৪. নারীর সামাজিক দায়িত্ব পালনে পার্থক্য


মানুষের রূহ অনন্তকালের জন্য স্থায়ী। তবে এ রূহকে স্বল্পতম সময়ের জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে সৎ কল্যাণ করার জন্য। এ কর্মের ওপরই নির্ভর করে পরকালীন জীবনের অনন্ত সুখ। এ পৃথিবীতে মানুষের কর্মের স্থল দুটি। একটি পরিবারে, অন্যটি পরিবারের বাইরে। নর ও নারীর এ দায়িত্ব পালনের ভিন্নতা রয়েছে। নর ও নারী মিলেমিশে এ সংসার জীবনকে সুন্দরময় করার গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে ইসলামে। নর কাজ করবে বাহিরে, নারী থাকবে ঘরে। দুজনই যদি একই কাজ করে তাহলে আরেকটি কাজ সমাধান হওয়ার সুযোগ নেই। বলা যায় নারী যদি পরিবারের দায়িত্ব ছেড়ে বাইরে চলে যায় তাহলে পরিবারের যাবতীয় কাজ কে করবে? হয়তো কে ঘরে করবে, আর কে বাইরে করবে- তার দায়িত্ব অধীনস্থ করে দেয়নি। এটা নির্ধারণ করে, মুক্ত করে বা স্বাধীন করে নর বা নারীকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাই এ দায়িত্ব নিয়ে নারীরা আজ সংশয়ে আছে; কিন্তু গর্ভে সন্তান ধারণ তো আল্লাহ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এ দায়িত্ব থেকে নারী তো ইচ্ছা করলে মুক্ত হতে পারে না। কই এ দায়িত্ব নিয়ে তো তাদের অমনোযোগিতা নেই। কারণ এটা তাদের স্বাধীন মনের বাইরে। এর ওপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তাহলে ঘরের কাজ করতে এত আপত্তি কেন? এটা তো আল্লাহই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাই নারীদের সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে প্রথমে তারা সন্তান গর্ভে ধারণ করে। এ দায়িত্ব নরের নেই। সন্তানকে লালন-পালন করা, স্নেহ-মায়া-মমতা দিয়ে তা আঁকড়িয়ে রাখা, দুধ খাওয়ানো হল নারীর প্রথম দায়িত্ব। এ দায়িত্বের পাশাপাশি তাদের দায়িত্ব সংসারে রাণী হিসেবে সংসার পরিচালন করা। “সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে” প্রবাদ বাক্যটি যথার্থ সার্থকতায় রূপ দেয়াও তাদের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। মসজিদে ইমামতি তারা করতে পারে না। এ দায়িত্ব নরের। সাক্ষীর ক্ষেত্রে তাদের ২জন নারীকে একজন পুরুষের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। রাসূলে করীম  বলেছেন- “এবং নারী তার স্বামীর ঘরের পরিচালিকা, রক্ষণাবেক্ষণকারিনীর কর্ত্রী।” নর ও নারীর জ্ঞান বৃদ্ধি, কর্মদক্ষতা ও দৈহিক আঙ্গিকের স্বাভাবিক পার্থক্যের কারণে সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তারতম্য করা হয়েছে। পারিবারিক জীবনে নর ও নারীর মধ্যে কর্ম বণ্টনের নীতি পূর্ণ নির্ধারণ করা হয়েছে। পুরুষকে করা হয়েছে আয় রোজগার ও শ্রম মেহনতের জন্য দায়িত্বশীল আর নারীকে করা হয়েছে ঘরের পরিচালিকা। এজন্যে রাসূলে কারীম বলেছেন- “তাদের ঘরই তাদের জন্যে সুখ শান্তি ও সার্বিক কল্যাণের আকর।” নারীরা ঘরে বসেই আল্লাহর পথে জিহাদ করতে পারে। মহানবী এ সম্পর্কে বলেছেন- “যে মেয়েলোক তার ঘরে অবস্থান করলো, সে ঠিক আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মত কাজ সম্পন্ন করতে পারলো।” ইমামতি করা নারীদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের নামাযের স্থান সম্পর্কে রাসূলে করিম বলেছেন- “আল্লাহর কাছে মেয়েলোকের সে নামায সবচেয়ে বেশি প্রিয় ও পছন্দনীয়, যা সে তার ঘরের অন্ধকারতম কোণে পড়েছে। এভাবে নর নারীর মধ্যে সামাজিক দায়িত্বে প্রভেদ করেছেন। জানাযায় যাওয়া নারীদের জন্য নিষিদ্ধ। হযরত উম্মে আতীয়া (رضي الله عنه) বলেছেন- “রাসূলে করীম আমাদেরকে জানাযায় যেতে নিষেধ করেছেন; কিন্ত নরের জন্য এটা স্পষ্টভাবে বৈধ। প্রয়োজনের তাগিদে, না গেলেই নয় এরূপ ক্ষেত্রে নারীদেরকে ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে কাপড় দিয়ে সমস্ত শরীর ঢেকে যাওয়া শর্ত করা হয়েছে। নিরুপায় হলে তারা অবশ্য ঘরের বাইরে যেতে পারে। নবী করীম বলেছেন- তোমরা আল্লাহর বাদীদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করো।


অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে- “আল্লাহর বাদীদেরকে মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করো না। নারীদের একা সফর করার বিধান রাখা হয়নি। যেতে হলে মুহাররম পুরুষকে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার অধিকার প্রদান করা হয়েছে। নবী করিম (ﷺ)  বলেছেন- মেয়েলোকে আদৌ বিদেশ সফর করবে না, তবে কোন মুহাররম পুরুষকে সঙ্গে নিয়ে করতে পারে।” নরের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তবে নারীদের জন্য অলংকার পরা জায়েয আছে। সুগন্ধি ছাড়া প্রসাধন ব্যবহার নারীদের জন্য প্রযোজ্য। তবে নরের জন্য প্রযোজ্য নয়। জুমআর নামায পড়াও নারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। রাসূলে করিম (ﷺ)   বলেছেন- “জুমআর নামায জামায়াতের সাথে পড়া সব মুসলমানদের ওপরই ফরয। তবে চার শ্রেণির লোকদের তা থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে- ক্রীতদাস, মেয়েলোক, লেংড়া ও রোগী।”


নারী ও নরের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত কারণে তাদের অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা তারতম্য বিদ্যমান। নারীদের প্রকৃত স্থান এবং আসল কর্মক্ষেত্র হচ্ছে তাদের ঘর। এখানে থেকেই তারা প্রতিটি মৌলিক অধিকার অর্জন, সম্মান লাভ এবং আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। এতে কোন অসুবিধা হয় না। মানুষের মধ্যে নর ও নারী- এ শ্রেণিবিভাগের কারণে তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য নির্ধারিত হয়েছে। যার যার দায়িত্ব থেকে সে সে ইবাদত করবে, সমাজে সুখ ও শান্তি আনয়ন করবে এবং নর ও নারী উভয়কে সহযোগিতা করবে। নরকে দেওয়া হয়েছে বাহিরেকাজ আর তা সম্পন্ন করার জন্য যে যোগ্যতা, কর্মক্ষমতা ও কাঠিন্য, অনমনীয়তা, কষ্ট, সহিষ্ণুতা, দুর্ধর্ষতার প্রয়োজন, তা কেবল পুরুষদেরই আছে। আর মেয়েদের আছে স্বাভাবিক কোমলতা, মসৃণতা, অসীম ধৈর্যশক্তি, সহনশীলতা, অনুপম তিতীক্ষা ঘরের অংগনকে সাজিয়ে-গুছিয়ে সমৃদ্ধ করে তোলা, মানব বংশের কুসুম কোমল লোকদের গর্ভে ধারণ, প্রসবান্তে স্তন দান ও লালন-পালন করার দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও আল্লাহর মৌলিক ইবাদত করা হল তাদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। ৩৮

৩৮.আল বাহি আল খাওলী, ইসলামে নারী, পৃ; ৫৭-৬২

Top