বিষয় নং-১৩: ইকামত প্রক্কালে সালাতের জন্য উঠার সময়:
উক্ত নিম্নের হাদিস প্রসঙ্গে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখেন, “হাইসামী, যাহাবী, সুয়ূতি, মুনাবী (رحمة الله) প্রমুখ মুহাদ্দিস উল্লেখ করেছেন যে, হাদিসটির সনদ অত্যন্ত দ্বঈফ।” ৫৩
➥৫৩. ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর : ফিকহুস-সুনানিল ওয়াল আছার (অনুবাদ): ১/১৫৮ পৃঃ হা/৩৮৬, হাশিয়া: ৬৩
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উক্ত ইমামগণ তাদের কোন গ্রন্থে বা অত্যন্ত র্দুবল বলেছেন তা কিন্তু তিনি উল্লেখ করেন নি।
ইমাম বায্যার (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى ؓ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ - إِذَا قَالَ بِلَالٌ: قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ نَهَضَ فَكَبَّرَ.-
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আউফা (رضي الله عنه) বলেন, হযরত বেলাল যখন “ক্বাদ কামাতিস সালাহ’ বলতেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুসল্লায় উঠে দাঁড়িয়ে অতঃপর তাকবীরে তাহরীমা বলতেন।’’ ৫৪
➥৫৪.
(১) ইমাম বায্যার : আল-মুসনাদ : ৮/২৯৮ পৃঃ হা/৩৩৭১
(২) ইমাম সুয়ূতি, জামিউস-সগীর : ২/৫০২ পৃঃ হা/৬৭৬২
(৩) মুফতি আমিমুল ইহসান : ফিক্হুস সুনানি ওয়াল আছার : ১/১৫৮ পৃঃ হা/৩৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ
(৪) ইমাম মানাবী : ফয়যুল কাদীর : ৩/২৮২ পৃঃ হা/৬৭৬২
(৫) মুফতি শফি : জাওয়াহিরুল ফিক্হ : ১/৩১৩ পৃঃ মাকতাবায়ে দারুল উলূম, করাচী,
(৬) ইমাম ইবনে আদি : আল-কামিল : ২/৬৫০ পৃঃ দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত
(৭) ইমাম বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা : ২/৩৫ পৃঃ হা/২২৯৭, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত
(৮) মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী : এ’লাউস সুনান : ৪/২১২ পৃঃ
(৯) আল্লামা হায়সামী : মাযমাউদ-যাওয়াইদ : ২/১০৩ পৃঃ
(১০) আহলে হাদিস আলবানী : সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ : হা/৪২১০
(১১) ইমাম যাহাবী : মিযানুল ই’তিদাল : ১/৪৬১ পৃঃ রাবী : ১৯৬৮, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন,
(১২) আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী : লিসানুল মিযান : ২/১৭৯ পৃঃ
সনদ পর্যালোচনা:
সনদ পর্যালোচনা : অনেকে এই সনদের রাবী ‘হাজ্জাজ বিন ফুররুখ’ কে নিয়ে আপত্তি তুলতে পারেন। তার জবাবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেছেন-
وذَكَره ابن حِبَّان في الثقات
-‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় তাকে স্থান দিয়েছেন।’’ ৫৫
➥৫৫. ইমাম ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ২/৫৬৪ পৃঃ ক্রমিক- ২১৫৩, ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস-সিকাত, ৬/২০৩ পৃঃ ক্রমিক- ৭৩৭৫
তবে কয়েকজন সাধারণ যঈফ বলেছেন এবং আবু হাতেম তাকে মাজহুল বলেছেন। আমার মনে হয় , তিনি যে কোন কারণ বশত সম্পূর্ণ পরিচয় না জেনেই এমনটিই বলেছেন। ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) অনেক বুখারী মুসলিমের রাবীকে কায্যাব বলে মত প্রকাশ করেছেন তাই তার অভিমত যাচাই বাছাই ছাড়া গ্রহণযোগ্য নয়। তাই একাধিক মত থাকায় হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের। আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী তাই বলেছেন। ৫৬
➥৫৬. আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী, এ’লাউস-সুনান : ৪/২১২ পৃঃ
তাই দেওবন্দের শাইখুল হাদিস জাফর আহমদ উসমানী লিখেন-
قلت ذكر ابن حبان فى الثقات كما السان (২/১৭৯) فهو حسن الحديث.
-‘‘আমি বলি ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন, আর তা ইবনে হাজার তার লিসানুল মিযান গ্রন্থের ২/১৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। তাই হাদিসটি “হাসান” পর্যায়ের। ৫৭
➥৫৭. আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী : এ’লাউস-সুনান : ৪/২১২ পৃঃ করাচী হতে প্রকাশিত।
উক্ত হাদিসের সমর্থনে ইমাম আব্দুর রায্যাক (رحمة الله) আরেক “হাসান” সনদ সংকলন করেন-
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنِ ابْنِ التَّيْمِيِّ، عَنِ الصَّلْتِ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ أُمِّهِ، عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ: كَانَ فِي بَيْتِهَا فَسَمِعَ الْمُؤَذِّنَ فَقَالَ كَمَا يَقُولُ: فَلَمَّا قَالَ: حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، نَهَضَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ إِلَى الصَّلَاةِ
-‘‘হযরত উম্মে হাবীবা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) তার হুজরা মোবারকে অবস্থান করতেন। আর মুয়াজ্জিন যখন “হাইয়্যা আলাস সালাহ” বলতেন তিনি তখন নামাযের স্থানে দাঁড়িয়ে যেতেন।’’ ৫৮
➥৫৮. ইমাম আব্দুর রায্যাক : আল-মুসান্নাফ : ১/৪৮১ পৃঃ হা/১৮৫১, ইমাম তাবরানী : মু’জামুল কাবীর, ২৩/২৪৪ পৃঃ হা/৪৮৫, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ৮/৩৬২ পৃঃ হা/২৩২৭৩
সনদ পর্যালোচনা
অনেকে ছালত ইবনে দিনারকে আপত্তিকর বলে থাকেন; আমি বলবো ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেছেন-
وَعَنْهُ: الثَّوْرِيُّ، وَشُعْبَةُ، وَمُعْتَمِرٌ، وَوَكِيعٌ، وَمَكِّيُّ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَطَائِفَةٌ
-‘‘তার থেকে ইমাম সুফিয়ান সাওড়ী, শুবা ইবনে হাজ্জাজ, মু‘তামীর, ওয়াকী, মক্কী ইবনে ইবরাহিম (رحمة الله)সহ আরও একজামাত মহান ইমামগণ হাদিস গ্রহণ করেছেন।’’৫৯
➥৫৯. ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৩/৮৯৮পৃঃ ক্রমিক- ২২৯
সকল মুহাদ্দিস একমত যে ইমাম শুবা (رحمة الله) যঈফ রাবী থেকে হাদিস গ্রহণ করতেন না। বাকী যেসকল রাবী তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন তারা সকলেই সিকাহ ও সিহাহ সিত্তাহর রাবী। তারা সকলেই তাকে গ্রহণযোগ্য মনে করে হাদিস গ্রহণ করতেন। তবে দুর্বলতা তো অনেক ধরনের আছে তার দুর্বলতা তিনি হাদিসে কঠোরতা অবলম্বন করতেন না। তাই অনেকেই এই উক্তি করেছেন।
আল্লামা মুগালতাঈ (رحمة الله) লিখেন-
ولما ذكر له الحاكم حديثا في مستدركه
-‘‘ইমাম হাকেম (رحمة الله) তার মুস্তাদরাকে (সহীহ বর্ণনাকারী বলে) তার হাদিস বর্ণনা করেছেন।’’ ৬০
➥৬০. ইমাম মুগালতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৬/৩৯২পৃঃ ক্রমিক- ২৫২২
তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وقال البزار: في سننه: لين الحديث.
-‘‘ইমাম বায্যার (رحمة الله) স্বীয় সুনানে তার হাদিস নরম প্রকৃতির বলে উল্লেখ করেছেন।’’ ৬১
➥৬১. ইমাম মুগালতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৬/৩৯২পৃঃ ক্রমিক- ২৫২২
এ ধরনের শব্দ মুহাদ্দিসগণ ‘হাসান’ পর্যায়ের হাদিসের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন। ৬২
➥৬২. এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ২য় খণ্ড দেখুন।
ইমাম যাহাবী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
وقال أَبُو حَاتِمٍ: لَيِّنُ الْحَدِيثِ.
-‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় কিছুটা নরম প্রকৃতির।’’ ৬৩
➥৬৩. ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৩/৮৯৮পৃঃ ক্রমিক- ২২৯
মুহাদ্দিসগণ কিছুটার রাবীর দুর্বলতা থাকলেই এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করতেন। তাই বুঝা যায় তার হাদিস ‘হাসান’ পর্যায়ের। তবে ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় তাকে স্থান দিয়েছেন। ৬৪
➥৬৪. ইমাম ইবনে শাহীন, কিতাবুস-সিকাত, ক্রমিক- ৫৮৮
তার অভিমত ধরলে সনদটি সহীহ বলে বুঝা যায়। ইমাম মিয্যী (رحمة الله) লিখেন-
روى له التِّرْمِذِيّ وابن ماجه.
-‘‘ইমাম তিরমিযি , ইমাম ইবনে মাযাহ (رحمة الله) তার হাদিস তাদের সনদ্বয়ে গ্রহণ করেছেন।’’ ৬৫
➥৬৫. ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ১৩/২২৫ পৃঃ ক্রমিক- ২৮৯৭
তবে নরম প্রকৃতির হওয়ার কারণে কয়েকজন মুহাদ্দিস তাকে সাধারণ যঈফ বলেছেন।