৭- بَابُ مَا جَاءَ فِي التَّمَتُّعِ

٢٢٨- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ ، أَنَّ النَّبِيَّ  أَمَرَ أَصْحَابَهُ أَنْ يُحِلُّوْا مِنْ إِحْرَامِهِمْ بِالْـحَجِّ، وَيَجْعَلُوْهَا عُمْرَةً.


বাব নং ১০৫. ৭. হজ্জে তামাত্তুর বর্ণনা


২২৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবুয যোবাইর থেকে, তিনি জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ)  তাঁর সাহাবীগণকে নির্দেশ প্রদান করেন যেন তারা হজ্জের ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যায় এবং উমরা করে।


ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সাহাবায়ে কিরাম হজ্জের নিয়তে ইহরাম বেঁধেছিলেন, আর রাসূল (ﷺ)  উমরার মাধ্যমে তাদেরকে হজ্জের ইহরাম থেকে হালাল করে দেন। অর্থাৎ তারা তাওয়াফ ও সাঈ করার পর হালাল হয়ে যান।


٢٢٩- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ ، قَالَ: لَـمَّا أَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ  بِمَا أَمَرَ بِهِ فِيْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ، قَالَ سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكٍ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أَخْبِرْنَا عَنْ عُمْرَتِنَا، أَلَنَا خَاصَّةً أَمْ لِلْأَبَدِ؟ قَالَ: «هِيَ لِلْأَبَدِ».


২২৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবুয যোবাইর থেকে, তিনি জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন রাসূল (ﷺ)  বিদায় হজ্জে কিছু (হজ্জের মাসে উমরা করার) নির্দেশ প্রদান করেন, তখন সুরাকা ইবনে মালিক (رضي الله عنه) আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে উমরা সম্পর্কে বলুন, এটা কি আমরা সাহাবীদের জন্য খাস না সবসময়ের জন্য? তিনি বললেন এটা সবসময়ের জন্য।


ব্যাখ্যা: হযরত সুরাকা (رضي الله عنه)’র প্রশ্ন করার কারণ হলো- জাহেলী যুগে হজ্জের মাসে উমরা আদায় করা নিষিদ্ধ ছিল। তাই তিনি এই কুপ্রথার মূলোৎপাটন করেন এবং এই বাতিল ধারণা রহিত করেন।


٢٣٠- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـهَيْثَمِ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّهَا قَدِمَتْ، وَهِيَ مُتَمَتِّعَةٌ، وَهِيَ حَائِضٌ، فَأَمَرَهَا النَّبِيُّ ، فَرَفَضَتْ عُمْرَتَهَا.


২৩০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হায়শাম থেকে, তিনি এক ব্যক্তি থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তামাত্তুর নিয়তে আগমণ করেন, এ সময় তিনি ঋতুবতী হয়ে পড়েন। তখন নবী করিম (ﷺ)  তাঁকে উমরা ভঙ্গ করার নির্দেশ প্রদান করেন।


ব্যাখ্যা: হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) তাওয়াফের পূর্বে ঋতুবতী হয়ে পড়েন। তখন রাসূল (ﷺ)  তাঁকে উমরা ভঙ্গ করার নির্দেশ দেন এবং পরে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (رضي الله عنه)’র সাথে উমরার কাযা ও দম আদায়ের ব্যবস্থা করেন।


٢٣١- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّهَا قَدِمَتْ مُتَمَتِّعَةً، وَهِيَ حَائِضٌ، فَأَمَرَهَا النَّبِيُّ ، فَرَفَضَتْ عُمْرَتَهَا.


২৩১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তামাত্তুর উদ্দেশ্যে (মক্কায়) আগমন করেন, এ সময় তিনি ঋতুবতী হয়ে পড়েন। তখন নবী করিম (ﷺ)  তাঁকে উমরা ভঙ্গ করার নির্দেশ প্রদান করেন।


ব্যাখ্যা: হজ্জ তিন প্রকার। যথা:- 

১. ইফরাদ- হজ্জের মাসে উমরা ছাড়া কেবল হজ্জ করা। এরূপ হাজীকে মুফরিদ বলে। 

২. তামাত্তু- হজ্জের মাসে প্রথমে উমরা এবং পরে হজ্জ করা। এরূপ হাজীকে মুতামাত্তি বলে। 

৩. কিরান- হজ্জের মাসে হজ্জ ও উমরা একই ইহরামে আদায় করা। এরূপ হাজীকে কারিন বলে।


❏ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মতে কিরান হজ্জ উত্তম। এরপর তামাত্তু অতঃপর ইফরাদ। ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মালিক (رضي الله عنه)’র মতে হজ্জে ইফরাদ উত্তম। এরপর তামাত্তু অতঃপর কিরান। ইমাম আহমদ (رحمة الله)’র মতে তামাত্তু উত্তম। এরপর ইফরাদ অতঃপর কিরান। তবে কিরান হজ্জই সর্বোত্তম। কেননা এতে এক ইহরামে দীর্ঘদিন থাকতে হয় বলে কষ্ট বেশী হয়। আর যে কাজে কষ্ট বেশী হয় সে কাজে সওয়াবও বেশী হয়। তাছাড়া রাসূল (ﷺ)  বিদায় হজ্জে কিরান হজ্জেই করেছিলেন। 


❏ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, ইফরাদ, তামাত্তো ও কিরান সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয তবে উত্তম হওয়ার মধ্যে মত বিরোধ রয়েছে। ইমাম শাফেঈ, ইমাম মালেক ও দাউদ ইবনে আলী ইস্পাহানী প্রমুখের মতে ইফরাদ উত্তম। ইমাম আবু হানিফা, সুফিয়ান সওরী, ইসহাক ইবনে রাহভিয়্যা, মযনী, ইবনে মনযর, আবু ইসহাক মারওয়াযী (رحمة الله) প্রমুখের মতে কিরান উত্তম। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) ’র মতে তামাত্তো উত্তম। ইমাম আবু ইউসুফের মতে কিরান ও তামাত্তো ইফরাদ থেকে উত্তম।  ১৭৭

➥  ইমাম নববী (رحمة الله) (৬৭৬ হিঃ) শরহুল মুহাযিযব, খন্ড ৭, পৃষ্ঠাঃ  ১৫২


٢٣٢- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّهَا قَدِمَتْ مُتَمَتِّعَةً، وَهِيَ حَائِضٌ، فَأَمَرَهَا النَّبِيُّ ، فَرَفَضَتْ عُمْرَتَهَا، وَاسْتَأْنَفَتِ الْـحَجَّ، حَتَّىٰ إِذَا فَرَغَتْ مِنْ حَجِّهَا، أَمَرَهَا رَسُوْلُ اللهِ  أَنْ تَصْدُرَ إِلَى التَّنْعِيْمِ مَعَ أَخِيْهَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ.


২৩২. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি তামাত্তুর নিয়তে (মক্কায়) আগমণ করেন এবং (তালবিয়া ও ইহরামের পর) ঋতুবর্তী হয়ে পড়েন। তখন রাসূল (ﷺ)  তাঁকে উমরা ভঙ্গ করার নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর হজ্জের সময় তিনি নতুন করে (হজ্জের জন্য) ইহরাম বাঁধেন। হজ্জ থেকে অবসর হলে রাসূল (ﷺ)  তাঁকে নির্দেশ দেন যেন তিনি তাঁর ভাই আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (رضي الله عنه)’র সাথে তানঈম গিয়ে ইহরাম বেঁধে এসে উমরা আদায় করেন।


ব্যাখ্যা: তানঈম মক্কা থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে অবস্থিত। সেখান থেকে উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে এসে তাওয়াফ ও সাঈ করে হালাল হয়ে যেতে হয়। কারণ মহিলাদের জন্য হলকের বিধান নেই।


٢٣٣- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـهَيْثَمِ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  ذَبَحَ لِرَفْضَتِهَا الْعُمْرَةَ بَقَرَةً.


২৩৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হায়শাম থেকে, তিনি এক ব্যক্তি থেকে, তিনি আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)  আয়েশা (رضي الله عنه)’র উমরা ভঙ্গ করার কারণে (দম হিসাবে) গাভী যবেহ করেন।


٢٣٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ الْـمَلِكِ، عَنْ رِبْعِيِّ بْنِ حِرَاشٍ، عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّ النَّبِيَّ  أَمَرَ لِرَفْضِهَا الْعُمْرَةَ بدَمٍ.


২৩৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আব্দুল মালিক থেকে, তিনি রিবীঈ ইবনে হিরাশা থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ)  আয়েশা (رضي الله عنه)’র উমরা ভঙ্গের কারণে দম দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।


٢٣٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّهَا قَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللهِ! يَصْدُرُ النَّاسُ بِحَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ، وَأَصْدُرُ بِحَجَّةٍ؟ فَأَمَرَ النَّبِيُّ  عَبْدَ الرَّحْمٰنِ بْنَ أَبِيْ بَكْرٍ، فَقَالَ: «انْطَلِقْ بِهَا إِلَى التَّنْعِيْمِ، فَلْتُهِلَّ، ثُمَّ لِتَفْرُغْ مِنْهَا، ثُمَّ لِتَعْجَلْ عَلَيَّ، فَإِنِّيْ أَنْتَظِرُهَا بِبَطْنِ الْعَقَبَةِ».


২৩৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- হে আল্লাহর নবী! লোকজন হজ্জ ও উমরা করে যাবে আর আমি কেবল হজ্জ করব? তখন তিনি আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (رضي الله عنه) কে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি তাঁকে তানঈম নিয়ে যাও। সেখানে গিয়ে উমরার জন্য ইহরাম বাঁধবে। তারপর উমরা আদায় করে শীঘ্র আমার সাথে মিলিত হবে। আমি বতনে আকাবায় তোমাদের জন্য অপেক্ষা করব।

Top