বিষয় নং-০৫: পিতা-মাতার কবরের নিকট সূরা ইয়াসিন পাঠ করা:
কবরের নিকটে কুরআন তেলাওয়াত করা একটি পন্যময় কাজ। অথচ ধোঁকাবাজ ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৫৯৮ পৃষ্ঠায় এ বিষয়ে লিখেছেন-‘‘কবর যিয়ারতের সময় কুরআন তিলাওয়াত বা কোনো সূরা পাঠের বিষয়ে কোনো সহীহ হাদীস বর্ণিত হয় নি।’’ এ সমস্ত ধোঁকাবাজ লেখকরা এ ধরনের মিথ্যাচার লিখে মানুষদেরকে হয়রানি করছেন প্রতিনিয়ত। তিনি কবরের নিকট কুরআন তিলাওয়াতের পক্ষে যে হাদিসগুলো বর্ণিত হয়েছে এর মধ্যে নি¤েœর হাদিসটিও একটি। তিনি উক্ত হাদিসকে কৌশলে জাল প্রমাণ করার অপচেষ্টা করেছেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা হল কবরের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করলে কবরবাসীর জন্য উপকারী।
❏ ইমাম আবু মুহাম্মদ হাছান ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাছান বাগদাদী আল-খিলাল (رحمة الله) ওফাত ৪৩৯ হিজরী তদীয় কিতাবে হাদিস উল্লেখ করেন,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ شَاذَانَ، ثنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَامِرٍ الطَّائِيُّ، حَدَّثَنِي أَبِي، ثنا عَلِيُّ بْنُ مُوسَى، عَنْ أَبِيهِ، مُوسَى عَنْ أَبِيهِ، جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِيهِ، مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَلِيٍّ، عَنْ أَبِيهِ الْحُسَيْنِ، عَنْ أَبِيهِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَرَّ عَلَى الْمَقَابِرِ وَقَرَأَ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ إِحْدَى عَشْرَةَ مَرَّةً، ثُمَّ وَهْبَ أَجْرَهُ لِلْأَمْوَاتِ أُعْطِيَ مِنَ الْأَجْرِ بِعَدَدِ الْأَمْوَاتِ
-“হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন কবরের নিকট দিয়ে অতিক্রম করল এবং ১০ বার সূরা এখলাছ পাঠ করে মৃতদের রুহে দান করল, তাতে মৃতদের সংখ্যা অনুসারে সওয়াব প্রদান করা হবে।”
(ফাদ্বাইলে সুরাতিল ইখলাছ, হাদিস নং ৫৪; ইহা “আবূ মুহাম্মদ সমরকান্দী র:” বর্ণনা করেছেন; তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খণ্ড, ১০৫ পৃ:; তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৯ম খণ্ড, ২৮১ পৃ:; সুনানে দারে কুতনী আনাস রা: হতে; তাহতাবী শরীফ, ৬২২ পৃ:; ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বূখারী, ৩য় খণ্ড, ১১৮; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৭১৭ নং হাদিসের ব্যাখ্যা; মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩য় খণ্ড, ২৭৫ পৃ:; ইমাম আবু বকর নাজ্জার তদীয় সুনানে)
❏ এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (رحمة الله) বলেন,
روى أَبُو بكر النجار فِي كتاب (السّنَن) عَن عَليّ بن أبي طَالب، رَضِي الله تَعَالَى عَنهُ،
-“আবু বকর নাজ্জার তার কিতাবুস সুনান-এ হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।”
(ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী, ৩য় খণ্ড, ১১৮ পৃ:)
এই হাদিসের সনদ নিয়ে কোন ইমাম সমালোচনা করেননি।
❏ এর আরেকটি সনদ আল্লামা আবুল কাশেম রাফেয়ী ফাজুনী (رحمة الله) ওফাত ৬২৩ হিজরী তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,
ثنا داؤد بْنُ سُلَيْمَانَ الْغَازِيُّ أَنْبَأَ عَلِيُّ بْنُ مُوسَى الرِّضَا حَدَّثَنِي أَبُو مُوسَى بْنِ جَعْفَرٍ عَنْ أَبِيهِ جَعْفَرَ بْنَ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ مُحَمَّدِ بْنِ عَلِيٍّ عَنْ أَبِيهِ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ عَنْ أَبِيهِ الْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيّ عَنْ أَبِيهِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ:
-“দাউদ ইবনে সুলাইমান গাজী- আলী ইবনে মূসা রিদ্বা হতে- আবু মূসা ইবনে জাফর হতে- তদীয় পিতা জাফর ইবনে মুহাম্মদ হতে- তদীয় পিতা মুহাম্মদ ইবনে আলী হতে- তদীয় পিতা আলী ইবনে হুছাইন হতে- তদীয় পিতা হুছাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) হতে- তদীয় পিতা আলী ইবনে আবী তালিব (رضي الله عنه) থেকে- আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন: (পূর্বের হাদিসের অনুরূপ)।
(তাদবীর ফি আখইয়ারে কাজবীন, ২য় খণ্ড, ২৯৭ পৃ:)
এই হাদিস কবর যিয়ারতের সময় সূরা-ক্বেরাত পাঠ করে সওয়াব রেছানী করার উত্তম দলিল। সুতরাং কবর যিয়ারতকালে সূরা ইখলাছ পাঠ করে ইহার সওয়াব মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিয়ে দেওয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
এ বিষয়ে ফকীগণের অভিমত:
১.আল্লামা জয়নুদ্দীন আব্দুল কাদির হানাফী (رحمة الله) লিখেন-
قِرَاءَة الْقُرْآن عِنْد الْقُبُور وَكره أَبُو حنيفَة قِرَاءَة الْقُرْآن عِنْد الْقُبُور وَقَالَ مُحَمَّد لَا يكره وَينْتَفع بِهِ الْمَيِّت وَهَذَا هُوَ الْمُخْتَار
-‘‘কবরের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করার বিষয়ে ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)-এর (প্রাচীন) মত হল মাকরুহ, কিন্তু ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله)-এর মতে এটি মাকরুহ নয়, কেননা তার দ্বারা মৃত ব্যক্তির উপকার হয়। আর এটাই গ্রহণযোগ্য মত।’’
(তুহফাতুল মুলুক, ১/২৮৩ পৃ. ক্রমিক. ৪৮৮)
২. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) লিখেন-
ولا بأس بقراءة القرآن عند القبور
-‘‘কবরের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’
(বেনায়া শারহুল হিদায়া, ৩/২৬২ পৃ.)
❏ তিনি তার আরেক কিতাবে লিখেন-
إثبات انتفاع الميت بتسبيح غيره، ولهذا استحب العلماء قراءة القرآن عند القبر
-‘‘কবরের নিকট কোন তাসবীহ তাহলীল (কুরআন) পড়া মৃত ব্যক্তির জন্য উপকারী এ বিষয়টি দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত। উলামায়ে কিরামের নিকট কবরের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব।’’
(শরহে সুনানে আবি দাউদ, ১/৮৫ পৃ.)
৩. ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ আবু ফযল হানাফী (ওফাত. ৬৮৩ হি.) লিখেন-
وَلَا يَكْرَهُهُ مُحَمَّدٌ، وَبِهِ نَأْخُذُ لِمَا فِيهِ مِنَ النَّفْعِ لِلْمَيِّتِ لِوُرُودِ الْآثَارِ بِقِرَاءَةِ آيَةِ الْكُرْسِيِّ وَسُورَةِ الْإِخْلَاصِ وَالْفَاتِحَةِ وَغَيْرِ ذَلِكَ عِنْدَ الْقُبُورِ. وَمَذْهَبُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ أَنَّ لِلْإِنْسَانِ أَنْ يَجْعَلَ ثَوَابَ عَمَلِهِ لِغَيْرِهِ وَيَصِلُ لِحَدِيثِ الْخَثْعَمَيَّةِ وَقَدْ مَرَّ فِي الْحَجِّ
-‘‘ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) বলেন, কবরের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ নয়, হানাফী মাযহাবের ফকীহগণ এ মতটিকেই গ্রহণ করেছে, কেননা এর দ্বারা মৃত ব্যক্তি উপকারী হয়ে থাকে, কবরের নিকট আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাস, সূরা ফাতেহাসহ অন্যান্য আয়াত পড়ার বিষয়ে অনেক আছার বর্ণিত হয়েছে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মাযহাব হলো, কোনো জীবিত মানুষ মৃত ব্যক্তির জন্য কোনো সাওয়াব বখশিস করলে তা মৃত ব্যক্তি পায় যেমনটি মৃতদের পক্ষে হজ্জ করার হাদিস থেকে বুঝা যায়।’’
(ইখতিয়ার লিতা‘লীলিল মুখতার, ৪/১৭৯ পৃ.)
৪. ইমাম যায়লাঈ (رحمة الله) লিখেন-
وَهَلْ قِرَاءَةُ الْقُرْآنِ عِنْدَ الْقُبُورِ مَكْرُوهَةٌ؟. تَكَلَّمُوا فِيهِ قَالَ أَبُو حَنِيفَةَ يُكْرَهُ، وَقَالَ مُحَمَّدٌ لَا يُكْرَهُ. اهـ. وَمَشَايِخُنَا أَخَذُوا بِقَوْلِ مُحَمَّدٍ رَجُلٌ مَاتَ فَأَجْلَسَ وَارِثُهُ رَجُلًا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ عَلَى قَبْرِهِ
-‘‘কবরের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ? ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)-এর নিকট এটি মাকরুহ, ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) বলেন, এটি মাকরুহ নয়। আমাদের মাশায়েখে কিরামগণ ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله)-এর অভিমতকে গ্রহণ করেছেন, বলেছেন কোন ব্যক্তির উত্তরাধিকারী তার আতœীয় ব্যক্তির কবরের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করবে।’’
(তাবায়েনুল হাকায়েক, ১/২৪৬ পৃ.)
৫. ইমাম ইবনে নুজাইম মিশরী (رحمة الله) লিখেন-
وَلَا بَأْسَ بِقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ عِنْدَ الْقُبُورِ
-‘‘কবরের নিকট কোরআন তিলাওয়াত করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’
(বাহরুর রায়েক, ২/২১০ পৃ.)
❏ তিনি আরও লিখেন-
وَالشَّيْخُ مُحَمَّدُ بْنُ إبْرَاهِيمَ قَالَ لَا بَأْسَ أَنْ يَقْرَأَ سُورَةَ الْمُلْكِ عَلَى الْمَقَابِرِ سَوَاءٌ أَخْفَاهَا أَوْ جَهَرَ بِهَا أَمَّا غَيْرُهَا فَلَا يَقْرَؤُهَا لِوُرُودِ الْآثَارِ بِسُورَةِ الْمُلْكِ وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ يُسْتَحَبُّ زِيَارَةُ الْقَبْرِ وَقِرَاءَةُ سُورَةِ الْإِخْلَاصِ سَبْعَ مَرَّاتٍ فَإِنْ كَانَ الْمَيِّتُ غَيْرَ مَغْفُورٍ لَهُ غُفِرَ لَهُ وَإِنْ كَانَ مَغْفُورًا لَهُ غُفِرَ لِهَذَا الْقَارِئِ وَوُهِبَتْ ذُنُوبُهُ لِلْمَيِّتِ وَفِي التَّتَارْخَانِيَّة: رَجُلٌ مَاتَ فَأَجْلَسَ وَارِثُهُ رَجُلًا عَلَى قَبْرِهِ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ قَالَ بَعْضُهُمْ يُكْرَهُ وَالْمُخْتَارُ أَنَّهُ لَا يُكْرَهُ وَالْأَشْبَهُ أَنَّهُ يَنْتَفِعُ الْمَيِّتُ وَفِي الْخَانِيَّةِ أَنَّ قِرَاءَةَ الْقُرْآنِ عِنْدَ الْقُبُورِ
-‘‘শায়খ মুহাম্মদ বিন ইবরাহিম (رحمة الله) বলেন, কবরের নিকট সূরা মুলক তিলাওয়াত করায় কোনো অসুবিধা নেই, সেটা জোরে বা নিরবে হোক না কেন।..........ইমাম আবু বকর ইবনে আবি সাঈদ (رحمة الله) বলেন, মুস্তাহাব হচ্ছে কবরের নিকট সূরা ইখলাস সাতবার পাঠ করা, কেননা তাতে মৃত ব্যক্তির গুণাহ এবং যে পাঠ করেছে তার গুণাহ মাফ করা হয়। ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়াতে এসেছে, কোন মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী তার আত্মীয় ব্যক্তির কবরের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করবে, কেউ কেউ বলেছেন এমনটি করা মাকরুহ, কিন্তু গ্রহণযোগ্য মত হলো, এটি মাকরুহ নেই। আশবাহ গ্রন্থে এসেছে, জীবিতদের কুরআন তিলাওয়াত দ্বারা মৃতের উপকার হয়। খানিয়া কিতাবে এসেছে, নিশ্চয় মৃত ব্যক্তির কবরের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করবে।’’
(ইবনে নুযাইম মিশরী, বাহরুর রায়েক, ৮/২৩৫ পৃ.)
❏ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) লিখেন-
وقال القرطبي: فيه دليل على أن الدعاء يصلُ من الأحياء إلى الأمْوات.
-‘‘ইমাম কুরতুবী (رحمة الله) বলেন, এ হাদিস এ বিষয়ের দলিল যে, কোনো ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ইস্তিগফার করলে তা পৌঁছে।’’
(শরহে সুনানে আবি দাউদ, ৪/২৩৯ পৃ.)
প্রথম সূত্র:
❏ ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا مُحَمد بْنُ الضَّحَّاكِ بْنُ عَمْرو بْنِ أَبِي عَاصِمٍ النبيل، حَدَّثَنا يزيد بن خالد الأصبهاني، حَدَّثَنا عَمْرو بن زياد، حَدَّثَنا يَحْيى بْنُ سُلَيْمٍ الطَّائِفِيُّ عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، عَن أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقُول: مَن زَارَ قَبْرَ وَالِدَيْهِ أَوْ أَحَدِهِمَا يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَقَرَأَ يس غُفِرَ لَهُ.
-‘‘হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) তিনি তাঁর পিতা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার পিতামাতা উভয়ের বা একজনের কবর শুক্রবার দিন যিয়ারত করবে এবং তাদের কবরের নিকট সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে, তাহলে তাকে ক্ষমা করা হবে।’’ ১২
➥{ইমাম ইবনে আদি : আল কামিল : ৫/১৫১ পৃ: হাদিস:১৩১৬, ইমাম সূয়তী : আল জামিউস সগীর : ২/৬২২ পৃ. : হা/৮৭১৭, ও জামিউল আহা/২০/৩৪৪পৃ. হাদিস:২২৩০২, ইমাম মানাবী : ফয়জুলু কাদীর : ৬/১৪১ পৃ. : হা/৮৭১৭, আল-মুত্তাকী হিন্দী : আল-কানযুল উম্মাল , ১৬/৪৬৮পৃ.হাদিস ৪৫৪৮৬, আল-মুত্তাকী হিন্দী : আল-কানযুল উম্মাল, ১৬/৪৭৯পৃ. হাদিস ৪৫৫৪১, সাজারী, তারতিবুল আমালি, ২/১৬৯পৃ. হাদিস, ২০০৪, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ৩/১৮৫পৃ. হাদিস, ১১৮২০, ইরাকী, তাখরীজে ইহইয়াউল উলূম, ৬/২৬১০পৃ. সালিম র্জারার, ইমাঈ ইলা যাওয়াইদ, ৪/১১৫পৃ. হাদিস, ৩১৯০, আবি দুনিয়া, মাকারিমুল আখলাক্ব, ১/৮৩পৃ. হাদিস, ২৪৯, আলবানী, দ্বঈফাহ, ১/১২৬পৃ.হাদিস, ৫০, তিনি বলেন হাদিসটি জাল।}
পর্যালোচনা:
‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৫৯৮ পৃষ্ঠায় একে জাল প্রমাণের প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। তার এ তাহকীক ভুয়া তাহকীককারী আহলে হাদিস নাসিরুদ্দিন আলবানীর লিখিত ভ্রান্ত কিতাব ‘সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ’ হাদিস নং ৫০ এর আলোচনার হুবহু নকল। একই ভাবে এই বিষয়টি নিয়ে আরেকজন ধোঁকাবাজ ড. আহমদ আলী তার রচিত “বিদ’আত” গ্রন্থের ২/১৭৩ পৃষ্ঠাও অনেক আপত্তিকর কথা লিখেছেন। তারা একজন রাবী নিয়ে আলোচনা করে উক্ত হাদিসকে জাল বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ সনদের মধ্যে শুধু রাবী ‘আমর ইবনে যিয়াদ’ নামক রাবীই সমালোচিত। তিনি এ সনদে তার শায়খ ‘ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইম আত-তায়ী’ হতে বর্ণনা করেন; কিন্তু ইমাম আবু নুয়াইমের সংকলিত সনদে তিনি তার শায়খ ‘ইয়াহইয়া ইবনে সুলাইমান’ হতে এ হাদিসটি বর্ণনা করেন।
দ্বিতীয় সূত্র:
❏ যেমন ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) সংকলন এভাবে-
حَدَّثَنَا أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَيَّانَ، ثنا أَبُو عَلِيِّ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، ثنا أَبُو مَسْعُودٍ يَزِيدُ بْنُ خَالِدٍ، ثنا عَمْرُو بْنُ زِيَادٍ الْبَقَّالُ الْخُرَاسَانِيُّ بِجُنْدَيْسَابُورَ، ثنا يَحْيَى بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، عَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ، ؓ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: مَنْ زَارَ قَبْرَ وَالِدَيْهِ فِي كُلِّ جُمُعَةٍ فَقَرَأَ عِنْدَهُمَا، أَوْ عِنْدَهُ يس، غُفِرَ لَهُ بِعَدَدِ كُلِّ آيَةٍ أَوْ حَرْفٍ
-‘‘আমাকে হাদিস বলেছেন হযরত আবু মুহাম্মদ ইবনে হাইয়ান (رحمة الله) তিনি......তিনি হিশাম বিন উরওয়া (রহ.) তিনি তার পিতা থেকে তিনি হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে তিনি হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি .....।’’ ১৩
➥{ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, তারীখে ইস্পাহান, ২/৩২৩পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।}
প্রত্যেকটি সনদেই রাবী ‘আমর ইবনে যিয়াদ’ রয়েছেন, সে দুর্বল রাবী তাতে সকলেই একমত, কিন্তু হাদিসটির একাধিক ধারায় বর্ণিত হওয়ার একটি শক্তি অর্জিত হয়।
❏ ইমাম ছালাভী (رحمة الله) সংকলন করেন-
وأخبرني الحسين بن محمد الثقفي قال: حدّثنا الفضل بن الفضل الكندي قال: حدّثنا حمزة بن الحسين بن عمر البغدادي قال: حدّثنا محمد بن أحمد الرياحي قال: حدّثنا أبي قال: حدّثنا أيوب بن مدرك عن أبي عبيدة عن الحسن عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ دَخَلَ الْمَقَابِرَ فَقَرَأَ سُورَةَ يس خَفَّفَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَكَانَ لَهُ بِعَدَدِ مَنْ فِيهَا حَسَنَاتٌ
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যদি কেউ কবরস্থানে প্রবেশ করে সূরা ইয়াছিন পাঠ করে, আল্লাহ তা’য়ালা এর ফলে কবর বাসীদের শাস্তি হালকা করে দেন। এবং ঐ ব্যক্তিকে নেকী দান করবেন কবরবাসীদের সংখ্যানুসারে।” ১৪
➥{তাফছিরে ছা’লাভী, ৮ম খণ্ড, ১১৯ পৃ:; আব্দুল আজিজ তাঁর ‘খিলাল’ গ্রন্থে স্বীয় সূত্রে বর্ণনা করেছেন; ফতোয়ায়ে শামী, ৩য় খণ্ড; তাফছিরে মাজহারী, ৯ম খণ্ড, ১০৫ পৃ:; ফতোয়ায়ে বাহরুর রায়েক্ব, ২য় খণ্ড, ৩৪৩ পৃ:; ইমাম কুরতুবী: আত তাজকিরা, ১ম খণ্ড, ৮৪ পৃ:; তাহতাবী শরীফ, ৬২১ পৃ:; আল আমরু বিল মারুফ ওয়াননাহি আনিল মুনকার লিল খিলাল, ১ম খণ্ড, ৯০ পৃ:; ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বূখারী, ৩য় খণ্ড, ১১৮ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩য় খণ্ড, ১২২৮ পৃ:; মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩য় খণ্ড, ২৭৫ পৃ.}
পর্যালোচনা:
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, কবর যিয়ারতের সময় সূরা ইয়াছিন পাঠ করে মৃত ব্যক্তির রুহে বকশিস করে দেওয়া অনেক নেকীর কাজও বটে। এই হাদিসের সনদ নিয়ে সমালোচনা করেছেন এমন কোন ইমামের কথা খুঁজে পাইনি।
❏ তবে আহলে হাদিস মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী লিখেছেন-
وَهَذِهِ الْأَحَادِيثُ وَإِنْ كَانَتْ ضَعِيفَةً فَمَجْمُوعُهَا يَدُلُّ عَلَى أَنَّ لِذَلِكَ أَصْلًا
-“এই হাদিস সমূহ যদিও যঈফ কিন্তু সব গুলো একত্রিত করে দলিল বুঝা যায় ইহার ভিত্তি রয়েছে।”
(মুবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৩য় খণ্ড, ২৭৫ পৃ: ৬৬৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)
আর ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সর্বশেষে নিজেই স্বীকার করেছেন যে, হাদিসটির দুটি সূত্র রয়েছে। তাই আমি বলবো, তিনটি সূত্রকে একত্রিত করলে এক প্রকার শক্তি অর্জিত হয় যা কমপক্ষে ‘হাসান’ পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
ধোঁকাবাজদের চিনে রাখুন!
❏ কবরে কোরআন তিলাওয়াত করার বিষয়ে আহলে হাদিসদের তথাকথিত মুফতি ইবনে বায লিখেন-
لا تشرع قراءة سورة (يس) ولا غيرها من القرآن على القبر بعد الدفن ولا عند الدفن، ولا تشرع القراءة في القبور؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم لم يفعل ذلك ولا خلفاؤه الراشدون، كما لا يشرع الأذان ولا الإقامة في القبر، بل كل ذلك بدعة،
-‘‘দাফনের পরে সূরা ইয়াসীনসহ কোরআনের কোনো স্থান থেকে পড়া শরীয়তে বৈধ নয়, এমনকি দাফনের সময়েও, কেননা কবরের নিকট কোরআন তিলাওয়াত করা শরীয়তে বৈধ নয়। নিশ্চয় নবী করীম (ﷺ) এমনটি করেননি, তাঁর খুলাফাগণও করেননি, তেমনিভাবে কবরে আযান, ইকামত দেয়াও বৈধ নয়, বরং এ সব বিদ‘আত।’’
(ইবনে বায, মাজমূআয়ে ফাতওয়ায়ে ইবনে বায, ১৩/২০৩ পৃ.)
পাঠকবর্গ! আমরা ইতোপূর্বের আলোচনায় দেখে এসেছি যে, কবরে কোরআন তিলাওয়াত করার বিষয়ে স্বয়ং রাসূল (ﷺ)-এর আদেশ রয়েছে এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের মধ্যে মাওলা আলী (رضي الله عنه) হতেও একটি সূত্র বর্ণিত রয়েছে। তাহলে সুস্পষ্টভাবে এ মুফতির মিথ্যাচার পরিলক্ষিত হল।