১০ - بَابُ مَا جَاءَ فِي الْـمَسْحِ عَلَى الْـخُفَّيْنِ
৫৫ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـحَكَمِ، عَنِ الْقَاسِمِ، عَنْ شُرَيْحٍ، قَالَ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ أَمْسَحُ عَلَى الْـخُفَّيْنِ؟ قَالَتِ: ائْتِ عَلِيًّا، فَاسْأَلْهُ، فَإِنَّهُ كَانَ يُسَافِرُ مَعَ النَّبِيِّ ، قَالَ شُرَيْحٌ: فَأَتَيْتُ عَلِيًّا، فَقَالَ لِيْ: امْسَحْ.
বাব নং ২৫. ১০. মোজার উপর মাসেহ করার বর্ণনা
৫৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাকাম থেকে, তিনি কাসেম থেকে, তিনি শুরাইহ্ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞাসা করলাম আমি কি মোজার উপর মাসেহ করতে পারব? (অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) থেকে কি এরূপ করার প্রমাণ আছে যাতে, আমিও এরূপ করতে পারব?) হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বললেন, এ ব্যাপারে তুমি হযরত আলী (رضي الله عنه)’র নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা কর। কেননা তিনি নবী করিম (ﷺ) ’র সাথে সফর করতেন। শুরাইহ্ বলেন, এরপর আমি হযরত আলী (رضي الله عنه)’র নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, উত্তরে তিনি বললেন, তুমি মোজার উপর মাসেহ কর। (ইবনে মাজাহ, ১/১৮৩/৫৫২)
ব্যাখ্যা: মোজার উপর মাসেহ করা সম্পর্কে হাদিস মুতাওয়াতিরের সীমা পর্যন্ত পৌছেঁছে। হযরত হাসান বসরী (رحمة الله) বলেন,
حدثنى سبعون من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم انه كان يمسح على الخفين
“সত্তরজন সাহাবী আমাকে বলেছেন যে, তাঁরা মোজার উপর মাসেহ করেছেন।” আল্লামা আইনী (رحمة الله) বলেন, ৮০ জনের বেশী সাহাবী মোজার উপর মাসেহ সম্পর্কীয় হাদিস বর্ণনা করেছেন। সুতরাং সকল ইমামগণ এ মাসয়ালায় একমত পোষণ করেছেন। এ কারণেই মোজার উপর মাসেহ করা জায়েযের পক্ষাবলন্বনকারী হওয়া আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী হওয়ার প্রমাণ। এর অস্বীকারকারীরা বেদয়াতী। আবুল হাসান খারকী (رحمة الله) বলেন-
اخاف الكفر على من لايرى المسح على الخفين
“যারা এই মাসয়ালার বিরোধিতা করে আমি তাদের ব্যাপারে কুফুরীর ভয় করি।” ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) আহলে সুন্নাতের আকীদা বলতে গিয়ে বলেন,
نفضل الشيخين ونحب الختنين ونرى المسح على الخفين“
আমরা হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর (رضي الله عنه) কে এবং হযরত ওসমান ও হযরত আলী (رضي الله عنه) কে সম্মান করি ও ভালবাসি আর মোজার উপর মাসেহ করি।” (এটি শেয়ারে আহলে সুন্নাত) পক্ষান্তরে খারেজী ও রাফেযী সম্প্রদায় এ মাসয়ালায় আহলে সুন্নাতের বিরোধিতা করে।
৫৬ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيْهِ: أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ تَوَضَّأَ، وَمَسَحَ عَلَى الْـخُفَّيْنِ، وَصَلَّىٰ خَمْسَ صَلَوَاتٍ.
৫৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আলকামা থেকে, তিনি সুলাইমান ইবনে বুরাইদা থেকে, তার পিতা বুরাইদা বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) একদা উয়ূ করেন এবং মোজার উপর মাসেহ করেন। অতঃপর এর দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন। (বুখারী, ১/৮৪/১৯৯)
ব্যাখ্যা: মোজার উপর মাসেহ করার সময়সীমা: জমহুর ওলামাগণের মতে মু‘কীম ব্যক্তির জন্য একদিন ও এক রাত। পক্ষান্তরে মুসাফির ব্যক্তির জন্য তিনদিন তিনরাত। জমহুরের বিপরীত শুধু ইমাম মালেক ও লাইস ইবনে সা‘দ এর মত হল মাসেহের কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই বরং যতক্ষণ পর্যন্ত মোজা পরিহিত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত মাসেহ করবে। ইমাম মালেক (رحمة الله) তার পক্ষে যেসব রেওয়ায়েত দলীল হিসেবে পেশ করেছেন জমহুরের পক্ষ থেকে সেগুলোর যথাযথ উত্তর প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ফিকাহ্র কিতাবে দেখুন।
57 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيْهِ: أَنَّ النَّبِيَّ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ صَلَّىٰ خَمْسَ صَلَوَاتٍ بِوُضُوْءٍ وَاحِدٍ، وَمَسَحَ عَلَىٰ خُفَّيْهِ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: مَا رَأَيْنَا صَنَعْتَ هَذَا قَبْلَ الْيَوْمَ، فَقَالَ النَّبِيُّ : «عَمْدًا صَنَعْتُهُ يَا عُمَرُ!».
৫৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আলকামা থেকে, তিনি ইবনে বুরাইদা থেকে, তিনি তার পিতা বুরাইদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) মক্কা বিজয়ের দিন একই উয়ূ দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন এবং মোজার উপর মাসেহ করেন। হযরত ওমর (رضي الله عنه) আরয করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আজকের পূর্বে তো আপনাকে কখনো এরূপ করতে দেখিনি। তখন নবী করিম (ﷺ) বলেন, হে ওমর! আমি ইচ্ছাকৃতভাবে এরূপ করেছি।
ব্যাখ্যা: আবু দাউদ শরীফের এক বর্ণনা অনুযায়ী ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রত্যেক নামাযের পূর্বে রাসূল (ﷺ) ’র উপর উয়ূ ফরয ছিল। পরে এটি রহিত হয়ে গেল এবং একই উযূ দিয়ে একাধিক নামায পড়া বৈধ হল।
উক্ত হাদিসে হযরত ওমর (رضي الله عنه) এর অবাক হওয়ার কারণ মূলত দু’টি। প্রথম কারণ হল- রাসূল (ﷺ) উযূর মধ্যে পা না ধুয়ে মোজার উপর মাসেহ করেছেন। দ্বিতীয়তঃ একই উযূ দ্বারা তিনি পাঁচওয়াক্ত নামায আদায় করেছেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এ কাজদ্বয় করে এরূপ করা জায়েয বলে প্রমাণ করেছেন।
৫৮ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ الْكَرِيْمِ بْنِ أَبِيْ أُمَيَّةَ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، حَدَّثَني مَنْ سَمِعَ جَرِيْرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ، يَقُوْلُ: رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَمْسَحُ عَلَى الْـخُفَّيْنِ بَعْدَ مَا أُنْزِلَتْ سُوْرَةُ الْـمَائِدَةِ.
৫৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আব্দুল করিম থেকে, তিনি আবু উমাইয়্যা থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি হযরত জারির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- আমি রাসূল (ﷺ) কে সূরা মায়িদা নাযিল হওয়ার পরও মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি। (তবরানী মু‘জামুল কবীর, ২/৩৫৯/২৫১২)
ব্যাখ্যা: মাসেহ আলাল খুফফাইনের উপর সাহাবায়ে কেরাম থেকে বহু হাদিস রয়েছে কিন্তু ঐসব হাদিস থাকা সত্ত্বেও ওলামায়ে কেরাম হযরত জারির (رضي الله عنه)’র বর্ণিত হাদিসের প্রতি বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। কেননা তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন সূরা মায়েদায় উযূর আয়াত নাযিল হওয়ার পর। এর অর্থ হল তিনি আয়াতে উযূ নাযিল হওয়ার পর রাসূল (ﷺ) কে মাসেহ আলাল খুফফাইন করতে দেখেছেন। ফলে যারা আয়াতে উযূ দ্বারা মাসেহ রহিত হয়েছে বলে বলেন জারির (رضي الله عنه)’র হাদিস তা প্রত্যাখান করে দিয়েছে।
৫৯ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ هَمَّامِ بْنِ الْـحَرْثِ: أَنَّهُ رَأَىٰ جَرِيْرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ تَوَضَّأَ، وَمَسَحَ عَلَىٰ خُفَّيْهِ، فَسَأَلَهُ عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَ: إِنِّيْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَصْنَعُهُ، وَإِنَّمَا صَحِبْتُهُ بَعْدَ مَا نَزَلَتِ الْـمَائِدَةُ.
৫৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি হাম্মাম ইবনে হারিস থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) কে দেখেন যে, তিনি উযূ করলেন অতঃপর মোজার উপর মাসেহ করেলেন। তখন হযরত হাম্মাম তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে হযরত জারির (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে এরূপ করতে দেখেছি এবং সূরা মায়িদা নাযিল হওয়ার পর আমার সাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ হয়েছে।
ব্যাখ্যা: হযরত জারির (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) ’র ইন্তেকালের চলিশ দিন পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
৬০ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ بْنِ أَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ، عَنِ الْـمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ: أَنَّهُ خَرَجَ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ فِيْ سَفَرٍ، فَانْطَلَقَ رَسُوْلُ اللهِ ، فَقَضَىٰ حَاجَتَهُ، ثُمَّ رَجَعَ وَعَلَيْهِ جُبَّةٌ رُوْمِيَّةٌ ضَيِّقَةُ الْكُمَّيْنِ، فَرَفَعَهَا رَسُوْلُ اللهِ مِنْ ضِيْقِ كُمِّهَا، قَالَ الْـمُغِيْرَةُ: فَجَعَلْتُ أَصُبُّ عَلَيْهِ مِنَ الْـمَاءِ مِنْ إِدَاوَةٍ مَعِيْ، فَتَوَضَّأَ وُضُوْءَهُ لِلصَّلَاةِ، وَمَسَحَ عَلَىٰ خُفَّيْهِ وَلَـمْ يَنْزَعْهُمَا، ثُمَّ تَقَدَّمَ وَصَلَّىٰ.
৬০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি শা‘বী থেকে, তিনি ইব্রাহীম ইবনে আবু মুছা আশয়ারী থেকে, তিনি মুগীরা ইবনে শো’বা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি একবার রাসূল (ﷺ) ’র সাথে সফরে বের হয়েছিলাম (তাবুকের দিকে)। পথে রাসূল (ﷺ) ইসতিন্জা করার জন্য একটু দূরে গমন করেন এবং তা শেষ করে ফিরে আসেন। তিনি সংকীর্ণ ও রুমী আস্তিন চাপা জুব্বা পরিধান করেছিলেন। তিনি তা উপরে উঠাতে চাইলেন কিন্তু হাতে আস্তিন উঠছিলনা। তাই তিনি জুব্বা উপরে উঠিয়ে নিলেন। হযরত মুগীরা (رضي الله عنه) বলেন, আমার নিকট চামড়ার যে পাত্র ছিল আমি তা দ্বারা পানি ঢালছিলাম। তিনি নামাযের জন্য উযূ করেন এবং মোজা না খুলে এর উপর মাসেহ করেন। অতঃপর একটু সামনে গিয়ে নামায আদায় করেন। (বুখারী, ৩৩/২০৩)
ব্যাখ্যা: এ ঘটনা বিভিন্ন বাক্যের পার্থক্য সহকারে সিহাহ্ সিত্তাহ্ গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে। এ সব বর্ণনা থেকে কিছূ গুরত্বপূর্ণ মাসয়ালা উদ্ভাবিত হয়। তা হলো এই যে, হযরত মুগীরা (رضي الله عنه) বলেন, গাযওয়ায়ে তাবুকে আমি রাসূল (ﷺ) ’র সাথে ছিলাম। তিনি পথিমধ্যে বাহনটি থামিয়ে হাজাত পূরণের নিমিত্তে কিছু দূর গমণ করেন। ফিরে আসার পর আমি তাঁকে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি হাত ধুইলেন, অতঃপর মুখমন্ডল এবং কনুই পর্যন্ত হাত ধুইলেন। এরপর মাথা মাসেহ করেন। তারপর মোজার উপর মাসেহ করেন। উযূ শেষে আমরা সামনে অগ্রসর হয়ে দেখলাম, লোকজন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (رضي الله عنه)কে ইমাম বানিয়ে ফজরের নামায আদায় করছে। হযরত আব্দুর রহমান (رضي الله عنه) সালাম ফিরালেন আর রাসূল (ﷺ) এক রাকাত পূর্ণ করলেন। রাসূল (ﷺ) কে বাদ দিয়ে নামায আদায় করায় লোকজন ভীত ছিলেন। কিন্তু তিনি সবাইকে অভয় দিয়ে বললেন, তোমরা ঠিক করেছ।
উপরোক্ত হাদিস এবং বর্ণিত ঘটনা থেকে আমরা কয়েকটি মাসয়ালা ও এর সমাধান পেয়ে থাকি। যেমন- রাসূল (ﷺ) ’র পরিহিত জুব্বাটির আস্তিন ছিল চাপা। এতে প্রমাণিত হল যে, চাপা হাতওয়ালা জুব্বা পরিধান করা জায়েয। বিশেষ করে জিহাদে যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে এই ধরনের জামা পরিধান করা উত্তম। দ্বিতীয়তঃ যদি সাওয়াবের আশায় কেউ দ্বিতীয়বার নতুন উযূ করে তাও বৈধ। তৃতীয়তঃ মোজার উপর মাসেহ করার মাসয়ালাটি সমাধান হয়েছে এবং امسحوا برؤسكم এর সন্দেহ দূরীভূত হয়েছে। চতুর্থতঃ উক্ত হাদিস দ্বারা আরো প্রমাণিত হল যে, যদি সময় সকীর্ণ হয় তবে ইমামের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। পঞ্চমতঃ উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি অপেক্ষাকৃত কম মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির পিছনে নামাযে ইকতিদা করতে পারবে। ষষ্ঠতঃ মোজা পরিধানের সময় পা পবিত্র হওয়া শর্ত। কেননা বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে যে, হযরত মুগীরা (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) ’র মোজা খোলার জন্য ঝুঁকলে তিনি বলেন, না, খুলতে হবে না। কেননা আমি পা পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধান করেছি।
৬১ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنِ الْـمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، قَالَ: وَضَّأْتُ رَسُوْلَ اللهِ وَعَلَيْهِ جُبَّةٌ رُوْمِيَّةٌ ضَيَّقَةُ الْكُمَّيْنِ، فَأَخْرَجَ يَدَيْهِ مِنْ تَحْتِهَا، وَمَسَحَ عَلَىٰ خُفَّيْهِ.
وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ مَسَحَ عَلَى الْـخُفَّيْنِ، وَعَلَيْهِ جُبَّةٌ شَامِيَّةٌ ضَيَّقَةُ الْكُمَّيْنِ، فَأَخْرَجَ يَدَيْهِ مِنْ أَسْفَلِ الْـجُبَّةِ.
৬১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি শা’বী থেকে, তিনি মুগারী ইবনে শো’বা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে উযূ করালাম। এ সময় তিনি চাপা হাত বিশিষ্ট রুমী জুব্বা পরিধান করেছিলেন। তিনি জুব্বার নীচ থেকে হাত বের করেন এবং মোজার উপর মাসেহ করেন।
অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, তিনি মোজার উপর মাসেহ করেন। এ সময় তিনি চাপা হাত বিশিষ্ট শামী জুব্বা পরিধান করেছিলেন, তিনি জুব্বার নীচ থেকে হাত বের করেন। (ইবনে খুযাইমা, ৩/৭২/১৬৪৫)
৬২ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنِ الْـمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، قَالَ: رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَمْسَحُ.
৬২. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি শা’বী থেকে, তিনি মুগীরা ইবনে শো’বা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি।
৬৩ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِيْ بَكْرِ بْنِ أَبِي الْـجَهْمِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: قَدِمْتُ عَلَىٰ غَزْوَةِ الْعِرَاقِ، فَإِذَا سَعْدُ بْنُ مَالِكٍ يَمْسَحُ عَلَى الْـخُفَّيْنِ، فَقُلْتُ: مَا هَذَا؟ فَقَالَ: يَا بْنَ عُمَرَ! إذَا قَدِمْتَ عَلَىٰ أَبِيْكَ فَسَأَلْهُ عَنْ ذَلِكَ، قَالَ: فَأَتَيْتُهُ فَسَأَلْتُهُ، فَقَالَ: رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَمْسَحُ.
وَفِيْ رِوَايَةٍ، قَالَ: قَدِمْتُ الْعِرَاقَ لِلْغَزْوِ، فَإِذَا سَعْدُ بْنُ مَالِكٍ يَمْسَحُ عَلَى الْـخُفَّيْنِ، فَقُلْتُ: مَا هَذَا؟ قَالَ: إِذَا قَدِمْتَ عَلَىٰ عُمَرَ فَسَأَلْهُ، فَقَالَ: قَدِمْتُ عَلَىٰ عُمَرَ فَسَأَلْتُهُ، فَقَالَ: رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَمْسَحُ فَمَسَحْنَا.
وَفِيْ رِوَايَةٍ، قَالَ: قَدِمْتُ الْعِرَاقَ لِغَزْوَةِ جَلُوْلَاءَ، فَرَأَيْتُ سَعْدَ بْنَ أَبِيْ وَقَّاصٍ يَمْسَحُ عَلَى الْـخُفَّيْنِ، فَقُلْتُ: مَا هَذَا يَا سَعْدُ؟ فَقَالَ: إذَا لَقِيْتَ أَمِيْرَ الْـمُؤْمِنِيْنَ فَاسْأَلْهُ، قَالَ: فَلَقِيْتُ عُمَرَ، فَأَخْبَرْتُهُ بِمَا صَنَعَ، فَقَالَ عُمَرُ: صَدَقَ سَعْدٌ، رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَصْنَعُهُ، فَصَنَعْنَا.
وَفِيْ رِوَايَةٍ: قَالَ: قَدِمْنَا عَلَىٰ غَزْوِ الْعِرَاقِ، فَرَأَيْتُ سَعْدَ بْنَ أَبِيْ وَقَّاصٍ يَمْسَحُ عَلَى الْـخُفَّيْنِ، فَأَنْكَرْتُ عَلَيْهِ، فَقَالَ لِيْ: إِذَا قَدِمْتَ عَلَىٰ عُمَرَ فَاسْأَلْهُ عَنْ ذَلِكَ، قَالَ ابْنُ عُمَرَ: فَلَـمَّا قَدِمْتُ عَلَيْهِ سَأَلْتُهُ وَذَكَرْتُ لَهُ مَا صَنَعَ سَعْدٌ، فَقَالَ: عَمُّكَ أَفْقَهُ مِنْكَ، رَأَيْنَا رَسُوْلَ اللهِ يَمْسَحُ فَمَسَحْنَا.
৬৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু বকর ইবনে আবুল জাহম থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি জিহাদের উদ্দেশ্যে ইরাক গমন করি। সেখানে হযরত সা’দ ইবনে মালিক (رضي الله عنه)কে মোজার উপর মাসেহ করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, হুযূর! এটা কি? তিনি বললেন, হে ইবনে ওমর! যখন তুমি তোমার পিতার নিকট যাবে, তখন এ সম্পর্কে তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করবে। ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বলেন, আমি আমার পিতার নিকট ফিরে আসার পর এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি। অতঃপর আমরাও মাসেহ করা আরম্ভ করি।
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, কোন এক যুদ্ধের উদ্দেশ্যে একদা আমি ইরাক গমন করি, সেখানে গিয়ে আমি হযরত সা’দ (رضي الله عنه) কে মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, এটি আবার কি? তিনি আমাকে বললেন, হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র নিকট যাওয়ার পর তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বলেন, আমি বাড়ি ফিরে এসে এসম্পর্কে হযরত ওমর (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি। তাই আমরাও মাসেহ করতে শুরু করেছি।
অপর এক রেওয়ায়েতে আছে, আমি গায়ওয়ায়ে জালুলায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ইরাক পৌঁছি। সেখানে হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) কে মোজার উপর মাসেহ করতে দেখি। আমি তাঁকে বললাম, হে সা’দ! এটা কি? তিনি আমাকে বললেন, যখন তুমি আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র সাথে সাক্ষাত করবে, তখন তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবে। অতঃপর ফিরে এসে আমি হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র সাথে সাক্ষাত করলাম এবং তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, সা’দ সত্যবাদী। আমি রাসূল (ﷺ) কে এরূপ করতে দেখেছি। তখন আমরা অনুরূপ করছি।
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বলেন, আমরা যুদ্ধের জন্য ইরাক গমণ করি। সেখানে হযরত সা’দ (رضي الله عنه) কে মোজার উপর মাসেহ করতে দেখি। আমি এটাকে নতুন পদ্ধতি মনে করলাম। তখন হযরত সা’দ (رضي الله عنه) আমাকে বললেন, যখন তুমি হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র নিকট যাবে, তখন এ বিষয়ে তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করবে। ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বলেন, যখন আমি হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র নিকট পৌঁছি, তখন তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বলেন, তোমার চাচা (সা’দ) তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী ও ফকীহ। আমি রাসূল (ﷺ) কে মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি। তখন আমরাও মাসেহ করছি।
ব্যাখ্যা: এমন প্রসিদ্ধ মাসয়ালা হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه)’র কাছে অজানা থাকার কারণ হল- এ যাবৎ উক্ত মাসয়ালা সম্পর্কে তাঁর নিকট কোন হাদিস পৌঁছেনি। অথবা তাঁর ধারণা ছিল যে, মোজার উপর মাসেহ শুধু সফরের জন্যই প্রযোজ্য, স্থায়ী আবাসে নয়। তাই তিনি হযরত সা’দ (رضي الله عنه)কে স্থায়ী আবাসে মাসেহ করতে দেখে অবাক হলেন এবং এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন। অবশেষে তিনি স্বীয় পিতার নিকট থেকে বিস্তারিত অবগত হলেন।
৬৪ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ: أَنَّهُ تَنَازَعَ أَبُوْهُ وَسَعْدُ بْنُ أَبِيْ وَقَّاصٍ فِي الْـمَسْحِ عَلَى الْـخُفَّيْنِ، فَقَالَ سَعْدٌ: امْسَحْ، وَقَالَ عَبْدُ اللهِ: مَا يُعْجِبُنِيْ، قَالَ سَعْدٌ: فَاجْتَمَعْنَا عِنْدَ عُمَرَ ، فَقَالَ عُمَرُ: عَمُّكَ أَفْقَهُ مِنْكَ سُنَّةً.
৬৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি হযরত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মোজার উপর মাসেহ সম্পর্কে হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াককাস (رضي الله عنه) এবং আমার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه)’র মধ্যে মত পার্থক্য সৃষ্টি হয়। হযরত সা’দ (رضي الله عنه) বলেন, আমি মাসেহ করছি কিন্তু হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বলেন, আমি এটা পছন্দ করছিনা। হযরত সা’দ (رضي الله عنه) বলেন, আমরা তখন হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র কাছে উপস্থিত হলাম। তখন তিনি তাঁর পুত্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমার চাচা (সা‘দ) (رضي الله عنه) সুন্নত সম্পর্কে তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী।