৩২. ওসীয়ত ও ফরায়েয অধ্যায়, 


বাব নং ২৩১. ১.


৩২- كِتَابُ الْوَصَايَا وَالْفَرَائِضِ

১- بَابٌ

٥١٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ ، قَالَ: دَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ  يَعُوْدُنِيْ فِيْ مَرَضِيْ، قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أُوْصِيْ بِمَالِيْ كُلِّهِ؟ قَالَ : لَا، قُلْتُ: فَنِصْفُهُ؟ قَالَ : لَا، قُلْتُ: فَثُلُثُهُ؟ قَالَ : وَالثُّلُثُ كَثِيْرٌ، لَا تَدَعْ أَهْلَكَ يَتَكَفَّفُوْنَ النَّاسَ.

وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  دَخَلَ عَلَىٰ سَعْدٍ يَعُوْدُهُ، قَالَ : أَوْصَيْتَ؟ قَالَ: نَعَمْ، أَوْصَيْتُ بِمَالِيْ كُلِّهِ، فَلَـمْ يَزَلْ رَسُوْلُ اللهِ  يُنَاقِصُهُ، حَتَّىٰ قَالَ : الثُّلُثُ وَالثُّلُثُ كَثِيْرٌ.

وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنْ سَعْدٍ، قَالَ: دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ  يَعُوْدُنِيْ، فَقُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! أُوْصِيْ بِمَالِيْ كُلِّهِ؟ قَالَ : لَا، قُلْتُ: فَبِالنِّصْفِ؟ قَالَ : لَا، قُلْتُ: فَبِالثُّلُثِ؟ قَالَ : فَبِالثُّلُثِ وَالثُّلُثُ كَثِيْرٌ، إِنْ تَدَعْ أَهْلَكَ بِخَيْرٍ، خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَدَعَهُمْ عَالَةً، وَيَتَكَفَّفُوْنَ النَّاسَ.


৫১৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  আমার অসুস্থতার সময় আমাকে দেখতে আসেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার সমস্ত সম্পদ ওসীয়ত করতে চাই। তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে এর অর্ধেক, তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে এর এক তৃতীয়াংশ। তিনি বললেন, এক তৃতীয়াংশও বেশী। তুমি তোমার পরিবার বর্গকে এমন অবস্থায় রেখে যেওনা, যাতে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়।


অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূল (ﷺ)  হযরত সা’দ (رضي الله عنه)’র সেবার উদ্দেশ্য তার নিকট আগমন করেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি ওসীয়ত করেছ? উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আমি আমার সমস্ত সম্পদ ওসীয়ত করেছি। রাসূল (ﷺ)  এর পরিমাণ হ্রাস করতে থাকেন। অবশেষে সা’দ এক তৃতীয়াংশ এর কথা বললে তিনি বলেন, এক তৃতীয়াংশও অধিক।


অপর বর্ণনায় আতা তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে, তিনি সা’দ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  আমার সেবার জন্য আমার নিকট আগমন করেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার সম্পূর্ণ সম্পদ ওসীয়ত করে যাচ্ছি। তিনি বললেন না, আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক। তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে এক তৃতীয়াংশ। তিনি বললেন, এক তৃতীয়াংশ এটাও অধিক। কেননা তুমি তোমার পরিবারকে দরিদ্র অবস্থায় মানুষের কাছে সাহায্য প্রার্থনাকারী হিসেবে রেখে যাওয়ার চেয়ে সম্পদশালী রেখে যাওয়া অনেক উত্তম। 

(সুনানে নাসাঈ কুবরা, ৪/১০৩/৬৪৫৫)


ব্যাখ্যা: ওসীয়ত মোট সম্পদের এক তৃতীয়াংশের বেশী করা জায়েয নয়। কারণ পরিবার বর্গকে নিঃস্ব করে ফকীর বানিয়ে সম্পূর্ণ সম্পদ অন্যদেরকে ওসীয়ত করে দিয়ে দেওয়া পরিবার বর্গের উপর যুলুমের নামান্তর।

আল্লামা আইনী (رحمة الله) উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, আবু আমর (رحمة الله) বলেন, সকল জ্ঞানীগণ একমত যে, উক্ত হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ। আর জমহুর ফোকাহাগণ এ হাদিসকে ওসীয়তের পরিমাণের জন্য মূলভিত্তি বলে স্বীকার করেছেন। সবাই একমত যে, ওসীয়ত যেন এক তৃতীয়াংশের অতিক্রম না করে। বরং মুস্তাহাব হলো এর কম করা।  ২২৬

➥ আল্লামা বদর উদ্দিন আইনী (رحمة الله), ৮৫৫ হিঃ, উমদাতুল ক্বারী, খন্ড ৮, পৃ: ৯০, মিশর


٥١٦- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  قَالَ : لَا يَرِثُ الْـمُسْلِمُ النَّصْرَانِيَّ، إِلَّا أَنْ يَكُوْنَ عَبْدَهُ أَوْ أَمَتَهُ.


৫১৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু যুবাইর থেকে, তিনি জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, একজন মুসলমান কোন নাসারা বা খ্রিস্টানের উত্তরাধিকার হতে পারে না। তবে যদি খ্রিস্টান মুসলমানের গোলাম বা দাসী হয় তখন পারবে। 

(প্রাগুক্ত, ৪/৮৩/৬৩৮৯)


٥١٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ طَاوُسٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : أَلْـحِقُوا الْفَرَائِضَ بِأَهْلِهَا، فَمَا بَقِيَ فَهُوَ لِأَوْلَىٰ رَجُلٍ ذَكَرٍ.


৫১৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা তাউস থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, তোমরা ফরয অংশ এর হকদারকে প্রদান কর আর যা অতিরিক্ত থাকে তা নিকট আত্মীয়কে (আসাবা হিসেবে, প্রাপ্ত বয়স্ক হোক বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হোক) দিয়ে দাও। 

(বুখারী, ৬/২৪৭৬/৬৩৫১)


ব্যাখ্যা: আসহাবুল ফুরুয ঐ সমস্ত নিকট আত্মীয়কে বলা হয়, যাদের অংশ নির্ধারিত এবং কুরআন-হাদিসে যাদের কথা উলে­খ করা হয়েছে। এদের অংশ হলো ৬টি: ২/১, ৪/১ , ৮/১ , ৩/২ , ৩/১, এবং ৬/১ । এগুলোর হকদার হলো, মা, বাবা, স্বামী, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, ভাই, বোন। এরা সংখ্যায় বারজন। চারজন পুরুষ এবং আটজন নারী। এর থেকে উদ্ধৃত্ত অংশ আসাবাগণ পেয়ে থাকে। 


٥١٨- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـحَكَمِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَدَّادٍ: أَنَّ ابْنَةً لِـحَمْزَةَ أَعْتَقَتْ مَمْلُوْكًا، فَمَاتَ، فَتَرَكَ ابْنَةً، فَأَعْطَى النَّبِيُّ  الْاِبْنَةَ النِّصْفَ، وَأَعْطَى ابْنَةَ حَمْزَةَ النِّصْفَ.


৫১৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাকাম থেকে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ থেকে বর্ণনা করেন, হযরত হামযা (رضي الله عنه)’র কন্যা একটি গোলাম আযাদ করেন। অতঃপর গোলাম মৃত্যুবরণ করে এবং একটি কন্যা সন্তান সে রেখে যায়। তখন নবী করিম (ﷺ)  ঐ কন্যাকে তার সম্পত্তির অর্ধেক প্রদান করেন আর বাকী অর্ধেক হামযা (رضي الله عنه)’র কন্যাকে প্রদান করেন। 

(আল মু’জামুল কবীর, ২৪/৩৫৫/৮৮০)


٥١٩- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـهَيْثَمِ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ مَسْرُوْقٍ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ: لَـمَّا نَزَلَتْ: [إِنَّ الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ أَمْوَالَ الْيَتَامَىٰ ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيْرًا] {النساء: ১০} عَدَلَ مَنْ كَانَ يَعُوْلُ أَمْوَالَ الْيَتَامَىٰ، فَلَـمْ يَقْرَبُوْهَا وَشَقَّ عَلَيْهِمْ حِفْظُهَا، وَخَافُوا الْإِثْمَ عَلَى انْفُسِهِمْ، فَنَزَلَتِ الْآيَةُ، فَخَفَّفَ عَلَيْهِمْ: [وَيَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْيَتَامَىٰ قُلْ إِصْلاحٌ لَـهُمْ خَيْرٌ وَإِنْ تُخَالِطُوْهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ] {البقرة: ২২০} الْآيَةُ.


৫১৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হায়শাম থেকে, তিনি শা’বী থেকে, তিনি মাসরূক থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হলো,ان الذين يأكلون اموال اليتامى الخ “যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করে, তারা যেন তাদের পেটে অগ্নি ভক্ষণ করল এবং তারা অচিরেই দোযখে প্রবেশ করবে”। তখন যারা ইয়াতীমের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করে তারা ঐ সমস্ত সম্পদ থেকে দূরে থাকে। তখন এ সম্পদ সংরক্ষণ তাদের উপর কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ তারা এ ব্যাপারে নিজে পাপে লিপ্ত হওয়ার আশংকা করে। তখন আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাযিল করেন,

ويسئلونك عن اليتامى قل اصلاح لهم خير وان تخالطوهم الخ

“তারা আপনার কাছে ইয়াতীমদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি তাদেরকে বলুন, তাদের জন্য মীমাংসা করাই হলো উত্তম। যদি তাদের ব্যয়ভার নিজেদের সাথে মিশিয়ে নাও, তবে তারা তোমাদের ভাই”। 

(সূরা বাকারা, আয়াত, ২২০), (আল মুস্তাদরাক, ২/১১৩/২৪৯৯)


ব্যাখ্যা: ولاتقربوا مال اليتامى الخ আয়াত যখন নাযিল হয়, তখন ইয়াতীমের অভিভাবকগণ তাদের পানাহার ইয়াতীমদের থেকে পৃথক করে ফেলে। তখন ইয়াতীমদের খাদ্যদ্রব্য অতিরিক্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে লাগল। এ সংবাদ যখন রাসূল (ﷺ)  এর নিকট পৌঁছে তখন ويسئلونك عن اليتامى الخ আয়াত নাযিল হয়।


٥٢٠- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْـمُنْكَدِرِ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : لَا يُتْمَ بَعْدَ الْـحُلُمِ.


৫২০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির থেকে, তিনি আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, বালেগ হওয়ার পর কেউ ইয়াতীম থাকে না। 

(ইত্তেহাফ, ৩/১৬২/২৪৪৩)


Top