54 - بَابُ مَا جَاءَ فِيْ الْـحَثِّ عَلَى الْوِتْرِ
153 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِيْ يَعْفُوْرَ الْعَبْدِيِّ، عَنْ مَنْ حَدَّثَهُ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «إِنَّ اللهَ زَادَكُمْ صَلَاةً وَهِيَ وِتْرٌ». وَفِيْ رِوَايَةٍ: «إِنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْكُمْ، وَزَادَكُمُ الْوِتْرَ». وَفِيْ رِوَايَةٍ: «إِنَّ اللهَ زَادَكُمْ صَلَاةَ الْوِتْرِ، وَهِيَ الْوِتْرُ، فَحَافِظُوْا عَلَيْهَا».
বাব নং ৬৯. ৫৪. বিতরের বর্ণনা
১৫৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু ইয়াফুর থেকে, তিনি ঐ ব্যক্তি থেকে, যিনি বর্ণনা করেছেন ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে, ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, আল্লাহ তোমাদের উপর ফরয নামাযের পর আর এক নামায অতিরিক্ত করে দিয়েছেন। তা হলো বিতর।
অপর এক রেওয়ায়েতে আছে। আল্লাহ তোমাদের উপর নামায ফরয করেছেন এবং অতিরিক্ত করে দিয়েছেন বিতর।
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, আল্লাহ তোমাদের জন্য এক নামায অতিরিক্ত করে দিয়েছেন, তা হলো বিতর। সুতরাং এর সংরক্ষণ কর। (মুসনদে আহমদ, ১১/৫১৬/৬৯১৯)
ব্যাখ্যা: আইম্মায়ে সালাসা এবং ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله)’র মতে বিতর সুন্নত। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মতে বিতর ওয়াজিব। তিনি দলীল হিসাবে উপরোক্ত হাদিস ছাড়া আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত বুরাইদার হাদিস পেশ করেন-
قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول الوتر حق فمن لم يوتر فليس منا الوتر حق فمن لم يوتر فليس منا الوتر حق فمن لم يوتر فليس منا-
“বুরাইদা (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, বিতর ওয়াজিব। যে বিতর পড়বে না সে আমাদের দলভূক্ত নয় (কথাটি তিনবার বলেছেন)।
➥ ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) আবু দাউদ শরীফ, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ ২০১
হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
-قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من نام عن وتره او نسيه فليصله اذا اصبح اوذكره
“রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, কেউ বিতর না পড়ে ঘুমিয়ে গেলে কিংবা ভুলে গেলে সে যেন সকালে উঠে পড়ে অথবা যখন মনে পড়বে তখন পড়ে নেয়।”
➥ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله), (৪৮৫ হিঃ) সুনানে সগীর, খন্ড ২, পৃষ্ঠাঃ ১৮৬, হাদীস নং ৫৮৬, বৈরুত
উক্ত হাদিসে বিতরকে কাযা করতে বলা হয়েছে, ওয়াজিব ছাড়া কাযা নেই। সুতরাং বিতর নামায ওয়াজিব। তাছাড়া কোন রেওয়ায়েতে বিতর সম্পর্ক زادكم বলা হয়েছে আবার কোন রেওয়ায়েতে -امدكم বলা হয়েছে। এগুলোর সর্ম্পক আল্লাহর দিকে। অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের জন্য বিতর নামায অতিরিক্ত করেছেন। “আল্লাহ অতিরিক্ত করেছেন” দ্বারা ওয়াজিব বুঝায়। যদি নবী (ﷺ)'র দিকে সম্পর্কিত হতো তবে সুন্নত বুঝাতো।
১৫৪ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ حَمْزَةَ، قَالَ: سَأَلْتُ عَلِيًّا عَنِ الْوِتْرِ: أَحَقٌّ هُوَ؟ قَالَ: أَمَّا كَحَقِّ الصَّلَاةِ، فَلَا، وَلَكِنْ سُنَّةَ رَسُوْلِ اللهِ ، فَلَا يَنْبَغِيْ لِأَحَدٍ أَنْ يَتْرُكَهُ.
১৫৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু ইসহাক থেকে, তিনি আসিম ইবনে হামযা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হযরত আলী (رضي الله عنه)’র নিকট বিতর সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করি যে, এই নামায কি হক (ওয়াজিব)? তিনি বলেন, অন্যান্য নামাযের ন্যায় হক নয়, তবে রাসূল (ﷺ) ’র সুন্নত। সুতরাং এই নামায ত্যাগ করা কারো জন্য উচিত নয়। (সুনানে নাসাঈ, ৩/২৩৫/১৭০০)
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিস বিতরের গুরুত্ব প্রমাণ করে। যদিও তা ফরযের ন্যায় অকাট্য দলীল দ্বারা সাব্যস্ত নয় বলে ফরয হয়নি, কিন্তু নবী করিম (ﷺ) ’র সুন্নত দ্বারা প্রমাণিত বলে তা অবশ্যই ওয়াজিব। ফলে এটা ত্যাগ করা কারো জন্য জায়েয নয়।
১৫৫ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُوْتِرُ بِثَلَاثٍ، يَقْرَأُ فِي الْأُوْلَىٰ: سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَىٰ، وَفِي الثَّانِيَةِ: بِقُلْ يَأَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ، وَفِي الثَّالِثَةِ: بِقُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَقْرَأُ فِي الرَّكْعَةِ الْأُوْلَىٰ مِنَ الْوِتْرِ: بِأُمِّ الْكِتَابِ وَسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَىٰ، وَفِي الثَّانِيَةِ: بِأُمِّ الْكِتَابِ وَقُلْ يَأَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ، وَفِي الثَّالِثَةِ: بِأُمِّ الْكِتَابِ وَقُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَنَّ رَسُوْلَ اللهَ كَانَ يُوْتِرُ بِثَلَاثٍ.
১৫৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বিতরের তিন রাকাত আদায় করতেন। প্রথম রাকাতে سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَىٰ দ্বিতীয় রাকাতে قُلْ يَأَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ এবং তৃতীয় রাকাতে قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ পাঠ করতেন।
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে। রাসূল (ﷺ) বিতরের প্রথম রাকাতে الحمدلله এবং سبح اسم ربّك الاعلى দ্বিতীয় রাকাতে الحمدلله এবং قُلْ يَأَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ এবং তৃতীয় রাকাতে الحمدلله ও قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ পাঠ করতেন।
অপর এক রেওয়ায়েতে আছে, রাসূল (ﷺ) বিতর তিন রাকাত পড়তেন।
ব্যাখ্যা: বিতর নামায কত রাকাত এটা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মতে বিতর তিন রাকাত। ইমাম মালিক ও ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)’র মতে বিতর এক রাকাত। উভয় দল বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত ইবনে ওমর (رضي الله عنه)’র হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। যেমন এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) ’র নিকট রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন-مثنى مثنى فاذا خشيت الصبح فصل ركعة توتر لك صلوتك “রাতের নামায দু’রাকাত, যখন তুমি ভোর হওয়ার আশংকা কর, তখন এক রাকাত পড়ে নাও। এতে তোমার বিতর নামায হয়ে যাবে।”
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে فاوتروا بواحدة “এক রাকাত মিলিয়ে দু’রাকাতকে বিতর করে নাও।”
ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) স্বীয় মাযহাবের পক্ষে কতিপয় জোড়ালো দলীল পেশ করেছেন। প্রথমত: হাদিস يوتر بثلاث “রাসূল (ﷺ) বিতর তিন রাকাত পড়তেন।” অতঃপর প্রত্যেক রাকাতের জন্য পৃথক কিরাত নির্ধারিত ছিল এবং পৃথক তকবীরে তাহরিমা ছাড়া তৃতীয় রাকাত মিলিয়ে পড়ার বিধান জারী ছিল।
দ্বিতীয়ত: বুখারী ও মুসলিম শরীফের শর্ত অনুযায়ী হাকেম হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন,
-كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث لايسلم الافى اخرهن
“রাসূল (ﷺ) বিতর তিন রাকাত পড়তেন এবং শেষে সালাম ফিরাতেন।”
➥ হাকেম, মুস্তাদরাক, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ ৪৪৭, হাদীস নং ১১৪০, বৈরুত
তৃতীয়ত: নাসাঈ শরীফে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে-নবী করিম (ﷺ) বিতরের দু’রাকাতে সালাম ফিরাতেন না”
চতুর্থত: দারেকুতনী ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, وتر الليل ثلاث كوتر النهار صلوة المغرب “রাতের বিতর নামায হলো দিনের বিতর নামায মাগরিবের ন্যায় তিন রাকাত।”
➥ দারেকুতুনী, খন্ড ২, পৃষ্ঠাঃ ২৭, হাদীস নং ১
পঞ্চমত: ইমাম তাহাভী (رحمة الله) আবু খালিদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আবুল আলিয়াকে বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তখন তিনি বলেছেন- সাহাবায়ে কিরাম আমাদেরকে মাগরিবের নামাযের মত বিতর শিক্ষা দিয়েছেন। এটা হলো রাতের বিতর আর মাগরিব হলো দিনের বিতর।
ষষ্ঠত: ইমাম বুখারী (رحمة الله) কাসিম ইবনে মুহাম্মদ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন:- আমরা লোকদেরকে বিতর তিন রাকাত পড়তে দেখেছি।
সপ্তমত: হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র আমলও এরূপ ছিল। হাকেম মুস্তাদরাক গ্রন্থে হাবীবে মুয়ালিম থেকে বর্ণনা করেন যে, কোন এক ব্যক্তি হযরত হাসান (رضي الله عنه)’র নিকট বলেন, ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বিতরে দু’রাকাতের পর সালাম ফিরিয়ে থাকেন। তখন হযরত হাসান (رضي الله عنه) বলেন, হযরত ওমর (رضي الله عنه) ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে অধিক ফকীহ ছিলেন। তিনি দু’রাকাতের পর তাকবীর বলে উঠে যেতেন।
অষ্টমত: ইবনে আবি শায়বা হযরত হাসান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন-
اجتمع المسلمون على ان الوتر ثلاث لا يسلم الا فى اخر منها
“জমহুর মুসলমান ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, বিতর হলো তিন রাকাত এবং নামাযের শেষে ছাড়া কেউ সালাম ফিরায়নি।” নবমত: ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) মুয়াত্তায় হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, এক রাকাত কখনো যথেষ্ট নয়।
এবার উভয় ইমামের দলীল বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। فاوتروا بواحدة অথবা توترلك صلوتك হাদিস দু’টি যদি শাফেঈ ও মালেকী মাযহাবের দলীল হয়, তাহলে হানাফী মাযহাবেরও দলীল হবে। কেননা এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, ঐ দু’রাকাত নামাযের সাথে আরো এক রাকাত মিলিয়ে তিন রাকাত বিতর করে নাও। নতুন তাকবীরে তাহরীমার মাধ্যমে বিতরকে এক রাকাত হিসেবে পৃথক আদায় করা উদ্দেশ্য নয়। এটা শুধু মনের খেয়াল ও ধারণা। সুতরাং উভয় অর্থবোধক হাদিস কীভাবে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে?
এছাড়াও হানাফী মাযহাবের পক্ষে বুখারী শরীফে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে হাদিস বর্ণিত আছে-
انه سأل عائشة رضى الله عنها كيف كانت صلوة رسول الله فى رمضان فقالت ما كان رسول الله يزيد فى رمضان ولافى غيره على احدى عشرة ركعة يصلى اربعًا فلاتسئل عن حسنهن وطولهن ثم يصلى اربعًا فلا تسئل عن حسنهن وطولهن ثم يصلى ثلاثا الخ-
“আবু সালমা ইবনে আব্দুর রহমান (رحمة الله) আয়েশা (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞাসা করেন, রমযান মাসে রাসূল (ﷺ) ’র নামায কেমন ছিল? তিনি বললেন, রাসূল (ﷺ) রমযান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতের বেলা) এগার রাকাতের বেশী নামায আদায় করতেন না। তিনি (প্রথমে) চার রাকাত নামায পড়তেন। তুমি সেই নামাযের সৌন্দর্য ও দীর্ঘত্ব সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করোনা। তারপর চার রাকাত নামায পড়তেন, এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘত্ব সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করোনা। অতঃপর তিনি তিন রাকাত (বিতর) নামায পড়তেন।”
➥ ইমাম বুখারী (رحمة الله) (২৬১ হিঃ) সহীহ বুখারী, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ ১৫৪, হাদিস নং ১০৮১
এই হাদিসেও আট রাকাত তাহাজ্জ্বদ নামাযের সাথে রাসূল (ﷺ) তিন রাকাত বিতর পড়ার উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মাযহাবই অধিক বিশুদ্ধ।
১৫৬ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ زُبَيْدِ بْنِ الْـحَرْثِ الْيَامِيِّ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ أَبْزَىٰ، قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَقْرَأُ فِيْ وِتْرِهِ: سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَىٰ، وَقُلْ يَأَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ فِي الثَّانِيَةِ، وَقُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ فِي الثَّالِثَةِ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَنَّ النَّبِيَّ كَانَ يَقْرَأُ فِي الْوِتْرِ فِي الرَّكْعَةِ الْأُوْلَىٰ: سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَىٰ، وَفِي الثَّانِيَةِ: قُلْ لِلَّذِيْنَ يَعْنِيْ: قُلْ يَأَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ، فَهَكَذَا فِيْ قِرَاءَةِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ، وَفِي الثَّالِثَةِ: قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَنَّهُ كَانَ يَقْرَأُ فِي الْوِتْرِ فِي الرَّكْعَةِ الْأَوْلَىٰ: سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَىٰ، وَفِي الثَّانِيَةِ: قُلْ يَأَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ، وَفِي الثَّالِثَةِ: قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: كَانَ يُوْتِرُ بِثَلَاثِ رَكَعَاتٍ، يَقْرَأُ فِيْهَا: سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَىٰ، وَقُلْ يَأَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ، وَقُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ.
১৫৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা যুবাইদ ইবনে হারেস থেকে, তিনি আবু ওমর থেকে, তিনি আব্দুর রহমান ইবনে আবযা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) স্বীয় বিতর নামাযে (প্রথম রাকাতে) সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফেরুন এবং তৃতীয় রাকাতে قل هو الله احد পাঠ করতেন।
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, নবী করিম (ﷺ) বিতরের প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে কাফেরুন পাঠ করতেন। ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এরূপ পাঠ করেছেন এবং তৃতীয় রাকাতে قل هو الله احد পাঠ করতেন।
অপর এক রেওয়ায়েতে আছে, রাসূল (ﷺ) বিতরের প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন এবং তৃতীয় রাকাতে قل هو الله احد পাঠ করতেন।
অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ) বিতর তিন রাকাত আদায় করতেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন এবং তৃতীয় রাকাতে قل هو الله احد পাঠ করতেন।
157 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِيْ سُفْيَانَ، عَنْ أَبِيْ نَضْرَةَ، عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «لَا فَصْلَ فِي الْوِتْرِ».
১৫৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু সুফিয়ান থেকে, তিনি আবু নাদ্বরা থেকে, তিনি আবু সাঈদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, বিতর নামাযে (নতুন তাহরীমার মাধ্যমে) কোন বিভক্তি নেই।
158 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ، يَقُوْلُ: «اَلْوِتْرُ أَوَّلَ اللَّيْلِ مُسْخَطَةٌ لِلشَّيْطَانِ، وَأَكْلُ السَّحُوْرِ مَرْضَاةُ الرَّحْمٰنِ».
১৫৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, প্রথম রাতের বিতর শয়তানকে রাগান্বিত করে এবং (মধ্যরাতে) সাহ্রী খাওয়া আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়।
ব্যাখ্যা: প্রথম রাতের বিতর শয়তানের রাগের কারণ হলো- এর দ্বারা তার সমস্ত আশা-আকাঙ্কা ও ধোকা দেওয়ার সমস্ত কৌশল ব্যর্থ হয়ে যায়। যদি নামাযী শুয়ে যায় এবং গভীর নিদ্রার কারণে বিতর কাযা হয়ে যায় তখন শয়তান আনন্দ লাভ করে এবং সফল হয়। কিন্তু প্রথম রাতে বিতর আদায় করা হলে শয়তান অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত হয়।
সাহরীর ফযীলত সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদিস রয়েছে। প্রথমত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে فى اكل السحور بركة “সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে।” একদিকে রাসূল (ﷺ) ’র অনুসরণের মধ্যে মঙ্গল ও বরকত রয়েছে, অপর দিকে সাহ্রী খাওয়ার ফলে রোযা পালনকারী দুর্বল হয়না। সুস্থ ও সবল দেহে ইবাদত ও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করতে পারে।
১৫৯ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ أَبِيْ عَبْدِ اللهِ الْـجَدَلِيِّ، عَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ الْأَنْصَارِيِّ ، قَالَ: أَوْتَرَ رَسُوْلُ اللهِ أَوَّلَ اللَّيْلِ، وَأَوْسَطَهُ، وَآخِرَهُ، لِكَيْ يَكُوْنَ وَاسِعًا عَلَى الْـمُسْلِمِيْنَ، أَيَّ: ذَلِكَ أَخَذُوْا بِهِ كَانَ صَوَابًا، غَيْرَ أَنَّهُ مَنْ طَمِعَ لِقِيَامِ اللَّيْلِ، فَلْيَجْعَلْ وِتْرَهُ فِيْ آخِرِ اللَّيْلِ، فَإِنَّ ذَلِكَ أَفْضَلُ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ أَبِيْ عَبْدِ اللهِ الْـجَدَلِيِّ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، وَأَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ ، أَنَّهُمَا قَالَا: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُوْتِرُ أَحْيَانًا أَوَّلَ اللَّيْلِ، وَأَوْسَطَهُ، وَآخِرَهُ، لِيَكُوْنَ سَعَةً لِلْمُسْلِمِيْنَ.
১৫৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আবু আব্দুল্লাহ জাদলী থেকে, তিনি আবু মাসউদ আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) প্রথম রাতে, মধ্যরাতে এবং শেষ রাতে বিতর নামায আদায় করেছেন। যাতে এ নামায আদায় করার জন্য মুসলমানদের দীর্ঘ সময় হাতে থাকে। এর মধ্যে যে কোন সময় এই নামায আদায় করলে চলবে। অবশ্য যে ব্যক্তি রাতে (তাহাজ্জুদের জন্য) জাগ্রত হওয়ার ব্যাপারে একান্ত ভরসা থাকে, তার জন্য শেষ রাতে বিতর পড়া উচিত। কেননা (এরূপ ব্যক্তির জন্য) শেষ রাতে বিতর পড়া উত্তম।
অন্য এক রেওয়ায়েতে উকবা ইবনে আমির (رضي الله عنه) এবং আবু মূসা আশআরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ) কখনো প্রথম রাতে, কখনো মধ্যরাতে এবং কখনো শেষ রাতে বিতর আদায় করতেন। যাতে এ বিষয়ে মুসলমানগণ স্বাধীন থাকে এবং যথেষ্ট সময় পায়। (মুসলিম, ২/১৬৮/১৭৭১)