দৌলাতুল মক্কীয়াহ রচনার প্রেক্ষাপটঃ
১৩২৩ হিজরী মােতাবেক খৃষ্টাব্দের ২০ই ফেব্রুয়ারী আছর নামাজ পড়ে আ’লা হযরত হেরম শরীফের কুতুবখখানার দিকে যাচ্ছিলেন, সিঁড়ির দিকে উঠতেই তাঁর যেন কেউ আসছে মনে হলাে। তিনি পেছনের দিকে ফিরলেন, দেখলেন রঈসুল ওলামা মৌলানা সালেহ কামাল (رحمة الله)। সালাম ও মােসাফাহা পর্ব শেষান্তে উভয়ে গ্রন্থাগারের দফতরে গিয়ে বসলেন। সেসময়ে অন্যান্য ওলামা কেরাম ছাড়াও সৈয়দ ইসমাঈল এবং তাঁর ভাই সৈয়দ মৌলানা মােস্তফা, তাঁদের পিতা মৌলানা সৈয়দ খলীল শরীফও' তাশরীফ নিয়েছিলেন। হযরত মাওলানা সালেহ কামাল পকেট থেকে এক টুকরাে কাগজ বের করলেন যাতে ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) বিষয়ক পাঁচটি প্রশ্ন ছিলাে, যার উত্তর তিনি সবেমাত্র আরম্ভ করেছিলেন। আ’লা হযরতের বক্তব্য ও তার জ্ঞানের বিশালতা দেখে তিনি সেগুলাে তাঁর নিকট হস্তান্তর করে বললেন, এ প্রশ্নগুলাে ওহাবীরা শরীফ আলী পাশার মাধ্যমে পাঠিয়েছেন, -“আপনি এগুলাের জবাব পদান করুন। আ’লা হ্যরত জবাব প্রদানের জন্য তৎক্ষণাৎ তৈরি করে গেলেন। তিনি সৈয়দ মােস্তফাকে বললেন দোয়াত-কলম দিন। মৌলানা সালেহ কামাল, মৌলানা সৈয়দ ইসমাইল ও মৌলানা সৈয়দ খলীল বললেন, আমরা এমন দ্রুত সংক্ষিপ্ত জবাবের প্রত্যাশি নই। বরং এমন জবাব চাই যদ্বারা ভ্রষ্ট ওহাবীদের স্বরূপ উন্মাচিত হয়ে যায়। আ’লা হযরত এমন জবাবের জন্য কিছু সময় চেয়ে বললেন, যেন দিনের মাত্র দু'ঘন্টা বাকী এত স্বল্প সময়ে কি করা যায়? মৌলানা সালেহ কামাল বললেন, কাল মঙ্গলবার আর পরশু বুধবার এ দু’দিনে আপনি জবাব পুর্ণ করুন। আমরা আপনার থেকে বৃহস্পতিবারই তা চাই যেন শুক্রবার শরীফ সাহেবের সামনে পেশ করতে পারি। আ’লা হযরত আল্লাহ ও রাসুলের উপর ভরসা করে তা লেখার অঙ্গীকার করেন এবং জবাব লেখা আরম্ভ করেন। এদিকে মক্কা শরীফে এ গুজব সৃষ্টি হলাে যে, ওহাবীরা ইলমে গায়বের উপর প্রশ্ন করেছেন আর আ’লা হযরত এর জবাব লিখছেন। এখনও দৌলাতুল মৃক্কীয়াহ্ প্রথম ভাগ শেষ হয়নি, দ্বিতীয় ভাগ লেখা হচ্ছে, এমতাবস্থায় হযরত শরীফ সাহেবের মাধ্যমে স্থানীয় আলিম মৌলানা আহমদ আবুল খায়র মােরদাদ-এর পয়গাম পৌছালাে যে, আমি চলাফেরা করতে অক্ষম, আপনার লিখিত দৌলাতুল মক্কীয়াহ্ শুনতে চাই। আ’লা হযরত তাঁর নিকট তশরীফ নিলেন এবং এ কিতাবের লিখিত অংশ, তাঁকে *শুনালেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যেন তাতে ‘পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞানের বিষয়ও অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আ’লা হযরত বললেন, এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন ছিলােনা বিধায় আমি তা সংযােজন করিনি। বিদায়ের সময় সম্মানার্থে তাঁর উরু মােবারকে হাত রাখলেন। তিনি আবেগ আপ্লোত কণ্ঠে বলে উঠলেন আনা ইক্বাবেবলু আরজুলাকুম, আনা উক্বাবেবলু নিয়া'লেকুম' অর্থাৎ আমি আপনার কদমবুচি করবাে, আপনার জুতা চুমু খাবাে। অতঃপর আ’লা হযরত সেখান থেকে নিজের অবস্থানে চলে আসলেন, আর রাত্রেই ‘পঞ্চ অদৃশ্য জ্ঞান সম্পর্কিত অধ্যায় সংযােজন করলেন।
' দ্বিতীয় দিন বুধবার তিনি যখন সকালে হেরম শরীফ থেকে নামাজ পড়ে বের হলেন, তখন মাওলানা সৈয়দ আবদুল হাই ইবনে মাওলানা সৈয়দ আবদুল কবীর-এর খাদেমের পয়গাম আসলাে যে,তিনি তাঁর সাক্ষাৎ প্রার্থী। মাওলানা আবদুল হাই সে মহান ব্যক্তিত্ব যিনি সে সময় শুধুমাত্র হাদীস বিষয়ে ৪০টি গ্রন্থ লিখেছেন যা মিশরে প্রকাশিত হয়েছিলাে। আ’লা হযরত তাঁর অঙ্গীকার এবং দৌলাতুল মক্কীয়ার বাকী কাজ সমাপ্তের কথা চিন্তা করে অপারগতা প্রকাশ করে বললেন, আমি আজ ক্ষমা চাই, আরেকদিন আমি নিজেই তার সাথে সাক্ষাৎ করবাে। খাদেম চলে গেলেন। পুনরায় এসে বললেন, মৌলানা আবদুল হাই সাহেব আজই মদীনায় চলে যাচ্ছেন। আজ জোহরের পর তিনি মদীনার দিকে রওয়ানা হবেন। অপারগ হয়ে তিনি তাকে আসার অনুমতি প্রদান করেন। তিনি এসে আ’লা হযরত থেকে ইলমে হাদীসের অনুমতি চেয়ে তা লিখে নেন। অনেক্ষণ আলাপ-আলােচনার পর তিনি মদীনায় রওয়ানা দেন। এ দিনের অধিকাংশ সময়ও এভাবেই কেটে গেলাে। কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহ এ দিন ঈশারের নামজের পর তিনি তা সমাপ্ত করেন। দু’দিনের ৪ ঘন্টা করে মাত্র ৮ ঘন্টায় ‘দৌলাতুল মক্কীয়াহ’ লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ‘ইলমে গায়ব' বিষয়ক এ অদ্বিতীয় গ্রন্থ ওহাবীদের মৃত্যুডঙ্কা বাজিয়ে দিলাে, নবীর দোষমণদের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিলােপ্রকৃত পক্ষে এ গ্রন্থ আ’লা হযরত (رحمة الله)-এর একটি জিন্দা কারামত। মাত্র ৮ ঘন্টায় এমন বৃহৎ তথ্যনির্ভর জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্যে অতুলনীয় গ্রন্থ রচনা করে সমগ্র আরব-আজমের ওলামাদের নিরােত্তর করে দিলেন। তিনি তীব্র রােদের তাপে কোন কিতাবের সাহায্য ব্যতীত শুধুমাত্র স্বীয় প্রভুর সাহায্যে নির্ভর করে কুরআন, হাদীস, তাফসীর, ফিক্হ ও ওলামায়ে কেরামের কিতাবাদির মূল বক্তব্য সহকারে যে কিতাব রচনা করেন তা সত্যিই বিস্ময়কর এবং এটা আ’লা।
*হযরতের আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাসুলে পাক (ﷺ) এর বিশেষ অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ এবং আল্লাহ তায়ালার বিশেষ জ্ঞান (ইলমে লাদুন্নী)। আমাদেরকে এ মহান ইমামের অনুসরণের তাওফীক দান করুন।