❏ বিষয় নং-১৬:
জানাযার নামাযের পর দোয়া করা
দেওবন্দী ওহাবী এবং আহলে হাদিসদের মতে নামাযে জানাযার পর দোয়া করা বিদআত। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে জানাযার পর দোয়া করা বৈধ। রাহমাতুল্লীল আলামীন আনিসুল গারেবীন রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ
-“মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ার পর তোমরা তার জন্য দোয়ায় মনোনিবেশ কর।” ১৯৯
১৯৯. ইবনে মাযাহ : আস-সুনান : কিতাবুল জানায়েজ : ১/৪৮০ পৃ. : হাদিস : ১৪৯৭, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, আবি দাউদ : আস্-সুনান : কিতাবুল জানায়েজ : ৩/৫৩৮ পৃ. : হাদিস : ৩১৯৯, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইবনে হিব্বান : আস-সহিহ : ৭/৩৪৬পৃ. হাদিসঃ ৩০৭৭, সুয়ূতি : জামেউস-সগীর : ১/৫৮ পৃ. : হাদিস : ৭২৯, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ২/৩১৯ পৃ. : হাদিস : ১৬৭৪, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, আলবানী : সহীহুল মিশকাত : হাদিস : ১৬৭৪ এ তিনি বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’, বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা : ৪/৪০ পৃ. দারুল মা’রিফ, বয়রুত, ইমাম নববী : রিয়াদুস সালেহীন : ৩১০-৩১১ প. হাদিস : ৯৩৭,ইমাম তাবরানী : কিতাবুদ-দোয়া : ৩৬২ পৃ. হাদিস : ১২০৫-১২০৬, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৩/৩১৯পৃ. হাদিসঃ ২২৭৫, ইমাম ইবনে কুদামা : আল-মুগনী : ২/১৮১ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী : ৪/৯৫ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইমাম নববী : আল-মাজমূূ : ৫/১৯২ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, আহলে হাদিস নাওয়াব সিদ্দক হাসান খাঁন ভূপালী : আওনুল বারী : ৩/৩০০ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত, শাওকানী : নায়লুল আউতার : ৪/১০৫ পৃ. দারুল জলীল, বয়রুত, ইমাম মিয্যী : তুহফাতুল আশরাফ বি মা‘রিফাতুল আতরাফ : ১০/৪৭২ পৃ. হাদিস : ১৪৯৯৩, ইমাম নববী : ফতহুর রব্বানী : ৭/২৩৮ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত, মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত : ৩/২৪৮ পৃ. হাদিস নং-১৬৭৪, শাওকানী : তুহফাতুল মুহতাজ : ১/৫৯৪ পৃ. হাদিস : ৭৮৬, ইমাম তাবারী : গায়াতুল আহকাম : ৩/৫৫৭ পৃ. হাদিস : ৬৮১৬, শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দেস দেহলভী : আশিয়াতুল লুমআত : হাদিস : ১৬৭৪, ইবনুল আছির, জামিউল উসূল, ৬/২১৯পৃ. হাদিস : ৪৩১১, নাওয়াবী, খুলাসালাতুল আহকাম, ২/৯৭৮পৃ. হাদিস.১৪৯৯৩, ইমাম ইবনুল মুলাক্কিন, বদরুল মুনীর, ৫/২৬৯পৃ. ইবনে হাজার আসকালানী, ইত্তিহাফুল মুহরাহ, ১৪/৭৪৭পৃ. হাদিসঃ ১৮৬৩৫,ও ১৫/২৮পৃ. হাদিসঃ ১৮৭৯৬,ও ১৬/১৯০পৃ. হাদিসঃ ২০৬২৫, আসকালানী, তালখিসুল হবির, ২/২৮৮পৃ. ক্রমিক.৭৬৯,ও ২/২৪৭পৃ. ক্রমিক.৭৭০, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/১২২পৃ. হাদিসঃ ১২৩৯,ও ১৫/৫৮৩পৃ. হাদিস, ৪২২৭৯, সুলাইমান ফার্সী, জামিঊল ফাওয়াইদ, ১/৪২৮পৃ. হাদিসঃ ২৫৩৮, আহলে হাদিস আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, ৩/১৭৯পৃ. হাদিস,৭৩২, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, সহিহুল জা‘মে, হাদিসঃ ৬৬৯, তিনি উভয় গ্রন্থে বলেন সনদটি ‘হাসান’।
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
সকলের ঐক্যমতে, জানাযার নামায ফরযে কেফায়াহ। আর ফরয নামাজের পর দোয়া করার ব্যাপারে স্বয়ং রাসূলে আকরাম (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন।
সায়্যিদুনা জাফর বিন আবি তালিব (رضي الله عنه)’র জানাযার পর দোয়া:
মিম্বার শরীফে বসে বসেই রাসূল (ﷺ) সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) কে মূতার যুদ্ধের সংবাদ শুনান এবং হযরত জাফর বিন আবি তালিব (رضي الله عنه)’র শাহাদাতের সংবাদও শুনান।
فَصَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَدَعَا لَهُ وَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لَهُ
-‘‘এরপর রাসূল (ﷺ) তাঁর জানাযা পড়ে তাঁর জন্য দোয়া করলেন এবং সাহাবায়ে কেরামগণ (رضي الله عنه) কে তাঁর মাগফিরাত কামনার জন্য নির্দেশ দিলেন।’’ (ইমাম ইবনুল হুমাম, ফতহুল কাদীর, ২/১১৭ পৃ.)
দেওবন্দী ওহাবীদের নিকটও শামসুল আইম্মাহ হিসেবে খ্যাত ইমাম সারাখসী (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য গ্রন্থ “মাবসুতে” একটি বর্ণনা এনেছেন এভাবে:
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه)-এর বর্ণনা:
ইমাম সারাখসী (رحمة الله) উল্লেখ করেন, হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه) হযরত উমর (رضي الله عنه)’র জানাযার পর উপস্থিত হয়ে বলেন,
عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - فَاتَتْهُ الصَّلَاةُ عَلَى جِنَازَةِ عُمَرَ فَلَمَّا حَضَرَ قَالَ: إنْ سَبَقْتُمُونِي بِالصَّلَاةِ عَلَيْهِ فَلَا تَسْبِقُونِي بِالدُّعَاءِ لَهُ.
-‘‘আমার আগে যদিওবা তোমরা নামায পড়েছো, কিন্তু দোয়া আমার পূর্বে করো না।’’ ২০০
২০০. ইমাম সারখ্সী , আল-মাবসুত , ২/৬৭ পৃ.।
শামসুল আইম্মা ইমাম সারাখসী (رحمة الله) তাঁর মাবসুতে “মৃত ব্যক্তির গোসল অধ্যায়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র বর্ণনা দ্বারা জানাযার পর দোয়া করা প্রমাণ করেছেন। ২০১
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২০১. শামসুল আয়িম্মা ইমাম সারখসী (رحمة الله) {ওফাত.৪৮৩হি.}
❏ তাঁর বিখ্যাত ‘মবসুত শরীফে’ “মাইয়্যাতের গোসল” শীর্ষক অধ্যায়ে একটি হাদিস সংকলন করেন-
مَا رُوِيَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا - وَابْنِ عُمَرَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - أَنَّهُمَا فَاتَتْهُمَا الصَّلَاةُ عَلَى جِنَازَةٍ فَلَمَّا حَضَرَا مَا زَادَا عَلَى الِاسْتِغْفَارِ لَهُ
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে উভয়ে এক জানাযায় গিয়ে জানাযার নামায না পেয়ে মায়্যিতের জন্য ইস্তাগফার পড়লেন বা দোয়া করলেন।’’ (ইমাম সারখ্সী, আল-মাবসুত , ২/৬৭ পৃ.)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এমন সাহাবী যার ব্যাপারে আসমাউর রিজালের কিতাবে এসেছে যে, নবী করিম (ﷺ)’র এই আমল খুবই পছন্দ ছিল। জানাযার পর মোনাজাত করা যদি বিদআত হতো, তবে তিনি কখনো জানাজার পর দোয়া করতেন না। ২০২
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২০২. তার বিষয়ে আরও বর্ণিত আছে-
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ قَالَ: كَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا انْتَهَى إِلَى جِنَازَةٍ وَقَدْ صُلِّيَ عَلَيْهَا دَعَا وَانْصَرَفَ وَلَمْ يُعِدِ الصَّلَاةَ-
-‘‘বিশিষ্ট তা’বেয়ী না’ফে (رحمة الله) বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) তিনি যদি কোনো জানাযায় উপস্থিত হয়ে দেখতেন যে, সালাতুল জানাযা আদায় করা হয়ে গেছে, তাহলে তিনি (আদায় কৃত জানাযার) পর দোয়া করে ফিরে আসতেন, পুনরায় সালাত (জানাযা) আদায় করতেন না।’’ (ইমাম আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, ৩/৫১৯ পৃ. হা/৬৫৪৫, মুফতি আমিমুল ইহসান, ফিকহুস-সুনানি ওয়াল আছার, ১/৪০০পৃ. হাদিসঃ ৩১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তিনি বলেন, হাদিসটির সনদ সহীহ।)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
সায়্যিদুল মুফাস্সিরিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)ও জানাযার পর দোয়া করার পক্ষে মত দিয়েছেন। জানাযার পর মুনাজাত করা যদি বিদআত হতো তবে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কখনো জানাযার পর মুনাজাত করতেন না। উপরোক্ত বর্ণনাগুলো দ্বারা রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কেরামগণ কর্তৃক জানাযার পর মুনাজাত করা প্রমাণিত হল। ২০৩
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২০৩.
এ বিষয়ে আরও বর্ণিত আছে যে, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হাদিস সংকলন করেন-
عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ خَيْثَمَةَ، أَنَّ أَبَا مُوسَى: صَلَّى عَلَى الْحَارِثِ بْنِ قَيْسٍ الْجُعْفِيِّ بَعْدَ مَا صُلِّيَ عَلَيْهِ أَدْرَكَهُمْ بَالْجَبَّانِ
-‘‘হযরত আমর বিন মুর্রা (رحمة الله) তিনি তাবেয়ী হযরত খায়ছামা (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় আবু মূসা আশ‘আরী (رضي الله عنه) হযরত হারেস ইবনে কায়েছ আল-জুফিয়ী (رضي الله عنه)-এর জানাযার নামায আদায় করলেন, পরে তাঁর জন্যে দোয়া করেন।’’ (ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৪ পৃ. হা/৬৯৯৭)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
সুতরাং জানাজার পর মুনাজাত করা বিদআত বলে দেওবন্দী ওহাবীরা সরলমনা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত পন্থিদের ধোঁকা দিচ্ছে। মূলত প্রকৃত আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত তারাই যারা জানাযার পর মুনাজাত করে। আপনারা দেখবেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত বেরলভী (رحمة الله) এর উপর আমল করে। দেওবন্দী ওহাবীরা বলে থাকে জানাযার নামায এক প্রকার দোয়া বিধায় এর পর পুনরায় আমরা দোয়া করি না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বলে থাকে পবিত্র কুরআন-সুন্নহর মধ্যে আল্লাহ তা‘য়ালা ও তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) কোন স্থানে এমনটি বলেননি যে, একবার দোয়ায় পর যদি তোমরা দ্বিতীয়বার মুনাজাত কর তবে গুনাহগার হবে। অথবা এরূপ বলেননি যে, তোমাদের দোয়া কবুল হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা মুনাজাত করা থেকে বিরত থাক। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)’র পক্ষ থেকে যখন এরূপ নিষেধাজ্ঞা নেই তো, শরীয়তের বিধানে নাক গলানোর তোমরা কে? মূলত দেওবন্দী ওহাবীরাই প্রকৃত বিদআতী। কবি বলেন-
خدا محفوظ ركتہے ہر بلا سے
خصوصًا وہابيّت كى ديا سے!
‘‘হে খোদা! বাঁচাও কত মসিবত
সবিশেষ বাতুল্য আর ওহাবিয়্যাত।’’
আল্লাহ তা‘য়ালা এবং তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)’র এরূপ কোন বানী নেই। কিন্তু আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উক্ত আমলের প্রমাণ কুরআন ও হাদীস থেকে অবশ্যই পাওয়া যাবে। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন:
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
-“এবং তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমার নিকট প্রার্থনা করো, আমি গ্রহন করবো। নিশ্চয় ঐসব লোক, যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকারে বিমুখ হয়, তারা অনতিবিলম্বে জাহান্নামে যাবে লাঞ্চিত হয়ে।’’ ২০৪
২০৪. সূরা গাফির আয়াত নং-৬০
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘য়ালা মুমিনদেরকে দোয়া করার হুকুম দিচ্ছেন। আর মুমিনদের বিশেষীকরণের মাধ্যমে তাদের দোয়া কবুল করার শুভ সংবাদ দিচ্ছেন। আর যারা অস্বীকার করে এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করা প্রয়োজন মনে করেনা তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোর ঘোষণা দিচ্ছেন। আপনারা লক্ষ্য করবেন যে, জানাযার নামাযের পর অনেকে হাত তুলে মুনাজাত করে আবার অনেকে অহংকারীর মতো দাঁড়িয়ে থাকে। আয়াতে কারিমাটি পড়ে আপনারাই বিচার করুন যে মুনাজাতের সময় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা এবং দোয়া থেকে বিরত থাকার পরিনাম কী হতে পারে? আল্লাহ তা‘য়ালা আরো বলেন:
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ
-‘‘এবং হে মাহবুব! যখন আপনাকে আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, আমি তো নিকটেই আছি, প্রার্থনা গ্রহন করি আহ্বানকারীর যখন আমাকে আহবান করে। সুতরাং তাদের উচিত যেন আমার নির্দেশ মান্য করে এবং আমার উপর ঈমান আনে, যাতে পথের দিশা পায়।’’ ২০৫
২০৫. সূরা বাকারা, আয়াত নং-১৮৬
এই আয়াতেও আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর বান্দার উপর অনুগ্রহ প্রকাশ করতে বলেন। যখনই বান্দা আমার কাছে প্রার্থনা করে তা আমি কবুল করি। এই আয়াতে এমন কোন শর্ত নেই যে, একবার দোয়া করার পর দ্বিতীয় বার দোয়া করলে তিনি অসন্তুষ্ট হবেন এবং অসন্তুষ্ট হওয়ার কারনে কবুল হওয়া দোয়া ফেরত দেয়া হবে। বরং বর্ণনা হয়েছে যে, যখনই দোয়া কর তা কবুল করা হবে। এটি একটি নিয়ম যে, যাকে যে ভালবাসে তাকে সে বারবার ডাকে। মৃতব্যক্তির সাথে মনে হয় দেওবন্দী ওহাবীদের সাথে দুশমনি আছে, সে জন্য তারা দোয়া করা থেকে বিরত থাকে এবং যারা মুনাজাত করে তাদের ব্যাপারে আপত্তি ও ফতোয়া চাপিয়ে দিয়ে বলে বেড়ায় যে, জানাযা স্বয়ং দোয়া এবং এর পর দোয়া করা বিদআত। দেওবন্দীদের এই দলিলটি একেবারে ভিত্তিহীন। কেননা এই জ্ঞান দ্বারা কোন অন্ধ বা মূর্খ ব্যক্তিরও একথা জানা থাকবে না যে, পাঞ্জাগানা নামাযের পর সবাই যে দোয়া করে তবে কী ওই নামায দোয়া নয়?
১. জানাযার নামাযে প্রথমে ছানা পড়া হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযেও প্রথমে ছানা পড়া হয়।
২. জানাজার নামাযে দরুদ শরীফ পড়া হয়, পাঁচওয়াক্ত নামাযেও দরুদ শরীফ পড়া হয়।
৩. জানাযার নামাযে মুসলমানদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা হয়, পাঁচওয়াক্ত নামাযের اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي দ্বারা মাগফিরাত কামনা করা হয়।
৪. জানাযার নামাযে السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ বলা হয় অনুরূপ পাঁচওয়াক্ত নামাযেও السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ বলা হয়। ২০৬
২০৬. জানাযা যে দোয়া নয় বরং সালাত সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘হাদিসের আলোকে জানাযার পর দোয়ার বিধান’ দেখুন, আশা করি সঠিক বিষয়টি পাঠকবৃন্দেও বুঝে আসবে।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! পরস্পর এই আলোর দিকে গভীর দৃষ্টি দিলে প্রমাণিত হবে পাঁচওয়াক্ত নামাযে এমনসব বিষয় পড়া হয়, যা মূলত জানাযার নামাযে পড়া হয়ে থাকে। তাহলে কি কারণে দেওবন্দী ওহাবীরা পাঁচওয়াক্ত নামাযের পর মুনাজাত করে? এবং জানাযার পর মুনাজাত করাকে বিদআত বলে? সুতরাং বুঝা গেল একাজগুলো তাদের কাছ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) ’র পক্ষ থেকে এরূপ কোন বাঁধা-বাধ্যকতা নেই। সুতরাং পবিত্র শরীয়তে নিজ থেকে নতুন কিছু প্রবর্তন করার কারণে দেওবন্দীরা নিজেরাই বেদআতী হল এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত থেকে বের হয়ে গেল।
কুরআনুল কারীমের আয়াত ও তার তাফসির:
পবিত্র কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে-
فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ (৭) وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ
-“অতএব, যখন আপনি নামায থেকে অবসর হবেন তখন দোয়ার মধ্যে মনোনিবেশ করুন।’’ ২০৭
২০৭. সূরা ইনশিরাহ, আয়াত নং-৭-৮
তাফসীরে ইবনে জারীর: ২০৮
উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে অন্যতম মুফাস্সির ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، فِي قَوْلِهِ: {فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ} [الشرح: ৭] يَقُولُ: فِي الدُّعَاءِ
-‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, তোমরা যখন নামায শেষ করবে পর দোয়ার জন্য মনোনিবেশ কর।’’ ২০৯
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২০৮.
❏ দেওবন্দীদের আলেম শিবলী নুমানী বলেন, ইমাম তাবারী এমন স্তরের ব্যক্তিত্ব যে, প্রত্যেক মুহাদ্দিসগণ তাঁর জ্ঞান গরীমা এবং মর্যাদা সম্পর্কে অবগত। তাঁর তাফসীরকে সর্বোকৃষ্ট তাফসীর মনে করা হয়। মুহাদ্দিস ইবনে খুজায়মা বলেন, দুনিয়াতে তাঁর চেয়ে বড় আলেম আর নেই। (সিরাতুন্নবী ১ম খণ্ড ১০৩০ পৃ:)
❏ হাফেজ ইবনে যাহাবী (رحمة الله) ইমাম ইবনে জরীরকে ইসলামের অন্যতম ইমাম হিসেবে আখ্যায়িত করেন। (মিযানুল ইতিদাল)
❏ গাইরে মুকাল্লিদ ওহাবীদের মুখপাত্র লেখেন যে, ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (رحمة الله) বিজ্ঞ মুফাস্সির, মুহাদ্দিস এবং ইতিহাসবেত্তা।’’ (আল-ইতিসাম, লাহোর, ৯ পৃ: ২০ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৯ পৃ:)
❏ নবাব সিদ্দিক হাসান ভুপালী বলেন, তাফসীরে ইবনে জারীর তাবারী এবং তাফসীরে জালালাইন হল উৎকৃষ্ট তাফসীর। (আল-মকালুতুল নাসিহা, ১২৪ পৃ.)
❏ গাইরে মুকাল্লিদগনের ইমাম আবদুস সাত্তার দেহলভী লেখেন যে, ৪র্থ স্তরের প্রসিদ্ধ হলেন আল্লামা আবু জাফর মুহাম্মদ বিন তাবারী (ইন্তেকাল ৩১০ হি:)
❏ ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন, তাঁর কিতাব হল অতুলনীয় এবং মহান তাফসীরের মধ্যে অন্যতম। কেননা এটি বিভিন্ন বর্ণনা এবং একের উপর অপর বর্ণনার প্রাধান্য, ইরাব এবং বিভিন্ন কিছু নির্গতকরনের প্রতি গুরুত্বরোপ করেছে। একারণে এটি অন্যান্য কিতাব হতে উপকারী। ইমাম নববীও “তাহযীবে” এরূপ বলেছেন। (মুকাদ্দামায়ে তাফসীরে সাত্তারী, ১৭ পৃ.)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২০৯. ইমাম ইবনে জারীর আত-তবারী, তাফসীরে ইবনে জারীর, ২৪/৪৯৭ পৃ.
তিনি তার তাফসিরে আরও উল্লেখ করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: {فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ} [الشرح: ৭] يَقُولُ: فَإِذَا فَرَغْتَ مِمَّا فُرِضَ عَلَيْكَ مِنَ الصَّلَاةِ فَسَلِ اللَّهَ، وَارْغَبْ إِلَيْهِ، وَانْصَبْ لَهُ
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তোমরা তোমাদের উপর অর্পিত বিষয় থেকে মুক্ত হবে (ফরয সালাত শেষ করবে) তখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে এবং দোয়ার প্রতি মনোনিবেশ করবে।’’২১০
২১০. তাফসীরে ইবনে জারীর, ২৪/৪৯৭ পৃ.
সায়্যিদুল মুফাস্সিরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র পর হযরত মুজাহিদ (رحمة الله)’র তাফসীর বর্ণনা করা হল-
عَنْ مُجَاهِدٍ، قَوْلُهُ: {فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ} [الشرح: ৭] قَالَ: إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلَاةِ فَانْصَبْ فِي حَاجَتِكَ إِلَى رَبِّكَ
-‘‘তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তোমরা নামায শেষ করবে তখন তোমাদের প্রয়োজনের প্রতি মনোনিবেশ কর।’’ ২১১
২১১. তাফসীরে ইবনে জারীর, ২৪/৪৯৭ পৃ.
হযরত মুজাহিদ (رضي الله عنه)’র পর হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه)’র তাফসীর বর্ণনা করা হল-
عَنْ قَتَادَةَ، قَوْلُهُ: {فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ} [الشرح: ৮] قَالَ: أَمَرَهُ إِذَا فَرَغَ مِنْ صَلَاتِهِ أَنْ يُبَالِغَ فِي دُعَائِهِ
-‘‘তাবেয়ী হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালার বানী ‘যখন তোমরা নামায হতে ফারেগ হবে, তখন আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ কর।’ অর্থাৎ যখন নামায শেষ করবে তখন দোয়ার মধ্যে পৌঁছবে।’’ ২১২
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২১২.
ইমাম ইবনে জারীর আত-তবারী, তাফসীরে ইবনে জারীর, ২৪/৪৯৮ পৃ.,
তিনি উক্ত তাবেয়ী থেকে আরেকটি সূত্র এভাবে উল্লেখ করেন-
عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، فِي قَوْلِهِ: {فَإِذَا فَرَغْتَ} [الشرح: ৭] : مِنْ صَلَاتِكِ {فَانْصَبْ} [الشرح: ৭] : فِي الدُّعَاءِ
-‘‘তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহর বানী হল, যখন নামায শেষ করবে তখন দোয়ায় মননিবেশ কর।’’ (তবারী, তাফসীরে ইবনে জারীর, ২৪/৪৯৮ পৃ.)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
জ্ঞানীদের ভাল করেই জানা আছে যে, তাফসীর শাস্ত্রে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), হযরত মুজাহিদ (رضي الله عنه) এবং হযরত কাতাদা (رضي الله عنه)’র মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। কোন জ্ঞানবানই এসব তাফসীরকে অস্বীকার করতে পারে না। فَانْصَبْ এর ব্যাখ্যায় প্রত্যেক মুফাস্সিরগণই নামাযের পর মুনাজাত করার কথা বলেছেন কিন্তু দেওবন্দী এবং আহলে হাদিসরা একে বিদআত বলে।
ইমাম খাযেন এবং ইমাম বাগভী (رحمة الله) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
فَإِذا فَرَغْتَ فَانْصَبْ ..... قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ وَقَتَادَةُ وَالضَّحَّاكُ وَمُقَاتِلٌ وَالْكَلْبِيُّ: فَإِذَا فَرَغْتَ مِنَ الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ فَانْصَبْ إِلَى رَبِّكَ فِي الدُّعَاءِ
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), কাতাদাহ, দাহ্হাক, মুকাতিল এবং কালবী (رحمة الله) বলেন, ফরয নামায থেকে মুক্ত হবে, আল্লাহর প্রতি প্রার্থনা কর এবং মুনাজাত করার জন্য তাঁর প্রতি মনোনিবেশ কর, তিনি তোমাদেরকে দান করবেন।’’ ২১৩
২১৩. ইমাম খাযেন, তাফসীরে খাযেন, ৪ খণ্ড ৪৪৩ পৃ., বাগভী, মাআলিমুত তানযীল, ৫ খণ্ড ২৭৬ পৃ.
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! উপরোক্ত কুরআনের আয়াত বিজ্ঞ মুফাস্সিরগণের ব্যাখ্যা এবং হুযুর পুর নূর (ﷺ)’র পবিত্র হাদিস দ্বারা প্রকাশ পেল যে, নামাযের পর মুনাজাত করা আল্লাহ পাকের হুকুম। রাসূলে পাক (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ২১৪, তাবেয়ীনে এজাম (رضي الله عنه), তাবে-তাবেঈন (رضي الله عنه) এবং সালফে সালেহীন (رضي الله عنه) সকলেই নামাযান্তে মুনাজাত করেছেন।
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২১৪.
❏ হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ
-‘‘তোমরা আমার ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধর।’’
(আবু দাউদ, আস্-সুনান, ৪/২০০পৃ. হাদিস নং.৪৬০৭, আলবানীর তাহক্বীক সূত্রে সহিহ।)
❏ তাই বুঝতে পারলাম যে নবীজির খলিফাদের অনুসরণ করাও আমাদের জন্য সুন্নাত। ইসলামের চতুর্থ খলিফার আমল দেখুন-
عَنِ الْمُسْتَظِلِّ، أَنَّ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: صَلَّى عَلَى جِنَازَةٍ بَعْدَ مَا صُلِّيَ عَلَيْهَا
-‘‘হযরত মুসতাযিল ইবনে হুসাইন (رحمة الله) বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আলী (رضي الله عنه) এক জানাযার নামায আদায় করেন অতঃপর আবার তার জন্যে দোয়া করেন।’’ (বায়হাকী, আস-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৪পৃ. হাদিস নং.৬৯৯৬)
এ হাদিসের সনদটিও সহীহ। বুঝা গেল জানাযার নামাযের পর দোয়া করা খলিফাদের সুন্নাত।
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
হাত তুলে দোয়া করা :২১৫
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২১৫.
❏ ইমাম যায়লাঈ (رحمة الله) বলেন-
وَقَدْ ثَبَتَ أَنَّهُ عليه السلام رَفَعَ يَدَيْهِ فِي الدُّعَاءِ
-‘‘রাসূল (ﷺ) দোয়ায় তাঁর হাত মোবারক উত্তোলন করতেন এ বিষয়টি প্রমাণিত।’’ (ইমাম যায়লাঈ, নাসবুর রায়্যাহ, ৩/৫২ পৃ.)
❏ হিজরী ১১শ শতাব্দির মোজাদ্দেদ, বিশ্ব বিখ্যাত ফকিহ্ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) {ওফাত ১০১৪ হিজরী} উল্লেখ করেন-
أَنَّهُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي كُلِّ دُعَاءٍ
-“নিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) প্রত্যেক দোয়া দুই হাঁত উঠিয়ে করতেন।” (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত শরহে মেসকাত, ৫ম খন্ড, ১৩২ পৃ.)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: إِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ، وَلَا تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا، وَامْسَحُوا بِهَا وُجُوهَكُمْ
‘আল্লাহর কাছে মুনাজাত করার সময় দু’হাত প্রসারিত করেই দোয়া করবে। এরপর দুহাত মুখে মালিশ করবে। আরেক বর্ণনায় এসেছে এরূপ করার কারণে তাতে আল্লাহ তা‘য়ালা বরকত দান করবেন।’’ ২১৬
২১৬. ইমাম আবু নসর মারুজী, কিয়ামুল লায়ল, ৩২৭ পৃ., তাঁর বর্ণনার সনদ সহীহ, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৭১৯ পৃ. হা/১৯৬৮, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ২/৩০১ পৃ. হা/৩১৫১, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১০/৩১৯ পৃ. হা/১০৭৭৯, ইমাম আবু দাউদ, হা/১৪৮৫, বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/২০৪ পৃ. হা/১৪০০
ওহাবী আহলে হাদিসদের মুরব্বী মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরীও বলেন, হাদিসে পাকে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ رَبَّكُمْ حَيِيٌّ كَرِيمٌ، يَسْتَحْيِي إِذَا رَفَعَ الْعَبْدُ إِلَيْهِ يَدَهُ أَنْ يَرُدَّهَا صِفْرًا حَتَّى يَجْعَلَ فِيهَا خَيْرًا
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) বলেছেন: তোমাদের প্রভূ লজ্জাশীল ও দাতা; তাঁর কোন বান্দা তাঁর কাছে দুই হাঁত উঠালে তা খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। এমনকি এতে সে কল্যাণ নির্ধারিত হয়।” ২১৭
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
২১৭. ইমাম আব্দুর রায্যাক, জামেউ মা’মার ইবনে রাশিদ, হাদিস/১৯৬৪৮, আহলে হাদীস, অমৃতসর, ৮ পৃ: ১৬ জুলাই ১৯১৫ ইং।
❏ এ বিষয়ে আরেক হাদিসে রয়েছে-
حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ مُجَاهِدٍ الْبَصْرِيُّ، ثنا الْمُنْذِرُ بْنُ الْوَلِيدِ الْجَارُودِيُّ، ثنا أَبِي، ثنا شَدَّادٌ أَبُو طَلْحَةَ الرَّاسِبِيُّ، عَنِ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ سَلْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا رَفَعَ قَوْمٌ أَكُفَّهُمْ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَسْأَلُونَهُ شَيْئًا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَضَعَ فِي أَيْدِيهِمُ الَّذِي سَأَلُوا
-“হজরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন সম্প্রদায় তাদের হাঁতের অগ্রভাগ আল্লাহর দরবারে কোন কিছু প্রার্থনার জন্য উচু করে, তখন আল্লাহর জন্য আবশ্যক হয়ে যায় যে, যা প্রার্থনা করে তা দেওয়া।”
(ইমাম তাবারানী, মু‘জামুল কাবীরে, হাদিস/৬১৪২; ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, হাদিস/১১৮৫৪; ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, হাদিস/২০০৮০; মানাভী, আত্ তায়ছির শরহে জামেউছ ছাগির, ২য় খন্ড, ৩৫০ পৃ:; মুখলিসিয়্যাত, হাদিস/২৮১৫; ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, হা/১৭৩৪১; সান‘আনী, আত্ তানভির শরহে জামেউস সাগির, ৯/৩৯৬ পৃ.)
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
জানাযার পর রাসূলে আকরাম (ﷺ)-এর দোয়া করা:
জানাযার পর রাসূলে আকরাম (ﷺ) দোয়া করেছেন। মুহাদ্দিস ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) আস-সুনানুল কুবরার মধ্যে একটি রেওয়ায়েত এনেছেন, এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে রাসূলে পাক (ﷺ) জানাযার পর মুনাজাত করেছেন। নিম্নে তা দেয়া হল:
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তাদের হাদিস গ্রন্থে বর্ণনা করেন-
عَنْ إِبْرَاهِيمَ الْهَجَرِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى، قَالَ: تُوُفِّيَتْ بِنْتٌ لَهُ فَتَبِعَهَا عَلَى بَغْلَةٍ يَمْشِي خَلْفَ الْجِنَازَةِ، وَنِسَاءٌ يَرْثِينَهَا، فَقَالَ: يَرْثِينَ، أَوْ لَا يَرْثِينَ، فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الْمَرَاثِي .وَلْتُفِضْ إِحْدَاكُنَّ مِنْ عَبْرَتِهَا مَا شَاءَتْ، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا فَكَبَّرَ عَلَيْهَا أَرْبَعًا، ثُمَّ قَامَ بَعْدَ الرَّابِعَةِ قَدْرَ مَا بَيْنَ التَّكْبِيرَتَيْنِ يَسْتَغْفِرُ لَهَا وَيَدْعُو وَقَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصْنَعُ هَكَذَا هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ
-‘‘তাবেয়ী হযরত ইব্রাহিম হাজারী (رحمة الله) বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন আওফা (رضي الله عنه) যিনি বাইতুর রিদওয়ানে উপস্থিত ছিলেন। তার কন্যার ওফাত হলে তিনি তার মেয়ের কফিনের পিছনে একটি খচ্চরের উপর সাওয়ার হয়ে যাচ্ছেন। তখন মহিলারা কান্না করতে ছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন তোমরা মর্সিয়া করো না, যেহেতু হুযুর (ﷺ) মর্সিয়া থেকে নিষেধ করেছেন। তবে তোমাদের মধ্যে যে কেউ চায় অশ্রু ঝরাতে পারবে। এরপর জানাযার নামায চারটি তাকবীরের মধ্যে সম্পন্ন করলেন। চতুর্থ তাকবীরের পর, দুই তাকবীরের মধ্যেখানের সময় পরিমাণ দোয়া করতেছিলেন এবং তিনি (সাহাবী) বললেন, অনুরূপ হুযুর (ﷺ) জানাযায় করতেন।’’ ২১৮
২১৮. আহমদ : আল-মুসনাদ : ৫/৪৭৪-৪৭৫পৃ. হাদিস : ১৮৩৫১; ইমাম বায্যার : আল-মুসনাদ : ৮/২৮৭পৃ.হাদিস : ৩৩৫৫; ইমাম বায়হাকী : আস-সুনানুল কোবরা : ৪/৭০পৃ. হাদিস : ১৫৮১; ইমাম জালালুদ্দিন সূয়তি : জামিউল জাওয়ামে : ১৪/৪৯৩ পৃ. হাদিস : ১১৫৫৪; সুয়ূতি : জামিউল আহাদিস :১৭/১৪৫-১৪৬পৃ. হাদিসঃ ৯৫০৯, দারুল ফিকর ইলমিয়াহ, বয়রুত, লেবানন। সুয়ূতি : জামিউল আহাদিস : ২০/২২৭ পৃ. হাদিসঃ ১৬৪৬৮; সুয়ূতি : জামিউস সগীর, ২/৫৬০ পৃ. হাদিস: ৯৩৮৫; শায়খ ইউসূফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর : ৩/২৬৬পৃ. হাদিস : ১২৮৬৫; আহলে হাদিস নাসিরুদ্দিন আলবানী : সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বইফাহ, হাদিস নং-৪৭২৪; ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল-মুসনাদ : হাদিস : ১৮৬০২; ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক, হাদিস : ১২৭৭; আল্লামা মুত্তাকী হিন্দি : কানযুল উম্মাল, ১৫/৬৫০পৃ. হাদিস নং : ৪২৪৪৬।
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বিন আবু হামযা মালেকী (رحمة الله) “বাহজাতুন নুফুস” এ একটি হাদীস শরীফ এনেছেন। এর দ্বারাও প্রমাণিত হয় হুযুর পুর নূর (ﷺ) জানাযার পর দোয়া করতেন। হাদিস শরীফ খানা নিম্নরূপ:
قَدْ صَلَّى عَلٰى صَبِىٍّ وَدَعَا لَهُ بِاَنَّ يُعَافِيَهَ اَللهُ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ
-“নিশ্চয় রাসূলে পাক (ﷺ) এক ছোট ছেলের জানাযা পড়ান এরপর তার জন্য দোয়া করেন যার ফলে কবরের পরীক্ষা থেকে আল্লাহ তা‘য়ালা তাকে মুক্তি দান করেন।’’ (বাহজাতুন নুফুস, ১ম খ-, ১২২ পৃ:)
রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الدُّعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ- وقال الترمذىهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ قال الحاكم إسناده صحيح
-‘‘হযরত নু‘মান বিন বাশির (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : দোয়া হলো একটি ইবাদত।’’ ২১৯
২১৯. ইমাম আবু দাউদ : আস-সুনান : কিতাবুস-সালাত : ২/৭৬ পৃ. হাদিস : ১৪৭৯, ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : ৪/২৭৯ পৃ. হাদিস : ৪০৪৯, ইবনে মাজাহ : আস-সুনান : ২/১২৫ পৃ. হাদিস : ৩৮২৮, ইবনে হিব্বান : আস-সহীহ : ৩/১৭২ পৃ. হাদিস : ৮৯০, ইমাম হাকেম, আল মুস্তাদরাকে : ২/৫০ : হাদিস : ১৮০২, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : জামেউস সগীর : ১/৬৫৪ : হাদিস : ৪২৫৫, ইমাম আহমদ : আল মুসনাদ : ৪/২৬৭ পৃ., ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : কিতাবুত তাফসীর : ৫/৩৭৪ পৃ. হাদিস : ৩২৪৭, ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : কিতাবুত তাফসীর : ৫/২১১ পৃ. হাদিস : ২৯৬৯, ইমাম নাসায়ী : আস-সুনানুল কোবরা : ৬/৪৫০ পৃ. হাদিস : ১১৪৬৪, ইমাম আবু ই‘য়ালা : আল’মুজাম : ১/২৬২ পৃ. হাদিস : ৩২৮, ইমাম তায়লসী : আল-মুসনাদ : ১/১৮০ পৃ. হাদিস : ৮০১, খতিব তিবরিযী : মেশকাত : কিতাবুত দাওয়াত : ২/৪১৯ পৃ. হাদিস : ২২৩০
তিনি আরো বলেন-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ؓ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: الدُّعَاءُ مُخُّ العِبَادَةِ-
-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, দোয়া হল ইবাদতের মগজ।“ ২২০
২২০. ইমাম তিরমিযী : আস সুনান : ৫/৪৫৬ : কিতাবুত দাওয়াত, হা/৩৩৭১, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : জামেউস সগীর : ১/৬৫৪ : হা/৪২৫৬, সূয়তী, জামেউল আহাদিস : ৪/৩৬০পৃ. হাদিস : ১২১৬০, ইমাম দায়লামী : আল ফিরদাউস : ২/২২৪ পৃ: হাদিস : ৩০৮৭, ইমাম হাকেম তিরমিযী : নাওয়ারিদুল উসূল : ২/১১৩ পৃ:, ইমাম মুনযির : তারগিব আত তারহীব : ২/৩১৭ পৃ: হাদিস : ২৫৩৪, আল্লামা ইবনে রজব : জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম : ১/১৯১ পৃ:, খতিব তিবরিযী : মিশকাত : কিতাবুত দাওয়াত : ২/৪১৯ পৃ. হাদিস : ২২৩১, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : কিতাবুত দাওয়াত : ৫/১২০ পৃ. হাদিস : ২২৩১,তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৩/২৯৩পৃ. হাদিস :৩১৯৬, তাবরানী,কিতাবুদ্-দোয়া, ১/২৪পৃ. হাদিসঃ ৮, ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ৯/৫১১পৃ. হা/৭২৩৭, মিয্যী, তুহফাতুল আশরাফ বি মা‘রিফাতুল আতরাফ, ১/৮০পৃ. হাদিসঃ ১৬৫, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ২/১০৯ পৃ. হা/৬৩৮৬, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/৬২ পৃ. হা/৩১১৪,
সম্মানিত পাঠক! যখন দোয়া করাই ইবাদত এবং ইবাদতের মূল হল দোয়া। ২২১
২২১. এ ব্যাপারে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, أشْرَفُ الْعِبَادَةِ الدُّعاءُ -‘‘রাসুল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান শ্রেষ্ঠ ইবাদাত হলো দোয়া।’’ (ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদাত, ১/৬৬ পৃ. হা/৭১৩, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ২/৬২ পৃ. হা/৩১১৫, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/১৭৭ পৃ. হা/১৮৭১, সালিম জার্রার, মুসনাদে জা‘মে, ১৭/৭১৩পৃ. হা/১৪৩৬, আলবানী, দ্বঈফু আদাবুল মুফরাদ, হা/৭১৩)
পসুতরাং নামাজের পর যারা মুনাজাত করে না তারা অনেক বরকত হতে বঞ্চিত। বরং দোয়া করা হতে যারা বাঁধা প্রদান করে তারা আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)’র দরবারে অপরাধী।