمْ يُقْرَأْ عَلَيْكَ كِتَابِيْ؟ أَلَـمْ يَأْمُرْكَ وَيَنْهَكَ؟ حَتَّىٰ يُقِرَّ الْعَبْدُ، فَيَقُوْلُ اللهُ تَعَالَىٰ: فَلِمَ فَعَلْتَ كَذَا وَكَذَا؟ فَيَقُوْلُ الْعَبْدُ: يَا رَبُّ! ظَلَمْتُ نَفْسِيْ حَتَّىٰ بَقِيْتُ فِي النَّارِ كَذَا وَكَذَا خَرِيْفًا لَـمْ أَقْطَعْ رَجَائِيْ مِنْكَ، يَا رَبُّ! دَعَوْتُكَ بِالْـحَنَّانِ الْـمَنَّانِ وأَخْرَجْتَنِيْ بِفَضْلِكَ، فَارْحَمْنِيْ بِرَحْمَتِكَ، فَيَقُوْلُ اللهُ : اِشْهَدُوْا يَا مَلَائِكَتِيْ بِأَنِّيْ رَحِمْتُهُ».

২৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আলকামা থেকে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)  এর খেদমতে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ঈমানদারগণের মধ্যে কি কেউ জাহান্নামে থেকে যাবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, দোযখ থেকে তাদেরকে বের করে আনার পর একজন ব্যক্তি জাহান্নামে থেকে যাবে। সে দোযখের এক গর্ত থেকে ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান বলে বলে ডাকতে থাকবে। শেষ পর্যন্ত তার আওয়াজ হযরত জিব্রাঈল (আ.) শুনবেন এবং তিনি অবাক হয়ে বলবেন, আল আযব, আল আযব। তারপর তিনি আর ধৈর্য্যধারণ করতে পারবেন না এবং আল্লাহর আরশের সামনে সিজদায় পড়ে যাবেন। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে জিব্রাঈল! তুমি মাথা তোল। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, তুমি কি আশ্চর্য বস্তু দেখেছ? অথচ তিনি কি দেখেছেন আল্লাহ তা ভাল করেই জানেন। তখন জিব্রাঈল বলবেন, হে আমার প্রভূ! আমি জাহান্নামের একটি গর্ত থেকে একটি আওয়াজ শুনেছি। কে যেন হে হান্নান, হে মান্নান বলে ডাকতেছে। আর তার আওয়াজে আমি খুবই অবাক হয়েছি। এতে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে জিব্রাঈল! তুমি জাহান্নামের দারোগার কাছে গিয়ে তাকে বল ঐ ব্যক্তিকে যেন খুঁজে বের করে দেয়।

এরপর জিব্রাঈল দোযখের দরজাসমূহ থেকে এক দরজায় গিয়ে করাঘাত করলে দারোগা তাঁর কাছে আসবে। জিব্রাঈল তাকে বলবেন, আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ যে সেই বান্দাকে বের করে নিয়ে এসো, যে হান্নান ও মান্নান করে করে চিৎকার করতেছে। দারোগা জাহান্নামের ভিতরে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাবেনা। অথচ স্বয়ং মা ছেলেকে যেভাবে চিনে দারোগা জাহান্নামীদেরকে তার চেয়ে বেশী চিনে। অবশেষে দারোগা নৈরাশ হয়ে ফিরে আসবে এবং জিব্রাঈলকে বলবে দোযখে এসময় এমন এক নিঃশ্বাস নিয়েছে যে, আমি পাথর ও লোহা এবং লোহাও মানুষকে পার্থক্য করতে পারিনি।

হযরত জিব্রাঈল পুনরায় গিয়ে আরশের সামনে সিজদায় পড়বেন। আল্লাহ বলবেন হে জিব্রাঈল! মাথা উঠাও, তুমি কি আমার বান্দাকে নিয়ে আসনি? তিনি বলবেন, হে আমার প্রভূ! জাহান্নামের দারোগা বলেছে যে, জাহান্নাম নাকি এমন নিঃশ্বাস নিয়েছে যার ফলে দারোগা পাথর ও লোহা, লোহা ও মানুষের মধ্যে পৃথক করতে পারেনি। আল্লাহ বলবেন, দোযখের দারোগাকে গিয়ে বলো, আমার বান্দাহ দোযখের অমুক গর্তের কোণায় এভাবে পড়ে রয়েছে। জিব্রাঈল গিয়ে দারোগাকে এ খবর দিলে দারোগা দোযখের ভিতরে যাবে এবং তাকে এমন অবস্থায় পাবে তার মাথা পায়ের সাথে বাঁধা থাকবে আর হাত গর্দানের সাথে বাঁধা থাকবে। সাপ-বিচ্ছুরা থাকবে তার শরীরের উপর। অতঃপর দারোগা তাকে এমনভাবে ঝাকুনি দেবে সাপ-বিচ্ছুগুলো ঝড়ে পড়বে। দ্বিতীয়বার ঝাকুনি দিলে হাত-পা ও গলার যাবতীয় বন্ধন খুলে পড়ে যাবে। তারপর দারোগা তাকে বের করে এনে, আবে হায়াতে গোসল করায়ে জিব্রাঈলের কাছে সোর্পদ করে দেবে। জিব্রাঈল তাকে কপাল ধরে টেনে টেনে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। যে সকল ফেরেস্তাদের পাশে যাবে তারা তার জন্য আফসোস করবে। তারপর জিব্রাঈল আরশের সামনে সিজদায় পড়বে। আল্লাহ বলবেন, হে জিব্রাঈল! মাথা উঠাও। তখন আল্লাহ বলবেন, হে আমার বান্দাহ! আমি কি তোমাকে সুন্দর আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করিনি? তোমার কাছে কি পয়গাম্বর প্রেরণ করিনি? সেই পয়গাম্বর কি আমার কিতাব পাঠ করে তোমাকে শুনাইনি? তোমাকে কি ভাল কাজের আদেশ দেননি এবং খারাপ কাজ থেকে বাধা দেননি? সেই বান্দা আল্লাহর সব কথার সত্যায়ন করবে। এরপর আল্লাহ বলবেন, তবুও কেন এরূপ গুনাহের কাজ করেছ? বান্দাহ বলবে হে প্রভূ! আমি আমার উপর অত্যাচার করেছি। যার শাস্তি স্বরূপ আমি এত বছর পর্যন্ত জাহান্নামে পড়ে রয়েছিলাম। তবুও আপনার রহমত থেকে নৈরাশ হইনি এবং আমি হান্নান ও মান্নান করে আপনাকে আহŸান করেছি। আর আপনি স্বীয় মেহেরবাণীতে আমাকে বের করে এনেছেন। এখন আপনারই রহমতে আমার উপর দয়া করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, হে ফেরেস্তারা! তোমরা সাক্ষী থাক আমি তার উপর দয়া করলাম।


29 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ مَنْصُوْرِ بْنِ أَبِيْ سُلَيْمَانَ الْبَلْـخِيِّ، وَمُحَمَّدِ بْنِ عِيْسَىٰ، وَيَزِيْدَ الطُّوْسِيِّ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ أُمَيَّةَ الْـحَذَّاءِ الْعَدَوِيِّ، عَنْ نُوْحِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ يَزِيْدَ الرَّقَاشِيِّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قُلْنَا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! لِـمَنْ تَشْفَعُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ: «لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ، وَأَهْلِ الْعَظَائِمِ، وَأَهْلِ الدِّمَاءِ».


২৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মুহাম্মদ ইবনে মনসুর ইবনে আবু সোলায়মান বলখী, মুহাম্মদ ইবনে ঈসা এবং ইয়াযিদ তূসী থেকে, তারা কাশেম ইবনে উমাইয়া থেকে, তিনি নূহ ইবনে কায়েস থেকে, তিনি ইয়াযিদ রুকাশী থেকে, তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা আরয করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন আপনি কাদের জন্য সুপারিশ করবেন? উত্তরে তিনি বলেন, কবীরা গুনাহকারী, বড় বড় গুনাহকারী ও খুনীদের জন্য। (মা’আনীউল আখবার, ১/৩৫৬/২৩৯)

ব্যাখ্যা: এখানে الْكَبَائِر অর্থ কবীরাহ গুনাহ। আর الْعَظَائِمِ অর্থ বিশেষ বিশেষ গুনাহ। এখানে ذكر الخاص بعد العام হয়েছে। অর্থাৎ প্রথমে ব্যাপক শব্দ ব্যবহার করার পর বিশেষ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর রাসূল (ﷺ)  এর এই সুপারিশ কিয়ামত দিবসে বিচারকার্য সমাপ্তির পর দোযখে যাওয়ার পূর্বেও হতে পারে কিংবা পরেও হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে, এই সুপারিশ পাওয়ার জন্য মু’মিন হতে হবে। কেননা কেবল মু’মিনগণই সুপারিশের যোগ্য ও অধিকারী। কোন কাফের সুপারিশের যোগ্য নয়। সুতরাং কাফের চিরস্থায়ী জাহান্নামী। 


30 - حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْ حَنِيْفَةَ، عَنْ إِسْمَاعِيْلَ بْنِ أَبِيْ خَالِدٍ، وَبَيَانِ بْنِ بِشْرٍ، عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِيْ حَازِمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ جَرِيْرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ، يَقُوْلُ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لَيْلَةَ الْبَدْرِ لَا تُضَامُوْنَ فِيْ رُؤْيَتِهِ، فَانْظُرُوْا أَنْ لَا تُغْلَبُوْا فِيْ صَلَاةٍ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَا»، قَالَ حَمَّادٌ: يَعْنِيْ: الْغَدَاةَ وَالْعَشِيَّ.


৩০. অনুবাদ: হাম্মাদ আবু হানিফা থেকে, তিনি ইসমাঈল ইবনে আবু খালেদ ও বয়ান ইবনে বিশর থেকে, তারা কায়েস ইবনে আবু হাসেম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه)কে বলতে শুনেছি, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন- অচিরেই তোমরা আল্লাহকে দেখবে যেভাবে চৌদ্দ তারিখের রাতে চন্দ্রকে দেখতে পাও। তাকে দেখতে তোমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। অতঃপর তোমরা সর্বদা সতর্ক থাকবে যেন সূর্যোদয়ের পূর্বের নামায ও সূর্যাস্তের পূর্বের নামায অনাদায় থেকে না যায়।

হাম্মাদ বলেন, উভয় ওয়াক্তের নামায দ্বারা উদ্দেশ্য হল ফজর ও আসরের নামায। (বুখারী, ১/২০৯/৫৪৭)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পরকালে মু’মিনগণ নিজের চোখে আল্লাহ তায়ালার দীদার লাভে ধন্য হবেন। পবিত্র কুরআন মজিদ, হাদিস শরীফ এবং সাহাবী, তাবেয়ী ও সলফে সালেহীনগণের ঐক্যমত দ্বারা বিষয়টি সাব্যস্ত ও প্রমাণিত। ফলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা বিশ্বাসই হল এটি। কুরআনে করিমে এরশাদ হচ্ছে  وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ ، إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ  আজ (কিয়ামত দিবসে) কতিপয় চেহারা সমুজ্জল হবে যারা তাদের প্রভূকে দেখতে থাকবে। (সূরা কিয়ামাহ, আয়াত: ২২ ও ২৩)

সিহাহ সিত্তাহসহ অনেক হাদিস গ্রন্থে এর পক্ষে বহু হাদিস বিদ্যমান। 


Top