স্বামী ভক্তি


আমাদের দেশের নারীদের মধ্যে একটা অভ্যাস প্রচলিত আছে যে, স্বামী বা পরিবারের পুরুষরা পানাহার না করা পর্যন্ত নারীরা পানাহার করে না। এমনকি ঘরে কোনো কিছু তৈরি করলে আগে সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের পুরুষদেরকে ভালো ও উন্নতগুলো খাওয়ায়, পরে অবশিষ্ট থাকলে নিজেরা খায়। এটা অত্যন্ত ভালো ও প্রশংসীত অভ্যাস। কারণ এতে নারী নিজের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেয় যাকে আরবিতে ‘ঈসার’ বলা হয়।


অনেক স্ত্রী আবার স্বামীর পূর্বে পানাহার করাকে পাপ মনে করে- এটা কিন্তু ঠিক নয়; এটাকে শরয়ী বিধান মনে করা ভুল হবে। তবে এর দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা গভীয় হয় এবং সংসার সুখের হয়।


পরিবারের ঐক্য, শৃঙ্খলা অঁটুট রাখার জন্য পরিবারের সকল সদস্য এক দস্তরখানায় বসে একত্রে পানাহার করা উত্তম। এতে যেমনি আহার্য বস্তুতে বরকত হয়, তেমনি পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক ও মায়া-মমতা গড়ে উঠে, সাথে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর একটি সুন্নাতও প্রতিষ্ঠিত হয়।


হযরত ইবনে হারব  (رضي الله عنه) তার পিতা হতে তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেন, একদা সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা খানা-পিনা করি কিন্তু আমরা পরিতৃপ্ত হইনা। তিনি বললেন, সম্ভবত তোমরা পৃথকভাবে খানা খাও। তারা বললেন, হ্যাঁ, অতপর তিনি বললেন-

 فَاجْتَمِعُوا عَلَى طَعَامِكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ يُباركْ لكم فِيهِ

তোমরা সমবেতভাবে খানা খাবে এবং আল্লাহর নাম নিবে, এতে তোমাদের খানায় বরকত হবে। ২৫৩

২৫৩.আবু দাউদ, সূত্র, মিশকাত, পৃ. ৩৬৯

 

এ ব্যাপারে পিতা-মাতা উভয়ের ভূমিকা রাখা প্রায়োজন। কারণ কোনো একজনের দ্বারা আদর্শ পরিবার গঠন সম্ভবপর নয়। আল্লামা যামখশরী বলেছেন, ‘নারী এবং পুরুষ গাড়ীর দু’টি চাকার ন্যায়, চাকা যদি স্ব স্ব স্থানে বিদ্যমান না থাকে তবে বিপর্যয় অনিবার্য।’ পরিবার নামক গাড়ীটি সঠিকভাবে পরিচালিত করতে নারী ও পুরুষ তথা স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।


আদর্শ স্ত্রীরা পরিবারের সুখ শান্তি বজায় রাখার জন্য একটু অতিরিক্ত কাজ করে থাকে। যেমন স্বামী পক্ষের আত্মীয়-স্বজনের সদাচরণ করা, তাদেরকে মেহমানদারীতে কৃপণতা না করা, তাদের জন্য মাঝে-মধ্যে সামর্থানুযায়ী উপঢৌকন পাঠানো, তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল হওয়ার জন্য স্বামীকে উৎসাহিত করা, স্বামীর কাছে তাদের প্রশংসা করা ইত্যাদি।


কিছু নারী আছে যারা স্বামী পক্ষের আত্মীয়-স্বজনকে খোলামনে মেনে নিতে পারেনা, স্বামী তাদেরকে কিছু প্রদান করা সহ্য করতে পারে না, স্বামী পক্ষের আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসলে মুখভর করে রাখে, স্বামীর কাছে সর্বদা তাদের দোষ-ত্রুটি তুলে ধরে। অপারগ হয়ে তাদের মেহমানদারী করে, তারা চলে গেলে স্বামীকে বলে অমুকের ছেলে গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেছে, অমুকের মেয়ে ওয়াশরুম বরবাদ করে দিয়েছে ইত্যাদি বলে স্বামীর কান ভার করে দেয়। অথচ স্ত্রীপক্ষের কেউ আসলে আন্তরিকতার সহিত স্বতঃস্ফুর্তভাবে পাঁচ রকমের নাস্তা ও সাত প্রকারের রান্না করে মেহমানদারী করে। স্বামী পক্ষ নাস্তা-পানি আনলে ওগুলো রান্নাঘরের এক কোণে ফেলে রাখে, স্বামী জিজ্ঞাসা করলে- “তোমাকে দেখাতে ভুলে গেছি” বলে অল্প নাস্তা প্রকাশ করে স্বামীর সামনে উপস্থিত করে। পক্ষান্তরে নিজের পক্ষের আত্মীয়-স্বজন কিছু আনলে ওগুলো স্বামীকে না দেখানো পর্যন্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেনা। এসব স্ত্রীরা স্বার্থপর ও লোভী। এদের অধিকাংশই স্বামীর ঘরে সুখ-শান্তি পায়না। এসব বিষয় নিয়ে সর্বদা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকে। স্বামী পক্ষের কোন আত্মীয় স্বজন তাদের নিকট আসতে চায়না, কোনো সময় মুছিবতে পড়লে তাদের কেউ এগিয়ে আসতে চায়না।

Top