২৭. কোমল হওয়ার অধ্যায়

বাব নং ২২৬. ১.

২৭- كِتَابُ الرِّقَاقِ

১- بَابٌ

٤٨١- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـحَسَنِ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ : إِنَّ فِي الْإِنْسَانِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ بِهَا سَائِرُ الْـجَسَدِ، وَإِذَا سَقِمْتَ سَقِمَ بِهَا سَائِرُ الْـجَسَدِ، أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ.


৪৮১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাসান থেকে, তিনি শা’বী থেকে, তিনি নু’মান ইবনে বসীর (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে। যখন এটা সঠিক থাকে তখন তার সমস্ত দেহ সঠিক থাকে। আর এটা যখন অসুস্থ বা খারাপ হয়ে যায় তার সমস্ত দেহ অসুস্থ ও খারাপ হয়ে পড়ে। সাবধান! এটা হলো অন্তর। 

(মুসনাদে আহমদ, ৪/২৭৪/১৮৪৩৬)


ব্যাখ্যা: মানুষের দেহের মধ্যে অন্তর এমন এক বস্তু যার উপর সমস্ত দেহের সুস্থতা নির্ভর করে। কারণ আমলের ভাল-মন্দ নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল, আর নিয়্যতের উৎস হলো অন্তর। তাই সমস্ত দেহের মধ্যে এটাই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। এটা ঠিক থাকলে সবকিছু ঠিক থাকে, আর এটা নষ্ট হয়ে গেলে সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং সর্বদা অন্তর ঠিক রাখতে হবে।


٤٨٢- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: مَا شَبِعْنَا ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيْهَا مِنْ خُبْزٍ مُتَتَابِعًا، حَتَّىٰ فَارَقَ مُحَمَّدٌ  الدُّنْيَا، وَمَا زَالَتِ الدُّنْيَا عَلَيْنَا عَسِرَةً، حَتَّىٰ فَارَقَ مُحَمَّدٌ  الدُّنْيَا، فَلَـمَّا فَارَقَ مُحَمَّدٌ  الدُّنْيَا صُبَّتْ عَلَيْنَا صَبًّا.  وَفِيْ رِوَايَةٍ: صَبَّ الدُّنْيَا عَلَيْنَا صَبًّا. وَفِيْ رِوَايَةٍ: مَا شَبِعَ آلُ مُحَمَّدٍ  ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مَتَوَالِيَةٍ مِنْ خُبْزِ الْبُرِّ.


৪৮২. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা অনবরত তিন দিন তিন রাত কখনো পেটভরে তৃপ্তি সহকারে রুটি খেতে পারিনি। এ অবস্থায় মুহাম্মদ (ﷺ) ইন্তেকাল করেছেন। দুনিয়া সর্বদা আমাদের উপর অভাব অনটন চেপে দিয়েছে এমনকি এ অবস্থায় মুহাম্মদ (ﷺ) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। মুহাম্মদ (ﷺ) দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর দুনিয়া আমাদের উপর মহাবিপদ হয়ে দাঁড়াল। অন্য বর্ণনায়  صُبَّ الدنيا علينا صبّا আছে।


অপর বর্ণনায় আছে, মুহাম্মদ (ﷺ) ’র পরিবার-পরিজন অনবরত তিনদিন তিনরাত পর্যন্ত তৃপ্তি সহকারে গমের রুটি খেতে পারেননি। 

(আল মু’জামুল আওসাত, ৮/৩৫৮/৮৮৬৭)


٤٨٣- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ، دَخَلَ عَلَى النَّبِيِّ  فِيْ شِكَاةٍ شَكَاهَا، فَإِذَا هُوَ مُضْطَجِعٌ عَلَىٰ عَبَاءَةٍ قَطْوَانِيَّةٍ وَمَرْفَقَةٍ مِنْ صُوْفٍ حَشْوُهَا مِنْ إِذْخِرٍ، فَقَالَ: بِأَبِيْ أَنْتَ وَأُمِّيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ! كِسْرَىٰ وَقَيْصَرُ عَلَى الدِّيْبَاجِ! فَقَالَ : يَا عُمَرُ! أَمَا تَرْضَى انْ تَكُوْنَ لَـهُمُ الدُّنْيَا وَلَنَا الْآخِرَةُ؟ ثُمَّ إِنَّ عُمَرَ مَسَّهُ فَإِذَا هُوَ فِيْ شِدَّةِ الْـحُمَّىٰ، فَقَالَ: تُحَمُّ هَكَذَا وَأَنْتَ رَسُوْلُ اللهِ؟ فَقَالَ : إِنَّ أَشَدَّ هَذِهِ الْأُمَّةِ بَلَاءً نَبِيُّهَا، ثُمَّ الْـخَيِّرُ، ثُمَّ الْـخَيِّرُ، وَكَذَلِكَ كَانَتِ الْأَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ قَبْلَكُمْ وَالْأُمَمُ.


৪৮৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)  ’র ঘরে প্রবেশ করেন। তখন তিনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং একটি কাতওয়ানী অমসৃণ চাদরে শায়িত ছিলেন। তার বালিশটি ছিল পশমের যার ভিতের ছিল ইযখির ঘাস। হযরত ওমর (رضي الله عنه) বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার উপর উৎসর্গ হোক। হে আল্লাহর রাসূল! কিসরা ও কায়সার (ইরান ও রোমের অধিপতিদের উপাধি) রেশমী গালিচায় শয়ন করে থাকে। তখন তিনি বললেন, হে ওমর! তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও? কাফিরদের জন্য (অস্থায়ী) দুনিয়া আর তোমাদের জন্য পরকালের স্থায়ী সুখ।

অতঃপর ওমর (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ)  ’র দেহ মোবারক স্পর্শ করে দেখতে পেলেন যে, তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। তখন তিনি বললেন, আপনি এরূপ জ্বরে আক্রান্ত অথচ আপনি তো আল্লাহর রাসূল! অতঃপর রাসূল (ﷺ)  বললেন, এ উম্মতের মধ্যে কঠিন পরীক্ষা হলো তাদের নবীর জন্য। এরপর কম নেককারদের জন্য তারপর অপেক্ষাকৃত কম নেককারদের জন্য। তোমাদের পূর্ববর্তী নবী ও তাঁদের উম্মতদের অবস্থাও ছিল অনুরূপ। 

(জামেউল আহাদীস, ২৬/১০০/২৮৬৫৯)


ব্যাখ্যা: হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, দুনিয়াতে মু’মিনের ঈমানী শক্তি অনুযায়ী পরীক্ষা হয়ে থাকে। যার ঈমানী শক্তি বেশী তিনি কঠোর পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এরূপ কঠিন স্তর অতিক্রম করে বান্দা খাঁটি সোনায় পরিণত হয়। যেমন তিরমিযী শরীফে বর্ণিত আছে,فما يَبْرَحُ البلاء بالعبد حتى يتركه يمشى على الارض وما عليه خطيئة  “বান্দার উপর অনবরত বিপদ পতিত হওয়ার ফলে সে দুনিয়াতে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে চলাফেরা করে।”  ২২২

➥ ইমাম তিরমিযী (رحمة الله), (২৭৯ হি), তিরমিযী শরীফ, খন্ড ৪, পৃষ্ঠাঃ  ৬০১, হাদীস নং ২৩৯৮



Top