বিষয় নং-: আল্লাহর ওলীদেরকে ডাকা:


দেওবন্দীরা ওলী আল্লাহরদেরকে ডাকা এবং আহবান করাকে শিরক বলে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত আল্লাহর ওলীদেরকে ডাকা এবং আহ্বান করাকে বৈধ বলেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদে তাঁর প্রিয় মাহ্বুব(ﷺ) কে বলেন

فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ

-‘‘তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ সাহায্যকারী এবং জিবরাইল এবং সৎকর্মপরায়ন মুমিনগণ এবং এরপর ফিরিশতাগণ সাহায্যকারী রয়েছে।’’ (সূরা তাহরীম, আয়াত নং-, ২৮ পারা, ১৯ রুকু)

এই আয়োতের তাফসীরে আল্লামা আলূসী (رحمة الله) مَوْلَاهُ এর অর্থ أي ناصره বা তার সাহায্যকারী বলেছেন। ১১৪

  • ১১৪. আল্লামা মাহমুদ আলূসী, তাফসিরে রুহুল মা‘আনী, ১৪/৩৪৮ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪১৫ হি.।


অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন

إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ

-“নিশ্চয়ই তোমাদের বন্ধু তো, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল ঈমানদারগণ, যারা নামায কায়েম করে যাকাত দেয় এবং আল্লাহরই সামানে বিনত হয়। (সূরা মায়েদা, আয়াত নং-৫৫, ৬ষ্ট পারা ১২ রুকু)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’ আকিদা

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, যদি কারো পশু জঙ্গলে হারিয়ে যায়, তো সে যদি তা খুঁজে পেতে চায়, তবে সে যেন তিন বার বলে

فَلْيُنَادِ: أَعِينُوا عِبَادَ اللَّهِ

হে আল্লাহর বান্দা সাহায্য করুন! হে আল্লাহর বান্দা সাহায্য করুন!’’১১৫  

  • ১১৫. ইমাম হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১০/১৩২ পৃ. হা/১৭১০৪, ইমাম বায্যার, আল-মুসনাদ, হা/, ইমাম জাযরী, হিসনে হাসীন-১৬৩ পৃ.


অন্য বর্ণনায় এসেছে-

فَلْيُنَادِ: يَا عِبَادَ اللَّهِ احْبِسُوا، يَا عِبَادَ اللَّهِ احْبِسُوا

-‘‘হে আল্লাহর বান্দা! তাকে বেঁধে রাখুন, হে আল্লাহর বান্দা! তাকে বেঁধে রাখুন।’’ ১১৬

  • ১১৬. ইমাম হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১০/১৩২ পৃ. হা/১৭১০৫, ইমাম আবু ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, হা/, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, হা/, ইমাম জাযরী, হুসনে হাসিন, ১৬৩ পৃ.


আল্লামা মুহাদ্দিস ইবনে জাযরী (رحمة الله) বলেন, এক বুর্যুগ ব্যক্তির একটি পশু হারিয়ে গেল। তাঁর উপরোক্ত হাদিসটি জানা ছিল। তখন তিনি উল্লেখিত শব্দগুলো বললে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্তু ফেরত দেন। তাবরানী শরীফের হাওলা দিয়ে আল্লামা ইবনে জাযরী (رحمة الله) আরেকটি হাদিস বর্ণনা করেন যে,

اِنَّ أَرَادَ عَوْنًا فَلْيَقُلْ: يَا عِبَادَ اللهِ أَغِيثُونِي، يَا عِبَادَ اللهِ أَغِيثُونِي

-“যদি কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তবে সে যেন বলে, হে আল্লাহর বান্দা সাহায্য করো, হে আল্লাহর বান্দা সাহায্য করো, হে আল্লাহর বান্দা সাহায্য করো।” 

হাদিস খানা বর্ণনা করার পর রাবী (উতবাহ ইবনে গাযওয়ান) বলেন-

وَقَدْ جُرِّبَ ذَلِكَ

-‘‘এটি পরীক্ষিত।’’ ১১৭

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ১১৭. আল্লামা জাযরী, হিসনে হাসীন-১৬৩ পৃ., 


❏ তবে ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হাদিসটি এভাবে সংকলন করেছেন-

عَنْ عُتْبَةَ بْنِ غَزْوَانَ، عَنْ نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا أَضَلَّ أَحَدُكُمْ شَيْئًا أَوْ أَرَادَ أَحَدُكُمْ عَوْنًا وَهُوَ بِأَرْضٍ لَيْسَ بِهَا أَنِيسٌ، فَلْيَقُلْ: يَا عِبَادَ اللهِ أَغِيثُونِي، يَا عِبَادَ اللهِ أَغِيثُونِي، فَإِنَّ لِلَّهِ عِبَادًا لَا نَرَاهُمْ  وَقَدْ جُرِّبَ ذَلِكَ

-‘‘হযরত উতবাহ ইবনে গাযওয়ান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, পৃথিবীর নির্জন স্থানে তোমাদের কারোও কিছু হারিয়ে গেলে বা কারোও কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে, সে যেন বলে, হে আল্লাহর প্রিয় বান্দা! আমাকে সাহায্য করুন, হে আল্লাহর প্রিয় বান্দা আমাকে সাহায্য করুন, তাঁরা এমন বান্দা যাদেরকে দেখা যায় না, এ আমলটি পরীক্ষিত।’’ (ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৭/১১৭ পৃ. হা/২৯০, হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১০/১৩২ পৃ. হা/১৭১০৩) 

━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━


আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)’ আক্বিদা

হিসনে হাসীন এর ব্যাখ্যা গ্রন্থহারজে ছামিন আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন-

قَالَ بَعْضُ الْعُلَمَاءِ الثِّقَاتِ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ يَحْتَاجُ إِلَيْهِ الْمُسَافِرُونَ وَرُوِىَ عَنِ الْمَشَائِخِ اَنَّهُ مُجَرَّبُ مُحَقَّقٌ

-‘‘অনেক বিশ্বস্ত আলেম বলেন, এই হাদীস খানাহাসান মুসাফিরদের এরূপ অনেক হাজত থাকে। আর মাশায়েখে কেরামগণ বলেন, এই হাদিস খানা পরীক্ষিত।’’ ১১৮

  • ১১৮. মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১৬৯৩ পৃ. হা/২৪৪১


আল্লামা নববী (رحمة الله)’ আকিদা

মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম নববী (رحمة الله) একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন-

قُلْتُ: حَكى لِي بَعْضُ شَيُوْخِنَا الْكِبَارِ فِي الْعِلْمِ أَنُّه اِنْفَلَتَتْ لَه دَابَّةٌ أَظُنُّهَا بَغْلَةً، وَكَانَ يَعْرِفُ هَذَا الْحَدِيْثَ، فَقَالَه: فَحَبَسَهَا اَللهُ عَلَيْهِمْ فِي الْحَالِ؛ وَكُنْتُ أَنَا مَرَّةً مَعَ جَمَاعَةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهَا بَهِيْمَةٌ، وَعَجَزُوْا عَنْهَا، فَقُلْتُه، فَوَقَفَتْ فِي الْحَالِ بِغَيْرِِ سَبَبٍ سَوَىٰ هَذَا الْكَلَامِ.

-‘‘আমাকে এক বুযুর্গ একটি ঘটনা বর্ণনা করেন যে, একদা আমার একটি খচ্ছর হারিয়ে গেল। রাসূলে পাক (ﷺ)’ হাদীস খানা আমার জানা ছিল। তখন আমি বললামহে আল্লাহর বান্দা! আমাকে সাহায্য করুন! তখন আল্লাহ তায়ালার দয়ায় আমার খচ্ছর মিলে গেল। মুহাদ্দিস আল্লামা নববী (رحمة الله) বলেন, একদা আমি নিজেই এক বড় দলের সাথে ছিলাম, হঠাৎ আমাদের চতুষ্পদ জন্তুটি পালাতে লাগল। আমরা অনেক চেষ্টা করেও তা পেলাম না, তখন আমিওহে আল্লাহর বান্দা, আমাকে সাহায্য করুন! বলে চিৎকার দিলাম। সাথে সাথে তা আটকে গেল।’’ (ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ৩৭৮ পৃ. হা/১১৪৭-এর আলোচনা।)

সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’ আকিদা

আহলে হাদীস গাইরে মুকাল্লিদগণের বড় আলেম কাজী মুহাম্মদ শাওকানী তার স্বীয় কিতাবহিসনে হাসিনের ব্যাখ্যাগ্রন্থতুহফাতুয্ যাকিরীনএকটি হাদীস নকল করে তিনি নিজেই উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা করেছেন। দুটিই উপকারার্থে নিম্মে দেয়া হল। ইমাম বায্যার (رحمة الله) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’ সুত্রে বর্ণনা করেন-

وَأخرج الْبَزَّار من حَدِيث ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ إِن لله مَلَائِكَة فِي الأَرْض سوى الْحفظَة يَكْتُبُونَ مَا سقط من ورق الشّجر فَإِذا أصَاب أحدكُم شَيْء بِأَرْض فلاة فليناد أعينوني يَا عباد الله قَالَ فِي مجمع الزَّوَائِد رِجَاله ثِقَات وَفِي الحَدِيث دَلِيل عَلى جَوَاز الِاسْتِعَانَة بِمن لَا يراهم الْإِنْسَان من عباد الله من الْمَلَائِكَة وصالحي الْجِنّ وَلَيْسَ فِي ذَلِك بَأْس كَمَا يجوز للْإنْسَان أَن يَسْتَعِين ببني آدم إِذا عثرت دَابَّته أَو انفلتت

-‘‘ইমাম বায্যার (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’ সূত্রে বর্ণনা করেন, ফেরেশতা ছাড়াও পৃথিবীতে এমন কতগুলো ফেরেশতা আছেন, যারা কোন একটি গাছের পাতাও ঝড়ে পড়লে তা লেখেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন কোন জঙ্গলে বিপদে পড়বে, তখন সে যেন বলে, হে আল্লাহর বান্দা, আমাকে সাহায্য করুন! (ইমাম হাইসামীর) মাযমাউয যাওয়ায়েদে রয়েছে হাদিসের সমস্ত রাবীগণ বিশ্বস্ত। হাদীসের মধ্যে বৈধতা আছে যে, অদৃশ্য ব্যক্তি তথা ফেরেশতা এবং নেককার জিনদের কাছে সাহায্য চাওয়া বৈধ। যেমনিভাবে মানুষের কোন জন্তু হারিয়ে গেলে বনী আদম থেকেও সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ।’’ (শাওকানী, তুহফাতুয যাকিরীন, ২৩৮ পৃ.)

সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)’ আকিদা

তাবরানী শরীফের হাওলা দিয়ে ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) একটি হাদীস বর্ণনা করেন

عنِ ابْنِ عُمَر، قَال: قَال رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إنّ لله تَعَالَى عِباداً اخْتَصَّهُمْ بِحَوَائِجِ النَّاسِ يَفْزَعُ النّاسُ إلَيْهِمْ فِي حَوَائِجِهِمْ أولَئِكَ الآمِنُونَ مِنْ عذابِ الله

-‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছে, যাদেরকে মানুষের প্রয়োজন পূরনার্থে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কোন মানুষ বিপদে পড়ে তাদেরকে আবেদন জানালে আল্লাহর আজাব হতে তারা মুক্তি পায়।’’ ১১৯

  • ১১৯. ইমাম সুয়ূতি, জামে সগীর, ১ম খণ্ড ৭৮ পৃ. হা/, ইমাম ইবনে আদী, আল-কামিল, ৫/৩১৫ পৃ. ক্রমিক.১০০৩, ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৫৪/৪ পৃ. ক্রমিক. ৬৫৫৯, ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, ৯/২১৩ পৃ. হা/৮২৬৬, ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৮/১৯২ পৃ. হা/১৩৭১০


আল্লামা আবদুল ওহ্হাব শারানী (رحمة الله)’ আক্বিদা

আল্লামা শারানী (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য কিতাবআত-তবকাতুল কোবরাগ্রন্থে আল্লাহর ওলী গণের দূর থেকে সাহায্য করার একটি ঘটনা  বর্ণনা করেন- এরূপ একটি ঘটনা বর্ণনা করা হল, যাতে প্রমাণিত হয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত কারা?

আল্লামা আবদুল ওহ্হাব শারানী (رحمة الله) বলেন, শামসুদ্দীন মুহাম্মদ হানাফী (رحمة الله) একদা নিজ হুজুরার মধ্যে অযু করছিলেন, আকস্মিক তাঁর একটি খড়ম শূন্যে নিক্ষেপ করলে তা অদৃশ্য হয়ে যায়। অথচ হুজরার মধ্যে বের হবার কোন পথ ছিল না। ২য় খড়মটি খাদেমকে দিয়ে বললেন, অপর খড়ম না আসা পর্যন্ত এটা রাখ। অনেক দিন পর সিরিয়া থেকে এক ব্যক্তি কিছু হাদিয়াসহ সেই খড়ম নিয়ে আসলেন। আরয করলেন আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান করুন। মূল ঘটনা ছিল এরূপ যে

إِنَّ اللِّصَ لَمَّا جَلَسَ عَلٰى صَدْرِي لِيَذْبَحَنِي قُلْتُ: فِي نَفْسِي يَا سَيِّدِي مُحَمَّد يَا حَنَفِي فَجَاءَتُهُ فِي صَدْرِه، فَانْغَلَبَ مُغْمَىَ عَلَيْهِ وَنَحَانِي اَللهُ عَزَّ وَجَلَّ بِبَرْكَتِكَ

-এক চোর আমাকে হত্যা করার জন্য আমার বুকের উপর বসলো। তখন আমি মনে মনে বললাম, হে আমার পীর মুহাম্মদ! হে হানাফী! তখন এই খড়মটি চোরের বুকের উপর এসে পড়ে। তখন চোর অচৈতন্য হয়ে পড়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা আপনার বরকতে আমাকে মুক্তি দান করেন।’’ ১২০

  • ১২০. ইমাম শা‘রানী, তবকাতুল কুবরা, ২য় খণ্ড , ৮৪ পৃ.


আরেফে হাক্কানী আল্লামা আবদুল ওহাব শারানী (কুদ্দিসা সিররুহুল আযিয) হযরত মূসা আবু আমের (رحمة الله)’ শানে তাঁর ক্ষমতা এবং পূর্ণতা সম্পর্কে বলেন

وَكَانَ إِذَا نَادَاهُ مُرِيْدُه أَجَابَه مِنْ مُسِيْرَةِ سَنَة، وَأَكْثَرَ

যখন তাঁর কোন মুরিদ যে কোন স্থান হতে তাকে আহ্বান করতেন, তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিতেন। তা দশ বছরের দূরত্ব হোক বা তার চেয়ে বেশি হোক।’’ ১২১

  • ১২১. ইমাম শা‘রানী, আত্-তবকাতুল কুবরা, ২য় খণ্ড , ২৯ পৃ.


ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله)’এর আক্বিদা:

যিনি দেওবন্দীদের দৃষ্টিতেও গ্রহণযোগ্য ছিলেন, তিনি তাঁর ফাতওয়ার মধ্যে বলেন,

وَمن نفعهم لِلْخلقِ أَن بركتهم تغيث الْعباد وَيدْفَع بهَا الْفساد وَإِلَّا لفسدت الأَرْض

-‘‘আল্লাহর ওলীগণের উপকারের মধ্যে অন্যতম হলো তাদের বরকতে মানুষের উপর বৃষ্টি বর্ষণ হয় এবং সমস্যা দূর হয়, অন্যথায় যমিন ধ্বংস হতো।’’ (ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ২২১ পৃ.)

আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله)’ আকিদা

আল্লামা শামী (رحمة الله) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত কিতাব রদ্দুল মুহতার বা শামী শরীফের হাশিয়ার মধ্যে লেখেন, যিয়াদী বর্ণনা করেন যে, যদি কোন ব্যক্তির কিছু হারিয়ে যায় এবং সে কামনা করে যে, আল্লাহ তাঁর হারানো বস্তু ফিরিয়ে দিক, তবে সে এক উঁচু স্থানে উঠে কিবলার দিকে মুখ করে ফাতিহা পড়ে এবং সাওয়াব রাসূল (ﷺ) দরবারে বখশিশ করবে এবং সায়্যিদ আহমদ বিন উলওয়ান (رحمة الله)’ রূহে পাঠাবে এবং নিম্নের দোয়া পড়বে-

يَا سَيِّدِى اَحْمَد بْنِ عَلْوَانَ اِنْ تَرُدَّ عَلٰى ضَالَّتِى وَ اِلَّا نَزَعْتُكَ مِنْ دِيْوَانِ الاَوْلِيَاءِ فَاِنَّ اَللهَ تَعَالٰى يَرُدْدُّ عَلٰى مَنْ قَالَ ذَلِكَ ضَالَّتَه بِبَرْكَتِه اُجُوْرِىْ مَعَ زِيَادَةٍ كَذَا فِى حَاشِيَةِ شَرْحِ المُنْهَجِ لِدَّاؤدِى رَحِمَهُ اَللهُ

-“হে আমার সর্দার আহমদ, হে ইবনে আলওয়ান আপনি যদি আমার হারানো বস্তু ফেরত দেন, তবে তো ভাল, অন্যথায় আপনার নাম আল্লাহর অলীগণের দিওয়ান থেকে বাদ পড়বে। এই আমলের ফলে উক্ত আল্লাহর অলীর উছিলায় আল্লাহ তায়ালা হারানো বস্তু ফেরত দেবে।’’  ১২২

  • ১২২. হাশিয়ায়ে রদ্দুল মুহতার শরহে দুররুল মুখতার, ৩য় খণ্ড, ৩৩৪ পৃ. মিশরে হতে প্রকাশিত


শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله)’ আকিদা

শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله), মাওয়াহেবে ল্লাদুন্নিয়ার মুসান্নিফ, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) আল্লামা শামসুদ্দিন (رحمة الله)’ উস্তাদ শায়খ আহমদ যুরওয়াক (رحمة الله)’ একটি বানী নকল করে মসলকে হক্ব তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের যথার্থতা প্রমাণ করে বলেন-

اَنَا الْمُرِيْدِىْ جَامِعٌ لِشَتَاتِه اِذَا مَاسَطَا جَوْرُ الزَّمَانِ بِنُكْبَةِ

فَاِنْ كُنْتَ فِى ضَيْقِ وَكَرْبٍ وَّ وَحْشَةٍ فَنَادِبِيَازُرُّوْقُ اٰتِ بِسُرْعَةٍ

-‘‘আমি আমার মুরিদের পেরেশানীকে সান্তনা দানকারী, যুগের দুর্দশা যখন তার উপর হামলা করবে। যখন তুমি সংকীর্ণতা এবং একাকীত্বতা অনুভব করবে তখন তুমিইয়া যারুকুবলে ডাক দিবে, তৎক্ষণাৎ আমি তোমার কাছে আসবা।’’ (বুস্তানুল মুহাদ্দেসীন, ফার্সী)

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! হানাফীদের নির্ভরযোগ্য এবং ফিক্হের প্রসিদ্ধ কিতাব শামী শরীফে আলী আল্লাহুদের ডাকা এবং তাঁদের কাছে প্রার্থনা করার হুকুম আছে। দেওবন্দীরা নিজেদের হানাফী বলে বলে সাদা সিধে মুসলমানদেরকে ধোঁকা দেয়ার জন্য রাত দিন ব্যস্ত। বিভিন্ন মসজিদ দখল করার চিন্তায় ব্যস্ত। পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর, গ্রাম, মহল্লার মসজিদে মসজিদে ফেতনা ছড়ানোর  কাজেই তারা নিয়োজিত। অথচ উপর্যুক্ত কুরআনে পাক, সুন্নাহ এবং নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিসিনে কেরামগণের কিতাব হতে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, দেওবন্দীদের আকিদা আহলে সুন্নতের আকিদা হতে অনেক দূরে। তারা না আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত না হানাফী। বরং অলী আল্লাহদেরকে দূর থেকে আহ্বান কারী এবং তাদের থেকে সাহায্য প্রার্থনাকারী এবং আল্লাহর হুকুমে কোন কাজ সংঘটিত হয়। বিষয়ে অবগতকারীরাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত। ১২৩

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ১২৩. 

❏ তবে একটি বর্ণনা রয়েছে- 

إِذَا تَحَيَّرْتُمْ فِي الْأُمُورِ فَاسْتَعِينُوا بِأَهْلِ الْقُبُورِ

-“যখন তোমরা কোন ব্যাপারে পেরেশান হও, তখন কবরবাসীদের (ওলীদের) নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো।” (মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১২৫৯ পৃ. হা/১৭৬৯) 


❏ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম ইমাম, আল্লামা খাযেন আশ্শাফেয়ী (ওফাত.৭৪১হি.) এ বিষয়ে বলেন-

فَإِنَّ اَلإِسْتِعَانَةُ بِالمَخْلُوْقِ فِي دَفْعِ الضَّرَرِ جَائِزة

-‘‘দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্য আল্লাহর মাখলুকের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া বৈধ।’’ (ইমাম খাযেন, লুবাবুত তাভিল ফি মা‘আনিত তানযিল, ২/৫৩০) 


❏ বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) এ ঘটনাটির সনদসহ উল্লেখ করেন এভাবে-

أَخْبَرَنَا الْقَاضِي أَبُو عَبْد اللَّهِ الْحُسَيْنُ بْن عَلِيّ بْن مُحَمَّد الصيمري قال أنبأنا عمر بن إبراهيم قال نبأنا عَلِيّ بْن ميمون قَالَ: سمعت الشافعي يقول: إني لأتبرك بأبي حنيفة وأجيء إِلَى قبره في كل يوم- يَعْنِي زائرا- فإذا عرضت لي حاجة صليت ركعتين وجئت إِلَى قبره وسألت الله تعالى الحاجة عنده، فما تبعد عني حتى تقضى.

-‘‘ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) বলেন আমাকে.......তাকে আলী ইবনে মায়মুন (رحمة الله) বলেন, আমি ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি, আমি ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর উসিলায় প্রতিদিন তার যিয়ারত করার মানসে বরকত হাসিল করি এবং তাঁর মাজারে আসি। আমার কোন সমস্যা দেখা দিলে, প্রথমে দু’রাকাত নামায পড়ি। তাঁর মাজারের পাশে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তখন সহসা আমার সমাধান হয়ে যায়।’’ (খতিবে বাগদাদী, তারীখে বাগদাদ, ১/১৩৫পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ১/৫৫পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।) 


তিনি দ্বীনের মুজতাহিদ ইমামদের থেকেও কতবড় হাদিস পন্ডিত তা সকলেরই জানা আছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই সত্য গোপনকারী আলেম হতে হেফাজত করুন। আমিন।

━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

Top