ইছবাতুন নুবূওত


মূল : ইমামে রাব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.)


অনুবাদ : ড. আ,ফ,ম আবু বকর সিদ্দীক


 


টেক্সট রেডি: মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী,

জুলহাস উদ্দিন আকাশ,হাবিবী হুমাইরা।




প্রথম প্রকাশ


মাঘ ১৩৯৮ বাং


শাবান ১৪১২ হি.


ফেব্রুয়ারী ১৯৯২ ইং



দ্বিতীয় প্রকাশ


: পৌষ ১৪১৭ বাং


মহররম ১৪৩২ হি.


জানুয়ারী ২০১১ ইং



প্রকাশনায়


: গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগ


খানকাহ-ই-খাস মুজাদ্দিদীয়া


 প্লট # ১২৮, রোড নং # ৭ ব্লক


 # বি, সেকশন # ১২ মিরপুর, ঢাকা।


 ফোন : ৮০৫১৯১৮


 


মুদ্রণে :ঢাকা প্রিন্টার্স


শিরিস দাস লেন, ঢাকা-১১০০


সর্বস্বত্ব : অনুবাদকের


সার্বিক ব্যবস্থাপনায় : আল-আশরাফ কম্পিউটার্স


৪৫,বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০


মূল্য:  ১০০.০০ টাকা মাত্র


ITHBATUN NUBUWAT : Proof of Nubuwat, Written by Shaikh Ahmad Sirhindi (Rh.) Translated by Dr. A.F.M. Abu Bakar Siddique and Published by Khankai Khas Mujaddedia, Plot # 128, Road # 7, Block # B, Section # 12, Mirpur, Dhaka, Bangladesh, Phone : 8051918, January: 2011 Price Tk. 100.00; $3


উৎসর্গ : ইছবাতুন নুবূওত গ্রন্থটি শায়েখ আহমদ সিরহিন্দী (রহ.)-এর রূহের উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত হলো......


 

এই লেখক কর্তৃক অনুদিত ও লিখিত কয়েকটি গ্রন্থ:


মসজিদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব


মুকাশিফাতে আয়নীয়া


মাআ’রিফে লাদুন্নিয়া


মাবদা ওয়া মাআ’দ


বিপ্লবী মুজাদ্দিদ (রহ.)


আত্মশুদ্ধির পথ নির্দেশ


স্মরণকালের মরণজয়ী


দীনে ইলাহী ও মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহ.)


আবু দাউদ শরীফ (১ম খণ্ড)


 


প্রাপ্তিস্থান


আন-নূর পাবলিকেশন্স ৫২,


বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০


গাউছিয়া পাবলিকেশন্স


১১, ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০


 


সূচীপত্র


বিষয়


১। ভূমিকা


২। মুকাদ্দামা


৩। প্রথম অধ্যায় : ইছবাতুন নুবূওত


৪। নুবূওতের আসল অর্থ কি?


৫। দ্বিতীয় অধ্যায় : মু'জিযা সম্পর্কে


৬। দু'টি বক্তব্য : বিছাত ও নুবূওতের হাকীকত সম্পর্কে


৭। বি'ছাত অস্বীকারকারীদের কতিপয় অভিযোগ প্রসংগে


৮। বি’ছাত এবং শরীয়তের হিকমাত


৯। তৃতীয় অধ্যায় : খাতিমুল আম্বিয়া (আ.)-এর নবূওতের প্রমাণ


১০। ইছবাতুন নুবূওতের বিভিন্ন পদ্ধতি


১১। আল-কোরআনের ই’জাযের প্রমাণ


 


ভূমিকা


হযরত ইমামে রাব্বানী মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী (রহ.)-এর দুস্পাপ্য ও মূল্যবান কিতাব, ইছবাতুন নুযূওত' বা নুবূওতের প্রমাণ, বাংলা ভাষায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে বিধায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে লাখো কোটি শোকর আদায় করছি। মুজাদ্দেদীয়া সিলসিলার অযোগ্য খাদিম হিসাবে মনের মধ্যে এরূপ বাসনা সৃষ্টি হয় যে, হযরত মুজাদ্দিদ আলফেছানী (রহ.)-এর লিখিত ও প্রকাশিত বইগুলো বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো ১৯৮৩ইং সনে আমার থিসিসের তথ্য ও তত্ত্ব সংগ্রহের উদ্দেশ্য যখন ভারত ও পাকিস্তান সফর করি, তখন লাহোর ও করাচীতে অনেক মূল্যবান গ্রন্থের সন্ধান পাই। বিশেষতঃ করাচীর ইদারায়ে মুজাদ্দেদীয়া, নাজিমাবাদ থেকে হযরত মুজাদ্দিদ (রাহ.)-এর অন্যান্য গ্রন্থ-মুকাশিফাতে আয়নীয়া, মাআ’রিফে লাদুন্নিয়া, মাবদা ওয়া মাআ’দ ও মাকতুবাত শরীফ সংগ্রহ করি। সে সময়-ইছবাতুন নুবূওয়াহ্ ও রিসালায়ে তাহলীলিয়া গ্রন্থ দুটি ছাপানো না থাকার কারণে সংগ্রহে ব্যর্থ হই। দেশে ফিরে মুকাশিফাতে আয়নীয়া, মা’আরিফে লাদুন্নিয়া ও মাবদা ওয়া মাআ'দের অনুবাদ কাজ সম্পন্ন করি, যা “সিরহিন্দ প্রকাশনী" থেকে প্রকাশিত হয়ে ইতিমধ্যে দিনের আলো দেখতে সক্ষম হয়েছে। ইছবাতুন নুবূওত বইটি পাবার আশায় পরিচিত মহলের মাধ্যমে পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ রাখতে থাকি। অবশেষে, আল্লাহর অফুরন্ত রহমতে মৌলভী নিজামুদ্দীন সাহেবের প্রচেষ্টায়, তারই মাধ্যমে-“ইছবাতুন নুবূয়ত” ও “রিসালায়ে তাহলীলিয়া” গ্রন্থদ্বয় আমার হস্থগত হয়। বিগত রমযানের আগে একাজে হাত দেই এবং আল্লাহর অফুরন্ত রহমতে ৩০শে রমযান, অনুবাদের কাজ শেষ করি । 

আলহামদু লিল্লাহ!


“ইছবাতুন নুযূওত” গ্রন্থখানি আকবরের “দ্বীনে-ইলাহীর” বিরুদ্ধে লেখা, হযরত মুজাদ্দিদ-ই-আলফে-ছানী (রহ.) এর অমর গ্রন্থ। শাহানশাহ আকবর হিজরী ৯৬৩ সাল মুতাবিক ১৫৫৩ খৃষ্টাব্দ থেকে হিজরী-১০১৪ সাল মুতাবিক ১৬০৪ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ৫০ বছরেরও অধিককাল দিল্লীর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অতঃপর হিজরী-১০১৪ সাল থেকে সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল শুরু হয় এবং তিনি দীর্ঘ ২২ বছর ধরে রাজত্ব করেন। 


    বাদশাহ আকবরের প্রথম জীবনের ঘটনাবলী থেকে জানা যায় যে, তিনি ইসলামী-আকীদা ও ইবাদতের বড়োই অনুসারী ছিলেন। তিনি পাক্কা নামাযী ছিলেন এবং ঘরে কি বাইরে সর্বস্থানেই তিনি জামাতের সাথে নামায আদায় করতেন। সফরের সময় একটি খাস তাঁবু নামাযের জন্য তৈরী করা হতো। আর তিনি দ্বীনি-ইলম ও উলামায়ে কিরামকে খুবই তা'যিম করতেন এবং তাঁদের সোহবত পছন্দ করতেন। শায়খ সেলিম চিশতী (রহ.) এর প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করার জন্য তিনি ফতেহপুর সিক্রীতে রাজধানী তৈরি করেন। তিনি মাঝে মাঝে পদব্রজে আজমীর শরীফে হযরত খাজা মঈনউদ্দীন চিশতী (রহ.) এর মাযার শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমন করতেন। জুমার দিন উলামাদের খাস মজলিস বসতো এবং তাতে দ্বীনি-বিষয়ে আলোচনা হতো। বাদশাহ এ মজলিসে যোগদান করতেন এবং আলিমদের খিদমত করতেন। বাদশার নৈকট্য ও দুনিয়া হাসিলের উদ্দেশ্যে সেখানে কিছু উলামায়ে-সু' বা অসৎ আলিমদের সমাগম ঘটে। যাদের পরস্পর মতানৈক্য ও বিবাদ-বিসম্বাদ বাদশাকে পীড়িত ও মর্মাহত করে এবং তিনি আলিম সমাজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। উলামায়ে সু’র জামাতের মধ্যে সবচাইতে মারাত্মক ব্যক্তি ছিলেন-মোল্লা মোবারক নাগুরী এবং তার স্বনামধন্য দুই পুত্র-আবুল ফযল ও ফৈজী। 


  এই শয়তানী চক্রের দোসর “আলিমগণ” শাহানশাহ আকবরের মুজতাহিদ হওয়ার জন্যে একখানি সনদ রচনা করেন, যা ইতিহাসে ‘মাহযার নামা’ রূপে খ্যাত। এ সনদের মর্ম এরূপঃ বাদশাহ আকবরের ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফের বদৌলতে আজ সারা ভারতবর্ষে শান্তি ও ঐক্য বিরাজমান। তিনি যে সমস্ত আলিম, জ্ঞানী-গুণী ও মনীষীদের একত্রিত করেছেন তারা বাস্তবিকই যাবতীয় বিষয়ে পরিপক্ক জ্ঞানের অধিকারী। তারা কোরআন, হাদীস, দর্শন-সর্ব শাস্ত্রেই ইমাম। তারা এ মর্মে একমত যে, বাদশাহ আকবরের মর্যাদা-একজন মুজতাহিদের মর্যাদা অপেক্ষাও উর্দ্ধে.........। 


        ডাকাতের হাতে তরবারী তুলে দিলে যে পরিণাম হয়, স্বেচ্ছাচারী শাসক আকবরের হাতে এ সনদ তুলে দেওয়ার পরিণামও ঠিক তাই হয়েছিল। তিনি তখন ইজতিহাদের মারফত কোরআন ও সুন্নাহর প্রতি জঘন্য অবমাননা প্রদর্শন করতে শুরু করেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) প্রমুখ ইমামদের প্রতি চরম অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করা হতে লাগলো এবং কোরআন ও হাদীসকে অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক বলে আখ্যায়িত করা হলো। আল-কোরআনের ওহীকে ‘বেদুঈন সর্দারের মনগড়া প্রতারণা' বলে অভিহিত করা হলো এবং নবী কারীম (সা.)-এর নুবূওত ও রিসালাতকে 'প্রহসন’ আখ্যা দেওয়া হলো। এভাবে আকবরী ইজতিহাদের মারফত ইসলামী আকায়েদের ভিত্তি মূলে চরম আঘাত হানা হলো। বাদশাহ সাহাবীদের শানে, বিশেষ করে তিন খলীফা : হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা.), হযরত ওমর (রা.) এবং হযরত উসমান (রা.)-এর

খিলাফত সম্পর্কে, খন্দকের ঘটনাবলী, সিফফিনের যুদ্ধ প্রভৃতি ঘটনার উল্লেখকালে এমন কঠোর সমালোচনা করতেন, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। তিনি নামায, রোযা ও নুবূওত সম্পর্কিত বিষয়ের নাম ‘তাকলীদাত’ রাখেন এবং বলেন : ধর্মের বুনিয়াদ 'নকল' বা কোরআন হাদীসের উপর নয়, বরং 'আকল’ বা মুক্ত জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত। যেমন-শরীয়তের কোন মাসআলার বিষয় উল্লেখিত হলে-বাদশাহ্ আকবর বলতেন : ওটা মোল্লাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে জ্ঞান সম্পর্কিত কোন বিষয় হলে তা আমার কাছে জিজ্ঞাসা করো। 


  খৃষ্টান ও অগ্নি উপাসকদের প্রভাবে বাদশাহ ঘন্টাধ্বনি ও অগ্নি-প্রজ্বলন ইত্যাদি শুরু করেন। হিন্দুস্থানের বড়ো বড়ো রাজন্যবর্গের কন্যাদের বিবাহ করায় বাদশাহর উপর তাদের বিশেষ প্রভাব পড়ে। ফলে তিনি হিন্দুয়ানী আচার আচরণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। আকবর প্রবর্তিত দ্বীনের মাঝে এসব ধর্মের আকায়েদ, রুসুমাত ও কার্যাবলী ইত্যাদি স্থান লাভ করে। 


  বাদশাহ আকবর মু'জিযা এবং মিরাজকে হাসির খোরাক ব্যতীত অন্য কিছু মনে করতেন না। তিনি তার সভাসদ ও চাটুকারদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতেন : তোমরা কি বিশ্বাস কর যে, ঘুমের ঘোরে এক ব্যক্তি সাত আসমান ঘুরে এলেন এবং স্বর্গ-নরকও স্বচক্ষে দেখে এলেন? তিনি আল্লাহর সাথে আলাপ করলেন! অথচ তিনি ফিরে এসে দেখলেন-যে বিছানায় তিনি শুয়েছিলেন, সেটা তখনও গরম রয়েছে! গৃহের ছাদ ভেদ করে তিনি গেলেন, অথচ সকালে দেখা গেল, যেমন ছাদ তেমনই আছে!


  ‘নিরক্ষর-মুজতাহিদ বাদশাহ আকবর নতুন ধর্ম প্রবর্তন করে হিন্দু, মুসলিম, জৈন, খৃষ্টান প্রভৃতি ধর্মের মধ্যে ঐক্যের ধুয়া তুলে বহু লীলা-খেলা দেখান। দুনিয়াদার আলিমদের সহায়তায় তিনি ইমাম ও মুজতাহিদ হওয়ার শখ মিটিয়ে নিয়েছিলেন। তারপর তাঁর মনে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের ‘নবী’ হওয়ার সাধ জাগে! কিন্তু ইতিপূর্বে নবূওতের মিথ্যা দাবীদারদের ভাগ্যের কথা চিন্তা করে, তিনি প্রকাশ্যে নুবূওতের ঘোষণা না দিয়ে, তথাকথিত 'ওহী’ মারফত পরোক্ষভাবে এ আশা চরিতার্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। 


 এ ব্যাপারে উলামায়ে সু’রা তাকে এরূপ পরামর্শ দেয় যে, “হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দ্বীনের সময়কাল ছিলো এক হাজার বছর-তা পূর্ণ হয়ে গেছে। কাজেই এখন তাঁর লালিত ইচ্ছা পূরণের পথে আর কোন প্রতিবন্ধকতা নেই”। এ পরামর্শের ভিত্তিতে তিনি তার ভ্রান্ত ধারণাকে চরিতার্থ করার কাজে পূর্ণ উদ্যমে আত্ম নিয়োগ করেন এবং ইসলামী হুকুম-আহকাম বাদ দিয়ে, নিজের খুশীমত তিনি তার “দ্বীনে-ইলাহীর" জন্য নতুন নতুন কানুন জারী করতে থাকেন।


  এ মতবাদকে সুদৃঢ করার লক্ষ্যে তিনি “শাহী সিক্কাতে” “আলফী-সিক্কা” হিসেবে ছাপ লাগাতে নির্দেশ দেন, এবং এর পিছনে তার উদ্দেশ্য ছিল-হাজার বছরের তারিখ প্রমাণ করা। এছাড়া তিনি “তারিখে-আলফী” নামক একখানি পুস্তক রচনা করিয়েছিলেন।


 আকবরের তথাকথিত ওহী প্রাপ্তির ঘটনাটি খুবই চমকপ্রদ। এ সম্পর্কে মোল্লা বাদায়ূনীর বর্ণনাটি প্রণিধান যোগ্য। তিনি বলেছেন : একবার শাহানশাহ আকবর তার বিরাট বাহিনীসহ পাঞ্জাবের নান্দানা থেকে দিল্লী প্রত্যাবর্তন করছিলেন। পথিমধ্যে তার শিকার করার শখ জাগে। তখন তিনি ক্রমাগত চারদিন ধরে শিকার করেন। শিকারকৃত পশু-পাখি স্তুপাকারে তার সামনে জমা। এমন সময় এক বৃক্ষ মূলে তিনি এক আশ্চর্যজনক অবস্থার সম্মুখীন হন। তার মধ্যে চরম 'জযবা' বা উন্মত্ততার ভাব পরিলক্ষিত হয়। এ অবস্থা দেখে তার চেলা-চামুণ্ডারা তৎক্ষণাৎ প্রচার করে দেয় যে, “শাহানশাহ্ আকবর ওহী প্রাপ্ত হয়েছেন। আল্লাহর সাথে তার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে "। 


   বাদশাহর পারিষদবর্গ তাকে ধৃষ্টতার আরো একধাপে উঠিয়ে দেয়। যে বৃক্ষ-মূলে ‘ওহী' পেয়ে তিনি ধন্য হন, আল্লাহর সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ করতে সক্ষম হন, তারা সে গাছটির নাম রাখে “মুকাদ্দাস দরখত বা পবিত্র বৃক্ষ। আর এ পবিত্র বৃক্ষের স্মৃতিকে চির-স্বরণীয় করে রাখার জন্য তার চারপাশে মনোরম পুস্পোদ্যান রচিত হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় গগণচুম্বী বিরাট বিরাট প্রাসাদ, বালাখানী। পবিত্র বৃক্ষের পরিচর্যা ও দেখাশুনা করার জন্য নিয়োজিত হয় শত শত খাদিম, মালী এবং কয়েকদিন পর্যন্ত বিতরণ করা হয় গরীব-দুঃখী, ইয়াতিম ও মিসকিনদের মাঝে রাশি-রাশি আশরফী বা স্বর্ণ মুদ্রা। 


এভাবে লালিত ও কাঙিক্ষত আশা চরিতার্থ করে বাদশাহ আকবর, নিজের মাথার চুল কামিয়ে ন্যাড়া হয়ে “ওহী প্রাপ্তির” শেষ শোকরিয়া আদায় করে দিল্লী ফিরে আসেন এবং জারী শুরু করেন তার “দ্বীনে ইলাহীর" নতুন নতুন ফরমান যার বিশেষ কটি এরূপ :


 ১. ‘দ্বীনে ইলাহীর মূলমন্ত্র ছিল : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবারু খলীফাতুল্লাহ। দুনিয়াদার আলিমরা তাকে বুঝিয়েছিল যে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দ্বীনের মেয়াদ এক হাজার বছর, তা শেষ হয়ে যাওয়ায়-সে দ্বীনের কার্যকারিতা লোপ পেয়ে গেছে। কাজেই নতুন ধর্মের কালিমায় “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর স্থলে “আকবারু খলীফাতুল্লাহ" কথাটি সংযোজিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। শুধু তাই নয়, আকবরের যুগে মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসূল বলে স্বীকার করাটা রাষ্ট্রীয় বিধানে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে নির্ধারিত হলো। পক্ষান্তরে বাদশাহ্ আকবরের “খলীফাতুল্লাহ” বা “আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে স্বীকার করা প্রজা সাধারণের জন্য রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় কর্তব্য বলে সাব্যস্ত হলো।


 ২. 'দ্বীনে-ইলাহী’ গ্রহণ করতে হলে সকলকে স্বীয় ধর্মমত পরিত্যাগ করতে হতো। যারা এ দ্বীন গ্রহণ করতো, তাদের ‘চেলা’ বলা হতো। শাহানশাহ্ তার চেলাদের প্রত্যেককে নিজের ক্ষুদ্র একখানি ফটো দিতেন, যা তারা সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে তাদের পাগড়ীর সাথে লাগিয়ে রাখতো। 


  ২. ‘দ্বীনে-ইলাহী' গ্রহণের সময় চেলারা যে “আহাদ-নামা” বা অংগীকার পত্র দিত, তা এরূপ : আমি অমুকের পুত্র অমুক এ যাবত বাপ-দাদার অনুসরণ করে যে 'দ্বীন-ইসলাম' মেনে আসছিলাম, তা থেকে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে বিচ্ছিন্ন হয়ে সম্রাট আকবরের ‘দ্বীনে-ইলাহীতে' দাখিল হচ্ছি এবং এ ধর্মের খাতিরে জান, মাল, ইজ্জত ও পূর্ব ধর্মকে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত আছি। 


  ৩. ইসলামী আকায়েদের অন্যতম প্রধান অংগ-আখিরাত বা পরকালে বিশ্বাস। 'দ্বীনে-ইলাহী' এ বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করে, তার পরিবর্তে ব্রাহ্মণ্য ও চানক্য-সমাজের পুনর্জন্মবাদ বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত করে। বাদশাহ নিজেও এরূপ বিশ্বাস পোষণ করতেন যে, মৃত্যুর পরও তিনি অন্য কোন স্বর্ণ সিংহাসনের অধিকারী হয়ে অনুরূপ প্রতিপত্তির সাথে পুনরায় আবির্ভূত হবেন। 


  ৪. আল-কোরআনের ভাষা আরবী করাকে অমার্জনীয় অপরাধ এবং কোরআন ও হাদীসের শিক্ষার্থীগণকে 'মরদুদ' বলে আখ্যায়িত করা হয়। এজন্য মাদ্রাসা-মসজিদ ধ্বংস করা হয় এবং হক্কানী আলিমদেরকে নির্বাসিত করা হয়। 


 ৫. হিন্দুদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে মাহে-রমযানের প্রতি করা হয় মর্মন্তুদ অবমাননা পক্ষান্তরে, হিন্দুদের একাদশীর সম্মানের খাতিরে মুসলিমদেরকে তাদের দৈনন্দিন পানাহার ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। কোন মুসলমান এজন্য প্রতিবাদ করলে, তাকে প্রাণদণ্ডেও দণ্ডিত করা হতো। 

 

৬. চানক্য পণ্ডিত মশায়দের প্ররোচনায় আকবর দ্বীন-ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে-নামায, রোযা ইত্যাদির প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলার জন্য, দরবারের পণ্ডিতদের দ্বারা এসব বিষয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপাত্মক রচনা লিখিয়ে তা সাধারণ্যে প্রচার করতেন। 


  উপরে আলোচিত ‘দ্বীনে-ইলাহীর' কয়েকটি বৈশিষ্ট্যে দেখা যায় যে, শাহানশাহ্ আকবর তার রাজত্বকালের দীর্ঘায়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য এবং হিন্দুদের মনোস্তুষ্টির খাতিরে ইসলাম ও মুসলমানদের উপর জঘন্য হামলা করেন। এর ফলে, হিন্দুরা তাকে “দিল্লীশ্বরো বা জগদীশ্বরো” উপাধিতে ভূষিত করে। হিন্দুরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির ব্যাপারে এতো বেশী সুযোগ-সুবিধা লাভ করে, যা অকল্পনীয়। পক্ষান্তরে, ইসলাম তথা মুসলমানদের ধর্মীয় সুযোগ সুবিধা একেবারেই খর্ব করা হয়। যেমন হযরত মুজাদ্দিদ-ই আলফে ছানী (রহ.) তাঁর মাকতুবাত শরীফের দ্বিতীয় দফতরের ৯২নং মাকতুবে বলেছেন :


হিন্দুস্থানের মুশরিকরা অবাধে ও নির্ভীকচিত্তে মসজিদসমূহ বিনাশ করে, তদস্থলে মন্দির নির্মাণ করেছে। আক্ষেপের বিষয় যে, কাফিররা প্রকাশ্যে, মহাসমারোহের সাথে তাদের কুফরী কাজের অনুষ্ঠান করে, অথচ অধিকাংশ মুসলমান ইসলাম হুকুম আহকাম পালনে অক্ষম এবং তাদের উপর নানা রকম বাধা নিষেধের খরগ। 


  বাদশাহ আকবর এরূপ প্রচার করেন যে, ওহী বা প্রত্যাদেশ বলে কিছুই নেই। কোন বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি এটা বিশ্বাস করতে পারে না। এ হলো বেদুঈন সর্দারের মনগড়া কথা। 


  প্ৰসংগত উল্লেখ্য যে, তথাকথিত নামধারী-আলিম এবং তাদের প্রভাবে প্রভাবান্বিত দুনিয়া লোভী-

রাজা-বাদশাহরা যুগে-যুগে ইসলামের সমূহ ক্ষতি করেছে এবং আজো করছে আর এদের স্বার্থের কবল থেকে দ্বীন-ইসলামকে রক্ষার জন্য আল্লাহ তা'আলা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অসংখ্য মুজাদ্দিদে-দ্বীন দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। বাদশাহ আকবরের রাজত্বকালে তথাকথিত আলিমদের কারসাজিতে, বাদশাহ কর্তৃক 'দ্বীনে-ইলাহী' নামে এক ইসলাম বিরোধী নতুন ধর্মের জন্ম হয়; যার ফলে এ উপমহাদেশ থেকে ইসলাম চিরতরে নির্মূল হওয়ার উপক্রম হয়। এ দুঃসময়ে ইসলাম রক্ষা কল্পে, শায়েখ আহমদ সিরহিন্দী (রহ.) আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক দ্বিতীয় হাজার বছরের মুজাদ্দিদরুপে প্রেরিত হন এবং তিনি তাঁর বিপ্লবী সংস্কারের দ্বারা সারা হিন্দুস্থানে দ্বীন-ইসলামকে রক্ষা ও প্রতিষ্ঠা করেন, যে সংস্কারের ধারা অদ্যাবধি চলছে। 


  হযরত মুজাদ্দিদ (রহ.) রচিত মাকতুবাত শরীফ পাঠ করলে দেখা যায় যে, তিনি তাতে হিন্দুস্থানে ইসলামের এ দুর্দিনের কথা বার বার আলোচনা করেছেন। মাকতুবাত শরীফের উক্ত আলোচনা থেকে এটাই স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, সমসাময়িক বাদশাহ, শাসন ব্যবস্থা ও “উলামায়ে ‘সুর" কার্যকলাপ ইসলামের জন্য ব্যাপক ফিতনা স্বরূপ ছিল। বাদশাহ আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত দ্বীনে-ইলাহী ছিল তথাকথিত “উলামায়ে সুর” কার্যকলাপের জের এবং এ ধর্ম-মতকে এজন্য প্রতিষ্ঠিত করা হয়, যাতে হিন্দুস্থানের বুক থেকে চিরতরে দ্বীন-ইসলাম মিটে যায়। 


 সংগত কারণে আরো উল্লেখ্য যে, আকবরী শাসনামলের কাহিনী লেখক বহু রয়েছেন এবং অবস্থার আবর্তনে কাহিনী ও ঘটনার বিভিন্নতাও পরিলক্ষিত হয়। কেননা, বিশ্বাস ও দলগত স্বার্থ অনেক ক্ষেত্রে লেখায় বাস্তব ও অবাস্তব উভয়বিধ প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু হযরত মুজাদ্দিদ (রহ.) এর মাকতুবাত শরীফের বর্ণনামতে একথা সুস্পষ্ট যে, আকবরী শাসনামলে ও জাহাঙ্গীরের রাজত্বের প্রথম দিকে হিন্দুস্থানে ইসলামের ঘোর দুর্দিন বিদ্যমান ছিল। এমনকি হিন্দুস্থান থেকে ইসলামকে মুছে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হযরত মুজাদ্দিদ (রহ.) এর বর্ণনার সমর্থনে তৎকালীন ঐতিহাসিক মোল্লা আব্দুল কাদির বদায়ুনী রচিত সমকালীন ইতিহাস গ্রন্থ ‘মুনতাখাবুত তাওয়ারীখ’ বিশেষ নির্ভরযোগ্য ও প্রামাণ্য গ্রন্থরূপে বিবেচিত হয়। যদিও কোন কোন স্বার্থান্বেষী লেখক কল্পনা-প্রসূত ধারণার বশবর্তী হয়ে ঐতিহাসিক মোল্লা বদায়ুনীর সমালোচনা পূর্বক তাঁর লিখিত ইতিহাসকে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত বলার চেষ্ট করে থাকেন। এক্ষেত্রে সংগত কারণে বলা যেতে পারে যে, মোল্লা বদায়ুনী লিখিত গ্রন্থের অসারতা প্রমাণের জন্য তৎকালীন সময়ে লিখিত আর একখানি প্রামাণ্য গ্রন্থ পেশ করা দরকার। অন্যথায় কল্পনার বশবর্তী হয়ে অহেতুক কিছু বলা জ্ঞানী বুদ্ধিমান লোকের কাজ নয়। 


 অতএব, বাস্তবতার দৃষ্টিতে বলা যায় যে, যখন হযরত মুজাদ্দিদ (রহ.) এর মাকতুবাত শরীফ ও ইছবাতুন নুবূওতে পরিবেশিত তথ্যের সাথে মোল্লা বদায়ুনীর তথ্যের মিল রয়েছে, তখন মোল্লা সাহেবের তথ্য ও বিবরণ নির্দ্বিধায় অকাট্য সত্যরূপে গ্রহণ করা যায়। 


 শাহানশাহ আকবরের তথাকথিত “ওহী-প্রাপ্তি” এবং সে মতে নতুন দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরোক্ষভাবে নুবূওতের মিথ্যা দাবীর অসারতা প্রমাণের জন্য হযরত মুজাদ্দিদ-ই আলফে ছানী (রহ.) সে সময়েই রিসালাখানি রচনা করেন; তন্মধ্যে সত্য নবীগণের নুবূওত প্রমাণের লক্ষ্যে অকাট্য দলিল, উপমা, উদাহরণ পেশ ও তাত্ত্বিক আলোচনা দার্শনিক দৃষ্টি ভংগীতে জোরদারভাবে করেছেন। তথাকথিত দার্শনিক ও মুক্তবুদ্ধির দাবীদারদের সমালোচনা তিনি কঠোরভাবে করেছেন এবং সত্য জ্ঞান যে একমাত্র কোরআন ও হাদীসের জ্ঞান-অকাট্য দলিল ও যুক্তি দিয়ে তা পেশ করেছেন। বর্তমান বিশ্বের ফিতনাময় পরিবেশে “ইছবাতুন নুবূওত” গ্রন্থখানি সঠিক আলোর দিশা দিতে সক্ষম। বাংলা ভাষা-ভাষী পাঠকদের জন্য গ্রন্থখানি কোন উপকারে আসলে আমার চেষ্টা ও শ্রম সার্থক হবে বলে মনে করি। 


  পরিশেষে, রাব্বুল আলামীনের দরবারে আরয, তুমি এ নালায়েক ও গুনাহগারের চেষ্টা কবুল কর এবং তোমার দ্বীনের স্বার্থে এ গ্রন্থখানি গ্রহণ কর, আর আমাদের সকলের জন্য নাজাতের ব্যবস্থা কর, আমীন! ছুম্মা আমীন!!


              ---ড. আ.ফ.ম আবু বকর সিদ্দীক


 


মুকাদ্দামা


আল্লাহ তাআলার দরবারে এজন্য লাখো-কোটি শোকর যে, এই প্রথম বারের মত হযরত ইমামে রাব্বানী-

মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী (রহ.) এর দুস্প্রাপ্য কিতাব ইছবাতুন নুবূওত প্রকাশ করার সৌভাগ্য লাভ হলো। বাদশাহ আকবর হিজরী ৯৯৪ সন থেকে ১০০৭ সন পর্যন্ত লাহোরে অবস্থান করেন এবং ইতিপূর্বে তিনি আগ্রায় বসবাস করতেন। হযরত মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী (রহ.) (হিজরী-৯৭১-১০৩৪) ২০-২২ বছর বয়সে আগ্রায় তাশরীফ নিয়ে যান। তখন ফৈযী সেখানে তার বিখ্যাত নুকতা বিহীন তাফসীর 'সাত্তাতিউল ইলহাম’ গ্রন্থ রচনায় রত ছিলেন। কথিত আছে যে, হযরত মুজাদ্দিদে আলফেছানী (রহ.) এ তাফসীর রচনায় একটি নুকতা বিহীন বাক্য রচনা করে দেন।(যুবদাতুল মাকামা, মাওলানা হাশিম কাশমী, প্রকাশিত লাখনৌ   ১৩০৭ হিঃ পৃষ্ঠা ১৩২।) সম্পাদনার পর উক্ত তাফসীরটি হিজরী ১০০২ সনে প্রকাশিত হয়।(মুন্তাখাবুত তাওয়ারীখ, মোল্লা আব্দুল কাদির বাদায়ূনী, লাখনৌ ১৮৮৯ খ্রীষ্টাব্দ। পৃষ্ঠা-৩৮৯)


 বাদায়ুনী বলেন : আবুল ফযল, ফৈযী এবং তাদের পিতা মোল্লা মোবারক নাগুরীর কারণে, হিজরী-৯৮৭ সন থেকে দ্বীনের মধ্যে এবং বিশেষভাবে নুবূওতের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়।(প্রাগুক্ত, ৩২৫ পৃঃ।) তাছাড়া ধর্মহীন লেখকেরা তাদের গ্রন্থের মধ্যে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি সম্মান সূচক সম্বোধনকে পরিহার করে। এ সময়ে একবার আবুল ফযল হযরত মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী (রহ.) এর সম্মুখে হযরত ইমাম গাযযালী (রহ.)-কে অজ্ঞ, অনভিজ্ঞ হিসাবে আখ্যায়িত করেন, যার ফলে তিনি তার প্রতি খুবই ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট হন এবং তার সাথে দেখা সাক্ষাতের সিলসিলা বন্ধ করে দেন। হিজরী ৯৯০ সন থেকে হকপন্থী আলিমদের উপর নির্বিচারে অত্যাচারের ষ্টিম রোলার চালানো শুরু হয় অনেককে কতল করা হয় এবং প্রাণভয়ে অনেকে দেশ ত্যাগ করেন।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩২৯, ৩৪১ ও ৩৬১)।


 হিন্দুস্থানের মুসলিম মিল্লাতের উপর আপতিত এ ফিতনার উল্লেখ “ইছবাতুন নুবূওত” গ্রন্থে আছে। এজন্য ধারণা করা হচ্ছে যে, গ্রন্থটি হিজরী ৯৯০ সনের কাছাকাছি সময়ে লিখিত হয়।(যুবদাতুল মাকামা, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৩১)। এখন সে ফিতনা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হচ্ছে,যাতে হযরত মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী (রহ.) এর বিপ্লবী খিদমাত ও সংস্কারের সঠিক মূল্যায়ন করা যেতে পারে। 


মোল্লা আব্দুল কাদির বাদায়ুনী, তাঁর বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থে হিজরী-১০০৪ সন পর্যন্ত সময়কার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন। তার বর্ণনায় জানা যায় যে, প্রাথমিক জীবনে বাদশাহ আকবর সত্যান্বেষী ছিলেন, কিন্তু পরবর্তীকালে উলামায়ে সু বা অসৎ আ’লিম এবং গোমরাহ সুফীদের প্ররোচনায় পড়ে দ্বীন ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।(মুন্তাখাবুত তাওয়ারীখ, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩১৮।)


 গুজরাটের শাসনকর্তা ইবরাহীম বাদশাহ আকবরের দরবারে যে উপঢৌকন পাঠান, তন্মধ্যে 'ইবনুল-

আরাবীর' সাথে সম্পর্কিত এ ধরনের একটি জাল হাদীস বর্ণিত ছিল : 'সাহেবে-যামান'(“অর্থাৎ শাহানশাহ্ আকবর। ) বা বর্তমান সময়ে শাসনকর্তার কাছে অনেক মহিলা থাকবে এবং তার মুখে দাঁড়ি থাকবে না।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৩৪।)


 খাজা সিরাজী নামক জনৈক ব্যক্তি মক্কা মুআয্যামা থেকে “মাহদীর-প্রকাশ" নামীয় একটি ক্ষুদ্র পুস্তিকা আনে যা আসলে জাল ছিল।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৩৪।) শরীফ আমলী নামক জনৈক শিয়া আলিম এ ধরনের একটি অভিমত প্রকাশ করে যে, 'সত্য-দ্বীন’ অর্থাৎ দ্বীন-ইসলাম কায়েম থাকার জন্য নির্ধারিত সময় হলো ৯৯০ হিজরী পর্যন্ত। অতঃপর অন্য দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে।(প্রাগুক্ত)।


  আবুল ফযল ও ফৈযীর পিতা মোল্লা মোবারক নাগুরী এর আগেই এ ধরনের একটি “মাযহার-নামা” বা সনদ পত্র তৈরী করে, যাতে সে আকবরকে মুজতাহিদ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং ফৈজী তার জন্য জুম’আর দিনের-খুতবাহ ফার্সী কবিতায় লিখে দেয় এবং আকবরকে 'খলীফায়ে যামান' বা যামানার খলীফা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়।(মুনতাখাবুত তাওয়ারী, পৃঃ ৩২৫।) নামায, রোযা এবং ইসলামের অন্যান্য অনুশাসনকে ‘তাকলীদাত' বা জ্ঞান-বহির্ভূত কাজ হিসেবে আখ্যা দেয়।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৯৭)। জ্ঞানের বাহাদুরী পরিদর্শন করে আবুল ফযলের তত্ত্বাবধানে বাদশার মহলের মাঝে একটি আতশ-খানা বা শিখা-অনির্বাণ তৈরী করা হয়, আকবর যার পূজা করতেন।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩২১।)


  আকবরের মহলে নাসারাদের অনুসরণ ও অনুকরণে ঘন্টা ধ্বনি করা হতো। ত্রিত্ববাদের মূর্তি স্থাপন করা হয় এবং নাসারাদের ধরনে আকবর ওজীফা করতেন।

(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৪৩) হিন্দু রাজা, মহারাজাদের কন্যা বিবাহ করার কারণে বাদশার মন মেজায ও আমল আকীদা তাদের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৪২) হিন্দু রাণীদের প্রভাবের কারণে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহাদেব, কৃষ্ণ, মহামায়া ও অন্যান্য দেবতাদের তা'যীম করা হতো।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩১৯)।


 বাদশাহ আকবর দিনের মধ্যে চার বার সূর্যের উপাসনা করতেন। সূর্যের নামে হাজার দানার মালায় আকবর জপ করতেন। তিনি পৈতা ব্যবহার করতেন। আগুন, পানি, গাছ-বৃক্ষ এবং অন্যান্য সৃষ্ট পদার্থ-এমনকি গাভী এবং গোবরের পূজাও বাদশাহ আকবর করতেন।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৫৩)।


 আল্লাহ পানাহ! তিনি শুকরকে আল্লাহ তাআলার প্রকাশের স্থান বলে মনে করতেন।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৪৩) আকবর গরুর গোশত খাওয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন এবং শুকর খাওয়া বৈধ করেছিলেন।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৪২)। 


তিনি সুদ, শরাব ও জুয়াকে বৈধ ঘোষণা করেছিলেন।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৪০)। আকবর একটি সরকারী শরাব খানা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যার পরিচালনার দায়িত্ব ছিল জনৈক শরাবীর যুবতী কন্যার উপর।(মুনতাখাবুত তাওয়ারীখ, পৃঃ ৩৪২)। আকবর দাঁড়ি মুণ্ডন প্রথা চালু করেন(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৪২) এবং তার দরবারের উযীর, নাজীর ও অমাত্যবর্গ তার অনুসরণে নিজেদের দাঁড়ি মুণ্ডন করতো।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৮২)।  তার সময়ে নাপাকীর কারণে গোসল করাকে বেহুদা মনে করা হতো।(প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৪৩)।


  আকবর ষোল বছর বয়সের আগে ছেলেদের এবং চৌদ্দ বছর বয়সের আগে মেয়েদের বিবাহ শাদী দেয়াকে অবৈধ ঘোষণা করেন।(প্রাগুক্ত পৃঃ ৩৪৪)।  পর্দা প্রথা রহিত করে, যুবতী নারীদের মুখ খোলা অবস্থায় রাস্তায় চলার নির্দেশ দেন এবং সরকারী তত্ত্বাবধানে বেশ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।(প্রাগুক্ত ৩৪১)।  আকবর ছেলেদের খাতনার বয়স বার বছর নির্ধারণ করেন, উদ্দেশ্য বয়স বৃদ্ধির কারণে ছেলেরা যাতে আর খাতনা করতে না চায়।(প্রাগুক্ত ৩৮০)। আকবর মৃত ব্যক্তিদেরকে পানিতে নিক্ষেপ করতে, জ্বালিয়ে দিতে, কিম্বা গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখতে নির্দেশ প্রদান করেন।(প্রাগুক্ত ৩৮৮)। আর তিনি নিজে পশ্চিম দিকে পা দিয়ে শয়ন করতেন এবং মুর্দাকে কবরে রাখার সময় তার পদদ্বয় কিবলামুখী করে রাখতে নির্দেশ দিতেন।(প্রাগুক্ত ৩৭০)। 


আকবর অন্য লোকদেরকে তাকে সিজদা করার জন্য বাধ্য করতেন।(প্রাগুক্ত ৩২০)। এবং তিনি ইসলামী বিধানের বিরোধিতা করে, কুকুর ও শুকর যে নাপাক এ বিধান বাতিল ঘোষণা করেন এবং শাহী মহলের নীচে এ দুটি জন্তুকে যিয়ারতের জন্য রাখা হয়েছিল এবং বলা হতো : এদের দর্শন করাও ইবাদত।”(প্রাগুক্ত ৩৪৩)। যদি কোন কশাই কারো সাথে খানা খেত, তবে তার হাট কেটে দেওয়া হতো; আর যদি তার বিবি তার সাথে খানা খেত তবে তার হাতের আংগুল কেটে দেওয়া হতো।(প্রাগুক্ত ৩৮০)।


  শাহানশাহ আকবর হিন্দু মুনি ঋষিদের প্রভাবের কারণে জন্মান্তরবাদে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন,(প্রাগুক্ত ৩৪০) তিনি আরবী পড়াকে দোষের বিষয় বলে মনে করতেন।(প্রাগুক্ত ৩৪৪)। আকবর রেশমী কাপড় পরিধান করাকে বৈধ মনে করতেন এবং তার পারিষদ বর্গের জন্য এরূপ বস্ত্র পরিধান করতে বাধ্য করতেন।(মুন্তাখাবুত তাওয়ারীখ, প্রাগুক্ত ৩৪৪)।  আবুল ফযলের সামনে আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীনের কথা যদি পেশ করা হতো, তখন সে ব্যংগ করে বলতো তোমার আমার সামনে অমুক মিষ্টান্ন বিক্রেতা, অমুক কাপড় বয়নকারী এবং অমুক চর্মকারের কথা পেশ করছো? আশ্চর্য!(প্রাগুক্ত ২৯২) সাহাবায়ে কিরাম (রা.), ফিদাক, সিফফিনের যুদ্ধ সংক্রান্ত ব্যাপারে কোন কিছু আলোচিত হলে, আবুল ফযল এ সম্পর্কে এমন জঘন্য উক্তি করতো যা কানও শুনতে ঘৃণা বোধ করে।(প্রাগুক্ত ৩৪৫)।


  আকবরের সময় এরূপ বলা হয় যে, কোরআন-সৃষ্ট; ওহী অসম্ভব ব্যাপার; আর মি'রাজ ও চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ব্যাপারকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা হতো।(প্রাগুক্ত ৩৪৯)।


  হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি বিদ্বেষ বশতঃ আহমদ মুহাম্মদ মুস্তফা এ জাতীয় নামকে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।(প্রাগুক্ত ৩৪৮)। হিন্দুরা তো হিন্দুই ছিল; আক্ষেপ! হিন্দু মেজাযের মুসলমানরাও হুজুর (সা.) এর নুবূওতের অস্বীকারকারী হয়ে যায়। অপরপক্ষে অভিশপ্ত নাসারারা হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দাজ্জাল হিসেবে আখ্যায়িত করতে থাকে (নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক)।(প্রাগুক্ত ৩২১)। এসব সত্ত্বেও আকবরের সামান্যতম কুঞ্চিত হয়নি। সম্ভবতঃ ইসলামের ইতিহাসে দ্বীন ইসলামের দুর্দশার একটি করুণতম নজির হলো আকবরের শাসনামলের এ সময়টি। 


 উপরন্তু আবুল ফযলের জনৈক ভাই যে তার শাগরিদও ছিল, ইসলামী ইবাদতের খেলাফ একটি বই লিখে খুবই পরিচিত হয়ে ওঠে এবং এ দিয়ে সে অনেক টাকা পয়সা কামিয়ে নেয়।(প্রাগুক্ত ৩৪৪)। ফৈযী এমনই অহংকারী ছিল যে, সে কথায় কথায় সাহাবায়ে-কিরাম, সলফে-সালেহীন এবং দ্বীন-ইসলামকে ঘৃণা করে কথা বলতো। ফৈযী মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় এবং স্ত্রী সহবাসের পর নাপাক অবস্থায় থেকে তার লিখিত তাফসীর 'সাত্তাতিউল-ইলহাম' রচনা করতো।

(মুনতাখাবুত তাওয়ারীখ, প্রাগুক্ত পৃঃ ৫১৫)। 

 সে ঝগড়ার সময় কুকুরের মত চিৎকার দিত।(প্রাগুক্ত)।  


উপরোক্ত খাবাসাতের(অশ্লীল, অপকর্মের ফলে) কারণে পাঁচ ছয় বছরের মধ্যে হিন্দুস্থানের বুক থেকে ইসলামের নাম-নিশানা মিটে যায়। সমস্ত মসজিদ হিন্দুদের ফরাশখানা ও চৌকীখানায় রূপান্তরিত হয়।(প্রাগুক্ত ৩১৯)। 


 গোটা হিন্দুস্থানের অবস্থা যখন এরূপ, তখন হযরত মুজাদ্দিদ-ই আলফেছানী (রহ.) খান-খানান, সদরে-জাহান, খানে-আ'জম, খানে জাহান, মহব্বত খান, তরবিয়ত খান, ইসলাম খান, দরিয়া খান, সিকান্দর খান, মুরতজা খান প্রমুখ বিশিষ্ট আমীর-উমরাদেরকে স্বীয় হালকাভুক্ত করতে সক্ষম হন এবং তিনি তাঁদের দ্বারা, পরবর্তী বাদশাহ জাহাঙ্গীরের মন-মানসিকতা দ্বীন-ইসলামমুখী করার জন্য সচেষ্ট হন। যার ফলশ্রুতিতে, বাদশাহ জাহাঙ্গীর তার শিষ্যে পরিণত হন এবং শাহজাদা খুররম বা শাহজাহানকে তার হাতে বয়আত করান। এর ফলে, আকবরের সময় তার দরবারে প্রচলিত সিজদায়ে-তা'যিমী, বা সম্মানসূচক সিজদা রহিত করা হয়। গরু যবেহ আবার চালু হয়, যে সব মসজিদ ভেঙ্গে-গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি আবার তৈরী করা হয়। জাহাঙ্গীরের সময় যে চিত্র-শিল্প উন্নতি লাভ করেছিল, তা পরিত্যক্ত হয় এবং লোকেরা নির্মাণ ও স্থাপত্য শিল্পের দিকে ঝুঁকে পড়ে। শাহজাহান ছাড়া আওরঙ্গজেবও হযরত মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী (রহ.) এর খান্দানের তারবীয়তের দ্বারা উপকৃত হয়েছিলেন। আর তারই সময়ে ফিকাহ শাস্ত্রের সব চাইতে বড় কিতাব 'ফতোয়ায়ে আলমগীরি’ রচিত হয়। শাহী দরবারে আলিম উলামাদের সম্মান ও কদর বেড়ে যায়।(প্রাগুক্ত ৩৫৩)।  


 পরবর্তী কালে হযরত মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী (রহ.) এর শাগরেদদের সিলসিলার মধ্যে শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহ.), হযরত মাযহার জানে-জান (রহ.), শাহ গোলাম আলী (রহ.), কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহ.), মাওলানা খালেদ রুমী (রহ.), ‘ফতোয়ায়ে-শামী’ গ্রন্থের রচয়িতা-শাহ আব্দুল গণি মুজাদ্দিদী (রহ.)-এর মত ব্যক্তি পয়দা হন। মাওলানা রশীদ আহমদ গাংগুহী, মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবী এবং মাওলানা রশীদ আহমদ মাযহার সাহারানপুরী (রহ.) শাহ আব্দুল গনী (রহ.) এর শাগরেদ ছিলেন। এসব যিন্দাদিল উলামা ও মাশায়েখগণ দ্বীনের এমনই খিদমত করেন যে, তার ফল বহু সুদূর প্রসারী হয়। এমনকি আজকের হিন্দুস্থান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ইসলামের তাহযীব-তামাদ্দুন ও কষ্টি-কালচারের যে চর্চা পরিলক্ষিত হয়, তা অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে গৌরবের বিষয়। আর এর মূল কারণ হলো মুজাদ্দিদে-ই-আলফে ছানী (রহ.) এবং তার খান্দান ও সিলসিলার মাশায়েখদের আত্ম-নিবেদিত দ্বীনের খেদমত। 


 বস্ততঃ বলা যায় যে, হিজরী ১০০১ থেকে আজ পর্যন্ত দ্বীনের ব্যাপারে যে সমস্ত প্রশ্নাদি উথিত হয়েছে এবং আগামী এক হাজার বছর যে সমস্ত প্রশ্ন উঠবে (যদি পৃথিবী-ততদিন স্থিতিশীল থাকে), এসবের ফয়সালা হযরত মুজাদ্দিদ-ই আলফে ছানী (রহ.)-এর রচিত অমর গ্রন্থ ‘মাকতুবাত শরীফের' মধ্যে স্পষ্টতঃ বা অস্পষ্টতঃ বিদ্যমান আছে। বলুন তো-তার এই বিরাট ও বিশাল খিদমাত, তাঁর দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মুজাদ্দিদ হওয়ার জন্য কি যথেষ্ট নয়? এর চাইতে বড় দলীল আর কি হতে পারে?

       

 উপরে আলোচনা করা হয়েছে যে, হযরত মুজাদ্দিদ-ই-আলফে ছানী (রহ.)  “ইছবাতুন নুবূওয়াহ্' গ্রন্থটি আগ্রায় থাকাকালীন সময়ে রচনা করেন। এই পাণ্ডুলিপিটি খুবই দুস্প্রাপ্য। মৌলবী জামিলুদ্দীন আহমদ(নকশবন্দী ও মুজাদ্দিদী হওয়া ছাড়াও, শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহঃ) মাওলানা তাহির মক্কী  ও হযরত মুজাদ্দিদ (রহঃ) থেকে হাদীসের সনদ হাসিল করেন। দেখুন 'কাওলুল-জামিল' গ্রন্থটি) খানকায়ে সিরাজিয়া, কুন্দিয়ান, মিয়া-নত্তালী; ৩রা মুহাররাম, ১২৪২ হিজরীর পাণ্ডুলিপি থেকে এটি কপি করে নেন। খানকায়ে মাযহারীয়া, দিল্লী থেকে মাওলানা যায়েদ আবুল হাসান ফারুকী মুজাদ্দেদী, হিজরী ১২৬৯ সনে নকলকৃত পাণ্ডুলিপি থেকে এটি কপি করে নেন। অবশেষে, হাজী মুহাম্মদ আলা, ডক্টর গোলাম মুহাম্মদ সাহেবের মধ্যস্থতায়, মাওলানা হাশিম জান সাহেব থেকে, খান মুহাম্মদ তালপুর লিখিত একটি কপি সংগ্রহ করেন। প্রাপ্ত এ তিনটি দুস্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপির ভিত্তিতে, বর্তমান সংস্করণটি যোগ্য আ’লিমদের সহযোগীতায় প্রকাশ পেল। আল্লাহ পাক সকলকে এর যোগ্য বিনিময় প্রদান করুন। আমীন!!


        ওয়াস সালাম! আহকার-গোলাম মোস্তফা খান।


              এম, এ; এল, এল, বি, পি-এইচ-ডি; ডি-লিট,


 প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, উর্দু সিন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দরাবাদ।


              ১৭ই রমযান, হিজরী ১৩৮৩ সন। 

Top