সংশ্লিষ্ট প্রশ্নসমূহের উত্তর [অজ্ঞাত ভিন্ন মতাবলম্বীর প্রতি শায়খের জবাব]
“যে ব্যক্তি পাহাড়ে (মাথা দিয়ে) সজোরে ঢুঁ মারে (পাহাড় ধ্বংসের উদ্দেশ্যে)”
ওয়া আলাইকুম আস্ সালাম, ভাই এইচ তথা হাদ্দাদ।
(ভাই হানীর বক্তব্য) আমি ভেবেছিলাম মহানবী (ﷺ)-এর (গায়েবী) সব বিষয়ে না জানার ব্যাপারে কিছু সংখ্যক হাদীস সংকলন করবো (যেমন, ‘তা’বির আল-নাখল’ সংক্রান্ত বিখ্যাত হাদীসটি)। কিন্তু বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে এই চিন্তা বাদ দিয়েছি; কেননা এতে মহানবী (ﷺ)-এর ভাবমূর্তির প্রতি নেতিবাচক একটি ধারণার জন্ম হতে পারে।
(ড: হাদ্দাদের জবাব) বাহ্যিকভাবে আপনি সঠিক, খেজুর গাছের কলম সংক্রান্ত হাদীসটি এরকম ধারণা দেয় যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সব কিছু জানতেন না। তবে আমি ভাবছি আপনি এই রওয়ায়াত (ও অনুরূপ অর্থের অন্যান্য দলিল) সম্পর্কে ইমামবৃন্দ কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা জানতে আগ্রহী কি না? নাকি আমরা দু’জন স্রেফ বাহ্যিক (যাহেরী/আক্ষরিক) ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্যেই আমাদের আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রাখবো?
আর যদি আপনি শেষোক্ত পন্থাটি পছন্দ করে থাকেন (মানে যাহেরী অর্থ গ্রহণের পন্থা), তাহলে আপনি কেন নিম্নবর্ণিত হাদীসের বাহ্যিক অর্থ অবিরাম অস্বীকার করে চলেছেন:
أُوتِيتُ مَفَاتِيحَ كُلِّ شَيْءٍ إِلَّا الْخَمْسَ
আমি সকল বিষয়ের জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছি, উলূমে খামসা বা পাঁচটি ঐশী জ্ঞান ব্যতিরেকে? [৮৯]
🔺[৮৯] আহমদ : আল মুসনাদ, ২:৮৫ হাদীস নং ৫৫৮৯।
(ক) তাবারানী : আল মু‘জামুল কাবীর, ১২:৩৬০ হাদীস নং ১৩৩৪৪।
আপনি যদি মনে করে থাকেন যে গাছে কলম করার হাদীসটি ওপরে উল্লেখিত হাদীসটির খেলাফ (কোনো কিছু প্রতিষ্ঠা করেছে), তাহলে তা প্রকাশ্যে বলছেন না কেন?
জ্ঞান দুই ধরনের। এগুলোর একটি দুনিয়ার সাথেই কেবল ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, এমন জ্ঞান লাভ যা যুদ্ধ ক্ষেত্রে শত্রুর ওপর কৌশলগত আধিপত্য এনে দিতে পারে; যেমন শত্রুদের সৈন্য-সংখ্যা সম্পর্কে জানা। আল্লাহতা’লা (বাহ্যিকভাবে) তাঁর পছন্দের বান্দা ও অপছন্দের লোক নির্বিশেষে সবাইকেই এই জ্ঞান দান করতে পারেন। এটি ঘটেছিল যখন বদর যুদ্ধের আগে মক্কার কুফফার বাহিনীর সংখ্যা জানতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কিছু বন্দিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। এভাবে তিনি নিজ এজতেহাদ (গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত) দ্বারা নির্ধারণ করেন যে শত্রুদের সংখ্যা ৯০০ কী ১০০০ হবে। জ্ঞানের দ্বিতীয় কিসিম হলো, আল্লাহর তরফ থেকে জেনে যাওয়া যে তিনি বিজয় নিশ্চিত করবেনই। বদর যুদ্ধের আগে এটিও ঘটেছিল, যা’তে অন্তর্ভুক্ত ছিল কোন্ কুফফার কোথায় নিহত হবে সেসব স্থানের নির্ভুল জ্ঞান লাভ। (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কর্তৃক গৃহীত) পূর্ববর্তী (জ্ঞানের) প্রক্রিয়াটি কি শেষোক্ত জ্ঞানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ?
গাছে কলম দেয়ার হাদীসটি প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত হলো, এক্ষেত্রে মহানবী (ﷺ)-এর কাছে একেবারেই একটি বৈষয়িক বা দুনিয়াবী ব্যাপারে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল, আর তিনি এতে ‘অ-বিশেষজ্ঞের মতামত’ বলতে যা বোঝায় তা-ই দিয়েছিলেন; ঠিক যেমনটি ঘটেছিল খন্দকের যুদ্ধের আগে প্রদত্ত তাঁর অভিমতের বেলায়ও। এটিকে তিনি ‘তোমাদের দুনিয়া’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে এমন কিছু বিষয় আছে যা আমাদের দুনিয়া ধারণ করতে অক্ষম; যথা –
মহানবী (ﷺ)-এর সেই (অদৃশ্য) জ্ঞানের অংশ যা আল্লাহতা’লা তাঁর কাছে উন্মোচিত করেছেন এই উদ্দেশ্যের সূত্র ধরে যে, তিনি ‘তাঁরই প্রিয় বান্দাদের হাতে’ তা বাস্তবায়ন করবেন। সফল বাগান পরিচর্যা হয়তো সে (অদৃশ্য) জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত নয়। [৯০]
🔺[৯০] বঙ্গানুবাদকের নোট: মহানবী (ﷺ) ‘সফল বাগান পরিচর্যা’ জানতেন না-ই বা বলি কীভাবে? জনৈক সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর খেজুর বাগানে তিনি মো’জেযা প্রদর্শন করে বাম্পার ফলন এনে দেন। আসল ব্যাপার হলো, সর্ব ক্ষেত্রে তিনি ঐশী/আধ্যাত্মিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন না। গাছে কলম করার ঘটনাটি ওই রকমই কিছু হবে।
(ভাই হানী বলেন) যাহোক, আমি এ ই-মেইল প্রেরণ করছি আপনাকে এ মর্মে জানাতে যে, ড: মুহাম্মদ সাঈদ রমাদান আল-বুতী সাহেব যিনি একজন কর্তৃত্বসম্পন্ন ইসলামী বিদ্বান হওয়ার ব্যাপারে আমরা দুজন-ই মনে হয় একমত, তাঁর কাছে আমি একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলাম। আর তিনি অনলাইনে আমাকে উত্তর দিয়েছেন।
(ড: হাদ্দাদের জবাব) আপনি ড: বুতী সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছেন ভালো কথা, কিন্তু যে পদ্ধতিতে করেছেন তা সঠিক হয়নি!
হ্যাঁ, ড: বুতী – আল্লাহ তাঁকে আশীর্বাদ করুন – একজন প্রথম সারির কর্তৃত্বশীল সুন্নী আলেম। কিন্তু তবু এটা একটা বাস্তবতা যে তিনি কখনো কখনো এমন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন যা একান্ত-ই তাঁর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, কখনো মৌলিক প্রামাণ্য দলিলের সাথে সম্পৃক্ত, আবার কখনো বা পদ্ধতি ও পরিভাষার সাথে সম্পর্কিত। তাঁর সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো, তিনি আল্লাহ পাকের সিফাত সম্পর্কে আলোচনা করার সময় আধুনিক বা দার্শনিক পরিভাষা ব্যবহার করেন, যার দরুন তাঁকে যারা অপছন্দ করেন এটা তাদেরকে নির্দ্বিধায় তাঁর প্রতি তাকফিরী ফতোয়া আরোপের অনুমতি প্রদান করে [ড: বুতীর উচ্চতর শিক্ষা ছিল দর্শনশাস্ত্রে]। আরেকটি সমস্যা হলো, তাঁর পিতার (মোল্লা রমাদান কুদ্দেসা সিররূহ’র) একমাত্র শিশু হিসেবে তাঁরই দ্বারা মূলতঃ শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি এমন এক পর্যায়ের ব্যক্তিতান্ত্রিক বা আত্মকেন্দ্রিক মানুষ যে যাদেরকে তিনি খণ্ডন করেন, তাদের মতো হুবহু একই ভাষায় কথা বলেন: “হে ভ্রাতা, ক্বুরআন ও সুন্নাহ’কে আপনার মুর্শীদ (পথপ্রদর্শক) হতে দিন।” আর তিনি উত্থাপিত আপত্তির প্রতি অতিমাত্রায় অসহিষ্ণু-ও। তিনি কখনোই নিজের মত পরিবর্তন করেন না, এমন কি যদি অকাট্য পাল্টা দলিলও পেশ করা হয়; উপরন্তু, সেটা তাওয়াতুরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যদি তাঁর মনে না ধরে। জনৈক উদ্ভববিজ্ঞানী/পরিবার-বিশেষজ্ঞ আমাকে জানান, ড: আল-বুতী তাঁকে একবার বলেন, “আমাদের যুগে আহলে বায়ত আছে? হে ভ্রাতা, আপনার লজ্জা করা উচিত। এখন কি আর এমন কোনো কিছু আছে?” তিনি এরকম বিশ্বাস অন্তরে লালন করেন, মরক্কোর উলামাবৃন্দ এ কথা জানলে তিনি আর সেখানে মুখ দেখাতে পারবেন কি না সন্দেহ। এগুলো হচ্ছে কিছু কিছু বিষয় যা ঘনঘন যোগাযোগের মাধ্যমে কেউ জানতে পারেন, আর এগুলোকে অবহেলাও করা যায় না; যদিও কোনো শায়খের ভুল-ভ্রান্তির হিসেব করা সম্ভব হওয়াটাও তাঁর জন্যে যথেষ্ট এক সম্মান। আর আল্লাহরই প্রতি হবে আমাদের প্রত্যাবর্তন।
একবার পরপর দুই সপ্তাহ ধরে (প্রভাষণে) ড: বুতীকে ‘রিয়াদ আস্ সালেহীন’ পুস্তকের ‘পারস্পরিক চুম্বন’ অধ্যায় সম্পর্কে আমি বলতে শুনেছি: “(বুযূর্গানে দ্বীনের) হস্ত মোবারক চুম্বন সালাফ-বৃন্দের আদব (শিষ্টাচার) নয়, সুন্নাহ (রীতি)-ও নয়; আর তাঁদের কেউই এরকম দাবিও করেননি।” কতিপয় দ্বীনী ভাই জানতেন আমার কাছে এর পরিপন্থী দলিল-প্রমাণ বিদ্যমান, তাই তাঁরা তা ড: বুতীকে প্রদর্শন করতে এবং তাঁর মন্তব্য জানতে আমায় অনুরোধ করেন। আমি চার পৃষ্ঠাসম্বলিত ছাপানো প্রামাণিক দলিল তাঁকে প্রদান করি: এতে ছিল নবী (ﷺ)-এর সুন্নাহ-জ্ঞাপক অসংখ্য হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম -এর বাণী (আসার) ও রওয়ায়াত (বর্ণনা), তাবেঈনবৃন্দেরও বাণী ও বর্ণনা, ইমাম আল-আওযাঈ (رحمة الله)-এর যুগ হতে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله)-এর জমানার মুজতাহিদ ইমামবৃন্দের সমস্ত ফতোয়া। অতঃপর এই বিষয়ে আমার সংগৃহীত চার মাযহাবের ফতোয়াগুলোও আমি যুক্ত করি। তৃতীয় সপ্তাহে তিনি এরকম কিছু একটা বলেন: “জনৈক (দ্বীনী) ভাই আমার কাছে এ বিষয়ে কিছু আপত্তি উত্থাপন করেছেন, কিন্তু তবু আমি এটাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করি না এবং এখনো বলি: *আমি* হস্ত চুম্বন পছন্দ করি না এবং এটা যে সুন্নাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাতে বিশ্বাসও করি না।” আরেক কথায়, তিনি তাঁর সার্বিকীকরণকে প্রত্যাহার করে আপন বক্তব্যকে ব্যক্তিগত ফতোয়ায় সীমাবদ্ধ করেছেন, যার প্রতি কোনো প্রকারেরই আপত্তি (আমার) নেই। তবে তাঁর এই কথা প্রত্যাহার করার সময় তিনি তা স্বীকার করেননি, আর এ কথাও কাউকে জানান নি যে তিনি ইতিপূর্বে যা বলেছিলেন তা হতে সত্য একেবারেই ভিন্ন কিছু। এটাই হচ্ছে তাঁর রীতিনীতি। আল্লাহ পাক আমাকে ও তাঁকে মাফ করুন।
(ভাই হানী বলেন) ড: শায়খ বুতীকে আমার প্রেরিত প্রশ্নগুলোর ও তাঁর প্রদত্ত উত্তরের ভাষান্তর নিচে উপস্থাপন করা হলো:
(ড: হাদ্দাদের জবাব) আপনাকে ধন্যবাদ সেসব প্রশ্নোত্তর পোস্ট করার জন্যে। আমি এগুলোকে আলাদাভাবে প্রশ্ন ও উত্তর শিরোনামযুক্ত করেছি এবং এস্টেরিক্স যোগ করেছি যাতে বোঝা যায় ড: বুতী আসলে কী জবাব দিয়েছেন এবং কী কী উত্তর দেননি…
প্রশ্ন: ইলমে গায়ব তথা খোদায়ী অদৃশ্য জ্ঞানের কতোখানি মহানবী (ﷺ)-এর জানা?
উত্তর: অদৃশ্য জ্ঞানের বিষয়গুলোর মধ্যে যা কিছু আল্লাহ পাক তাঁর রাসূল (ﷺ)-কে জানানোর জন্যে বেছে নিয়েছেন, তা-ই তিনি তাঁকে দান করেছেন। শুধু আল্লাহ পাকই সেগুলো সম্পর্কে ভালো জানেন। (তবে) তিনি আপনাদেরকে সেগুলো গণনা করতে বা মুখস্থ করতে আদেশ করেননি।
(ড: হাদ্দাদের নোট) চমৎকার গা বাঁচানো উত্তর প্রদান, যদিও এটা আংশিক এবং এতে প্রশ্নের মূল বিষয়কে এড়ানো হয়েছে।
প্রশ্ন: ‘উলূমে খামসা’ তথা আল্লাহতা’লার খাস্ পাঁচটি জ্ঞান ছাড়া বাকি সব বিষয়ের জ্ঞান কি তিনি হুযূর পাক (ﷺ)-কে দান করেছেন?
উত্তর: (নিরুত্তর)
প্রশ্ন: কতিপয় ‘ভণ্ড সূফী’র পক্ষে কি এ দাবি করার অনুমতি আছে যে উলূমে খামসা সম্পর্কে *তিনি জানতেন*?
উত্তর: আল্লাহতা’লার পাঁচটি (খাস্) অদৃশ্য জ্ঞান *জানার দাবি করাটা কারোরই জন্যে অনুমতিপ্রাপ্ত নয়*। সূফী দাবিদার যে কেউ এরকম বলে থাকলে সে একজন মিথ্যুক ও ভণ্ড।
(ড: হাদ্দাদ বলেন) এখানে (দুর্বল বাক্যে সাজানো) প্রশ্নের বিচ্যুতি ঘটেছে এই মর্মে যে, এতে মহানবী (ﷺ)-কে ছেড়ে অন্যদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে; আর তাঁকেই বাদ দেয়া হয়েছে। ’ভণ্ড সূফী’দের অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ দ্বারা কিছু কষ্টকল্পিত মতবাদের ভূতকেও টেনে আনা হয়েছে, যার দরুন ড: বুতী হয়তো অনুভব করেছেন এসবকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, আর আমরাও এমন একটি সম্ভাব্য কৌতূহলোদ্দীপক উত্তর পাওয়ার সুযোগ হারিয়েছি যেটা ভাই হানী নিচের সহজ প্রশ্নটি করলেই পাওয়া যেতো: “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উলূমে খামসা জানেন বলার অনুমতি আছে কি?”
অতএব, আমি সিদ্ধান্ত নিচ্ছি যে আপনার (ভাই হানী) অনুবাদ অনুযায়ী ড: বুতী প্রকৃতপক্ষে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেননি, বরং তিনি সেগুলোকে নিরাপদ দূরত্বে রেখেছেন, আর সময়ের দাবি বলে নিজে যা বিবেচনা করেছেন সে মোতাবেক সেগুলোকে পরিবর্তন করেছেন, আল্লাহ তাঁকে বাঁচান। যেমন তিনি বলেছেন, ‘কারোর অনুমতি নেই’, ‘যে কেউ দাবি করলে’ ইত্যাদি। কিন্তু আমরা তো ‘কারো’ বা ‘যে কেউ’ সম্পর্কে কথা বলছি না! তাই নয় কি (মানে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম সম্পর্কেই কি বলছি না)?
একবার তিনি (ড: বুতী) আমাদের বলেন, “কেউ একজন আমায় একটি সৃষ্টি সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, যেটা জগতের শেষ প্রান্তগুলো পর্যন্ত পৌঁছুতে সক্ষম, আর কা’বা শরীফের তওয়াফ-ও করে থাকে, উপরন্তু আরশের আশপাশে বসবাস করে; অথচ আমি যখন তাদেরকে (প্রশ্নকারীদেরকে) ওযূ’র স্তম্ভগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করি, তখন তারা উত্তর দিতে পারেনি। হে ভ্রাতা, এটা কী ধরনের অর্থহীন বিদ্যা?”
যাহোক (হানী ভাই), ‘কতিপয় ভণ্ড সূফীর দাবি কি অনুমতিপ্রাপ্ত’ মর্মে আপনার প্রশ্নের ধরনে আমি বিস্ময়কর উদ্ভাবনপটুতা খুঁজে পাই। আল্লাহতা’লা বর্তমানকালের মুফতীদের প্রতি অনুগ্রহ করুন, আর সেসব মানুষকেও হেদায়াত দিন যারা মনে করে যে তারা মুফতীদের নাকে দড়ি লাগিয়ে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী কাজ আদায় করে নিতে পারবে!
(ভাই হানী বলেন) আপনি আপনার ‘পাহাড়ের’ পক্ষ সমর্থন করতে যতোটুকু মাত্রা পর্যন্ত গিয়েছেন, তাতে আমি মোটেও বিস্মিত হইনি। আমি (ভণ্ড) সূফী তরীক্বার অসংখ্য সদস্যকে তাদের (ভণ্ড) শায়খদের প্রতি এরকম উগ্র ও অন্ধ আনুগত্য করতে দেখেছি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে এই উগ্রতা স্রেফ কতিপয় ব্যক্তির পক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে ধর্মীয় জ্ঞান ও তথ্য-উপাত্তের বিকৃতি সাধনে পর্যবসিত হয়ে থাকে।
(ড: হাদ্দাদের জবাব) ভাই, সর্বাত্মক চেষ্টা করুন প্রামাণ্য দলিলকে আঁকড়ে ধরতে এবং ধর্মোপদেশ হতে অন্যদেরকে নিষ্কৃতি দিতে। এ কথা বোঝা কি এতোই কঠিন যে এখানে (মূল) বিষয় শায়খ ও তরীক্বা-সংক্রান্ত নয়, বরং প্রকৃত দালিলিক প্রমাণাদি শিক্ষা ও সুন্নী নীতিমালা অনুযায়ী তা অধ্যয়ন-সংক্রান্ত? আপনি যদি এই মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি আপত্তি উত্থাপন করেন, তাহলে হয়তো শুধু দৈনিক খবারখবর পোস্ট করাই আপনার উচিত হবে এবং নিজেকে ‘বুহতান’ (মন্দ দোষারোপ) কিংবা আরো মন্দ কিছু হতে নিষ্কৃতি দেয়া উচিত হবে; কেননা অবশ্যঅবশ্য নুবুওয়্যতের কোনো মুতাওয়াতির (জনশ্রুত/প্রসার লাভকৃত) বিষয়কে *অস্বীকার করা* কুফর। কিন্তু যদি আপনি সেগুলো স্বীকার করেন, তাহলে (ইমাম আহমদ রেযা খাঁন সাহেবের রচিত) ‘আদ-দৌলাতুল মক্কীয়া’ বইটি কিংবা এতদসংক্রান্ত আমার সাম্প্রতিক প্রত্যুত্তরের মতো লেখাগুলো পড়া আরম্ভ করতে পারেন। আমাদেরকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, যেহেতু নিম্নের দুটি বিষয়ের ওপর আমাদের আলোকপাত করতে হবে:
১/- খেজুর গাছে কলম, সামরিক কৌশল, পবিত্র বিবি সাহেবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম-বৃন্দের মনের অবস্থা এবং ’আসমত’ তথা নিষ্পাপ হওয়ার অন্যান্য কিছু নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে মহানবী (ﷺ)-এর বাহ্যতঃ না জানাকে সমর্থনকারী প্রামাণ্য দলিলাদি; এবং
২/ – উম্মতের সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত চূড়ান্ত কল্যাণের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাহ্যতঃ জানার পক্ষে দালিলিক প্রমাণাদি।
(ভা্ই হানী বলেন) অনুগ্রহ করে লক্ষ্য করুন, আমার ইতিপূর্বেকার ইমেইল-বার্তায় একই (আক্রমণাত্মক) বিষয়বস্তুর ওপর যেমনটি আমি জোর দিয়েছি, এখানেও সেরকম হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্য নিহিত নেই; স্রেফ ধর্মীয় বিষয়াদি খোলাসা করাই উদ্দেশ্য, অন্য কিছু নয়।
(ড: হাদ্দাদের জবাব) অবশ্যই, আর আপনি হয়তো এই বিষয়বস্তুকে কম আক্রমণাত্মক পেতে পারেন, এখন যখন আপনি ড: বুতীকে এতে আপনার সাথে শরীক হতে উৎসাহিত করেছেন।
– ড: জি, এফ, হাদ্দাদ
(ভাই হানী হতে) আরো প্রশ্ন
সালামুন আলাইকুম।
প্রশ্ন: এসব লক্ষ্যবহির্ভূত দাবির সমর্থনে একজন আলেমকেও উদ্ধৃত করা হয়নি। বরঞ্চ সকল উত্তরদাতাই হয়: (ক) ক্বুরআনের আয়াতের ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীসের নিজস্ব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ভিত্তিতেই উপলব্ধি করেছেন (যে পদ্ধতি ব্যবহারের জন্যে ওহাবীদেরকে এই একই মানুষেরা দোষারোপ করে থাকেন), নতুবা (খ) কোনো রেফারেন্স ছাড়াই ইসলামে কিছু (এতদসংক্রান্ত) অভিমতের অস্তিত্ব থাকার কথা দাবি করেছেন।
(ড: হাদ্দাদের জবাব): উলূমে খামসা তথা আল্লাহর খাস্ পাঁচটি জ্ঞান ব্যতিরেকে মহানবী (ﷺ)-এর ইলমে গায়ব (অদৃশ্যের জ্ঞান)-সম্পর্কিত মো’জেযা বা অলৌকিকত্বকে ‘লক্ষ্যবহির্ভূত দাবি’ আখ্যা দেয়া কুফর, কেননা মো’জেযা হচ্ছে মুতাওয়াতির, যেমনটি সাবেত/প্রমাণ করেছেন
হাফেয আল-কাত্তানী নিজ ‘নাযম আল-মুতানাতির’ পুস্তকে (#২৪৯)। তিনি তাতে ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله)-এর ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থ হতে তাঁর কথা উদ্ধৃত করেন, যেখানে ইমাম সাহেব ব্যক্ত করেন যে মহানবী (ﷺ)-এর ইলমে গায়ব জানা থাকার ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন করা বাধ্যতামূলক ইসলামী জ্ঞানের অংশ, আর যে ব্যক্তি তা অবহেলা বা অবজ্ঞা করে সে এর দায় থেকে মুক্ত নয়। [৯১]
🔺[৯১] আল কাত্তানী : নাজমুল মুতানাতির, ২৪৯।
ইমাম ইবনে হাজরের (رحمة الله) কৃত ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থটিও দেখুন সেসব পৃষ্ঠায়, যা আমি এতদসংক্রান্ত মূল পোস্টে উদ্ধৃত করেছি। লক্ষ্য করুন যে, নস্ তথা শরঈ দলিল হতে কোনো হুকুম *দ্ব্যর্থহীন*ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে সে সম্পর্কে উলামাদের মতামত দাবি করাও ফিসক্ব (পাপ) বা কুফর। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর স্পষ্ট হাদীস সম্পর্কে জানানোর পরও উলামাদের মতামত যে ব্যক্তি জানতে পীড়াপীড়ি করেন, ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)-এর দৃষ্টিতে তিনি খৃষ্টান বা ইহুদীদের মতোই।
আমার ২০০০ সালের ১লা মে তারিখের ‘নিউজ-উইকে প্রকাশিত অলৌকিকত্ব মানে কী’ সংক্রান্ত পোস্টেও আমি দেখিয়েছি যে উলূমে খামসা বিষয়ে মহানবী (ﷺ)-এর জ্ঞানকে সমর্থনকারী নির্ভরযোগ্য দলিলাদি বিদ্যমান।
এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও প্রমাণাদির জন্যে ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله)র-এর ‘শেফা শরীফ’, খাফফাজী ও আলী আল-ক্বারীর শরাহগুলো, আল-বায়হাক্বী ও আবূ নুয়াইমের ‘দালায়েল আল-নুবুওয়া’, আল-সৈয়ূতীর ‘খাসাইসে কুবরা’, আল-নাবাহানীর ‘হজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন’ ইত্যাদি পুস্তকের সংশ্লিষ্ট অধ্যায়গুলো দেখুন। তবে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা সম্ভবতঃ বিদ্যমান ইমাম আহমদ রেযা খাঁন সাহেবের পার্শ্বটীকাসম্বলিত তাঁরই রচিত ‘আদ্ দৌলাতুল মক্কীয়া বিল মাদ্দাতিল গায়বীয়্যা’ পুস্তকে (তুরস্কভিত্তিক ওয়াক্বফ এখলাস সংস্থায় আরবী পুস্তিকাটি পাওয়া যায়)। [বাংলা http://www.mediafire.com/file/p6lx36pc6a83qo3/]
– জি, এফ, হাদ্দাদ