রক্ত মুবারক
আমাদের রক্ত নাপাক। কিন্তু হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র রক্ত মুবারক পবিত্র। সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) গণ হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র রক্ত মুবারক পান করতেন। নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহে এর আলোচনা এসেছে।
ওহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলে পাক (ﷺ) যখন আহত হলেন তখন হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه)’র সম্মানিত পিতা হযরত মালেক বিন সিনান (رضي الله عنه) ক্ষতস্থান মুখে চুষে পরিষ্কার করেন। একটু সাদা পরিলক্ষিত হলে সবাই বললেন, রক্তগুলো ফেলে দিতে। তিনি আল্লাহর শপথ করে বললেন, মুখ থেকে এই রক্ত মুবারক আমি কখনো ফেলবো না। অত:পর তিনি রক্ত মুবারক পান করে ফেলেন।
রাসূলে কারিম (ﷺ) তখন ইরশাদ করেন,
مَنْ أَرَادَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَلْيَنْظُرْ إِلَى هَذَا
-‘‘কেউ জান্নাতী লোক দেখতে চাইলে যেন উনার দিকে দেখে।’’ ➥69
৬৯.
ক. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ৪১ পৃষ্ঠা
খ. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ৩/২৬৬ পৃ.
গ. ইমাম সাঈদ বিন মানসুর, আস-সুনান, হা/,
ঘ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুয়াত (ফার্সী), প্রথম খণ্ড, ৩০ পৃষ্ঠা,
ঙ. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লাদুনিয়া, ২/৯২ পৃ.
চ. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ২১৬ পৃষ্ঠা
ছ. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫/৫৪৬ পৃ.
জ. সফিকুর রহমান মোবারকপুরী, আর-রাহিকুল মাখতুম, ২৪৭ পৃ.
ঝ. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ২/৩১৯ পৃ.
ঞ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৪/২৪১ পৃ.
ট. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/৩৬১ পৃ.
সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত ভাল করেই জানতেন। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ কেরন-
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ
-“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাদের উপর হারাম করেন মৃত প্রাণী, রক্ত, শুকরের গোশত এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যে জন্তু জবেহ করা হয় তা।” (সূরা বাক্বারা, আয়াত নং-১৭৩)
এই আয়াতে রক্তকে হারাম করা হয়েছে কিন্তু ছাহাবায়ে কেরামগণ (رضي الله عنه) হুযুর (ﷺ)’র রক্ত পান করা মূলত এই বিষয়টিই অকাট্য ভাবে প্রমাণিত হয় যে, হুযুর (ﷺ)’র বাশারিয়ত দুনিয়ার কোন মানুষের মত নয়।
হযরত শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) মাদারেজুন নবুয়াতে বলেন, এক হাজ্জাম (যে শিঙ্গা লাগায়) রাসূল কারিম (ﷺ) কে শিঙ্গা লাগিয়ে রক্ত বের করে তা পান করেন। রাসূল (ﷺ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, রক্তগুলো কই? তখন তিনি বলেন, আমি বাইরে লুকিয়ে রাখার জন্য নিয়ে গেছি। কিন্তু আমি তা জমিনের কোথাও পুথিত না করে আমার নিজের মধ্যেই তা গোপন করেছি। (আমি তা পান করেছি)
তখন রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন,
فرموذ بتحقيق عذر كردو دنگاه داشتى نفس خود العينى از امراض دہلا
-“তুমি একটি উপমা সৃষ্টি করেছো এবং সকল রোগ থেকে নিজেকে হেফাজত করেছ।’’ ➥70
৭০. শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুওয়াত শরীফ, ফার্সী, প্রথম খণ্ড, ৩০ পৃষ্ঠা
হযরত আবদুল্লাহ বিন জুবাইর (رضي الله عنه)’র আকিদা:
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) শেফা শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, হযরত জুবাইর (رضي الله عنه) যখন রাসূল (ﷺ)’র রক্ত মুবারক পান করেন, তখন কেউ একজন তাকে উক্ত রক্ত মুবারক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, তা কেমন ছিল, উত্তরে তিনি বলেন,
أما الطعم فطعم العسل وأما الرائحة فرائحة المسك
-“তা ছিল মধু থেকেও মিষ্টি এবং মিশকের চেয়েও অতি সুগন্ধ।” (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, শরহে শিফা, ১/১৭০ পৃ.)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপর্যুক্ত নির্ভরযোগ্য কিতাবগুলো আলোচনা অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) গণের এই আক্বিদাই প্রমাণিত হল যে, তাঁরা রাসূল (ﷺ) কে নিজেদের মত বাশার মনে করতেন না। বরং সারা পৃথিবীর মানুষের চেয়ে উপমাহীন বাশার মনে করতেন। আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী (رحمة الله) বলেন: ➡71
কবিতা:৪৪
ايں خود گدر ددپيرى زيں حبدا
آں خورد دد ہمہ نور حندا
اے ہزاراں جبرائيل اندر بشر
بهر حق سو تے غريباں يک نطنہ
‘‘এ খাদ্য পাক:অশুচি নিখাদ
প্রিয়তমে দানিছে:নূরানি আহাদ।
হে হাজার জিবরাঈলের ক্ষমতাধর
গরিবপানে দাও দর্শন একনজর।’’
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭১. দেওবন্দীদের আকাবীরীনদের পীর মুরশিদ হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মাক্কী (رحمة الله) আল্লামা জালালুদ্দীন রুমী (رحمة الله)’র ফাতেহা দিতেন। (শামায়েলে এমদাদিয়া) ৬৮ পৃষ্ঠা)
❏ বিষয় নং-৫: হাশরের ময়দানে শাফায়াত বা সুপারিশ
দেওবন্দী, ওহাবী, আহলে হাদিসদের আক্বিদা হল যে, কোন নবী-ওলী সুপারিশ করতে পারবে না। যারা নবী ওলীকে সুপারিশ কারী মনে করবে তারা আবু জাহেলের মতই মুশরিক। কেউ কাউকে রক্ষা করতে পারবে না। (তাকবীয়াতুল ঈমান, ৮ পৃষ্ঠা)
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা হল, হুযুর পূর নূর (ﷺ) ময়দানে মাহশরে সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তা‘য়ালার অনুমতিক্রমে হাশর মাঠে তিনি সুপারিশ করবেন।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন:
مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ
-“আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। তার সামনে পেছনে সবকিছুই তিনি জানেন।” ➥72
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭২.
❏ ইমাম আলী ইবনে ওয়াহেদী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
مقامٍ محمودٍ وهو مقام الشَّفاعة يحمده فيه الخلق
-‘‘মাকামে মাহমুদ মানে শাফায়াত করার মর্যাদা লাভ, যেখান সমস্ত সৃষ্টি সৃষ্টি কর্তার প্রশংসা করবেন।’’ (তাফসিরে ওয়াহেদী, ১/৬৪৪ পৃ.)
মহান রব আরও ইরশাদ করেন-
عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا
-‘‘অচিরেই তিনি আপনাকে এমন স্থান দান করবেন, যেখানে সব কিছুই আপনার প্রশংসা করবে।’’ ➥73
৭৩. ১৫তম পারা, ৯ রুকু, সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত নং-৭৯
তাফসীরে খাজেন ও মাদারেক:
ইমাম খাযেন (رحمة الله) এবং ইমাম নাসাফী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
{مَقَامًا مَحْمُودًا} يَحْمَدك فِيهِ الْأَوَّلُونَ وَالْآخِرُونَ وَهُوَ مَقَام الشَّفَاعَة
-“মাকামে মাহমুদ হল সুপারিশের স্থান কেননা এখানে পূর্বপর সবাই তাঁর প্রশংসা করবে।” ➥74
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭৪.
ক. ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে জালালাইন, ৩৭৫ পৃষ্ঠা,
খ. ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারেক, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৭৩ পৃষ্ঠা,
গ. ইমাম খাযেন, তাফসীরে খাযেন, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা
ঘ. তাফসীরে জামেউল বয়ান, ২৪৫ পৃষ্ঠা,
ঙ. ইমাম ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৭/২২২ পৃ.
❏ আল্লামা বুরহানুদ্দীন কিরমানী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
هو عند الجمهور مقام الشفاعة. -
‘‘জমহুর মুফাসসিরদের মতে, এটা সুপারিশের স্থান উদ্দেশ্য।’’
❏ বিখ্যাত মুফাস্সির ইমাম সাম‘আনী (رحمة الله) (ওফাত. ৪৮৯ হি.) লিখেন-
أجمع الْمُفَسِّرُونَ أَن هَذَا مقَام الشَّفَاعَة
-‘‘সমস্ত মুফাসসিরানে কিরামগণ একমত পোষণ করেছেন যে, আলোচ্য আয়াতে মাকামে মাহমুদ বলতে শাফায়াত উদ্দেশ্য।’’ (ইমাম সাম‘আনী, তাফসিরে সাম‘আনী, ৩/২৬৯ পৃ.)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
ইমাম বুখারী (رحمة الله) সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণনা করেন যে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فِي قَوْلِهِ: {عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا} وَسُئِلَ عَنْهَا قَالَ: هِيَ الشَّفَاعَةُ.
-‘‘হুযূর (ﷺ) কে মাকাম মাহমুদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বলেন,
এটা সুপারিশের স্থান।’’ ➥75
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭৫.
ক. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৫/১৫৪ পৃষ্ঠা, হা/৩১৩৭
খ. ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৫/১৫২ পৃ. হা/৪৩৩২,
❏ তবে ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এভাবে সংকলন করেন-
وَأخرج ابْن جرير وَالْبَيْهَقِيّ فِي شعب الإِيمان عَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: الْمقَام الْمَحْمُود الشَّفَاعَة
-‘‘ইমাম ইবনে জারীর আত-তবারী, বায়হাকী তার শুয়াবুল ঈমানে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আলোচ্য আয়াতে মাকামে মাহমুদ বলতে শাফায়াত উদ্দেশ্য।’’ (ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসুর, ৫/৩২৪ পৃ.)
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وَأخرج أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَحسنه وَابْن جرير وَابْن أبي حَاتِم وَابْن مرْدَوَيْه وَالْبَيْهَقِيّ فِي الدَّلَائِل عَن أبي هُرَيْرَة رَضِي الله عَنهُ عَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فِي قَوْله: {عَسى أَن يَبْعَثك رَبك مقَاما مَحْمُودًا} وَسُئِلَ عَنهُ قَالَ: هُوَ الْمقَام الَّذِي أشفع فِيهِ لأمتي
-‘‘ইমাম আহমদ, তিরমিযি ‘হাসান’ সনদে, ইবনে জারীর, ইবনে আবি হাতেম, ইবনে মারদাওয়াই, বায়হাকী তার দালায়েলুন নবুয়তে বর্ণনা করেন হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এ মাকামে মাহমুদ হল উম্মতকে সুপারিশ করার স্থান, যেখান থেকে তাদের সুপারিশ করবো।’’ (ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসুর, ৫/৩২৪ পৃ.)
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وَأخرج ابْن مرْدَوَيْه عَن سعد بن أبي وَقاص رَضِي الله عَنهُ قَالَ: سُئِلَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم عَن الْمقَام الْمَحْمُود فَقَالَ: هُوَ الشَّفَاعَة
-‘‘ইমাম ইবনে মারদাওয়াই (رحمة الله) সা‘দ বিন আবি আক্কাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) কে মাকামে মাহমুদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, সেটি হচ্ছে আমার শাফায়াত করার অধিকার।’’ (ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসুর, ৫/৩২৫ পৃ.)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
হুযুর পূর নূর (ﷺ)’র আকিদা:
ইমাম বুখারী (رحمة الله) ছহিহ বুখারী শরীফে শাফায়াতের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-
ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ: {عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا} [الإسراء: ৭৯] قَالَ: وَهَذَا المَقَامُ المَحْمُودُ الَّذِي وُعِدَهُ نَبِيُّكُمْ ﷺ
-“অত:পর রাসূল (ﷺ) উক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন, আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাদের নবীর সাথে যার অঙ্গীকার করেছেন।’’ ➥76
৭৬.
ক. সহীহ বুখারী, ৯/১৩১ পৃ. হা/৭৪৪০।
খ. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৫৪৬ পৃ. (ভারতীয় ৪৮৯ পৃষ্ঠা), হা/৫৫৭২।
গ. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত, দশম খণ্ড, ২৮২ পৃষ্ঠা।
ঘ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশয়াতুল লুমআত, তৃতীয় খণ্ড, ৩৮৭ পৃষ্ঠা।
ইমাম নাসাফী, সুয়ুতি এবং ইমাম কুরতুবী (رحمة الله)’র আকিদা:
মহান আল্লাহর বাণী-
وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى
-“অচিরেই আপনার রব আপনাকে এতো দান করবেন যে, আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।” (সূরা দ্বোহা, আয়াত নং-৫)
উপর্যুক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন,
لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ : إِذًا وَاللَّهِ لَا أَرْضَى وَوَاحِدٌ مِنْ أُمَّتِي فِي النَّارِ
-‘‘এই আয়াত যখন নাযিল হয়, রাসূল করিম (ﷺ) তখন বলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হবো না, যতক্ষণ না আমার একজন উম্মতও জাহান্নামে থাকবে।’’ ➥77
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭৭.
ক. ইমাম কুরতুবী, তাফসীরে কুরতুবী, ২০তম খণ্ড, ৯৬ পৃষ্ঠা
খ. ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারেক, ৩/৬৫৪ পৃষ্ঠা
গ. ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুররে মানসুর, ষষ্ঠ খণ্ড, ৩৬১ পৃষ্ঠা
ঘ. শাহ আব্দুল আযিয মুহাদ্দেসে দেহলভী, তাফসীরে আযিযি, চতুর্থ খণ্ড, ২১৮ পৃষ্ঠা
ঙ. ইমাম ছালাভী, তাফসিরে ছালাভী, ১০/২২৫ পৃ.
চ. ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে জালালাইন, ৮১২ পৃ. সূরা দ্বোহা
ছ. কাযি সানাউল্লাহ পানিপথি, তাফসিরে মাযহারী, ১০/১০ পৃ. সূরা দ্বোহা
❏ তবে ইমাম নিশাপুরী (رحمة الله) এবং ইমাম ওয়াহেদী (رحمة الله) এভাবে সংকলন করেন-
عن علي رضي الله عنه أنه قال: قال صلى الله عليه وسلم إذن لا أرضى وواحد من أمتي في النار
-‘‘হযরত আলী (رحمة الله) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার একটা উম্মতও জাহান্নামে থাকলে আমি সন্তুষ্ট হবে না।’’
(নিযামুদ্দীন নিশাপুরী, তাফসিরে নিশাপুরী, ৬/৫১৬ পৃ., ইমাম ওয়াহেদী, তাফসিরে ওয়াহেদী, ১/১২১০ পৃ.)
❏ ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) এভাবে উল্লেখ করেন-
يُرْوَى أَنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ قَالَ: إِذًا لَا أَرْضَى وَوَاحِدٌ مِنْ أُمَّتِي فِي النَّارِ
-‘‘যখন মহান রবের এ বাণী নাযিল হল তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, আমার একটা উম্মত জাহান্নামে থাকলে আমি সন্তুষ্ট হবে না।’’ (ইমাম রাযী, তাফসিরে কাবীর, ৩১/১৯৪ পৃ.)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র আকিদা:
ইমামুল মুফাসসিরিন আলা উদ্দিন আবী বিন মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম বাগদাদী (رحمة الله) স্বীয় তাফসীরে খাযেনে মহান আল্লাহর বাণী-
وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى
-“অচিরেই আপনার রব আপনাকে এতো দান করবেন যে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।” (সূরা দ্বোহা, আয়াত নং-৫)
এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ➥78 বলেন-
هُوَ الشَّفَاعَةُ فِي أُمَّتِهِ حَتَّى يَرْضَى
-‘‘এই দান দ্বারা উদ্দেশ্য হল উম্মতের জন্য সুপারিশ করা যতক্ষণ না তিনি সন্তুষ্ট হন।’’ ➥79
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭৮.
ইমাম ইবনে জারীর তবারী (رحمة الله) উক্ত সাহাবী থেকে এভাবে উল্লেখ করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَوْلُهُ: {عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ، رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا} [الإسراء: ৭৯] قَالَ: الْمَقَامُ الْمَحْمُودُ: مَقَامُ الشَّفَاعَةِ
-‘‘রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি (মাকামে মাহমুদ) সম্পর্কে বলেন, মাকামে মাহমুদ হলো মাকামে শাফায়াত তথা শাফায়াত করার ক্ষমতা লাভ।’’
(ইমাম তবারী, তাফসিরে তবারী, ১৫/৪৪ পৃ. ইমাম সুয়ূতি,. তাফসিরে দুররুল মানসুর, ৫/৩২৪ পৃ.)
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৭৯.
[ইমাম খাযেন, তাফসীরে খাযেন, ৪/৪৩৮ পৃ., ইমাম ওয়াহেদী, তাফসিরে ওয়াহেদী, ৪/৪১০ পৃ., ইমাম বাগভী, তাফসীরে মাআলিমুত তানযিল, ৫/২৬৭ পৃ.]
❏ তবে ইমাম বাগভী এভাবে উল্লেখ করেছেন-
قَالَ عَطَاءٌ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: هُوَ الشَّفَاعَةُ فِي أُمَّتِهِ حَتَّى يَرْضَى، وَهُوَ قَوْلُ عَلَيٍّ وَالْحَسَنِ.
-‘‘তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি (মাকামে মাহমুদ) সম্পর্কে বলেন, সেটি হচ্ছে শাফায়াত, তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি তাঁর উম্মতকে শাফায়াত করে জান্নাতে পৌঁছাতে পারবেন। এমনটি হযরত মাওলা আলী (رضي الله عنه) এবং ইমাম হাসান বসরী (رحمة الله) বক্তব্যও।’’ (ইমাম বাগভী, তাফসীরে মাআলিমুত তানযিল, ৫/২৬৭ পৃ.)
❏ ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله) তাঁর তাফসিরে লিখেন-
قال عليّ والحسن: هو الشفاعة في أمته حتى يرضى.
-‘‘হযরত মাওলা আলী (رضي الله عنه) এবং ইমাম হাসান বসরী (رحمة الله) বলেন, (মাকামে মাহমুদ) সেটি হচ্ছে শাফায়াত, তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি তাঁর উম্মতকে শাফায়াত করে জান্নাতে পৌঁছাতে পারবেন।’’ (ইমাম ইবনে জাওযী, তাফসিরে যাদুল মাইসির ফি উলূমিত তাফসির, ৪/৪৫৭ পৃ.)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
শাফায়াতের কান্ডার রাসূলে কারিম (ﷺ)’র আক্বিদা:
হযরত আউফ বিন মালেক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
أَتَانِي آتٍ مِنْ عِنْدِ رَبِّي فَخَيَّرَنِي بَيْنَ أَنْ يُدْخِلَ نِصْفَ أُمَّتِي الْجَنَّةَ وَبَيْنَ الشَّفَاعَةِ فَاخْتَرْتُ الشَّفَاعَةَ وَهِيَ لِمَنْ مَاتَ لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا
-‘‘আমার রবের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তি এসে আমাকে আমার উম্মতের অর্ধেক জান্নাতে প্রবেশ করা এবং সুপারিশের মধ্যে ইখতিয়ার প্রদান করে। তখন আমি সুপারিশের ইখতিয়ারই নিয়েছি। আর তা হল এমন ব্যক্তির জন্য যে মুশরিক হয়ে মৃত্যুবরণ করেনি।’’ ➥80
৮০.
ক. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৪৯৪ পৃষ্ঠা), ৩/১৫৫৮ পৃ. হা/৫৬০০
খ. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৪/২০৭ পৃষ্ঠা, হা/২৪৪১
গ. ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ১/১৪৪৪ পৃষ্ঠা, হা/৪৩১৭
ঘ. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশআতুল লুমআত, চতুর্থ খণ্ড, ৪ পৃষ্ঠা
ঙ. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত শরীফ, দশম খণ্ড, ৩১০ পৃষ্ঠা,
চ. ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, প্রথম খণ্ড, ৬০ পৃষ্ঠা, হা/৩৬
ছ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩৯/৩৯৯ পৃ. হা/২৩৯৭৭
জ. ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, হা/২১১
ঝ. ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/৩২০ পৃ. হা/৩১৭৫১
হযরত আলী মুরতাদা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
সায়্যিদুনা আলী মুরতাদা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
عَنْ عَلِيٍّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَشْفَعُ لِأُمَّتِي حَتَّى يُنَادِيَنِي رَبِّي: أَرْضِيتَ يَا مُحَمَّدُ؟ فَأَقُولُ: نَعَمْ يَا رَبِّ رَضِيتُ
-‘‘আমি আমার উম্মতের সুপারিশ করতে থাকব, এই পর্যন্ত যে, আমার রব আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন, হে হাবীব (ﷺ)! আপনি কী সন্তুষ্ট হয়েছেন? তখন আমি বলব, হ্যাঁ, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি।’’ ➥81
৮১.
ক. ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুররে মনসুর, অষ্টম খণ্ড, ৫৪৩ পৃষ্ঠা,
খ. ইমাম কুরতুবী, তাফসীরে কুরতুবী, ২০তম খণ্ড ৯৬ পৃষ্ঠা,
গ. ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তৃতীয় খণ্ড, ৪৫৫ পৃষ্ঠা
ঘ. শাওকানী, তাফসিরে ফতহুল কাদীর, ৫/৫৬০ পৃ.
সায়্যিদুনা হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা (رضي الله عنه)’র বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,
لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ، فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ، وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَهِيَ نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لَا يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا
-‘‘প্রত্যেক নবীরই একটি দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক নবীই তাদের সেই দোয়া করেছেন আর আমি আমার দোয়াটি কিয়ামত দিবসে করবো। তা হল উম্মতের জন্য সুপারিশ। আর তা করা হবে এমন ব্যক্তির জন্য যে মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরন করেনি।’’ ➥82
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৮২.
ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/১৮৯ পৃ. হা/১৯৯, পরিচ্ছেদ: بَابُ اخْتِبَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعْوَةَ الشَّفَاعَةِ لِأُمَّتِهِ , ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ২/১৪৪০ পৃষ্ঠা, হা/৪৩০৭, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ১৯৪ পৃষ্ঠা) ২/৬৯১ পৃ. হা/২২২৩, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশয়াতুল লুমআত ফার্সী, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৬৮ পৃষ্ঠা, মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত শরীফ, পঞ্চম খণ্ড, ৩৩ পৃষ্ঠা, ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, দ্বিতীয় খণ্ড, ১১৩ পৃষ্ঠা, ইবনে হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী ১১তম খণ্ড, ৯৬ পৃষ্ঠা, আইনী, উমদাতুল কারী, ২২ খণ্ড, ২৭৬ পৃষ্ঠা, ইমাম কাস্তালানী, ইরশাদুশ শারী, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদারেক, প্রথম খণ্ড, ৬৮ পৃষ্ঠা, হা/, ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৫/৪৭২ পৃষ্ঠা, হা/৩৬০২, ইমাম সুয়ূতি, জামেউস ছগীর, প্রথম খণ্ড, ৯৭ পৃষ্ঠা, ইবনে কাসীর, আল-বেদায়া ওয়ান নিহায়া, দ্বিতীয় খণ্ড, ২০৮ পৃষ্ঠা, ইমাম দারেমী, আস-সুনান, ৩/১৮৫০ পৃ. হা/২৮৪৭, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৩/১৪০ পৃ. হা/৭৭১৪, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৮/৩২ পৃ. হা/১৫৮৩৭, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/৭ পৃ. হা/১২৩৭, মুসনাদে বায্যার, ১৪/৩৫৮ পৃ. হা/৮০৫৯,
❏ ইমাম বায্যার (رحمة الله) হাদিসটি এভাবে সংকলন করেন-
عَن أَنَسٍ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ دَعَا بِهَا لأُمَّتِهِ , وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নবীই একটি দোয়া উম্মতের জন্য আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে থাকে। আমি এটি আমার উম্মাতের জন্য হাশরের ময়দানে চাওয়াকেই মননীত করেছি, তা হল আমার গুনাহগার উম্মতের জন্য শাফায়াত।’’ (মুসনাদে বায্যার, ১৩/৪২৮ পৃ. হা/৭১৬৯, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/৭ পৃ. হা/১২৩৮)
❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) এভাবে সংকলন করেছেন-
عَنْ أَنَسٍ ؓ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: كُلُّ نَبِيٍّ سَأَلَ سُؤْلًا أَوْ قَالَ: لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ قَدْ دَعَا بِهَا فَاسْتُجِيبَ، فَجَعَلْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ القِيَامَةِ
-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক নবীরই একটি প্রার্থনা অথবা দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক নবীই তাদের সেই দোয়া করেছেন, আর আমি আমার দোয়াটি কিয়ামত দিবসে করবো। তা হল উম্মতের জন্য সুপারিশ।’’ (ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৮/৬৭ পৃ. হা/৬৩০৫)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
হযরত উবাই বিন কাব (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত উবাই বিন কাব (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، كُنْتُ إِمَامَ النَّبِيِّينَ وَخَطِيبَهُمْ وَصَاحِبَ شَفَاعَتِهِمْ، غَيْرَ فَخْرٍ
-‘‘কিয়ামত দিবসে আমি সকল নবীর ইমাম এবং খতীব হবো, আর তাদের সকলের সুপারিশের মালিক হবো, এতে কোন গর্ব বা অহংকার নেই।’’ ➥83
৮৩. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫১৪ পৃষ্ঠা), ৩/১৬০৬ পৃ. হা/৫৭৬৮, ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬/১২ পৃ. হা/৩৬১৩, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, প্রথম খণ্ড, ১/১৪৩ পৃ., হা/২৪০, এবং ৪/৮৮ পৃ. হা/৬৯৬৯, যাহাবী, তালখীস, প্রথম খণ্ড, ৭১ পৃষ্ঠা, ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ৫/৩৬৮ পৃ. হা/৪৩১৪, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩৫/২৬৯ পৃ. হা/২১২৪৫
হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه)’র হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
أَنَا أَوَّلُ النَّاسِ خُرُوجًا إِذَا بُعِثُوا وَأَنَا قَائِدُهُمْ إِذَا وَفَدُوا وَأَنَا خَطِيبُهُمْ إِذَا أَنْصَتُوا وَأَنَا مُسْتَشْفِعُهُمْ إِذَا حُبِسُوا وَأَنَا مُبَشِّرُهُمْ إِذَا أَيِسُوا الْكَرَامَةُ وَالْمَفَاتِيحُ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي وَلِوَاءُ الْحَمْدِ يَوْمَئِذٍ بِيَدِي وَأَنَا أَكْرَمُ وَلَدِ آدَمَ عَلَى رَبِّي يَطُوفُ عَلَيَّ أَلْفُ خادمٍ كأنَّهنَّ بَيْضٌ مُكْنُونٌ أَوْ لُؤْلُؤٌ مَنْثُورٌ
-‘‘মানুষ যখন কবর হতে উঠবে আমিই সর্বপ্রথম উঠবো, আমি সকলের ইমাম হবো, যখন তারা আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে। তারা যখন অনোন্যপায় হবে আমি তাদের খতীব হবো। তারা যখন ময়দানে হাশরে একত্রিত হবে আমি তাদের সুপারিশ কারী হবো, তারা যখন পেরাশান হবে আমি তাদের সুসংবাদদাতা হবো। সম্মান এবং ধনভাণ্ডারের চাবিকাঠি সেদিন আমার হাতেই হবে। আমার হাতেই থাকবে প্রশংসার পতাকা। আমার রবের নিকট আদম সন্তানাদি মধ্যে আমিই হবো সবচেয়ে সম্মানী। সহস্র খাদেম আমার চারপাশে আবর্তন করবে। তারা ডিম অথবা মনিমুক্তা দ্বারা আবৃত।’’ ৮৪
৮৪. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫১৪ পৃষ্ঠা), ৩/১৬০৫ পৃ. হা/৫৭৬৫, ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬/৯ পৃ. হা/৩৬১০, তিনি বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’, মুসনাদে বায্যার, ১৩/১৩১ পৃ. হা/৬৫২৩, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৮/৫২৭ পৃ. হা/৬৩২৬, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, হা/৩২০৪৫
সায়্যিদুনা আবু হোরাইরা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত সায়্যিদুনা আবু হোরাইরা (رضي الله عنه)’র হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ
-‘‘কিয়ামতের দিন আমিই হবো সমস্ত আদম সন্তানের সর্দার, সর্বপ্রথম আমিই কবর থেকে উঠব, সর্বপ্রথম আমিই সুপারিশ করবো এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে।’’ ৮৫
৮৫. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫১১ পৃষ্ঠা), ৩/১৬০০ পৃ. হা/৫৭৪১, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৪৫ পৃষ্ঠা, ৪/১৭৮২ পৃ. হা/২২৭৮, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৪/২১৮ পৃ. হা/৪৬৭৩
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত সায়্যিদুনা জাবের (رضي الله عنه) হতে ৮৬ বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
أَنَا قَائِدُ الْمُرْسَلِينَ وَلَا فَخْرَ، وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَلَا فَخْرَ، وَأَنَا أَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍ وَلَا فَخْرَ
-‘‘আমি সমস্ত রাসূলদের সর্দার, এতে কোন অহংকার নেই, আমি সর্বশেষ নবী এতে কোন গর্ব নেই এবং আমি সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে এতেও কোন অহংকার নেই।’’ ৮৭
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
৮৬.
❏ উক্ত সাহাবী থেকে আরেকটি বর্ণনা এভাবে এসেছে-
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ؓ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةَ وَالفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ القِيَامَةِ
-‘‘হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনবে অত:পর
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةَ وَالفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ
এ দোয়া পাঠ করবে তার জন্য আমার শাফায়াত বৈধ হয়ে গেল।’’ (ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/১২৬ পৃ. হা/৬১৪, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, হা/৪২০)
৮৭.
খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫১৪ পৃষ্ঠা), ৩/১৬০৫ পৃ. হা/৫৭৬৪, সুনানে দারেমী, ১/১৯৬ পৃষ্ঠা, হা/৫০, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ১/৬১ পৃ. হা/১৭০
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه)’র আকিদা:
রাসূলে কারিম (ﷺ)’র প্রিয় সাহাবা হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন যখন সকল মানুষ একত্রিত হবে তখন তারা আফসোস করে বলবে,
لَوِ اسْتَشْفَعْنَا إِلَى رَبِّنَا حَتَّى يُرِيحَنَا مِنْ مَكَانِنَا هَذَا
-‘‘হায়! আমাদের রবের নিকট যদি কোন সুপারিশকারী পেতাম, তবে তিনি আমাদের মুক্তি দিতেন।’’
তখন সবাই একত্রে হযরত আদম (عليه السلام)’র কাছে গিয়ে আবেদন জানাবে। আপনি কি মানুষের অবস্থা দেখছেন না? আল্লাহ তা‘য়ালা আপনাকে তাঁর কুদরতি হাতে সৃষ্টি করেছেন, সমস্ত ফেরেশতা আপনাকে সিজদা করেছেন, আপনাকে সব কিছুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন।
اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّنَا حَتَّى يُرِيحَنَا مِنْ مَكَانِنَا هَذَا
-‘‘সুতরাং আপনি আমাদের রবের নিকট সুপারিশ করুন। যাতে এই স্থান হতে আমরা মুক্তি পাই।’’ প্রত্যুত্তরে হযরত আদম (عليه السلام) বললেন,
لَسْتُ هُنَاكَ
-‘‘এটা আমার কাজ নয়।’’
এরপর এক পর্যায়ে তিনি বলেন-
ائْتُوا نُوحًا، فَإِنَّهُ أَوَّلُ رَسُولٍ بَعَثَهُ اللَّهُ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ
-‘‘বরং তোমরা হযরত নূহ (عليه السلام)’র কাছে যাও, কেননা পৃথিবীতে তাকেই মহান আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন।’’
তারা হযরত নূহ (عليه السلام)’র কাছে গেলে তিনি বলবেন,
لَسْتُ هُنَاكُمْ
-‘‘এটা আমার কাজ নয়।’’
তিনি তখন এক পর্যায়ে বলবেন-
ائْتُوا إِبْرَاهِيمَ خَلِيلَ الرَّحْمَنِ
-‘‘তোমরা বরং হযরত ইব্রাহিম (عليه السلام)’র কাছে যাও। তিনি মহান আল্লাহর পরম বন্ধু।’’
তারা হযরত ইবরাহীম (عليه السلام)’র কাছে যাবে। ইবরাহীম (عليه السلام) বলবেন,
لَسْتُ هُنَاكُمْ
-‘‘এটা আমার কাজ নয়।’’ এক পর্যায়ে তিনি বলবেন-
ائْتُوا مُوسَى، عَبْدًا آتَاهُ اللَّهُ التَّوْرَاةَ، وَكَلَّمَهُ تَكْلِيمًا
-‘‘তোমরা বরং হযরত মূসা (عليه السلام)’র কাছে যাও। আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে তাওরাত কিতাব দান করেছেন এবং তাঁর সাথে কথা বলেছেন।’’
তারা হযরত মূসা (عليه السلام)’র কাছে আসবে। হযরত মূসা (عليه السلام) বলবেন,
لَسْتُ هُنَاكُمْ
-‘‘এটা আমার কাজ নয়।’’ এক পর্যায়ে তিনি বলবেন-
ائْتُوا عِيسَى عَبْدَ اللَّهِ وَرَسُولَهُ، وَكَلِمَتَهُ وَرُوحَهُ
-‘‘তোমরা হযরত ঈসা (عليه السلام)’র কাছে যাও। তিনি আল্লাহর খাছ বান্দা। তাঁর রাসূল, তাঁর কালমা এবং রুহ।’’
তারা হযরত ঈসা (عليه السلام)’র কাছে আসবে। হযরত ঈসা (عليه السلام) বলবেন-
لَسْتُ هُنَاكُمْ
-‘‘এটা আমার কাজ নয়।’’ এক পর্যায়ে তিনি বলবেন-
وَلَكِنِ ائْتُوا مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَبْدًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبهِ وَمَا تَأَخَّرَ
-‘‘তোমরা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ)’র কাছে যাও। তিনি আল্লাহর প্রিয় বান্দা, তাঁর কারণে আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর (উম্মতের) পূর্বের এবং পরের সকলের গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন।’’
রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন, তারা সকলে আমার কাছে আসবে।
فَأَنْطَلِقُ، فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي، فَيُؤْذَنُ لِي عَلَيْهِ
-‘‘আমি তাদেরকে নিয়ে যাবো এবং আমার রবের নিকট অনুমতি চাইবো, আমাকে অনুমতি দেয়া হবে।’’
আর আল্লাহর সাক্ষাতের সাথে সাথে আমি সিজদা করবো। তখন আল্লাহ বলবেন,
ارْفَعْ مُحَمَّدُ وَقُلْ يُسْمَعْ، وَسَلْ تُعْطَهْ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ
-‘‘আপনার মাথা মুবারক তুলুন। আপনি বলুন শ্রবণ করা হবে। আপনি চান দেয়া হবে এবং আপনি সুপারিশ করুন সুপারিশ কবুল করা হবে।’’
সরওয়ারে আলম (ﷺ) বলেন, যে ঈমান আনবে এবং তার অন্তরে গমের দানা পরিমাণ নেক আমল থাকবে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। যে ঈমান আনবে তাঁর অন্তরে গুন্দম পরিমান ভাল আমল থাকবে তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করা হবে এবং যে ঈমান আনবে তার অন্তরে জররা পরিমাণ নেক আমল থাকবে। ৮৮
৮৮. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৯/১২১ পৃ. হা/৭৪১০, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৪৮৮ পৃষ্ঠা), ৩/১৫৪৬ পৃ. হা/৫৫৭২, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, হা/১২১৫৩, বায়হাকী, কিতাবুল আসমাওয়া সিফাত, ১৪৬ পৃষ্ঠা, ইবনে কাসীর, আল-বেদায়া ওয়ান নিহায়া, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৮৮ পৃ., নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ১০/২১৩ পৃ. হা/১১৩৬৯, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, হা/২৮৯৯, সহীহ মুসলিম, হা/১৯৩