বি’ছাত এবং শরীয়তের হিকমাত
এখানে ঐ কথাগুলাে আলােচনা উত্তম এবং উপকারী হবে, যা “হুকামায়ে ইসলাম” বা ইসলামের বিজ্ঞ-
আলিমগণ বলেছেন যে, “তাকলীফে হাসান” বা উত্তম-কষ্ট। এর ব্যাখ্যা হলাে : আল্লাহ তাআলা মানুষকে এরূপে পয়দা করেছেন যে, সে তার দৈনন্দিন জীবন যাপনে স্থির নয়; কেননা, তার জন্য প্রয়ােজন হয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, এছাড়া অন্যান্য উপকরণও, যেমন হস্তশিল্প, কারুশিল্প ইত্যাদি। কিন্তু এ কাজে একজন কারিগর স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং একটি জামা’আত বা গােষ্ঠীর সম্মিলিত সাধনা ও প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে তা বাস্তবায়িত হয়। আর তা এভাবে যে, প্রত্যেক সাথী অন্যের প্রয়ােজনে পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। যেমন, একব্যক্তি অন্য ব্যক্তির জন্য কাপড় সেলাই করে, আবার অপর ব্যক্তি তার জন্য সুঁচ তৈরী করে দেয়। সমস্ত কাজ কর্ম এর উপর 'কিয়াস' বা ধারণা করা যেতে পারে। কাজেই জানা গেল যে, মানুষের জীবনে দৈনন্দিন প্রয়ােজনীয় জিনিস তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই তৈরী হয়ে থাকে। সেজন্য বলা হয় : মানুষ, সামাজিক জীব। কেননা, পারস্পরিক সম্মিলিত জীবন যাপনই তাদের উন্নতির একমাত্র কারণ। আর এই সম্মিলিত জীবন ব্যবস্থা তখনই পরিপূর্ণতা লাভ করে, যখন সে সমাজে ‘আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত থাকে। কেননা, প্রত্যেক ব্যক্তি সেটাই পেতে আগ্রহী হয় যার সে মুখাপেক্ষী; আর সে তার প্রতি ক্ষুদ্ধ ও রাগান্বিত হয়, যাতে তার ক্ষতি ও লােশান হয়। আর এ কারণেই একজন অপরজনের জুলুমের শিকারে পরিণত হয়, যখন সে অন্যের হকের তােয়াক্কা করেনা; ফলে, সংঘবদ্ধ ও সম্মিলিত জীবন ব্যবস্থা পদ্ধতিতে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিগত কাজ কারবার ও লেনদেনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার প্রয়ােজন খুব বেশী, যে জন্য আইন-কানুন তৈরীর গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই নিয়ম-কানুন, শরীয়তের হুকুম-আহকাম বা বিধি বিধান। কাজেই, শরীয়তের বিধি-বিধান প্রচার ও প্রসারের জন্য ব্যাখ্যা-দাতার প্রয়ােজন। আর এ ধরনের লােকেরা, যারা শরীয়তের ব্যাখ্যা প্রদান করে, তারা যদি পরস্পর কলহে লিপ্ত হয় তবে সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রাট সৃষ্টি হয় ।
এমতাবস্থায়, শরীয়তের পূর্ণ পায়রবীকারী ব্যক্তি যে তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, অন্যদের উচিত তার ইত্তেবা’ বা অনুসরণ করা। আর এ ধরনের ব্যক্তিত্বের চেনার মাধ্যম হলাে-তারা আল্লাহর পক্ষ হতে নাযিলকৃত বিধি-বিধানের পূর্ণ অনুসারী হবে; আর এটিই মু'জিযার অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে, অধিকাংশ সাধারণ লােক শরীয়তের হুকুম আহকামকে তখন ঘৃণা বা অবজ্ঞার চোখে দেখে, যখন তার মধ্যে দুনিয়ার আপাতঃ মধুর জিনিসের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায়, সে গােনাহে লিপ্ত হয় এবং শরীয়তের বিধি বিধানের বিপরীতে কাজ করতে সাহসী হয়। বস্তুত, যখন ফরমারবরদার বান্দাদের জন্য ছওয়াব হবে এবং নাফরমানদের জন্য শাস্তি হবে, তখন আশা এবং ভয় তাকে শরীয়তের বিধান মানতে এবং গােনাহের কাজ পরিত্যাগে উদ্বুদ্ধ করবে এবং শরীয়তের এ ব্যবস্থা, সে ব্যক্তির জীবন পদ্ধতিতে, বিরাট প্রভাব ফেলবে। এর ফলশ্রুতিতে তার জন্য শরীয়তের বিধান দাতা এবং বিনিময় দানকারী তথা আল্লাহর মারিফাত বা পরিচয় লাভ করা একান্ত জরুরী। এ কারণে শরীয়তের বিধানদাতা এবং কর্মের প্রতিফল দানকারী তথা আল্লাহ তাআলার জন্য উল্লেখিত ‘ইবাদত’ ফরয করা হয়েছে এবং বার বার সে প্রসঙ্গে আলােকপাত করা হয়েছে, যাতে তা মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এমতাবস্থায় উচিত হলাে-শরীয়তের বিধি-বিধান প্রচারকারী, মানুষকে এমন ‘খালেক' বা স্রষ্টার প্রতি ঈমান আনার জন্য দাওয়াত দেবে, যাকে সে স্রষ্টার তরফ থেকে তাদের কাছে পাঠানাে হয়েছে এবং সে সত্যবাদীও। সে প্রেরিত ব্যক্তি তাদেরকে খােশ-খবর দেবে এবং ভীতি প্রদর্শন করবে, আখিরাতের ছওয়াব ও আযাবের কথা বলবে এবং ‘ইবাদাতের সাথে দণ্ডায়মান হওয়ার জন্য দাওয়াত দেবে, যাতে স্রষ্টার স্মরণ বা জিকর আন্তরিকতার সাথে করতে পারে। আর সেই 'সুন্নাত’ বা তরীকার দিকে দাওয়াত দেবে, যা লােকদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়ােজন হয়। যার ফলশ্রুতিতে মানব সমাজে ‘আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই সুন্নাতের প্রয়ােগ তিন ধরনের কাজে উপকারী হয়।
যথা :১ খাহেশাতে- নাফসানী বা প্রবৃত্তির আসক্তি থেকে মানুষ ‘রিয়াযত বা সাধনার দ্বারা মুক্ত হতে পারে। কেননা, প্রবৃত্তিপরায়ণ ব্যক্তি কখনাে আল্লাহর রহমত বা অনুগ্রহ লাভে সক্ষম হয় না।
২. এমন পবিত্র ও সমুন্নত ব্যাপার সম্পর্কে সব সময় চিন্তা-ভাবনা করা, যা জড়-জীবন তথা দুনিয়ার আবিলতা ও কলুষতা থেকে মুক্ত এবং তা মানুষকে মহান-সত্ত্বা আল্লাহর নিকটে পৌছতে সাহায্য করে;
এবং ৩, শরীয়তের বিধানদাতা-তথা আল্লাহর ভয় করা এবং নেক্কারদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা এবং বদকারদের জন্য জাহান্নামের শাস্তির কথা স্মরণ হওয়া, যা দুনিয়াতে 'আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক হয় এবং আখিরাতে পুরষ্কার বা তিরষ্কার পাওয়াকে অবশ্যম্ভাবী করে। এসব হলাে ‘হুকামায়ে ইসলাম বা ইসলামের প্রখ্যাত জ্ঞানী-গুণীদের বক্তব্য।
এর পাশাপাশি মু'তাযিলাদের বক্তব্য হলাে : ‘আদল বা জ্ঞানের দিক দিয়ে তাকলীফ’ বা কষ্ট ওয়াজিব। কেননা, তা মানুষকে অশ্লীল, অপকর্মে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত রাখে। বস্তুত, মানুষ স্বভাবগতভাবে আরামদায়ক ও উপাদেয় বস্তুকে পছন্দ করে। তাই, যখন সে জানতে পারবে যে, এসব হারাম, তখন সে তা থেকে বিরত থাকবে। আর অশ্লীল, অপকর্ম ও পাপাচার থেকে দূরে থাকা একান্ত জরুরী।
চতুর্থ কারণ হলাে :(যে কারণে কাউকে শাস্তি বা কষ্ট দেওয়া যাবে না)তাকলীফ বা কষ্ট হয়তাে কর্মের অস্তিত্বের সাথে হবে, তা অবশ্যম্ভাবী হওয়া এবং তা বাস্তবায়িত হওয়ার জন্য নির্ধারণ করাতে কোন ‘ফায়দা বা উপকার নেই; কেননা, সে সময় তা নিষ্পন্ন হওয়া বেহুদা ও ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর এ অবস্থা তখনও হবে, যখন 'তাকলীফ' বা কষ্ট কর্মের পরে হবে; কেননা এ হবে কিছু লাভের পর তাকলীফ, অথবা তাকলীফ হবে কর্মের অস্তিত্বের সঙ্গে। আর এ ধরনের তাকলীফ এমন পর্যায়ের যা বহনযােগ্য নয়। কেননা, কোন কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগে তা সংঘটিত হয়েছে, এরূপ ধারণা অবাস্তব। বস্তুত, কোন কিছুর অস্তিত্ব, তার অনস্তিত্বের মাঝে হয় না।
এর জবাব হলাে : আমাদের মতে, কুদরত বা শক্তি-সামর্থ কর্মের সাথী, আর এর তাকলীফ' এ পর্যায়ে অসম্ভব নয়। আর এটা তাে সে সময় হয়, যদি কর্ম তা সম্পন্ন হওয়ার আগে হাসিল হয়, যাতে সে নিমগ্ন থাকে। আর এটা ঐরূপ ব্যাপার নয়, বরং তা নিষ্পন্ন হওয়ার পর হাসিল হয়। এতদ্ব্যতীত, আমরা এরূপও বলতে চাই যে, তাকলীফ' হলাে নতুন কিছু সম্পন্ন হওয়ার মত; তাই হয়তাে তা তার অস্তিত্বের সময় হবে, অথবা তা তার অনস্তিত্বের সময় সম্পন্ন হবে। এমতাবস্থায়, দুটো বিপরীতধর্মী জিনিসের একত্রিত হওয়া বুঝা যায়, যা অবাস্তব। আর নতুন কিছু সম্পন্ন হওয়া, ঐ ধরনের কাজের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। কাজেই, এ ব্যাপারে তােমাদের যে জবাব হবে, তাকলীফের ব্যাপারে আমার জবাবও সেরূপ। | মু'তাযিলারা এ অভিযােগের উত্তর এভাবে দিয়েছে যে, কর্ম নিস্পন্ন হওয়ার আগে তাকলীফ’ হওয়া, এ ধরনের "তাকলীফ” এমন পর্যায়ের নয়, যা বহন করা যায় না।
কেননা, বর্তমান অবস্থার ‘তাকলীফ, অন্য অবস্থায়ও আপতিত হতে পারে; ব্যাপারটি এমন নয় যে, তা এখনই আপতিত হবে। কেননা, এমন হলে দুটি বিপরীতধর্মী জিনিসের সম্মিলন হওয়া, অর্থাৎ অস্তিত্ব ও অনস্তিত্ব একত্রিত হওয়া, অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে; যা আদৌ সম্ভব নয়। যেমন, কাফিরকে বর্তমানে সেজন্য ‘তাকলীফ; দেওয়া হলাে যে, সে দ্বিতীয় অবস্থায় যখন ঈমান আনলাে। আর এটা প্রণিধানযােগ্য কেননা, সে যদি দ্বিতীয় অবস্থায় কুফুরীর মধ্যে থাকে, তখন তার মধ্যে ঈমান আনার 'কুদরত' বা শক্তিই থাকবে না। আর যদি সে ঈমান নিয়ে আসে, তবে সে আর শাস্তিযােগ্য থাকবে না। কেননা, নির্দিষ্ট কিছু লাভের পর তার জন্য শাস্তি হওয়া অসম্ভব।
এর জবাব এভাবেও দেওয়া যেতে পারে, ভতাকলীফ' বা কষ্ট তার সাথেই সম্পৃক্ত, যা সামর্থের মধ্যে থাকে। আর এ কারণেই তা অবশ্যম্ভাবী হয় যে, যার জন্য তাকে ‘তাকলীফ' দেওয়া হলাে, তা সম্পন্ন হওয়ার সময় সে সমর্থ থাকবে। এখন অবশিষ্ট থাকলাে 'কুদরাত’ ও ‘তাকলীফের একত্রিত হওয়া এবং এখানে তা হয়নি। এতদ্ব্যতীত, নির্দিষ্ট কিছু লাভের পর তার জন্য শাস্তি দেওয়া তখন উচিত নয়, যখন দ্বিতীয় কিছু করার পর তাকে শাস্তি দেওয়া হয় এবং ঐ কাজের জন্য নয়, যেমন আলােচিত হয়েছে।
এখন যদি তুমি এরূপ প্রশ্ন কর যে, কুফরীতে লিপ্ত থাকার কারণে, অন্য অবস্থায় তার ঈমান আনার সামর্থের কোন অন্তরায় হয় না; কেননা, কুফরীতে থাকাবস্থায় ঈমান তার খেয়াল অনুযায়ী সামর্থে থাকে। বস্তুত, কুদরাত বা সামর্থ কর্মের আগে থাকে, যাতে কাফিরকে ঈমানের পূর্বে 'তাকলীফ’ দেওয়া যেতে পারে। আর এটা এ কায়দায় যে, যে কাজ সামর্থের আওতায় নয়, তার জন্য ‘তাকলীফ’ দেওয়া হয় না। কেননা, আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন :
لا يكلف الله نفسا الا وسعها
অর্থাৎ “আল্লাহ তাআলা কাউকে তার সামর্থের বাইরে তাকলীফ দেননা ”।(আল-কোরআন; ২: ২৮৬ আয়াত দ্রষ্টব্য ) এমতাবস্থায়, প্রথম অংশের অনুকরণে উত্তর সঠিক হতে পারে, যেমন তুমি দেখতে পাবে। | কাজেই, আমার অভিমত হলাে : (আর আল্লাহু সুবহানুহু তা'আলা এ ব্যাপারে সমধিক অবহিত যে), প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্য হয়তাে এরূপ যে, দ্বিতীয় অবস্থাতেও কুফরীতে লিপ্ত থাকা কালীন সময়ে তার ঈমান আনার সামর্থ থাকবে। কেননা, এরূপ অবস্থায় ‘অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের' সম্মিলন অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায়, যা অসম্ভব।
সুতরাং তার এই ওযর বা আপত্তি যে, বর্তমান অবস্থার শাস্তি, তাকে দ্বিতীয় অবস্থায় দেওয়া যাবে, এতে কোন ফায়দা বা উপকার নেই। কাজেই, এর উপর ভিত্তি করে জবাব দেওয়া সঠিক হবে না। ব্যাপারটি স্পষ্ট, তুমি-ই চিন্তা করে দেখ।
পঞ্চমতঃ যে কারণে তাকলীফ দেওয়া যাবে না,
তাহলাে : কিছু কিছু ‘মুলহেদ' বা নাস্তিকের খেয়াল হলাে শরীরের জন্য যে কাজগুলাে কষ্টকর, যেমন গােপনে আল্লাহ তাআলার মারিফাত বা পরিচয় লাভের জন্য চেষ্টা করা, বা তার সিফাত সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য চেষ্টা করা, বা ঐ সমস্ত কাজ-কর্ম-যা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে সে ব্যাপারে চিন্তা করা যায় না, ফলে, তার মধ্যে যে কল্যাণকর দিক প্রচ্ছন্ন থাকে, তা বাদ পড়ে যায়; অর্থাৎ উপরােক্ত বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার তাকলীফ। পরন্ত, ঐসব কাজ-কর্ম, যার মধ্যে তাকলীফ বা কষ্ট নিহিত আছে-তা সবই জ্ঞানের দিক দিয়ে নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
এ বক্তব্যের জবাব হলাে : আল্লাহ সুবহানুহু তা'আলার মারিফাতের ব্যাপারে 'ফিকর' বা চিন্তা করাই হলাে-সর্বোত্তম চিন্তা, আর এটাই ‘তাকলীফ’ বা কষ্টের আসল উদ্দেশ্য। অন্যান্য ‘তাকলীফ' এর পরিপূরক বা সাহায্যকারী। আর চেষ্টা বা পরিশ্রমকারীর জন্য সুন্দর জীবন-যাপনের জন্য এ হলাে উৎকৃষ্ট পন্থা। কারণ, আল্লাহ তা'আলার মারিফাত লাভের প্রচেষ্টায় যে সময়টি অতিবাহিত হয়, তা অত্যন্ত মূল্যবান এবং তা দুনিয়াবী পেরেশানী থেকে মানুষকে হিফাজাত করে। কাজেই, এ ধরনের ‘তাকলীফ’ দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য খুবই প্রয়ােজন।
পঞ্চম কারণের উপর আরাে প্রশ্ন হলাে : "বি'ছাতের" পক্ষ হতে ‘আকল' বা জ্ঞানের সিদ্ধান্তই যথেষ্ট, তাই এতে কোন ফায়দা বা উপকার নেই। তারা দলীল স্বরূপ বলে যে, 'আকল' যে জিনিসকে উত্তম বলে তা করতে হবে এবং যাকে খারাপ বলে, তা পরিত্যাগ করতে হবে। আর ‘আকল’ বা জ্ঞান যে জিনিসের ভাল-মন্দ হওয়ার ব্যাপারে কিছুই বলেনা, প্রয়ােজনের সময় তা করা যেতে পারে। কাজেই, প্রয়ােজনের সীমা নির্ধারণ করা জরুরী, যাতে কাজটি বাদ পড়লে বা পরিত্যাগ করলে, তাতে যেন কিছু না যায় আসে, অর্থাৎ কোন ক্ষতি না হয়।
এ বক্তব্যের জবাব হলাে : শরীয়তের বিধি-বিধান যা বি'ছাতের দ্বারা উপকার প্রাপ্ত, এ ফায়দা হাসিল হয় তার বিস্তৃত বর্ণনার দ্বারা, যাকে জ্ঞান সংক্ষেপে ভাল-মন্দ, উপকারী-অপকারী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং বি'ছাতের দ্বারা ঐ বিষয়-বস্তু বর্ণনা করা হয়, যা বর্ণনা করতে ‘আকল' বা জ্ঞান অপারগ। কেননা, যারা আকলের নির্দেশে পরিমলিত হয়, তারা তা অস্বীকার করতে পারে । আর এমন কিছু বিষয় বা ব্যাপার আছে, যেখানে ‘আকল বা জ্ঞান কিছুই বলতে সক্ষম হয় না। যেমন :-অযীফাসমূহ যা ইবাদত হিসেবে করা হয়, শরীয়তের বিভিন্ন হুকুম-আহকামের সীমা নির্ধারণ, উপকারী ও অপকারী বিষয় সম্পর্কে শিক্ষাদান। বস্তুত শরীয়তের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠাকারী নবী হলেন ঐ সুবিজ্ঞ চিকিৎসকের ন্যায়, যিনি ঔষধ এবং তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিফহাল। এটা এমন এক ব্যাপার, যদি সাধারণ লােকের অর্জিত অভিজ্ঞতার দ্বারা এটা হাসিল করা সম্ভব হতাে, তবে তার জন্য প্রয়ােজন হতাে দীর্ঘদিনের। যার ফলে, তারা তার উপকার থেকে মাহরুম বা বঞ্চিত হতাে, আর সে জ্ঞানের পূর্ণতার স্তরে পৌছাবার আগেই তারা হালাক বা ধ্বংস হয়ে যেতাে। কেননা, এ সময়ে তারা এমন ঔষধ ব্যবহার করতাে, যা তাদের জন্য হতাে ক্ষতিকর, যার ফলশ্রুতিতে তারা ধ্বংস হয়ে যেত। উপরন্তু, এ কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে তাদের অনেক দুঃখ-কষ্ট ভােগ করতে হতাে এবং প্রয়ােজনীয় কাজ-কর্ম পরিত্যাগ করার কারণে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে অনেক অন্তরায় সৃষ্টি হতাে।
কাজেই, যখন তারা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে সুপরামর্শ গ্রহণ করে ঔষধ প্রয়ােগ করবে, তখন তাদের কষ্ট লাঘব হবে। ফলে, তার দ্বারা তারা উপকৃত হবে এবং অপকার থেকে নিস্তার পাবে। সুতরাং, যেরূপে উপরােক্ত বিষয়ের জ্ঞান লাভের সম্ভাবনার ব্যাপারে বিজ্ঞ-চিকিৎসকের সুপরামর্শকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না, সেরূপে কষ্ট ও কর্ম বিষয়ক জ্ঞান লাভের সম্ভাবনার ব্যাপারে এরূপ বলা যাবে না যে, এখানে ‘আকল' বা জ্ঞানের পার্থক্য হওয়ার কারণে, মাউছ বা প্রেরিত বিষয়কে উপেক্ষা করতে হবে। এটা কিরূপে বলা যেতে পারে? কেননা, নবী তাে সে বিষয়-ই জানেন, যা আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তা'আলা তাঁকে অবহিত করেন। আর এটা কেবল ঐ চিকিৎসকের খেলাফ, যে কেবল তার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা ও অভিজ্ঞতার দ্বারা এ সমস্ত ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছে, যা সে জানে। কাজেই, এরূপ চিকিৎসক যখন তার জ্ঞানের অমুখাপেক্ষী নয়; তখন নবী তাে আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত জ্ঞানের অমুখাপেক্ষী আদৌ হতে পারেন না। এতক্ষণ যে বিষয়ের অবতারণা করা হলাে, তাতে ইছবাতুন নুবুওত(নুবুওতের প্রমাণ) হুসনে তাকলীফ(উত্তম-কষ্ট) এর ব্যাপারে হুকামা বা জ্ঞানীদের অভিমত বর্ণনা করা হলাে। এ প্রসংগের আলােচনা এখানেই শেষ করা হচ্ছে।
ষষ্ঠ প্রশ্ন বা অভিযােগ হলাে : মুজিযা নিষিদ্ধ; কেননা এ স্বভাব বিরুদ্ধ ব্যাপার। একে বৈধ বলা নির্বুদ্ধিতা বই কিছুই নয়। সুতরাং মু'জিযার দ্বারা নুবুওত ছাবিত বা প্রতিষ্ঠিত হয় না।
এর জবাব হলাে : আসমান ও যমীন এবং এ দুয়ের মাঝে যা কিছু আছে তার প্রথম সৃষ্টির চাইতে, মুজিযা অধিক তাজ্জবের ব্যাপার নয়। আর এমন অনেক জিনিস আছে, যার মধ্যে অলৌকিকত্ব থাকা বা না থাকার কারণে, তার অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকার ব্যাপারে কোন সংশয় নেই। এতদসত্ত্বেও, বাস্তব ব্যাপার এই যে, অলৌকিক ব্যাপার আম্বিয়া ও আউলিয়াদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি প্রচলিত রীতি, যা সর্বকালে এবং সর্বযুগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাজেই জ্ঞানী প্রশ্নকারীর উচিত হবে না তা প্রত্যাখ্যান করা। বরং আমাদের কথা হলাে : আমাদের কাছে মু'জিযা ঐ জিনিস, যদ্বারা রিসালাতের সত্যতা প্রতিপাদন করা হয়; যদিও তা স্বভাব বিরুদ্ধ হয়। আমি বলবাে, এখানে প্রশ্ন এ কারণে উত্থাপিত হয়েছে যে, এটা তার বিপরীত, যা মু'জিযার-শর্ত হিসেবে আগে বর্ণিত হয়েছে যে, স্বভাব বিরুদ্ধ হওয়া মু'জিযার জন্য অন্যতম শর্ত। আর এ কারণেও যে, যদি এরূপ না হয়, তবে অন্যান্য বিষয়ের মত মুজিযাও সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।কাজেই, এখন তুমি হৃদয়ঙ্গম কর।
সপ্তম প্রশ্ন বা অভিযােগ হলাে : মু'জিযা প্রকাশ পাওয়াতে নবীর সত্যবাদীতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। কেননা, হতে পারে হয়তাে সে যাদুকর, অথবা তার নিজের তেলেসমাতী কাজ, যার সাথে আল্লাহ তা'আলার কোন সম্পর্ক নেই। আর তােমরা এ ব্যাপারে একমত যে, এটি সত্য এবং অলৌকিক প্রভাবও যা কোন তেলেসমাতীর কারণে সংঘটিত হয়, আর যার জ্ঞান তার আছে।
এর জবাব হলাে : জ্ঞানতঃ যা ধারণা করা হয়, তা আসল জ্ঞানের পরিপন্থি নয়। যেমন-অনুভূতির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। কেননা, আমরা একথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, শরীরের বিশেষ অংগ-প্রত্যংগ দিয়ে যে জ্ঞান লাভ করা যায়, তা অন্য অংগ-প্রত্যংগ দিয়ে হাসিল হয় না; বরং যখন তা হাসিল হয়, তা দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে হয় এবং বাস্তবতার অনুরূপ হয়। আর এভাবে এ-ও প্রতিষ্ঠিত হয় যে, ঐ অনুভূতির সন্দেহ তাকে প্রভাবান্বিত করতে পারে না, যখন তা বিশ্বাসযােগ্য সাক্ষ্য প্রদান করে। আর অভ্যাস-অনুভূতির ন্যায় এও জ্ঞান হাসিলের একটি মাধ্যম। সুতরাং এটাও বৈধ যে, অনুভূতি যখন কোন জিনিসকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে সাহায্য করে, তখন অভ্যাসের দ্বারাও কোন কিছুতে দৃঢ়ভাবে প্রত্যয় করা যেতে পারে; যদিও তাতে অপূর্ণতার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকে।
বস্তুত আগে বর্ণনা করা হয়েছে যে, বাস্তবে কোন কিছুতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী হলেন-একমাত্র আল্লাহ। কাজেই মু'জিযা হলাে আল্লাহর-ই কাজ, এটা নবীর কাজ নয়। পক্ষান্তরে, যাদু, তেলেসমাতী-ঐ স্তরের কোন অলৌকিক ব্যাপার নয়, যা মু'জিযার মধ্যে আছে। যেমন : সমুদ্রকে দ্বিধা-বিভক্ত করা, মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা, জন্মান্ধ ব্যক্তিকে চক্ষুস্মান করা এবং কুষ্ঠ রােগগ্রস্ত ব্যক্তিকে সুস্থ করা-এটা যাদুর দ্বারা সম্ভব নয়। কাজেই, প্রমাণিত হলাে যে, যাদুর সাথে মু'জিযার আদৌ কোন সম্পর্ক নেই; তাই বলা যেতে পারে এ ব্যাপারে কোন সমস্যা ও সন্দেহের অবকাশ নেই। | অপরপক্ষে, কোন যাদুকরের যাদু যদি অলৌকিকত্বের স্তরে পৌছে, তবে হয়তাে সেখানে নুবুওতের দাবী থাকবে না; এমতাবস্থায় স্পষ্ট যে, তা নবীর মু'জিযার সাথে সংমিশ্রিত হবে না; অথবা সেখানে নুবুওতের দাবী থাকবে; এমতাবস্থায়, দুটি অবস্থার একটি হওয়া অবশ্যম্ভাবী। যথা :-১. হয়তাে আল্লাহ তাআলা স্বীয় হস্তে তা সম্পন্ন বা সৃষ্টি করবেন না; অথবা, ২. তিনি ছাড়া তার মুকাবিলা বা প্রতিহত করতে আর কেউ সক্ষম হবে না; অন্যথায় মিথ্যাবাদীর প্রত্যায়ন করা হবে। আর যাদু মিথ্যা হওয়ার কারণ তা সত্যে পরিণত করা বা বাস্তবায়িত করা-আল্লাহ তা'আলার পক্ষে কখনই সম্ভব নয়।
অষ্টম প্রশ্ন বা অভিযােগ হলাে : মু'জিযা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা ঐ ব্যক্তির পক্ষে, যে তা নিজে অবলােকন করেনি, 'তাওয়াতুর' বা বর্ণনা পরস্পরার দ্বারাই সম্ভব, আর তা জ্ঞানের ফায়দা দেয় না। সুতরাং কোন ব্যক্তির নুবুওতের জ্ঞান, ঐ ব্যক্তি হাসিল করতে পারে না, যে তার মু'জিযা অবলােকন করেনি। আর আগেই বলা হয়েছে যে, তাওয়াতুর বা বর্ণনা পরস্পরা-লব্ধ কোন কিছু জ্ঞানের ফায়দা দেয় না। কেননা, যারা বর্ণনাকারী তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে; আর এভাবে সকল বর্ণনাকারীর মিথ্যাবাদী হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়না। কেননা, সকলের মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রতীয়মান হওয়া তাদের প্রত্যেকের মিথ্যাবাদী হওয়ার উপর নির্ভরশীল।
এর জবাব হলাে : সকলকে এ দৃষ্টিতে সমষ্টিগত মনে করা-গ্রহণযােগ্য ব্যাপার নয়, যাতে সকলের উপর একই হুকুম লাগানাে যেতে পারে। কেননা, বাস্তবে দেখা যায় যে, দশ ব্যক্তির সম্মিলিত শক্তি কোন ভারি জিনিসকে স্থানচ্যুত করতে সক্ষম হয়, যেখানে তারা আলাদা আলাদাভাবে চেষ্টা করলে এবং শক্তি প্রয়ােগ করলে তা সামান্য হেলাতেও সক্ষম হয় না। অতএব, সম্মিলিত বর্ণনা পরস্পরার মাধ্যমটিও ঐরূপ শক্তিশালী। কাজেই, এখানে খামাখা সন্দেহ সৃষ্টির কোন অবকাশ নেই।
নবম প্রশ্ন বা অভিযােগ হলাে : আমরা শরীয়তের বিধি-বিধান নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা ও গবেষণা করেছি, কিন্তু আমরা যা পেয়েছি তাহলাে : এটা 'আকল ও হিকমতের’ বা জ্ঞান-বুদ্ধির অনুরূপ নয়। কাজেই, আমরা ধরে নিয়েছি যে, শরীয়তের হুকুম-আহকাম আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে আসেনি। যেমন এ কাজগুলি : পশু কুরবানী করাকে মুবাহ নির্ধারণ করা এবং তাদের ভক্ষণ করা বা তাদের দ্বারা অন্য উপকার নেওয়ার জন্য তাদেরকে ‘তাকলীফ' বা কষ্ট দেওয়া; নির্দিষ্ট কিছু দিনে (মাহে রমযানে) ক্ষুধা-তৃষ্ণা বরদাশত করাকে ওয়াজিব বা অপরিহার্য মনে করা (মাহে রমযানে রােযা রাখাকে বিদ্রুপ করা হয়েছে) এবং আনন্দদায়ক কাজ-কর্ম (স্ত্রী সহবাস) থেকে বিরত থাকা, যাতে শরীর ফুর্তি অনুভব করে, তাছাড়া শরীরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য ময়দান অতিক্রম করা (অর্থাৎ হজ্জে গমন করা), (হজ্জে গমন করাকে কটাক্ষ করা হয়েছে) এবং বিশেষ বিশেষ স্থান যিয়ারত বা তওয়াফ করাও (আল্লাহর ঘর তওয়াফ করা অপ্রয়ােজনীয় মনে করা হয়েছে) কোন কোন স্থানে অবস্থান করা (ওকুফে আরফা)(আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে), কোন স্থানে সা’য়ী করা বা দৌড়ান (সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানােকে কটাক্ষ করা হয়েছে। ), যদিও ঐ স্থানসমূহ অন্যান্য স্থানের ন্যায়-এতে লাভ কি? তাছাড়া বাচ্চাদের ন্যায় মাথা খােলা রাখা এবং খালি পায়ে থাকাতে উপকার কি?(ইহরাম অবস্থায় যেভাবে বস্ত্র পরিধান করতে হয়, তাকে বিদ্রুপ করা হয়েছে) তাছাড়া প্রস্তর নিক্ষেপ করা, যেখানে কেউ নেই এর ফায়দা কি? এতদভিন্ন এমন এক পাথরকে চুম্বন করা (হাজরে আসওয়াদকে), যার অন্য পাথরের উপর কোন ফযীলত নেই-এতে লাভ কি? তাছাড়া, স্বাধীন সুন্দরী, সুশ্রী যুবতীদের দিকে তাকানােকে হারাম নির্ধারন করা এবং সুন্দরী দাসীদের দিকে দৃষ্টিপাত করাকে বৈধ মনে করা-এসব পাগলের প্রলাপ উক্তি নয় কি?
ভাল ও মন্দের ব্যাপারে আকলের বিধান সমর্থন করে এবং এসব কাজের মধ্যে আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যকে জরুরী হিসেবে মেনে নিয়ে-জবাব হলাে : যারা এর সমালােচনা করেছেন, তারা এর আসল উদ্দেশ্য অনুধাবন করতে সক্ষম হননি। আর এ কারণেই এটা বলা যাবে না যে, এসব কাজের মধ্যে বাস্তবে কোন ফায়দা বা উপকার নেই। বস্তুত এটাও সত্য যে, আল্লাহ তা'আলা ঐসব কাজের মধ্যে বান্দাদের জন্য কল্যাণের ফয়সালা করেছেন। এ সম্পর্কে আগেই আমরা আলােচনা করেছি যে, জ্ঞানের উর্দ্ধে এমন একটা স্তর আছে, যেখানে এমন একটি চোখ উন্মােচিত হয়, যদ্বারা অদৃশ্যের এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারগুলি, যা পরে অনুষ্ঠিত হবে, তা স্পষ্ট দেখা যায়। আর এ ব্যাপারে জ্ঞানের কোন অধিকার নেই। যেমন-অনুভূতি শক্তি দিয়ে-কোনটি ভাল, আর কোনটি মন্দ তা নির্ধারণ করা যায় না। এ ব্যাপারে আরাে অধিক, বিস্তারিত আলােচনা দ্বিতীয় অধ্যায়ে করা হবে ইনশা-আল্লাহ।