ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র ইবাদত ও রিয়াযত


আল্লামা যাহাবী (رحمة الله) বলেন, তাঁর রাতের তাহাজ্জুদের নামাযের জন্য দাঁড়ানো এবং ইবাদত করা মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা সাব্যস্ত আছে। বরং ত্রিশ বছর যাবৎ সারা রাত ইবাদত করতেন এবং এক এক রাকাতে এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করেছেন এবং যে স্থানে তিনি ইন্তেকাল করেছেন সে স্থানে সত্তর হাজার বার কুরআন শরীফ খতম করেছেন।  

 ➥    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله), (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, উর্দু, পৃষ্ঠাঃ ৮১, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৮৪

  

ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) বলেন-তিনি প্রতি রাতে ও দিনে এক খতম করে কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং রমযান মাসে ঈদের দিন পর্যন্ত মোট বাষট্টি খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তিনি দানবীর ছিলেন, শিক্ষাদানে বড় ধৈর্যশীল ছিলেন।তাঁকে যা কিছু বলা হতো তিনি ধৈর্য্যধারণ করতেন, রাগ হতেন না কখনো। আমি তাঁকে বিশ বছর যাবত দেখেছি যে, তিনি রাতের প্রথমাংশে উযূ করতেন ঐ উযূ দিয়ে ফজরের নামায আদায় করেছেন। আর যারা আমার পূর্বে তাঁর খেদমতে ছিলেন তারা বলেন চল্লিশ বছর থেকে তাঁর অবস্থা এরূপ।  

    ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله), (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান,, উর্দু, পৃষ্ঠাঃ  ৮২, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৮৫


মিসআর (رحمة الله) বলেন-“আমি তাঁকে দেখলাম যে, ফজরের নামায পড়ে ছাত্রদেরকে শিক্ষাদানের জন্য বসতেন তারপর যোহরের নামায পড়ে পুনরায় আসর পর্যন্ত বসতেন। তারপর আসরের পর মাগরীব পর্যন্ত, মাগরীবের পর এশা পর্যন্ত শিক্ষাদান করতেন।

আমি মনে মনে বললাম-তিনি সারাদিন বিদ্যা শিক্ষায় অতিক্রম করেন কিন্তু ইবাদত কখন করেন? আমি তা অবশ্যই দেখবো। যখন লোকেরা ঘুমিয়ে পড়ল তখন তিনি দুলহার ন্যায় পাক-পবিত্র হয়ে মসজিদে গমণ করেন এবং ইবাদতে ফজর পর্যন্ত মশগুল ছিলেন। তারপর বের হয়ে পোশাক পরিবর্তন করে ফজরের নামায পড়ে যথানিয়মে পাঠদানে ব্যস্ত হয়ে গেলেন এবং এশা পর্যন্ত তা চলতে থাকল। তখন মনে মনে বললাম আজ রাতও আমি তাঁকে পর্যবেক্ষণ করবো। দেখলাম সে রাতেও তিনি যথানিয়মে ইবাদতে মশগুল ছিলেন। তখন আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করলাম যে, আমৃত্যু আমি তাঁর সাহচর্য পরিত্যাগ করবো না।”  

 ➥     ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله), (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান,, উর্দু, পৃষ্ঠাঃ  ৮২, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৮৫


রদ্দুল মোহতার গ্রন্থে আছে,

-وقد صلي الفجر بوضئو العشاء اربعين سنة و حج خمسا و خمسين حجة وراي ربه في المنام مائة مرة ولها قصة مشهورة وفي حجة الاخير استئاذن حجبة الكعبة بالدخول ليلا فقام بين العمودين علي رجلة اليمني ووضع اليسري علي ظهرها حتي ختم نصف القران ثم ركع وسجد ثم قام على رجليه اليسرى ووضع اليمنى على ظهرها حتى ختم القران فلما سلم بكي وناجي ربه وقال الهي ما عبدك هذا العبد الضعيف حق عبادتك لكن عرفتك حق معرفتك فهب نقصان خدمته لكمال معرفته فهتف هاتف من جانب البيت يا ابا حنيفة قد عرفتنا حق المعرفة وخدمتنا فاحسنت الخدمة قد غفرنا لك ولمن اتبعك ممن كان علي مذهبك الي يوم القيامة- 

“ইমাম আবু হানিফা চল্লিশ বছর এশার উযূ দিয়ে ফজরের নামায পড়েছেন এবং ৫৫ বার হজ্জ পালন করেছেন আর স্বপ্নে আল্লাহকে একশতবার দেখেছেন যা খুবই প্রসিদ্ধ। তিনি সর্বশেষ হজ্জের সময় বায়তুল্লায় প্রবেশের অনুমতি নিয়ে রাতের বেলায় প্রবেশ করে দু’ স্তম্ভের মধ্যখানে ডান পায়ে দাঁড়িয়ে বাম পা ডান পায়ের উপর রেখে অর্ধ খতম তথা পনের পারা কুরআন তিলাওয়াত করেন। তারপর রুকু-সিজদা করে উঠে বাম পায়ের উপর দাঁড়িয়ে ডান পা বাম পায়ের উপরে রেখে পূরো কুরআন সমাপ্ত করেন। নামায শেষে অঝোর নয়নে কান্নাকাটি করে বলেন-হে আল্লাহ! আমি তোমার দুর্বল বান্দা, তোমার যথাযথ হক আদায়ে অক্ষম, তবে তোমাকে চেনার মতো চিনেছি। সুতরাং আমার যাবতীয় অক্ষমতা ও খেদমতের ত্রুটি ক্ষমা করে দাও। তখন বায়তুল্লাহর দিক থেকে গায়েবী আওয়াজ আসল যে, হে আবু হানিফা! তুমি আমাকে-চেনার মত চিনেছ এবং উত্তম খেদমত আঞ্জাম দিয়েছ। সুতরাং আমি তোমাকে এবং তোমার অনুসারীদেরকে এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত যারা তোমার মাযহাবের অনুসরণ করবে আমি সকলকে ক্ষমা করে দিলাম।”  

    আল্লামা শামী (رحمة الله) (১৩০৬হিঃ), রদ্দুল মোহতার, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ১২৪ ও ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩ হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, উর্দু, পৃষ্ঠাঃ  ৮৫, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৮৭

Top