❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (১৮৫৮)]
○ অধ্যায়ঃ [ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻮﻡ : রোযা পর্ব] (টীকাঃ ১)
[ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺍﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﺘﺤﺖ ﺍﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺴﻤﺂﺀ ﻭﻓﻰ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻓﺘﺤﺖ ﺍﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻏﻠﻘﺖ ﺍﺑﻮﺍﺏ ﺟﻬﻨﻢ ﻭﺳﻠﺴﻠﺖ ﺍﻟﺸﻴﺎﻃﻴﻦ ﻭﻓﻰ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻓﺘﺤﺖ ﺍﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ . ] : ( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )
হযরত আবূ হুরাইরা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ্ [ﷺ] এরশাদ ফরমায়েছেনঃ "যখন রমযান মাস আসে, (টীকাঃ ২) তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়।" অন্য এক বর্ণনায় আছে- "জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। (টীকাঃ ৩) আর দোযখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শিকলাবদ্ধ করা হয়। (টীকাঃ ৪) অপর এক বর্ণনায় এসেছে- রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়।"
[বোখারী ও মুসলিম]
□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ
___________________________________
◇ টীকাঃ ১. ﺻﻮﻡ (সাওমুন) -এর আভিধানিক অর্থ 'বিরত থাকা'। ক্বোরআন করীমে আল্লাহ্ তা'আলা (হযরত মরিয়মের উক্তি) উল্লেখ করেছেন-
[ﺇِﻧِّﻲ ﻧَﺬَﺭْﺕُ ﻟِﻠﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺻَﻮْﻣًﺎ]
(অর্থাৎ আমি পরম করুণাময়ের জন্য কথা বলা থেকে বিরত থাকার মান্নাত করেছি। ১৯:২৬)
শরীয়তের পরিভাষায় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইবাদতের নিয়্যতে স্ত্রী সঙ্গম এবং কোন জিনিস পেট কিংবা মাথার মগজে প্রবেশ করা থেকে রিরত থাকাকে 'সাওম' বা রোযা বলা হয়। রোযার উদ্দেশ্য হচ্ছে- 'নাফ্স' (কু-প্রবৃত্তি)'র দাপট গুঁড়িয়ে দেওয়া, অন্তরে পরিচ্ছন্নতা সৃষ্টি করা, গরীব মিসকীনদের মতো হওয়া এবং মিসকীনদের প্রতি নিজের হৃদয়কে নম্র করা। 'মিরক্বাত'-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ইউসূফ [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ] দুর্ভিক্ষের সময় পেট পুরে আহার করতেন না, যাতে ক্ষুধার্ত ও অনাহারক্লিষ্টদের প্রতি কর্তব্য ভুলে না যান। 'লুম'আত', 'মিরক্বাত' ও 'দুররে মুখ্তার' ইত্যাদির মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, দ্বিতীয় হিজরী সনে ক্বেবলা পরিবর্তনের এক মাস পর হিজরতের ১৮ মাস শা'বানের দশম দিনে রোযা ফরয হয়েছে। রোযা ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে ছয় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, যেগুলো আমি আমার তাফসীর-ই নঈমীর ২য় পারায় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি।
◇ টীকাঃ ২. ﺭﻣﺾ - ﺭﻣﻀﺎﻥ থেকে গঠিত। এর অর্থ তাপ কিংবা উত্তপ্ত হওয়া। ভাট্টি যেমন মরিচাকৃত লোহাকে পরিষ্কার করে আর পরিষ্কার লোহাকে যন্ত্রপাতিতে পরিণত করে মূল্যবান করে দেয়, তাছাড়া স্বর্ণকে প্রেমাষ্পদের দেহে পরার উপযোগী করে দেয়, তেমনিভাবে রোযা গুনাহগারদের গুনাহ্'র মার্জনা করায়, নেককারদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে এবং এ কারণে, সেটাকে 'রামাদ্বান' ( ﺭﻣﻀﺎﻥ ) বলা হয়।
তছাড়া এটা আল্লাহ্'র রহমত, মুহাব্বত, বদান্যতার দায়িত্ব গ্রহণ করা, নিরাপত্তা ও নূর নিয়ে আসে। এ কারণে এ মাসকে রামাদ্বান বলা হয়।
স্মর্তব্য যে, রামাদ্বান এ পাঁচটি নি'মাত নিয়ে আসে- ইবাদতসমূহ, রোযা, তারাবীহহ্, ই'তিক্বাফ এবং শবে ক্বদরে ইবাদত ও তেলাওয়াত-ই ক্বোরআন। এ মাসেই ক্বোরআন-ই করীম নাযিল হয়েছে। এ মাসের নামই ক্বোরআন শরীফে নেওয়া হয়েছে। রামাদ্বান মাসের বিস্তারিত ফযীলতসমূহ আমার কিতাব 'তাফসীর-ই নঈমী'র ২য় খন্ডে দেখুন।
◇ টীকাঃ ৩.
বাস্তব অবস্থা হচ্ছে- রমযানে আসমানের দরজাগুলোও খুলে থাকে, যেগুলো দিয়ে আল্লাহ্'র খাস রহমতরাজি পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয় এবং জান্নাতের দরজাগুলোও, যার ফলে জান্নাতবাসী হুর ও গিলমান খবর পেয়ে যায় যে, দুনিয়ার মধ্যে রমযান মাস এসে গেছে। আর তারা রোযাদারদের জন্য দো'আ -প্রার্থনাসমূহে মশগূল হয়ে যায়। হাদীস আপন প্রকাশ্য অর্থবোধকই; কোনরুপ ভিন্ন ব্যাখ্যা প্রদানের প্রয়োজন নেই।
◇ টীকাঃ ৪.
এ বাক্যও তার প্রকাশ্য অর্থে ব্যবহৃত। অর্থাৎ রমযান মাসে বাস্তবিকই দোযখের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায়; যার ফলে এ মাসে গুনাহগারগণ, বরং কাফিরদের কবরগুলোর উপরও দোযখের তাপ পৌঁছে না। মুসলমানদের মধ্যে একটা কথা প্রসিদ্ধ। তা হচ্ছে- রমযান মাসে কবরের আযাব হয় না। একথার মাহাত্ম্য এটাই। বাস্তবিকপক্ষে ইবলীসকে তার বংশধরগণ সহকারে বন্ধী করে দেওয়া হয়। এ মাসে যে কেউ গুনাহ্ করে, সে তার নাফস-ই আম্মারাহ (মন্দ কাজের নির্দেশদাতা প্রবৃত্তি)'র দুষ্টামীর কারণেই হয়ে থাকে, নিছক শয়তানের প্ররোচনায় করে না।
আমার এ তাক্বরবীর দ্বারা এ হাদীস শরীফ সম্পর্কে বহু আপত্তির খন্ডন হয়ে গেলো। যেমন- এ মুহূর্তে কেউ জান্নাতে প্রবেশই করছে না, তখন সেটার দরজাগুলো খোলায় লাভ কি? অথবা এ যে, 'যখন দোযখের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, তখন রমযান মাসে তাপ আসে কোথ্থেকে? অথবা এ যে, যখন শয়তান বন্দী হয়ে গেছে, তখন এ মাসে গুনাহ্ কিভাবে সম্পন্ন হয়?
□ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ
f/Ishq-E-Mustafa ﷺ
[সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ৩য় খন্ড, পৃ. ১৭২, হাদীস নং-১৮৫৮ এর টীকাঃ (১-৪) দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম।