বিষয় নং-২৩:

ইয়া শায়খ আবদুল কাদের জিলানী শাইআন লিল্লাহ বলা:


দেওবন্দী এবং ওহাবীরা বলে বেড়ায়ইয়া শায়খ আবদুল কাদের জিলানী শাইআন লিল্লাহবলা শিরক। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের মতেইয়া শায়খ আবদুল কাদের জিলানী শাইআন লিল্লাহবলা বৈধ। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন পাকে বলেন

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ

-“হে ঈমানদারগণ! সবর নামাযের মাধ্যমে সাহায্য চাও।’’ ২৯৩

  • ২৯৩. সূরা বাকারা , আয়াত নং-১৫৩


وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ

-“এবং সৎ খোদাভীরুতার কাজে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য করো আর পাপ সীমা লংঘনে একে অন্যের সাহায্য করো না।’’ ২৯৪

  • ২৯৪. সূরা মায়েদাহ, আয়াত নং- ২


هُوَ الَّذِي أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ

-“তিনি সত্তা, যিনি আপনাকে শক্তিপ্রদান করেছেন স্বীয় সাহায্য এবং মুমিনদের দ্বারা।’’ (সূরা আনফাল, আয়াত নং-৬২

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللَّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

-“হে অদৃশ্যের সংবাদদাতা নবী! আল্লাহ আপনার জন্য যথেষ্ট এবং যতসংখ্যক মুসলমান আপনার অনুসারী হয়েছে।“ ২৯৫

  • ২৯৫. সূরা আনফাল, আয়াত নং-৬৪


وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ

-“এবং মুসলমান নর মুসলমান নারীগণ একে অপরের বন্ধু।” (সূরা তাওবা, আয়াত নং-৭১

এসব আয়াতে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি থেকে সাহায্য চাওয়ার প্রমাণ মিলে। আল্লাহর হুকুমে সৃষ্টি থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা যদি শিরক হতো পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এর অনুমিত দিতেন না।

আম্বিয়া কেরাম (عليه السلام) শিরক থেকে বেঁচে থাকার শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তাঁরা নিজেরাও শিরক করেন না এবং এর শিক্ষাও দেন না। পবিত্র কুরআন পাক থেকে প্রমাণিত হয় আম্বিয়া কেরাম (عليه السلام) আল্লাহর মাখলুক থেকে সাহায্য চেয়েছেন। যেমন-হযরত ঈসা (عليه السلام) তার অনুসারীদের বলেন

مَنْ أَنْصَارِي إِلَى اللَّهِ

-“কারা আছে, যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমায় সাহায্য করবে?”  ২৯৬

  • ২৯৬. সূরা সাফফ, আয়াত নং- ১৪


এর উত্তরে তারা বলেছিলেন-

قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنْصَارُ اللَّهِ

-“হাওরারীগণ বললো, আমরাই হলাম আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যকারী।২৯৭

  • ২৯৭. সূরা সাফফ, আয়াত নং- ১৪


হযরত মূসা (عليه السلام) নিজের বোঝা বহন এবং সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করেছেন। উক্ত প্রার্থনায় তিনি আপন ভ্রাতা হযরত হারুন (عليه السلام)’ নাম উল্লেখ করেন। যেমন পবিত্র কুরআনে আছে

وَاجْعَلْ لِي وَزِيرًا مِنْ أَهْلِي ۞ هَارُونَ أَخِي ۞ اشْدُدْ بِهِ أَزْرِي

-“এবং আমার জন্য আমার পরিবারবর্গের মধ্য থেকে একজন উযীর করে দাও, সে কে? আমার ভাই হারুন, তাঁর দ্বারা আমার কোমর শক্ত কর।” (সূরা তোহা, আয়াত নং- ২৯-৩১)

উল্লিখিত দুজন সম্মানিত নবীগণ (عليه السلام) কর্তৃক আল্লাহর সৃষ্টি থেকে সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট। এরূপ সাহায্য চাওয়া শিরক হলে তাঁরা সাহায্য চাইতেন না।

যদিওবা কুরআনের আয়াতের মধ্যে আল্লাহর অনুমতি অথবা আল্লাহর দান কথাটি নেই তথাপি আলেমগণের উচিত যে, তারা সাধারণ জনতাকে একথা জানিয়ে দেবে যে, প্রকৃত সাহায্যকারী হলেন মহান আল্লাহ তায়ালা।

যেমন: আল্লাহার বাণী 

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

-“আমরা যেন তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।’’ (সূরা ফাতিহা, আয়াত নং-) আয়াত থেকে একথাটি সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়।

আল্লাহর অনুমতি এবং তাঁর দান অনুসারে সৃষ্টির মধ্যেও সাহায্যকারী হতে পারে। উপর্যুক্ত আয়াতের মধ্যে এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল পার্থক্যটি বর্ণনা করা ছাড়াই দেওবন্দীরা শিরক শিরক করে চিৎকার করে বেড়ায় এবং সাধাসিধে মুসলমানদেরকে চিন্তায় ফেলে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ায়। শরীয়ত এবং দেশীয় উভয় আইনে তা গুরুতর অপরাধ।

একদিকে নবীগণ (عليه السلام) তো সৃষ্টি থেকে সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি রয়েছে। অন্যদিকে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) এর নেককার মুমিনকেও সাহায্য কারী বলেছেন। ইরশাদ হচ্ছে- পবিত্র কুরআনের ৩য় পারায় হযরত জিবরাইল (عليه السلام) কর্তৃক হযরত ঈসা (عليه السلام) কে সাহায্য করার বিষয়টি এভাবে এসেছে যে

فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ

-‘‘আর আমি মরিয়ম তনয় ঈসাকে স্পষ্ট নির্দেশনাসমূহ প্রদান করেছি এবং পবিত্র রূহ দ্বারা তাকে সাহায্য করেছি।“ ২৯৮

  • ২৯৮. সূরা তাহরীম, আয়াত নং-৪


আয়াতে রুহুল কুদুস হচ্ছে হযরত জিবরাইল (عليه السلام) যিনি হচ্ছেন ফেরেশতা, যাঁর উপাধি হল মুয়াল্লিমুল মালাইকা তথা ফিরিশতাদের শিক্ষক। হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) হচ্ছেন আল্লাহর সৃষ্টি। আর আল্লাহর সৃষ্টি কাছে সাহায্য চাওয়া শিরক হলে আল্লাহ তায়ালা কখনো তা প্রকাশ করতেন না।

হযরত হাস্সান বিন ছাবেত (رضي الله عنه) হুযুর পূরনূর (ﷺ)’ পবিত্র দরবারে নাত পড়তেন। হুযুর করিম (ﷺ) খুশি হয়ে তাঁর জন্য যে দোয়া করেছেন তা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের জন্য প্রমাণ্য দলিল। দোয়াটি এরূপ ছিল

اللَّهُمَّ أَيِّدْهُ بِرُوحِ القُدُسِ

-‘‘আল্লাহ তাকে হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) এর মাধ্যমে সাহায্য করুন।’’ (সহীহ বুখারী, /৯৮ পৃ., হা/৪৫৩)

সায়্যিদুল মুফাসসিরিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (رحمة الله) এর আক্বিদা:

ইমামুল মুফাস্সির ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (رحمة الله) তাফসীরে কাবীরে (رحمة الله) 

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً

আয়াতের তাফসীরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’ একটি রেওয়ায়েত এনেছেন। 

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً سِوَى الْحَفَظَةِ يَكْتُبُونَ مَا يَسْقُطُ مِنْ وَرَقِ الْأَشْجَارِ، فَإِذَا أَصَابَ أَحَدَكُمْ حَرِجَةٌ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَلْيُنَادِ: أَعِينُوا عِبَادَ اللَّهِ يَرْحَمُكُمُ اللَّهُ.

-‘‘তিনি বলেন, তোমাদের কেউ হলে হারিয়ে গেলে সে বলবে, হে আল্লাহর  (নৈকট্যশীল) বান্দাগণ সাহায্য করুন! তাহলে আল্লাহ তায়ালা দয়া করবেন।’’ (ইমাম রাজী, তাফসিরে কাবীর, /৩৮৭ পৃ.) 

বিজ্ঞপাঠক! উপর্যুক্ত আয়াত এবং হাদিসে পাকের আলোকে বলা যায়, সৃষ্টি থেকে সাহায্য চাওয়া বৈধ। হুযুর গাউছে পাক (رضي الله عنه) আল্লাহ তায়ালার প্রিয় ভাজন হওয়ার ব্যাপারে কারো মতবিরোধ নেই। সুতরাং এই মকবুল বান্দা হতে সাহায্য প্রার্থনা করা কিভাবে শিরক হবে। দেওবন্দী এবং ওহাবীরা সাধাসিধে মুসলমানদের ধোঁকাচ্ছলে বলে থাকে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ডাকা যাবে না। কারণ আল্লাহ ছাড়া কাউকে ডাকা শিরক। কিন্তু এসব ভাবলেশহীনদের এতটুকুও জ্ঞান নেই যে, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কুরআনে পাকে মানবজাতিকে সম্বোধন করে (يَا أَيُّهَا النَّاسُ) বলেছেন। প্রাণিধান যোগ্য যে, মানুষের মধ্যে মুসলমান কাফের সবাই অন্তর্ভূক্ত। দেওবন্দীরা আল্লাহর ওলীদের আহবান করাকে শিরক বলে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষকেই আহবান করেছেন।

পবিত্র কুরআনে পাকের অনেক স্থানে আল্লাহ তায়ালা 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا

বলে সম্বোধন করেছেন, ঈমানদারদের মধ্যে বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (رضي الله عنه) রয়েছেন। আবার রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন

يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ

হে উম্মতে মুহাম্মদী! (সহীহ বুখারী, হা/৫২২১) এখানেও গাউসে পাক (رضي الله عنه) রয়েছেন। সুতরাং উল্লেখিত দলিলের আলোকে প্রমাণিত হল সাহায্য চাওয়া এবংইয়া শায়খ আবদুল কাদের জিলানী শাইআন লিল্লাহবলা বৈধ।

ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী (رحمة الله), আল্লামা খাযেন (رحمة الله) এবং আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) এর আক্বিদা:

পবিত্র কুরআনের আয়াত-

فَلَبِثَ فِي السِّجْنِ بِضْعَ سِنِينَ

(সূরা ইউসুফ, আয়াত নং-৪২) এর তাফসীরে বলেছেন-

الاستعانة بالمخلوق في دفع الضرر جائزة

-‘‘বিপদ এবং অত্যাচার দূরীভূত করণে মাখলুক থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ।’’ (ইমাম খাযেন, তাফসিরে খাযেন, /৫৩০ পৃ.)

শাহ আব্দুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)-এর আকিদা:

দেওবন্দী ওহাবীদের এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নিকট নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব শাহ আবদুল আজিজ দেহলভী (رحمة الله) তাঁর স্বীয় তাফসীরফতহুল আজিজ 

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

এর তাফসীরে বলেছেন করতে গিয়ে এমন পার্থক্য বর্ণনা করেছেন যে, যার মাধ্যমে সব ধরনের সন্দেহের অবসান হয়ে যায়।

অর্থাৎ তিনি বলেন, আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো উপর নির্ভর করে এবং তাঁকে প্রকৃত সাহায্যের মালিক মনে না করে সাহায্য প্রার্থনা করা হারাম।’’ (তাফসিরে আযিযি, / পৃ.)

সুতরাং কুরআন সুন্নাহ থেকে প্রতিভাত হলো যে, আহলে হাদীস এবং দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত নয়।

Top